কবিতাগুচ্ছ
প্রীতম সেনগুপ্ত
অর্জুনপণ্ডিত
যার জন্য শোক করা অনুচিত
তার জন্য শোক করলে
তুমি 'অর্জুন' হয়ে যাবে!
মৃত বা জীবিতের জন্য শোক না
করলে, হা হুতাশ না করলে
তুমি 'পণ্ডিত ' অভিধা পাবে।
বাকিটা তোমার নির্বাচন --
'পণ্ডিত' হবে নাকি বিষাদগ্রস্ত 'অর্জুন',
নাকি সংকর 'অর্জুনপণ্ডিত'!
বেপরোয়া
কৌমার, যৌবন, জরা ও মৃত্যু পেরিয়ে
আরেকটি দেহ লাভ হলেও
জ্ঞানী মোহিত হন না।
সৌভাগ্যবশত আমি হই--
এই অনিন্দ্যসুন্দর দেহেই তো
ঈশ্বরের অস্তিত্ব! তাই সাহস করে স্পর্শ করি বেশ্যার হৃদয়ও! যাঁর অশ্রু
মাটিতে পড়ার আগেই মুক্তো হয়ে বাতাস ওড়ে।
আমি ভগবদ্গীতা বর্ণিত অজ্ঞানী, তবে গর্বিত।
নতুন বাড়ি,পুরনো বাড়ি
নতুন বাড়ির একটা আলাদা গন্ধ আছে,
দেওয়ালে নতুন রং,
জানালা দরজাতেও---
নতুন বাড়ির জানালাগুলো দিয়ে একটা
ফুরফুরে সতেজ হাওয়া আসে,
মন ভালো করা সূর্যালোক প্রবেশ করে,
অথচ বাড়িটা পুরনো হয়ে যাওয়ার সঙ্গে
সঙ্গে সেই বাতাসে ঢুকে যায় কেমন যেন
বাসি পচা গন্ধ!
ঘরে প্রবিষ্ট সূর্যের আলোতেও ধরে মরচে!
পুরনো চাল ভাতে বাড়লেও
পুরনো বাড়ি অধিকতর টাটকা বাতাস ও আলোর
জোগান দিতে ব্যর্থ !
সুখ
মানি প্ল্যান্টের শিশিতে ভরে দিলাম হুইস্কি --
আ্যকোয়রিয়ামে রঙিন মাছগুলো সারা দিনমান ঘুরে বেড়ায়
ভদকায় সাঁতরিয়ে!
একটা মাতাল সুখী গাছ
আর
মাতাল সুখী মাছগুলো নিয়ে
কাটল গোটা প্রজাতন্ত্র দিবস।
নেশা
একাশি বছর আগে একটা জাহাজ
সমুদ্রের তলায় চলে গিয়েছিল--
টাইটানিকের মতোই হদিশ মিলল,
পাওয়া গেল প্রাচীন হেলমেট,ইঁট।
কয়েক হাজার হুইস্কির বোতলও,
সেগুলো অবশ্য পানের অযোগ্য এখন,
তাতে অবশ্য কিছু এসে যায় না,
নিলামের নেশায় মেতেছে সবাই!
নয়নাভিরাম
শ্মশানের চুল্লীতে শব ছাই হয় না
মধু ডোম মানুষ কাবাব বানায়
সুন্দরবনের বাঘেদের জন্য।
এটা একটা নতুন প্রজেক্ট,
মধু জহুরি লোক,ব্যবসায়ী
ম্যানগ্রোভ অরণ্যে দোকান দিয়েছে।
দোকানের নাম--নয়নাভিরাম!
দ্য ভিঞ্চি
অনেক মানুষ আছে যাদের স্মিত হাসি
জীবনের অর্থ বয়ে আনে --
আবার অনেকের উচ্চরবে হাসি মনে হয়
ক্ষুধার্ত হায়নার কলরব।
আমাদের এই দুইয়ের মাঝেই বেঁচে
থাকতে হয়, বসবাস করতে হয়।
কোনও এক শুভ লগনে দ্য ভিঞ্চি হয়তো
বুঝেছিলেন সম্যক সত্যটাই।
অনুরাগে
গন্ধেশ্বরীর মাটি ছেনে মূর্তি গড়েন রামকিঙ্কর-- অনুরাগে
মাইলফলক দেখে সংখ্যা চেনেন ঈশ্বরচন্দ্র-- অনুরাগে
রামপ্রসাদ নন আটাশে ছেলে-- অনুরাগে
নেতাজি আজাদ হিন্দ গড়লেন-- অনুরাগে
এক নরম আলোর বিকেলে গোলাম ফকির
আমায় বললে 'সাধু'-- অনুরাগে!
সিক্ত পথ
আঁখির জলে ভিজিয়ে দিলে পথ,
আপনজনে হেঁটে চলে ভগ্নমনোরথ
দহের আয়না জলে
বিম্বটি দেখার ছলে
বিসর্জিত হও তুমি, হতাশায় এগিয়ে চলি শ্লথ!
সত্যবতীর ব্যাস
উপরিচর বসুর সুন্দরী কুমারী কন্যা সত্যবতী যমুনায়
খেয়া পারাপারের কাজে ব্যস্ত, নিতান্ত আনমনায়,
খেয়ায় মুনি পরাশর বিদ্ধ কামনায়--
নদী মেশে সমুদ্রে মোহনায়
চারিদিক কুয়াশায় ভাসে!
কৃষ্ণদ্বৈপায়ন আসে
ব্যাসে।
দ্রাক্ষাকুঞ্জ
উত্তর কলকাতার যাত্রা জগৎ পত্রিকার সম্পাদক
পুরনো কলকাতার এনসাইক্লোপিডিয়া,
থাকেন সাবেক উত্তর কলকাতায়,
নাম নির্মল শীল, জানিনা জীবিত আছেন কিনা,
অনেক জানার সৌভাগ্য হয়েছিল তাঁর কাছ থেকে,
সে অর্থে তাঁকে ঐতিহাসিকও বলা চলে।
তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন শোভাবাজার অঞ্চলে
আঙুরবালার বাড়ি দেখাতে।
আহা আঙুরবালা!!!
বাড়ির নামটিতে শিহরণ জাগে
'দ্রাক্ষাকুঞ্জ'!
দু' শালিখ নমস্কার
সামনে রাস্তা, পাশেই খাল
উপরে ব্রিজ ধরবে ঢাল?
ছিটকানো মুড়ি, ভিখিরি বোধহয়
সঙ্গে কে যায়, ভাগ্নে উদয়?
নানা প্রকল্প,শালিখের গান
ব্রিগেডে সবাই সমাবেশে যান।
বিপ্লব ভালো, খালি পেটে সব
মুড়িগুলো নিয়ে জোর কলরব।
কখনও একটা,কখনও দুটো
তিনটে চারটে পর্দায় ফুটো
থই থই খাল, জলঢাকা ওই
কচুরিপানায় ভাসমান খই --
আদালতে নেই কোনও পেশকার
খালি দু'শালিখ --নমস্কার নমস্কার!
জিরাফের চোখ
জিরাফের চোখ যদি টিউলিপ
আয়ুষ্মানের চোখ কল্পনার পাঠভবন,
নয় নয় করেও যেতে হয় সবুজদ্বীপ
রাজা হয়ে আন্দামানে উড়ন্ত স্বপন--
স্বপন যদিবা গেল ভুবন তো নয়,
জিরাফে উঠতে গেলে পুঁজিবাদী সাহস--
মায়ের হাত ধরে আসে দুরন্ত অভয়
ভয় পেয়ে কী হবে যদি মৃত্যু বারোমাস!
পরিচয় ঝুলে থাকে বুকের উপর
ছোট ছোট হাতে পায়ে পেরেক বাঁধন
কাঁধে হাত হাতে কাঁধ চলে আসে পরপর
নাম ডাকা হতে থাকে তুহিন, অঙ্কন...
ছুটির ঘন্টা বাজলে পরে মায়ের আঁচল
অনেক স্নেহেতে ভরা প্রতীক্ষার শেষ
না যাওয়ার ছল দেখে, চল চল বাড়ি চল
জিরাফের পিঠে উঠে সব পেয়েছির দেশ।
প্রশ্ন
তোমায় আমি সফেন সমুদ্র দেব...
উত্তাল তরঙ্গ এসে
আছড়ে পড়বে তোমার
পদতলে, জানাবে প্রণতি।
তোমায় আমি অশেষ অরণ্য দেব
সবুজের গভীরতা মনের
গহনতম অংশে অনুরণন
তুলে বলবে, হে অরণ্য
তুমিই আমার দেবতা।
তোমায় আমি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেব--
সূর্যের নবীন আলো
সোনা হয়ে ভাসবে সাগরে,
আরাধনায় নিয়োজিত গায়ত্রী।
তোমায় আমি চন্দ্রালোকিত মায়াবী রাত দেব--
যে জ্যোৎস্না রাতে অনেকে
হয়ে উঠবে উন্মাদ, ওই
প্রেমসৌধ তাজ দেখে...
হে মানব,
তুমি আমায় কি দেবে বল?
জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন
0 Comments