জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা/ ওয়াহিদা খাতুন

গুচ্ছ কবিতা 
ওয়াহিদা খাতুন



 বিরহের গান

আশা ছিলো দুজনাতে আষাঢ়ের জলে,
বাদলের গান গাবো হাতে হাত ধরে,
কতদূরে আছো তুমি আমি একা ঘরে!
বন্দিনী জীবন নিয়ে করোনা কবলে,
জমা ব্যথা বুকে নিয়ে মরি গ্যাঁড়াকলে!
ঢেউ নেচে খেলা করে তটিনীর চরে,
রিমিঝিমি বর্ষা গায় বনানীর পরে।
হঠাৎ ধরবে চোখ ভালোবাসি বলে!!

পথ চেয়ে থাকি বসে ব্যথায় কাতর,
সইতে পারিনা আর বিরহের জ্বালা,
শয়নেস্বপনে করি তোমাকে স্মরণ,
ব্যথা গুলো শুষে হও পরশ পাথর!
মুক্ত করে নিয়ে বলো কবে দেবে মালা!
সব বাধা ফেলে তুমি করবে বরণ!
         

 ঔষধি পালংশাক
 
এমারান্থাসি পরিবারভুক্ত উদ্ভিদ
পালংশাকে আছে এ,বি,সি,ই ভিটামিন;
কৃমি, মূত্ররোগ সারে খেলে এর বীজ,
মিনারেল সহ আছে বিটা কেরোটিন;
প্রচুর আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম,
এন্টি অক্সিজেন কোষকে সতেজ রাখে,
প্রত্যহ খাও যদি পাবে পটাশিয়াম;
ডি ছাড়া সবকিছু-ই পাবে এই শাকে !

বার্ধক্য জয় করে আনে তারুণ্য-ছোঁয়া;
লিম্ফোসাইট সংক্রমণকে রক্ষা করে,
অস্থিগুলো সবল হবে যাবেনা ক্ষোয়া;
 রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা শরীরে গড়ে,

ক্যান্সার রোধ ও হৃদযন্ত্র রক্ষাকারী !
প্রত্যহ পালংশাকের করো তরকারি !!


স্রষ্টার দেওয়া রঙ

স্রষ্টার দেওয়া রঙের বাগান থেকে
কালির দোয়াত ভর্তি করে নিচ্ছ রঙ;
তুলি দিয়ে টানো আর্টপেপার টা রেখে;
অঙ্কন করছো খেলছো কখনো সঙ;
সবুজটা খুঁজে নিলে বৃক্ষের পাতায়,
সাতরঙা রামধনু পেলে নীলাকাশে;
রকমারি রঙে ভরা পুষ্পের ডালায়,
হলুদ দিগন্তে সরষে ফুলেরা হাসে !

জলে-স্থলে নভোশ্চরে কত রঙ ঢালা,
জীবজগৎ,পশুপাখি বৈচিত্র-ভিড়ে,
শুভদৃষ্টি-শুভলগ্নে গোলাপির মালা;
মাটিরঙ দাওয়া মাঝে শান্তির নীড়ে,

বিশ্বব্রহ্মাণ্ড জুড়ে স্রষ্টার রঙমেলা !
প্রত্যেকে নিজস্ব রঙে করে যায় খেলা !!


 অপবাদ

অপবাদ এতোই সস্তার বস্তু নয়,
মিথ্যা কলঙ্কের কালি চিরদিন সস্তা,
গুজবে নয় নিজের প্রতি রেখো আস্থা,
চরিত্রটা যদি চরিত্রের মতো হয়,
পরনিন্দা করাই কুৎসাকারীর কাজ;
তুলো গুঁজে ঠেসে থাকো বধিরত্ব হয়ে,
বৃথা কান্না করো নাকো অপবাদ-ভয়ে,
দু-কান কাটতে নিন্দুকের নাই লাজ !

মূল লক্ষ্যে স্থির থেকে হও অগ্রসর,
বিকৃত মস্তিষ্ক দিয়ে কিবা ভালো হবে,
বিজ্ঞজন কেঁদে মরে যুগে যুগে ভবে,
দুর্বার গতিতে মাড়ো নিন্দুকের ঝড়;

চন্দ্রের গায়ে লাগে কী মিথ্যা অপবাদ ?
বৃথা পিছে লেগে মুর্খ হয় বরবাদ !! 


 বিরহী পাপিয়া

গ্রীষ্মের চাতকী খইফোটা রৌদ্রকাশে, 
মরু তৃষ্ণা কন্ঠে নিয়ে অকাতরে গায়;
দেউলিয়া পাখা নেড়ে গ্রীষ্ম-আঙিনায়;
বিদারী বাঁশি বাজিয়ে বিষন্ন বাতাসে,
কায়মনোবাক্যে তাঁর-ই করে প্রার্থনা ;
মেঘমুখী চঞ্চুখানি অবিরত নড়ে,
কাকুতিতে স্বর্গ-বৃষ্টি মহাসুখে পড়ে,
রৌদ্রস্নানে করে যায় জলের যাচাঞা !

উর্দ্ধোলোকে মুখ তুলে আর্জিসুরে ভরে;
চতুর্দিক বিষণ্ণতা বিরহীর গানে,
তৃষ্ণা নিয়ে ওড়ে চলে মহাশূন্য পানে,
ফটিকজল ফটিকজল কন্ঠে ধরে;

করুণ কাকলি তোলে কাঁদিয়া কাঁদিয়া ! 
ফটিকজল আর্তিতে বিরহী পাপিয়া !!



মিথ্যাচারী-আবর্তে
  
মেঘজমা বুকে বিদ্যুতের ফলা জ্বেলে 
করাঘাত করেছিলাম বিকৃত-দ্বারে;
ন্যায়ের দলিল হাতে নিয়ে বারেবারে, 
উল্টে দিয়েছিল কূটুক্তির বিষ ঢেলে ;
মিথ্যার আবর্তে ঢেকেছিল এই মুখ,
ধুয়াশা-চক্ষু নোঙ্গর বেয়ে অশ্রুধারা
মেকিপথে দণ্ডায়মান ক্রমশ তারা;
পঙ্গু মনুষ্যত্বে ডুবেছে জীবন সুখ। 

মিথ্যা বিদ্রুপের বহ্নিচ্ছটা গায়ে নিয়ে,
মৌন উদ্যানে বিদ্রোহীর দামামা তুলে
জ্ঞাতিকুলের-সম্পর্ক আজ গেছি ভুলে ;
উন্মাদিনী সবকিছু বিসর্জন দিয়ে,

আমি পাপাত্মার অগ্নিচক্ষু মেখে মর্ত্যে !
 সর্বাঙ্গে জ্বলে মরি মিথ্যাচারী-আবর্তে !! 


 "আইসুয়া সুপ্রাক্রাস্টাল বেল্ট"
          

দক্ষিণ-পশ্চিম গ্রিনল্যান্ডের ভূভাগে;
আইসুয়া সুপ্রাক্রাস্টাল বেল্ট প্রাঙ্গণে,
ভূপৃষ্ঠের প্রাচীন প্রস্তরখন্ড-স্থানে,
প্রায় সাড়ে চারশো কোটি বছর আগে;
ভূপৃষ্ঠে ম্যাগমা মহাসাগরের জন্ম,
মহাজাগতিক বস্তু পড়ার ফলে;
মঙ্গল গ্রহের সমান বিজ্ঞান বলে;
সেই প্রস্তর থেকে নাকি চাঁদের জন্ম !

উষ্ণ তরল ম্যাগমা মহাসাগরের 
পাথর-স্রোত জমে হয় ঠাণ্ডা কেলাস ;
আবিস্কারক হেলেন উইলিয়ামস;
কালক্রমে হয়ে ওঠে তা বাসযোগ্যের;

আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান রিসার্চ পত্রিকা !
'সায়েন্স এডভান্সেস এর রচয়িতা !!

কবি পরিচিতি: ওয়াহিদা খাতুন, (Wahida Khatun),পিতা:সোয়ারাব হোসেন,মাতা:মর্জিনা বেগম,
 শিক্ষিকা-লেখিকা। মুর্শিদাবাদ,পশ্চিমবঙ্গ, ইংরেজিতে এম.এ, ইংরেজি ও বাংলায় দুটো ভাষায় আলাদাভাবে কবিতা, সনেট ও সংগীত লেখেন। সম্প্রতি তিনটি গ্রন্থ বেরুনোর জন্য প্রস্তুতি চলছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি ।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments