জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -৪১



 সম্পাদকীয়,
ছোট্টোবন্ধুরা, জানতো কোনো প্রিয় জিনিষ পেতে গেলে বড়ো ছোটো প্রত্যেককেই অপেক্ষা করতে হয়।  এই যেমন কোভিডকালে তোমরা অপেক্ষা করে আছো স্কুল খোলার জন্য। শুধু তুমি নয় সৃজনীর দিদাও সৃজনীর স্কুল খোলার অপেক্ষায় আছে। কি করে জানলাম? আরে আমাকে নন্দিনী আন্টি ছড়ার  ছন্দে জানিয়ে দিল যে। শুধু কি স্কুল, তুমি কি তোমার প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার জন্য ছটফট করছো না? করছো তো। সেই দেখা করার দিনও স্থির হয়ে গেছে। আমি তো জেনে গেছি সুকুমার আঙ্কেলের গল্প পড়ে। অপেক্ষার কি আর শেষ আছে। বৃষ্টির সময় যেমন কোথাও যেতে গেলেই অপেক্ষা করতে হয় কখন বৃষ্টি থামবে তার জন্য। শুধু তুমি নও বিপ্লব জ্যেঠুর ছড়ার দোদোনও বৃষ্টি থামার অপেক্ষায় রয়েছে। আর দোদোন যদি মায়ের কথা শুনে অপেক্ষা না করে বৃষ্টিতে ভেজে তবে মহুয়া আন্টির ছড়ার ব্যাঙ বাবাজীর মতো সর্দি লেগে যাবে কিন্তু। এ তো গেল কিছুক্ষণের জন্য অপেক্ষা। কখনও কখনও আমাদের বছরের পর বছর কিছুর জন্য অপেক্ষা করতে হয়। যেমন এখন আমের মরসুম শেষ এখন যদি সুধাংশু জেঠুর গল্পের মতো আম পারতে চাও গাছে উঠে তবে কিন্তু আবার গ্রীষ্মের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে সবুরে মেওয়া ফলে। যদি তুমি সবুর কর, তবে কল্যাণ আঙ্কেলের তোলা ছবিটার প্রচ্ছদের বন্ধুটার মতো রথের মেলা থেকে সামনের বছর পুতুল কিনতে পারবে তাছাড়া আম পাড়তে উঠে শালিখ ছানাও পেয়ে যেতে পারো। সবুর করলে অবশ্যই অভিজিৎ আঙ্কেলের গল্পের ভোলাকাকুর মতো কোনো ভালো লোকের দেখা পাবেই পাবে। অবশ্যই অনন্যা দিদির ছড়ার আকাশরাণীর মতো মেঘকুমারীর দেখা পাবে। আর আহিতাগ্নির গল্পের দুষ্টু জ্যাকের মতো একদিন না একদিন ভালো হবেই হবে। তবে চোদ্দ পর্ব হয়ে গেল এখনও ফুলকুসুমপুরের রাধাগোবিন্দ কেন যে কথা বলতে শিখছে না তা একমাত্র রতনতনু জেঠুই জানে। আর অপেক্ষা যে সয়না। তাই না?  আমি কিন্তু অপেক্ষায় থাকলাম তোমাদের গল্প ছড়া আঁকা আর পাঠ প্রতিক্রিয়া পাবার জন্য। - মৌসুমী ঘোষ।


বন্ধু
সুকুমার রুজ

আজকের দিনটা আসার অপেক্ষায় আমি ক'দিন ধরেই ওয়েট করছি। আজ যে আমার বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার  দিন। আজ তো একুশে ফেব্রুয়ারি। বন্ধু বলেছেন, আজকের দিনটা হলো 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস'। কবিগুরু পার্কে আজ মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে, বন্ধুর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হবে। টেলিফোনে বন্ধুর সঙ্গে মাঝে মাঝে কথা  হয়। কিন্তু দেখা হবে আজ প্রথম।          
   টেলিফোনেই তো আমরা বন্ধু পাতিয়েছি। আসলে আমার তো কোনো বন্ধু নেই! মাম্মি, ড্যাডি দুজনেই তো অফিসে চলে যান। আমি ঘরে একা থাকি। না না, একটা ভুল হল, আমাকে দেখাশোনা করার জন্য মিনুদিদি  থাকে। কিন্তু ও তো সারাক্ষণ টিভিতে ভি চ্যানেল দেখে। আমাকে কার্টুন চ্যানেল দেখতেই দেয় না। তাই আমি খুব একা। আমার কোনো ফ্রেন্ড নেই। একদিন স্কুলে বাংলা ম্যাম বলেছিলেন 'মিত্র' মানে হলো ফ্রেন্ড। তাই আমি  ফ্রেন্ড করার জন্য 'টেলিফোন গাইড বুক' থেকে 'মিত্র' খুঁজে খুঁজে ফোন করছিলাম। কয়েকটা ফোন করার পরেই এই বন্ধুকে পেয়ে গেলাম। কী সুন্দর গম্ভীর গলা! আমাকে বললেন, 'তোমার নাম কী? কোন ক্লাসে পড়? কোথায় থাকো?'
  সব বললাম। শেষে বললাম, 'আই হ্যাভ নো ফ্রেন্ড। উড ইউ লাইক তো বি মাই ফ্রেন্ড?
  উনি বললেন, 'ফ্রেন্ড হবো না। তবে বন্ধু হতে পারি, যদি আমার সঙ্গে বাংলা ভাষায় কথা বল। 
  আমি বললাম, 'বাংলা ভাষায় কথা বললে মাম্মি পানিশমেন্ট দেবেন যে!'       
  সে কী! তোমার পদবী তো বললে 'মুখার্জি'। তুমি তো বাঙালী!   
  তা হলে কী হবে! মাম্মি আমার বাংলা বলা একদম লাইক করেন না। একদিন মাম্মিকে 'মা' বলেছিলাম ব'লে আমাকে খুব বকেছিলেন। সেই থেকে 'মাম্মি' বলি, আর 'আপনি' বলি। 
  বন্ধু বলেছিলেন, 'তোমার মাতৃভাষা হল বাংলা। বাংলাভাষাকে আগে ভালবাসতে হবে, তারপর অন্য ভাষা। মাতৃভাষাকে ভালো না বাসলে কোনও ভাষাকেই ভালোবাসা যায় না।' 
  তারপর থেকে আমি আমার এই বন্ধুর সঙ্গে বাংলায় কথা বলি। বন্ধু আমাকে একটা বাংলা পদ্য শিখিয়ে দিয়েছেন -- মোদের গরব মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা... । পদ্যটা আমি খুব ভালো করে মুখস্ত করেছি।  
  জানো, আমার এই বন্ধুটা না ছবি আঁকে। ওর নাকি ছবির এক্সিবিশন হয়। অনেক দামে ছবি বিক্রি হয়। বন্ধু ওঁর আঁকা একখানা ছবি আমাকে গিফট দেবে বলেছে। আমি যে বন্ধুকে কী গিফট দেবো ভেবেই পাচ্ছি না!  প্রথমে ভাবলাম, আমার এক বাক্স রং আছে। আমি তো ছবি আঁকি না। ওটাই বন্ধুকে দিয়ে দেবো। পরে ভাবলাম,  এ রং ভালো নয়, এ দিয়ে ছবি আঁকলে ছবি খারাপ হবে। তার চেয়ে ছোট মামার দেওয়া খেলনা-পুতুলটা দেবো।   চাবি দিয়ে ছেড়ে দিলেই কেমন চোখ মটকে হাসে, আর ডিগবাজি খায়। তাই ওটা মার্বেল পেপার দিয়ে প্যাক করে নিয়েছি।  
   মিনুদিদি আমাকে নিয়ে যাবে কবিগুরু পার্কে। অনেক বলেটলে ওকে রাজি করিয়েছি। বন্ধু বলেছে, কবিগুরু পার্কে কৃষ্ণচূড়া গাছের নীচে ঠিক বিকেল চারটেয় অপেক্ষা করতে। বন্ধু এসে আমাকে নিয়ে  যাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে। সেখানে গান হবে, কবিতা পাঠ হবে। বন্ধু বলেছে, অনুষ্ঠানে 'মোদের গরব মোদের আশা...' পদ্যটা আবৃত্তি করার জন্য।       
  সাড়ে তিনটে বাজতে না বাজতেই আমি আর মিনুদিদি পৌঁছে গেছি। দু'জনে দু'জনকে কীভাবে চিনবো বলতেই, বন্ধু বলেছেন, উনি গেরুয়া পাঞ্জাবি পরে আসবেন। মুখভর্তি পাকা দাড়ি। মোটেও চিনতে অসুবিধা হবে না। আর আমি বলেছি নীল ফ্রক পরে যাবো। তাহলে একে অপরকে ঠিক খুঁজে পাবো।       
  চারটে বাজার আগেই দেখি, গেরুয়া পাঞ্জাবি পরে একজন আসছেন। মাথাভর্তি কোঁকড়া চুল, মুখভর্তি পাকা দাড়ি। কাঁধে একটা শান্তিনিকেতনী ব্যাগ। ঠিক আমার দাদুর মতো দেখতে। আমাকে দেখেও বন্ধু ঠিক চিনে নিয়েছেন। আমার কাছে এসে, আমার দিকে কয়েক পলক তাকিয়ে থেকে, হাঁটু গেড়ে বসে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছেন। আমি বন্ধুর কাঁধে মাথা রেখেছি। তারপর দুজনে গিয়ে বসেছি কাঠের বেঞ্চিতে।           
  বন্ধু ওর ঝোলা থেকে বের করলেন খবর-কাগজ মোড়া একটা বাঁধানো ছবি। সেটা আমাকে দিলেন। আমিও মার্বেল পেপার মোড়া গিফট-প্যাক বন্ধুকে দিলাম। বন্ধু খুশি হয়ে আমার দেওয়া গিফট প্যাক খুলে খেলনাটা দেখে বললেন, 'এটা তুমি আমাকে দিয়ে ভালোই করেছ! এটা তোমার কাছে না রাখাই ভালো। এটা দম দেওয়া পুতুল।  এটা তোমার কাছে থাকলে তুমিও দম দেওয়া পুতুলের মতো হয়ে যাবে। কখনো দম দেওয়া পুতুল হবে না, বুঝেছো!'  
 আমি ঘাড় হেলাই। বন্ধু বলেন, 'আমার দেওয়া ছবিটা দেখো, তোমার পছন্দ হল কিনা!'        
  মোড়ক খুলে ছবিটা দেখে আমি তো অবাক! এটা তো আমার মনের মধ্যে জমিয়ে রাখা ছবি! একবার দাদুর সঙ্গে নদীর ধারে বেড়াতে গিয়েছিলাম। নৌকায় চড়েছিলাম। মাঝি গান গাইছিল। আমি আর দাদু নৌকোর মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সেই ছবিটা বন্ধু কী করে আঁকলো! 
 আমি বলি, 'এটা তো আমার দাদু!' 
  বন্ধু আমার কপালে চুমু খেয়ে বলেন, 'আমিই তো তোমার দাদু। এখন শিগগির চলো। ওদিকে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে।  তুমি সেই পদ্যটা মুখস্ত করে এসেছ তো?'  
 আমি বলি, 'হ্যাঁ, দাদু, তুমি শুনবে একবার?
 দাদু বলেন, অনুষ্ঠানে একসাথে সবাই শুনবো। তোমার ওই দিদিটাও শুনবে। 
 ও যদি মাম্মিকে বলে দেয়?   
বললেই বা। দেখবে, তোমার মা বকবেন না। শুনলে খুশিই হবেন যে, তুমি মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে কবিতা বলেছ।



হাসি
নন্দিনী সেনগুপ্ত

সাড়ে নটা বাজলেই স্কুল ড্রেস পরে
ফোনের সামনে বসে সৃজনী কী করে?
দিদা ভাবে এ কেমন অদ্ভুত স্কুল
ঘরে বসে চুপচাপ নাড়ায় আঙ্গুল।
নড়াচড়া নেই মোটে, খোলা বই খাতা
দুই চোখ তারা তারা, পড়ে না যে পাতা।
স্ক্রীন থেকে কথা বলে শিক্ষিকা যারা
সব ছাত্রীর মুখ দেখেছে কি তারা?
কচি কচি মুখে কত ক্লান্তির ছাপ,
জানে না তো কেন এলো এই অভিশাপ!
কবে যে করবে খেলা বন্ধুকে ছুঁয়ে
লুকোচুরি, কবাডিতে গড়াগড়ি ভুঁয়ে।
দুপুরের মাঝখানে হবে স্কুল ছুটি।
ঘুমে ভরে সৃজনীর কচি চোখ দুটি। 
আধো তন্দ্রায় শোনে কে যে বলে টুকি!
দিদা বুঝি হয়ে গেছে এক ছোট খুকি
ওই বুঝি লুকিয়েছে দরজার পাশে
সৃজনী কি আজ তবে একফোঁটা হাসে?
ওই বুঝি চালিয়েছে রক অ্যান্ড রোল
কোমর দুলিয়ে দিদা বলে হরিবোল।
সৃজনী কাণ্ড দেখে হেসে লুটোপুটি
আজ দিদা নেচে নেচে বেলে লুচি রুটি
বিকেলের খাওয়া শেষে নাচে নাতনিও
চালিয়ে নতুন সুর, কিছু গান প্রিয়
দিদা ভাবে তবু মেয়ে ফোনে নেই চোখ
নেচে গেয়ে আজ তবে মন খুশি হোক
কতদিন পরে তার মুখে ফোটে হাসি 
খুকিপনা করে দিদা নাচে পাশাপাশি।

বন্দি রয়েছ যারা ছোট ছোট প্রাণ
মন ভালো রেখো করে হাসি নাচগান।
তোমাদের ঘরে যদি দাদু দিদা থাকে,
তাদের সঙ্গে হেসো রোজ ফাঁকে ফাঁকে।
শরীরের খাদ্য যে খাও তুমি রোজ,
মনের খাদ্য কী, জানো তার খোঁজ?
হাসি খুশি থাকাটা যে বড় দরকারি
মনের সঙ্গে চলে শরীরের গাড়ি।
ফোন থেকে দুদণ্ড সরাও দু চোখ
রোজ তবে হাসি মজা নাচ গান হোক।



ভোলানাথ
অভিজিৎ চৌধুরী 

বাপু, তুমি দেখতে সুন্দরী কিন্তু দংশন করলে প্রাণে বাঁচবো নিকো!
কাল কেউটে সরে গেল ফণা নামিয়ে
সাইকেল নিয়ে আরেকটু এগিয়ে গেলো ভোলা। হাউজিং এ ঢুকতেই কুকুরের পাল তেড়ে এলো।ভোলানাথ ওদের সর্দারকে চেনে, বলল,তোমার সাঙাতরা ভালা মানুষ খারাপ মানুষ চেনে নিকো!
কাজ হলো।সর্দারের হুকুমে ওরা সরে গেলো।
খাবারের প্যাকেটটা হাতে নিয়ে বেল টিপতে ভুলে গিয়ে জোর গলায় হাঁকল ভোলা, বুলবুলি মা।
দরজা খুলে হাসিমুখে বেরিয়ে এলো বুলবুলি, ভোলাকাকু।
নাও তোমার খাবার।
রাতে একা থাকতে ডর লাগলে এই উঠোনে শুতে পারি গো।
বুলবুলি বলল,না, কাকু।আমি পারব।
অনেক রাতে মা বাবা ফিরল। লক ডাউনে ওরা আটকে গেছিল।
ওরা দেখল বাইরের উঠোনে ভোলা শুয়ে রয়েছে।
একটু ভুরু কুঁচকে দেখল সমীর।মনে মনে ভাবল,অন্য মতলব কিছু নেই তো!
বুলবুলি দরজা খুলে মা বাবাকে দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল।কিন্তু ভোলাকাকুকে দেখে ওর আর ভালো লাগল।
তুমি যাও নি কাকু!
হাসল ভোলা,বলল,এবার যাব।
রাস্তায় নেমে ভোলানাথ কুকুরের পালকে বলল,আমি যে ভালোমানুষ এবার বুয়ে গেচিস দেকচি।


বৃষ্টি ছড়া 
বিপ্লব  চক্রবর্তী

আকাশ জোড়া  মেঘের মাথা
উঠল জমে কথার কথা
টিনের  চালে  শব্দ  হতেই
লাফিয়ে উঠে বলল মামা
কোথায় আমার  ছাতা

মা বলল বস্ না দোদোন
শ্রাবণ মাসের বৃষ্টি  এখন
এই নামবে এই থামবে 
ফচকেমিতে লোক  নাচাবে
দেখবি শুধু নাচন কোঁদন 

বললে মামা বুঝিস নি
ছাতের নিচে যে শুনিনি
টিনের চালে বৃষ্টি পতন
টপ টপ ঝ্যানর ঝ্যানর 
অনেকদিন  যে পাইনি


আম নয় শালিখছানা 
সুধাংশু চক্রবর্তী 

আমগাছে ঝুলে থাকা আমগুলোয় রঙ ধরেছে । বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখছি আর ভাবছি, আজব ব্যাপার ! আমগুলো এখনো কচিকাঁচাদের নজরে পড়েনি ! গেল বছরও দেখেছি, কচিকাঁচারা এসে হুটোপুটি জুড়েছিলো ওই গাছতলায় । ঢিল মেরে, লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে, এমনকি গাছে উঠেও আম পেড়ে খেয়েছে । অথচ এবছর কি হলো ওদের ? সবাই কি বড় হয়ে গেল স্কুলে যেতে না পেরে ! 
আহা রে, কতদিন হয়ে গেল স্কুলের মুখ দেখেনি ওরা । আবার কবে ওদের স্কুলে যাবার সুযোগ হবে তাও জানে না । স্কুলে যাওয়ার আনন্দ, স্কুলে যেতে না চাওয়ার জন্য কান্না... সবই হাতছাড়া হয়েছে । তাতেই হয়তো বয়সের তুলনায় বড্ড বড় হয়ে গেছে ওরা । ওহো ভুলেই গেছিলাম, আজকাল ওরা হুটোপুটি ছুটোছুটি করতেও ভুলেছে । হুটোপুটি করবে কিকরে ? সবেতেই যে বারণ আর বারণ । হয়তো সেই কারণেই আমগাছ থেকে আম পাড়ে খাওয়ার মজা নিতে আসছে না কেউ ।
  
এবছর ওই আমগাছেই বাসা বেঁধেছে এক জোড়া শালিখ । হয়তো ওরাও জেনে গেছে, এবছর কচিকাঁচারা আর উৎপাত করতে আসবে না এই আমগাছে । পাতার আড়ালে শালিখ জোড়ার নীড় বাঁধা, ডিম পাড়া, ডিমে তা দেওয়া, সবই দেখেছি এই বারান্দা থেকে । গত সপ্তাহ থেকে দেখছি, সকালে হলেই নিজেদের চারটি কচি শাবককে পালা করে খাবার খাইয়ে যাচ্ছে শালিখ দম্পতী । এখনও সেই পালাই চলছে ।  
 
সহসা বছর দশেকের একটা ছেলে এসে আমগাছটায় উঠে গেল তড়তড় করে । দেখে খুব আনন্দ হলো আমার। এবছর একটা ছেলে অন্তত আম পেড়ে খেতে এসেছে। কিন্তু ছেলেটাকে দেখেই শালিখ দম্পতী তেড়ে গেলো ওর দিকে । ছেলেটা পাত্তাই দিলো না । বরং আমারই খারাপ লাগছে এই ভেবে যে, ছেলেটাকে ওরা আম পেড়ে খেতে দেবে না। 

একটা জরুরি কাজের কথা মনে পড়ে যাওয়ায় ছেলেটার চিন্তা ছেড়ে ঢুকে এলাম ঘরের ভিতর । কাজটাজ সেরে বারান্দায় এসে দেখি, ছেলেটা নেমে এসেছে আমগাছ থেকে । শালিখ দম্পতী ওর মাথার ওপর চক্কোর দিতে দিতে চিল্লিয়ে পাড়া মাত করছে । ছেলেটা ওদের এতটুকুও পাত্তা না দিয়ে ফিরে যাচ্ছে বাড়িতে । তখনই দেখি, গাছের আমগুলো অক্ষত রয়ে গেছে এবং ছেলেটার হাতে শোভা পাচ্ছে দুটো কচি শালিখছানা। 



ব্যাঙের ছাতা
মহুয়া ব্যানার্জী

বৃষ্টি পড়ে ঝুমুর ঝামুর রিমঝিম রিমঝিম।
ব্যাঙ বাবাজী ডোবার ধারে ভিজে হোল হিম।
সর্দি বসা  ভোঁঁতা নাকে হাঁচে ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ।
সেই শুনে ঝিঁঝি পোকা করে ক্যাঁচ ম্যাচ।
তাই না দেখে ফড়িং শুধোয় ওরে বোকা ব্যাঙ,
দৌড়ে কেন পালাস নি তোর কি নেই ঠ্যাঙ?
এমন সময় মাথায় দিয়ে কচুপাতা খানি
ঝোপ থেকে উঁকি মারে ব্যাঙের গৃহিণী।
দেখে তাকে ব্যাঙ বাবাজী কাঁদে ভেউ ভেউ,
অভিমানী কান্নায় ডোবার জলে ওঠে ঢেউ।
সেই দেখে গিন্নিরও চোখ ছলছল,
ভাবে কি করলে পাবে কত্তা মনে বল?
অনেক ভেবে শেষে খাটিয়ে মাথা
গৃহিনী নিয়ে আসে ব্যাঙের মস্ত ছাতা।
সেই থেকে দুজনে সুখে একসাথে
ব্যাঙের ছাতার তলে সংসার পাতে।


দুষ্টু হাঁস জব্দ হলো
আহিতাগ্নি মন্ডল
চতুর্থ শ্রেণী, স্প্রিংডেল প্রাইমারী স্কুল, কল্যাণী

রিচার্ড নামে একটি খুব ভাল হাঁস ছিল।
তার মনটা ছিল খুব নরম,সে সবাইকে সাহায্য করত।কিন্তু তার ভাই,জ্যাক ছিল খুব দুষ্টু আর লোভী।
সে রিচার্ডকে রোজ মারত। রিচার্ডের খাবার কেড়ে খেয়ে নিত। রিচার্ডের এক বন্ধু ছিল। তার নাম ছিল ব্রান্টি দ্য ফক্স। সেও রিচার্ডের মত ই ভালমানুষ ছিল।
পাজী জ্যাক একদিন বাড়িতে বসে বসে ভাবছে, কি খাওয়া যায় ,কি খাওয়া যায়?
এদিক ওদিক দেখল। 
"ঘরে তো কোন পাউরুটির টুকরো নেই। আমি রেষ্ট নিচ্ছি। রিচার্ডকেই বলি, পাউরুটি এনে দিতে।
রিচার্ড,রিচার্ড, আমাকে শিগগিরি পাউরুটির টুক‍রো এনে দে"
রিচার্ড তাকে বলল,
"ঘরে চাল আছে।এখন তুই চাল খা প্লীজ।"
"আমি চাল খাবো না।আমি পাউরুটিই খাবো।তুমি এনে দেবে কিনা বলো" এইভাবে জ্যাক জেদ করতে লাগল।
"জেদ করিস না ," বলল রিচার্ড।
জ্যাক বলল," আমি পাউরুটিই খাবো খাবো খাবো"
এই বিষয়ে নিয়ে তাদের ঝগড়া লেগে গেল।
শেষমেষ সে রিচার্ডকে বাজারে পাঠিয়ে তবে শান্তি পেল। রিচার্ড ভাবল, নাহ, একে নিয়ে আর পারা যায় না। সে ঠিক করল, ব্রান্টি  কে একটা ফোন করি।
সে তার টেলিফোনে ব্রান্টির নম্বর টিপতে লাগল।
ব্রান্টি ফোন ধরে বলল,
"কি রে , কি হল, আবার এক ই ঘটনা?"
রিচার্ড বলল,
"হ্যাঁ রে। কি করব এখন ?"
ব্রান্টি বলল,"দাঁড়া, তোকে একটা বুদ্ধি দিই।দ্যাখ কি হয়" বলে ব্রান্টি রিচার্ডকে কানে কানে বলে দিল।
"ঠিক আছে। করেই দেখি। কি যায় আসে ?" বলল রিচার্ড।
ব্রান্টির বুদ্ধিমত রিচার্ড জ্যাকের কাছে গেল ভূত সেজে।
জ্যাক দুষ্টু হলেও মনে মনে খুব ভীতু ছিল।
রিচার্ড বলল,
"আর করবি শয়তানি? যদি করিস ,তবে তোকে কঠিন সাজা দেব"
জ্যাক বলল,
"আর আমি দুষ্টু ছেলে হবো না। রিচার্ডের সব কথা শুনব। প্রমিস!"
ভূত রূপী রিচার্ড বলল, "ঠিক আছে তবে কথাটা যেন মাথায় থাকে।"
তারপর থেকে ওরা দুইভাই সুখে শান্তিতে অনেক বছর থাকল।


মেঘকুমারী
অনন্যা মৈত্র
দ্বাদশ শ্রেণী, বেথুয়াডহরী মাতঙ্গিনী বালিকা বিদ্যালয়, নদীয়া

এক যে ছিল মেঘকুমারী
আকাশে হাত বাড়িয়ে তাকে
চাইত ছুঁতে তালের সারি৷

আকাশরানির রাজ্যপাটে
অমনতর দস্যি মেয়ে
একটিও নেই ও তল্লাটে৷

হঠাৎ তাকে খুঁজতে গেলে
যায় পালিয়ে আকাশ থেকে
উতল হাওয়ার পাখনা মেলে৷

তেমনি আবার দস্যি মেয়ে
চুপচুপিয়ে হাজির হবে 
বরফসাদা নৌকো বেয়ে৷

হোক না দিনে কিংবা রাতে
লুকোচুরির খেলবে খেলা
জ্যোৎস্না এবং রোদের সাথে৷

আবার কখন অন্য খেলা
উঠবে মেতে তাকেই নিয়ে
সকাল দুপুর সন্ধেবেলা৷

কাজলকালো চুল এলিয়ে
মুখের পরে পিঠের পরে;
ঝিলিক হাসি যায় খেলিয়ে৷

জলের চুড়ি জলের নূপুর
যায় বাজিয়ে রিনিক ঝিনিক
রিমঝিমিঝিম টাপুর টুপুর৷

কখন আবার চুল সরিয়ে
গাছের পাতায় জলের ফোঁটা
হাওয়ার দোলায় ঝরঝরিয়ে

রোদের সোনা সিঁদুর মেখে
তুলির টানে ভুরুর পরে
ইন্দ্রধনু রাঙিয়ে এঁকে

লুকিয়ে পড়ে মেঘকুমারী
হাত বাড়িয়েও কিন্তু তাকে
পায় না ছুঁতে তালের সারি৷


ফুলকুসুমপুর খুব কাছে ১৪
রতনতনু ঘাটী

তিন্নিরা হইহই করে স্কুল থেকে ফিরে এল। দোতলায় উঠে পড়ার ঘরে স্কুলব্যাগ ফেলে রেখেই ছুটে এল বিংগোর কাছে। তখনও দাদুর সঙ্গে গল্পকাকার কী নিয়ে যেন কথা হচ্ছে। বুম্বা বলল, ‘অ্যাই তিন্নিদি, বিংগোটা কী সুন্দর দেখতে রে! ওই দ্যাফ, কেমন পিটপিট করে দেখছে!’
   তখনই কী ভেবে বিংগো খাঁচার দরজার কাছে এসে খাঁচার গায়ে মুখ ঘষতে লাগল। তিন্নি বলল, ‘মনে হয় ওর খিদে পেয়েছে গল্পকাকা!’
   ‘না রো, এই তো খানিক আগেই খেতে দিলাম। মনে হয় তোদের দেখে বন্ধুত্ব করার প্রস্তাব জানাচ্ছে!’ তারপর দাদুর দিকে তাকিয়ে আগের প্রসঙ্গে কথা টেনে এনে গল্পকাকা বললেন, ‘বাবা, আমি কুকুরের আর-একটা গল্প বলে ইভিনিংওয়াকে যাব। তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে বাবা,’ তিন্নিদের উদ্দেশ্যেও বললেন, ‘তোরাও গল্পটা শোন,  ‘মহাভারত’-এর সতেরো সর্গে হস্তিনাপুর থেকে পাণ্ডবদের মহাপ্রস্থানের পথে সঙ্গী হয়েছিল একটি কুকুর? তখন ইন্দ্র বললেন, ‘যার সঙ্গে কুকুর থাকে, সে স্বর্গে যেতে পারে না!’
   উত্তরে যুধিষ্ঠির বললেন, ‘আমি নিজের সুখের জন্যে এই কুকুরকে ত্যাগ করতে পারব না! ভক্তকে ত্যাগ করলে পাপ হয়!’
   ইচ্ছেদাদু গল্পকাকার কথার মাঝখানে বললেন, ‘সে গল্প জানি তো রে! 
তারপর ধর্মদেবতা কুকুরের রূপ পরিত্যাগ করলেন। ইন্দ্র পুষ্পকরথ নিয়ে এসে বললেন ‘মহারাজ, এই রথ আপনার জন্য!’ তারপর যুধিষ্ঠিরকে স্বর্গে যেতে বললেন।’
   গল্পকাকা বললেন, ‘কেন বাবা, কত কথাই না মনে পড়ছে! বিন্নির দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে কোন প্রাণী প্রথম মহাকাশে গিয়েছিল তুই বলতে পারিস?’
   বিন্নি পড়াশোনায় খুব ভাল। কুইজেও দারুণ। সে উত্তর দিল, ‘রাশিয়ার কুকুর, তার নাম ‘লাইকা’। 
   গল্পকাকা তারিফ করে বললেন, ‘বাঃ! ঠিক বলেছিস! ‘স্পুটনিক-২’ মহাকাশযানে চড়ে উনিশশো সাতান্ন সালের তিন নভেম্বর সে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিল। সে ছিল মস্কোর রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো একটা মেয়ে-পথকুকুর! মাত্র তিন বছর বয়সে তাকে মহাকাশবিজ্ঞানীরা মহাশূন্যে পাঠিয়েছিলেন।’
   বুম্বা কমিকসের ভক্ত। টিনটিন কমিকস হলে তো কথাই নেই। গল্পকাকা জিজ্ঞেস করলেন, ‘বল তো বুম্বা, টিনটিন কমিকসে টিনটিনের কুকুরের নাম কী?’
   চটপট বুম্বা উত্তর দিল, ‘কে না জানে গল্পকাকা? স্নোয়ি!’
   ‘কুকুর কতই না অসাধ্যসাধন করে, সে কথা কে না জানে? চোর ধরে দেয়। তবে আমাদের বিংগো চোর ধরবে কিনা দেখার অপেক্ষায় থাকতে হবে।’ হাসিমুখে বললেন ইচ্ছেদাদু।
   গল্পকাকা ছোটদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তোরাও জেনে রাখ। প্রথমবার উনিশশো তিরাশি সালের উনিশ ডিসেম্বর চুরি যাওয়া বিশ্বকাপ ফুটবলের ট্রোফিটি এক সপ্তাহ পরে ‘পিকেন্স’ নামের একটি সাদা-কালো কুকুর নরউডের পাহাড়ের গায়ের একটা বাগান থেকে জুলে রিমে ট্রোফিটি উদ্ধার করে দিয়েছিল। সে ঘটনার কথা কেউ কি ভুলতে পারে?’ এ কথা বলে বেরিয়ে গেলেন গল্পকাকা ইভনিংওয়াকে।
   অনিচ্ছেঠাকুরমা রান্নাঘরের দিক থেকে দোতলায় উঠে এলেন। বললেন, ‘তোরা এখনও কেউ হাত-মুখই পরিষ্কার করিসনি?’ তারপর দাদুর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তুমিই বা কী মানুষ? ওরা স্কুল থেকে ফিরে হাত-মুখ ধোয়নি, কিচ্ছুটি মুখে দেয়নি, আর তুমি ওদের নিয়ে গল্প করছ?’
   দাদু বললেন, ‘তুমি তো সবেতেই শুধু গল্প দেখতে পাও। আমাদের এখন কথা হচ্ছিল কুকুরের চমকে দেওয়া নানা কাহিনি নিয়ে। জানো, বিশ্বকাপ ফুটবলের চুরি হয়ে যাওয়া ট্রোফিটা একটা কুকুর খুঁজে দিয়ে পৃথিবীকে চমকে দিয়েছিল?’
   ঠাকুরমা দাদুকে বললেন, ‘ওই সব গালগল্প নিয়ে তুমি থাকো!’ তারপর তিন্নিদের তাকিয়ে বললেন, ‘যা, সব হাত-পা ধুয়ে এসে খেয়ে নে। সন্ধেবেলা পড়তে বসতে হবে না? সন্ধে হওয়া এখন আর কার ঘরে? এই তো সূর্য পাটে গেল বলে!’ সকলেই চলে যাচ্ছিল। 
   ঠাকুরমা বুম্বাকে ডাকলেন, ‘এই যে বুম্বাবাবু, তোমার সঙ্গে আমার রাধাগোবিন্দকে কথা-বলা শেখানোর চুক্তি হয়ে আছে না? এক্ষুনি খেয়ে এসে ওকে একটা দুটো কথা শেখাও তো! আমার রাধাগোবিন্দ তোমার কাছে কথা বলা শিখতে পছন্দ করে, তা কি তুমি জানো না?’
   বুম্বা আকাশ-পাতাল ভাবতে লাগল, ইচ্ছেঠাকুরমা এই দরকারি কথাটা কার কাছ থেকে শুনলেন কে জানে? সে কথা না বাড়িয়ে চটপট ফিরে এল রাধাগোবিন্দর খাঁচার সামনে। বুম্বাকে দেখেরা ধাগোবিন্দ মনে হয় চিনতে পারল। ডেকে উঠল, ‘ট্যাঁ-ট্যাঁ!’
   অনিচ্ছেঠাকুরমা খাঁচার সামনে এগিয়ে গিয়ে রাধাগোবিন্দকে বললেন, ‘বলো তো বাবা, বুম্বাদা, এসো!’
   রাধাগোবিন্দ আবারও ওরকম বার কয়েক ট্যাঁ-ট্যাঁ করে তারপর থামল। ঠাকুরমা বললেন, ‘দেখলি তো, তোর নামটাও কেমন শিখে নিয়েছে! ওই তো নিজের কানেই শুনলি তো, ‘বুম্বাদা! বুম্বাদা!’
   ইচ্ছেদাদু সে কথায় ফোড়ন কাটলেন, ‘অনিচ্ছে, শোনো। আমি বই পড়ে যেটুকু জেনেছি, পাখিরা চট করে যুক্তাক্ষর বলতে পারে না! তবু তোমার রাধাগোবিন্দ ‘বুম্বাদা’র মতো যুক্তাক্ষর শিখে ফেলল কী করে? ও তো তাহলে বিদ্যাসাগর মশাইয়ের ‘বর্ণপরিচয় প্রথম ভাগ’ আর ‘দ্বিতীয় ভাগ’টা এক্ষুনি শেষ করে ফেলল বলে?’ 
   ঠাকুরমা দাদুর কথার ভিতরে লুকিয়ে থাকা খোঁচাটা ধরতে পারলেন না। বরং খানিক অনুনয়ের গলায় বললেন, ‘এর পর তুমি যেদিন বাজারে যাবে, মনে করে আমার রাধাগোবিন্দর জন্যে ওই বই দুটো এনো! দেখো, ভুলে যেও না যেন! আমার রাধাগোবিন্দকে শিক্ষিত করে তুলতে হবে না?’
   ইচ্ছেদাদু বললেন, ‘আ-হা-হা! বুম্বার বইয়ের তাকে খুঁজলে হয়তো পুরনো ওই বই দুটো পেয়ে গেলেও যেতে পারো! আর তোমার রাধাগোবিন্দ নতুন বই না হলে লেখাপড়া শিখবে না, এমন তো নয়! আপাতত এভাবেই রাধাগোবিন্দর শিক্ষা শুরু হোক না!’
   ততক্ষণে বিন্নি আর তিন্নিও হযবরল চিড়িয়াখানার সামনে এসে গেছে। ওদের মনটাই পড়ে থাকছে এখানে।
   অমন সময় ইচ্ছেদাদু মোবাইলে মেসেজ দেখতে-দেখতে উত্তেজিত গলায় ইচ্ছেঠাকুরমার উদ্দেশে বলে উঠলেন, ‘এদিকে এক দারুণ মেসেজ এসেছে গো! এসো, এসো! এদিকে এসো!’
   ঠাকুরমা জানতে চাইলেন, ‘কোত্থেকে আবার কী মেসেজ এল?’
   ছোটরাও ঘিরে ধরল ইচ্ছেদাদুর চারপাশে।
(এর পর আগামী রোববার)



গল্পে গল্পে ক্যুইজ
রাজীব কুমার ঘোষ
পর্ব ৪
আপ টু ডেট — “কি ঘর বানাইমু আমি শূন্যেরও মাঝার”

একটু বড় হতেই কিছু কিছু ইংরাজি শব্দ আমাদের সময়ে কানে ঘন ঘন আসতো। শব্দেরা কানে কোথা থেকে আসে? অভিভাবকদের কাছে থেকে, অভিভাবকদের বন্ধু-বান্ধবদের থেকে, শিক্ষকদের কাছ থেকে, বন্ধুদের কাছ থেকে, রেডিও থেকে, কাগজের বিজ্ঞাপন থেকে এবং যখন ঘরে ঘরে টেলিভিশন চলে আসলো, তখন অবশ্যই সেই টিভি থেকে। এইসব শব্দগুচ্ছের মধ্যেই ছিল, ‘আপ টু ডেট’। একটা সময় এমন হয়ে উঠল, মনে হল আমাদের জীবনের সার্থকতা এই ‘আপ টু ডেট’ হয়ে ওঠায়। যেন এরই ওপর আমাদের স্মার্টনেস, জীবিকা এবং জীবন নির্ভর করছে। 
  আপ টু ডেট এই কথাটির মোদ্দা অর্থ হল, সাম্প্রতিক যা ঘটছে তার সম্পর্কে খোঁজ রাখা, অবহিত হওয়া। স্মার্ট ফোন পূর্ব যুগে ছাত্র মহলে আপ টু ডেট বলতে সাম্প্রতিক চলচ্চিত্র, উঠতি নায়ক-নায়িকা, নতুন খেলোয়াড়, সাম্প্রতিক লেখক, জনপ্রিয় বই বা কোনো নতুন যন্ত্র বা ব্যবস্থা সম্পর্কে খবর রাখাই বোঝাত। শিক্ষকবৃন্দ আর গুরুজনেরা অবশ্য আপ টু ডেট কথাটা ব্যবহার করতেন পড়াশোনা আর জেনারেল নলেজের ক্ষেত্রে। 
  এখন স্মার্ট ফোন আর বিভিন্ন অ্যাপ-এর সৌজন্যে তোমরা ‘আপ টু ডেট’ এই শব্দগুচ্ছের অর্থ জলের মতন বুঝে ফেল। প্রতিটি অ্যাপ প্রতিনিয়ত তোমাদের কাতর আবেদন জানিয়ে চলে, ‘আমাদের আপ ডেট হবার অনুমতি দাও’। কোনো অ্যাপ ঠিকঠাক কাজ না করলে, বন্ধুরা বলে, ‘আপ ডেট’ করে নে। প্রতিটি আপ ডেটে যেমন অ্যাপগুলো নতুন ডাটা ডাউনলোড করে করে মোটা হতে থাকে, স্ফীত হতে থাকে ঠিক তেমনি করে আমরাও জ্ঞানচক্ষু উন্মোচনের পর ক্রমাগত ‘আপ টু ডেট’ হতে হতে তথ্যের একটি ভান্ডার হয়ে যাই। কেউ কেউ শুধু ভান্ডারী হয়েই থাকে, সেই ভান্ডারকে সেভাবে কোনো প্রয়োগ করে না। আবার কেউ কেউ ভান্ডারের সার্থকতা চাকরি পাওয়া অবধি সীমিত রাখে। কেউ আবার সারা জীবন এই ভান্ডারকে কোনো বিশেষ দিকে সমৃদ্ধ করে চলেন এবং প্রয়োগ করেও চলেন। একসময় তাদের আমরা বলি ‘রিসোর্স পার্সন’। 
শূন্যের ওপর কি কোনো পাকাপোক্ত বাড়ি বানানো যায়? তাহলে সে বাড়ি ভাসমান বাড়ি। ঝড় দিলে উড়ে চলে যেতে পারে। আপ টু ডেটের চক্করে অনেক সময়েই আমরা ভুলে যাই যে ‘আপ’টা তো বুঝলাম — সাম্প্রতিক কিন্তু ‘আপ’ থাকলে একটা ‘বটম’ থাকবে, একটা ‘তলা’ থাকবেই তবেই তুমি আপ টু ডেট হতে পারো। 

  ‘আপ টু ডেট’ মানে আগের তথ্যের সঙ্গে নতুন তথ্যের মিলন। তোমার মোবাইলে যদি অ্যাপটাই না থাকে তাহলে তার আপ টু ডেট হতে পারে কি? পারে না। অথচ, বাস্তবে নবীন প্রজন্ম ঠিক এই কাজটাই করে চলেছে, শূন্যের ওপর তথ্যের ইমারত তৈরি। আগের তথ্যটি না জানলে, নতুন তথ্যের তুমি জোরদার ব্যবহার করতে পারবে না। শুধু তাই নয় তুমি নতুন তথ্যও নির্মাণ করতে পারবে না। যার প্রমাণ চারদিকেই ছড়িয়ে আছে। যেমন ধরো চলচ্চিত্র, গানের ক্ষেত্রে অর্থাৎ বিনোদন জগতে এখন রিমেকের রাজত্ব। রিমেক আগেও হত অবশ্যই কিন্তু বিগত এক দশক ধরে তা যেন লাগামছাড়া। একইভাবে সাহিত্যের ক্ষেত্রে চৌর্যবৃত্তি অনেক বেড়ে গেছে এমনকি শুনলে অবাক হবে গবেষণার ক্ষেত্রেও। তোমাদের মধ্যে অনেকেই স্কুলের কাজের ক্ষেত্রে ‘কপি-পেস্ট’ করে কোনো লেখা তৈরি করো। এই প্রবণতা বন্ধ না করলে এটা তোমাদের কেরিয়ারকেও কিন্তু ভয়াবহ ক্ষতি করে দেবে। এর মধ্যেই বিভিন্ন প্রাইভেট সংস্থায় আলাদা আই টি সেল তৈরি হয়ে গেছে যারা তাদের কোম্পানিতে চাকরির জন্য আবেদন করা প্রার্থীদের জমা দেওয়া এবং প্রকাশিত কাজগুলিকে খুঁটিয়ে দেখছে, এমনকি তাদের বিভিন্ন সোশাল একাউন্টগুলিও। বেশ কিছু দুঃখজনক ঘটনা এর মধ্যেই ঘটেছে। যেখানে অনেক নম্বর পাওয়া, ঝকঝকে শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রার্থীর আবেদন শুধু বাতিল হয় নি তাকে কোম্পানী ব্ল্যাক লিস্টে ফেলে দিয়েছে। নিজের জীবিকার ক্ষেত্রে অন্য কোম্পানীতেও তার চাকরি পাওয়া দায় হয়ে উঠেছে। কারণ একটাই স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি লেভেলে কপি-পেস্ট অভ্যাসের জন্য যে কাজ সে সাবমিট করেছে তাতেও এই ‘কপি-পেস্ট’ সংস্কৃতির ছাপ পড়েছে। এই আপ টু ডেট তথ্যটা তোমাদের জানালাম। 

  তোমরা এটাও জেনে রাখো কোনো লেখায় অন্য কোনো লেখা থেকে কপি করা হয়েছে কিনা তা ধরার জন্য সফটওয়্যার আছে, যেগুলো বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষেত্রে নিয়মিত ব্যবহার করা হয়, আন্তর্জাতিক স্তরে তো বটেই। আর কয়েকদিন বাদে স্কুল শিক্ষকদের হাতেও চলে আসবে নিশ্চয়ই। সুতরাং তথ্য ব্যবহার করে নিজে লেখো, তথ্য হুবহু টুকে দিও না আর তথ্য ব্যবহার করলে তার উৎস অবশ্যই উল্লেখ করবে। তবে যেগুলো সবার জানা সাধারণ তথ্য সেগুলোর ক্ষেত্রে অসুবিধা নেই। যেমন ধরো কেউ যদি রচনা বই থেকে লাইন তুলে লেখে, ‘দিল্লি ভারতের রাজধানী’ বা ‘রবীন্দ্রনাথ ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ পেয়েছিলেন’, তাহলে অসুবিধা নেই। 

  তাহলে কোনো বিষয়ে সাম্প্রতিক তথ্য যেমন নজরে রাখা দরকার ঠিক তেমন ভাবেই সেই বিষয়ে পুরনো তথ্যও জানা দরকার। তোমরা দেখবে খবরের কাগজে বা পত্রিকায় যখন কোনো খেলার নতুন রেকর্ডের খবর দেওয়া হয় তখন একই সঙ্গে উল্লেখ করা হয় আগে এই রেকর্ডটি কার দখলে ছিল বা এর আগে কারা কারা এই রেকর্ড করেছেন। অথবা ধরো মঙ্গলে কোনো যান পৌঁছাল, খবরে কিন্তু উল্লেখ থাকবে এর আগে কোন কোন যান মঙ্গল গ্রহে গেছে, তার মধ্যে কটি মঙ্গলের বুকে নেমেছে ইত্যাদি তথ্য। তোমরা হয়ত এই পুরনো তথ্যগুলো পড়েও দেখো না, এবার থেকে একটু নজর রাখবে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি তোমরা খবরের কাটিং-এর একটা খাতা বানাতে পারো। যেখানে তোমরা এই ধরণের খবরগুলো কেটে আঠা দিয়ে লাগিয়ে রাখবে। কোনো তথ্যের পেছনে যদি তোমরা পরিশ্রম করো তাহলে সহজে তা ভুলে যাবে না, শুধু তাই নয় বহু পরেও যদি ওই তথ্যটি দরকার হয়, ভুলে গেলেও মনে থাকবে যে তথ্যটা কোথায় তুমি জোগাড় করে রেখেছিলে। আর এভাবেই একদিন তুমি হয়ত একজন রিসোর্স পার্সন হয়ে যাবে, ঠিক ফেলুদার গল্পের সিধু জ্যাঠার মতন। শুরু করে দাও। যে বিষয়ে তোমার আগ্রহ সবচেয়ে বেশি সেই সংক্রান্ত তথ্যের ভান্ডার তৈরি করো। এখন তা ডিজিটাল উপায়েও করা যেতে পারে। প্রয়োজন মতো কম্পিউটারে ফোল্ডার তৈরি করে তাতে তথ্যটির লিঙ্ক, বা ফাইল বা কাটিং এর স্ক্যান রাখা যেতে পারে। তবে চুপি চুপি বলি খাতার কোনো বিকল্প নেই। আমি এখন প্র‍্যাকটিক্যাল খাতা ব্যবহার করি। এতে কাটিং জমে জমে মোটা হলেও অসুবিধা হয় না। সামনের রোববারে ক্যুইজের পাতায় আবার দেখা হবার আগে আশা করি তোমরা এমন খাতা তৈরি করে ফেলবে। 
এবার আমরা চলে আসি ক্যুইজে
১।। ফেলুদার গল্প অনুসারে সিধু জ্যাঠার পুরো নাম কী?
২।। মনে করা হয় যে সিধু জ্যাঠা চরিত্রটি একটি বাস্তব চরিত্রের আদলে তৈরি করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। কে সেই ব্যক্তি?
৩।। এই যে তোমরা ‘অ্যাপ’ (app) শব্দটা ব্যবহার করো, কীভাবে আসল এই শব্দ?
৪।। রবীন্দ্রনাথের নোবেল প্রাইজ পাওয়ার পরের বছর সাহিত্যে কে নোবেল পেয়েছিলেন?
৫।। গুগুল বা ইয়াহু-র মতোই PlagAware একটি সার্চ ইঞ্জিন, কিন্তু বিশেষ সার্চ ইঞ্জিন। এই সার্চ ইঞ্জিনে আমরা কী কাজ করি?
৬।। বিশ্ব সুখ দিবস কবে পালিত হয়? রাষ্ট্রসংঘের পক্ষ থেকে এই বছরে সুখী দেশের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে (২০২০ সালের সমীক্ষার ফল) তাতে আমেরিকার স্থান ১৯, চিনের ৮৪, বাংলাদেশের ১০১, পাকিস্তানের ১০৫; ভারতের স্থান কত নম্বরে?
৭।। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে, রাতের আকাশে ছ’শোটি ড্রোন উড়িয়ে ২৬ মিনিট ১৯ সেকেন্ড ধরে তৈরি করা হয়েছে ভ্যান গঘের নানা ছবি। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড এটি। মানুষ ছাড়া কোনো উড়তে থাকা বস্তু দিয়ে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে এনিমেশন তৈরি করার রেকর্ড। কোথায় হয়েছিল এই অভিনব অনুষ্ঠান?
৮।। ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী দিল্লির আগে কোথায় ছিল? কত সালে দিল্লিতে রাজধানী সরে আসে? 
৯।। চাকরির বাজারে ‘কপি পেস্ট জব’ কী ধরণের কাজ?
১০।। “কি ঘর বানাইমু আমি শূন্যেরও মাঝার”, এটি একটি বিখ্যাত গানের পংক্তি। কার রচিত গান?

  পরের রবিবার মিলিয়ে নিও তোমাদের উত্তর। সেদিন এই উত্তরগুলো নিয়েই হবে কিছু গল্প। উত্তর মানে তো জানার শেষ নয়, আরো জানার শুরু। প্রতিটা উত্তর আরো আরো গল্প নিয়ে আসে। আর হ্যাঁ, জানাতে ভুলবে না গল্পে গল্পে ক্যুইজ তোমাদের কেমন লাগছে।



পাঠ প্রতিক্রিয়া ১
( হুগলির টেকনো ইন্ডিয়া স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী নীলাঞ্জনা শীল জ্বলদর্চির ৩৯ তম ছোটো বেলা সংখ্যা পড়ে যা লিখল🖋️)

রতনতনু ঘাঁটির লেখা 'ফুলকুসুমপুর খুব কাছে' উপন্যাসটি আমাদের সামনে এক পারিবারিক ছবি তুলে ধরেছে। এই বাড়ির মাথা, ইচ্ছে প্রসন্ন ত্রিপাঠীর কথাই শেষ কথা হিসেবে মেনে এসেছে এবাড়ির সবাই। কিন্তু রাধাগোবিন্দর জন্য অনিচ্ছেঠাকুমা গলা তোলার পর থেকেই হঠাত্ করে সবকিছুই যেন অন্যরকম স্বপ্নের মতো পরপর ঘটছে। এগিয়ে এসেছে বাড়ির বাকিরা আর আশ্রয় মিলেছে বিংগো, মিঁউ, কুমি আর রাধাগোবিন্দর। বাড়ির চার সদস্য, বড়বাবু, অনিচ্ছেঠাকুমা, শুধুকাকু আর গল্প কাকু মেতে উঠেছে পোষ্যদের নিয়ে। সবার মাথায় এখন নিজেদের-নিজেদের পোষ্যে নিয়ে বিভিন্ন চিন্তা। অনিচ্ছেঠাকুমা রাধাগোবিন্দর কাছে প্রতিজ্ঞা করেছে যে সে কয়েকটা কথা বলতে শিখলেই, তাকে সে সোনার শিকল গড়িয়ে দেবে। বড়বাবু মিঁউকে এমন আদব কায়দা শেখাতে চান যাতে মিঁউ স্বাধীনভাবে খাঁচা থেকে বেড়োতে ও ঢুকতে পারবে আর ঘরময় ঘুরে বেড়াতে পারবে। সে যাতে সেই বাড়ির অন্য পোষ্যদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পারবে। শুধুকাকা তো দু-দিন ধরে কলেজস্ট্রিট  ঘুরে কিনে ফেলেছে কুমিকে পালন করবার সহজ উপায়ের নতুন বই। বাড়িতে এখন হইহই ব্যাপার। তিন্নি, বিন্নি আর বুম্বার তো আনন্দের শেষ নেই। তাদের বন্ধুরাও চিড়িয়াখানা দেখতে ত্রিপাঠী বাড়ি ঘুরতে এসেছে। কিন্তু সব গোল গিয়ে পড়েছে এখন আমাদের প্রিয়, অসহায় ও ভুলোমন বিলম্বদাদুর কাঁধে। কথাবার্তায় বোঝা যাচ্ছে, এসবের মধ্যে ইচ্ছেদাদুও সবকিছু বেশ উপভোগ করছেন। কুমিকেও তার পছন্দ হয়েছে খুব। কুমিও খুব খুশি এত বড় খাঁচা আর খাবার পেয়ে। আর খুশি, চিকলু আর নিলূফার, কারণ বিলম্বদাদু তাদের বাড়ি পৌঁছে দেবে। আমারও খুব মজা লাগছে ‘ফুলকুসুমপুর খুব কাছে’ পড়তে। জলদ্বর্চির ই-ম্যাগাজ়িন হাতে পেলে আর কোনো গল্প পড়বার আগে আমার প্রথম লক্ষ থাকে ‘ফুলকুসুমপুর খুব কাছে । 

  বন্দনা আন্টির অর্থাৎ বন্দনা সেনগুপ্তের ‘গল্প কথায় আম্র কথা’ আমার খুব ভালো লাগল। আসলে, আমি নিজেই আমের একজন খুব বড় ভক্ত। এমনকি, আমার বাড়িতেও আম গাছ আছে---হিমসাগর আর আম্রপালী। সে আম গাছের গল্প অন্য কোনো দিন শোনাব বরণ। কিন্তু এরকম পাড়া-পড়োশী সবাই মিলে একসাথে ভাগ করে নেমন্তন্ন খাওয়ানোর মতো নয়। আহা! আমিও যদি আসল টাইম মেসিনে চেপে তোমাদের সেই আগেকার সময়ের বাড়িতে পাড়ি দিতে পারতাম, তাহলে, আমিই সব সাবাড় করে ফেলতাম। আহা! যদি এক টাকায় সত্যিই একশোটা আম পেতাম তাহলে এক ঘর আম কিনে ফেলতাম। আগেকার সময়ের এই আমের কথা পড়তে পড়তে আমি নিজেই ঠোঁট চাটছিলাম। কতরকমভাবে আম! 

   ভূমিকা গোস্বামী আন্টির ‘শালিক পরিবার ও দধিমুখী’ র গল্পটাও আমার দারুণ লাগল। আমরা সবাই এই পৃথিবীতে খেয়ে বেঁচে থাকার জন্যে এসেছি। তেমনি সাদার ওপর সুন্দর কালো চোখওয়ালা বেড়াল দধিমুখীও তাই শালিক পরিবারের উপর অনেক দিন ধরে নজর রাখছে, খাবারের লোভে। যেমনভাবে একজন শিকারি তার শিকারের সব চলনচালন লক্ষ রাখে। কিন্তু সেদিন শালিকগুলোর ঠোকরের জন্যে মাথার ব্যথা তার এখন ও কমেনি। সেদিন না মানলেও আজও সে ভয় পায় তাদের। তাই খাবারের জোগান হয়ে যাওয়ায় সে খুব খুশি। তাকে আর ওই শালিকগুলোর কাছে যেতে হবে না। আর ঠোকরও খেতে হবে না। 
সোমরাজদাদার ‘আমার চোখে সিটং’ -য়ে তার সিটং যাবার অভিজ্ঞতা পড়েও বেশ ভালো লাগল। বুঝতে পারছি, আমাদেরও কোরোনা পর্ব শেষ হলে সিটংয়ের বিশেষ পর্বের কথা চিন্তা করতে হবে। সোমরাজদাদার এই অভিজ্ঞতা পড়ে আমারো মন  আনচান করে উঠছিল সিটং যাবার জন্য, বিশেষে থাকার জন্য, রক ক্লাইম্বিং করার জন্য আর আনন্দ লোটার জন্য। কিন্তু একমাত্র কোরোনা পর্ব কাটলে তবেই সম্ভব এতোকিছু। তবে, দাদার ওখরের গল্প শোনবার জন্যে অপেক্ষা করে রইলাম।

   সুস্মিতা সাহা আন্টির গল্প 'তিতির আর চড়ুই' আমার ভীষন ভালো লাগল।ঝগড়া তো আমরা সবাই করি। ভাই-বোনের ঝগড়া তো এই পৃথিবীর প্রত্যেক পরিবারের নিত্যদিনের কথা। কিন্তু আমরা সেই ঝগড়ার কথা বেশিক্ষন মনে রাখতে পারি না। কিছুক্ষন পরে কীভাবে যেন আবার মিল হয়ে যায়। কখনো কখনো, আবার, ছোটো ছোটো অনেক ঘটনাও ম্যাজিক করে বাড়ির সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলোর সমাধান করে দিতে পারে। এ সবই যেন নিমেষের মধ্যে ম্যাজিকের মতো হয়ে যায়। যেমনভাবে ওই ছোট্ট মিষ্টি চড়ুইটার ওরকম আগমন কীভাবে যেন দুষ্টু পিকলুকে নিমেষে শান্ত ও বাধ্য ছেলে করে দিল আর তিতির আর তার রাগি দাদার নিত্যদিনের ঝামেলার মিটমাট করে দিল।


ছড়ায় পাঠ প্রতিক্রিয়া ২ (জ্বলদর্চির ৪০ তম ছোটোবেলা সংখ্যা পড়ে পীযূষ প্রতিহার ছড়ায় প্রতিক্রিয়া পাঠালেন) 

প্রথমেই তার কথা সম্পাদক যিনি
বিন্দুতে সিন্ধুর দিশা দিয়েছেন তিনি।
এরপরে গল্প পড়ি 'বাঘিনি'র নামে
রাগী মুরগির চালে ঝগড়াও থামে।
ছড়ায় ছড়ায় মজা 'স্বপ্ন ভরা শিশি'
যেথায় রাখলে হাসি হয়নাকো বাসি।
মীরদারোগার শখ তবলার বোলে
কি জানি কি হত আজ স্বপ্ন না হলে!
'বেঁচে থাকার লড়াই' কেমন ব্যাঙের দল শিখিয়ে দিল
কাগজের নৌকা চড়ে কেমন করে ডাঙায় গেল।
'রঙের খেলা' গল্পে দাদু কেমন উপায় বাতলে দিল
ফুটবলের জন্য ওরা এ কষ্টটা মেনেই নিল।
'ছোটো কাল' ছড়ায় দেখি সব ছোটদের কষ্ট একই
অনলাইনের স্ক্রিনেই এখন বন্ধ ঘরে জগৎ দেখি।
সাইক্লোন প্রিভেনশনের যন্ত্র যদি সফল হতো
কত বড় ক্ষয়ক্ষতিও সুইচ টিপে আটকে যেতো!
অপূর্ব আর সুশান্তের অনেক দিন পরে কথা
এই গল্পের পরিনতি মনে প্রাণে আনে ব্যাথা।
হযবরল চিড়িয়াখানায় নতুন কুকুর বিংগো এল
ইচ্ছে দাদুর কথায় সবাই পড়ার সময় পড়তে গেল।
'গল্পে গল্পে ক্যুইজ' এবার জবাব নিয়েও গল্প বলা
এভাবেই এগিয়ে চলুক জ্বলদর্চির ছোটোবেলা।
গল্প,ছড়া অনেক হল, এবার ছবির কথা বলি
অপু পালের চিত্রে দেখি ছোটোবেলার জলকেলি।
এবারের সব ছবি গুলোই বেশ বেশ ভালো ছিল
অনীশা মন্ডলের ছবি মন ও প্রাণ ভরে দিল।


জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

1 Comments