জ্বলদর্চি

অনলাইন পরীক্ষা: পদ্ধতি ও মূল্যায়ন - কিছু প্রশ্ন/সজল কুমার মাইতি

অনলাইন পরীক্ষা: পদ্ধতি ও মূল্যায়ন - কিছু প্রশ্ন

সজল কুমার মাইতি


বিশ্বব্যাপী এই অতিমারিতে মানুষ আজ শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত। ভাইরাস নিত্য নতুন স্ট্রেনে রূপান্তরিত হয়ে সেই বিপর্যয় বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। ভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ের প্রভাবে আমাদের দেশের অনেকেই আক্রান্ত হয়েছিলেন। অনেকের মৃত্যু ও হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব এতটাই প্রবল যে পরিচিত এমন পরিবার খুঁজে পাওয়া মুস্কিল যেখানে এই মারণ ভাইরাস থাবা বসায় নি। আমরা বহু সহকর্মীদের ও আত্মীয়দের হারিয়েছি। আতঙ্কে আছি আর কতও না হারাতে হতে পারে আগামী অজানা ভবিষ্যতে। তা বলে তো সব কাজ ফেলে মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে বসে থাকলে চলবে না। মানুষ গড়ার কারিগরদের মানব থেকে মানব সম্পদে রূপান্তরিত করার কাজ চালিয়ে যেতে হবে। জাতির ভবিষ্যতদের গড়ার কাজ বন্ধ থাকাটা কোন সুপরামর্শ হতে পারে না। কিন্তু সমস্যা হল এই পরিস্থিতিতে তা কিভাবে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়? উপায় হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্ষমতা ও সুযোগ অনুযায়ী শুরু হোল শিক্ষা দান প্রক্রিয়া।

   শুরুতে কোথাও হোটাসআপ, জুম, জোহো, ওয়েবএক্স অ্যাপ দিয়ে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উদ্যোগ নেয়। পরে অধিকাংশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা দানে জুম, গুগল মিট অ্যাপ বহুলভাবে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। এখন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন শিক্ষাদানের প্রধান মাধ্যম ফ্রি ও পেড (Paid) ভার্সনের গুগল মিট অ্যাপ বা জুম অ্যাপ। ভিডিও অডিও অন রেখে শিক্ষকেরা বহু ক্ষেত্রে সফলভাবে যতদূর সম্ভব শিক্ষাদানের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। স্ক্রীন শেয়ার করেও এই কাজে ছাত্রদের কিছুটা সাহায্য করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সমস্যা থেকে যাচ্ছে প্রাক্টিক্যাল ক্লাসের ক্ষেত্রে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষক শিক্ষিকারা নিজেরা কিছু ছোট্টখাটো ইন্ট্রুমেন্ট কিনে ছাত্রছাত্রীদের গুগল মিটের বা জুম অ্যাপের মাধ্যমে এক্সপেরিমেন্টগুলো দেখানোর ও বোঝানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের এই উদ্যোগকে সাবাশ না জানিয়ে যে কোন বিবেকবান ব্যক্তির পক্ষে চুপ করে থাকতে পারা যায় না। এই কাজ ও ' দুধের সাধ ঘোলে মেটানো ' র এক ক্ষুদ্র প্রয়াস। 

পরীক্ষা পদ্ধতি 
পড়াশোনা তো অনেক হল, এবার আসা যাক পরীক্ষার বিষয়ে। পড়ানো তো হোল, এবার মূল্যায়নের পালা। মূল্যায়নে পাশ করলে তবেই তো উচ্চশ্রেণীতে প্রমোশন পাবে। এর জন্য দরকার পরীক্ষা। এখন তো সব বিশ্ববিদ্যালয়েই সিবিসিএস বা পছন্দসই মিশ্র পাঠদানের সিলেবাস চালু আছে। তাতে ইন্টারনেল অ্যাসেসমেন্ট নেওয়া বাধ্যতামূলক। এবং তা ছমাসের প্রতিটি সেমিস্টারেই নিতে হয়। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এই অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন প্রতি সেমিস্টারে প্রতিটি পেপারের জন্য দুবার করে নিতে হয়। অবশ্য অল্প কিছু পেপারে এই মূল্যায়নের দরকার পড়ে না। এই অল্প সময়ের মধ্যে দু দুটো অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন। তারপর সেই খাতা দেখা। মার্কের ট্যাবুলেশন। সেগুলি ইউনিভার্সিটির পোর্টালে লিঙ্কের মাধ্যমে আপলোড করা। তার মধ্যে ক্লাস তো চলছে। এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব সিলেবাসের সঙ্গে একটি রেগুলেশন বা নিয়মাবলী বের করে দেওয়া। তারপর মার্কস আপলোডের জন্য নির্দিষ্ট সময় দিয়ে ইউনিভার্সিটির লিঙ্ক খুলে দেওয়া। ব্যাস, দায়িত্ব মুক্তি। 
এরপর  ইউনিভার্সিটির সবচেয়ে বড় দায়িত্ব বিভিন্ন সেমের চূড়ান্ত পরীক্ষার টাইম টেবিল তৈরি করা ও কলেজে কলেজে তা মেল করা। তার আগে আরও একটি কাজ আছে। সেটি হল ছাত্রদের ফর্ম ফিলাপ করানো ও অনলাইন অ্যাডমিট কার্ড কলেজে কলেজে পাঠানো। এরপর কিছুদিন বিরতি। পরীক্ষার দিন সময় মতো প্রশ্নপত্র ওয়েবসাইটে আপলোড করে দেওয়া। পরীক্ষা শেষের পর আবার বিরতি। হ্যাঁ, মাঝে কলেজ থেকে টিচারদের নামের তালিকা জোগাড় করে  চূড়ান্ত পরীক্ষার পরীক্ষক নিয়োগ করা। এরপরে প্রধান কাজ চূড়ান্ত পরীক্ষার মার্কস আপলোডের জন্য নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করে ইউনিভার্সিটির লিঙ্ক কলেজগুলোকে দেওয়া। এরপর সর্বশ্রেষ্ঠ কাজটি হল বিভিন্ন সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষার রেজাল্ট বের করা। এই কাজগুলি কলেজের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ বা দায়িত্ব বলা যেতে পারে। কিন্তু ইউনিভার্সিটির নিজের বিষয়ে অর্থাৎ পোস্ট গ্রাজুয়েট ছাত্রদের ক্ষেত্রে নিজেদের  ডিপার্টমেন্টগুলোর ওপর দায়িত্ব দিয়ে ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের দায় মুক্তি ঘটে। তবে আর একটি কাজ ও ইউনিভার্সিটিকে করতে হয়। সেটি হল চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি ও তার মডারেশনের ব্যবস্থা করা।

  অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের প্রশ্নপত্র তৈরি, তার পরীক্ষা নেওয়া, খাতা দেখা ( উত্তরপত্র মূল্যায়ন ), মার্কস আপলোড সবই কলেজের দায়িত্ব। অর্থাৎ কলেজ শিক্ষকদের দায়িত্ব। যেকোন সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষার সময় ইউনিভার্সিটি ওয়েবসাইট থেকে প্রশ্নপত্র ডাউনলোড করে কলেজের যে বিষয়ের পরীক্ষা আছে সেই পেপার সঠিক সময়ে কলেজ ওয়েবসাইটে আপলোড করা। পরীক্ষা শেষে ছাত্রদের ইমেলে পাঠানো উত্তরপত্র হিসেব করে মিলিয়ে নেওয়া। না মিললে সেই ছাত্রকে কনট্যাক্ট করে তার উত্তরপত্র আনানোর ব্যবস্থা করা। এই সব কলেজ শিক্ষকদেরই করতে হয়। তারপর সেই সব উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা, মার্কসের রেকর্ড রাখা, সেই মার্কস সময় মতো ইউনিভার্সিটি পোর্টালে আপলোড করা। তাছাড়াও, ফর্ম ফিলাপে ছাত্রদের সাহায্য করা, বিশেষত সাবজেক্ট ও সাবজেক্ট কোড ফর্মে লেখার বিষয়ে। আবার অ্যাডমিট কার্ড এলে অনলাইনে ছাত্রদের পৌঁছনোর কাজ ও কলেজ শিক্ষকরা করে থাকেন। সেদিক থেকে দেখতে গেলে অনলাইন পরীক্ষা ব্যবস্থায় এক অর্থে সবকিছু আসল কাজ কলেজের শিক্ষকদের করতে হয়। এই কাজগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে তাদের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকরা করে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুধু নির্দেশ দিয়েই খালাস।

কিছু প্রশ্ন
প্রথমে আসি ছাত্রদের ক্লাস উপস্থিতি নিয়ে। এই অনলাইন ব্যবস্থায় উপস্থিতির পুরো মার্কসটাই ছাত্রদের দিয়ে দেওয়াটা একরকম বাধ্যতামূলক। সে ছাত্র ক্লাস করুক না করুক। অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অনেক কলেজ বা কোন কলেজের কোনো কোনো বিভাগ কাজ সংক্ষেপ ও সহজ করার জন্য গুগল ফর্মে এই পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। এম সি কিউ (MCQ) পদ্ধতিতে এই পরীক্ষা নেন। এর সুবিধে অনেক। একসঙ্গে সব পরীক্ষার্থীর সংখ্যা জানা যায়। মূল্যায়ন ও সহজে হয়ে যায়। আবার বেশ কিছু কলেজ ও তাদের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা নেন। এরফলে বিভিন্ন কলেজ ও বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা পদ্ধতিতে ইউনিফর্মিটির অভাব দেখা যায়। রেজাল্টে ক্ষেত্রবিশেষে এর দরুন হয়তো বৈষম্যের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় কি? কারণ, এম সি কিউ প্রশ্নে অল্টারনেটিভগুলোর মধ্যে একটি সঠিক উত্তর থাকে। এর মার্কসের ক্ষেত্রে হয় জিরো নয় ফুল মার্কস। বাড়িতে বসে পরীক্ষায় এই পদ্ধতিতে মার্কস তোলাটা কোন কঠিন কাজ নয়। অন্যদিকে, এস এ কিউ ( Short Answer Question) টাইপ প্রশ্নে উত্তর লিখে ফুল মার্কস পাওয়া এত সহজ ব্যাপার নয়। 

  ছাত্রদের ফর্ম ফিলাপের ক্ষেত্রে প্রায় পুরো দায়িত্বটাই কলেজের। ছাত্রদের কাছে লিঙ্ক পাঠানো, ব্যাংক ডিটেলস পাঠিয়ে ফিস জমা করানো, সাবজেক্ট ও সাবজেক্ট কোড ঠিকভাবে লেখানো- সবই কলেজের দায়িত্ব। সফটওয়্যারের দৌলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর করার কিছু থাকে না। তাও যদি কিছু করার দরকার হয়, আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে তা করা হয়। এরমধ্যে কোন ভুলত্রুটি হলে সব দায় বর্তায় কলেজের ওপর। অ্যাডমিট কার্ড বন্টনের দায়িত্ব ও কলেজকে নিতে হয়। কিন্তু, অফলাইন পরীক্ষা ব্যবস্থায় পুরোটাই বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব। কলেজ ছাত্রদের দিয়ে কেবল ফর্ম পূরণ করে জমা করে দেয়। ফর্ম পুরো চেক করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের। অনলাইনে সেই দায়িত্বের সম্পূর্ণ মুক্তি। 

  পরীক্ষার নির্ঘন্ট বের করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে দেখা গেছে পরীক্ষার দশ বা কম দিনের নোটিশ দিয়ে পরীক্ষা শুরু করা হয়েছে। ছাত্র ও শিক্ষকরা (কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক উভয়ই) সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত অবস্থায় পরীক্ষা দিতে ও নিতে বাধ্য হন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একদিনে দুবেলা দুটি পরীক্ষার ব্যবস্থাও হয়েছে। শনি রবিবার ও বাদ যায়নি। ভাবখানা এমন যে বাড়িতে বসে তো পরীক্ষা তাতে দুটি বা তিনটি হলে ক্ষতি কি? বাড়িতে বসে পরীক্ষায় আবার ছুটির দিন কি? শুধু এই নয়। পরপর প্রায় প্রতিদিন পরীক্ষার ব্যবস্থা। আসলে রেজাল্ট তো ঠিক সময়ে বের করতে হবে। সে ডেট তো ওপর থেকে ইতিমধ্যে ঘোষিত হয়ে গেছে। ছাত্ররা পুরোপুরি প্রস্তুত হতে পেরেছে কিনা? প্রতিদিন পরীক্ষা হলে তাদের অসুবিধে হয় কিনা? দিনে দুবেলা পরীক্ষা হলে সমস্যা হয় কিনা? তা জানার প্রয়োজন নেই। শুধু ঠিক সময়ে রেজাল্ট বের করতে পারলেই হল। তাহলেই উপরওলার কাছে ফুল মার্কস। যারা পরীক্ষা দিচ্ছে বা যারা পরীক্ষা নিচ্ছে তাদের সুবিধা অসুবিধা ধর্তব্যের মধ্যে নয়। শুধু কি তাই? এই তাড়াহুড়োর ক্ষেত্রে অনেক সময় মার্কস আপলোডিং এর ক্ষেত্রে কোন কারণে তা ইউনিভার্সিটি পোর্টালে সেভ হলো না। কিন্তু রেজাল্ট তো বেরিয়ে গেল। যে সকল ছাত্রের আপলোডেড মার্কস সেভ হয় নি, তাদের রেজাল্ট ইনকমপ্লিট হয়ে বেরিয়ে গেল। সেই রেজাল্ট কমপ্লিট করতে কলেজ ও ছাত্রের কালঘাম ছুটে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ উদাসীন। যেন 'তোমার দায় তুমি সামলাও'। ফোনে ও বহু ক্ষেত্রে কোন সদর্থক কাজ হয় না।  মেলের মাধ্যমে ও কোন সুরাহা হতে দেখা যায় না। এসব ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর 'এত মেল আসে যে সব মেল দেখা ও উত্তর দেওয়া সম্ভব হয় না '। এই অতিমারিতেও শারীরিকভাবে উপস্থিত হয়ে হার্ড কপি দিয়ে সমস্যার সমাধান করাতে হয়। অনলাইনে সবই চলবে শুধু এগুলির সমাধান হতে পারে না?

  অনলাইন পরীক্ষা তো হল। এবার সময় মতো মেল চেক করে দেখতে হবে সবকটা খাতা এসেছে কিনা। না এলে কার আসে নি তা আইডেন্টিফাই করতে হবে। তারপর তাকে ফোন, হোটাসআপ, মেল করে খাতা আনানোর ব্যবস্থা করতে হবে। কখনও কখনও সেই খাতা জোগাড় করতে চার থেকে আট ঘন্টা লেগে যায়। তাও মূল পরীক্ষা  শেষের নির্দিষ্ট সময়ের পরে। কোনো কোনো কলেজের ক্ষেত্রে জনান্তিকে শোনা যায় অধ্যক্ষের অলিখিত নির্দেশ ' ছাত্র যখন জমা দেবে তখনই নিতে হবে '। এটা ও শিক্ষকদের একটি অতিরিক্ত কাজ এই পরিস্থিতিতে। এরপর ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে সেই সকল খাতার মূল্যায়ন করতে হবে। প্রশ্ন অনুযায়ী মার্কস লিপিবদ্ধ করতে হবে। এতো গাদা গাদা খাতা ( বাড়িতে বসে পরীক্ষা বলে ছাত্ররা নির্মম নির্দয়ভাবে পাতার পর পাতা লিখে যায়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা গড়ে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ পাতা কলেজ বিশেষে) তাও দেখতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। সেই মার্কস আবার আপলোড করতে হবে ইউনিভার্সিটি পোর্টালে। সেখানে সময়ের গেরো। এই বিষয়ে পান থেকে চুন খসলেই ধমকানি চমকানি। অথচ, অফলাইন পরীক্ষা হলে ইউনিভার্সিটির চোখের ঘুম ছুটে যেত। ঠিক সময়ে কলেজে কলেজে খাতা পৌঁছনো, ডেট অনুযায়ী হাফ অনুসারে সঠিক  প্রশ্নপত্র সঠিক কলেজে পাঠানো। তাও সঠিক সময়ে। না হলে মিডিয়ায় ব্রেকিং নিউজ। তারপর কঠিন প্রশ্ন বা সিলেবাস বর্হিভূত প্রশ্ন হলেও ব্রেকিং নিউজ। অনলাইনে এইসব কোন ঝামেলাই নেই। শুধু কি তাই? পরীক্ষার পর উত্তরপত্র কলেজ থেকে কালেক্ট করে হেড এগজামিনারদের মিটিং করা। আবার এগজামিনারদের মিটিং করা। তাদের মধ্যে খাতা বিলি বন্টন করা। এরমাঝে তাদের তাগাদা দেওয়া। আবার কোন এগজামিনার অসুস্থ হলে বা তার অপারগতা জানালে তার বাড়ি থেকে খাতা কালেক্ট করে নতুন এগজামিনারের বাড়ি পৌঁছে দেওয়া। অনেক অনেক কাজ। অনলাইনে তার কোন বালাই নাই। এরপর মার্কস খাতা কালেক্ট করা। খাতা সঠিকভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা। মার্কস ট্যাবুলেশনের ব্যবস্থা করা। সর্বশেষে, ঠিক সময়ে রেজাল্ট বের করা। এসবের সব চাপ থেকে মুক্তি অনলাইনে। এরপরে ও রেজাল্ট খারাপ হলে দায় এসে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর। অনলাইনে সে বিষয়ে ও মুক্তি। কারণ, অনলাইন পরীক্ষায় 'ফেলের দেখা নাই রে'। তার উপর, অফলাইন পরীক্ষায় পরীক্ষকের টি এ মাইনে, স্ক্রুটিনিয়ারের টিএ মাইনে এসব ছিল। অনলাইনে তাও নেই। যদিও এগজামিনাররা মূল্যায়ন থেকে সব কাজই করছেন। শুধু অনলাইনের দোহাই দিয়ে শিক্ষকদের তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা যায় কি?

----------------------
প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান, বানিজ্য বিভাগ, হুগলী মহসীন কলেজ। পূর্বতন অধ্যাপক, গোয়েঙ্কা কলেজ অফ কমার্স এ্যান্ড বিজনেস অ্যাডমিনিষ্ট্রেশন, কলকাতা। চৌত্রিশ বছরের অধিক কাল ইউ জি ও পি জি শিক্ষা দানের অভিজ্ঞতা। বতর্মানে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কলেজের বানিজ্য বিষয়ে সিনিয়র সার্ভিসের একমাত্র অধ্যাপক।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments