জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -৪৭



সম্পাদকীয়,
ছোটোবন্ধুরা, শুনলে অবাক হয়ে যাবে, ১৯৪৭ সালের  ১৫ ই আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসের পরও বহুবার দেশকে বহিঃশত্রুর হাত থেকে বাঁচাতে দেশের বীর সন্তানরা প্রাণ দিয়েছেন। তার একটির কথা আজ অবশ্যই মনে করিয়ে দিয়েছেন  চিত্রগ্রাহক নীলাব্জ ঘোষ আঙ্কেল। তাঁর উপহার দেওয়া ছবিটি কার্গিল সীমান্তের। টানা দুই মাস পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ চলার পর ১৯৯৯ সালের ২৬ শে জুলাই শেষ হয়েছিল কার্গিলের যুদ্ধ। এই যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছিলেন ৫২৭ জন ভারতের অমর জওয়ান। হ্যাঁ, তাঁরাও শহিদ ক্ষুদিরামের মতো অমর শহিদ। ক্ষুদিরামের কথায় মনে পড়ে গেল, এবারের সংখ্যাতে মুক্তি জেঠু তোমাদের ক্ষুদিরামের কথা বলেছেন। সন্দীপন আঙ্কেল স্বাধীনতাকে স্মরণ করে খুব সুন্দর কবিতা লিখেছেন। জানি কার্গিলের ছবি দেখে তোমাদের কাশ্মীর বেড়াতে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। উঁহু, একদম মন খারাপ করবে না। তারচেয়ে বহ্নিশিখা আন্টির লেখা পড়ে পুরীতে মানস ভ্রমণ করে নাও। তবেই না সন্দীপ জেঠুর গল্পের রিম্পার মতো স্কুলে যেতে পারবে। তবেই না বন্দনা আন্টির কবিতার মতো বলতে পারবে, আমরা করব জয় নিশ্চয়। একি তোমরা চুপ কেন এতক্ষণ? নিশ্চয়ই ছোট বন্ধু সৃজিতার মতো জম্বি গেম খেলায় মেতে গেছ? অনেক জম্বি গেম খেলা হয়েছে, এবার ছোট্ট বন্ধু সুহেনার কবিতা থেকে মিলিয়ে নিও তোমাদের জীবনের লক্ষ্য কি। হ্যাঁ, সঙ্কল্প বা লক্ষ্য ছিল বলেই না আমরা প্রায় দুশো বছর রাজত্ব করার পরও বিট্রিশ শক্তির হাত থেকে দেশ-মাতাকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলাম। এবারের সংখ্যার সম্পদ  অসাধারণ আঁকাগুলো। আর পীযূষ আঙ্কেলের কলমে লেখা  এক আচার্যের  জীবনী। তিনি হলেন আচার্য হরি নাথ দে। তিনি আঠারোটি ভাষায় স্বাতকোত্তর ডিগ্রী পান। আর দেশী বিদেশী মিলে প্রায় চৌত্রিশটি ভাষায় পারঙ্গম ছিলেন। বন্দেমাতরম।   - মৌসুমী ঘোষ


অগ্নিযুগের অগ্নিকিশোর
মুক্তি দাশ

এসো শুরুতেই তোমাদের একটা চিঠি পড়াই –

“প্রিয় সুকুদাদা,
আমরা এখানে নিরাপদে আসিয়াছি। আসিবার সময় দুর্গাদাসের পকেট হতে সব টাকাগুলি হারাইয়া গিয়াছে। আমার নিকট একটা নোট ছিল তাহাতেই জানাইতেছি। সত্বরে টাকা পাঠাইবেন। এখানকার অনেক অনেক দেখিলাম। বেশ মন্দ নহে। আজও বর দেখি নাই। তবে বাড়িটা একরকম দেখা হয়েছে। বরের বাড়ি সব মন্দ নহে। যেমন হয় পরে জানাইব। আপনি নিচের নামে টাকা পাঠাইবে। আপনি যে টাকা পাঠাইবেন তাহাতে আমাদের ওখানকার কোন ঠিকানা দিবেন না, ভুল ঠিকানা দিবেন। ইতি –
                                Sj. Dinesh Chandra Roy”

ছোট্ট একটি চিঠি। আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে সহজ, সরল সাদাসাপ্টা ভাষায় লেখা একটি চিঠি। চিঠির বক্তব্যও আপাত-নির্দোষ এবং গুরুত্বহীন। কিন্তু জেনে তোমরা অবাক হয়ে যাবে যে, এই চিঠির ছত্রে ছত্রে ছড়িয়ে রয়েছে অগ্নিযুগের প্রচ্ছন্ন স্ফুলিঙ্গ। হয়তো বারুদের গন্ধও। ভাঁজে ভাঁজে উজ্জীবিত হয়ে আছে ব্রিটিশ-নিধন যজ্ঞের সুপরিকল্পিত ছক ও প্রস্তুতি।

চিঠিখানি আজ একশো বছরেরও আগে ১৯০৮ সালে লেখা। বিহারের মজঃফরপুর থেকে। বাংলা ভাষায় লেখা হলেও এই চিঠির শেষে লেখক নিজের নাম কিন্তু সই করেছেন ইংরেজিতে। সাধারণ নোটবুকের ছেঁড়া রুলটানা পাতার একপৃষ্ঠায় লেখা এই চিঠিখানির লেখক দীনেশচন্দ্র রায়ও কি কোনোদিন ভাবতে পেরেছিলেন, তাঁর এই “সুকুদাদা”র উদ্দেশে লেখা চিঠিই ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে জীবন্ত দলিল হয়ে থাকবে? কিন্তু কে এই দীনেশচন্দ্র রায়? কী তাঁর পরিচয়? 

সে কথায় পরে আসছি। তোমরা সবাই নিশ্চয়ই জানো, কিংসফোর্ড নামে এক দোর্দন্ড প্রতাপশালী অত্যাচারী ইংরেজকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয় ‘অনুশীলন সমিতি’র সদস্যরা। ‘অনুশীলন সমিতি’ আসলে তখনকার স্বদেশীদের আখড়া। কলকাতায় ৩২ নং মুরারিপুকুর রোডে ছিল এদের আস্তানা। এর পুরোধা-পুরুষ ছিলেন অরবিন্দ ঘোষ, যাঁকে তোমরা পরবর্তীকালে ‘ঋষি অরবিন্দ’ নামে চিনেছ। আর তাঁর প্রধান সহযোগী ছিলেন, তাঁরই ছোটভাই বারীন ঘোষ। মুরারীপুকুর রোডের এই আস্তানায় যোগব্যায়াম, লাঠিচালনা, কুস্তি ইত্যাদির তালিম দেওয়া তো হতোই, বোমাও তৈরি করার পদ্ধতিও শেখানো হতো।

১৯০৪ সালের আগস্টমাস থেকে ১৯০৮ সালের মার্চমাস পর্যন্ত কলকাতার চিফ প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন কিংসফোর্ড। যাকে দেশের মানুষ বলতো ‘বড়লাট’। পুরো নাম মিঃ ডি. কিংসফোর্ড বা মিঃ ডগলাস কিংসফোর্ড। স্বদেশীদের ওপর নৃশংস অত্যাচার ও নিপীড়নে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। বেশ কয়েকটি মামলায় স্বদেশীদের প্রতি তাঁর বৈষম্যমূলক আচরণ এবং বিচার-নামক প্রহসনের মাধ্যমে ফাঁসির আদেশ দেওয়া তো তাঁর কাছে জলভাতের মতো। সেসময় তিনি ‘যুগান্তর’, ‘সন্ধ্যা’ ও ‘বন্দেমাতরম’ নামে তিনটি পত্রিকার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেন। শুধু তাই নয়, ‘যুগান্তর’ প্রচারে অংশ নেওয়ার অপরাধে সুশীল সেন নামে এক স্বদেশী যুবককে চাবুক মারার আদেশ দেন। আলিপুর আদালতে সর্বসমক্ষে সুশীলকে অমানুষিকভাবে চাবুক মারা হয়। চাবুকঘাতে  জর্জরিত সুশীল শেষপর্যন্ত সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে।

অতঃপর ‘অনুশীলন সমিতি’র লিস্টে নাম উঠে গেল কিংসফোর্ডের। তাদের প্রধান ও অন্যতম লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ালো কিংসফোর্ড-হত্যা। কিন্তু কাদের ওপর এই গুরুত্ব ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজের ভার দেওয়া যায়? প্রফুল্ল চাকীর নাম সবার প্রথমে উঠে এলো তাঁর অসীম সাহসিকতার জন্যে। কিন্তু আর একজন? মেদিনীপুরের দামাল ছেলে ক্ষুদিরাম বসুর নাম তখন তাঁর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও নির্ভীক কার্যকলাপের জন্যে দিকে দিকে বিশেষত, স্বদেশী-মহলে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। গোপনে তাঁকে মেদিনীপুর থেকে নিয়ে আসা হলো কলকাতায়। দেখা করানো হলো অরবিন্দ ও বারীন ঘোষের সংগে। তাঁরা একবার ক্ষুদিরামকে দেখে এবং কথা বলেই বুঝে গেলেন, এ ছেলে একেবারে আগুনের গোলা! অতএব প্রফুল্ল চাকীর সাথে ক্ষুদিরামও হবে কিংসফোর্ড-নিধন যজ্ঞের প্রধান যুগ্ম-পুরোহিত।

এদিকে ব্রিটিশ-শাসকরা বুঝে গিয়েছিল, যে-কোনো মুহূর্তে অত্যাচারী কিংসফোর্ডের জীবন বিপন্ন হতে পারে। স্বদেশীরা ছেড়ে কথা কইবে না। যে-কোনোদিন নেমে আসতে পারে মৃত্যুর খাঁড়া। তাই তারা অতি সত্বর কিংসফোর্ডের বদলীর ব্যবস্থা পাকা করে ফেললেন বিহারের মজঃফরপুরে।

সেখবর গোপন রইল না স্বদেশীদের কাছে। যথারীতি গোপনে সেই খবর পৌঁছৈ গেল অনুশীলন সমিতির গোপন ডেরায়। ১৯০৮ সালের ২৬শে এপ্রিল বদলী হয়ে মজঃফরপুরে গিয়ে বড়লাটের কার্যভার গ্রহণ করার কথা। এই সুযোগ হারানো চলবে না। আগের দিন, অর্থাৎ ২৫শে এপ্রিল দুপুরের দিকে প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরাম বসু হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে আগেভাগেই রওনা হয়ে গেলেন মজঃফরপুরে। মজঃফরপুর যাত্রার সময় বিপ্লবী বারীন ঘোষ বিশেষ সতর্কতা ও গোপনীয়তা রক্ষার জন্যে এদের দু’জনের নাম বদলে দিয়েছিলেন। ক্ষুদিরাম বসুর নাম বদলে হলো দুর্গাদাস সেন এবং প্রফুল্ল চাকী হয়ে গেলেন দীনেশচন্দ্র রায়। মজঃফরপুর পৌঁছে তাঁরা জনৈক কিশোরীমোহন ব্যানার্জির ধর্মশালায় ওঠেন। সেখানে দু-একদিন থেকে কিংসফোর্ডের গতিবিধি লক্ষ্য করা এবং শেষপর্যন্ত তাঁকে হত্যা করাই ছিল আসল উদ্দেশ্য। সেখান থেকেই উপরে উদ্ধৃত চিঠিখানি লেখেন প্রফুল্ল ওরফে দীনেশচন্দ্র রায়। ‘সুকুদাদা’ বলে যাঁকে সম্বোধন করে এই চিঠি, তিনি আর কেউ নন, বারীন ঘোষ। বুঝতেই পারছো, চিঠিখানি সাংকেতিক ভাষায় লেখা যাতে কেউ কোনোরকম সন্দেহ করতে না পারে। আর চিঠিতে যে ‘বর’-এর উল্লেখ রয়েছে, সেই ‘বর’ হচ্ছেন বড়লাট কিংসফোর্ড।

এর পরের ঘটনা তো তোমাদের অনেকেরই জানা। ১৯০৮ সালের ৩০শে এপ্রিল রাতের দিকে রাস্তার ধারে গাছের আড়ালে ওৎ পেতে দাঁড়িয়ে রইল দেশমায়ের দুই সাহসী দামাল ছেলে। তাদের কাছে খবর ছিল, কিংসফোর্ড এই পথেই ঘোড়ারগাড়ি করে যাবেন। অবশেষে ঘোড়ারগাড়ি এলো। সামনাসামনি আসতেই ওরা ‘বন্দমাতরম’ ধ্বনি দিয়ে বোমা নিক্ষেপ করলো। কিন্তু ইতিহাসের পরিহাসে সেদিন সেই গাড়িতে কিংসফোর্ড ছিলেন না। ছিলেন মিসেস ও মিস কেনেডি নামে দুই ইংরেজ মহিলা। মা ও মেয়ে। বোমার আঘাতে দু’জনেরই শরীর নিমেষে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। সেই যে মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়া অতি জনপ্রিয় গানের একটা লাইন আছে না – “বড়লাটকে মারতে গিয়ে মারলাম আরেক ইংল্যান্ডবাসী” – শুনেছ তো?

এদিকে প্রফুল্ল ও ক্ষুদিরাম তো আর কী-হলো না-হলো দেখার জন্যে সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন না। তাঁরা বোমা মারার অব্যবহিত পরেই দু’জন দু’দিকে সাফল্যের আনন্দে দুরন্ত বেগে ছুটতে শুরু করে দিয়েছেন। কেন না, তাঁরা ভেবেছিলেন, বড়লাট বুঝি এতক্ষণে বোমার আঘাতে মারা গেছেন। এতদিনে বুঝি শোধ নেওয়া গেল।

এই নির্ভীক দুই কিশোর ছুটে পালিয়ে গিয়েও নিস্তার পেল না। সারারাত বিরামহীন ছুটে পরের দিন, মানে ১লা মে তারিখে ভোরের দিকে ক্ষুদিরাম এসে পৌঁছালেন ওয়াইনি নামে এক স্টেশনের কাছে। তার খাটো ধুতি ও ধূলিধুসরিত পা, সারামুখে রাতভর দৌড়োনোর ধকল, ক্ষুধাকাতর মুখ দেখে মানুষের মনে সন্দেহ জাগলো এবং অবশেষে তাঁকে পুলিশ এসে গ্রেপ্তার করল। 

অপরদিকে ২রা মে মোকামা স্টেশনে ধরা পড়লেন প্রফুল্ল চাকী। কিন্তু তাঁকে গ্রেপ্তার করার আগেই তিনি নিজের রিভলবারে গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন (অবশ্য এই বিষয়ে অনেক মতবিরোধ আছে। সেসব তোমরা বড় হয়ে বুঝতে পারবে)। 

তারপর আর কি! তারপর মজঃফরপুর আদালতে কয়েকমাস ধরে চললো বিচারের নামে প্রহসন। এবং অবশেষে ১৯০৮ সালের ১১ই আগস্ট ফাঁসির কাঠে ঝুলিয়ে দেওয়া হলো বীর ক্ষুদিরামকে। তখন তাঁর বয়েস মাত্র ১৮ বছর ৮ মাস। ভাবতে পারো?

ক্ষুদিরামের এই মর্মান্তিক পরিণতির কথা জেনে তোমাদের খুব মন খারাপ হয়ে গেল তো? কী করবে বলো? তবু এসব তোমাদের জানতেই হবে। আজ, নয় কাল। এ আমাদের দেশের ইতিহাস। দেশমুক্তির ইতিহাস। আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস। এই ইতিহাস না জানলে আমরা নিজেরাই অসম্পূর্ণ থেকে যাবো যে!


প্রত্যাশায় স্বাধীনতা...
সন্দীপন রায়

দেশ মানে শুধু নয় ম্যাপে আঁকা তেরঙ্গা এক ভূমি। দেশ মানে যেন ভালো থাকে সব, সে, আমি আর তুমি।

ভরা পেটে সব ইস্কুলে যায় আমার দেশের শিশু। রথযাত্রায় মেশে হাতে হাত মোহম্মদ আর যীশুর। 

মায়ের ভাষায় জানছে শিশুরা জানার যা কিছু বেশ। বিজ্ঞান যেন দেয় আলো রোজ ভারত আমার দেশ।

উপনিষদের চেতনা এখানে জ্বালে আলো প্রতিদিন। আগস্ট ১৫  ধুয়ে মুছে দেয় নানাবিধ পরাধীন।

ধানভরা মাঠে হাসিখুশি চাষী, শ্রমিকের হাতে কাজ। বিবিধের মাঝে একতার সুরে স্বাধীনতা হাসে আজ। 

স্বপ্নেরা যদি বাস্তবে মেশে নির্বাকও পায় ভাষা। গণতন্ত্রের রামধনু রঙে তবু ঝলমলে আশা।



অথ সমুদ্র দর্শনং কথা 
বহ্নিশিখা ঘটক 


হাওড়া থেকে ট্রেন ছেড়েছে পুরীর উদ্দেশ্যে কিছুক্ষণ হল। টিটি এসেছেন টিকিট চেক করতে । মাস্ক, হেডশিল্ড পরে তাঁকে দেখাচ্ছে যেন মহাকাশ যাত্রী । টুটুল ও তার বাবা টু-টায়ার কামরার এই ক্যুপের একমাত্র যাত্রী । ফিফটি পার্সেন্ট যাত্রী নিয়ে চলছে স্পেশাল ট্রেন । 

টিটি তাদের কোভিডের ভ্যাকসিন নেওয়ার সার্টিফিকেট, টিকিট চেক করে উল্টো দিকের সীটে বসলেন । যাত্রী বেশি না থাকায় তাঁর কাজ ও কম । একটু গল্প করতে ইচ্ছে হয়েছে তাঁর । বাবার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন, তা এই বর্ষায় পুরীতে যাচ্ছেন ? মন্দিরেতো এখনো ভক্তের প্রবেশ নিষেধ । নাকি সমুদ্র দর্শনে? এখন সমুদ্র কিন্তু উত্তাল থাকে । সাঁতার না জানলে স্নান করতে যাওয়া খুবই বিপজ্জনক । আর জানলেও খুব একটা লাভ হয়না । 
হ্যাঁ, তা জানি। কিন্তু কী করবো বলুন । এই আমার ছেলে প্রদীপ্ত বর্মণ এবার ম্যাথমেটিকাল অলিম্পিকে ফার্স্ট হয়েছে সারা ভারতে । সেই সূত্রে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পুরস্কার নেবার সময় তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, পড়াশোনা ছাড়া আর কী ভালো লাগে তোমার ? ও বলেছিল - বেড়াতে । সমুদ্র দেখার বড় ইচ্ছে । এখনো যাওয়া হয় নি। তখন রাষ্ট্রপতির বিশেষ নির্দেশে ওকে একটা বিশেষ পাস দেওয়া হয়েছে যাতে সেএকজন সঙ্গী নিয়ে সমুদ্র শহর পুরী ঘুরে আসতে পারবে । সেই জন্য আমরা যাচ্ছি । 

-- ও হ্যাঁ, কাগজে পড়েছিলাম আপনার অঙ্কবিদ ছেলের কথা । ব্রিলিয়ান্ট বয় ! এই বলে টিটি এগিয়ে এসে ওর পিঠ চাপড়ে দিতে গিয়ে থমকে গেলেন । ইস কী ভুলই না করে ফেলছিলেন তিনি! ছোঁয়া ছুঁয়ি বাঁচিয়ে তো চলতে হবে !তাড়াতাড়ি সামলে নিয়ে " সাবধানে থাকবেন " বলে বেরিয়ে গেলেন । 

দশ বছরের জীবনে এই প্রথম সমুদ্রের কাছে আসা। খুব উত্তেজিত টুটুল । ইস! মাকে যদি সঙ্গে আনা যেত ! কিন্তু বাবার অতো টাকা নেই , ও জানে । 
ওরা সমুদ্রের পাড়ে একটা হোটেলে উঠেছে । ঘর থেকে বা ব্যালকনিতে বসে খুব ভালো ভাবেই দেখা যাচ্ছে সমুদ্রকে । কিন্তু বাবা বলেছে সমুদ্রে স্নান করা যাবে না । কারণ টুটুল সাঁতার জানেনা মোটেই । তার ওপর টিটি মশাই যা ভয় দেখিয়েছেন । তারপরে তো একেবারেই নয়। বাবা যদিও সাঁতার জানে। তবু টুটুলকে ফেলে স্নান করবেনা তাই বাবা এখন বাথরুমে স্নান করছে । 

ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সমুদ্র দেখতে দেখতে টুটুলের মন ছুটে যাচ্ছিল অনবরত সমুদ্রের পাড়ে । অবশেষে আর পারলোনা । ভাবলো, বাবাতো চান করছে । এই ফাঁকে একবার পাড়ে নেমে একটু পা ভিজিয়ে চলে আসা যাবে ঠিক। যা ভাবা, সেই কাজ। দৌড়ে চলে গেল পাড়ে, যেখানে ঢেউগুলি প্রচন্ড বেগে আছড়ে পড়ে জলস্রোত নিয়ে উঠে আসছে পাড়ের ওপর শুকনো বালির স্তরে । দূরে দাঁড়িয়েই দেখছিল। আর ভাবছিল পা ভেজাতে জলের কাছে যাবে কি না । ঢেউ সঙ্গে নিয়ে এসেছে ঝিনুক , শামুক জেলিফিশ ও কতো আবর্জনা । টুটুল নীচু হয়ে কটা ঝিনুক কুড়োতে গেছিল, এমন সময় একটা বড় ঢেউ এসে ওর পায়ের কাছে ভেঙ্গে পড়ে ওকে ভিজিয়ে দিল। তারপরে জলের টানে সমুদ্রের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল প্রায়। আতঙ্কে চেঁচিয়ে উঠল টুটুল- বাবা! মা! বাঁচাও! 

মা এসে ওর কানটা ধরে টেবিলের ওপর থেকে টেনে তুলল। 

- কী হল টুটুল সোনার? খোলা জানালা দিয়ে বৃষ্টি এসে সব বই-খাতা ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে । আর তুমি অঙ্কের খাতার ওপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছো? 
অঙ্কের স্যার আমাকে বলেছেন, তুমি এরকম অমনোযোগী হলে অঙ্কে গোল্লা পেতে কেউ ঠেকাতে পারবে না । আর উনি তোমার দায়িত্ব নেবেন না । আগের বার অঙ্কে ফেল করেছিলে। এবারও মনে হচ্ছে... 



আমরা করব জয়
বন্দনা সেনগুপ্ত 


আমরা করব জয়
           নিশ্চয় নিশ্চয়।

পথের মাঝে 
আছে বাধা 
আছে ব্যথা 
           নিশ্চয়।

সেই সব
আমরা করব জয় 
           নিশ্চয় নিশ্চয়।

আছে দুঃখ 
আছে ব্যাধি
আছে প্রকৃতির 
নিষ্ঠুর কৌতুক।

সেই সব
আমরা করব জয় 
           নিশ্চয় নিশ্চয়।

মনের মাঝে
আছে ভয়
ভয়ংকর ভীষণ 
          নিশ্চয়।

সেই সব
আমরা করব জয়
           নিশ্চয় নিশ্চয়।

আমরাই করব জয়
           নিশ্চয় নিশ্চয়।
স্বাধীন দেশের 
স্বাধীন মানব মোরা
নিশ্চয়ই করব জয়
           নিশ্চয় নিশ্চয়।।



পরিকল্পনা
সন্দীপ দত্ত


পর পর চারদিন দেখার পর পাঁচ দিনের দিন সকালে মাকে কথাটা বলল রিম্পা।
"আমার বইগুলো সব দেখতে পাচ্ছিনা, কোথায় যে গেল! তুমি কিছু জানো মা? বাইরের কেউ কি ঢুকেছিল ভেতরে? আমার পড়ার টেবিল নাড়াঘাঁটা করেছিল এমন কেউ?"

শুনে রিম্পার মা সায়নী আকাশ থেকে পড়ল।
" বলিস কীরে? বই নেই! ভাল করে দেখেছিস? আমাদের বাড়িতে কেউ তো তেমন আসেনা। আর তোর পড়ার রুমে ঢুকতে যাবেই বা কে? ভাল করে মনে কর, এ ক'দিনে তোর কোনো বন্ধু টন্ধু এসেছিল কিনা। সোমলতা এসেছিল? পূর্বা?"

     সোমলতা এবং পূর্বা দুজনেই রিম্পার খুব ভাল বন্ধু। একেবারে গলায় গলায় ভাব। রিম্পাদের বাড়ি থেকে ওদের বাড়ির দূরত্বও খুব বেশি নয়। যখন তখন আসে। কোনো কোনোদিন এসে একসাথে বসে গ্রুপস্টাডিও করে। কিন্তু  আজ বেশ কয়েকদিন ওরা আসছেনা। যে যার নিজের নিজের বাড়িতে। কুড়ি দিন পর মাধ্যমিক পরীক্ষা। এসময় বন্ধুরা একটু আধটু স্বার্থপর হয়ে যায়। প্ল্যানগুলো বুকের মধ্যে রাখে। একটা পরিকল্পনা রিম্পারও যে ছিলনা, তা নয়। কিন্তু  সুন্দর করে যে খাতাটায় আগামি কয়েকদিনের সাবজেক্টগুলোর প্রস্তুতি ও তারিখ অনুযায়ী লিখে রেখেছিল, সেই খাতাটা পর্যন্ত উধাও!

     আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মৃগাঙ্ক দাড়ি কাটছিল। অফিস যাওয়ার আগে রোজ তাকে দাড়ি কাটতে হয়। বড়ো অফিস। বড়ো দায়িত্ব। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না থাকলে বস বিরক্ত হন। দাড়ি কাটতে কাটতে হাত থামিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে মেয়ের দিকে তাকাল সে। "বলছিস কী রিম্পা? বই নেই!"

"দেখোনা বাপি, একটা বাদে কোনো বইই পাচ্ছিনা। টেবিলে রাখা খাতাটাও নেই।"
"একটা বাদে! মানে? কোন্ বইটা রেখে গেছে?" মৃগাঙ্ক বলে।
"যেটা আমার পড়তে একদমই ইচ্ছে করেনা,সেটাই। বাংলা। বিচ্ছিরি লাগে।"
"বাংলা'টা রেখে গেছে? ভারি আশ্চর্য তো! কখনও শুনিনি এরকম। নিলে তো সবগুলোই নেবে। কীরকম চোর সেটা?" বলল মৃগাঙ্ক।
"চোর না ছাই! বাড়িতে চোর ঢুকবে কী করে? আমি থাকিনা? রিম্পা থাকেনা?" সায়নী বলে।
নাকি সুরে কেঁদে উঠল রিম্পা। "পরীক্ষার আর মাত্র ক'টা দিন বাকি। এবার আমি কী করব বাপি? কী পড়ব?"

"দাঁড়া দাঁড়া,ওরকম কাঁদিসনা। তোর বন্ধুরাও যখন আসেনি,বইগুলো তো পাখি হয়ে ডানা মেলে উড়ে যাবেনা। চ,ভাল করে খুঁজে দেখি।"

হাতের কাজ ফেলে সায়নী রিম্পার সঙ্গে চলল বই খুঁজতে। মৃগাঙ্ক আজ অফিসের ভাত পাবেনা। না পাক। ও ক্যান্টিনে ম্যানেজ করে নেবে। এখন মেয়ের বইগুলো খোঁজাই মাথাভারি কাজ সায়নীর। মাধ্যমিক বলে কথা। বিপদের শেষ থাকবেনা।

     বেশ অনেকক্ষণ ধরে ঘরময় তন্নতন্ন করে খুঁজেও যখন সত্যিই বইগুলো পেলনা সায়নী,ক্লান্ত হয়ে কপালের ঘাম শাড়ির আঁচলে মুছতে মুছতে রিম্পাকে বলল,"তাই তো রে! বইগুলো তো নেই। হল কী বল তো?.....আচ্ছা, একটা কথা বল তো রিম্পা। সত্যি কথা বলবি কিন্তু ।"

"কী?" রিম্পা জানতে চায়।
"এবছর সরস্বতী পুজোয় তুই অঞ্জলি দিয়েছিলি?"
"হ্যাঁ,কেন দেবনা?"
"পুজোর আগে কুল খাসনি তো?"
"না।"
"পুষ্পাঞ্জলি দিতে গিয়ে ঠাকুরকে কী বলেছিলি একবার বল তো?"

মায়ের এরকম জিগ্যেসে থমকে যায় রিম্পা। "ওসব কথা যে কাউকে বলতে নেই। তুমিই তো বলেছিলে!"
"তবু বল,শুনি। আমি মা। তোর কিচ্ছু  হবেনা।"
"বলেছিলাম,ঠাকুর,মাধ্যমিকের রেজাল্ট যেন খুব ভাল হয়। রাজ্যের মধ্যে না হোক, অন্তত জেলার মধ্যে যেন আমি ভাল র‍্যাঙ্ক করতে পারি। প্রতিটা বিষয়ে যেন নব্বইয়ের উপরে পাই।"

মেয়ের কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল সায়নী। "তুই একটা ভুল করে ফেলেছিস রে,রিম্পা। সরস্বতীর কাছে সব সাবজেক্টে নব্বইয়ের ওপরে চাইলি,অথচ বাংলাটাকে বিচ্ছিরি লাগে,এটা বোধহয় ঠাকুরের ভাল লাগেনা। সমস্ত বিষয়ের মধ্যেই  উনি থাকেন তো। তাই মনে হয় রেগে গিয়ে তোর সব বই কেড়ে নিয়েছেন।" সায়নী বলল।

"বলছ কী মা! তাহলে এখন কী হবে?" ভয়ে রিম্পার মুখ শুকিয়ে যায়।

"এখন একটাই উপায়,তোর ভুলটাকে স্বীকার করা। মা সরস্বতীর সামনে হাতজোড় করে বলা,সব সাবজেক্ট আমি সমানভাবে গুরুত্ব দেব। ব্যস, আমার মনে হয় তাতেই দেবী প্রসন্ন হয়ে তোর সব বই ফিরিয়ে দেবেন। কথাটা কেন বললাম বল তো তোকে? ঠিক এইরকমই একটা ঘটনা আমাদের স্কুলের এক বন্ধুর জীবনে ঘটেছিল। ওরকম করে বন্ধুটি উপকার পায়। ঠাকুর কখন কার ওপর কী কারসাজি করবে,আমরা আগে থেকে টের পাই নাকি? যা, তাড়াতাড়ি স্নান করে মা সরস্বতীকে প্রণাম করে তোর ভুলটা শুধরে নে। দেখ না,তাতে বোধহয় ভালই হবে।"

      মায়ের কথা শুনে স্নান করে রিম্পা ঠাকুরঘরে গিয়ে প্রণাম করল। হাতজোড় করে প্রর্থনা করল সরস্বতীর সামনে। সব বই ফিরিয়ে দেওয়ার আর্জি জানাল।

সেদিন রাতেই রিম্পা ঘুমিয়ে পড়ার পর নিজের গোপন বাক্স থেকে মেয়ের সমস্ত বই বের করে সায়নী। ইংরেজি,অঙ্ক,ইতিহাস,ভূগোল,জীবনবিজ্ঞান,ভৌতবিজ্ঞান। বের করে সেই খাতাটা। যেটাতে রিম্পার পরীক্ষা প্রস্তুতির টাইম টেবিল সুন্দর করে তৈরি। নিখুঁত পরিকল্পনা। যা দেখতে গিয়ে চমকে গেছে সায়নী। যেখানে বাংলাকে রাখেনি রিম্পা।মেয়ের রুমে পা টিপে টিপে গিয়ে টেবিলে যথারীতি বইগুলো সাজিয়ে দেয় মা। রাখে খাতাটাও।

      মৃগাঙ্কর কাছে আসতেই মৃগাঙ্ক বলল,"তুমি পারো বটে। অনেক বুদ্ধি তোমার।" বলেই হাসল।

সায়নী বলল,"এছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিলনা গো! বাংলা'টা না পড়লে ও যে ওটাতে ফেল করে যাবে। মাধ্যমিকের মতো পরীক্ষা। সমস্ত সাবজেক্ট সমানভাবে গুরুত্ব না দিলে চলে? তবু তো পর পর পাঁচদিন পড়ল বাংলা'টা। আশা করি কিছু অন্তত উপকার পাবে।"

     পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বইয়ের টেবিলের দিকে তাকাতেই মন'টা আনন্দে ভরে গেল রিম্পার। ছুটে এসে মাকে বলল। বলল বাপিকেও। আর নিজে নিজেকে বোঝালো, সমস্ত বিষয়ের মতো বাংলাটাকেও এবার গুরুত্ব দেবে সে। নইলে যে নম্বর কমে যাবে। খুব জোর বেঁচে গেছে সে। বাঁচিয়ে দিয়েছেন দেবী সরস্বতী।

     বাংলা'টা গত পাঁচদিন ধরে পড়ছে রিম্পা। তবু আজ আবার বের করল। আজ পড়বে 'জ্ঞানচক্ষু'।



জীবনের লক্ষ্য
সুহেনা মন্ডল
চতুর্থ শ্রেণী, জি ডি গোয়েঙ্কা পাবলিক স্কুল, দক্ষিণেশ্বর

ঘরবাড়ি ঠিক করা নিয়ে
হয়ে যায় ব্যস্ত।
কেউ আবার জিম করে
ঠিক করে স্বাস্থ্য।
জীবনের লক্ষ্য ছাড়াই
কেউ হয় অজ্ঞান।
কেউ আবার পড়াশোনা
করে নিয়ে বিজ্ঞান।
কেউ আবার ঘরের চাকর
টাকা পয়সার অভাবে।
আবার কেউ ব্যবসা চালায়
অনেক টাকার লাভে।
লক্ষ্য ছাড়া থাকা মুশকিল
আমাদের এই ভুবনে।
লক্ষ্য ছাড়া নেই জেনো
জীবনের কোনো মানে।



জম্বি গেম
সৃজিতা দাস
তৃতীয় শ্রেণী, জি মাউন্ট লিটেরা স্কুল, ব্যাঙ্গালোর


আমার নিজের একটা ফোন আছে, যেখানে শুধু আমার নিজের পছন্দের ভিডিও গেম আছে। সব ভিডিও গেমের মধ্যে একটা খুব পছন্দের গেম আছে, সেটার নাম হল জম্বি গেম।

একদিন সন্ধেবেলা আমি পড়াশুনোর পর আমার ফোনটা নিয়ে বসি। বাইরে খুব জোরে বৃষ্টি পড়ছে। খুব ইচ্ছে করছিলো জম্বি গেমটা খেলি। ঘরের সব আলো নিভিয়ে দিয়ে ছোট একটা টেবিল ল্যাম্পের আলো জ্বেলে বসলাম খেলতে। অনেকক্ষণ খেলেছি, মনে হচ্ছিল আমি যেন সেই জম্বি ল্যান্ডে পৌঁছে গেছি, মারছি সব জম্বিদের।

একসময় খুব ঘুম এসে যায়, কখন জানি না আমি ফোনটা বুকের ওপর রেখে ঘুমিয়ে পড়ি। একটা অস্বস্তিতে ঘুমটা ভেঙে যেতে দেখি, একটা সবুজ রঙের হাত ফোনটা থেকে বেরোচ্ছে, আর ফোনটা নড়ছে।  আমি ধড়মড়িয়ে উঠে পড়ি আর ফোনটা ছিটকে পড়ে যায় মাটিয়ে। ততক্ষণে দেখি একটা জম্বি বেরিয়ে এসেছে ফোনটা থেকে। আমি খাট থেকে নেমে তাড়াতাড়িতে ঘর থেকে বেরোতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলাম। ভয়ে গায়ে হাত পায়ে আর জোর নেই, তবু জোর করে উঠে পাশের রুমে বাবা মায়ের ঘরে গেলাম। দেখি ওরা নিজেদের কাজ করছে ল্যাপটপে, কিন্তু পেছনে ওদের ফোন থেকেও জম্বি বেরিয়ে আসছে। আমি চিৎকার করে মা বাবা কে ডাকলাম। ওরা ও জম্বিদের দেখে ভয় পেয়ে গেছে। আমরা সবাই ছুটতে লাগলাম। আমার গায়ে কোন জোর নেই দৌড়োবার। আমি পড়ে যাই, চোখ বন্ধ হয়ে আসে আমার।

 কে যেন আমাকে ডাকছে আমার নাম নিয়ে। চোখ খুলে দেখি মা বাবা।। আমি স্বপ্ন দেখছিলাম নাকি তাহলে? হ্যাঁ তাই তো। ফোনে এই জম্বি গেমটা নিজের মত চলছে। ফোনটা পাশে রেখে উঠলাম।  শুনতে পাচ্ছি বাড়ির বাইরে লোকজন চেঁচামেচি করছে খুব। আমি বাবা মা জানলা দিয়ে দেখি সবাই দৌড়চ্ছে। পেছনে এবার সত্যি সত্যি অনেক জম্বি। না এটা আর স্বপ্ন না। কারণ আমি বাবা মা সবাই দেখতে পাচ্ছি।

একি আমাদের ঘরেও অনেক জম্বি। খাটের তলায়, অন্য ঘরে সব জায়গায়। এবার কি করব? মাথায় এলো আমার ফোনটা হাতে তুলে নিলাম, গেম বন্ধ করে দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে সব জম্বিরা ভ্যানিশ।

আমি বুঝলাম আমার ফোন থেকেই এরা বেরোচ্ছিল। আমি জম্বি গেম টা তারপর আমার ফোন থেকে মুছে দিলাম। আর কোনদিন ওটা ফোনে রাখিনি আর খেলিনি।

স্মরণীয়
আচার্য হরিনাথ দে
কলমে - পীযূষ প্রতিহার

আমরা সবাই বাংলায় কথা বলি, তাই তো? আর মোটামুটি পশ্চিমবঙ্গের বাইরে গেলে হিন্দি ও ইংরেজি জানা থাকলেই হবে। কিন্তু তোমরা কি জানো এমন একজন বাঙালির কথা যিনি চোদ্দটি ভারতীয় ভাষার সঙ্গে সঙ্গে কুড়িটি এশীয় ও ইউরোপীয় ভাষা জানতেন। আর শুধু জানতেন না প্রশ্নাতীত দক্ষতা ছিল সবগুলো ভাষায়। তারমধ্যে আঠেরোটি ভাষায় M.A. পাশ করেছিলেন। কে জানো? তিনি হলেন আচার্য হরিনাথ দে। ১৮৭৭ সালের ১২ ই আগস্ট দক্ষিনেশ্বরের কাছে আড়িয়াদহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। শৈশবে তার পিতা রায়বাহাদুর ভূতনাথ দে'র কর্মস্থল রায়পুরে (বর্তমান ছত্তিশগড়ে) পড়াশোনা করেন। পরে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল ও কলেজে এবং প্রেসিডেন্সী কলেজে ভর্তি হন। ১৮৯৩ সালে প্রেসিডেন্সীর ছাত্র হিসেবে সাম্মানিক স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন ল্যাটিন ও ইংরেজি ভাষায়।ঐ বছরই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ল্যাটিনে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে পাশ করে কেমব্রিজ যান উচ্চশিক্ষার জন্য। ক্রাইস্টস কলেজে পড়ার সময় প্রাইভেটে গ্রীক ভাষায় M.A. পাশ করেন প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে। এরপর প্যারিস ও মিশর গিয়ে আরবি ভাষা শেখেন। ১৯০১ সালে কেমব্রিজ থেকে গ্রীক,ল্যাটিন ও হিব্রু ভাষায় পারদর্শী হয়ে দেশে ফেরেন হরিনাথ দে।সেসময় ভারতীয়দের ব্রিটিশ সরকারের এডুকেশন সার্ভিসে নিয়োগ করা হত না। হরিনাথ দে হলেন প্রথম ব্যক্তি যাকে ঢাকা সরকারি কলেজের ইংরেজি ভাষার অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। পরে ১৯০৫ সালে তিনি ইংরেজি ভাষার অধ্যাপক হিসেবেই যোগ দেন প্রেসিডেন্সী কলেজে।১৯০৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শুরু হওয়া ভাষাবিজ্ঞান (linguistics) বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ঐ বছরই তিনি যোগ দেন ইম্পেরিয়াল লাইব্রেরীর  (বর্তমান ভারতের জাতীয় গ্রন্থাগার) গ্রন্থাগারিক রূপে। এখানেও তিনি ছিলেন প্রথম ভারতীয় গ্রন্থাগারিক(জন ম্যাকফার্লেন ছিলেন প্রথম)। আচার্য হরিনাথ দে র বিখ্যাত কিছু লেখা হল 'ম্যাকুলে'স এসে অন মিল্টন', 'প্যালগ্রেভ'স গোল্ডেন ট্রেজারি', 'ইংরেজি-পারসিক অভিধান', 'তিব্বতী অভিধান', ইবন বতুতার ভ্রমনকাহিনী 'রিহলা' র অনুবাদ, ঋগ্বেদের একটি অংশ, উপনিষদ ও মূল শ্লোক টীকাসহ তিনটি ভাষায় অনুবাদ, বৌদ্ধ ধর্মের 'লঙ্কাবতার সূত্র' ও 'নির্বান ব্যাখ্যা শাস্ত্রম' সম্পাদনা করে প্রকাশ, কালিদাসের 'অভিজ্ঞান শকুন্তলম' এবং সুবন্ধু র 'বাসবদত্তা' অনুবাদ ইত্যাদি। তাঁর সাহিত্য, ভাষাতত্ত্ব ও ধর্ম নিয়ে রচনা গুলো ৮৮টি খণ্ড 'Harinath Details Collection' নামে কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরীতে তাঁরই নামাঙ্কিত একটি বিশেষ বিভাগে সংরক্ষণ করা আছে।

এই ক্ষণজন্মা আশ্চর্য প্রতিভাধর মানুষটি ১৯১১ সালের ৩০শে আগষ্ট মাত্র ৩৪ বছর বয়সে তিনদিনের টাইফয়েডে মারা যান। শ্মশানে তার অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ার বর্ণনায় ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত লিখেছেন, 
"যাচ্ছে পুড়ে দেশের গর্ব,শ্মশান শুদ্ধ-আলা।
যাচ্ছে পুড়ে নতুন করে সেকেন্দ্রিয়ার গ্রন্থশালা"।



ফুলকুসুমপুর খুব কাছে ২০
রতনতনু ঘাটী

ছড়াপিসিদের সঙ্গে বেশ আনন্দে কাটছিল। ইচ্ছেদাদু আর ইচ্ছেঠাকুরমা সকলকে নিয়ে এর মধ্যে একদিন চিড়িয়াখানা গেলেন। লিমেরিক আর হাইকু তো আলিপুর চিড়িয়াখানা দেখে খুব খুশি। তিন্নি, বিন্নি, বুম্বাও কম খুশি হল না। যদিও তারা আগে চিড়িয়াখানা দেখেছে, তবু এবার সঙ্গে আছে লিমেরিক আর হাইকু। এবারের আনন্দই আলাদা! ছোটখাটো ঘরের মতো একটা মস্ত খাঁচায় কয়েকটা টিয়াপাখি দেখে ইচ্ছেঠাকুরমা দাদুকে বললেন, ‘কী গো, আমার রাধাগোবিন্দ এদের চেয়ে অনেক গুণে ভাল না?’
   ইচ্ছেদাদু ঘাড় নেড়ে বললেন, ‘পাখির মালিক ভাল হলে তার পাখিও ভাল হয়। চিড়িয়াখানায় পাখিদের যারা দেখাশুনো করে, তারা কি আর ভাল? তারা কি ঠিকমতো ওদের খেতে দেয়? দেখছ না, টিয়াপাখিগুলোর ট্যাঁ-ট্যাঁ করে ডাকার ক্ষমতাটুকুও নেই!’
   ঠাকুরমা মুখ তুলে জানতে চাইলেন, ‘কেন, খেতে দেবে না কেন? ওদের জন্যে বরাদ্দ খাবার তাহলে কী হয়?’
   ‘সব পশুপাখিদের খাবার চলে যায় বাইরের বাজারে।’ বলে দু’ হাত উলটে হাসলেন দাদু।
   ঠাকুরমা মুখে পরিতৃপ্তি ছড়িয়ে বললেন, ‘এই পাখিগুলো এতদিন চিড়িয়াখানায় আছে, অথছ একটাও কথা বলতে শেখেনি? বরং আমার রাধাগোবিন্দকে দ্যাখো! এদ্র চেয়ে ঢের ভালো। মাস ছয়েকও কাটেনি, এখনই স্পষ্ট করে বলতে পারে ‘আসুন!’ ‘ভাল তো?’
   দাদু বললেন, ‘তা বলবে না? তোমার টিয়াপাখি কত ভাগ্যবান! মাত্র ছ’ মাসের মধ্যে একটা সোনার শিকল পেয়ে গেছে।’
   ঠাকুরমা বললেন, ‘সোনার শিকলের খোঁটা দিও না! রাধাগেবিন্দর জন্যে এখন আর শিকলের দরকার হয় না। ইচ্ছে হলে খাঁচার দাঁড়ে বসে দোল খায়। ফের ইচ্ছে হলে এ ঘর ও ঘর উড়ে-উড়ে ঘুরে এসে ফের তার খাঁচায় ঢুকে পড়ে। বুম্বার কাছে কথা-বলা শেখে।’
   ছড়াপিসি বললেন, বাবা-মা, তোমরা চিড়িয়াখানাতে এসেও ঝগড়া করবে নাকি?’
   সে কথায় কান না দিয়ে ইচ্ছেঠাকুরমা বললেন, ‘এই তো মাত্র ক’ দিন হযবরল চিড়িয়াখানার কাজ করতে এসেছে পরিপালন। পরিপালন খাটুয়া সেদিন তো বলেই ফেলল, ‘বড়মা, হযবরল চিড়িয়াখানার সব প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল তোমার রাধাগোবিন্দ। যা-ই দিই তা-ই খায়। বেঁধে রাখতে হয় না। এদিক-ওদিক উড়ে আবার নিজের মনে ফিরেও আসে।’
   দাদু বললেন, ‘পরিপালন আসার পর এই ক’ দিনে দেখেছি, মিঁউ, বিংগো বা কুমি, আর ধরো তোমার রাধাগোবিন্দ, সব্বাই বলতে গেলে ছাড়াই থাকে। আর পরিপালন নানারকম আদব-কায়দাও শেখাচ্ছে ওদের। পরিপালন সেদিন আমাকে বলছিল, ‘বড়বাবু, আমার খুব ইচ্ছে, আমাদের ফুলকুসুমপুর অঞ্চলে যখন তিন দিনের কৃষিমেলা আর পুষ্প প্রদর্শনী বসবে ছাব্বিশে জানুয়ারি, তখন আমাদের হযবরল চিড়িয়াখানার জন্যে শুধুকাকাকে দিয়ে একটা স্টল নেবেন। আমাদের রাধাগোবিন্দ, মিঁউ, বিংগো আর কুমিকে নিয়ে যাব স্টলে। স্টলটার ভিতরে একসঙ্গে ওরা ছাড়াই থাকবে। কিন্তু কেউ কারও সঙ্গে ঝগড়া বা মারামারি করবে না, একসঙ্গে মিলমিশ করে থাকবে, খুনসুটি করবে। তখন দেখবেন, মেলার সব লোক এসে ভিড় করবে আমাদের হযবরল চিড়িয়াখানার স্টলের সামনে। চারদিকে আমাদের পশু-পাখিগুলোর সুনাম ছড়িয়ে পড়বে।’
   ইচ্ছেদাদুর হাত ধরে চিড়িয়াখানায় ঘুরছিল হাইকু। হঠাৎ হাইকু বাঘের খাঁচার কাছাকাছি এসে দাদুর হাত ছাড়িয়ে এগিয়ে গেল খাঁচার সামনে। অমন সময় একটা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার মস্ত জোরে ‘হালুম’ বলে যা একখানা হুঙ্কার ছাড়ল! হাইকু ছুট্টে ঠাকুরমার আঁচলের আড়ালে। বাঘের গুহার সামনে থেকে ঘুরে এসে অতগুলো বাঘ দেখে ছোটদের মনে আনন্দের সীমা নেই। লিমেরিক আর হাইকু সাদা বাঘের খাঁচার সামনে এসে অবাক। ওরা কখনও সাদা বাঘ দেখেনি। সাদা বাঘ দেখে তো ওরা হাঁ! 
   ইচ্ছেদাদুকে লিমেরিক জিজ্ঞেস করল, ‘দাদু, বাঘ তো সাদা-কালো ডোরাকাটা হয় জানি। বাঘ কখনও সত্যি-সত্যি সাদা হয় নাকি?’
   ‘হয় রে হয়! এখন আলিপুর চিড়িয়াখানায় দুটো সাদা বাঘ আছে। একজনের নাম ‘রূপা’। সে মেয়ে-বাঘ। আর-একজনের নাম ‘ঋষি’। সে ছেলে-বাঘ।’
    চিড়িয়াখানা দেখে ইচ্ছেঠাকুরমা বললেন দাদুকে, ‘হ্যাঁ গো, ওদের কোথাও একটু খাইয়ে দাও। বাচ্চাগুলোর খিদে পেয়ে গেছে।’
   ছড়াপিসি বললেন, ‘মা, লিমেরিকরা মোমো খেতে খুব পছন্দ করে। কলকাতার মোমো পেলে ওদের আর কিচ্ছু চাই না! চলো!’    
   ইচ্ছেদাদুএকটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলেন। সকলে হইহই করে চিকেন মোমো খেয়ে বাড়ি ফিরে এলেন। তারপর রাতের খাওয়ার পর পাঁচজন মিলে কত রাত পর্যন্ত যে চলল বাঘ-হাতি-গন্ডার আর সিংহের গল্প। 
   এক ফাঁকে বুম্বা লিমেরিককে বলল, ‘জানো লিমেরিকদিদি, আমাদের বাড়ির কথা নাকি ওই যে মোটা গিনেস বুক আছে না, ওতে বেরোবে!’
   লিমেরিক তুচ্ছ মুখভঙ্গি করে বলল, ‘কেন, তোদের বাড়ির কথা গিনেস বইয়ে ছাপবে কেন? তুই জানলি কেমন করে?’
   বুম্বা বলল, ‘হুঁ-হুঁ! কথাটা একদিন আমাদের বলেছিল বিন্নিদি।’ তারপর বাঁ দিকে বিন্নিকে ঠেলা দিয়ে বুম্বা জিজ্ঞেস করল, ‘অ্যাই বিন্নিদি, তুই একদিন কবে যেন বলেছিলি না, গিনেস বুকে আমাদের বাড়ির কথা বেরোবো? কবে বলেছিলি, আমার মনে নেই। বল না রে বিন্নিদি!’
    ‘যে কথা তোর মনেই নেই, সে কথা আর বলে লাভ নেই। এখন ঘুমো তো!
   বুম্বা আক্ষেপের গলায় বলল, ‘বিন্নিদি বলবে না রে! লিমেরিকদিদি, এখন ঘুমিয়ে পড়!’
   অমন সময় ওদের ঘরের জানলার বাইরের বড় চালতা গাছের ডাল থেকে একটা রাতের পাখি ডানা ঝাপটে চটপট শব্দ করে উড়ে গেল। লিমেরিক তিন্নির গায়ের কাছে সরে এসে জিজ্ঞেস করল, ‘ওটা কিসের শব্দ হল রে তিন্নি?’
   তিন্নি বলল, ‘তোর ভয় পাওয়ার কিচ্ছু নেই। বাড়ির নীচে বসার ঘরে রাতে ঘুমোয় বিলম্বদাদু! ভয়ের কিছু নেই! এখন ঘুমো তো!’ 
(এর পর আগামী রোববার)


গল্পে গল্পে ক্যুইজ
রাজীব কুমার ঘোষ

পর্ব ৭

কী করে টাইম মেশিন বানাতে হয় (পর্ব ১)

তোমরা সবাই নানা চলচ্চিত্র, গল্প, পত্রিকার সৌজন্যে জানো টাইম মেশিন কাকে বলে। 'কল্পবিজ্ঞান' যাকে ইংরাজিতে তোমরা বল 'সায়েন্স ফিকশন', সেই কল্পবিজ্ঞানের চলচ্চিত্র বা ওয়েব সিরিজ বা বই এখন অসংখ্য। এই কল্পবিজ্ঞানের অন্যতম একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল 'সময় পারের যাত্রা' বা 'টাইম ট্রাভেল'। অর্থাৎ বর্তমান সময় থেকে ইচ্ছে মতো অতীতে বা ভবিষ্যতে চলে যাওয়া আবার ফিরে আসা। আর এই যাত্রা করার জন্য যে মেশিন দরকার তাই হল 'টাইম মেশিন' - 'সময় যান'।

তোমরা অবশ্যই ভেবেছ, যদি সত্যিই এই মেশিন থাকত তাহলে তোমরা তোমাদের ভবিষৎটা দেখে আসতে টুক করে বা একবার সুভাষচন্দ্রকে দেখে আসতে বা গৌতম বুদ্ধকে। আবার বড়রা, আমরা ভাবি, যদি টাইম মেশিন পেতাম তাহলে আরেকবার ছোটোবেলায় চলে যেতাম, সেই সব প্রিয় মানুষদের সঙ্গে আবার দেখা হত যাদের আমরা হারিয়েছি। 

এই দুনিয়ার বড়দের যে কোনো কাউকে জিজ্ঞেস করবে টাইম মেশিন হাতে পেলে তারা কোথায় ফিরতে চান। দেখবে অধিকাংশ বড়রাই বলবে স্কুল জীবনে ফিরতে চান। যে স্কুল জীবনে তোমরা আছ। মজার কথা হল তোমরা আবার চাইছ খুব ঝটপট বড় হয়ে যেতে। একটা গোপন কথা আজ জেনে নাও জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় হল ছোটোবেলা। যে ছোটোবেলায় তোমরা আছ। 

আমি প্রথমে তোমাদের অতীতে যাবার টাইম মেশিন বানাবার কৌশল শিখিয়ে দেব।  আজ থেকে চল্লিশ, পঞ্চাশ বছর পরেও কীভাবে তোমরা ফিরে যেতে পারবে আজকের ছোটোবেলায়। শুধু তাই নয় আমি আমার নিজের তৈরি টাইম মেশিন দিয়ে তোমাদেরও একটু অতীতে ঘুরিয়ে নিয়ে আসব। আমার জীবন অতীতে যাবার টাইম মেশিন তৈরি করার পরিশ্রমেই কেটে গেছে তাই ভবিষ্যতে যাবার টাইম মেশিন হাতে কলমে বানাবার সুযোগ পাইনি। তবে কীভাবে তৈরি করা যেতে পারে সেটা তোমাদের বলে দেব। আমার আশা তোমরা নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে যাবার টাইম মেশিন তৈরি করে নিতে পারবে। 

এই টাইম মেশিন কিন্তু এখন থেকেই বানাতে হবে তবেই তৈরি করা যাবে। সহজে, কম পরিশ্রমে কীভাবে বানানো যেতে পারে, সামনের রোববার সেই কৌশল নিয়ে আসছি। দেখা হবে জ্বলদর্চির ছোটোবেলার পাতায়।

আজকের ক্যুইজ

১।। "The Time Machine" পৃথিবী বিখ্যাত এই কল্পবিজ্ঞানের কাহিনি 'টাইম মেশিন' এই ব্যাপারটা সবার মধ্যে জনপ্রিয় করে তোলে। ১৮৯৫ সালে এটি প্রকাশিত হয়েছিল। লেখক কে?

২।। টাইম ট্রাভেলকে নিয়েই একটি আমেরিকান সায়েন্স ফিকশন মুভি ট্রিলজি আছে অর্থাৎ তিনটি চলচ্চিত্র। প্রথমটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮৫ সালে। পরিচালক ছিলেন রবার্ট জেমেকিস। রবার্ট জেমেকিসের 'মেন্টর' অর্থাৎ 'ফ্রেন্ড, ফিলোসফার এন্ড গাইড' বাংলায় বললে পরামর্শদাতা, প্রেরণাদাতা কে ছিলেন জানো? স্টিভেন স্পিলবার্গ। এই চলচ্চিত্রটির নাম কী?

৩।।  "ইন্টারস্টেলার" এই চলচ্চিত্রেও আমরা টাইম ট্রাভেল পাই। এর পরিচালকের নাম কী? যে পরিচালকের ঝুলিতে ১১টি অস্কার আছে।  আমি নিজেও এই পরিচালকের সায়েন্স ফিকশন মুভির অসম্ভব ভক্ত। 

৪।। হ্যারি পটার সিরিজের কোনটিতে আমরা টাইম ট্রাভেলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেখতে পাই?

৫।৷ ২০০৮ সালের সেই বিখ্যাত হিট হিন্দি চলচ্চিত্রটির নাম কী? যা একটি ট্রিলজির দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ছিল এবং এই পর্বটিতে ছিল টাইম মেশিন।


পাঠ প্রতিক্রিয়া
( বিশিষ্ট সাহিত্যিক ভূমিকা গোস্বামী ৪৬ তম ছোটোবেলা সংখ্যা পড়ে যা লিখলেন)

এই সংখ্যাটি স্বাধীনতার। স্বাধীনতা মানে জান তো ছোট্ট বন্ধুরা ? নিজেই নিজের রাজা। তবে রাজার অনেক দায়িত্ব থাকে । তাকে কেউ  শাসন করে না। নিজেকেই বিচার করে চলতে হয়। তোমরাও  নিজের ইচ্ছেগুলোর  শুভ অশুভ বিচার করে জীবনে প্রয়োগ করে তোমরাও 
স্বাধীনতা পেতে পার।

এই সংখ্যায় শুভেন্দু মজুমদারের  লেখা স্বাধীনতার ভাবনা  পড়ে  দেখ।  যশোধরা রায় চৌধুরীর ছড়া স্বাধীন ভাল লাগবে। মার্কিন দেশে কিভাবে ১৫ই আগস্ট পালিত হয় জানবে অনন্যা দাসের মূল্যবান লেখা থেকে। "দুদ্দার মজা" লেখায় জানতে পারবে আফ্রিকার কিছু কিছু গ্রামে এখনও কড়ি দিয়ে কেনা বেচা হয়। তারা প্রসাদ সাঁতরার স্বাধীনতা আমাদের 
 কবিতাটি  বেশ ভাল লাগবে।

তোমাদের বন্ধু  – সপ্তম শ্রেণীর  রেনেসাঁ গঙ্গোপাধ্যায়ের ছড়া ভাল। সপ্তম শ্রেণীর শ্রীপর্ণার ঘোষের গল্প "ওড়ার স্বাধীনতা "  বেশ ভালো ।   বেশ কয়েকটি ভাল ছবি আছে তোমাদের বন্ধুদের। নবম শ্রেণীর পৃথা নস্করের , দ্বিতীয় শ্রেণীর স্নিগ্ধা সেনের , সপ্তম শ্রেণীর তুলি দাসের , ষষ্ঠ শ্রেণীর কৃষ্ণগোপাল সাউএর , সপ্তম শ্রেণীর শ্রীপর্ণা ঘোষের। 

শ্রী অরবিন্দ কে নিয়ে অনেক তথ্য জানতে পারবে পীযূষ প্রতিহারের লেখায়। স্বাধীনতা দিবসের দিন তাঁরও তো জন্মদিন। ঐদিন তিনি যে বাণী দিয়েছিলেন তা আজও সমান গুরুত্বপূর্ণ।  
রতনতনু ঘাটীর ফুলকুসুমপুর খুব কাছে তোমরা তো নিশ্চয়ই পড়।  এবার আছে কুমির কথা। আরও অনেক  চিড়িয়াখানার প্রাণীদের সাথে আলাপ হবে।

আর আছে তোমাদের আকর্ষণীয় রাজীব ঘোষের গল্পে গল্পে কুইজ।  তা হলে ছোট্ট বন্ধুরা তোমাদের জন্য পত্রিকা "জ্বলদর্চি" ছোটোবেলা ৪৬, চটপট খুব মজা করে পড়ে ফেল।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 




Post a Comment

2 Comments

  1. মৌসুমী মাসি! আজকের সংখ্যা পড়তে আমার খুব ভালো লেগেছে, গল্প, কবিতা সব গুরুত্বপূর্ণ। সৃজিতা দাসের লেখা ' জম্বি গেম' গল্পটা পড়তে আমার খুব ভালো লেগেছে। ' পরিকল্পনা' গল্পটাও খুব সুন্দর।

    ReplyDelete
  2. বৈভবী সেনগুপ্ত

    ReplyDelete