জ্বলদর্চি

মেদিনীপুরের রসায়ন বিজ্ঞানী ড. নন্দগোপাল সাহু : সাধারণ থেকে 'অসাধারণ'-এ উত্তরণের রোমহর্ষক কাহিনী -৬/পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা

বিজ্ঞানের অন্তরালে বিজ্ঞানী ।। পর্ব ― ৩৭


মেদিনীপুরের রসায়ন বিজ্ঞানী ড. নন্দগোপাল সাহু : সাধারণ থেকে 'অসাধারণ'-এ উত্তরণের রোমহর্ষক কাহিনী -৬

পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা

গোল্ডেন এরা (Golden Era) 

কী হবে, যদি বার্ধক্য ঠেকানোর ওষুধ আবিষ্কার হয়? কী ঘটবে, যদি আপনি অনন্ত যৌবন (ন্যূনতম একশত বৎসর, ধরি)-এর অধিকারী হন? অদূর ভবিষ্যতে বিজ্ঞানীদের হাতের মুঠোয় তেমন সাফল্য এলে কেমন হয়? নির্ঘাৎ শোরগোল পড়ে যাবে বিশ্বজুড়ে। রেডিও-টেলিভিশন-সংবাদপত্র স-অ-ব ধন্যি ধন্যি করবে। গবেষণার জগতে হিরো বনে যাবেন পণ্ডিত বৈজ্ঞানিকের দল। তা, এমন উদ্ভট প্রশ্ন মাথার মধ্যে এল কেন? আসলে আধুনিক বিজ্ঞান গবেষণা সেদিকে এগুচ্ছে। সাম্প্রতিক গবেষণার ট্রেন্ড অন্তত তেমন ইঙ্গিত করছে। অমূলক নয় তেমন সম্ভাবনা!

  যুগটা ন্যানো-প্রযুক্তির যুগ। এ মডার্ন যুগে গবেষণার ভিত্তি প্রস্থর হল একটি কণা। ন্যানো-পারটিক্যাল। নাহ, এ কণা কোনও নির্দিষ্ট জাতের কণা নয়। সাইজ অনুপাতে এর এরূপ নামকরণ। ন্যানো-পারটিক্যাল এমন এক বিশেষ কণিকা যার মাত্রাগত আকার এক মিটারের এক বিলিয়ন (একশো কোটি বা একের পিঠে নয়টি শূন্য) ভাগের এক ভাগ মাত্র পরিমাপের সমান। অর্থাৎ, এক ন্যানোমিটার সমান 10-9 মিটার এবং যে সব কণিকার ব্যাস এক ন্যানোমিটারের সমান, তারাই ন্যানো-পারটিক্যাল। কি, অনুমান করতে পারছেন না তো এত ক্ষুদ্র দৈর্ঘ্য? আরও সহজ করে বলি― মোবাইল কিংবা কম্পিউটারের স্ক্রিনে যে লেখাটা এতক্ষণ আপনি ধৈর্য ধরে পড়ছেন, তার যে কোনও একটা অক্ষরকে দশ লক্ষ (১০,০০,০০০) গুণ বড় করলে ছাপার কালির মূল উপাদানটিকে আপনি দেখতে পাবেন। এখন তাকে আরও একশো কোটি গুণ বড় করুন। এবার দেখা যাবে উপাদানের রাসায়নিক উপকরণ― অণু আর পরমাণু। তাহলে বুঝতে পারছেন― অণু-পরমাণু কত ক্ষুদ্র! একটি অণুর আকারের সমতুল্য পরিমাণের দৈর্ঘ্যকে এক ন্যানোমিটার বলে। অর্থাৎ, একটি অণুর আকার ন্যানোমিটার বা সমতুল্য এককে প্রকাশ করা হয়। 

  চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই ন্যানো-পারটিক্যালের বিরাট অবদান। আজকাল এর নামের আগে একটি বিশেষণ যুক্ত হয়েছে। ড্রাগ ন্যানো-পারটিক্যাল। ওষুধ শিল্পে ড্রাগ পারটিক্যাল বহু আগে থেকে একটি প্রচলিত নাম। 'ন্যানো' যোগ সাম্প্রতিক কালে। অধিকাংশ ড্রাগ পারটিক্যাল সব জলে দ্রবীভূত হয় না। দ্রবীভূত হলেও খুব স্বল্প মাত্রায় দ্রাব্য। ফলে কণিকাগুলির জৈব-প্রাপ্যতা (Bioavailability) অত্যন্ত কম। কেন সহজে জলে দ্রবীভূত হতে পারে না ড্রাগ কণাগুলো? দ্রবীভূত হলে'পর কী উপকারই বা হতো? কীভাবে জলে দ্রবীভূত করা যায়? একলপ্তে একগুচ্ছ প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।

  আমরা যে ওষুধ সেবন করি, আমাদের শরীরে তার চলাচলের মাধ্যম কী? ওষুধের নির্দিষ্ট কণাগুলি কে বয়ে নিয়ে যায়? কে ছড়িয়ে দেয় সারা দেহে, বিশেষত জীবাণু আক্রান্ত কোষগুলোতে? উত্তর একটাই― শরীরের রক্ত। আরও সঠিক করে বললে, শরীর ও রক্তনালী মধ্যস্থ তরল জল। আর জল সেই সব কণাগুলোকে দেহের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয় যারা জলে পুরো মাত্রায় দ্রবীভূত হয়ে যায়। জলে দ্রবীভূত হওয়ার একটাই শর্ত― দ্রবীভূত কণার আকার জলের অণুগুলির আন্ত-আণবিক দূরত্বের সমান কিংবা কম হতে হবে। এক্ষেত্রে জল দ্রাবক আর ড্রাগ পারটিক্যাল দ্রাব-এর ন্যায় ভূমিকা পালন করে। আমরা অবগত আছি― জলের আন্ত-আণবিক পাল্লা ন্যানোমিটার অর্ডারে হয়― ০.৩১ ন্যানোমিটার। এই পাল্লার খাপে খাপে ড্রাগ পারটিক্যালগুলি গ্রথিত হয়ে গেলে তাদের ড্রাগ ন্যানো-পারটিক্যাল নামে অভিহিত করা হয়।

  ওষুধ শিল্পে কষ্টকর একটি কাজ হল ড্রাগ পারটিক্যাল থেকে ড্রাগ ন্যানো-পারটিক্যালে রূপান্তর। মাইক্রো-কণা থেকে ন্যানো-কণিকায় পরিনত করা যথেষ্ট পরিশ্রমের কাজ। ন্যানো মাত্রার কণায় রূপান্তকরণের দুটি বহুল প্রচলিত প্রযুক্তি আছে। এক, টপ-ডাউন (top down)। দুই, বটম-আপ (bottom up)। টপ-ডাউন খুব সাধারণ একটি পদ্ধতি। এ হেন পদ্ধতিতে ক্ষুদ্র কণিকা প্রস্তুত হয় বৃহৎ কণিকা থেকে। টপ-ডাউন একটি উচ্চ চাপ সমজাতকরণ আর পুঁতি-ভাঙা (bead milling) প্রযুক্তি। অপরপক্ষে, অধঃক্ষেপণ পদ্ধতির সাহায্যে ড্রাগ অণু থেকে ড্রাগ ন্যানো-পারটিক্যাল তৈরির প্রযুক্তিই হচ্ছে বটম-আপ। এছাড়াও, আরও একটি প্রযুক্তি রয়েছে। তা মূলত একটি যৌথ প্রক্রিয়া। টপ-ডাউন আর বটম-আপ প্রযুক্তির মিলিত পদ্ধতি। এ হেন পদ্ধতিতে বটম-আপ অধঃক্ষেপণ প্রযুক্তির সঙ্গে টপ-ডাউন প্রক্রিয়ার সংযোজন ঘটানো হয়। এর ফলে মাইক্রো-ক্রিস্টাল থেকে অধঃক্ষিপ্ত ন্যানো-পারটিক্যালের ক্রিস্টাল বৃদ্ধি প্রতিরোধ করা হয়। ক্যাবি-অধঃক্ষেপণ (cavi-precipitation) সে-রকম এক যৌথ প্রক্রিয়া। 

  এ হেন দুরুহ কাজে দীর্ঘদিনের ছায়াসঙ্গী রসায়নের একটা বড় অংশের বৈজ্ঞানিককুল। তাদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে ওই ড্রাগ ন্যানো পারটিক্যাল, যা কিনা জলে অতি অল্প মাত্রায় দ্রাব্য। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত কত বিনিদ্র দিবস-রজনী যে অতিবাহিত হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই! ড্রাগ ন্যানো-পারটিক্যাল তৈরির সেরকম একটি মিশনে নন্দগোপাল বাবু যোগ দিলেন সিঙ্গাপুরে এসে। সম্পূর্ণ ভিন্ন রকমের কাজ। শুরুর অভিজ্ঞতা যৎসামান্য; একদম নেই বললেই হয়! 
      
  এক বছরের মাথায় মিলল সাফল্য। বর্তমান সমাজের একটি বড় সমস্যা ক্যানসার। ব্রেস্ট ক্যানসার, কোলনের ক্যানসার, ফুসফুসের ক্যানসার, ওভারিয়ান ক্যানসার দিনে দিনে ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগোচ্ছে। ক্যানসার রোগ নিরাময়ের প্রচলিত পদ্ধতি কেমো-থেরাপি। কিন্তু প্রাথমিক স্টেজ ব্যতীত সবসময় কাজেও দেয় না কেমো-থেরাপি। ক্ষেত্র বিশেষে সাময়িক আরাম মেলে ঠিকই; পার্মানেন্ট সলিউশন হয় না। তাই বিকল্প ব্যবস্থার অবতারণা। আগামী প্রজন্মের ক্যানসার প্রতিরোধের রক্ষাকবচ হতে পারে কুয়েরসেটিন-সহ একগুচ্ছ ড্রাগ পারটিক্যাল।

  কুয়েরসেটিন (Quercetin) হল খাদ্যতালিকার এক শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পদার্থ। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এমন এক পদার্থ যা খাদ্যসামগ্রী জারনে বাধা দেয়। এ হেন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট একটি আদর্শ ড্রাগ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এমন আরও অনেক ড্রাগ পারটিক্যালের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। তবে তা ব্যবহারে সমস্যা বিস্তর। কারণ জলে এদের দ্রাব্যতার পরিমাণ অতি অল্প আর জৈব-প্রাপ্যতাও নিতান্ত কম। চিকিৎসা বিজ্ঞানে, বিশেষত ক্যানসার নিরাময়ে এর ব্যাপক প্রচলন এখনও পর্যন্ত নেই। ভবিষ্যতে ক্যানসার আক্রান্ত কোষের দ্রুত বিকাশের পথে শক্তিশালী অন্তরায় হবে এই কুয়েরসেটিন-সহ একঝাঁক কণিকা― বিজ্ঞানীদের দৃঢ় বিশ্বাস। শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা, কবে ন্যানো-পারটিক্যালে রূপান্তরিত করা যাবে কুয়েরসেটিন এবং বাকি সমগোত্রীয় কণিকাসমূহ? অবশেষে সে-কাজে সফল হলেন নন্দগোপাল বাবু। টপ-ডাউন, বটম-আপ আর ক্যাভি-অধঃক্ষেপণ মূলত এই তিন পদ্ধতির সাহায্যে তৈরি করতে সক্ষম হলেন কুয়েরসেটিন ন্যানো-ক্রিস্টাল। শুধু কুয়েরসেটিন ন্যানো-ক্রিস্টাল নয়, আরও কয়েকটি ক্ষুদ্র স্ফটিক কণার উদ্ভব হল তাঁর হাতে।

(দুই)
সিঙ্গাপুরের ন্যানিআঙ্গ টেকনোলজিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (Nanyang Technological University বা সংক্ষেপে NTU)-এর একটি বিশেষ বিভাগ 'স্কুল অফ কেমিক্যাল অ্যান্ড বায়ো-মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং' (School of Chemical and Bio-medical Engineering)। সেখানে তখন প্রথিতযশা তিন অধ্যাপক তাঁদের জ্ঞানের দ্যুতির বিচ্ছুরণ ঘটাচ্ছেন। ডিপার্টমেন্ট আলো করে প্রফেসর আলী আব্বাস (Prof. Ali Abbas), প্রফেসর জাহের জুদেহ (Prof. Zaher Judeh) আর প্রফেসর সি. এম. লি (Prof. C. M. Li) স্বমহিমায় বিরাজমান। সময়টা ২০০৬ সালের আগস্ট মাস। ন্যানিঅ্যাঙ্গ টেকনোলজিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে এলেন নন্দবাবু। মনোনিবেশ করলেন ড্রাগ ন্যানো-পারটিক্যাল তৈরির কাজে। প্রথম প্রথম বিস্তর অসুবিধার সম্মুখে পড়লেন। কারণ তাঁর কাছে বিষয়টি যেমন সম্পূর্ণ আনকোরা, তেমনি নতুন কঠিন সাবজেক্ট। কী করণীয় আর কী করণীয় নয়―অদ্ভুত টানাপোড়েন মনের মধ্যে। পরিস্থিতি বুঝে এগিয়ে এলেন প্রফেসর আলী আব্বাস স্যার। পাখি পড়া করে বোঝালেন সবকিছু। হাতে-নাতে শিখিয়ে পড়িয়ে দিলেন অনুজ নন্দকে। তিন প্রফেসরের অধীনে এভাবে এক বছর ধরে চলল তাঁর গবেষণা। এক বছর পর ডিপার্টমেন্ট বদলে ফেললেন তিনি। 'স্কুল অফ মেকানিক্যাল অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং'― পছন্দের বিভাগে বদলি হয়ে এলেন; প্রফেসর লিন লি (Prof. Lin Li) এবং প্রফেসর এস. এইচ. চ্যান (Prof. S. H. Chan)-এর আন্ডারে। সেটা ২০০৭ সালের অক্টোবর মাস।

       

  ইতিপূর্বে ২০০৭ সালের প্রথম দিকে মুম্বাই-এর একটি কোম্পানি চাকুরীর বিজ্ঞাপন বের করে। বিজ্ঞাপন দেখে আবেদন করলেন নন্দবাবু। মুম্বাই গেলেন ইন্টারভিউ দিতে। ইন্টারভিউ-এ সফলও হয়েছিলেন। চাকুরীর নিয়োগপত্র হাতে তিনি সামান্য দ্বিধাগ্রস্থ। দোদুল্যমান হৃদয়ে ফের চমক! গবেষণায় মনোসংযোগ করা মনস্থির করলেন তিনি। একেবারে সঠিক তাঁর সে-সিদ্ধান্ত। অক্টোবরে একই ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ মেকানিক্যাল অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে যোগ দিলেন। মনের মতো কাজ জুটে গেল, যা আদপে তাঁর পছন্দের বিষয়। বহুস্তরীয় কার্বন ন্যানো-টিউব (MWCNTs)-এর মতো কার্বন ন্যানো-ম্যাটিরিয়াল এবং গ্রাফিন অক্সাইড (GO) নিয়ে কাজ শুরু হল। কেননা, কার্বন ন্যানো-টিউব (CNTs) এবং গ্রাফিন-এর প্রতি তাঁর এক অমোঘ টান। সে-টানেই স্কুল অফ মেকানিক্যাল অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে তাঁর আসা। এসে অব্দি ব্যস্ততা চরমে। মনের সুখে কাজ করে চলেছেন তিনি। লক্ষ্য তড়িৎ-সক্রিয় পলিমার কম্পোজিট আবিষ্কার।

  সময়টা ২০০৮ সাল। অনাকাঙ্ক্ষিত এক খুশির খবর বয়ে আনে সেবছর। সিঙ্গাপুরের একটি কঠিন, মর্যাদাপূর্ণ, সম্মানের বৃত্তি হচ্ছে 'লি কুয়ান ইউ ফেলোশিপ'। সচরাচর মেলে না এ বৃত্তি। অনেক পরিশ্রম, অধ্যবসায়, ত্যাগ, মানসিক ধৈর্য আর সবশেষে, গবেষণায় সাফল্যের পুরস্কার এই ফেলোশিপ। বৃত্তির মেয়াদ তিন বছর। এ হেন ফেলোশিপের জন্য মনোনীত হলেন নন্দগোপাল বাবু। তাঁকে মনোনীত করা হয় স্কুল অফ কেমিক্যাল অ্যান্ড বায়ো-মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে তাঁর গবেষণার নিরিখে। কুয়েরসেটিন-সহ একগুচ্ছ ক্যানসার বিরোধী ন্যানো-পারটিক্যাল আবিষ্কারের পুরস্কার সে-বৃত্তি। তিনি সম্ভবত দ্বিতীয় ভারতীয়, যে এই স্কলারশিপের অধিকারী হয়েছিলেন। তাঁর সাফল্যের শিখরে আরও একটি উজ্জ্বল পালক যুক্ত হল।

(তিন)
জহর প্রণালী। অতীব সুন্দর একখান প্রণালী। সিঙ্গাপুরকে মালয়েশিয়া থেকে পৃথক করে রেখেছে এই জলরাশি। ন্যানিআঙ্গ টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি থেকে মাত্র কুড়ি কিলোমিটার দূরে। তিরিশ মিনিটের পথ। পঁচিশ-তিরিশ জনের এক বাঙালি টিম সিঙ্গাপুর থেকে রওনা হয়েছে জহর প্রণালী। সি-বিচের ধারে হবে পিকনিক। জম্পেশ খাওয়া দাওয়া, হইহুল্লোড় আর নির্ভেজাল আনন্দই লক্ষ্য। আসলে ন্যানিঅ্যাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন একঝাঁক বাঙালি ছেলেমেয়ে। অধিকাংশের লক্ষ্য পিএইচ. ডি. আর পোস্ট-ডক্টরেট। শিবনাথ, দেবাশীষ, অপরাজিত, অলোক, মিন্টু, সুধন, সৌভিক, সুভাষ, ক্ষুদিরামদা, অনুমিতা, সুদীপ, ইন্দু, অলকানন্দা, বিশ্বজিৎ, সুরজিৎ, ভূপেন্দ্র, লক্ষীদা আর শান্তিদা। প্রত্যেকের সঙ্গে গাঢ় হৃদ্যতা নন্দগোপাল বাবুর। লক্ষ্মীদা আর শান্তিদা অনেক আগে থাকতে সিঙ্গাপুরের অন্যত্র একটি সরকারী প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র সায়েন্টিস্ট হিসাবে নিযুক্ত।

  সবাই মিলে একসঙ্গে হইহই করে কাটছিল সোনার সে-দিনগুলো। সিঙ্গাপুরে সোম থেকে শুক্র গভীরভাবে কাজে ডুবে থাকে সকলে। সকাল আটটা–সাড়ে আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা―ছ'টা পর্যন্ত অমানুষিক খাটুনি। অন্য দিকে তাকানোর ফুরসৎ নেই। দম ফেলার সময় পর্যন্ত পাওয়া যায় না। শনি আর রবিবার সপ্তাহে দুটো ছুটির দিন। একঘেয়েমি সরিয়ে রেখে ওই দুদিন সারা সপ্তাহের রসদ সংগ্রহের ধুম। সেজন্যে উইক-এন্ড পার্টি মাস্ট। পার্টিতে হন্যে হয়ে পড়ে সবাই। পার্টি হয় ঘুরে ফিরে; এক একজনের বাসায়। পুরো পরিবার অংশগ্রহণ করে। পার্টি বলতে খাওয়া দাওয়া, গল্প গুজব, সুখ-দুঃখ শেয়ার করা আর খাঁটি আনন্দ উপভোগ। খুশিতে ডগমগ সকলে। একঘেয়েমি প্রতিরোধে এ হেন পার্টি অক্সিজেন দেয়।
    

  শুধু পার্টি-পিকনিক করেই ক্ষান্ত নয়। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। বছরভর কিছু না কিছু অনুষ্ঠান হামেশা লেগেই থাকে। বিদেশ বিভুঁই-এ থাকলেও বাঙালি সংস্কৃতি, কৃষ্টি, কালচার বিস্মৃত নয় কেউই। বিশেষত কলিদেবী। সিঙ্গাপুরে তিনি যথারীতি ভাই ফোঁটা দিতেন সকলকে। শুধু কী ভাই ফোঁটা! রাখীবন্ধনে রাখী বাঁধা, রাখী বেঁধে মিস্টি খাওয়ানো―একা হাতে দারুণ সামলান তিনি। ফলে সকলের মধ্যে দারুণ সৌভাতৃত্ববোধ। বন্ধু মহলে বেশ জনপ্রিয় নন্দবাবু ও কলিদেবী।

  ধর্ম আর বিজ্ঞান হাত ধরাধরি করে পথ হাঁটে সমান্তরালে। চিরটা কাল নাস্তিক আর আস্তিকের চিরাচরিত দ্বন্দ্ব চলে। সে-দ্বন্দ্বে বিজ্ঞানের দিকের পাল্লা ভারী হয় ঠিকই; কিন্তু ধর্মকে চটিয়ে কেউ কিচ্ছু করে না। পাছে ধর্মান্ধ মানুষের কোপ পড়ে― এই ভয়ে। অধিকাংশ বৈজ্ঞানিকগণ বিভিন্ন ধর্মের যুতসই যুক্তি, বিজ্ঞাপনের ধার ধরেন না। তবে কোথাও না কোথাও মনের গোপন মণিকোঠায় তাঁর আবাল্য চর্চিত আরাধ্য দেবদেবীর পুজার্চনায় অন্তরের সন্তুষ্টি মেলে খানিক। তেমনই এক দেবী বিদ্যাদেবী মা সরস্বতী। শুরু হল বাণী-বন্দনা। মা সরস্বতীর পুজো। পুজোর দিন ছোটবেলায় সকাল থেকে উপোষ রেখে, স্নান সেরে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার অভ্যেস প্রায় সব বিদ্যার্থীর থাকে। প্রত্যেকের অন্ধবিশ্বাস― বিদ্যাদাত্রীর বরে বিদ্যা মেলে, প্রত্যেকে জীবনে সুন্দর প্রতিষ্ঠা পায়। অবশ্য এতে অন্তরের প্রশান্তি মেলে। সবাই নূতন উদ্যমে পড়াশুনা শুরু করে। সিঙ্গাপুরে বাসায় ছোটবেলার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল। শুরু হয়ে গেল বিদ্যাদাত্রীর আরাধনা। দেবীর মূর্তি গড়ার অনেক অসুবিধা। বিদেশে ভালো মূর্তিকর সহজে মেলে না। অগত্যা ঘট পুজো। ধুমধাম সহকারে পূজার্চ্চনা আরম্ভ হল। ভক্তি ভরে পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন করে সবাই। প্রসাদ তো নয়; যেন অমৃত। পাত পেড়ে প্রসাদ ভক্ষণ―সে এক মজার জিনিস। দুপুরের পাতে উপরিপাওনা― নিরামিষ খিচুড়ি আর তরকারি। 

   এত আনন্দের মাঝে একখণ্ড বিষাদের সংবাদ বয়ে আনল একটি ঘটনা। দেশের বাড়ি কুনারপুরে বড় বউদি মারা গেছেন ক্যানসারে, ২০০৯ সালে। যে ক্যানসার নির্মূল করার জন্যে পাক্কা এক বছর কুয়েরসেটিন নিয়ে এত পরিশ্রম, তাঁর গবেষণা; সেই ক্যানসার কেড়ে নিল তাঁর বড় বউদিকে। শোকের কালো ছায়া নেমে গেল পরিবারে। তিনি নিরুপায়। শত শত যোজন দূরে সিঙ্গাপুরের মাটিতে। দীর্ঘ দূরত্ব তাঁর পায়ে বেড়ি পরিয়ে রাখল। কয়েক হাজার কিলোমিটার দূর থেকে বড় বউদিকে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন তিনি।

(চার)
ফেলোশিপের মেয়াদ ছিল মাত্র তিন বছর। ২০০৮ সাল থেকে ২০১১ সাল। পরপর তিনটি বসন্ত পার করে তিনি ন্যানিঅ্যাঙ্গ টেকনোলজিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের 'এনার্জি রিসার্চ ইনস্টিটিউট' (Energy Research Institute)-এ বৈজ্ঞানিক হিসাবে নিযুক্ত হন ২০১১ সালে। গাইড হিসেবে প্রফেসর জেক্সিআঙ্গ শেন (Prof. Zexiang Shen) আর প্রফেসর এস. এইচ. চ্যান (Prof. S. H. Chan) স্যারের সান্নিধ্য পেলেন। এখানে এক বৎসর কাল 'ফুয়েল সেল' (Fuel Cell)-এ মেন্টর হিসাবে কাজ শুরু করেন। যদিও ফেলোশিপ কমপ্লিট হওয়ার পরে ২০১১ সালে ন্যানিআঙ্গ টেকনোলজিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসাবে তাঁর যোগ দেওয়ার কথা। এতদিন পর্যন্ত অন্তত এমনটাই  নিয়ম ছিল। কোনও এক অজ্ঞাত কারণে তাঁর বেলায় নিয়মের ব্যতিক্রম দেখা গেল; তাঁর নিয়োগ স্থগিত হয়ে যায়।
      

  ইতিমধ্যে ঘুরে এসেছেন জার্মানি আর সার্ন (CERN)। সেটা ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাস। শর্ট পিরিয়ডের জন্য গেলেন জার্মানির 'ফ্রি ইউনিভার্সিটি অফ বার্লিন' (Free University of Berlin)। ভিজিটিং সায়েন্টিস্ট (Visiting Scientist) হিসাবে যোগ দিলেন প্রফেসর আর. এইচ. মুলার (Prof. R. H. Muller)-এর অধীনে। প্রফেসর মুলার একজন পৃথিবী বিখ্যাত ড্রাগ ন্যানো-ক্রিস্টাল গবেষক-বিজ্ঞানী। তাঁর নামে অসংখ্য পেটেন্ট রয়েছে ড্রাগ ন্যানো-ক্রিস্টালের উপর। বার্লিন থেকে নন্দবাবু ঘুরতে গেলেন সার্ন (Earopean Organization for Nuclear Research)। সুইজারল্যান্ডের বর্ডারে অবস্থিত সার্ন মাটির নিচে দীর্ঘ সাতাশ কিলোমিটার জুড়ে নিউক্লিয়ার গবেষণার জন্য বিশ্বের ব্যয়বহুল একটি প্রতিষ্ঠান। সার্নে তখন ঈশ্বরকণা আবিষ্কারের প্রস্তুতি চরমে। বন্ধু দিলীপ রয়েছে সার্নে। সে-ই ঘুরেফিরে দেখাল সার্ন। সেখানে যেন এক বিশাল দক্ষযজ্ঞ চলছে। চক্ষু ছানাবড়া পড়ার অবস্থা! বিশাল আয়োজন।

  ২০১২ সালের আগস্ট মাস। ভারতে যেমন কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (Council of Scientific & Industrial Research বা সংক্ষেপে CSIR), যার আন্ডারে অনেক নামকরা ইনস্টিটিউট রয়েছে; সিঙ্গাপুরেও তেমনি রয়েছে 'অ্যাসটার' (ASTAR), যার অধীনে অনেক নামীদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। তেমনই একটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে 'ইনস্টিটিউট অফ ম্যাটিরিয়াল রিসার্চ অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং' (Institute of Material Research and Engineering)। সংক্ষিপ্ত নাম 'IMRE'। এখানেই শান্তিদা আর লক্ষ্মীদা সিনিয়র সায়েন্টিস্ট হিসাবে দীর্ঘদিন নিরলস কাজ করে চলেছেন।  আর তিনি ম্যাটিরিয়াল রিসার্চ বিভাগে প্রায় এক বছর অতিবাহিত করলেন।

  সময়টা ২০১১ সাল। ঘরে লক্ষ্মী এল। ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দিলেন কলিদেবী। সিঙ্গাপুরে। নাম রাখলেন নিভৃতা। এদিকে ছেলে নির্ভীকও বড় হচ্ছে। জন্মাবধি বিদেশে কাটছে তার। প্রবাসে বেড়ে উঠলেও বাসা-বাড়িতে পুরো ভারতীয় সংষ্কৃতি, দেশীয় আদব-কায়দার চল। সে-সংষ্কৃতিতে বড় হচ্ছে তারা। সন্তানদের মধ্যে আরও ইন্ডিয়ান কালচারের বীজ বপন করার স্বপ্ন কলিদেবীর দু'চোখে। দেশীয় সংষ্কৃতির ভীত শক্ত পোক্ত করার অছিলায় দেশে ফেরার পরামর্শ দিলেন তিনি।

  আর নন্দগোপাল বাবুও এ সময় হঠাৎ ঘরের প্রতি একটা জোরালো টান অনুভব করেন। টান বাড়ি ফেরার; নিজের দেশে ফিরে আসার, দেশের হয়ে কাজ করার তাঁর তীব্র বাসনা। এ তো, যাকে বলে, নাড়ির টান। দেশের প্রতি ভালোবাসার অমোঘ আকর্ষণ। বিদেশে আর মন টিকছে না। 'এইবার দেশে ফিরে চল'― অন্তরাত্মার ডাক। কঠিন সে-ডাক। এড়ানো বড় কঠিন। কিন্তু দেশে ফিরে কী করবেন তিনি? অনলাইনে আবেদন জানালেন উত্তরাখণ্ডের এক রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে। কুমায়ুন ইউনিভার্সিটি। সেটা ২০১৩ সালের প্রথম দিক। সেসময় একপ্রকার না-জেনে, না-বুঝে আবেদন করেছিলেন কুমায়ুন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারপর শুরু হল খোঁজখবর― কুমায়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য। তার মধ্যে এসে গেল সুখবর।

  আশ্চর্যের ব্যাপার! আচমকাই নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে গেলেন নন্দগোপাল বাবু, ইন্টারনেট মেইল মারফত। অবাক ব্যাপার! কোনও ইন্টারভিউ নেই। ডিসকাসান নেই। টেলি-যোগাযোগ পর্যন্ত নেই। সরাসরি অ্যাপয়েন্টমেন্ট! তারপর ২০১৩ সালের জুলাই মাসের শেষদিকে চলে এলেন উত্তরাখণ্ডে; কুমায়ুন স্টেট ইউনিভার্সিটির রসায়ন বিভাগে।

  দেশে ফেরার আগে মনের মধ্যে তীব্র টানাপোড়েন। নৈনিতাল আসা নিয়ে দোটানায় তিনি! শেষমেশ, নৈনিতাল-এ চলে আসার পিছনে লক্ষ্মীদা আর শান্তিদা'র প্রচ্ছন্ন মেন্টাল সাপোর্ট খুব কাজে দিয়েছে। তাঁরা বলেছিলেন―
'দেশের হয়ে কাজ করতে চাইলে তোর কুমায়ুন ইউনিভার্সিটি জয়েন করা আবশ্যক।'

(পাঁচ)
বিশেষ একটি ঘটনা (ভালো বা মন্দ) জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। মন্দ ঘটনার তেতো অভিজ্ঞতা হোক, কিংবা ভালো ঘটনার সোনালী স্পর্শ― এক্ষেত্রে অনুঘটকের মতো কাজ করে। এক্সট্রা অনুপ্রেরণা জোগায়। বাড়তি অ্যাড্রিনালিন নিঃসরণ ঘটায়। তখন মাথায় একগুঁয়ে জেদ চেপে বসে। প্রবল সে-ঝোঁক কোনও কিছু আদায় করে নেবার। দৃঢ় সে-সংকল্প অসম্ভব কাজ অনায়াসে সম্পন্ন করতে অক্সিজেন জোগায়। সেজন্যে ব্যর্থতার প্রয়োজন আছে। ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেয় মানুষ। ঘুরে দাঁড়ায়। উন্নতি করে।

 নন্দগোপাল বাবুর জীবনে কানাডা সফর ব্যর্থতার এক চিহ্ন স্বরূপ। আসলে, কালেভদ্রে অকৃতকার্য হওয়ার প্রয়োজনীয়তাও খুব বেশি প্রতিপন্ন হয়। ব্যর্থতাই সফল হওয়ার সঠিক পথের দিশা দেখায়। ব্যর্থতার পরে সাফল্যের স্বাদ অমৃত সমান প্রতিপন্ন হয়। কিন্তু অসফলতা যখন আসে, সেসময় খুব বেশি করে প্রয়োজন হয় প্রিয়জনের সান্নিধ্য। এই ভালোবাসা, সামান্য মিস্টি কথা অথবা কাঁধের উপর স্নেহভরা হাত ব্যর্থতার সব দুঃখ কষ্ট অনেকাংশে লাঘব করে দেয়।

  নন্দবাবুর কানাডা সফর অসফল হওয়ার পর চারপাশের মানুষজনের শীতল ব্যবহার কিংবা মৃদু চাহুনি ভেতরে ভেতরে তাঁকে দারুণ ক্ষতবিক্ষত করে। মনের কষ্ট বুকের ভেতর চেপে রাখেন তিনি। অপেক্ষা করেন সময় পরিবর্তনের। দাঁতে দাঁত চেপে ভালো সময়ের প্রহর গুণেছেন। কিন্তু সেসময় একজনের অসীম স্নেহাশীষ সর্বদা বর্ষিত হয়েছে তাঁর উপর। সেই মানুষটি আর কেউ নন, তাঁর প্রিয় শ্বশুরমশাই। সেই কঠিন সময়ে তাঁর উষ্ণ সংলাপ নন্দবাবুকে ভরসা জুগিয়েছে। তিনি বলেছিলেন―
'দেখো, একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। এত চিন্তা কোরো না।'
  অক্ষরে অক্ষরে ফলে যায় তাঁর কথা। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে নন্দবাবুর উত্থানের শুভ সূচনা হয়। সিঙ্গাপুরে তাঁর অতিবাহিত সময়-অভিজ্ঞতা-কাজ, তাঁর নিজের মতে, গোল্ডেন টাইম। সোনার সময়। তাঁর জীবনের সোনালী অধ্যায়।  (চলবে)

তথ্য-ঋণ :
শ্রদ্ধেয় বৈজ্ঞানিকের রত্নগর্ভা মাতা বিমলাদেবী
শ্রদ্ধেয় বৈজ্ঞানিকের জ্ঞাতিখুড়ো শ্রী নগেন্দ্রনাথ সাহু
শ্রদ্ধেয় বৈজ্ঞানিকের মেজদা শিক্ষক শ্রীঅসিত কুমার সাহু
পরম শ্রদ্ধেয় বৈজ্ঞানিক-গবেষক ড. নন্দগোপাল সাহু, কুমায়ুন ইউনিভার্সিটি, নৈনিতাল, উত্তরাখণ্ড
শ্রদ্ধেয় বৈজ্ঞানিকের সেজদা শ্রী ননিগোপাল সাহু
শ্রদ্ধেয় বৈজ্ঞানিকের বন্ধুস্থানীয় দাদা শিক্ষক শ্রী দেবাশীষ মান্না

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 
৫ পর্ব

Post a Comment

0 Comments