জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা/(উৎসব ১৪২৮)/দিলীপ মহান্তী

গুচ্ছ কবিতা

দিলীপ মহান্তী

তুঙ্গভূম

রাঙা রাস্তায় রক্তজবার স্তূপ
দেবীও আজকে জলতল খুঁজে নেন
মন্দির চূড়া দূর পাহাড়ের গায়ে
ঘন জঙ্গল হাত নেড়ে ডেকে যায়

নদীর ওপারে প্রাচীন উঁচু টিলা
পায়ের তলায় বাঁশবন নুয়ে আছে
নদী বাঁক নেয় হাঁসুলির উপমায়
অরণ্য কাঁপে প্রাচীন রাজার নামে

নবমীর দিনে জলের বর্ণ লাল
কাঠি নাচ আর পাতা নাচে উৎসব
রং বেরং-এর শাড়িতে মোড়া হাওয়ায়
প্রতিমার চোখ সব মুখে শোভা পায়।



নীলখাতা

মুগ্ধ কথারা হাতে তুলে নিল নীলখাতা
যে খাতার ওপরে ভেসে গেছে কত নদী
তার তল পেতে ডুবুরিও ডুবেছিল
হাতের মুঠোয় মুক্তো রাশি রাশি

পাতাগুলো উড়ে ব‍্যাকুল ফাগুন মাসে
উড়ে যায় কত এলোমেলো ভাঙা ভোর
দরজায় থামে বৈরাগী একতারা
দৃষ্টি খুঁজছে হারানো বাউলরোদ!



জাদু ভ্রমণ

ভ্রমণের কথা লিখি জলের অক্ষরে
পায়ের পাতা বেয়ে রোদ ঝরে পড়ে
আকুল আঙুল থেকে নদীদের ব‍্যথা

পথের উষ্ণতা মেখে পুড়ে যায় পা
দৃষ্টি ডাকে দাবানল, শরীরে শরীর
আগুন হাওয়ার কাছে মুখ পাতা দায়

প্রবল গ্রীষ্মের দিনে হাঁটার বিরতি
আকাশে জমেছে মেঘ, আসবে বৈশাখী
প্রতিটি লোমকূপে ঢুকে যাবে বর্ষার আকুতি!



পুতুল খেলা

কাঁসাইয়ের তীরে ব‍্যথার পাহাড় ছিল
লাল রং মাখা মোরামের ভাঙা পথ
হাওয়ার মুখে বকুলের ঝরা কথা
স্রোত ঢেলে ছিল শীর্ণ জলের রথ

আজ বুঝি আর সেই ব‍্যথাখানি নেই
মৃত্যুর ঘ্রাণ ঘাসের অশ্রু চোখে
সুযোগ পায়নি শুষ্ক হাওয়ার হাত
সব জলকণা মুছে অথবা শুষে নিতে পোড়া বুকে

পশ্চিম থেকে অনাচারী মেঘ এসে
অসুখ ছড়ায়, ধুলোয় ধুলোয় মরণের ভাঙানীড়
পৃথিবীর কোলে হেঁটে যাওয়া কত জীব
টুপটাপ ঝরে শ্মশানে বাড়ায় ভিড়!



আগুন

গত রাত্রির অন্ধকার
আরও বেশি কালো নিয়ে আসে

চারদিকে বুনোমোষ, হায়েনার ভিড়ে
গাছেরা নীরব হয়
নদীরা অশান্ত হয়
অজগর শুয়ে আছে জলে

কেবল কান্নার ধ্বনি বাতাস কাঁপায়
চিতা জ্বলে এখানে ওখানে
যত আলো লোক তত কম

পৃথিবীর ঘাস পুড়ে যায়!



স্বর্গ

আমার পৃথিবী আমি পেয়ে যাব
পাঁচ বছর পর সেই জয়ের মুহূর্ত
এরকম কথা ছিল রাত্রির ঠোঁটে

যে পৃথিবী জ‍্যোৎস্না মেখে জ্বলে উঠবে রূপে
তেমনি ভোটের গন্ধে রাত্রিগুলি ভাসে
পৃথিবীকে নিবিড়ভাবে কাছে কাছে পাবো

পঁচিশটি বসন্ত এসে মর্গে চলে গেছে
পৃথিবীর বুকে করোনার দিন রাত
পৃথিবীও শ‍্যাওলা মেখে ঘোরে

পৃথিবীকে নেড়েচেড়ে দেখাই হল না
আমার অজান্তে রুগ্ন এ পৃথিবীর রাত
শ্মশানের দিকে দ্রুত ছোটে

শুধু রাত্রির বুকে ধ্রুবতারা জ্বলে!
শুধু রাত্রির নদী স্রোত নিয়ে বাঁচে!
রাত্রির ভাষা ওই স্থির তারা বোঝে!



Post a Comment

0 Comments