জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা/(উৎসব ১৪২৮)/ সুধাংশুরঞ্জন সাহা

গুচ্ছ কবিতা 
সুধাংশুরঞ্জন সাহা

উন্মোচন : এক

আরোগ্য নামক এক উপগ্রহের অপেক্ষায়
দিন গুনছে ঘরবন্দী সারা দুনিয়া।

সাফল্যের সংজ্ঞা বদলে বদলে যায়,
সময়ের এবড়ো খেবড়ো পথে যেতে যেতে।

সাফল্যে যাদের মাথা ঘুরে গিয়েছিল একদিন,
লোভে চকচক করে উঠেছিল চোখ,
সাফল্যের চুম্বকসিঁড়ি বেয়ে
নিজের অজান্তে হারিয়ে গেছে তারা অতল খাদে।

সত্য কি চিনেছে মৃত্যুকে আজও ?

বিভ্রান্তির পথে পথে পথ হাতড়াই।



উন্মোচন : দুই

মানুষের পতন ধরা পড়ে তার চোখের ভাষায়।
অবশ্য পতনেও উত্থানের আলো থাকে।
যার দেখার চোখ আছে সে দেখতে পায়।

প্রতিষ্ঠিত শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সাহস লাগে।
সে-সাহস সবাই সঞ্চয় করতে পারে না।
যে পারে, সে বুক চিতিয়ে দাঁড়ায়, অন্ধকারের বিপক্ষে ।

অস্তিত্ব মানে কী ? 
আলো? 
আগুনের গোলা ? 
নাকি, নিভৃত বারুদ !
এই বারুদের বিস্ফোরণে তছনছ হয়
আমাদের ঘিরে থাকা অন্ধকার।
এ-বিস্ফোরণ যে প্রত্যক্ষ করতে পারে,
তার সামনে উন্মুক্ত হয় সম্ভাবনার অযুত পথ।



উন্মোচন : তিন

এক একটা দিন এমন হয়,
মাথায় বাজতে থাকে সুরের জোছনা।
ধীরে ধীরে কেটে যায় মনের কুয়াশা।
ফুটে ওঠে আলোর ইশারা।
ভিতরে ভিতরে চুরমার হয়
সব মিথ্যা অভিমান।

কবিতায় যতক্ষণ সত্য লুকিয়ে থাকে,
ততক্ষণই তার সৌরভ।
কবিতায় মিথ্যা ঢুকে পড়লে, সে মিথ্যা
কাউকেই স্পর্শ করতে পারে না।



উন্মোচন : চার

যে অশ্রুতে সুরের আলিঙ্গন থাকে,
সেটাই প্রকৃত প্রেম।
চেতনার পরতে পরতে 
সে এক আশ্চর্য অনুভব।

এক একটি উন্মোচন আদতে
এক একটা আলোর ঝিলিক।
অন্ধকারে জ্বলে থাকা
নক্ষত্রের আভাস ।
বহুস্তরীয় মায়ার এক একটা দিগন্তরেখা ।



উন্মোচন : পাঁচ

পাহাড় চিনতে গেলে
শুধু শৃঙ্গ নয়,
পাহাড়ের সানুদেশ,গিরিখাত,উপত্যকা ও ঢালকে
কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না।
সাফল্যের আগে তাই বারবার
ব্যর্থতার কথাই জায়গা করে নেয় পদে পদে।

ব্যর্থতাকে অবজ্ঞা করার প্রবণতা
গোপনে ধ্বংসের পথই প্রশস্ত করে।

প্রতিটি ব্যর্থতাই সাফল্যের এক একটা ধাপ।

যে কবিতায় ইতিহাস, সময়ের অভিমান নেই,
সে কবিতা হৃদয় জয় করতে পারে না।
নির্ণয় করতে অপারগ হয় 
উথালপাথাল জীবনের জ্যামিতিক অবস্থান।


আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments