গুচ্ছ কবিতা
রিয়া ভট্টাচার্য
পরিবর্তন
বোবা দস্তাবেজের পাতাগুলি উড়ছে...
ঠিক তোমার শব্দের মতো,
বাতিল তবু অনন্য
কুয়াশার মতো আবর্তিত হচ্ছে দিগন্তে।
ঠাঁই নেই তবু ---
অজস্র প্রতিকূলতা আঁচড়ে...
মায়াকাজলের মতো হাতড়ে চলেছি অস্তিত্ব,
সীমান্তে সিন্দুররেখার মতো ঠাঁই পেয়েছে অবজ্ঞা।
তোমায় আমি ভালোবাসিনি...
প্রত্যাশাসেতু ধসে পড়ার পরে
মিইয়ে গিয়েছে সুখ ---
আরশির কাঁচে রোদ ছড়াচ্ছে শ্রদ্ধাকণা
কিছু অবলম্বন লেপটে রয়েছে,
বিনিদ্র অপেক্ষা সাক্ষী থেকেছে বদান্যতার।।
ইতিহাস ও অন্য
অদৃষ্টের কাছে প্রতিপল হেরে গিয়ে...
যারা গড়ে তুলেছিল যান্ত্রিক কাঠামো, সভ্যতার
তারা হারিয়ে গিয়েছে,
তাদের গিলে ফেলেছে ইতিহাস।
আমরা শিখেছি বাবরের যুদ্ধ, পানিপথের বিস্তৃতি...
ভুলে গিয়েছি বুভুক্ষু কৃষকের আর্তনাদ
একমুঠো ভাতের খোঁজে
কতগুলি প্রাণ ঝরে গিয়েছে নিঃশব্দে।
খবর রাখার প্রয়োজন ছিলো আদপেই!
রেললাইনে পড়ে থাকা শুকনো রুটিগুলো
অপেক্ষা করেছে বৃষ্টির...
সীমান্তপারের কোনো এক গ্রামে উপচে পড়েছে
অবাধ্য অশ্রুজল,
তাদের মাড়িয়ে গিয়েছে ইতিহাস
যাদের অস্থিভারে উর্বরা হয়েছে ধরিত্রীতল।
বাঁচা মরার মাঝখানে
মেঘে ঢাকা শরীরে যন্ত্রনাঘূর্ণি
একলা আকাশে নিঃস্পৃহ ধ্রুবতারা
নীহারিকাপুঞ্জে ছড়ানো নিঃস্তব্ধতার কল্পশোক
ধূসররঙা ফানুসের কোলে রামধনু উল্লাস।
একলা সাম্পানে জোনাকির আলো
নীরব কবিতারা চুঁইয়ে পড়ে
নেপথ্যে কোলাহল, নারকীয় বঞ্চনার
আঁচড় কাটে তাত্ত্বিক সভ্যতার ত্বকে।
নিষ্ঠুর হাসির নেপথ্যে হতাশাঘোর
অজান্তে ছুরিকাঘাতে ক্ষতবিক্ষত মাটি
আসন্ন বিপদের মুখে অদম্য সন্তরণ
ক্ষুদকণিকা হয়ে এভাবেই বেঁচে থাকি।।
প্রেম ও মৃত্যু
কারা যেন বলেছিল...
আগুন ছুঁয়ে দিলে পবিত্র হয় পাপী,
নশ্বর শরীর হাতড়িয়ে পুড়িয়ে দেয় যন্ত্রণা
মাটির কলসিতে ডুবে গঙ্গা পেরোয় একমুঠো ছাই
পরপারের কড়ি ছড়িয়ে হিসেব করে নিয়তি
কতটা ফুরিয়ে গেলে মোক্ষ ধরা দেয়!
অবার্চীন কবিতার দেশে
যেদিন প্রথম বিক্রি হয়েছিল ভালোবাসা,
হারিয়ে গিয়েছিল শুকতারা
ব্যর্থ নালিশ জমিয়ে, প্রেতনদীর জলে
ছায়া হাতড়ায় বিপন্ন ভীরুচোখ।
ধীরে ধীরে পথ হাঁটে জীবন্ত প্রেম
বিতরাগ যত গুছিয়ে নিয়ে আবেগের কলসিতে ---
আত্মপিণ্ড ভক্ষণ করে বিপন্ন পরিযায়ী,
কবিতারা কস্তুরি হয়ে গন্ধ ছড়ায় মুক্তির
অপেক্ষারা ভ্রান্তি হয়ে অনন্ত রাত জাগে।।
কবিতা
আমরা কবিতা লিখি না।
একদলা ক্ষোভ উগরে দিই অজান্তে
শব্দের ভাঁজে গুঁজে দিই নিত্যদিনের ক্ষোভ,
কিছু আপেক্ষিক বেদনা - হতাশার খতিয়ান
পাশাপাশি বসে তারা স্মৃতি হাতড়ায়,
চৈতি ধানের শীষে যেমন আদর হাতড়ায় রোদ
প্রেম আর ব্যথা ধুলো মাখে ব্যস্ত সড়কের একপাশে,
অদেখা সময়ের মতো বয়ে যায় জনরোষ।
আমরা কেউ কবিতা লিখিনি কোনোদিন...
নিকানো উঠোনের একধারে বসে হাতড়ে দেখেছি সম্পর্ক
তারা পিছলে গিয়েছে, শৈশবের খেলনার মতো
ঘাড় ভেঙে শুয়ে থেকেছে খাটের তলায়,
তাদের তুলে আনার কথা মনে পড়েনি,
অনাদর দিয়ে কি আর কবিতা লেখা যায়!
জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
0 Comments