জ্বলদর্চি

কবিতাগুচ্ছ/(উৎসব ১৪২৮)/শুভ্রা ভট্টাচাৰ্য


গুচ্ছ কবিতা 
শুভ্রা ভট্টাচাৰ্য


 অপেক্ষারত আমি

বাহির হতে ঝকঝকে হাসিখুশি
মনের গহন অলিন্দে কত ক্ষয়,
ভালো আছি সুখে আছি বোঝাতে
আমার নিখুঁত নিটোল অভিনয়।
ক্ষনিকের ভ্রমে যা গেছে হারিয়ে
নিশ্চিত আসিবে তা ফিরে অন্তরে,
সত্যের নিরিখে সময়ের বহমানতায়
আশায় বাঁধি বুক বেদনার বালুচরে।
উপেক্ষিত হৃদয়ের করুন আর্তি
একদিন হতে হবেই ক্ষমাপ্রার্থী,
অনুশোচনায় প্রতীক্ষার স্বীকৃতি
আমি অপেক্ষারত নীরব মূর্তি।।
        

 সম্প্রীতির উৎসব

ইসলাম ধর্মে ঈদ কথাটির তাৎপর্য গভীর
খুশির দানে ধনী দরিদ্রে ভালবাসা নিবিড়,
পবিত্র উৎসবের মিলন মেলায় খুশি বিতরন
মনের বিভেদ ঘুচায়ে আনন্দে উদ্ভাসিত জীবন।
জাত ধৰ্ম ভুলে সম্প্রীতি বন্ধনে মানবতার জয়
অহিংসা উদারতা সততায় প্রাণমন ভালোবাসাময়, 
সম্প্রীতির উৎসবে সাম্যের গান সুরেলা ছন্দময়  
প্রেমসঙ্গীতে সুমধুরে অনুরণিত সৃষ্টির তাল লয়।।
          

 অটুট বন্ধন

মায়ের সাথে সন্তানের প্লাসেন্টার টান 
কোনো শর্তেই নাহি হবে না কভু ম্লান,
অবিচ্ছেদ্য এ আত্মিক সম্পৰ্ক চিরকালীন
কোন কিছুর বিনিময়ে হবে না তা মলিন,
অক্সিটোসিনে গড়া অটুট মায়ের স্নেহ
মিঠে হয়েও বাড়ায় না কভু মধুমেহ।           
সন্তানের প্রতি মায়ের আত্মিক টান
একই সত্তায় অভিন্ন দুটি মন প্রাণ,
গর্ভের বাহিরেও নিরাপদ ছত্র ছায়ায়
পুত্র ভাসমান স্বর্গীয় প্রেম ফল্গুধারায়,
মায়ের শিক্ষায় আত্মজর সুচরিত্র গঠন
সমাজে নারীর প্রতি সম্মানবোধের জাগরণ।
                   

 আসল পশুর খোঁজে

বনের পশু দেখতে আমার লাগে ভারী মজা,
তাই তো যাই চিরিয়াখানায় দেখতে বনের রাজা।
পড়ার বইয়ে মনভুলানো দেখি কত কাগুজে পশু,
ছবির যান্ত্রিকতায় ভুলায়ে মা ভাবায় মোরে শিশু।
বাবা দিয়েছে কত খেলনা পশু রংবেরংয়ের গড়ন,
তাদের সাথে খেলেই আমি চিনি পশুর ধরন।
বড় হলে আসল পশুর খোঁজে যাবোই আমি বনে,
সংগোপনে সেই স্বপ্ন সাজায়ে সাধটি রাখি মনে।।
                   

 গাড়ী চড়ার বায়না

খেলা ঘরের গাড়ীগুলো দূর দেশে যায় না
কল্পনার অভিযানে ভেসে ঘরে মন রয় না,
সত্যিকারের গাড়ীর তরে কৌতূহলী বায়না
ছটফটে কচিপ্রাণ মোটেই স্থবিরতা চায় না।
ট্রাম ট্রেন বাস ট্যাক্সি বাইক কত যানবাহন
সে সবের চলমানতা উপভোগে মন উচাটন,
হরেকরকম যানে চড়ার মজা অনেক পায়
সব কিছু পিছনে ফেলে স্বপ্নের দেশে যায়।।
            

অনুশোচনা

সাজা পেয়েছে মানবজাতি
   আজ বড্ড অসহায়,
প্রকৃতির রোষানলে পড়ে
    কারো নিস্তার নাই।
যুগে যুগে প্রকৃতির রোষে
   পৃথিবী হয় মৃত্যুপুরী,
অন্তরে সুশিক্ষার আবেশ
   রেখে যায় মহামারী।
দেখছি নিজ কদর্যতার রূপ
   প্রতিবিম্ব মন আয়নায়,
নিভছে রাগ দ্বেষ বিষের অনল
   কুকর্মের অনুশোচনায়।।
              

প্রকৃত স্বাধীনতা

বলিবে কেহ স্বাধীনতা কারে কয়!
সে কি শুধুই ন্যায় নীতি ভাঙনময়!
প্রাণ প্রকৃতির কি অমর্যাদা অবক্ষয়!
নাকি স্বার্থ সুখের উল্লাসে আত্মময়!

দেখি দিকেদিকে দ্বেষবিদ্বেষ সন্ত্রাস ভয়
মেকি ভাষণ তোষণে গালভরা বাঙময়,
মিছে ইগোর আস্ফালনে ভোগবাদের জয়
স্বেচ্ছাচার স্বৈরাচারে প্রকৃতি দূষণময়।

কিন্তু স্ব-অধীনতা বড়োই শৃঙ্খলাময়
আত্মঅনুশীলনে স্বশাসক হতে হয়,
মননে সততা মানবিকতা উদারতা রয়
তবেই দেশ ও দশ সর্বত্তোম কল্যাণময়।।


 ধিক স্বদেশপ্রেম!

আজ ধ্বংস সুখের উল্লাসে 
স্বদেশ হতে দেশে বিশ্ব হাসে, 
পোড়া বারুদের গন্ধ বাতাসে
টাকার দহনে আনন্দে ভাসে।
পোড়ে স্বদেশিকতা হিংসা-দাবানলে
দেশপ্রেমীরা চক্ষুধোলাইয়ের তালে,
স্বদেশের তরে সতত যে বলিদান
পায়নি কখনো তাহা যথার্থ মান।
বিপন্ন প্রজাতি, অস্তিত্ব সঙ্কটময়
অনুশোচনাহীন মনে অকুতোভয়, 
আজ আত্মসুখের আদিম উল্লাসে 
স্বদেশপ্রেমিকেরা আমিত্বেই ভাসে।। 
               

সুকর্মেই সুদিন

স্বপ্ন যতই ছলনা করুক
ভাগ্য বেড়াক উড়ে,
দিনগুলো কাটবে ঠিকই
নিজের মতো করে।
কর্ম যেমন করি মোরা
তাই দিয়ে রচি ভাগ্য,
অলীক স্বপ্নের ঘোর হতে
মন যেন পায় আরোগ্য।
সেবা দান সুকর্মে মজলে
জীবন পথ হয় মসৃণ,
সময়ের পরে জীবন ছাড়ি
চুকাই দিনান্তে ঋণ।
         

বারিষ ধারায় খুশি

সবুজে নীলে শাড়ি
সবুজ ঘাসে নারী,
হাতে কচু পাতা
বাঁচাতে দুটি মাথা,
ছাগলে টানে কাছে
স্নেহের পরশ রচে,
ইলসে গুঁড়ি বৃষ্টি
লাগে বড়ো মিষ্টি,
কচু পাতার তলে
ভিজছে বেশ জলে,
এমন বারিষ দিন
বাজায় খুশির বিন,
প্রাণ প্রকৃতি মিশে
কাটুক বেলা হেসে।
       

 প্রথার উন্নয়ন

পালকি কাঁধে ছয়টি জোয়ান
গ্রামের পথে যায়,
লজ্জাবতী নববধূ অসূর্যম্পশ্যা
পর্দায় ঘেরা তাই।
বেহারারা পালকি কাঁধে হাঁটে
মাইলের পর মাইল,
বধূ ব্যথিত হৃদে গোপনে ভাবে
ঘামে ওরা কাহিল।
তাই তো পালকি প্রথা অবলুপ্ত
যন্ত্রে নববধূর গমন,
আধুনিকে পরস্পরের কষ্ট বুঝে 
ভালো থাকা অনুক্ষণ।
          


নবাগতের বার্তা

বেলাশেষে ওই শোনো দূরে
শুকনো পাতার মর্মর ধ্বনি,
সবুজ পাতায় লাগে হিল্লোল
নবাগতের খুশির বার্তা আনি,
পল্লবিত শাখে জাগে কিশলয়
প্রাণবন্ত প্রকৃতি সৌন্দর্যময়,
সতেজ শ্যামলিমায় কলতান
দিকে দিকে নব আনন্দের গান,
সৃষ্টি সুখের উল্লাসভরা আহ্বান
আবেগে আহ্লাদে জুড়ায় প্রাণ।
                
জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments