জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -৫০



সম্পাদকীয়,
ছোটোবন্ধুরা, স্বপ্ন যদি সত্যি হতো কি মজাই না হতো তাই না? আমরা সবসময় পরীক্ষায় পঞ্চাশে পঞ্চাশ  পেতাম। স্বপ্ন যদি সত্যি হতো, প্রবাহনীলের গল্পের মতো সনাতন স্বর্গে গিয়েও রাঘব বাবুকে উচিত শিক্ষা দিতেন। স্বপ্ন যদি সত্যি হতো, রতনুতনু জেঠুর উপন্যাসের মতো মিঁউ এর, কুমির, বিংগোর, রাধাগোবিন্দের সব সব কথা আমরা এপ দিয়ে অনুবাদ করে নিতাম। স্বপ্ন যদি সত্যি হতো শতভিষার ছড়ার মতো বাড়িগুলো খাবার দিয়ে তৈরি হতো।  হা হা হা। স্বপ্ন যদি সত্যি হতো গৌর জেঠুর গল্পের ডাবলুর বাড়ির পাশে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বাড়ি হতো। স্বপ্ন যদি সত্যি হতো তবে ঋতা আন্টির গল্পের মতো কোনো অভয়ারণ্যেই আর রিসর্ট হতো না। বিমলেন্দ্র জেঠুর কবিতার মতো ফুলেদের নাচ, গান আলাপ শুনে আমরা খুশি থাকতাম। কখনো ফুলেদের বৃন্তচ্যুত করতাম না। স্বপ্ন যদি সত্যি হতো হরিৎ আঙ্কেলের ছড়ার মতো জীবনে পাওয়া সমস্ত আনন্দটুকু পাবার জন্য মা বাবাকেই জড়িয়ে ধরতাম। স্বপ্ন যদি সত্যি হতো আমি আবার ছোটো হয়ে তোমাদের মতো রঙীন রঙীন ছবি আঁকতাম।  আর কি মজা দেখো। আমি যখন ছোটোবেলার সংখ্যাগুলো সাজানোর সময় প্রতিবার ভাবি যদি তোমাদের দ্বিগুণ আনন্দ দিতে পারতাম কি মজাই না হতো।  আজ পঞ্চাশ তম সংখ্যায় সেই স্বপ্ন সত্যি হল শুধুমাত্র দেবজ্যোতি আঙ্কেলের জন্য। হ্যাঁ,  দেবজ্যোতি আঙ্কেলের ভ্রমণের স্মৃতিকথা পড়ে তোমরা বলবেই বলবে, পঞ্চাশে পঞ্চাশ 'কই'! এবারের ছোটোবেলা তো পঞ্চাশে একশো। হলো কিনা স্বপ্ন সত্যি? আর এই আনন্দে আমরা খুব শীঘ্র উৎসব করব কথা দিলাম। আর সেই উৎসবের কথা ভেবে তাই কল্যাণ আঙ্কেল শিউলির গন্ধে ভরিয়ে দিয়েছে ছোটোবেলার প্রচ্ছদের চিত্র উপহার দিয়ে।  - মৌসুমী ঘোষ।



সুন্দরবন
গৌর বৈরাগী

ডাবলুদের বাড়ির পাশেই বিশাল বড় বাগান। বাগান নয়, বনই বলা যায়। আম-জাম-কাঁঠাল-দেবদারু আরও যে কত গাছ আর ঝোপঝাড়। সেই বনটাই হল সুন্দরবন। বনে বাঘ আছে। দেখা যায় না। হরিণ আছে। তাও দেখা যায় না। বনের ধারে একটা বড় পুকুরও আছে। সেখানে কুমির আছে। দেখা যায় না। পাখ-পক্ষী অবশ্য দেখা যায়। গানও শোনা যায় তাদের। 
আর আছে মৌমাছি। এইতো গেল বছর দু’টো বড় বড় মৌচাক হয়েছিল। মৌচাকে ভর্তি মধু।
এই সুন্দরবনে কড়া শাসন আছে। শাসন আছে ডাবলুর। দোতলার লবিতে থ্রি নট থ্রি রাইফেল হাতে নিয়ে ডাবলু শাসন করে। তার শাসনে সুন্দরবনে থরহরি কম্প। বাঘ মাংস খাওয়া ছেড়ে ঘাস খায়। আর মাঝে মাঝে মধু খায়। হরিণও ঘাস খায় ।
একটা বীর হনুমান আছে এই বনে। তার নাম বিপুলবাবু। বিপুলবাবু খুব দুষ্টু। ঠাকমা নিজে হাতে বড়ি দেয়। আচার তৈরি করে ছাদে গিয়ে খুব চুপিচুপি বড়ি আর আচার খেয়ে নিয়েছিল। ভাগ্যি থ্রি নট থ্রি রাইফেল নিয়ে দুপুরে ঘুমিয়ে পড়েছিল ডাবলু, না হলে কী যে হতো।
বিপুলবাবু বলল, কী আবার হবে। ওটা টয় বন্দুক। ওটা কোন কাজের নয়।



ফুলের ছড়া

বিমলেন্দ্র চক্রবর্তী 

১.
গোলাপ টগর বেলি
কোথায় তোরা গেলি
গন্ধরাজের দেখা
ভাবছিল সে একা
ছোট্ট দু'খান টবে
সেই যে এল কবে
তারপরে এক ফুল 
ফুটেছে নির্ভুল 
বাতাস মৃদুমন্দ
ছড়িয়ে দিলে গন্ধ
পাখিরা সব গাছে
গান করে আর নাচে।
২.
বকুল পলাশ পদ্ম
পাপড়ি যেন পদ্য
কৃষ্ণচূড়া কদ্ম্বরা
মিষ্টি অনবদ্য।
সূর্যমুখী দিচ্ছে উঁকি 
জানলা দিয়ে ওই
পাশে গাঁদা ঝুমকো জবা
কেতকী ও জুঁই
কামিনী মালতী যূথী 
মল্লিকা বনে
শেফালি কুন্দ আহা
মগ্ন আলাপনে।


কলসিভরা কই
দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য 

ভাতেমাছে বাঙালি। মাছ দেখলে দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে যায় এমন লোকজনের অভাব নেই আমাদের চারধারে। আমি নিজেও খানিক সেইরকম। দেশে বা বিদেশে তেমন  মাছ দেখলেই হল। মুহূর্তে কাণ্ডজ্ঞান লোপ এবং পছন্দের মাছটাকে কবজা করে পেটে চালান করবার তোড়জোড়। সেই নিয়ে মজাও কম ঘটেনি নানান জায়গায়। তারই একটা বলি আজ।
সে বছর গেছি গোপালপুরে। যারা গেছ তারা জানবে কী চমৎকার এই সাগরপাড়ের শহর। উড়িষ্যার ব্রহ্মপুর জেলায় বঙ্গোপসাগরের ধারে। নির্জন। দারুণ সুন্দর।
তার ওপর আমরা আবার গেছি ইশকুলের আ্যনুয়াল পরীক্ষার মধ্যে। ঘরে ঘরে ছেলেপুলেরা তখন ভীষণ মন লাগিয়ে অঙ্ক ভুগোল এইসব পড়ায় ব্যস্ত। কাজেই টুরিস্ট স্পটরা ফাঁকা। আমার মেয়ের তখন কুল্লে চার বছর বয়েস। তার ইশকুলও নেই। পরীক্ষাও নেই। 
গোপালপুর পৌঁছে দেখা গেল হোটেল টোটেল সব ফাঁকা। ইচ্ছেমত বেছে নিলেই হল। দেখেশুনে তাই একেবারে জলের ধার ঘেঁষে একটা হোটেলে ওঠা গেল। একতলার ঘর। তার বারান্দা পেরোলেই ধবধবে বিচ, আর একটু এগোলেই সমুদ্র। দিনরাত্তির তার দুমদাম জল আছড়ানো বাদে ত্রিসীমানায় আর কোনো শব্দ নেই।

হোটেলে লোক নেই, তাই কিচেনে ব্যস্ততা নেই বিশেষ। আমরা সকালবেলা উঠে  গঞ্জের বাজারে যেতাম। বাসস্ট্যান্ডের কাছেই। সেখান থেকে মনের সুখে নানান রংঢঙের মাছ আনা হত। কিচেনে মনোমত করে রান্না করিয়ে সে যে কী সুখের খাওয়া!
এমনি করে দিন তিনেক গেল। চার দিনের দিন আয়েস করে ঘুম থেকে উঠে দেখি বেশ শোরগোল পড়েছে হোটেলে। ঘরে ঘরে লোকজন। ডাইনিং রুমে পিলপিল করছে লোক।
জানা গেল পরীক্ষা টরিক্ষা শেষ। সেদিন ভোরের ট্রেনেই তাই কলকাতা থেকে ঝাঁক বেঁধে টুরিস্টরা এসে ঢুকে পড়েছে।
কিচেনের হেড রাঁধুনি আমায় দেখে জানাল, সেদিন আর আলাদা রান্নাবান্না হবে না। কিচেন ব্যস্ত থাকবে।
সেদিন রাতেই ফেরার কথা। দুপুরে পার্শের ঝাল খেয়ে রাতের জন্য ভেটকির ফ্রাই টিফিন নিয়ে ট্রেন ধরবার সাধ ছিল। বুঝলাম সে গুড়ে বালি পড়েছে।
তবু, ক'দিনের অভ্যেস। যাবার দিন বাজারটা একবার পাক না দিয়ে ফিরি কী করে? অতএব, মেয়েকে কাঁধে বসিয়ে নিয়ে আমি আর গিন্নি চললাম বাজারের দিকে। খানিক ঘুরেঘেরে ফিরে আসব এই ছিল ইচ্ছে।
তবে মাছের ঠাকুরের যে ইচ্ছে অন্য ছিল সে তো আর জানতাম না! জানলে বাজারের থলে হাতেই যেতাম। কারণ, বাজারে ঢুকেই চোখ পড়ল, এক তেলুগু বুড়ি কোত্থেকে একঝুড়ি কইমাছ জুটিয়ে এনে বসে আছে। 
সে কি কই! সিংহের মত তেজ। পাকা হলদেটে শরীর। একেকটা দুহাতের পাঞ্জার মত। বুড়ি বলল, গাঁয়ের দিকে কার পুকুর ছেঁচেছে নাকি। তাইতেই ওই বস্তু বেরিয়েছে। অন্ধ্রের একেবারে গা ঘেঁষা সেই সাগরতীরের গাঁ-গঞ্জে অমন বিটকেল মারমুখো মিঠেজলের মাছের খদ্দের নেই বিশেষ।

এদিকে, সে মাছ দেখেই  আমি তো মন্ত্রমুগ্ধ। দাঁড়িয়ে গেছি ঠায়। বুড়ির ঝুড়ির গায়ে কইদের ঝাঁপাঝাঁপির শব্দের ম্যাজিকে সে জায়গা ছেড়ে পা আর চলে না।
জিজ্ঞেস করে জানা গেল, বুড়ি পঞ্চাশ টাকা পেলেই সে আপদ বিদেয় করে ঘরে ফিরবে। এই দাম শুনে এবার গিন্নিও দেখি বেশ উতলা। একঝুড়ি পাকা কই এমন দামে পাওয়া আদতে লটারিব্জেতার শামিল।
এখন, তিনটে সমস্যা। এক,  নেবো কিসে? বুড়ি কই বেচবে। ঝুড়ি বেচবে না। দুই, হোটেলে রেঁধে দেবে না। তিন, রেঁধে দিলেও আড়াই জন মিলে অতো কই এক সিটিং এ খেয়ে ফেলা মানুষের সাধ্য নয়।
তা, খানিক বাদে  তিনটে সমস্যারই সমাধান করে দিল মাছউলি বুড়ি।  একটাই মাস্টারস্ট্রোকে। খানিক দূরে একটা মেটে হাঁড়িকলসির দোকান দেখিয়ে বলে, একটা কলসি কিনে টিউকল থেকে জল ভরে মাছ ভিজিয়ে নিয়ে চলে যাও। কদিন ধরে আরামে খেতে পাবে।
বুদ্ধি মন্দ নয়। গিন্নি ততক্ষণে ভাগযোগও শুরু করে দিয়েছে- ছ পিস যাবে পর্নশ্রী, নৈহাটি যাবে আটটা, অণিমাদি দুটো...
সেই শুনতে শুনতে একটা জলের কলসি কিনে আনা গেল।  পাশেই টিউবওয়েল। বুড়ির পয়সা মিটিয়ে কর্তাগিন্নি মিলে চললাম সেখানে। গিন্নির হাতে কলসি। আমার হাতে মাছের ঝুড়ির ভেতর খলবলে কই আর পেছন পেছন আমার খুদে মেয়ে।
কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল ঝুড়ি থেকে কলসিতে কই ট্রান্সফার মোটেই সহজ কাজ নয়।
টিউব ওয়েলের তলায় খানিক জায়গা জুড়ে জল জমে আছে। হালকা কাদা। তার মধ্যেই কলসিতে খানিক জল পাম্প করে নিয়ে তার মুখে ঝুড়ি কাত করতেই অবাধ্য কইমাছরা কলসিতে ঢুকতে অস্বীকার করে চারপাশের জলকাদায় ডাইভ দিয়ে নেমে পড়ে হইচই শুরু করে দিল। তারপর তো যাকে বলে হাডুডু ম্যাচ শুরু হয়ে গেল । আমি আর গিন্নি লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে কইদের সঙ্গে যুদ্ধ করছি। বাজারে আসা লোকজনও কেউ কেউ আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। চারপাশে ভিড় জমে গেছে, ধর ধর, গেল গেল রব উঠছে, আর আমাদের মেয়ে পাড়ে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে হাসছে। বাবা-মাকে কলসি নিয়ে মাছ শিকার করতে দেখে তার বেজায় ফূর্তি।
***
ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় মাছদের কবজা করে কলসিতে ভরা গিয়েছিল সেদিন। তারপর, আমার কাঁধে মেয়ে, গিন্নির কাঁখে কলসিভরা কই, দুজন মিলে হোটেলে ফেরা হল। বিকেলে সেই ন্যাকড়ায় মুখ বাঁধা খলবলে কলসি নিয়ে বাসে চেপে ব্রহ্মপুর।

ট্রেনে উঠে, একটা গামছা দিয়ে বিড়ে বানিয়ে কলসি তো লোয়ার বার্থের নীচে সেঁধিয়ে দেয়া গেল। আমার আপার বার্থ আর গিন্নির উল্টোদিকের লোয়ার। সেইদিকে শুয়ে সে কড়া চোখে উলটো লোয়ারের তলার দিকে নজর রেখে চলেছে। মাটির কলসি। ছুটন্ত ট্রেনের দুলুনি, আর কলসিভরা দুর্দান্ত কইদের লাফঝাঁপে যদি কলসি উলটে পড়ে তাহলে যে কী হবে সেই চিন্তায় আমারও ঘুম নেই। মাঝেমাঝেই নেমে এসে কলসির তদারক করে যাচ্ছি। 
তা এরই মধ্যে মাঝরাত্তির নাগাদ একজন বিরাট মোটাসোটা মানুষ এসে ট্রেনে উঠলেন ও বসবি তো বস ওই কলসিঢাকা লোয়ার বার্থেই আসন নিলেন। এবারে হাতের বাক্সটা সিটের নীচে গুঁজতে যেতেই এদিকে থেকে গিন্নি আর ওপর থেকে আমি কঁকিয়ে উঠেছি, "সাবধান! সাবধান!"
ভদ্রলোক ঘাবড়ে গিয়ে থমকে যেতে না যেতেই আমি ওপর থেকে লাফিয়ে নেমে সিটের নীচে মুণ্ডু গুঁজে উবু হয়ে পড়েছি।
তারপর কলসি অক্ষত দেখে বের হয়ে গিন্নিকে গ্রিন সিগন্যাল দিয়ে মাথা উঁচিয়ে দেখি ভদ্রলোক নিবিষ্ট হয়ে আমাদের অপারেশনটা দেখছেন।
চোখাচোখি হতে বলেন,  ব্যাপারটা কী?
বললাম। তারপর তাঁর চক্ষুকর্ণের বিবাদ ভঞ্জনের জন্য কলসি বের করে,,সাবধানে মুখের ঢাকনা সরিয়ে দেখালাম।
এর নিট ফল হল এই, ভদ্রলোক নিজেও আর সে রাতে ঘুমোননি,,আমাদেরও ঘুমোতে দেননি। অবশ্য, ছুটন্ত ট্রেনে, মাথার নীচে তুচ্ছ মাটির হাঁড়ির জেলখানায় ওরকম ভীমভবানীমার্কা মারকুটে কইবাহিনী নিয়ে ঘুমোবার মত মনের জোর খুব কম লোকেরই হবে। 

সে মাছ অনেক কসরতে বাড়ি অবধি পৌঁছেছিল। আমরা কয়েকদিন ধরে তেলকই, ঝোলকই, কইপাতুরি এইসব খেয়ে খেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। কিন্তু সবচাইতে লাভের হয়েছিল  ট্রেনে সেই রাতটা ওই মানুষটার সঙ্গে জেগে গল্প করা। অসামান্য কিছু অভিজ্ঞতার গল্প বলেছিলেন তিনি। সেটা স্বাভাবিকও। কারণ, তিনি ছিলেন স্বয়ং বিখ্যাত সাংবাদিক বিক্রমন নায়ার।
ভাগ্যিস কলসি ভরে কই এনেছিলাম!নইলে রাতভোর বিক্রমন নায়ারের গল্প শোনা যেত নাকি?



পরম বন্ধু 
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়


এই দেখো এই তোমার দিকে 
বাড়িয়ে দিলাম হাত
রাগ করে না বন্ধু আমার 
নাও খেয়ে নাও ভাত। 

ভালোর জন্যে মা বাবাই তো
যখন খুশি বকবে 
ওরাই আবার ভালোবেসে
তোমায় আদর করবে। 

কোনটা ভালো কোনটা কালো
ওরাই তোমায় বলবে 
ওদের হাতেই মানুষ হয়ে 
নিজের পথ চলবে। 

এমন বন্ধু এই দুনিয়ায় 
ওরাই শুধু আছে 
যতই মারুক যতই বকুক
ডাকবে ওরাই কাছে। 

ওরাই আল্লা চালক তোমার 
ওরাই ভগবান 
ভালোবেসে শ্রদ্ধা করে 
রেখো ওদের মান। 



গন্ডারীলালের বন্ধুরা
ঋতা বসু

গারো পাড়ার জঙ্গলে বেশ অনেকদিন ধরেই শান্তিতে বাস করছে গন্ডারীলাল। ছোটবেলায় চোরা শিকারিদের আক্রমণে নাকটা ভেঙে গিয়েছিল। তারপর থেকেই শরীরটা আগের মত জোরদার নেই। কেন যে গন্ডারের নাকের উপর মানুষের এত লোভ কে জানে? সেই থেকে গন্ডারীর হই হট্টগোল আর ভাল লাগে না। এখানে প্রতিবেশী বলতে দশঘর হরিণ,বেশ কিছু হনুমান আর যাতায়াতের পথে দু চারদিন করে থেকে যাওয়া নাদা পেট, কুলো কান হাতিদের দলটা।

 জঙ্গলের মাঝে একটা জলা ওইখানেই সন্ধ্যেবেলা সবার সঙ্গে দেখা হয় তখনই দু'চারটে সুখ-দুঃখের কথা হয়। ঘাসে আগের মতো স্বাদ নেই ফল ফুলুরিও আর আগের মত মিষ্টি নয়। কে গেল, কে এল এইসব আরকি।

 এরমধ্যে একদিন কুলো কানদের দলটা এল কাঁদতে কাঁদতে। রেললাইনে তাদের দলের তিনজন কাটা পড়েছে একসঙ্গে। জলার ধারে তারা সবাই চুপ করে বসে শোক পালন করল। যাবার সময়গুলো তারা বলে গেল দমনপুরের দিকে যাচ্ছি। এদিকে এখন আর আসা হবে না। গন্ডারীলাল নাক বাঁচিয়ে সবার সঙ্গে কোলাকুলি করল কারণ গারো পাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা বলতে একমাত্র সেই।হরিণগুলোর গায়ের মত মাথাতেও ছিট। কেবলই ছটফট করে কোথায় কোথায় চলে যায়। সারা জীবন গারোপাড়ার জঙ্গলে প্রায় একাই কাটিয়ে দিল গন্ডারীলাল। নাকটা ভাঙ্গা বলে ওটা দিয়ে খুঁচিয়ে গাছের ছাল ভাঙতে পারে না তাই বলে খাবারের অভাব নেই। অজস্র ঘাস আর প্রচুর ছোট ছোট গাছ।

  এই জঙ্গলে কেউ বিশেষ থাকে না বলেই গন্ডারীকে খাবার খুঁজতে বেশি কষ্ট করতে হয়না। সেই জন্যই গন্ডারী এত শান্তিতে থাকে। গোলমাল তার খুব অপছন্দ। গা ঘেঁষাঘেষি করেও সে থাকতে পারে না। গরমকালে গাছের উপর হুকু হুকু ডাক দেওয়া কালোমুখো হনুমানগুলোও থাকে না। তখন গন্ডারী জলার ঠান্ডা কাদার পুরো আস্তরণ গায়ে মেখে শরীরটাকেই কেমন এয়ারকন্ডিশনড করে ফেলে আর আরাম করে একই জায়গায় পড়ে থাকে। বেচারা পাখিগুলো এটা জানে না বলে কেবলই গরম ঠান্ডা খুঁজে খুঁজে এদেশ থেকে ওদেশে উড়ে বেড়াতে হয়।

 এইসব নানা কথা ভাবতে ভাবতে আরামে চোখ বুজে আসছিল তার। হঠাৎ ভগ্নদূত এর মত কালোমুখী হনুমতী এসে হাজির। সে ছোটবেলা থেকেই গন্ডারীর সঙ্গে গল্প করতে ভালোবাসে। ওর বকবক শোনার ধৈর্য গন্ডারী ছাড়া এ জঙ্গলে আর কারও নেই। তাই কালোমুখী গাছের মাথায় মাথায় ঘুরে রাজ্যের খবর জোগাড় করে আনে আর ওই গাছের ওপর থেকেই ফলপাকুড় খেতে খেতে উজাড় করে দেয় আধঘুমন্ত গন্ডারীর কানে। গন্ডারী অর্ধেক কথাই শোনে না। আজ কিন্তু কালোমুখীর একটা কথায় গন্ডারী ধড়মড় করে কাদার বিছানা ছেড়ে উঠে এসে বলল, ঠিক করে বল দেখি কি  শুনে এলি?

এই জঙ্গলের অনেকটা জায়গা সাফ করে একটা বিরাট রিসর্ট হবে। তোমার বাস উঠল। এখন থেকেই ভাব, কোথায় যাবে। গন্ডারীর মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। এই বয়সে ঠাঁই নাড়া হওয়া সহজ কথা নয়। এই জঙ্গল গাছপালা জলা তার কতদিনের চেনা। নতুন জায়গায় নতুন জনেদের খাবারে ভাগ বসালে তারা মেনে নেবে কেন?গন্ডারী দুশ্চিন্তায় ঘেমে উঠল আর এতক্ষণ ধরে যত্নে শুকিয়ে তোলা কাদার আস্তরণও খসে পড়ল তার গা থেকে। দুঃখে-শোকে গন্ডারী সেই যে ঘাসের বিছানায় শুল আর ওঠেও না নড়েও না চড়েও না। খবর পেয়ে কুলোকান  হাতিরা,ছিটিয়াল হরিণেরা, বাঁকাশিং মহিষেরা কালোমুখীদের পুরো দল সবাই এসে গন্ডারীকে ঘিরে বসল। গন্ডারীর সেই এক কথা, মরি তো এখানেই মরবো। এই বয়সে আর নতুন জায়গায় আস্তানা গাড়তে পারবনা।

 মহাবিপদ! এই জঙ্গলের মাথায় মাথার মনি, সবার প্রণম্য গন্ডারীর ভূমিশয্যার সঙ্গে ভীষ্মের শরশয্যার মিল দেখে সমবেত শোক চিৎকার চলল পাঁচ মিনিট ধরে। কিন্তু এরা সকলেই মস্ত বীরপুরুষ। হাল ছেড়ে কান্নাকাটি করার বান্দাই নয়। শোক প্রকাশ শেষ হলে পর গন্ডারীর  থেকে একটু দূরে এদের মন্ত্রণা সভা বসল।কালোমুখীরা গাছের উপর বসে লেজের ডগা চিবিয়ে, কুলোকানরা কানের বাতাস খেয়ে, বাঁকাশিংরা গাছের গায়ে ঠেস দিয়ে গন্ডারীকে উদ্ধারের উপায় ভাবতে-ভাবতে মাথার ঘাম ঘাসে ফেলতে লাগল।

   একটা কাঠবিড়ালি গাছের উপর লম্বা হয়ে শুয়ে অনেকক্ষণ ধরে তামাশা দেখছিল। তারপর এরা দেখতেই বড়োসড়ো কিন্তু কেউই মাংস টাংস খায় না এক্কেবারে ভেজিটেরিয়ান বলে সাহস করে গাছের গুঁড়ি বেয়ে একেবারে মাঝখানটায় সড়াৎ করে নেবে এল। সবাই উদাস চোখে চেয়ে দেখল একবার। কাঠবিড়ালির এসব গা সওয়া। উপকার করতে এসে অত গায়ে মাখলে চলে না। শরীরটা ছোট বলে গলার আওয়াজটাও মিহি তাই সবাই যাতে শুনতে পায় সেজন্য সে একটা বড়োসড়ো দেখে বুনোকচুর পাতা পাকিয়ে চোঙ্গার মত ধরে বক্তৃতার ঢঙে শুরু করল -গন্ডারীকে যদি বাঁচাতে চাও তবে জঙ্গল বাঁচাও। জঙ্গল না থাকলে গন্ডারী মরবে। কেউ আটকাতে পারবে না।

-- কি করব বল? আমরা সবাই মিলে তখন থেকে সেটাই তো ভাবছি। মানুষের সঙ্গে লড়াইয়ে আমরা কখনওই জিততে পারি না যতই গায়ে শক্তি থাক না কেন-- বলল কুনোকানদের মোড়ল।

--তোমাদের থেকে মানুষকে আমি বেশি চিনি। ওদের অস্ত্র দিয়েই ওদের বধ করতে হবে।

-- কি করে?

 হাতি, বানর, হরিণ, বুনো মোষের দল ছুটে এসে তাকে পায়ে পিষে দেয় আর কি। কাঠবিড়ালি সুরুৎ করে রোগা মোটা সোজা বাঁকা পায়ের ফাঁক দিয়ে গলে একটা মোটা গাছের গুঁড়ি বেয়ে একতলার একটা সরু ডালে ঝুল খেয়ে সবার মাথার ওপরে থিতু হয়ে বসল। সবাই কলর বলর থামিয়ে শান্ত হলে পর সে বলল, জঙ্গলে যেসব মানুষ আসে তারা সবথেকে কি ভালবাসে বলতো?

 সবাই মুখ চাওয়াচায়ি করতে লাগল. কি জানি বাবা! ওদের দিকে তো তাকাই না কখনও। বাঘ সিংহ নই যে মানুষ দেখলে আহ্লাদ হবে। নিজেরাই লুকোতে পারলে বেঁচে যাই।

-- সেই জন্যই জান না। আমি মানুষের কাছাকাছি থাকি বলে ওদের নাড়ি নক্ষত্র সব থেকে ভাল জানি। ওরা সব থেকে খুশি হয় তোমাদের দেখা পেলে। গাছের ফাঁকে লেজটা  দেখা গেল কি গেল না শিংটা নড়ল কি নড়ল না সবাই ছবি তুলতে দাড়িয়ে পরবে। এখনতো আরও সুবিধে। সবার হাতেই ফোন ক্যামেরা। আট থেকে আশি তোমাদের ছবি পেলে সবার মুখে হাসি।

 --তাহলে আমরা কি করব? ছবি তোলার জন্য পোজ দেব ওদের সামনে? তাহলেই জঙ্গল থাকবে আর গন্ডারী বাঁচবে? হরিণ এক পাক নেচে নিয়ে বলল।

- তোমার দেখছি শিং ভর্তি বুদ্ধি। একদম ঠিক কথাটা ধরতে পেরেছ। এই জঙ্গলে গন্ডারী ছাড়া কেউই স্থায়ী বাসিন্দা নয় আর গন্ডারীকে তো কেউ দেখতে পায়না তাই ওরা রিসর্টের জন্য এমন জঙ্গল বেছেছে যেখানে জন্তু-জানোয়ার নেই। এখন তোমরা যদি পালা করে ডিউটি দাও---

কাঠবেড়ালীর কথা শেষ হবার আগেই হঠাৎ একটা জীপের ক্যাঁচ করে ব্রেক কষার শব্দে সবাই চমকে উঠল।কুলো কানদের দলের সবথেকে পুঁচকে হাতিটার এত কচকচি ভাল লাগছিল না। সে ঘুরতে ঘুরতে সবার নজর এড়িয়ে জঙ্গলের ধারে পিচ রাস্তার কাছে চলে গিয়েছিল। মায়ের খেয়াল হতে দৌড়ে গিয়ে বেয়াদব ছেলের গালে শুঁড় দিয়ে মেরেছে এক বিরাট চড়। মিটিং ছেড়ে হুড়মুড় করে অনেকেই উঠে এল।

--খবরটা তো তাহলে ঠিক নয় দেখছি। শুনেছিলাম এই জঙ্গলে জন্তু-জানোয়ার কিছু নেই। রিপোর্টটা দেখছি আগাগোড়াই ভুল। কালো চশমা পরা একটা লোক গাড়ি থেকে নেমে চারদিক দেখতে দেখতে বলল।

জীপটা চলে গেল। কাঠবেড়ালি চোখ নাচিয়ে বলল, দেখলে হাতে হাতে প্রমাণ। এখন এরা যদি দেখে দেখে এখানে এত এত জন্তু তাহলেই কেল্লা ফতে।

  বাঁকাশিং বলল-এখানে কিন্তু আমরা ডেরা বাঁধবনা। সবার খাওয়ার মত খাবারই নেই এখানে।

 সেটা সত্যি কথা।সবাই মিলে একসঙ্গে থাকা যাবেনা। সব কটা ঘাড়, গলা, শুঁড়, কান, লেজ নড়ে উঠল একসঙ্গে।

--একসঙ্গে থাকবেই বা কেন? ডিউটি ভাগ করে নাও। এই জঙ্গলে যারা আসবে তারা কেউ হাতি দেখবে, কেউ বা হরিণ। মাঝে মাঝে গন্ডারী স্পেশাল শো দেবে।

 সেই থেকে গারোপাড়ায় ট্যুরিস্টদের ভীড়। রিসোর্টের প্রজেক্ট ক্যানসেল কারণ এটা বড্ড পয়া জঙ্গল। কিছু না কিছু দেখা যাবেই। বুনো হলেও জন্তুগুলো খুব সহবত জানে। ধৈর্য ধরে দাঁড়িয়ে থাকে যতক্ষণ না দলের সবার ছবি তোলা শেষ হয়।




                     
কাউনটার বিভ্রাট
প্রবাহনীল দাস
সপ্তম শ্রেণী, একমি একাডেমী, কালনা, পূর্ব বর্ধমান 

রাঘববাবু, মানে ‘মানব সেবক ব্যাঙ্ক’ এর চিফ এগজিকিউটিভ রাঘব মজুমদার সিঁড়ি দিয়ে উঠছিলেন। অনেক স্মৃতি ভিড় করে আসছিল তার মনে।
সেই কোন ছোটবেলায় তিনি অনাথ হয়ে যান। তার কাকা তখন মানুষ করেন তাঁকে। দারুণ নম্বর নিয়ে যখন তিনি স্কুল পাশ করে কলেজে উঠলেন, তার সাথে আলাপ হল সনাতন ঘড়ুইের। সনাতন অসম্ভব মেধাবী ছাত্র ছিল, রাঘবও তাই। মাঝে মাঝেই তাই দুজনের মধ্যে মন কষাকষি লেগে থাকত। একবার ব্যাঙ্কের পরীক্ষায় কয়েক নম্বরের জন্য একটি পোস্ট সনাতন পেয়ে গেলো, কিন্তু কয়েকদিন পরেই তার মা মারা যেতে সে ফিরে গেলো গ্রামে, আর শহরে ফিরল না কাজ করতে।

পোস্টটির জন্য আবার পরীক্ষা হতে এবার রাঘববাবু কাজটা পেয়ে গেলেন। তারপর প্রায় ২৫ বছর কেটে গেছে। একদিন ব্যাঙ্কে সনাতন এলো, টাকা তুলতে। তার এক মুখ গোঁফদাড়ি, গায়ে ফতুয়া আর ধুতি। দেখে মনে হল, আর্থিক অবস্থা মোটেও ভালো নেই। গলার স্বর না শুনলে হয়ত তাঁকে চিনতেই পারতেন না রাঘববাবু। ততদিনে তিনি সেই ব্যাঙ্কের চিফ এগজিকিউটিভ। তিনি ভাবলেন, “সনাতনের সঙ্গে একটু মজা করা যাক।” কিন্তু তিনি যে মজাটা করলেন, তাতে সনাতন খুব একটা খুশি হয়নি নিশ্চয়ই। সনাতনকে কোন কোন কাউনটারে যেতে হতে পারে, মনে মনে সেটা হিসেব করলেন রাঘববাবু। তারপর সেই সব কাউনটারের কর্মচারীদের ফোন করে এই নাটকের অভিনয় বুঝিয়ে দিলেন ভালো করে।

সনাতন সেদিন টাকা তুলতে পারেনি। অজ গাঁয়ের স্কুলে পড়ায় সে, অনেক কষ্টে একটা ছুটি জোগাড় করেছিল, কিন্তু শহরের এই ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলা তার অসম্ভব মনে হল। সে প্রতিজ্ঞা করল, নিজে কোনোদিন আর এই ব্যাঙ্কের ছায়াও মারাবেনা। এর আগেও সে ব্যাঙ্কে টাকা তুলেছে, তাই সনাতন জানত তাকে কোন কোন কাউনটারে যেতে হবে। কিন্তু যেই কাউনটারেই সনাতন যায়, সেখানেই সমস্যা। কেউ খাবার খেতে উঠে যায়, তো কেউ বলে “আরে মশাই, ঝিমোচ্ছি দেখছেন না! ওই ১৮ নম্বর কাউনটারে যান।” একজন তো তাঁকে চিনতে পেরে বলেই দিল, “সনাতন যে! তা ব্যাঙ্কে কি আবার চাকরির ধান্দায় নাকি?” কিন্তু এত কিছুর সহ্য করেও শেষমেশ সে টাকা তুলতে পারল না। রেগেমেগে সে ফিরে এলো। কিন্তু গ্রামের ফেরার পর তার মনে পড়ল তার বাবার ছোটবেলায় শেখানো কথা, কখনও রাগ পুশে রাখতে নেই। নিজ গুণে সবাইকে ক্ষমা করে দাও।
এর পর রাঘববাবুও সনাতনের খোঁজ নেননি আর। মাঝে একদিন রাঘববাবু দেখলেন, সনাতনের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে আর্জি জমা পড়েছে, সঙ্গে সনাতনের ডেথ সার্টিফিকেট। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন, হার্ট অ্যাটাকে সনাতন প্রাণ হারিয়েছে। আজ তাঁর রিটায়ারমেন্টের দিন। অফিসে ফেয়ারওয়েল স্পিচ দিয়ে বাড়ি ফিরে নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লেন। কিন্তু যখন ঘুম ভাঙল, তখন তিনি অবাক। রাঘববাবু দেখলেন, তার শরীর পড়ে রয়েছে বিছানায়, মৃত অবস্থায়। তিনি দাঁড়িয়ে রয়েছেন একটা সিঁড়ির সামনে। যদিও তিনি ছিলেন নাস্তিক, তিনি ব্যাপারটা আন্দাজ করতে পেরে সিঁড়িতে পা রাখলেন, এবং দেখলেন, সিঁড়ি নিজেই উপরে উঠতে শুরু করল। তিনি কিছুটা বিস্মিত হয়েই উপরে উঠতে থাকলেন।

উপরে পৌঁছতে তাঁকে একজন দেবদূত একটা মেঘের বাড়ি দেখিয়ে দিল। রাঘববাবু ঢুকে পড়লেন সেই বাড়িতে। বুঝতে পারলেন, সেটা আসলে একটা অফিস। দেবদূতেরা বসে রয়েছে প্রত্যেক কাউনটারে। এক নম্বর কাউনটার থেকে ডাক এলো, “রাঘব মজুমদার।” বাবাঃ! বেশ উন্নত ব্যাবস্থাপনা। রাঘববাবু গিয়ে দাঁড়ালেন কাউনটারে। তাঁকে একটা ফর্ম ধরিয়ে দিয়ে দেবদূত বলল, দুই নম্বর কাউনটারে চলে যান। রাঘববাবু বললেন, “আজ্ঞে স্যার, একটা প্রশ্ন ছিল। এটা কি স্বর্গ? তাই যদি হয় তবে দেবতারা কোথায়?” দেবদূতটি জবাব দিল, “এটা হল আত্মা সেবা কর্পোরেশন। এখানে আমরা আত্মাদের কোথায় কী গতি হবে সেটা ঠিক করি। তারপর ভাগ্যে থাকলে দেবতাদের সাথে দেখা হয়।”
রাঘববাবু চলে গেলেন দ্বিতীয় কাউনটারে। সেখানের দেবদূতটি তাঁকে বুঝিয়ে দিল, “আপনি মোটামুটি ভালোমানুষ। তাই আপনার হাতে দুটো রাস্তা। প্রথম, এখানে থেকে ভগবান দর্শন করে পুণ্য অর্জন করুন। অথবা পৃথিবীতে আবার জন্মে পুণ্য করে মোক্ষ লাভ করুন।” রাঘববাবু বললেন “ভগবানে আমি বিশ্বাসী ছিলাম না, তাই দ্বিতীয় উপায়টাই আমার পক্ষে ভালো।” দেবদূত তখন বলল, “তবে আপনি চলে যান ১০৫ নম্বর কাউনটারে।”
এরপর যা যা ঘটল, রাঘববাবু কোনোদিন তা কম্পনাও করেননি। ১০৫ কাউনটারে পৌঁছতে রাঘববাবু দেখল, সেখানে একজনও নেই। অগত্যা ১০৪ কাউনটারে খোঁজ করতে গেলেন। সেখানকার দেবদূত বলল, “আপনি কি আত্মা সেবা কর্পোরেশন এ চাকরি খুঁজছেন?” রাঘববাবু মাথা নাড়লেন। দেবদূতটি বিরক্তির স্বরে বলল, “তবে আপনি এই কাউনটারে কি করছেন? আপনাকে তো ৮৪ নম্বর কাউনটারে যেতে হবে!” এরকম করে একবার ৮৪ নম্বর কাউনটারে যান, তো একবার ৪৭ নম্বরে, ফর্মটা আর কেউ দেখে দেয় না। 

শেষমেশ রাঘববাবুর মাথা গরম হয়ে গেলো। তিনি চিফ এগজিকিউটিভ এর ঘরটা দেখতে পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে ঢুকে পড়লেন ভিতরে। ভিতরে ঢুকে তিনি যা দেখলেন, তাতে তাঁর মাথা ঘুরে গেলো। ভিতরে ঢুকে তিনি দেখলেন, এক ভদ্রলোক ধুতি পাঞ্জাবি পড়ে চেয়ারে বসে রয়েছেন, উলটো দিকে মুখ করে। রাঘববাবু ঢুকতেই সেই লোকটি ফিরল তাঁর দিকে। এ কী? এ তো সনাতন! সনাতন হেসে বলল, “আরে রাঘব, এসো বসো। অবাক হয়ো না, আমি সব বলছি।” রাঘববাবু একটা চেয়ার টেনে ধপ করে বসে পড়লেন। 

সনাতন শুরু করল, “আসলে এখানে আসার পর আমি খবর পেলাম, স্বর্গের এই বিশেষ সংস্থাটিতে নাকি লোক কম পড়েছে। তাই পুণ্যবান মৃত আত্মাদের পরীক্ষা নেওয়া হবে। ভাবলাম, দিয়েই দেখি না। তারপর পেয়ে গেলাম একটা কাজ। আস্তে আস্তে তোমার মতোই আমি হয়ে গেলাম এই সংস্থার চিফ এগজিকিউটিভ। তুমি এখানে ঢুকেছ দেখেই আমি ভাবলাম, মজার উত্তর মজা করিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া যাক। রাগ করো না বন্ধু। দাও, তোমার ফর্মটা দেখে দি।”


স্বপ্ন যদি সত্যি হতো    
শতভিষা মিশ্র
অষ্টম শ্রেণী, জ্ঞানদীপ বিদ্যাপীঠ, পূর্ব মেদিনীপুর       

স্বপ্ন যদি সত্যি হতো              
 তবে খুব মজাই হতো                
 রাস্তায় মাছ চলত                  
 গাছেরাও কথা বলত।   

 যদি ওই সুয্যি মামা                 
মেলে দিয়ে রঙিন ডানা         
আকাশেই চলত উড়ে              
বসুধারে সঙ্গে নিয়ে। 

 কখনও বা ঝরনা খানা            
বয়ে যেতে করত মানা            
পাহাড়ের উঁচু চূড়োয়             
 ফুটত কচুরিপানা। 

ভাবো যদি ঘরবাড়ি সব          
 তৈরি হতো খাবার দিয়ে           
আনন্দেতে চেটেপুটে               
যেতই সব সাবাড় হয়ে। 
 
কভু আবার মন চাইলে           
যেতুম চলে চাঁদের বাড়ি         
 তারা আর মেঘের সাথে          
করতুম ভাব ও আড়ি।   
        
যদিও সত্যি এসব                 
হবেনা কোনোকালেই           
তবুও স্বপ্ন মজার                   
দেখতে বেশ ভালোই লাগে।


ফুলকুসুমপুর খুব কাছে ২৩

রতনতনু ঘাটী

পরিপালন খাটুয়া সব প্রাণীকে খাঁচার বাইরে ছেড়ে দিয়েছে। তারা সব বাড়িময় লাফাচ্ছে-ঝাঁপাচ্ছে। মানুষের সঙ্গে-সঙ্গে ব্রেকফাস্ট হয়ে গেছে ওদেরও। আজ রোববার। সব প্রাণীদের যত্নআত্তির দিন। তিন্নির বাবা মিঁউয়ের খাঁচাটা নামিয়ে তার সামনে বসে পরিপালনকে বললেন, ‘দ্যাখো পরি, এর পর থেকে এদের ছেড়ে রাখার অভ্যেস করো! আর কতদিন বন্দি করে রাখবে? পশুক্লেশ নিবারণীর লোকেরা জানতে পারলে তোমার আর আমার শাস্তি বাঁধা।’ তারপর মিঁউকে ভারী গলায় বললেন, মিঁউ, কোত্থাও যাবে না কিন্তু!’
   ওদিকে ইচ্ছেঠাকুরমা রাধাগোবিন্দকে নিয়ে মেতে উঠেছেন। গল্পকাকা চলে এসেছেন বিংগোর খাঁচার সামনে। শুধুকাকা কুমিকে কোলে নিয়ে আদর করছেন। শুধুকাকা হঠাৎ বললেন, ‘পরি, নেলকার্টারটা দাও তো। কই তুমি তো একবারও মনে করিয়ে দিলে না, আজ কুমির নখ কাটার দিন?’
   বিলম্বদাদু একটা চেয়ার এনে দিতে ইচ্ছেদাদু বসে-বসে চিড়িয়াখানার পোষ্যদের কাণ্ড দেখতে লাগলেন।
   দেওয়ালের সেলফ থেকে নেলকার্টার আনল পরি। শুধুকাকা বললেন, ‘নাও পরি, এখন থেকে তুমিই কুমির নখ কাটবে, কেমন?’ 
   ওদিক থেকে তিন্নির বাবা ডাকলেন, ‘পরি, এদিকে আয় তো বাবা! তোকে কিন্তু মিঁউয়ের সঙ্গে কথা বলা শুরু করতে হবে। তুই যা বলবি, ও যেন বুঝতে পারে। আর ও মিঁউ-মিঁউ বা ম্যাঁও-ম্যাঁও করে যা বলবে সব তুই যেন বুঝতে পারিস!’
   তিন্নির বাবার কথায় হাঁ করে তাকিয়ে রইল পরিপালন। তিনি পরিকাকাকে বললেন, ‘হাঁ করে শুনলে হবে? জানিস তো, বিড়ালের ডাক অনুবাদ করে দেবে, এমন একটা অ্যাপ তৈরি করে ফেলেছেন অ্যামাজনের এক ইঞ্জিনিয়ার? সবে খবর পেয়েছি। আমি সেটা কিনব। এই যে বিড়ালরা ‘ম্যাঁও’ বলে ডাকে, এটা আসলে ওদের যোগাযোগের একটা ভাষা। মানুষ যেমন ‘হ্যালো’ বলে অন্যের সঙ্গে সম্বোধন করে কথা বলা শুরু করে, বিড়াল তেমন করেই ‘ম্যাঁও’ ডাকে। বলতে পারিস, অন্যের সঙ্গে কথা বলার এটা একটা সূচনা-শব্দ।’
     বিংগোর খাঁচার সামনে থেকে গল্পকাকা বললেন, ‘জানিস দাদা, জিনিসটা বেশ মজাদার হবে কিন্তু!’
   দাদু বললেন, ‘সামান্য বিড়াল নিয়েই এত সব?’
   ‘সামান্য কেন বলছ বাবা? এত সব হবে না? শুধু আমাদের দেশেই আছে প্রায় তিয়াত্তর ধরনের বিড়াল। এ কী কম হল বাবা?’ তিন্নির বাবার গলায় বিস্ময় ঝরে পড়ল।

   একটু পরে তিন্নিরবাবা গল্পকাকাকে বললেন, ‘দাঁড়া, আগে অ্যাপটা কিনি, তারপর দেখবি! সেই অ্যাপের শব্দভান্ডারে ছোট-ছোট বাক্যাংশ ভরে দেওয়া আছে, যেমন---‘ফিড মি’, ‘আঅ্যাম হাংরি’, ‘লিভ মি অ্যালোন’---এরকম। বিড়াল ডাকলে সেই অ্যাপ ইংরেজিতে বিড়ালের সেই ডাকের অনুবাদ করে দেবে, বিড়াল কী বলছে।’ 
   পাশে দাঁড়িয়েছিল বুম্বা। বলল, ‘টম অ্যান্ড জেরি’ কার্টুনের নীল রঙের একটা বিড়াল খুব মজাদার! তাই না?’
   ‘জানিস গল্পকাকা,’ তিন্নির বাবা বললেন, ‘শুনলে অবাক হয়ে যাবি! ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল ষাটটা বিড়াল পুষতেন? এই বিড়ালগুলোর মধ্যে তাঁর সবচেয়ে পোষা বিড়ালের নাম রেখেছিলেন তিনি ‘বিসমার্ক’? আর বিখ্যাত অভিনেত্রী মেরিলিন মনরোও বিড়াল পুষতে বাঢ়বাসতেন। তাঁর পোষা বিড়ালের নাম ছিল ‘মিতসোউ’। বিড়াল চিরদিন মানুষের সঙ্গে-সঙ্গেই থাকে রে।’
   এর পর গল্পকাকা বিংগোর গলায় হাত বোলাতে-বোলাতে মুখ তুলে বললেন, ‘আমাদের কথাশিল্পী শরঠচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের খুব কুকুর পোষার শখ ছিল। লেনিনের পোষা কুকুরের সংখ্যা ছিল চারটি। আর জানিস তো দাদা, বিখ্যাত লেখক দস্তয়ভস্কিও কিন্তু কুকুর পুষতেন।’
   ছোটদের মধ্যে এ বাড়ির পোষ্যদের নিয়ে কৌতূহল খুবই। তারা দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে কুকুর-বিড়ালদের কাণ্ডকারখানার কথা শুনছিল। গল্পকাকা বললেন, ‘কুকুর যেমন মানুষকে ভালবাসে, প্রভুভক্ত হয়, তেমনি মানুষেরও কুকুরের প্রতি কৃতজ্ঞতার নজিরও কম নেই। গন্ধ শুঁকে চোর ধরে দেওয়া, গোয়েন্দার কাজে কুকুর, এমনকী লুরিয়ে রাখা বোমা বা মাটিতে পুঁতে রাখা মাইন পুলিশকে দেখিয়ে দেওয়া, কত কাজই না করে দিচ্ছে কুকুর। কিন্তু মধ্যপ্রদেশের একজন বিত্তশালী কৃষক ওমনারায়ণ বর্মার গল্পটা একেবারেই অন্যরকম। তিনি অনেক ভেবে দেখলেন, সংসারে তাঁকে ভালবাসে একমাত্র তাঁর পোষা কুকুর ‘জ্যাকি’। এ ছাড়া আর কেউ তাঁকে ভালই বাসেনা। তাই তাঁর বিপুল সম্পত্তির অর্ধেক মৃত্যুর পর তিনি কুকুর জ্যাকির নামে উইল করে দিয়েছেন?’
   ইচ্ছেদাদু অবাক হয়ে শুনছিলেন। বললেন, ‘তা হলে মানুষও কিন্তু অকৃতজ্ঞ হয় না? কী বলিস তোরা?’
   ‘আমার বিংগোও একটা অবাক কিছু করে দেখো সকলসকে চমকে দেবে একদিন। তবে বাবা, তোমাকে বলি, কুকুর নিয়ে গবেষণা করে জানা গেছে, কুকুর প্রযুক্তিগতভাবে নানা জিনিস চটপট শিখতে পারে। নানারকম মজাদার কাণ্ড করে মানুষকে হাসাতে পারে। ঘ্রাণশক্তি কুকুরের বেশি বলে বাড়ির নানা হারানো জিনিস খুঁজে দেয়।’ একটু থেমে বিংগোকে আদর করতে করতে গল্পকাকা বললেন, ‘জানিস দাদা, বিদেশে ডাক্তারবাবুরা প্রত্যেক বাড়িতে পশুপাখি পোষার পরামর্শ দেন। পশুপাখিদের আচরণ দেখে বাড়ির ছোটদের মধ্যে আন্তরিকতা এবং আনুগত্য গড়ে ওঠে।’
   ইচ্ছেদাদু বললেন, ‘আমি সেদিন একটা ইংরেজি ম্যাগাজিনে পড়লাম, একবার নাকি ‘অস্কার পুরস্কার’ কমিটির মনোনয়নে সেরা অভিনেতার পুরস্কারের জন্যে নির্বাচিত হয়েছিল রিন টিন টিন’ নামে একটা কুকুর। সে মোট তেইশটি সিনেমায় অভিনয় করেছিল। কিন্তু মানুষ নয়, শুধু কুকুর বলে তাকে ‘অস্কার পুরস্কার’ দেওয়া হয়নি। তার অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্যে লোকে হুমড়ি খেয়ে পড়ত। রিন টিন টিন যখন উনিশশো বত্রিশ সালে মারা যায়, তার মৃত্যুতে গোটা যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হয়েছিল!’
   বিন্নি হেসে বলল, ‘কুকুরের মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় শোক? তুমি কী বলছ দাদু?’
   এমন সময় ইচ্ছেঠাকুরমা সকলের উদ্দেশে বললেন, ‘যাও, সকলে একে-একে স্নান করতে যাও। বেলা অনেক হল তো?’ তারপর শুধুকাকাকে বললেন, ‘তোর কুমির যত্নআত্তি লাঞ্চের পর করিস।’ পরিকাকার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ততক্ষণ বাবা পরি, আমার রাধাগোবিন্দর খাঁচাটা পরিষ্কার করে দাও। তারপর সকলকে খেতে দিও!’ দাদুকে বললেন, ‘তুমি এখনও বসে কেন? তুমি তো আর আমার হীরামন নও যে তোমাকেও স্নান করিয়ে দিতে হবে? যাও, স্নান করে খেয়ে নেবে চলো!’
   (এর পর আগামী রোববার)



স্মরণীয়
(বিমল কর)
কলমে - পীযূষ প্রতিহার

ম্যাজিসিয়ান কিঙ্কর কিশোর রায় কে জানো? কিকিরা কে জানো না? এবার চেনা চেনা লাগছে তো! হ্যাঁ, ঠিক ধরেছো, আমি আজ কিকিরা'র স্রষ্টা বিমল করের কথা বলবো। ১৯২১ সালের ১৯শে সেপ্টেম্বর উত্তর চব্বিশ পরগনার টাকীতে জন্মগ্রহণ করেন এই বাঙালি সাহিত্যিক। তার পিতা ছিলেন জ্যোতিষচন্দ্র কর ও মাতা নিশিবালা দেবী। তার কিশোরবেলা কেটেছে আসানসোল,কালিপাহাড়ি,বরাকর,জব্বলপুর, ধানবাদ,গোমো ও কুলটি অঞ্চলে। স্কুলজীবন শেষ করে বি.এ. পড়তে কলকাতায় চলে আসেন তিনি। ১৯৪২ সালে এ.আর.পি. তে এবং ১৯৪৩ সালে আসানসোল মিউনিশান প্রোডাকশন ডিপোয় চাকরি নেন তিনি। । তার প্রথম গল্প 'অম্বিকানাথের মৃত্যু' প্রকাশিত হয় 'প্রবর্তক' পত্রিকায়, ১৯৪৪সালে। ১৯৪৬ সালে রেলওয়েতে চাকরি করার সময় কাশী মনিলাল গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত 'পরাগ' পত্রিকার সহ সম্পাদক হন বিমল কর। এরপর যথাক্রমে 'পশ্চিমবঙ্গ' এবং 'সত্যযুগ' পত্রিকার সহ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার প্রথম ছোটগল্প সংকলন 'বরফ সাহেবের মেয়ে' প্রকাশিত হয় ১৯৫৪ সালে।ঐ বছরই 'দেশ' পত্রিকার বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগ দিয়ে ১৯৮২ পর্যন্ত দায়িত্বভার সামলান তিনি। ১৯৮২-৮৪ পর্যন্ত 'শিলাদিত্য' মাসিক পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। বিখ্যাত জাদুকর হুডিনির আদলে তৈরি তার বিখ্যাত চরিত্র অবসরপ্রাপ্ত ম্যাজিসিয়ান কিঙ্কর কিশোর রায় বা কিকিরা ছোটদের জন্য খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। কিকিরার গল্পগুলো পূজাবার্ষিকী আনন্দমেলায় প্রকাশিত হতে। এছাড়াও ছোটদের জন্য তার রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজের গল্পগুলো আজও পাঠকদের রোমাঞ্চিত করে। এসবের মধ্যে ওয়ান্ডার মামা, আজব দেশের গজব রাজা, কিশোর ফিরে এসেছিল, অলৌকিক উল্লেখযোগ্য।বিমল করের বেশ কিছু লেখা চলচ্চিত্র হিসেবে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল, যেমন - বসন্ত বিলাপ, বালিকা বধূ,যদুবংশ, ছুটি ('খড়কুটো' উপন্যাস অবলম্বনে)। তিনি তার 'অসময়' উপন্যাসের জন্য ১৯৭৫ খ্রীষ্টাব্দে সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার পেয়েছিলেন। এছাড়াও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরৎচন্দ্র পুরস্কার (১৯৮১), ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের নরসিংহ দাস পুরস্কার (১৯৮২) লাভ করেছিলেন। এছাড়াও তিনি দুবার যথাক্রমে ১৯৬৭ এবং ১৯৯২ সালে 'আনন্দ পুরস্কার' পেয়েছিলেন।
২০০৩ সালের ২৬ আগষ্ট ৮২ বছর বয়সে বিধাননগরে নিজ বাসভবনে এই সাহিত্যিকের মৃত্যু হয়।


গল্পে গল্পে ক্যুইজ
রাজীব কুমার ঘোষ

পর্ব ১০
কী করে টাইম মেশিন বানাতে হয় (পর্ব ৪)

আজকে ভবিষ্যতে যাওয়ার টাইম মেশিন তৈরি করার পালা। তার আগে, আগের দিনের প্রশ্নের উত্তর।

রোবোটিক্সের তিনটি সূত্র দিয়েছিলেন বিশ্ববিখ্যাত কল্পবিজ্ঞান লেখক আইজ্যাক আসিমভ। ১৯৪২ সালে তার লেখা ছোটোগল্প ‘রানঅ্যারাউন্ড’-এ উল্লেখিত হয়েছিল এই সূত্রগুলি। যদিও এগুলোর আভাস তার আগের কিছু গল্পে পাওয়া যাচ্ছিল। এই তিনটি সূত্র হল —
First Law
A robot may not injure a human being or, through inaction, allow a human being to come to harm.
Second Law
A robot must obey the orders given it by human beings except where such orders would conflict with the First Law.
Third Law
A robot must protect its own existence as long as such protection does not conflict with the First or Second Law.

সূত্রগুলো এতই গুরুত্বপূর্ণ যে আমি মূল ইংরাজিতেই তুলে দিলাম। যারা বাংলায় স্বচ্ছন্দ তাদের জন্য সহজ করে নিচে লিখে দিলাম।
১. কোনো রোবট কখনো মানুষকে আঘাত/আহত করবে না বা নিজে নিষ্ক্রিয় থেকে কোনো মানুষের বিপদ ডেকে আনবে না।
২. কোনো রোবট অবশ্যই মানুষের দেওয়া সব আদেশ পালন করবে যদি না সেই আদেশ প্রথম সূত্রের পরিপন্থী হয়। 
৩. কোনো রোবট নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করবে যদি না এর জন্য প্রথম বা দ্বিতীয় সূত্র ব্যাহত হয়।

এবার আমরা আসব ভবিষ্যতের টাইম মেশিনে। আচ্ছা ভেবে দ্যাখো তো ১৯৪২ সালে এক কল্পবিজ্ঞান লেখক কীভাবে সময়ের থেকে এগিয়ে রোবট-বিজ্ঞানের ভিত্তিমূলক সূত্রগুলি স্থাপন করলেন যা আজো ব্যবহারিক দিক দিয়ে প্রাসঙ্গিক। এবার যদি আমি তোমাদের বলি এক কল্পবিজ্ঞানের লেখক সাবমেরিন, হলোগ্রাম, প্লেন, পাতালরেল, মহাকাশযান, বিদ্যুত নির্ভর ব্যবস্থা এইসব আবিষ্কারের অনেক আগেই লিখে গেছেন তার উপন্যাসগুলিতে। কি চোখ বড় বড় হয়ে গেল তো? তার নাম জ্যুল ভ্যের্ন্‌। আমরা ভেবে নিই যে তাদের কল্পনা বরাতজোরে মিলে গেছে। এটা একটা প্রকান্ড ভুল। বরাতজোর নয়, আমাদের ভুলে গেলে চলবে না কল্পবিজ্ঞানে কিন্তু বিজ্ঞান শব্দটা আছে। তাহলে তাদের কল্পনা কি নিছক কল্পনা নাকি যুক্তি ও বিজ্ঞানের ওপর প্রতিষ্ঠিত?

আশা করি তোমরা বুঝতে পারছ যে বিজ্ঞানসম্মতভাবে যদি আমরা বর্তমানকে বিচার ও বিশ্লেষণ করি তাহলে নিকট বা দূর ভবিষ্যতে কী হতে চলেছে তার আঁচ করা অসম্ভব নয়। খুব সহজ একটা উদাহরণ দিই, এই যে আবহাওয়ার আগাম সতকর্তা দেওয়া হয়, যার ফলে আমফান বা আয়লা ঝড় আসার আগেই আমরা সবাই জেনে গেছিলাম। ভেবে দেখেছ এও তো এক ভবিষ্যতের কথা বলে দেওয়া?

আসলে প্রতিদিন কাগজে বা পত্রিকায় এমন কিছু খবর থাকে বিজ্ঞানের বা অন্যান্য ক্ষেত্রের যা খুব ছোটো করে ছাপা হয় আর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলোর গুরুত্ব আমরা বুঝতে পারি না। তোমরা হয়ত এখন পৃথিবীর কক্ষপথে বেড়াতে যাওয়া নিয়ে খবরগুলো দেখছ। মানে লোকে টাকা দিয়ে স্পেস শাটল বা স্পেস স্টেশনেও ঘুরতে যেতে পারবে। শুনে অবাক হবে বহু আগে কাগজে আমি ছোট্ট একটা খবর দেখেছিলাম এই উদ্যোগ নিয়ে। ডায়রিতে লিখেও রেখেছিলাম। তখনই আমি জানতাম এটা দশ বছরের মধ্যেই ঘটতে চলেছে। যেমন ধরো চিন কৃত্রিম সূর্য তৈরি করার দিকে ক্রমশ এগিয়ে চলেছে। যে সূর্যগুলো স্থানীয়ভাবে নানা অঞ্চলকে আলোকিত করবে। শুধু তাই নয় তারা স্পেস এলিভেটর তৈরির দিকেও এগিয়ে চলেছে। স্পেশ শাটলে নয় লিফট পৃথিবীর মাটি থেকেই উঠে আসবে পৃথিবীর কক্ষপথে।

অর্থাৎ নিত্যদিনের খবরের মধ্যেই আমাদের ভবিষ্যৎ দুনিয়ার চেহারা লুকিয়ে আছে। শুধু তাই নয় তোমরা যত ভালোভাবে জানবে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে, তত বুঝতে পারবে আপাতভাবে যে খবরগুলো আলাদা আলাদা মনে হচ্ছে আসলে তারা পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। একটু সহজ করে একটা উদাহরণ দিচ্ছি, ধর তুমি শুনলে কেউ বলছে, এই বছর বৃষ্টি ভালো হয়েছে ব্যবসা বাণিজ্য ভালো হবে। চট করে তোমরা ধরতে পারো না যে বৃষ্টির সঙ্গে ব্যবসার কী সম্পর্ক। কিন্তু একটু ভাবলেই পেয়ে যাবে। ভালো বৃষ্টি মানে ভালো চাষবাস। ভালো চাষ মানে ভালো ফসল উৎপাদন। আমাদের দেশ কৃষি নির্ভর, মানে কৃষকের সংখ্যা বেশি। ফসল বেচে ভালো লাভ হলে তারা নানা প্রয়োজনীয় বস্তুও বেশি কিনবে, শখের জিনিসও। ভেবে দেখবে আমাদের দেশে বহু উৎসব ফসল কেন্দ্রিক যেমন বাংলার নবান্ন, আসামের বিহু, পঞ্জাবের বৈশাখী, তামিলনাড়ুতে পোঙ্গল। 

ভবিষ্যতে কী ঘটতে চলেছে তার জন্য কল্পনার থেকেও বেশি প্রয়োজন বর্তমানের খবর রাখা। এবার তোমরা বলবে সে তো বুঝলাম কিন্তু আমার জীবনে কী ঘটতে চলেছে সেটা কী করে জানব? খুব সোজা। স্বামী বিবেকানন্দ সহজভাবে বলেছেন, আমরা বর্তমানে যে অবস্থায় আছি তা যদি আমাদের অতীত কাজের ফল হয় তাহলে আমাদের বর্তমানের কাজের ফলে অবশ্যই আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ে উঠবে। সুতরাং দু’টো কাজ তোমাদের করতে হবে। প্রথমত, বর্তমানে তোমরা কী করছ আর কী ভাবছ তা নিজেদেরই ফিরে ফিরে দেখতে হবে, যার জন্য আগেই বলেছি ডায়রি লেখাই সর্বোত্তম পদ্ধতি। দেখলে নিজেরাই নিজের কাজ আর ভাবনা চিন্তার একটা আন্দাজ পাবে। আন্দাজ পাবে নিজেদের নানা ক্ষমতা বা দুর্বলতারও। দ্বিতীয়ত, তোমরা কী করতে চাও সে বিষয়ে একটা স্পষ্ট ধারণা গড়ে তোলো। যেমন ধরো, কাউকে ক্লাসে যখন জিজ্ঞাসা করি কী হতে চাও, কেউ বলে ডাক্তার। কিন্তু যখন তাকে জিজ্ঞাসা করি, কীভাবে ডাক্তার হওয়া যায়? দেখা যায় সে আর কিছু বলতে পারছে না। সে ডাক্তার হতে পারবে অথবা পারবে না সেটা পরের কথা কিন্তু যদি সে সত্যিই ডাক্তার হতে চায় তাহলে কীভাবে ডাক্তার হওয়া যায় তা জানতে তার আগ্রহ থাকা উচিত। আগ্রহ থাকলে যেমন সে একটা নির্দিষ্ট দিশা পেত, তেমনি আরো নানা জীবিকার কথাও জানতে পারত। যার ফলে ভবিষ্যতে কিন্তু সে দ্রুত কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারত। তোমাদের চুপি চুপি একটা কথা বলি, মোটামুটি ক্লাস সেভেন আর এইটে একটি ছেলে বা মেয়ে ভবিষ্যতে কোন পথে যাবে তার আভাস পাওয়া যায়। যার জন্য এই দুটি ক্লাসের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি অথচ আমরা ক্লাস টেন আর টুয়েলভ বোর্ড ক্লাস বলে বেশি গুরুত্ব দিই। সত্যিটা হল ক্লাস সেভেন-এইটে যে যত পরিশ্রম করবে বিভিন্ন দিকে, শুধু পড়াশুনোয় নয় আরো নানা দিকে, সেটাই তার জীবনকে গড়ে তুলবে অনেকটাই। তবে এটাই ধ্রুব নয়, উদ্যোগ নিলে জীবনে বাঁক যে কোনো সময় আসতে পারে। এইরকম বহু ঘটনা আমি কেন অনেকেই জানে। তোমরাও হয়ত জানো। নিজের ভবিষ্যৎ যদি জানতে চাও তাহলে বর্তমানের আয়নায় নিজেকে আগে দেখে নাও।

গল্পে গল্পে ক্যুইজের ১০টি পর্ব সমাপ্ত হল, অর্থাৎ প্রায় ২২ সপ্তাহ। এবার ঘোষ স্যার পুজোর ছুটি নেবেন। পুজোর ‘জ্বলদর্চি ছোটোবেলা’ অভিনবভাবে হৈ হৈ করে আসতে চলেছে। যার আন্দাজ তোমরা হয়ত এর মধ্যেই ফেসবুকের বিজ্ঞাপণগুলো দেখে বুঝতে পারছ। যদি তোমরা চাও, যদি ঘোষ স্যারের আবার সময় হয় তাহলে গল্পে গল্পে ক্যুইজ আবার ফিরবে, আবার দেখা হবে। আপাতত বিদায়। বিদায়বেলার প্রশ্নটি রেখে গেলাম, যার উত্তর তোমরাই খুঁজে খুঁজে বার করতে পারবে। 

ক্যালেন্ডারে ডিসেম্বর হল বারো নম্বর মাস। ডিসেম্বর এসেছে গ্রিক ‘ডেকা’ শব্দ থেকে যার অর্থ দশ। অর্থাৎ ডিসেম্বর মানে দশ নম্বর মাস। একইভাবে সেপ্টেম্বর এসেছে সেপ্টেম অর্থাৎ সাত থেকে। অক্টোবর, ‘অক্টো’ বা আট থেকে। নভেম্বর, ‘নভেম’ বা নয় থেকে। তাহলে কোনো মাসের নামের সঙ্গেই তো মাসের ক্রম মিলছে না, সেপ্টেম্বর মানে সাত নং মাস অথচ সে নয় নম্বর মাস, একইভাবে অক্টোবর, নভেম্বর মিলছে না। তোমরা বলতে পারো কেন এরকম হয়েছে?


পাঠ প্রতিক্রিয়া 
(আশোকনগর বয়েস সেকেন্ডারি স্কুলের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র পার্থ দে জ্বলদর্চির ৪৯ তম ছোটোবেলা সংখ্যা পড়ে যা লিখল🖋️)

 সাহিত্য নিয়ে কিছু বলার মত যোগ্যতা আমার নেই, তবুও যখন দেখি কেউ আমার সাথে সাহিত্য নিয়ে কথা বলছে তখন একটা অন্য রকম আকর্ষণ তৈরি হয়। "জ্বলদর্চি" ম্যাগাজিনটার ক্ষেত্রেও একই মত প্রযোজ্য। পড়া র শুরুতেই মৌসুমী ঘোষেরর স্টার্টিংটা পড়ে মনে হচ্ছিল যেন আমাকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলছেন। যেটা আমার পাশাপাশি অনেকেই নিশ্চয়ই বিশেষভাবে আকর্ষণ করেছে। একাধারে পুরো ম্যাগাজিন র সূচিপত্র টার ‌এভাবে বর্ণনা, অতুলনীয়।

      আশা যাক main ম্যাগাজিনে , প্রথমেই অর্ঘ্য দের লেখাই 1928 থেকে বর্তমান বিশ্ব হকি তথা অলিম্পিকে হকির যে বিবরণ,  বিবরণ নয় ঠিক, যে ইতিহাস তুলে ধরেছেন নিশ্চিত ভাবে যারা পড়েছেন, আমার মতে তারা একবার হলেও বলবেন 'আগে এত কিছু জানতাম না '। তারপর ঐ ছোট্ট কবিতাটি ' আমাদের রক্তে খেলা খেলার ছলে বিপ্লবী বেশ, আমরাই কখনো মুখ কখনো দল .... কখনো দেশ '  মনোমুগ্ধকর। তারপরেই স্নেহাদৃতা রায়ের আঁকাটি বাহ! বয়স খানিক টা কম হলেও আঁকার মাধ্যমে বোঝার উপায় নেই। আঁকার ধারণাটি! আবার একদিকে গান্ধীজি একদিকে নেতাজি, দেশমায়ের ও তার স্নেহশীল সন্তান (বিপ্লবীদের) এক সুদৃশ্য নিদর্শন এককথায়। 
      "সনামনির বে"(দেবাশিস দন্ড) সত্যিই বাংলা ভাষার পুরুলিয়াকৃত চরিত্র। স্নেহা দাসের নাড়ু গোপাল , আঁকা টি পুরো ম্যাগাজিনের প্রকৃতির সাথে মানাসই। সুব্রত দেবের 'মিঠির সেদিন' নিশ্চিত ভাবে যাদের উদ্দেশ্যে ম্যাগাজিনটি তাদের বিশেষ ভাবে আকর্ষিত করেছে। সেই রূপকথার পক্ষীরাজ সাদা ঘোড়া, ঘোড়া র ডিম , তেপান্তরের মাঠ, ঘোড়ার পিঠে রাজকুমারী.... ব্যক্তিগত ভাবে আমার খুব ভালো লেগেছে গল্পটি। 
   যমুনার মধ্যে দিয়ে বাসুদেবের মাথায় করে সদ্যজাত গোপালকে নিয়ে যাওয়া তার ওপরে সম্ভবত বাসুকি নাগ .... ক্ষণিকের জন্য মনটাকে শান্ত করে দিতে বাধ্য করেছিল। 
    রঞ্জনা বসুর (ছেলেবেলায়) তিনি যেন আমার ছেলেবেলাটাকে remind করিয়ে দিয়ে গেলেন । অবাক হয়ে গেলাম দ্বিতীয় শ্রেণীর শ্রেয়সী র চিত্রটি দেখে , বিশ্বাসই হচ্ছিল না , দারুণ!..
ছেলেবেলা কে মনে করতে গেলে vital বা গুরুত্বপূর্ণ যে অংশটি সেটা হল 'খেলাধুলো' । যেটাকে খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন আবেশ কুমার দাস তার 'খেলার সময়ের মাধ্যমে 'সেই বাড়ির পিছনের মাঠ, জমজমাট বিকেল গুলোকে সত্যি! খুব miss করি। এরপরেই পঞ্চম শ্রেণীর শ্রুতির 'প্রোট্রেইট' কোনো অংশে কম যায় না....।
     আগমনীর এত সুন্দর বর্ণনা কে  ষষ্ট শ্রেণীর অনমিতা মুখার্জি তার 'আগমনী' কবিতায় যে ভাবে ছন্দোবদ্ধ করেছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়।
     শ্রেয়সী দিদির  'প্যারাঅলিম্পিকস নিয়ে আমার অনুভূতি ' .. ব্যক্তিগতভাবে thank you দিদি এত্ত information দেওয়ার জন্য । লেখার ধরণ দেখলেই বোঝা যাচ্ছে সুউজ্জ্বল ভাবে দীপ্তমান এক প্রদীপ যা নিভতে অনেক অনেক সময় নেবে, আর নিভে গেলেও তার আভায় চারিদিকটা আলোকিত হয়ে থাকবে।
        সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে পীযুষ প্রতিহারের যে প্রতিবেদন! আমি personal ভাবে সেটাকে মোবাইলে screen record করে রেখেছি । ধন্যবাদ sir.... তারপর আসে রতনতনু ঘাটীরর ' ফুলকুসুমপুর খুব কাছে ' পর্ব 22 ; ইচ্ছে দাদু , ত্রিপাঠী মশাই , কুয়াশা মাসি , বিলম্ব বাবু .... মনটাকে যেন সত্যিই নিরুদ্দেশে নিয়ে গেছিল।
       অবশেষে বিশেষ আকর্ষণীয় যেটা আমার জন্য ছিল, সেটা হল রাজীব স্যারের 'গল্পে গল্পে কুইজ 'গল্প আকারে  এতো তথ্য , প্রতিটা লাইনেই নতুন নতুন কত কি জানা অজানার কথা !! এক্ষেত্রেও বিশেষ ধন্যবাদ ছাড়া আর কিছুই দেওয়ার মত নেই ....

          শুরু টা মৌসুমী ম্যামের কথায় তালের বড়া দিয়ে শুরু করতে না পারলেও আস্তে আস্তে যেন ম্যাগাজিনটার মনোমুগ্ধকর ভাষায় , লেখায় , আঁকায়  খানিক টা হারিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম। তার পাশাপাশি রূপকথা ,  আধ্যাত্মিকতা , সাধারণ জ্ঞান , খেলাধুলোর ইতিহাসের এহেন মেলবন্ধন! তার মধ্যে স্নেহা , সমাদৃতাদের আঁকাগুলো সত্যিই মুগ্ধ করে দিয়েছে।

এককথায় অ......সাধা......রণ !

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 







Post a Comment

1 Comments

  1. মৌসুমী মাসি! আজকের সংখ্যা পড়তে আমার দারুণ লাগলো। আমি বৈভবী সেনগুপ্ত বলছি। আজকে আমি বিমল কর কে নিয়ে স্মরণীয় পড়লাম। আমি এখন বাসে করে দেশের বাড়ি আসানসোল যাচ্ছি। আর বাসে খুব এনজয় করছি। আমার খুব ভালো লাগছে। সম্পাদকীয়তে শিউলি ফুলের ছবিটা দেখে আমার মন ছুঁয়ে গেল।

    ReplyDelete