গুচ্ছ কবিতা
অশোক কুমার দত্ত
একটি হত্যাকাহিনী
কেউ কোথাও নেই! অথচ -- মায়াবী রাত্রির অস্বচ্ছতায় সে আসে!
কাক চক্ষু জল কাঁপে শুধু সরোবরে -- স্থির দর্পনে !
শিয়রে বিছানো তখন অনন্ত আকাশ -- পরি শ্রান্ত চাঁদ কখন ঢুলে পড়ে ঘুমে !
আমি ও চলে যাই ধীরে ধীরে জলছবির অস্পষ্ট তায় !
যেভাবে ভেসে থাকে গৃহীর ছিন্নমন রাত্রিদিন বন্ধনে !
মিছিল
শেষ মেট্রো চলে গেলে শূন্য হয় হাতের বাদাম!
মনে হয় -- কতদিন খেলার ছলে উড়াই নি প্রেমিকার হাতের রুমাল?
অথচ ---
এই মধ্যবেলা! শুনশান বন্ধ কারখানা! রক্তমুখী অভাবী সংসার!
নুন আনতে পান্তা প্রেম!
উপবাসী বিপ্লবের পথ ধরে আর কতদিন হাঁটা যায়?
মহাভারত
দাঁড়িয়ে আছি বিষণ্ণ রণক্ষেত্রে একা !
তীব্র দাহ কনায় ভিজে যাচ্ছে ক্ষত !
আসলে মন্ত্র বলে কিছু নেই কৃষ্ণ -- সবই শুধু ভ্রাম্যমান ক্লান্তিহীন স্তব!
যেভাবে কুয়াশা সরিয়ে মাটির প্রতিমা জেগে থাকে নিরব ধি কাল ---সেভাবেই ভেসে যাচ্ছে ভূমিকাহীন বাকরুদ্ধ দুপুর.... বর্ণ ময় উজ্জ্বল সকাল!
রণ বৃষ্টির ঘোরে এখন রক্তে ভিজে যাচ্ছে অসতর্ক বেলা --
যেভাবে কথার ভেতরে থাকে অন্য এক রমণীয় কথকতা !
যদিও এই অবেলায় কে থাকে আর কেই বা যায়?
তাতে কার কী এমন এসে যায়?
দাঁড়িয়ে আছি আজও সখা -- এই বিষণ্ণ রণ ভূমে একা!
ভেসে যাচ্ছে রক্ত স্রোতে ধর্ম - অর্থ মোক্ষ - কাম আর অপ্রসন্ন বিরাগের ক্লান্তিহীন ছায়া!
আত্মজৈবনিক
পুরানো এক অভিব্যক্তির মতো আমি নড়াচড়া করি!
বাতি হয়ে যাওয়া কবিতার খাতায়..... অপ্রকাশিত গল্পে তোমাকে খুজি!
কী যেন ছিল তোমার নাম? শীতের হলুদ হয়ে যাওয়া নরম গমের রঙ ! মেঘলা পাতাদের কোলে সবুজের রিনরিন হাসি!
পুরানো এক অভিব্যক্তির মতো স্মৃতির গুহায় আমি একাকী ----
প্রাচীন গুহমানবের মতো নিজের সঙ্গে নিজে এক অদ্ভূত গোল্লা চোর খেলি!
তর্পণ
দীর্ঘশ্বাস অন্বেষণে যায় দূর ভিনদেশে !
সুচিভেদ্য নিশীথ খোঁজে বিড়ম্বনা!
প্রান্তিক গ্রাম ভেসে থাকে মূ ক দারিদ্ররেখায় !
স্মৃতি স্তম্ভ জুড়ে সারমেয় প্রদত্ত নাতিপুচ্ছ জলাঞ্জলি...
শহীদের গ্রাম "" তোমায় ভুলছি না.. ভুলবো না!""
মন্ত্র
জেগে আছে শুনশান পথ! তিরমুখী মজা নদী আর শূন্য ফসলের রিক্ত মাঠ!
এই দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কী আর বলা যায়?
পিছনে অসংখ্য ম্লান মুখ -- চির দগ্ধ ঘাতে অপঘাতে! লজ্জায় -- মানে অপমানে !
আজ কিছু শব্দ মন্ত্র হোক!
ছড়াক ভুবনে -- উজ্জ্বল অন্ধকারের বিদ্যুতে!
নিশীথের সুশুপ্তিতে -- ঘুম অন্ধকার
জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন
0 Comments