উপন্যাস: খপ্পর
লেখক : অনিন্দ্য পাল
পর্ব: নয়
সোমের কথায় চমকে উঠলো তপু। ভাবনাটা তাকে এতটাই গিলে নিয়েছিল যে কিছুটা সময় সোমের উপস্থিতি প্রায় ভুলেই গেছিল তপু। ফোকাসটাকে ওয়াশ রুমের এলিডি বাল্ব থেকে সোমের উপর কনসেন্ট্রেট করতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো তপুর। একটু চুপচাপ থেকে বললো,
-- কাল বিজু পিসি ফিরবে, ফ্ল্যাটটাকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। আমরা আগের দিন যেভাবে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে এসেছি, মনে আছে তোর? বিছানাটা দেখলে যে কেউ কী বুঝবে বলতো? তার উপর ওগুলো আমি ফেলতে ভুলে গেছি, বোধহয় মেঝেতেই পড়ে আছে। তাছাড়া কাল থেকে পিসি এখানে, মানে ফ্ল্যাটেই থাকবে, আর তো তোকে নিয়ে যেতেও পারবো না। তখন আর বলবোও না, বুঝলি!
থাকিস শুধু ওই ল্যাপটপ আর স্টাডি মেটেরিয়াল নিয়ে।
তপুর মনটা হঠাৎ খারাপ হয়ে গেল, আর মন খারাপ হলে তপু আরো শক্ত হয়ে যায়, ভিতরটা যত ভাঙতে থাকে, বাইরেটা তত বেশি করে পাথুরে হয়ে ওঠে। বাইরের শক্ত খোলসের আড়ালে আছাড় পিছাড় কষ্ট হঠাৎ ঝড়ের মত কিছুটা তছনছ করে দিয়ে যায় তপুকে।
-- কিন্তু তুই একটা জিনিস বুঝছিস না। মা ব্যাপারটা মেনে নেবে না। এমনিতেই একটু সেন্টিমেন্টাল, আমাকে নিয়ে অনেক পরিকল্পনা করে রেখেছে। নিজের সমস্ত ইচ্ছা- শখ জলাঞ্জলি দিয়ে আমাকে বড় করে তুলেছে, আমারও তো কিছু দায় আছে না!
-- তোর দায় নেই, কখন বললাম? আর আমি তো এখনি কোন সার্টিফিকেট চাইছি না। তোর কাছে একটু সময় চাইছি, নিজের জন্য, আমাদের জন্য।
আর যদি তুই রিলেশনটা না রাখতে চাস, তবে আসিস না। আজকেই বা এলি কেন? যদি বৃষ্টিতে ভিজতে হয় তাহলে ভালো করে ভেজ, অ্যাটলিস্ট ছাতা মাথায় বৃষ্টিতে ভিজতে নামিস না!
সোম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল তপুর মুখের দিকে। তপুর কথা গুলো শেষ হলে চোখটা নামিয়ে নিল। কাঁটা-চামচটা নুডলস গুলোর ভিতরে ঢুকিয়ে কিছুটা পাকিয়ে আবার উল্টোদিকে ঘুরিয়ে পাকটা খুলে দিল সোম। দুজনেই চাউয়ের প্লেটে মনোযোগ মিশিয়ে এদিক ওদিক নাড়াচাড়া করতে লাগলো। দুজন খুব পরিচিত মানুষ পরস্পরের সামনে বসে থেকেও কিছুটা সময় একেবারে অপরিচিতের মত বসে রইল।
* * * * * *
ওলার ভাড়াটা মিটিয়ে পিছন ফিরে তপু দেখলো সোম রাস্তার পাশের একটা দোকান থেকে কিছু একটা কিনে ফোনটা কিউ আর কোড এ ধরেছে। গুগল পে স্ক্যানার ধরে পেমেন্ট করে তপুর কাছে এসে ওর হাতে একটা সিগারেট এর প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে মুখটা একটু হাসি হাসি করে দাঁড়ালো।
তপু একটু হেসে উঠলো। তারপর প্যাকেটটা জিনসের পকেটে চালান করে দিয়ে সোমকে বগলদাবা করে বিজু পিসির ফ্ল্যাটের দিকে চললো।
ফ্ল্যাটে ঢুকে অবাক হয়ে গেল তপু আর সোম। কোথাও কোন অগোছালো কিছু নেই। সব কিছু একেবারে পরিপাটি করে গোছানো। সুন্দর একটা গন্ধ নাকে এল তপুর , সম্ভবত ধূপের।
হতবাক সোম তপুর হাতটা চেপে ধরে অস্ফুটে জিজ্ঞাসা করল,
-- কেসটা কি?
-- কোন কেস?
থতমত তপু চমকে উঠলো!
-- আরে তুইও না -- টিউবলাইট হয়ে যাচ্ছিস। এখানকার কেসটা কি, সেটাই জিজ্ঞাসা করছি।
-- দুর বোকা---
একটা চার অক্ষরের খিস্তি দিয়ে তপু বললো,
-- তুইও যেখানে, আমিও সেখানে, তুইও যা দেখছিস আমিও তাই দেখছি, তাহলে আমি কি করে জানবো?
-- জানিস না যখন, চল এবার, যেখানকার গরু সেই গোয়ালে ফিরে যাই।
সোম তপুর হাতটা ধরে টানে।
--আরে দাঁড়া না। এত ভয় পাচ্ছিস কেন? এদিকে আয় দেখি
সোমকে টানতে টানতে বিজু পিসির বেডরুমের দিকে নিয়ে গেল তপু। দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ। তপু মনে করার চেষ্টা করলো, শেষ দিন তারা বেডরুম থেকে বেরিয়ে সোজা নেমে গেছিল সিঁড়ি বেয়ে কারণ ফ্ল্যাটের লিফটটা খারাপ হয়ে পড়েছিল। হাতে খুব কম সময় ছিল তাই কিছুই গুছিয়ে যেতে পারে নি। বেডরুমের দরজাও খোলাই রেখে গেছিল, অথচ আজ সব অন্য রকম লাগছে! বেডরুমের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ হল কিভাবে? ফ্ল্যাটের দু'টো চাবি। অন্তত বিজু পিসি তেমনটাই বলেছে, একটা পিসির কাছে অন্যটা তার কাছে। তাহলে? অন্য কেউ ফ্ল্যাটে ঢুকবে কী করে? আবার কেউ যদি না ঢুকে থাকে তাহলে এই চারদিনে ফ্ল্যাটটাকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করলো কে?
হঠাৎ সোমের আলতো ধাক্কায় ভাবনার জাল থেকে তপু একটু মাথাটা বের করে ওর দিকে তাকালো। সোম ইশারা করে কিচেনের দিকে কিছু একটা দেখালো। তপু সেদিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল। ওভেনের উপরে একটা প্রেসার কুকার বসানো রয়েছে, সেটার সেফটি ভালভ থেকে একটু তরল কিছু বেরিয়ে ঢাকনার উপর আটকে রয়েছে। একটু আগেই কেউ রেঁধেছে কিছু। কিন্তু কে?
-- কি রে? কি খুঁজছিস তোরা?
তপু আর সোম চমকে দেখলো, বেডরুমের দরজা খুলে এক অত্যন্ত সুন্দরী মহিলা একটা অত্যন্ত পাতলা স্লিভলেস নাইটি পরে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে মৃদু হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে, চোখে একটা দুষ্টুমি ভরা চাউনি।
চমকটা কাটতেই তপু বলে উঠলো,
-- পিসি তুমি? চলে এসেছ? তবে যে বললে তোমার পাঁচদিনের ট্যুর!
বিজয়া একটু হেসে বললেন,
-- তাইতো ছিল, কিন্তু হঠাৎ একটা ফোন সব গন্ডগোল করে দিল, চলে আসতে হল দুদিন আগেই। তোকে ফোন করিনি কারণ আমি ঘরের অবস্থা দেখে বুঝতে পেরেছিলাম, তুই আসবিই।
বিজয়া এবার সোমকে একটু দেখে নিয়ে তপুকে আবার রসিকতা করে বললেন,
-- ইনি কে তপু? ফ্রেন্ড না বয় ফ্রেন্ড?
তপু আর সোম একবার পরস্পরের দিকে তাকিয়ে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকলো।
বিজয়া এবার এগিয়ে এলেন তপুর দিকে। ওর একটা হাত বুকের উপর তুলে নিয়ে বললেন,
-- আমি কিচ্ছু মনে করিনি রে -- ছেলেটা বিদেশে, এখানে আমার আপন বলতে তো তোরাই। অত লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। তবে একটা কথা, ওই গুলো, মানে ইউজড বেলুন গুলো ফেলে দিবি। ওগুলো আমার একদম সহ্য হয় না। আমরা কখনও ব্যবহার করিনি।
তারপর একটু মিচকি হেসে বললেন,
-- এখন যা তো, আমার জন্য একটু চা করে নিয়ে আয়। আর তুমি, নামটা --
-- সোম।
-- আচ্ছা সোম তুমি আমার ল্যাপটপটা একটু দেখোতো। কি যে হচ্ছে, একটা মেল সেন্ড করছি, বার বার বলছে 'মেল ডেলিভারি সাবসিস্টেম ফেলিওর'।
অথচ ওটা না গেলে আমার খুব সমস্যা হবে।
বিজয়া, সোমকে নিয়ে বেডরুমের ভিতরে ঢুকে গেলেন। কিচেন থেকে কটমট চোখে সেদিকে তাকিয়ে থাকলো তপু।
#দশ
====
"উহ্! মাগো!" -- পাশ ফিরতে গিয়ে সমস্ত শরীরটা ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো ব্যানার। নিজের কাতরানোর শব্দটুকু নিজের ঠোঁটেই আটকে রয়েছে এখনো, শক্ত করে বাঁধা মুখের কাপড় ভেদ করে সেই শব্দগুলো আর বাইরে বেরোতে পারে নি।
কবে, কতদিন আগে থেকে যে এই ঘরটায় সে আটকে আছে তার হিসেব ব্যানার নেই। সে শুধু রাত আসলে ভয়ে জড়সড় হয়ে থাকে। রাত যত বাড়ে, ব্যানার শরীরটা তত মূল্যবান হয়ে ওঠে। অবশ্য তার নিজের কাছে নয়, শরীরময় খিদে নিয়ে আসা একদল নারী, পুরুষের কাছে তার কিশোর শরীরের সমস্ত অঙ্গ - প্রত্যঙ্গ পাঁচতারা হোটেলের সুস্বাদু ডিসের মত হয়ে ওঠে।
ব্যানা এদের কাউকেই চেনে না, রোজ বদলে যায় মুখগুলো, শুধু একটাই মুখ বদলায় না, জৈসা! ব্যানা যতদূর বুঝেছে জৈসার হাতেই রয়েছে সব কিছু। সবাই তার কথাতেই ওঠে, বসে। জৈসা যেমন ভাবে বলে সবাই তেমন ভাবেই করে। প্রথম দিকে ব্যানা কয়েক বার বেঁকে বসেছিল, জৈসার সঙ্গে কালো পোষাকে থাকা বিশাল লোকটা সঙ্গে সঙ্গে এমন ভাবে ধরেছিল ব্যানার জিভ বেরিয়ে এসেছিল, আর কয়েক মুহূর্ত ওভাবে থাকলে হয়ত মরেই যেত সে।
দু-তিন দিন অন্তর ব্যানার ঠিকানা বদল হয়। গতকাল তাকে এই ঘরটায় রেখে গেছে জৈসা। তার সাড়ে চার-ফুটের শরীরটাকে একটা কাপড়ের সুটকেসে ঢুকিয়ে অনায়াসে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যায়।
স্টিলের খাটের সঙ্গে টাইট করে বাঁধা হাত-পা একটু টানা-টানি করে দেখলো ব্যানা, খোলা তো দূরের কথা, উল্টে আরো টাইট হয়ে বসে যেতে লাগলো বাঁধনগুলো। একবার নিজের সম্পূর্ণ উলঙ্গ দেহটার দিকে তাকিয়ে আবার ঘেন্নায় চোখদুটো জোর করে বন্ধ করে নিল ব্যানা।
কতক্ষণ ওভাবে পড়ে আছে, নিজেও জানে না ব্যানা। অসম্ভব খিদে আর পিপাসায় প্রায় সেন্সলেস অবস্থায় বিছানায় লেপ্টে ছিল। হঠাৎ দরজায় একটা শব্দ হতেই শিউরে উঠে চোখ খোলে, অন্ধকার ঘরের মধ্যে কিছুই দেখতে পায় না। শরীরখোর গুলো কি এসে পড়েছে? ভয়ে কুঁকড়ে ওঠে ব্যানা, তার শিশ্নের ব্যথাটা তাজা হয়ে ওঠে, পায়ুপথের যন্ত্রণাটা যেন হঠাৎ করেই প্রচন্ড রকমের বেড়ে যায়, সমস্ত শরীর অসাড় হয়ে আসে ব্যানার।
জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
0 Comments