জ্বলদর্চি

পাতি মানুষের পাঁচালি-৭/(উপন্যাস)/(উৎসব ১৪২৮)/পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায়


পাতি মানুষের পাঁচালি::৭
-------------------------------------
সুজাতা চট্টরাজের কথা। তাঁর নিজের জবানীতে।
-------------------------------------------------------
আমি সুজাতা চট্টরাজ। বয়স বিয়াল্লিশ বছর। এক বিখ্যাত আই.টি. ব্র্যান্ডের চাকুরে। কলকাতার সেক্টর ফাইভে আমার  অফিস। আমি  বিবাহিতা, বর ঋষি গুপ্ত।  কলকাতার নামজাদা গাইনিকোলােজিস্ট। অ্যাপােলাে হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত।  পড়াশােনা করা এথিকাল ডাক্তার। শুধু চিকিৎসকই নয়। অ্যাকাডেমিশিয়ান । পড়াতে ভালােবাসে । মেডিক্যাল শিক্ষার মান বাড়ানাের জন্য নিজেদের অ্যাকাডেমির জন্য নিরলস পরিশ্রম করে।
উনিশ বছর বয়সি একমাত্র ছেলে হর্ষ হায়ার সেকেন্ডারিতে ভালাে রেজাল্ট করে আই.আই.টি এনট্রান্স কোয়ালিফাই করে খড়গপুরে পাঠরত। আমি চাই, আমার জীবন কাহিনী মানুষ জানুক। প্রথমে ভেবেছিলাম আমার সাহিত্যিক বন্ধু প্রমােদ বরুয়াকে এর দায়িত্ব দেব। কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম আমার কলমেও যখন কিঞ্চিৎ ধার আছে, ভাষা  আছে, তখন আমার ব্যাপার আমি লিখলেই তা সবথেকে বেশি তথ্যনিষ্ট এবং সত্যনিষ্ঠ হবে। ঠিক করেছি, যা ঘটেছে তার কিছুই আমি লুকোব না। শালীনতার সীমা লঙ্ঘন করে বলব সবটাই। কাউকে কোনাে কৈফিয়ত দেওয়ার নেই আমার। নিজের মতাে করে জীবন কাটানাে পরিণত মানুষদের অধিকারের মধ্যেই পড়ে বলে আমি মনে করি ।  এতে  কোনাে দোষ দেখি না।
আমি আর ঋষি একদম ছােটবেলা থেকে একে অপরকে চিনি। আমার বাবা আর ওর বাবা এক সরকারি আবাসিক কলেজের সহকর্মী ছিলেন। কলেজের কমপ্লেক্সটা একদম সবুজে মােড়া। রােমান্টিক ও সুন্দর। সে সময় রােমান্টিক কথাটার মানে বুঝতাম না, কিন্তু সে সবুজের বুকে ঘােরাফেরা করে মনটা খুব ঠান্ডা ও তৃপ্ত থাকত। ঋষির বাবা কলেজের প্রিন্সিপ্যাল এবং আমার বাবা দর্শনের লেকচারার। দুজনের মধ্যে একেবারেই বন্ধুত্ব ছিল না  । সবসময় খুঁটিনাটি ব্যাপার নিয়ে খটামটি লেগে থাকত। প্রিন্সিপ্যাল জেঠু ছিলেন নিয়মানুবর্তী কড়া ধাতের মানুষ, আর আমার বাবা কাছাখােলা খ্যাপাটে ধরনের বেহিসাবি। তাঁদের পারস্পরিক তিক্ত সম্পর্ক অবশ্য তার পরিবারে আমার বা আমার পরিবারে তার যাতায়াতের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়নি । কারণ বাড়ি সামলালেও আমাদের মায়েরা ছিলেন প্রগতিশীল ও আধুনিক মনের মানুষ। সংসার ও সম্পর্কের জটিলতা কুটকচালিতে তারা বিশ্বাস করতেন না।
ঋষি বয়সে আমার থেকে দুবছরের বড়। ছােটবেলা থেকেই ধীরস্থির অন্তর্মুখী লাজুক । পড়াশােনায় ভালাে। আমি ঠিক উল্টো। যে কোনাে অছিলায় পড়াশােনায় ফাঁকিবাজি করতে আমার  জুড়ি মেলা ভার। কলেজে বাবার আর সব সহকর্মীরা কাকতলীয়ভাবে হয় ছিলেন নিঃসন্তান অথবা অবিবাহিত। সুতরাং গােটা কলেজে ছােট বলতে আমরা দুজন এবং যেহেতু স্কুলের সময় ছাড়া আমাদের কলেজের চৌহদ্দির বাইরে যেতে মানা, তাই পরস্পরের সঙ্গে মিশে পরস্পরকে জানা ছাড়া আমাদের কোনাে গতি ছিল না। প্রাথমিক ভাবে আমরা আর পাঁচটা ছেলে মেয়ের মতো মেলামেশা করতাম। মেশা নিছক সময় কাটানাের জন্য।  কিন্তু ক্লাস সিক্স এবং ক্লাস এইটে ওঠার পর থেকে একে অপরকে অন্য চোখে দেখতে শুরু করি আমরা। সেই অল্প বয়সেই বুঝতে পারি যে আমাদের মেলামেশার ব্যাপারটা বন্ধুত্বের থেকে আর একটু উঁচু পর্যায়ে উঠে গেছে। সে এক উন্মাদনাময় জীবন। মনে আছে, একদিন নয়, কয়েক ঘণ্টা পরস্পরের সঙ্গে দেখা না হলেই মনটা কেমন যেন উতলা হয়ে উঠত আমাদের।  কি অনুভূতি হতো তা এখন এই পরিণত বয়সেও লিখে বােঝাতে পারব না। আমাদের আচরণে অন্য কোনােরকম ঈঙ্গিত অথবা শারীরিক ঘনিষ্ঠতার পূর্বাভাস ছিল না, সুতরাং আমাদের ব্যাপারে আমাদের বাবা-মায়েরা কখনাে বাধা হয়ে দাঁড়াননি, বরং আমাদের বন্ধুত্বকে  স্বীকৃতি দিয়ে আরাে পরিণত ও দায়িত্বশীল মানুষ হওয়ার সুযােগ করে দিয়েছিলেন। একই কো-এডুকেশন স্কুলে নিচু এবং উঁচু ক্লাসে পড়তাম আমরা । আমাদের একসঙ্গে ঘােরাফেরা অন্য সহপাঠীদের বিদ্রুপের কারণ হলেও, বয়সের তুলনায় বেশি ম্যাচ্যূরিটির কারণে সে সব ব্যাপার আমরা বিশেষ গায়ে মাখতাম না।  ঋষির হায়ার সেকেন্ডারির পর থেকে দু বছরের জন্য আলাদা হয়ে গেলাম আমরা। ঋষি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়তে ভর্তি হল। জয়েন্ট ক্র্যাক  করে আমিও দুবছরের একাকীত্ব কাটিয়ে শিবপুর বি.ই. কলেজে ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে ঢুকলাম। তখন ঋষিও বেশ  যুবক হয়ে উঠেছে। এতদিন ওকে দেখে মনে মনেও আমার কোনাে অনুভূতি হয়নি। কিন্তু কলকাতায় ওকে প্রথম যখন দেখলাম, আমার শরীরে কীরকম যেন একটা সংকোচ ও লজ্জা মিশ্রিত শিহরণ খেলে গেল বুঝলাম। এও বুঝলাম, আমি নারী হয়েছি, ঋষি পুরুষ হয়েছে। এবং আমাদের সম্পর্কের গতিপথ   বাঁক নিতে চলেছে অন্য দিকে। ঋষি পড়াশােনায় ভালাে ছিলই। ভালাে লিখত, ভালাে পড়ত, আর এখানে এসে দেখলাম সে তৃতীয়ধারার ছাত্র রাজনীতি করে এবং এখানকার ছাত্রমহলে সে বেশ জনপ্রিয় তাত্ত্বিক নেতা। শিবপুর থেকে কলেজস্ট্রিট অনেকখানি দূর। তবু সপ্তাহে অন্তত তিনদিন একে অপরের সঙ্গে দেখা করতাম আমরা। কখনাে কলেজ স্কোয়ার। কখনাে বি.গার্ডেন। একে অপরের দিকে তাকিয়ে বসে থাকতাম, সুযােগে ঘনিষ্ঠ হতাম যতটুকু সম্ভব। পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিতাম হাবিজাবি গল্পে। হস্টেলে ফিরতে প্রায়শই দেরি হওয়ায় হস্টেল সুপারের কাছে সঙ্গত কারণে বকা খেতাম।  এভাবে তীব্রগতিতে কেটে গেল পাঁচটা বছর। আমাদের দুজনের মধ্যে  সম্পর্ক  অনেকদূর এগিয়েছে এবং তার কারণে আমাদের কোনাে রকম অপরাধ বােধ হয়নি। এম.বি.বি.এস পাশ করে ঋষি এম.ডি'তে চান্স পেয়ে চলে গেল বম্বের গ্রান্ট মেডিক্যাল কলেজ আর আমি আবার একা হয়ে গেলেও ভেঙে না পড়ে নিজের পড়াশােনা সময়ে শেষ করে ক্যাম্পাসিং-এর মাধ্যমে চাকরি পেয়ে এন.টি.পি.সি-তে ঢুকে গেলাম। যােগাযােগ ছিল আমাদের মধ্যে। আমি বম্বে ও কলকাতা করতাম মাঝে মাঝে সুযোগ পেলে। ঋষি এম.ডি পাশ করার পর বিয়ে করি আমরা। কলকাতায় বাড়ি ভাড়া করে বিয়ে হয়েছিল। ঋষির বাবা হঠাৎ করে কয়েকদিনের রােগভােগে মারা গেছিলেন তার আগে। বাকিরা কলকাতায় এসে আমাদের বিয়েতে শামিল হয়েছিলেন। যেহেতু আমরা ঠিক করেছিলাম বিয়ে করব নিজেদের খরচে সুতরাং আর্থিক অস্বচ্ছলতা নয়,  নীতিগত কারণেই  আমাদের বাকি আত্মীয়দের  নিমন্ত্রণ করিনি আমরা।
সে সময় ঋষি নতুন ডাক্তার। প্র্যাকটিসে বিশেষ পেশেন্ট হয় না। তার উপর গোঁ ধরে বসে আছে জেনারেল প্র্যাকটিস করবে না। আমার চাকরির মাইনেও সে রকম ভালাে নয় সুতরাং কলকাতার ভাড়াবাড়িতে সংসার শুরু করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল আমাদের। কিন্তু সুখ বস্তুটা তাে স্বপ্নে, ফলে সে কষ্টকে সমান ভাগে ভাগ করে নিয়েছিলাম দুজনে। বছর খানেক অসম্ভব পরিশ্রম করে প্র্যাকটিস জমালাে ঋষি। তার পর ফেলোশিপ করতে গ্লাসগাে রওনা দিলো সে । আমিও সঙ্গী হলাম আমার চাকরি ছেড়ে দিয়ে। সে এক অন্য দেশ, অন্য সংস্কৃতি। মানুষের সঙ্গে মানুষের মেলামেশার ধরন আলাদা। স্ত্রী পুরুষ নির্বিশেষে একে অপরকে আলিঙ্গনে করে দ্বিধাহীন ভাবে। তাতে শালীনতাহানীর প্রশ্ন ওঠে না। প্রথম প্রথম  ভীষণ অসুবিধে হয়েছিল সে সংস্কৃতিকে মানিয়ে নিতে । এতদিন পর্যন্ত আমরা কেবল পরস্পরকেই ভালােবেসে এসেছি। কিন্তু এখানে আসার পর ধীরে ধীরে অনুভব করতে শুরু করলাম, আমার প্রতি তার ভালােবাসার কেমন যেন একটা টান পড়েছে। বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করত না,
কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে মেলাতে পারলাম না আমার অন্ধবিশ্বাসকে। একদিন শহরের উপকণ্ঠের একটা কাফেতে ওর সহপাঠীর সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে ওকে দেখে ফেলায় যদিও আমার খুব কষ্ট হয়েছিল তবু ব্যাপারটা ওদের জানতে না দিয়ে আমিই
ধীরে ধীরে ওখান থেকে চলে এসেছিলাম। তীব্র মানসিক টানাপােড়েন ও বিমর্ষতায় কেটেছিল আট মাস। ওকে সত্যিই খুব ভালােবাসি আমি। সুতরাং  কোনােরকম মনোকষ্ট দেওয়ার বিরুদ্ধে ছিলাম। আমার সে ক্রাইসিসের মুহূর্তে কেউ পাশে ছিল না। নিজের মনকে শক্ত করে সামলাতে হয়েছিল সেই কঠোর পরিস্থিতি। বিশ্বাস ছিল অপরাধ বােধে ঋষিই আমাকে একদিন সবকিছু খুলে বলবে।  আমার ধারণা ভুল ছিলনা।  জাস্ট মেলামেশা ছাড়া বিশেষ কিছু না করেও ঘটনার আটমাস বাদে  বিবেকের দংশনে সে শিশুর মতাে কেঁদে তার  কৃতকর্ম স্বীকার করেছিল আমার বুকে মুখ লুকিয়ে। আমিও পত্রপাঠ তাকে ক্ষমা করে দিয়ে সে যাত্রা হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলাম। তার পর আরও বছরখানেক গ্লাসগােতে ছিলাম আমরা। ফেলোশিপ শেষ করে যখন কলকাতায় ফিরে এলাম দুজনে তখন আমার পেটে অপু এসে গেছে। অপুর জন্ম হল ছ'মাস পর। তার দুবছর বয়স হওয়ার  পর আমি যােগ দিলাম টি.সি.এস-এর চাকরিতে। ঋষি অ্যাপােলাে জয়েন করল ভিজিটিং হিসেবে।
আমার মা কর্মক্ষম ছিলেন তখনও, অপুকেও ভীষণ ভালােবাসতেন। সুতরাং তার বড় হয়ে যাওয়াটা শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা ছিল। আমি বিশেষ কিছু টের পাইনি  সর বিষয়ে।
অফিসে  আমার ঘরেই বসত বরুণ। আমার থেকে বয়সে ছােট কিন্তু ভীষণ হ্যান্ডসাম এবং সপ্রতিভ। তার সান্নিধ্যে ভালাে সময় কাটত অফিসে। বছর তিরিশেক ছুঁই ছুঁই তখন। নিষেধের আগল অনেকখানি আলগা হয়েছে। বিদেশ ঘুরে আসার কারণেও খানিকটা। তাছাড়া সময়ের প্রভাবে, পরস্পরের কাজের ব্যস্ততায় ঋষির প্রতিও সেরকম শারীরিক বা মানসিক আকর্ষণ অনুভব করি না। ওই আছে এই পর্যন্ত!  ঋষি এ ব্যাপারটা বিলক্ষণ বুঝত কিন্তু প্রকাশ করত না কোনােভাবেই। আমি অন্যভাবে অন্য কোথাও  ইনভলভ হই, সেও হয়তাে সেটা চেয়েছিল মনে মনে, যাতে তার কাজে অসুবিধে না হয়।
বরুণ এ যুগের আধুনিক মানসিকতার ছেলে। প্রেম ও দুটি মানুষের সম্পর্ক সংক্রান্ত পুরনাে মূল্যবােধ ও ধ্যানধারণাগুলিকে সে হাস্যকর ও মেকি মনে করে। বলে বয়স একটা সংখ্যা মাত্র, তার আগল মানার কোনাে রকম চেষ্টা করে না।  বলে আকর্ষণ ও পারস্পরিক সম্মতি থাকলে যা ইচ্ছা করা যায় একে অপরের সঙ্গে। আমি ওর আকর্ষণে ভেসে গেছিলাম, ওর যা ইচ্ছে তাই করার মানসিকতাকে প্রশ্রয় দিয়ে । ঋষির অজ্ঞাতসারে।  ঋষি কিছু বলত না।  সে কারণে এবং হয়তাে  বা একঘেয়ে জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে নতুন কিছু করার নেশায় ও ঋষিকে জব্দ করার তাগিদে জেদ বেড়ে গেছিল। ঋষির আমার প্রতি উদাসীনতা তাতে কমেনি। তাকে জব্দও করা যায়নি। বরুণের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল দুবছর। তারপর অন্তঃসারশূন্য সে সম্পর্কের অসাড়তার কারণে একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হলাম নিঃশব্দে। বরুণের বিয়েতে নিমন্ত্রিত হয়ে 'বড়দিদি ও তার বর' হিসেবে  আমরা দুজন দিব্যি সেজেগুজে খেয়ে দেয়ে আশীর্বাদ করে এসেছিলাম নবদম্পতিকে। একটুও অসুবিধে হয়নি তাতে।
আমরা এখনও খুব স্বাভাবিক ভাবে ও একসঙ্গে থাকি। একদিনের জন্যেও বিচ্ছিন্ন থাকার কথা ভাবিনি। মানসিক নির্ভরতা আবার বেড়েছে ইদানীংকালে। রাতের খাবারটা একসঙ্গে খাই রােজ। সময় পেলে আড্ডা দিই। ছেলেকে দেখতে খড়গপুর যাই। অতীত পদস্খলনের কথা তুলে পরস্পরের দিকে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করি না। প্রথমে ভেবেছিলাম প্রমােদকে দিয়ে আমার জীবনকাহিনি লেখাব, তারপর মনে হল—মানুষের মন তাে ! কে জানে কী ঘটনার কীভাবে মানে করে বসে! আমরা যখন সেটা করেছি, সততার সঙ্গে সত্যি ভেবে করেছি, তা তৃতীয় ব্যক্তির চোখে অপরাধ হলেও আমাদের কাছে অমূল্য স্মৃতি। তাই ঠিক করেছি এ ব্যাপারে কোনাে তৃতীয় ব্যক্তিকে মত প্রকাশের সুযােগ দেব না। এখনও বেঁচে আছেন  ঋষির বাবা ছাড়া আর সকল কাছের বড়রা। নিয়মিত যােগাযােগ আছে আমাদের সঙ্গে। মা একটু অসমর্থ হয়েছেন বটে কিন্তু  কিন্তু আজও পেটুক মেয়ে জামাইয়ের জন্য পাটিসাপটা আর পিঠে তৈরি করে খবর দেন। বাবার গার্ডেনিং-এর সখ। এক চিলতে জমিতে ছােট একতলা বাড়ি বানিয়ে লাউ কুমড়াে, শসা ফলিয়ে দিন কাটান।

ছেলে বড় হয়েছে তবু আমাদের কাছে আসলে সেই ছােটবেলার করে মতাে আচরণ করে আজো। তার বড় বড় হাবভাব দেখতে ভালােগালে ভীষণ। যখন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খেয়াল করি, বুঝতে পারি তার কপাল আর চোখটা ঋষির মতাে, নাক আর ঠোটটা আমার মতাে। তখন মনে মনে যে কি তীব্র আনন্দ হয় কী বলব!
বংশপরম্পরায় এই জিনের প্রবাহ জীবনের পর জীবন কেউ খেয়াল করে না, করলে অনুভব করত কী রােমাঞ্চকর আনন্দের উপাদান লুকিয়ে আছে তার মধ্যে।
আমার জীবনের গল্প কোনাে মহীয়সী নারীর জীবনী নয়। পৃথিবীর কোনাে না কোনাে প্রান্তে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে এসব কিছু। ঘটে আর সংকোচ, লজ্জার ধ্বংসস্তূপে হারিয়ে যায়। সমাজ এ রকমই। সে নিয়ম বেঁধে দিয়েছে  সর্বস্তরের সম্পর্কে। তার বাইরে কারোর প্ৰতি আকর্ষণ অন্যায়। উপেক্ষা করতে হবে তা। আমরা তো সম মানসিকতার দুই বন্ধু। কত মানুষ অপছন্দের সঙ্গীর  সঙ্গে সম্পর্ক করেও কিরকম কাটিয়ে দেয় আস্ত জীবন। সমাজের ইচ্ছে এখানে  মানুষের ইচ্ছের থেকে দামি। আবেগের কোনাে দাম নেই। হায় মানুষ!  হায় তার শ্রেষ্টত্ব। হায় সমাজ ! হায় তার নীতিনির্ধারণ!


জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments