কবি পরিচিতি : কে সচ্চিদানন্দন (১৯৪6) একজন ভারতীয় কবি এবং সমালোচক, মালায়ালাম এবং ইংরেজি এই দুই ভাষায় তার কলমের অবাধ যাতায়াত। মালায়ালাম ভাষার আধুনিক কবিতার প্রবর্তক তিনি, দ্বিভাষিক সাহিত্য সমালোচক, নাট্যকার, সম্পাদক, কলাম লেখক এবং অনুবাদক কে সচ্চিদানন্দন ভারতীয় সাহিত্য জার্নালের প্রাক্তন সম্পাদক এবং সাহিত্য আকাদেমির প্রাক্তন সম্পাদক। তিনি ধর্মনিরপেক্ষ বর্ণবিরোধী বিষয়ে, পরিবেশ ও মানবাধিকার এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সমসাময়িক বিষয়গুলিতে সুপরিচিত বক্তা। তাঁর মূল মালায়ালাম একটি দীর্ঘ কবিতা ( মূল লেখার ইংরেজি অনুবাদ স্বয়ং কবির এবং ইংরেজি থেকে হিন্দি অনুবাদ করেছেন বোমেশ শুক্লা ) অনুবাদ করার যথাযথ চেষ্টা করলাম।
মূল কবিতা - তোমায় মনে পড়ে
কবি - কে সচ্চিদানন্দন
অনুবাদ - দেবলীনা চক্রবর্তী
তোমায় মনে পড়ে সেভাবেই,
যেভাবে হারিয়ে যাওয়া চাবিটি
মনে করে তার বন্ধ পড়ে থাকা ঘরটিকে
অন্তর্লীন জলধারার ছলাৎছল উচ্ছ্বাস যেভাবে
শহুরে কোলাহলে নিয়ে ধেয়ে আসে
সেভাবেই তুমি ধেয়ে আসো আমার মধ্যে
সোনালী ও বাদামি রঙের স্বপ্ন
যখন ক্যানভাসে ফুটে ওঠে
ঠিক তখনই দেবী রূপ উদ্ভাসিত হয়
আর অন্তর্হিত হয় চুপিসারে ইতিহাসের পাতায়
স্থির জলোচ্ছ্বাসের গভীরে
পক্ষিকূল ডানা মেলে
আর শ্যাওলা আকাশ থেকে
মৃত্যু তির গতিতে ধেয়ে আসে
২)
সব রঙের সমাহার তুমিই
তুমি লাল তুমিই কালো
যেমন রক্ত গোলাপ
তেমনি রাতের নিঃসঙ্গ একাকী হাওয়া
তুমি নীল তুমিই সবুজ
যেমন সমুদ্রের অনন্ত কমল
তেমনি ঘাসফড়িং এর পৃথিবী পৃষ্ট ভ্রমণ
তুমি হলুদ তুমিই ধূসর
কুমকুম রঙের ফুলেল সাগর তুমি
আবার সমুদ্র সৈকতের পূর্ণ চন্দ্রমাও তুমি
কিন্তু কখনোই বিবর্ণ হয়ো না তুমি ... কিছুতেই না
৩)
এই আয়না ঘরের
প্রতিটা আয়নার থেকে
প্রতিবার প্রতিবিম্বিত হও এক অন্য তুমি
তুমি তোমার আত্মবেষ্টনী থেকে স্বয়ং বেরিয়ে
এসে আপন মুখচ্ছবি নিজেই রূপ দাও
যে রূপ সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে
অসংখ্য - এ পরিণত হয়
এই অগণিত ছবির মধ্যে আমার আমি কোথায়
এই তুলি নাকি রং - এ !
যেখানে চৌচির হয়ে পড়ে আছি
এক আশ্রয়হীন আত্মা
এক ধ্বংসপ্রাপ্ত গ্রাম
এক অন্ধ গলির মতো
৪)
বিস্মৃতির কঠিনতা থেকে আমাকে বের করো
সেই চোরা গলি, ধানের ক্ষেত
সুউচ্চ শিলাখন্ড , কূলদেবী,
তাদের সমুখে নৃত্যরত জনমানসের ভিড় থেকে
আমাকে মুক্ত করো
সারা প্রবাহ কণ্টকময়তায় আবিষ্ট
সমস্ত রীতিনীতি তপ্ত বালিতে নিমজ্জিত
আমাদের কিছু বলার আগেই অন্তর্ধান হলেন মহাপুরুষগণ
আর পাখির নীড়ে গুঞ্জরিত হলো ঘণ্টাধ্বনি
মূলাধারে অর্পিত করাঞ্জলিই
এই অরণ্যের ব্যাকরণ
তোমার চোখে যে জ্যোতি আছে
সেই জ্যোতির মধ্যে যে নয়নমণি-
সেই তো আমি!
জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন
0 Comments