জ্বলদর্চি

ব্রেক আপ উপত্যকা /রাজ অধিকারী

ব্রেক আপ উপত্যকা
রাজ অধিকারী

পর্ব ১.

(ক্যামেরা এখন সিদ্ধার্থর মাথায়। আপনারা ওর চোখ দিয়ে মিসোজিনিস্ট প্রেমিকের ফ্রাস্টেশন পড়তে চলেছেন)

বিজ্ঞজনেরা বলেন, "আজকালকার ছেলেপিলেদের গোল্লায় যাওয়ার মূল কারণ হলো এই সিনেমা!" অর্থাৎ সিনেমা আমাদের আশাবাদী করে তোলে। তারপর সেই আশাপূরণ না হলে হতাশা ও নিরাশা আমাদের বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে ওঠে। তবে আসল ঘটনা কিন্তু মোটেই এইরকম  না।
আমাদের জীবনের এই পরিস্থিতির জন্যে দায়ী হলো একমাত্র বাংলা সাহিত্য। একটা বয়স অব্দি সবাই শক্তি-সুনীল-জয় পড়ে; পাগলী তোমার জন্যে এই করবো, পাগলী তোমার জন্যে সেই করবো। এবার এই পাগলীর জন্যে এতকিছু করতে গিয়ে নিজেকে যে কতবড়ো উন্মাদ হতে হয়, সেটা আর কেউ লেখে না। সবাই নীরার কথা বলেছেন। কিন্তু এই নীরা নামক নারীর আগমনের আগে এবং পরে সে পীড়া সহ্য করতে হয়, তার কথা কেউ বলেননি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, নবারুণ ভট্টাচার্য যদি আমার ক্লাসমেট হতেন, তাহলে উনিও লিখতেন, "এই ব্রেক-আপ উপত্যকা আমার দেশ না।" 
মেসে আপাতত আমরা দুজনেই থাকি। আমি আর মন্টু। দুজনেই মাস্টার্স করছি। ওর এম.টেক., আমার জার্নালিজম। মন্টুর আসল নাম পুন্ড্রিকক্ষ পুরকায়স্থ। একে এই নাম, তারপর বেচারা একটু তোতলা। হাজার চেষ্টা করেও ব্লাডি মেরি করতে পারেনি। একবার তো তো ব্লাডি মেরি এসে ওকে বলে, "ওরে তুই ৩বারের জায়গায় ৮ বার ডেকে ফেলেছিস আমাকে! আমিই ভয়ে পেয়ে আরেকজনের ঘাড় মটকানো মাঝপথে ছেড়ে এলাম!"

 মন্টু আসলে ওর বাবার নাম। আমরা তাই মন্টু বলেই ডাকি। মন্টুও নিজের বাবার নাম উজ্জ্বল করার জন্যে রোজ ফেয়ারনেস ক্রিম মাখে। 
এবার আসি আমার কথায়, এই সিদ্ধার্থ সরকারের কথায়। ওই যে বললাম, ৩টে রিলেশনে ৪৬ বার ব্রেক আপ; এখন বের হচ্ছি ৪৭তম ব্রেক-আপ করতে। আসলে করতে ঠিক নয়, মেনে নিতে। নতুন যুগ, নতুন টার্ম; মিউচুয়াল সেপারেশন। যেখানে মিউচুয়াল শুধু বিল স্প্লিট করার ভাবনাটা হয়। একজন ব্রেক আপ করে, আরেকজনকে মেনে নিতে হয়। 
 যাই হোক, নীরা আসছে কলিঙ্গ ক্যাফেতে। বিকেল ৫ টায় দেখা করার কথা। এখন ৫টা বেজে দশ, আমি বের হচ্ছি মেস থেকে। ইচ্ছে করেই লেট করেছি! তুই করবি ব্রেক আপ! আমি কেন টাইমলি যাবো? এদিকে মাসের শেষ, আমি দেখে ডিলিট করে দিই। এখন সাবস্ক্রিপশন কোথায় পাবো? 
বাড়ি থেকে বেরিয়েই অটো পাবো ভাবিনি। অন্যদিন তাড়া থাকলে আসেনা! আজকে যাবো না জলদি, আজকেই পরপর অটো আসছে সব। আর কি, ধরেই ফেললাম। আজকে যে ব্রেক-আপ হবে, এটা আমি বেশ কিছুদিন ধরে আন্দাজ করতে পেরেছি। আরেহ বাবা, ৪৬টা ব্রেক-আপ! মুখের কথা? ঝামেলার শেষ নেই। সে চায় তুমি ওদের হাজার বাহানাওয়ালা বন্ধুদের মেনে নাও। তাদের সাথেও তুমি বন্ধুত্ব করো। তার বেস্ট ফ্রেন্ডের মাসির ননদের পোষা বিড়াল মারা গেলে তুমিও মন খারাপ করো। এদিকে বাইচান্স কোনওদিন যদি অন্তর থেকে বলে দাও যে তার বেস্ট ফ্রেন্ডকে সেদিন শাড়িতে ভালোই লাগছিল, ব্যাস! তুমি রাশিয়া, উনি ইউ.এস.এ.!
আমার সব প্রেমিকাই একটা প্যাটার্ন হয়। যেমন কিছুদিন আগের ঘটনা...

আমি সবেমাত্র স্নানে ঢুকেছি। মুখে শেভিং জেল। গাল ভর্তি ফেনা। মন্টুর দরজায় ধাক্কা-

- সিড! খোল তাড়াতাড়ি!
- এখন খুলবো না! কোনোমতেই খুলবো না! বেশি প্রেসার এলে বেসিনে করে নে। 
- আরেহ ধুর! প্রেশার আসেনি আমার, তোর ফোন এসেছে।
- কে?
- নীরা!
- বল স্নান করছি।
- বলেছি! বলছে খুব আর্জেন্ট। কেমন হাঁফাচ্ছে!

কোনোমতে গামছা পেঁচিয়ে একগাল ফেনা নিয়ে বের হলাম বাথরুম থেকে। মন্টু আমাকে পাশ কাটিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল। জানতাম প্রেশার এসেছে। ফোনটা কানে নিতেই ওপাশ থেকে
- হ্যালো! হ্যালো! হ্যালো সিড! শুনতে পাচ্ছিস?
এই সিড ডাকটা আমার চেনা। এই ডাকের পরেই আমাকে সিড থেকে বেশ স্যাড হতে হয়।
- হ্যাঁ বল! কি হয়েছে?
- আমার হঠাৎ করে কেমন যেন লাগছে!
- মানেহ? শরীর ঠিক আছে? পিরিয়ড হচ্ছে তো? আমি কিন্তু ভুলিনি লাস্ট টাইম! ইউজ করেছিলাম।
- আরেহ ধুর! আমার কেমন যেন দম আটকে আসছে।
- সেকি! ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছি দাঁড়া এখুনি অক্সিজেন লীড চেয়ে।
- না রে বাবাহ! ঐরকম দম আটকানো নয়...
এরপরের কথা কি হবে আমার জানা। এক্সপেরিয়েন্স! ও ওদিকে বলছে, 
- লাস্ট ডে, তুই যখন বললি...আমাকে যেতে না। আই মিন অভিষেকের সাথে ওই পাবে। আমি জানি, তুই আমার ভালোর জন্যই বলেছিলি। আমার যেহেতু ashtma আছে, হুক্কা টানলে ইনহেলার টানতে হয় আবার, কিন্তু আজ সকালে দেখছি সৃজা, বৈশালী সবাই স্টোরি দিচ্ছে। আমার খুব লো ফিল হচ্ছে। আমি যেতে পারলাম না। তুইও কি আমার এক্সের মতো ওভার পসিসিভ হয়ে যাচ্ছিস? 

এটার কোনও উত্তর হয়? আমার গালের ফেনা ততক্ষণে শুকিয়ে গেছে। মন্টু বেরিয়ে ঠাকুরপুজো কন্টিনিউ করতে গেল। নীরা বলে চললো, আমি ফোনটা স্পিকারে দিয়ে বাথরুমে ঢুকলাম।
(ক্রমশ)

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇




Post a Comment

0 Comments