গুচ্ছ কবিতা
বাসুদেব গুপ্ত
গাছ
হে পিতা ক্ষম মোরে এই শেষবার
কেটে নেব পত্রগুচ্ছ, ছিঁড়ে নেব ফুল
অনেক আকাশে তুমি অনেক জটিলে
হাওয়া ও পাতার প্রেম, বিচ্ছেদ ও ঝরে যাওয়া
ব্যস্ত থাকো, সামাজিক অযাচিত কাজে।
তুমি তো অতীত, আমাদের মত নও ব্যস্ত রক্তপাতে
এই শেষবার
কেটে নিই ফলবান ডাল, আন্দোলিত কুসুমের দেহ
কাল থেকে তুমি হবে কাঠ,
জীবনবীমার টাকা আদায় হলেই,
দেয়ালে ঝুলিয়ে দেব যত্ন করে
তোমার স্মৃতির আসবাব।
শিশু
হাঁটি হাঁটি পা পা
শিশু কথা বলে না
ঐ পাখী ঐ হুস
হচ্ছে না যে মানুষ।
পাঁচ হাজারে কেনা
পাঁচ লাখ না পেলে
কি লাভ, একে কুযোতেই দিই ফেলে।
প্রেম
তাকে আমি রাখিয়া এলেম,
সবুজ নম্র ঘাসে জ্যোৎস্নায় করে যাক স্নান,
নিশিভোর।
কাল ভোরে সে হবে শিশির
আমার রীবক যাক ভিজে,
আরে শালা
বাঘ কি কখনও ঘাড় ভেঙে
নদীতে থাবা কে যায় ধুতে?
কোমরে গুলির মতো সাজিয়ে রেখেছি
সারি সারি প্রেমের আঙুল।
আয়না
আয়না বায়না করবেই
লতানো বধূর মত, ভালো হও, ভালো হও,
জন্জালের মত ঐ দাড়িটি কামাও
ওতে সহজেই লেগে যায় পাপ,
লোভ বাসা করে স্মিত ঐ হাসির আড়ালে।
আমি বলি, তুমি ফের নগ্ন দাঁড়ালে
আমার বেওসা ভালো হবে, হে অন্ধ নারী
চোখ ঢেকে কতদিন দাঁড়িয়ে থাকবে আর
আয়নায় দেখো,
তুমি আর সত্যমেব নয়
তোমারও মুখভরা দাড়ি।
ভোর
সারারাত ঝুলে থেকে ক্রুশে
অন্ধকারে যন্ত্রণার সংগে যুঝে যুঝে
অবশেষে হল ভোর।
তোমাকে কেউ ক্রুশ থেকে নামিয়ে বলবেনা
অনেক কষ্ট পেয়েছেন, বাড়ী চলুন,
মুখ থেকে মুছিয়ে দেবেনা শুকনো রক্তের ধারা
তুমি এখানেই ঝুলে ঝুলে শেষ হবে
কারণ তোমার মনে হয়েছিল এই মানবজনম
ভালবাসায় মোড়া থাক, বেশ্যা থেকে শিশু
ভালো থাক, ঠোঁটে থাক এই ভোরের আলোর মত হাসি
যুদ্ধ নয় ক্ষমা থাক পতাকায় আঁকা।
তোমাকে ক্রুশ থেকে আজও কেউ নামাল না
আজও রক্ত ঝরছে ফোঁটা ফোঁটা সারাদিন সারারাত
আজও ভোর হয়
এখনও পতাকায় আঁকা করোটি কংকাল
এখনও তোমার ঠোঁট অস্পষ্ট কাঁপে
ক্ষমা করে দাও,
শান্তি দাও খুনীর হৃদয়ে
আর কতদিন সে নিজেকেই ক্রুশে ঝোলাবে?
0 Comments