জ্বলদর্চি

দার্জিলিং ভ্রমণ/ কল্যাণ মাইতি



দার্জিলিং ভ্রমণ 

কল্যাণ মাইতি

মিরিক লেপচাজগৎ  

অনেককেই বলতে শুনেছি, দার্জিলিং গিয়ে কি হবে! এর থেকে better, সিকিম গ্যাংটক চলে যাও ,দার্জিলিংয়ে বিশেষ কিছু নেই! তবে কেন জানিনা ,ছোটবেলা থেকেই দার্জিলিংয়ের প্রতি একটা আলাদা টান ছিল। গল্পের বই এ টান বাড়িয়ে ছিল আর দূরদর্শন । " বিদেশ থেকে ফিরলে দেশে কার না ভালো লাগে " প্রসেনজিৎ এর অভিনীত সেই নাচ মনে পড়ে।  সেই প্রথম আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে পাহাড়ের উপরে ওঠা, পাহাড়ের গায়ে অদ্ভুতভাবে আটকে থাকা সুন্দর সারি সারি বাড়ি, পাহাড়ের উপর একটি আস্ত শহরকে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছিলাম।  যখন গেলাম, আবারও মনে দাগ কাটলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এই শহরটি, সেখানকার লোকাল স্ট্রিটফুড এবং রেস্টুরেন্টের খাবার দাবার, সেখানকার ঝলমলে রঙিন খোলামেলা পরিবেশ, সেখানকার অত্যন্ত খাটিয়ে অথচ সহজ-সরল উপকারী লোকজন, যারা নিমেষেই পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে উঠে যায় তরতর করে, একটুও ক্লান্ত না হয়ে , একটুও না হাঁফিয়ে, যাদের মুখে সবসময় একটা সরল হাসি এবং চোখে অদ্ভুত মায়া, যারা আপনাকে ঘোরানোর জন্য রীতিমতো পাগল।

  পাহাড়ের গায়ে আঁকাবাঁকা রাস্তার দু'ধারে অতিকায় লম্বা pine tree, শান্ত, সবুজময় চায়ের বাগান এবং সবশেষে সেই প্রথম বিশাল আকার কাঞ্চনজঙ্ঘাকে নিজের চোখে দেখা মুগ্ধ হয়ে যাওয়া। মনে হয় এই একটু দূরে। সে যে কি ভীষণ সুন্দর অভিজ্ঞতা তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। তাই বেরিয়ে পড়লাম দার্জিলিং ভ্রমণে। সঙ্গে চলুন আপনারাও। কি অদ্ভুত রাস্তা! একপাশে সুউচ্চ পাহাড় আর একপাশে ঢাল। একপাশে আনন্দ আর একপাশে জীবন ধ্বংস ।  একটা বাড়তি উদ্দেশ্য ছিল যা আমি দার্জিলিং গিয়ে জানতে পারলাম। আপনাদের কাছে সেটা বোনাস হতে পারে তাই আপনাদেরকেও পরেই জানাবো।

  হাওড়া থেকে আমরা যে ট্রেনটি ধরেছিলাম সেটা হল কামরূপ এক্সপ্রেস। এই ট্রেনটি সন্ধে ছটায় ছাড়ে এবং ভোর ৫:৫৫ নাগাদ আপনাকে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পৌঁছে দেবে। আমরা সেখান থেকে private car book (fare 2500-3000/-) করে মিরিক লেপচা জগত ঘুরে দার্জিলিং পৌছালাম দুপুর একটা নাগাদ।

  বিকেলে পৌঁছলাম ম্যল-এ। কি সুন্দর অপরূপ পাহাড়ের উঁচুতে একটি বিস্তৃত  জায়গা। অনেক উঁচুতে ওঠার জন্য নিজেকে হালকা হালকা লেগেছিল । আর কিছু সময় অল্প অল্প বৃষ্টি । একমাস আগে যখন  দার্জিলিং ট্রিপটা প্ল্যান করছিলাম তখন হিসাব করে করে দেখলাম সর্বসাকুল্যে আমাদের বরাদ্দ সাড়ে তিন দিন।  একে সময় কম তায় আবার আমার দলের বাকি সদস্যদের প্রথম Queen of Hill and also Sleeping Buddha দর্শন। বিশাল চাপ আমার উপর। কিন্তু চাপ নিতে হলো না । সাড়ে তিন দিনে দার্জিলিং, তিনচুলে, তাকদা, লামাহাট্টা, সিমানা, জোরপোখরি, মিরিক সবই সুন্দর করে দর্শন করালো। আর ভাগ্যদেবতাও সহায় হোলো এতো সুন্দর weather খুব কম পেয়েছি আমি। যদিও পাহাড়ি আতিথেয়তার কথা যতই বলবো কম হবে কিন্তু পাহাড়ের লোকেরা খুব পরিশ্রম করে। নিজেই ট্যুর প্ল্যান করেছি যাতে আমরা সবটুকু উপভোগ করতে পারি । পরের দিন ভোরে  কাঞ্জনজঙ্ঘা টাইগার হিল ।  তারপর বাতাসালুপ । উফ কি সুন্দর দর্শন।  অনেক নীচে একটি পার্ক । যেখানে ঝর্নার সমাহার।  আর জীবনে এই প্রথম মেঘের সঙ্গে কোলাকুলি। সন্ধ্যায় রাস্তার দুপাশে শীতবস্ত্র প্রদশন। আর ছাতা কেনার ভিড়। কিনলাম চা। স্বাদ ও গন্ধ উপভোগ করে। খুব তাড়াতাড়ি আবার ফিরে আসছি কাঞ্চনজঙ্ঘার কোলকে সাথে নিয়ে।

পরের পর্বে ফের দেখা হচ্ছে, বন্ধু!

লেখক পেশায় বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক। নেশা- ভ্রমণ।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments