জ্বলদর্চি

No Time To Die : বিদায় বন্ড, বিদায় ক্রেগ / রাকেশ সিংহ দেব

No Time To Die : বিদায় বন্ড, বিদায় ক্রেগ

পরিচালক - ক্যারি জোজি ফুকুনাগা 
অভিনয় - ড্যানিয়েল ক্রেইগ, রামি মালেক, লিয়া সেডক্স, লশানা লিঞ্চ, বেন হুইশ, নাওমি হ্যারিস, জেফরি রাইট, ক্রিস্টোফ ওয়াল্টজ, রালফ ফিয়েন্স, আনা ডি আরমাস প্রমুখ। 

মুক্তি - ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ 

রেটিং- 4/5

সম্ভবত এটিই  সবথেকে প্রতীক্ষিত বন্ড ফিল্ম। স্পেক্টারের পর বিদায়গ্রহণের বদলে যখন আরো একটি ছবির ঘোষণা দিয়েছিলেন ড্যানিয়েল ক্রেগ ঠিক তখন থেকেই ভক্তরা গুনতে শুরু করেছিলো অপেক্ষার প্রহর। ২৫তম জেমস বন্ড ছবি নিয়ে দর্শকের উৎসাহ ও প্রত্যাশা ছিল আকাশছোঁয়া। তার ওপরে এটিই জেমস বন্ড হিসেবে ড্যানিয়েল ক্রেগের পঞ্চম ও শেষ ছবি। করোনার কবলে পড়ে ছবির মুক্তি পিছিয়েছে দেড় বছর। কিন্তু দেরিতে মুক্তি পেলেও দর্শককের চাহিদার চেয়েও বেশি কিছু থাকলো জেমস বন্ডের নতুন অ্যাডভেঞ্চারে। একটা প্রারম্ভিক সুত্র ধরে গল্পের শুরুটাকে গাঁথা হয়েছে বেশ সুন্দরভাবে। এরপর আস্তে আস্তে তা ডেভেলপ করা হয়েছে। স্টোরি ট্রিটমেন্ট দারুণ এবং মুভির গল্প একটা গতি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ায় দর্শকদের খেয়াল থাকেনা এটি সব চাইতে দীর্ঘ বন্ড ফিল্ম। প্রথম দৃশ্যেই পুরো ছবির ঝলক পাওয়া যায়। কাজ থেকে অবসর নিয়েছে জেমস বন্ড। এম আই সিক্স অপারেশনের দায়িত্ব তুলে দিয়েছে নতুন ডবল ও এজেন্ট নোমির হাতে। হঠাৎ করেই এসে পড়ে বিপদের কালো মেঘ। বিজ্ঞানী ভালতো অব্ৰচেভকে খুঁজছে ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিস এম-১৬ ও আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিস এ মামলায় জড়াতে চায় না জেমস বন্ডকে। বিপদের সঙ্গে যার লুকোচুরি স্বভাব, সে কি বিপদ এড়িয়ে চলতে পারে? ঘটনার ঘনঘটায় জেমস বন্ড জড়িয়ে পড়ে 'প্রজেক্ট হেরাক্লিস’-এর রহস্য উদ্ঘাটনে। যত এ মামলার সঙ্গে এজেন্ট জিরো জিরো সেভেন জড়িয়ে পড়ে ততই বেড়ে যায় তার সর্বস্ব হারানোর সম্ভাবনা। 

  দারুণ কয়েকটা একশন সিকোয়েন্সে আছে যেগুলো বেশ থ্রিলিং এবং উপভোগ্য।

  জেমস বন্ড চরিত্রে ড্যানিয়েল ক্রেগ বরাবরের মতই নিজস্ব মহিমায় উজ্জ্বল। কঠোরতা, আপনজনের স্মৃতিকে বয়ে বেড়ানো এবং ক্ষেত্র বিশেষে হাস্যরস – সবকিছু মিলিয়ে ড্যানিয়েল ক্রেগই সিনেমার প্রাণ। অন্যদিকে প্রধান ভিলেন চরিত্রে রামি মালেক ভালো অভিনয় করেছেন। এজেন্ট পালোমার চরিত্রে  আনা দে আরমাসের মারপিটের সিকোয়েন্সেটা বিশেষভাবে নজর কাড়ে দর্শকদের। কিউবাতে বন্ডের সাথে কাঁধ মিলিয়ে তার সেই ছন্দময় অ্যাকশন দৃশ্যটি অসাধারণ লেগেছে। আরমাস এবং বন্ডের সেই অ্যাকশন দৃশ্যকে অনেকটা নাচের মতই মনে হয়। আশা করা যায় জেমস বন্ডের ২৬ অথবা ২৭তম সিনেমায় পূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে আরমাসকে। নতুন ‘০০৭’ এজেন্ট চরিত্রে লশানা লিঞ্চ মোটামুটি ভালো অভিনয় করেছেন। এছাড়া সিনেমাটির অন্য শিল্পীরা নিজেদের চরিত্রে মোটামুটি ভালো অভিনয় করেছেন।

  কথায় আছে না, শেষ ভাল যার সব ভাল তার। 'নো টাইম টু ডাই' এর শেষটা যেভাবে করা হয়েছে একটা লম্বা জার্নির শেষ এর থেকে ভাল হতে পারেনা। যথেষ্ট আবেগপূর্ণ বটে; যা বন্ড প্রেমী অনেকেরই হয়তো পছন্দ হবে না। তবে বিদায় বেলায় কম বেশি সবারই খারাপ লাগবে। এই ছবির বড় সম্পদ, হান্স জ়িমারের আবহ মিউজ়িক। বিলি আইলিশের কণ্ঠে ছবির থিম সং ‘নো টাইম টু ডাই’ আলাদা আবেগ তৈরি করে দেয়। সেই আবেগের রেশ থেকে যায় শেষ পর্যন্ত।

  বিদায় বেলায় ড্যানিয়েল ক্রেগের জন্য কিছু কথা বলতে চাই। আমি জেমস বন্ডকে চিনেছি পিয়েরস ব্রসন্যানের হাত ধরে। পরবর্তীতে আমি সব অভিনেতাদের অভিনীত সিনেমাগুলো দেখেছি। ক্রেগের আগের সবার থেকে ক্রেগকে একদম আলাদা এক ঘরে রাখা যায়। আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে ইয়ান ফ্লেমিং এর তৈরী বিখ্যাত এই চরিত্রের সবথেকে একুরেট প্রজেকশন করেছে ড্যানিয়েল ক্রেগই। কলেজে পড়া অল্প বয়েসে মনে হত জেমস বন্ড মানে মারকাটারি পৌরুষের আগুন যার তাপে পুড়ে মরে সুন্দরীর দল। গ্ল্যামার, বিকিনি গার্ল আর গ্যাজেট। সেই মোহ মায়ার দুনিয়ায় প্রথম যখন ড্যানিয়েল ক্রেগকে বন্ড হিসেবে দেখি সত্যি বলতে মোটেই ভালো লাগেনি। এ কেমন নীল চোখের ক্রু কাট বন্ড! গ্ল্যামারাস গোয়েন্দা কম শিতল স্নায়ুর খুনি লাগে বেশি। ডাই মার্টিনির অভাবে সস্তার বারে দেশি মদ খেয়ে ফেলে অনায়াসে। এ পুরো মাস কোনও ক্লাস নেই। পরে আমার বয়স আর ড্যানিয়েল ক্রেগের জেমস বন্ডের ছবির সংখ্যা বাড়তে বাড়তে উপলব্ধি করি বন্ড কোনও সুপারহিরো নয় রক্ত মাংসের মানুষ। সেও প্রেমে পড়ে, প্রেমিকার মৃত্যুতে পাগল হয়, আঘাতে রক্ত ঝরে ব্যাথা পায় সর্বোপরি আবার প্রেমে পড়ে। এই অন্যধারার চরিত্র চিত্রায়নের জন্য হয়তো অধিকাংশ ভক্তদের কাছেই তার মাত্রাটা ভিন্ন। আর এই মানবিক আবেগ দিয়েই শেষ ছবিটায় যেনো বন্ড প্রেমী সহ সকল সিনেমাপ্রেমীদের হৃদয়ে  দাগ কেটে দিয়ে গেলেন তিনি। ক্লান্ত গোধূলির রাঙা আলো  যেভাবে শান্ত করে দিনের কর্মচঞ্চল প্রাণ। "I'm going to tell you a story about a man. His name was Bond. James Bond." এটি ছবির শেষ ডায়ালগ। হ্যাঁ শেষ থেকেই আবার শুরু হোক কারণ শেষ হলেও যা দেখলাম তার রেষ রয়ে যাবে আজীবন। 

রেটিং

5 - অসাধারণ 
4 - বেশ ভালো 
3 - ভালো 
2 - দেখতে পারেন
1 - না দেখলেও চলবে

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇


Post a Comment

0 Comments