জ্বলদর্চি

সানদকু/ব্রেক আপ উপত্যকা পর্ব ৩/রাজ অধিকারী

সানদকু
রাজ অধিকারী

ব্রেক আপ উপত্যকা/ পর্ব ৩

৩.
(ক্যামেরা না গুজব! সবার মাথায় চড়ে বসছে! অহেতুক মন্টুর কথাও শুনুন আপনারা। একটি থার্ড পারসন ও আগামী ঘটনার ধারাভাষ্যকার।)

কি? মনে হচ্ছে না, আজই এদের ব্রেক-আপ হয়ে যাবে? দু'জন একেঅপরকে সেরা সেরা কামব্যাক ও পাঞ্চলাইন দিয়ে উড়িয়ে দেবে। আর আপনারা এই লেখার স্ক্রিন অ্যাড‍্যাপশন দেবে বাহবা দেবেন, পাইরেসি করে ক্লিপ নামিয়ে আপলোড দিয়ে ভাইরাল করে দেবেন। কিস্যু হবে না এইরকম। আমি বলছি এবার ঘটনাটা। ওহ! বাই দ্য ওয়ে, আমিই মন্টু। মানে আমি মন্টু নই। মন্টু আমার বাবা। আমি মন্টুর ছেলে। কিন্তু নিজের পুন্ড্রিকক্ষ পুরকায়স্থ বলে ফালতু কয়েকটা শব্দ বাড়িয়ে কি লাভ।
যাই হোক, এদের কপাল তো আমার মতো নয়। টিন্ডারে একবার একটা মেয়ের সাথে ম্যাচ হয়েছিল। চুমকি চৌধুরীর মতো সুন্দর দেখতে। বাড়িতে ডেকেছিল মেয়েটা। আমিও তাপস পাল মতো সেজে গিয়েছিলাম। সে গল্প পরে একদিন বলবো যদি লেখক আমাকে নিয়ে লেখার অবসর পায় একটু।
যাই হোক, নীরা বাবার এক মেয়ে। একটু-আধটু আহ্লাদী হওয়া স্বাভাবিক। এর আগে মাত্র একটা প্রেম করেছিল; পাড়ার প্রসিদ্ধ সমাজসেবক ও গায়ক তলোয়ার তানসেনের সঙ্গে। তার গানের ভিডিও ভাইরালও হয়েছিল। কিন্তু ভিডিওতে গ্রাফিক ভায়োলেন্সের জন্যে জেলে গেছে এখন। অগ্যতা ব্রেক-আপ করতেই হয়। তাছাড়া সিদ্ধার্থ খানিকটা বাড়িয়েই বলে ওটা। আসলে ও নিজেও তো ছোট শহরের ছেলে। ৫ বছর আগে সেই শিলিগুড়ি থেকে এসেছিল পড়তে। এই রাজ্যে চক্রব্যূহে এখনও পড়েই যাচ্ছে। 
সিদ্ধার্থ বেরিয়ে যাওয়ার পরে আমিও বের হলাম। ওরা দু'জন যে কলিঙ্গ ক্যাফেতে যাচ্ছে, আমি সেখানেই পার্ট টাইম ওয়েটারের কাজ করি। 
অটো থেকে নামতেই দেখি, সিড ক্যাফের সামনে একটু আড়াল করে দাঁড়িয়ে আছে। ক্যাফের বাইরে কাঁচের দেওয়াল দিয়ে নীরাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বেচারি কতক্ষণ ধরে একা বসে আছে। আমি ডাকলাম,

- এই সিড! 
- ইইইইইই! আস্তে ইডিয়ট! আস্তে!
যতটা সম্ভব গলা নামিয়ে বললাম,
- ভেতরে যাচ্ছিস না কেন?
- ভেতরে ভিক্টরিয়া বসে আছে, দেখছিস না?
- নীরার তো বসে থাকারই তো কথা। কিন্তু ওর একার নয়, সঙ্গে তোরও বসার কথা। 
- আরে নীরা নয়! ভিক্টরিয়া!
- অ্যা!
- আমার ২ নম্বর এক্স, রিয়া! আমি ভিক্টরিয়া বলে ডাকতাম।
আমি ব্যাপারটা বুঝলাম। তারপর বললাম,
- তো রিয়াই ওটা! যা ভেতরে, কামড়ে দেবে না তোকে।
- কামড়ে দেওয়ার মতো সম্পর্কও নেই আর। আগে পারলে আমার ঘাড়ের শিরা ছিঁড়ে দিত কামড়ে।
- শিরা ছেঁড়ার ভয়ে তুই কি নীরাকে দাঁড় করিয়ে রাখবি?
- ভাই বাজে কেস হয়ে যাবে নীরার সামনে। 
- হলে হবে! তুই তো এমনিও ব্রেক আপ করছিস। 
- রিয়ার সামনে ব্রেক আপ করলে ইমেজ থাকবে না ভাই।
- ইমেজ কেন থাকবে না? তুই কি ওই ধর্মের ভগবান নাকি!
- ধের!
সাহস নিয়ে আড়াল থেকে সামান্য বেরিয়ে এলো সিড। আমিও ওর পেছন পেছন ঢুকলাম ক্যাফেতে। রিয়ার টেবিল পার করে সিড হাত দিয়ে মুখটা সামান্য ঢেকে নীরার সামনে গিয়ে বসলো। নীরা ততক্ষণে খিস্তির লিস্ট বানিয়ে রেডি। এরপর থেকে বাকিটা যা হলো, কমেন্ট্রি করলে খারাপ দেখাবে না।
আপনারা দেখতো পাচ্ছেন, না পড়তে পারছেন। না মানে পড়বেন এখুনি। পড়ুন, নীরার ব্রেইন থেকে অতিবেগুনী খিস্তিসমগ্রের একেকটি উচ্চারণ গলার স্বরের সাথে সঙ্গম করে জিভে ধাক্কা খেয়ে বেরিয়ে আসতে যাচ্ছে। এই! এই!   একি! সামনের পক্ষের আক্রমণ আন্দাজ করতে পেরে সিড হঠাৎ করে নিজের দু'টো হাত দিয়ে নীরার চেপে ধরলো,
- বেবি! I am really sorry! অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছিল বল। আমি আসলে একটাও অটো পাচ্ছিলাম না আজ। 

সিদ্ধার্থ সরকারের এইরকম অকস্মাৎ ডিফেন্সে নীরা মুখে ইতিমধ্যে বিস্ময়ের ছাপ। নীরা মুখ থেকে কোনও কথা সরছে না। সিডের মতো মিসোজিনিস্টের মুখ থেকে প্রথমবার বেবি ডাক শুনে নীরার ভেতরের বেবি বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। কিন্তু লাস্ট টাইম অ্যাবরশন করিয়ে নেওয়ায় বেবির বেরিয়ে আসার কোনও চান্স নেই। সিড আবার নিজের নতুন কৌশলে ফ্রন্টফুটে খেলার জন্যে রেডি। মুখ থেকে আবার বেরিয়ে আসছে কিছু বেবি-বাবু টাইপের আদো আদো ভাষা...এই! একি! খোঁচা মারছে কে আমাকে? ওহ ম্যানেজার। এক সেকেন্ড দাঁড়ান। আমি এপ্রোনটা পড়ে নিই। অর্ডার নিতে হবে। 
হ্যাঁ ডান! চাপ নেই। কমেন্ট্রি থামবে না। আমি এগিয়ে যাচ্ছি নীরা ও সিডের টেবিলের দিকে। পেছন থেকে রিয়া ডাকছে অর্ডার করার জন্যে। আমি কফি হাউসের বেয়ারার মতো এড়িয়ে এগিয়ে চললাম। সিডের মুখ থেকে আরেকবার বেবি বের হতে যাবে, নীরা কথার রাশ টেনে যতটা সম্ভব নিজমূর্তি ধারণ করে বলল,
-  শোন সিড! একদম ন্যাকামি করবিনা। তোর মতো ছেলের সাথে এখানে রোম্যান্স করবো বলে আমি আসিনি। একে তো সময়ে আসিস না। সময়মতো কিছুই হয়না তোর। যাই হোক, শোন!
-  না নীরা, তুই শোন আমার কথা, প্লিজ!
নীরাকে কোনওভাবেই এই ম্যাচের হাল ধরতে দিচ্ছে না সিড। আবার নিজের দিকে বল টেনে সিড বলে চলল,
- সরি নীরা। আমি জানি আমি খুব খারাপ ছেলে। আমার সাথে থাকা যায়না। এটাও জানি যে তুই আজ সম্পর্কটা শেষ করতে এসেছিস। 
- এই বাঁড়া ওয়েটার! কানে কি গুঁজে রেখেছো? ডাকছি শুনতে পাও না?
গল্পের টার্নিং পয়েন্ট। আমার পেছনে কখন রিয়া নিজের টেবিল ছেড়ে এসে দাঁড়িয়ে কেউ খেয়াল করেনি। এক সেকেন্ড দাঁড়ান। আমি ক্যামেরাটা ম্যানেজারের মাথায় পড়িয়ে আসি। ফোর্থ ন্যারেটিভ। ফোর্থ ওয়াল।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇



Post a Comment

0 Comments