জ্বলদর্চি

ব্রেক আপ উপত্যকা(শেষ পর্ব)/রাজ অধিকারী

সানদকু 
রাজ অধিকারী

ব্রেক আপ উপত্যকা
শেষ পর্ব

৪. 
(ক্যামেরা বলে কি সম্মান নেই নাকি। এখন আবার ম্যানেজারের মাথায়। যাই হোক, বাকিটা পড়ুন।)

আমি ভাই ম্যানেজার মানুষ। অত গুছিয়ে কমেন্ট্রি করতে পারছি না। যা হচ্ছে থার্ড পারসন ন্যারেটিভে বলছি। 

রিয়ার রণমূর্তি দেখে মন্টু ঘাবড়ে গেল। কিন্তু আরও বেশি ঘাবড়ে গেছে সিড। নীরার কাছে কন্টেক্সট কম। বুঝতে পারছে না বেচারি। মন্টু রিয়ার দিকে ঘুরতেই রিয়া চিনে ফেলে মন্টুকে। 
- আরেহ! মন্টু! তুই কবে থেকে কাজ করছিস আবার এখানে। সিডের সাথে আগে যখন আসতাম, দেখিনি তো। 
- না মানে..
- সিড কোথায়? 
- না মানে...
বলতে বলতে মন্টু সিডের দিকে তাকায়। রিয়াও মন্টুর চোখ ফলো করে সিডকে দেখতে পায়।
- সীইইইড! এখানে কি করছিস!
- আমি আসলে...
সিড কি বলবে বুঝে পাচ্ছে। আজকে শিরে সংক্রান্তি ওর। সামনে হবু-এক্স। পাশে ফর্মার এক্স। রিয়া বলে চলে,
- খবর কি তোর? ব্রেক আপের পর আজ ২ বছর হয়ে গেল। এখনও কি রাগ পুষে রেখেছিস। আর তো যোগাযোগই রাখলি না।
- আমি আসলে..
- ধুর! কি আমতা আমতা করছিস! এখানে কি করছিস বললিই না তো।
- এখানে আসলে...
- একা এসেছিস? 
- না আসলে...
বলতে বলতে সিড নীরার দিকে তাকালো। রিয়াও এতক্ষণে নীরাকে খেয়াল করলো। নীরা এতক্ষণ নীরব দর্শকের মতো প্রমাদ গুনছিলো। এইবার পেয়েছে। সুযোগ। রিয়া সৌজন্য বিনিময় করতে যাচ্ছিল, নীরা তার আগেই চেয়ার থেকে উঠে খপ করে রিয়ার হাত চেপে ধরে। মুখ-চোখে একটা উচ্ছাস নিয়ে বলে,
- এই তুমি সিডের এক্স তো?
- হ্যাঁ মানে..
- আমিও তো এক্স!
- তুমিও এক্স? কিন্তু ওর সাথে এখানে?
- আমি এই সবেমাত্র এক্স হলাম। 

এইবার সিডও দাঁড়িয়ে পড়েছে নীরার কথা শুনে। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
- তুই আমার এক্স হলি মানে?
- মানে আবার কি! আমি ব্রেক আপ করতেই এসেছিলাম।
- কিন্তু করিসনি তো এখনও!
- করিনি তো কি হয়েছে। তোর তো অলরেডি এত ব্রেক আপ হয়েছে। একটা না হয় না বলে হলো। 
- কিসব আবোল তাবোল বকছিস!
- কোনও আবোলতাবোল বকছি না। আগে তাও মনে হচ্ছিল মুভ-অন কি করে করবো। এখন রিয়ার সাথে দেখা হয়ে ভালোই হলো। এক্সপেরিয়েন্স শোনা যাবে। 
- কিন্তু আমার কি হবে? আমি তো আর তোর এক্স তলোয়ার তানসেনের সাথে দেখা করতে জেলে যেতে পারবো না!
- সেটা তোর ব্যাপার। তাছাড়া মন্টু আছে তো। ঠিক কাঁধ দেবে তোকে কাঁদার জন্যে। আচ্ছা রিয়া, তুমি ব্রেক-আপের পর মুভ অন করলে কীভাবে?

রিয়া ও মন্টু এতক্ষণ শুধু শুনছিল; সঙ্গে ক্যাফেতে বসে থাকা প্রত্যেকটা কাস্টমার। মন্টুর আজকেই শেষদিন এই ক্যাফেতে ওয়েটার হিসেবে। এবার কথোপকথনে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেল রিয়া। রিয়া বলল,

- আমাকে আসলে নিরুপায় হয়ে ব্রেক-আপ করতে হয়েছিল। আমি একদিন ওর সাথে মেক-আউট করার পর বুঝতে পারি আমি আসলে লেসবিয়ান। 
- অ্যা! 
- হ্যাঁ। একটু দেরীই হয়ে যায় বুঝতে। কিন্তু তুমি চিন্তা করো না। আমি ও বাবলি আছি তোমার জন্যে। 

রিয়ার পছন্দ জানতে পেরে নীরা বেশ হতাশ হয়। সিড সেই সুযোগে বলে,

- রিয়া প্লিজ, আমাদের মাঝে পড়িস না। আর মন্টু তুই কেন দাঁড়িয়ে আছিস এখানে হাবার মতো। কাজে যা। আর দ্যাখ নীরা ব্রেক আপ চাইলেই ব্রেক আপ করা যায়না।
- যায়না মানেহ? তোর ইচ্ছেমতো? কেন যায়না!
- যায়না কারণ...
- কি কারণ!
- আরেহ বলতে দে!
- কত বলবি তুই! কি বলার আছে তোর! ওভার-পজেসিভ, মিসোজিনিস্ট, পুরুষতন্ত্রের ধ্বজাধারী...
- নীরা আই লাভ ইউ!

নীরাকে থামিয়ে প্রায় চিৎকার করে কথাটা বলে ওঠে সিড। রিয়া নিজের টেবিলের দিকে এগিয়ে যায়। মন্টু এপ্রোন দিয়ে চোখ মোছে। নীরার ফর্সা গালদু'টো রাগ-অভিমান থেকে লজ্জার লাল রঙ নিচ্ছে। চোখের দৃষ্টি নরম হতে শুরু করে। আপ্রাণ চেষ্টা করছে নীরা রাগটা ধরে রাখার। কিন্তু সিড ক্রমশ এগিয়ে আসছে নীরার দিকে। 
এই কেস করেছে! কিস করলে চাপ হয়ে যাবে। ক্যাফেতে সিসিটিভি আছে। মালিক বয়স্ক। থামাবো? আমি তো ম্যানেজার। কিন্তু এই মুহূর্তে থামালে কিউপিড তীর মেরে মেরে আমাকে শরশয্যায় শুইয়ে দেবে। না...না... সিড এগোচ্ছে। নীরা সিডের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ লাল হয়ে ছলছল করছে। মন্টু এপ্রোনে নাক ঝাড়ছে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে। 
সিড নীরার কপালে চুমু খেল। নীরা সিডের বুকে মাথা গুঁজে জড়িয়ে ধরলো। লম্বা লম্বা নিঃশ্বাসে পিঠটা ধীরে ধীরে উঠছে নামছে। সিডও জড়িয়ে ধরলো। পুরো ব্যাপারটা এক্সট্রিম ক্লোজআপে স্লো মোশনে হচ্ছে। সিড নিজের মুখের থেকে নীরার চুল থুঃ থুঃ করে বের করলো। সেটাও স্লো মোশনে। ধীরে ধীরে আলো কমে আসছে ক্যাফের। কে পর্দা নামাচ্ছে আবার! চোখের সামনেটা অন্ধকার হয়ে এলো। 
মন্টু কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে রইলো।


জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇



Post a Comment

0 Comments