জ্বলদর্চি

ছোরি : গল্প বলে ভূতের চেয়ে ভয়ঙ্কর মানুষদের /রাকেশ সিংহ দেব

ছোরি : গল্প বলে ভূতের চেয়ে ভয়ঙ্কর মানুষদের

 রাকেশ সিংহ দেব

পরিচালক - বিশাল ফুরিয়া
অভিনেতা - নুসরত ভারুচা, সৌরভ গোয়েল, মিতা বশিষ্ঠ, রাজেশ জয়েশ। 
মুক্তি – ২৬ নভেম্বর,২০২১। অ্যামাজন প্রাইম। 

রেটিং – 3/5

বলিউড বিভিন্ন জঁরার সিনেমা নির্মাণে মুন্সিয়ানা দেখালেও, হরর ঘরানার ছবির সাথে যেন তার ছত্তিশ কা আখড়া। হাতে গোনা কিছু মুভি ছাড়া হরর মুভির নামে বলিউড কেবল ছড়িয়েছে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই একই গতের কাহিনী, মুভি জুড়ে অপ্রাসঙ্গিক যৌনতা ও অশ্লীলতা, খাপছাড়া চিত্রনাট্য, বাজে পরিচালনা ইত্যাদি সমস্যায় জর্জরিত বলিউডের হরর মুভিগুলি। প্রায় সময়ই হরর সিনেমার মোড়কে দর্শকদের উপহার দেয়া হয়েছে বস্তাপচা কন্টেন্ট, যা নিয়ে সমালোচনার কোনো অন্ত ছিল না।

২০১৮ সালে মুক্তি প্রাপ্ত দুই সিনেমা 'পরী' ও 'তুম্বাড়' একশো আশি ডিগ্রি পাল্টে দিয়েছিল বলিউডের হরর ঘরানার চিরাচরিত চিত্রপট। এরপর আবার হরর মুভিপ্রেমীদের দীর্ঘ অপেক্ষা। সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘ডেবুক’ দেখে যখন হতাশ দর্শক সেই সময় আশা জাগালো আমাজন প্রাইমে মুক্তি পাওয়া ‘ছোরি’। ছোরি কেবল একটি হরর মুভি নয়, এটি সমাজের মাঝে লুকিয়ে থাকা ভয়ঙ্কর কুপ্রথার গল্প বলে। যা মনে করিয়ে দেয় ভূতের চেয়েও মানুষ বেশি ভয়ঙ্কর। 


গল্প শুরু হয় এক মধ্যবিত্ত সুখী দম্পতিকে কেন্দ্র করে। আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা সাক্ষীর সুখী দাম্পত্য হেমন্তের সঙ্গে। এদিকে হঠাৎ একদিন ব্যবসার জন্য ধার নেওয়া টাকা শোধ করতে না পারায় হুমকি দেওয়া হয় হেমন্তকে। পাওনাদারদের থেকে বাঁচতে নিরিবিলি জন মানুষহীন এক জায়গায় গা ঢাকা দেয় সাক্ষী-হেমন্ত। পাওনাদারদের টাকা জোগাড় হলেই ফিরে যাওয়াই ছিল তাদের প্ল্যান। কিন্তু তাদের ড্রাইভারের ছোট ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেয় সাক্ষী আর হেমন্ত। সেখানে তাদের সেবা যত্ন করে ড্রাইভারের স্ত্রী ভান্নো দেবী। আখের ক্ষেতের মাঝে জন মানুষহীন এলাকার বাড়িতে মানিয়ে নিতেও কষ্ট হয় সাক্ষীর। এখানে এখনও সেই পুরনো রীতি চলে। স্বামীর খাবারের পরেই স্ত্রী খেতে পাবে। স্বামীর নাম ধরে ডাকাটাও এদের কাছে পাপ। কিন্তু উপায় নেই, জীবন বাঁচাতে হলে এখানে থাকতেই হবে। এরমাঝে টাকা জোগাড় করতে হেমন্ত শহরে যায়। এরপর থেকেই শুরু হয় সাক্ষীর সাথে কিছু অদ্ভুত সমস্যা। তিনটা বাচ্চাকে দেখতে পায় সাক্ষী। কিন্তু তাদের সাথে কথা বলতে গেলেই তারা পালিয়ে যায়। সাক্ষী বার বার চেষ্টা করেও তাদের ধরতে পারে না। কিন্তু ভান্নো দেবী তাকে বার বার নিষেধ করে ওই বাচ্চাগুলোর কাছে না যেতে। এই নিয়ে ওদের দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। ভান্নো দেবীর আচরণ কেমন যেন সন্দেহজনক মনে হয় সাক্ষীর। ভান্নো দেবীর ছেলের বউকে দেখে সন্দেহ আরও তীব্র হয়। হেমন্ত যখন বাড়ি ফিরে আসে তখন সে হেমন্তকে বলে এখানে কোনো ঝামেলা আছে, এখানে সে আর থাকবে না। হেমন্ত সাক্ষির কথা মেনে নিয়ে পালাতে যায় কিন্তু ড্রাইভার হেমন্তকে আঘাত করে। আর সাক্ষীকে অজ্ঞান করে বেঁধে রাখে। সাক্ষীকে শোনায় এই বাড়ির অদ্ভুত এক ভুতুড়ে ঘটনা। তবে  ড্রাইভার আর ভান্নো দেবী কি চায় সাক্ষী আর হেমন্তের কাছে? আর এই বাড়ির ভূতুড়ে রহস্যই বা কী? সাক্ষী আর হেমন্তের শেষ পরিণতিই বা কী? এইসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে অ্যামাজন প্রাইমের নতুন সিনেমা ছোরিতে। 


পরিচালক বিশাল ফুরিয়ার পরিচালনায় এই সিনেমায় মুখ্য ভুমিকায় অভিনয় করেছেন নুসরাত ভারুচা, মিতা বশিষ্ঠ, রাজেশ জয়সে ও সৌরভ গোয়েল। বহুদিন পর একটি দারুণ চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেল দুঁদে অভিনেত্রী মিতা বশিষ্ঠ। ভান্নো দেবীর চরিত্রে মারকাটারি  মিতা বশিষ্ঠের হিমশীতল রহস্যময় পারফর্মেন্স দর্শকদের মুগ্ধ করবে। গ্ল্যামারাস রোলের বাইরে বেরিয়ে অন্তঃসত্ত্বা সাক্ষীর চরিত্রে সত্যিই ভালো অভিনয় করেছে নুসরত ভারুচা। ছক ভাঙে চরিত্রে অভিনয়ের চ্যালেঞ্জে তিনি ভালো নম্বর নিয়েই পাশ করলেন। হেমন্তের চরিত্রে সৌরভ গোয়েলও যথাযথ। মরাঠি ছবি লাপাচ্ছাপির দারুন হিন্দি রিমেক করেছেন পরিচালক বিশাল ফুরিয়া।

এই ছবির মেঠো প্রেক্ষাপট ছবিটিকে যেন আরও বেশি করে বাস্তব করে তুলেছে। দুর্ধর্ষ ক্যামেরার কাজ ছোরি-র বাড়তি পাওনা। ক্যামেরার কারসাজি ভয়ের বাতাবরণ বাড়িয়ে দেয়। ছবিতে এমন বেশ কয়েকটি দৃশ্য রয়েছে যা একই সঙ্গে আপনাকে ভীষণ রাগিয়ে দেবে আবার মনের কোণে কোথাও না কোথাও দারুণ যন্ত্রণা অনুভব করবেন। একটি দৃশ্যের কথা বিশেষভাবে বলতে হয় যেখানে গ্রামের মধ্যে শুকিয়ে যাওয়া একটি কুয়োর মধ্যে মৃত শিশুদের দেহের স্তূপের দৃশ্য  দর্শকদের শিরদাঁড়া দিয়ে হিমস্রোত বইয়ে দেবে। ভয় না পেলে আপনার পুরো পরিবারকে নিয়ে দেখতে পারেন এই হরর মুভিটি। বলে রাখা ভালো এটা একটা ফ্যামিলি মুভিও বটে। 

রেটিং
5 – অসাধারণ
4 – খুব ভালো
3 – ভালো
2 – দেখতে পারেন 
1 – না দেখলেও চলবে

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇


Post a Comment

0 Comments