জ্বলদর্চি

প্রয়াত চিত্রশিল্পী ওয়াসিম কাপুর। শ্রদ্ধা ও স্মরণে কলম ধরেছেন লেখক, শিল্পী, শুভানুধ্যায়ী।

প্রয়াত চিত্রশিল্পী ওয়াসিম কাপুর। 
শ্রদ্ধা ও স্মরণে কলম ধরেছেন লেখক, শিল্পী, শুভানুধ্যায়ী। 


২০১৩ সালে জ্বলদর্চির বিশেষ সংখ্যার বিষয় ছিল 'কেন লিখি' ২য় খণ্ড। চিত্র পাওয়ার আশায় ফোন করতেই সম্মত হলেন। এত সহজে! বিস্ময় কাজ করেছিল খুব। কারণ, তিনি এর আগে কোনও দিন জ্বলদর্চিতে ছবি দেননি, সম্ভবত জ্বলদর্চির কোনও সংখ্যাও পূর্বে দেখেননি। আমন্ত্রণপত্র পাঠালাম। তিনি ফোনে জানালেন পত্রের প্রয়োজন ছিল না। সঠিক সময়েই তাঁর আঁকা ছবি পাঠিয়েছিলেন। সেই শুরু। এরপর একে একে প্রকাশ পায় জ্বলদর্চির 'বিশ্ববোধ', 'প্রথম লেখা', 'দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ সমালোচনা', 'লেখকের পাঠক সত্তা' বিশেষ সংখ্যায় তাঁর আঁকা ছবি। পত্রিকা হাতে পেয়ে দিতেন পরামর্শ। ভালো বাসতেন লিটল ম্যাগাজিন। তাঁর ছবিতে ধরা পড়তো সমকাল। ছবি চাইলে তিনি বলতেন, "পাঠাচ্ছি, এই সময়ের ওপর আঁকা, বেদনার ছবি যন্ত্রণার ছবি"। তাঁর সেই স্বর, সেই আন্তরিকতা, সেই 'সময়ের বেদনা' আজ আরও গভীর হয়ে উঠছে, তাঁর চলে যাওয়ায়। (নিচের ছবিটি প্রকাশ পেয়েছিল ২০১৯ সালে 'লেখকের পাঠক সত্তা' বিশেষ সংখ্যায়।) -- সম্পাদক, জ্বলদর্চি।

চিত্রশিল্পী ওয়াসিম কাপুর(১৯৫১-২০২২)
শ্রদ্ধা ও স্মরণে কলম ধরেছেন লেখক, শিল্পী, শুভানুধ্যায়ী। 


অসিত পাল
(বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী)

ওয়াসিম রিয়াজ কাপুর, আমি ডাকতাম ওয়াসিম বলেই, দেখলেই জড়িয়ে ধরা তার চাই। আমার চেয়ে সামান্য ছোটো, বন্ধুত্ব ছিল গলায় গলায়। ১৯৬৭ সময়ে ও তখন ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজে শিক্ষারত সন্ধেবেলায় অ্যাকাডেমি স্কেচ ক্লাবে দেখা হতো মঙ্গল আর বৃহস্পতিবার, সেই কালো রঙের আপাদ মস্তক একই পোশাক, হাতে স্ক্র্যাচ। পা ভেঙে বসতে অসুবিধে বলে পা সোজা করেই খুব কষ্ট করে ডান দিকে বসত। লাইফ ড্রইং যখন করত সব বড় বড় কাগজে, আমিও বড় কাগজে করতাম সঙ্গে ছোটো খাতায় স্কেচ করতাম। এই নিয়ে দুজনের মধ্যে চলত মিষ্টি প্রতিযোগিতা যা আজীবন ও মনে রেখেছে।  দেখা হলেই বলতো, হোগা কুছ ঐসা, উস টাইম হামকো বহুত আচ্ছা থা, ও আয়েগা নেহি। আমি বলতাম কিছুই আর সেভাবে ফিরে আসে না ওয়াসিম কেবল স্মৃতি ছাড়া। ও বরাবরই আমার কর্মকাণ্ড নিয়ে উৎসাহিত ও উচ্ছ্বসিত, এই উচ্ছ্বাসে কোনো কৃত্রিম ভাবালুতা ছিল না। আমি যখনই কোনো কাজে ওকে জড়িয়েছি ও নির্দ্বিধায় চলে আসত। অনেকবার এমনও হয়েছে কোনো অনুষ্ঠানে ও বিশেষ অতিথি হয়ে এসেছে আর আমি গিয়ে পড়েছি ও কিছুতেই আমাকে ছাড়া অতিথির আসনে বসবে না। নাছোড়। আমি অস্বস্তিতে পড়তাম। এই ছিল আমাদের ভালোবাসা। আমি দীর্ঘ ৩০ বছর আনন্দবাজারে চাকরি করেছি, আমার সেই অফিসের পাশেই ছিল ওর বাড়ি, ও চাইত আমি নিয়মিত যাই কিন্তু যেতে পারতাম না, ওর আক্ষেপ থাকত, আর যখন যেতাম শিশুর মত ভালোবাসত। সবার সঙ্গে সহজে একান্ত হতে সবাই পারে না, বড় হৃদয় থাকলে তবেই পারে যা ওর সহজাত ছিল। নিজের শারীরিক কষ্ট কাউকে বুঝতে দিত না। ওর এখনো যাবার সময় হয়নি, জানি না কিসের তাড়ায় ওকে যেতে হলো। মন বিষণ্ণ, ছেলেবেলার বন্ধুকে হারিয়ে। পরিবারকে জানাই সমবেদনা।


হর্ষ দত্ত
(বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক) 

চিত্রশিল্পী ওয়াসিম কাপুর ছিলেন আমার একদা কর্মস্থলের প্রতিবেশী।আনন্দবাজার সংস্থার প্রধান অফিসবাড়ির ঠিক বাঁ দিকে অবস্থিত, পুরনো ধাঁচের একটি বিরাট বাড়িতে উনি থাকতেন। সম্ভবত ভাড়া বাড়ি। নিচে সার সার দোকান। যদিও কাপুর পরিবার যে-অংশে থাকতেন, সেখানে ছিল নানা শৈল্পিক সৌন্দর্য। নিশ্চয়ই এখনও আছে। কেননা জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ওয়াসিমের ঠিকানা ছিল এই বাড়ি। আমার এক আত্মীয়া ওঁর কাছ থেকে চিত্রশিল্পের পাঠ নিয়েছিল। তার কাছেই ওয়াসিমের মাধুর্যমন্ডিত আবাসের কথা শুনেছিলাম।

অনেকবার ওঁর সঙ্গে দেখা হয়েছে। দুজনেই দুজনকে জিজ্ঞেস করতাম, কেমন আছেন? খুব আন্তরিকভাবে বলতেন, আমার ছোট স্টুডিওতে একবার আসুন না! আমার ছবি দেখতে নয়, আর্ট নিয়ে গল্প করা যাবে। 
যাওয়া হয়ে ওঠেনি। এ দুঃখ থেকেই গেল। আমার সবসময়ই মনে হয়েছে, ওয়াসিম খুব মার্জিত ও আধুনিক মনের মানুষ, আদ্যন্ত শিল্পী। দেশ পত্রিকার বিষয়ভিত্তিক প্রচ্ছদে বা ভেতরের পাতায়, ওঁর অঙ্কিত ছবি প্রকাশিত হয়েছিল। তবে এ বিষয়ে আমার স্মৃতি প্রতারণা করতে পারে। 

শিল্পের জগতে ওঁর স্থান কোথায় এবং কেমন---তার মূল্যায়ন সমালোচক ও শিল্পরসিকরা করবেন। আমি শুধু শব্দ দিয়ে, ব্যক্তিমানুষ ওয়াসিম কাপুরের একটি স্কেচ আঁকার চেষ্টা করলাম। সেই সঙ্গে ওঁকে জানাই শেষ নমস্কার।


বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য 
(বিশিষ্ট আইনজীবী) 

ওয়াসিম কাপুরকে চিনে ছিলাম শিলা কাপুরের মারফত। শিলা তখন কাউন্সিলর, আমি মেয়র। কর্পোরেশনের যে কোনও অনুষ্ঠানে উপস্থিত কাউন্সিলরদের বলবার সুযোগ দিয়ে তারপর আমি বলতাম। শিলার সঙ্গে সে ভাবেই আলাপ। জানলাম, শিলা একজন চিত্রশিল্পী,  এবং সে আর একজন বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর বৌদি। ওয়াসিমের সঙ্গে আলাপ। উনি প্রথমেই রুচিসম্মত পুস্তকের প্রসঙ্গ করলেন। বুঝলাম শিল্পীর মন নিয়ে কথা বলছেন। তারপর যখন যেখানে প্রতিবাদী আন্দোলন করেছি, ওয়াসিমকে ডাকলেই পেয়েছি। শিশুর মতো সরল একজন মানুষ। শারীরিক অসুবিধা, পায়ের একটু সমস্যা ছিল, ক্রাচ নিয়ে চলতেন, তাতে কিন্তু চলার ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধার বাহানা ছিল না। বিধানসভায়, জ্যোতি বসুর প্রতিকৃতি উন্মোচন সভায় অনেকে বললেন, এ তো জীবন্ত ছবি, কী করে রূপ দিলেন তুলিতে! উনি একগাল হেসে মধুর এক জবাব দিলেন। যখনই বলেছি, প্রতিবাদী সভায় থাকতে হবে, কোনও দ্বিধা করেননি। এক সংবাদিক বন্ধু ওর মৃত্যু সংবাদ আমার কাছে জানতে চাইলেন। আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। গতকাল শিলা জানালেন উনি দুবাই যাচ্ছেন। খুব লেগপুল করলাম। আজ শিলা জানালেন,  ওয়াসিম আর নেই। তখন আর কোনও সন্দেহ রইলো না। ওয়াসিম এক প্রতিবাদী পরিবারের ঐতিহ্য বহন করছিলেন। প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হারলাম। হারালাম এক নামী শিল্পীকে, যিনি পুরস্কারের লোভে প্রতিবাদের রাস্তা থেকে পালিয়ে যাননি।


শ্যামল জানা 
(বিশিষ্ট কবি, চিত্রশিল্পী)

জানি না কী বলব। আমার দীর্ঘ দিনের সমমনস্ক দাদা কাম বন্ধু । কত বড় বড় কাজ যে একসাথে করেছি, এখন সব মনেও নেই । ওয়াসিমদা প্রসঙ্গে আমায় যদি এক কথায় কেউ কিছু বলতে বলে, তাহলে বলতে হয়--- পূর্ণ উদারমনস্ক একজন মানুষ,  যাঁর কোনো জাত-পাত-শ্রেণী সচেতনতা একেবারেই ছিল না । আর ছিলেন অসম্ভব মানবদরদী । তাঁর সমস্ত ছবিতে এগুলোই প্রকাশ পেত ।  এ রকম একজন বিশাল মাপের মানুষকে হারিয়ে শুধু শিল্পজগৎ নয়, গোটা দেশেরই ক্ষতি হল ।


মীরাতুন নাহার
(বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক) 

চিত্রশিল্পী ওয়াসিম কাপুর বড় তাড়াতাড়ি বিদায় নিলেন দুনিয়া থেকে! দেশের শিল্পজগতে অপূরণীয় শূন্যতা তৈরি হলো তার ফলে! যখনই কোথাও অন্যায় বা  অব্যবস্থার বিরুদ্ধে কথা বলার বা রাস্তায় নামার দরকার পড়েছে তিনি তা করেছেন বিবেকের ডাকে সাড়া দিয়ে।ব্যক্তি-মানুষ হিসেবেও তিনি সেভাবে তাঁর দায়বদ্ধতা পালন করে গেছেন। তাঁর স্মরণে তাই আজ তীব্র বেদনাবোধ করছি।


মানব বন্দ্যোপাধ্যায় 
(বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী, সম্পাদক)

মেদিনীপুর শহর থেকে তখন কলকাতার ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজে ভর্তি হলাম, তখন খুবই অসহায়বোধ করছিলাম। পরিচিত কেউ নেই। তখন যে কয়জন সিনিয়ার ছাত্র পাশে এসে সাহস জুড়িয়ে ছিল তাঁদের মধ্যে ছিলেন ওয়াসিমদা। হাতে ধরে শিল্পকলা চর্চার কিছু প্রাথমিক পাঠ দিয়ে দিয়েছিলেন। তারপর যখন আমার জীবনধারনের সমস্যার কথা শুনলেন। একটা চিঠি লিখে এক বন্ধুর কাছে পাঠালেন। তাঁর একটা ছোট এ্যড এজেন্সী ছিল। সেখানে পার্ট টাইম কাজ পেয়ে আমার সমস্যা কিছুটা কমল। তাছাড়া কলেজের ক্যান্টিনে টেনে নিয়ে গিয়ে কতবার যে ঘুগনী রুটি খাইয়েছেন তা গুনে শেষ করা যাবে না। পরবর্তীকালে যখনই দেখা হয়েছে, তখনই কাঁধে হাত দিয়ে কাছে টেনে কুশল খবর নিতেন। তাঁর আঁকা প্রিয় চরিত্র ছিল যিশু। আজ ওয়াসিমদা সেই যিশুর দেশেই চলে গেলেন। আমি যেমন আমার জীবনের এক পরম শুভার্থীকে হারালাম, দেশ হারল এক প্রতিভাধর শিল্পীকে।


দীপ মুখোপাধ্যায় 
(বিশিষ্ট ছড়াকার)

পিনপতন নীরবতা আজ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিটের স্টুডিও-বাসায়। শোকের ছায়া শিল্পী মহলে। হাতে ক্রাচ নিয়ে হাঁটলেও যে মানুষটা শিরদাঁড়া সোজা রেখেছিলেন জীবনভর, সেই প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী ওয়াসিম কাপুর প্রয়াত। জন্ম লখনউ হলেও কলকাতা তাঁকে জড়িয়ে রেখেছিল। তালিম নিয়েছিলেন ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজ থেকে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাঁর সৃজনকর্মে অন্তরায় হয়নি। সর্বত্র সমাদৃত এই চিত্রশিল্পীর কাজ পড়ে রইল সংসদ ভবন থেকে ললিতকলা অ্যাকাডেমির দেওয়াল আলো করে।
আপনার  স্বপ্নের ক্যানভাস চিরস্থায়ী থাকবে।
সেলাম কমরেড।


ঈশিতা ভাদুড়ী 
(বিশিষ্ট কবি, প্রাবন্ধিক)

এখন মৃত্যুর ঢল নেমেছে পৃথিবীতে। আমরা একে একে কত মানুষকে হারাচ্ছি। আজ অকস্মাৎ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশিষ্ট শিল্পী ওয়াসিম কাপুরের মৃত্যু অবশ্যই এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন। লখনৌতে জন্ম হলেও কলকাতাতে তিনি ছিলেন বহুবছর। আমার অফিসের খুব কাছে প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিটে তিনি থাকতেন। কিন্তু কোনোদিন তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়নি। আসলে আমি এতই সামান্য এক মানুষ, ইন্ট্রোভার্টও বটে। আমি নিজ উদ্যোগে কোনোদিনই কোনো বড় মানুষের সঙ্গে গিয়ে আলাপ করে উঠতে পারিনি। কিন্তু আমি তাঁর কাজের ভক্ত ছিলাম। বিভিন্ন এক্সিবিশনে তাঁর কাজ দেখেছি। তাঁর ইন্টারভিউ শুনেছি। তাঁর মূল্যবান আঁচড়ে বিভিন্ন মানুষের ছবি কত জীবন্ত হয়ে উঠেছে দেখেছি। কী সাবলীলভাবেই না তিনি  যন্ত্রণা অবসাদের ছবি ফুটিয়ে তুলতে পারতেন রঙ-তুলির মাধ্যমে! আজ তাঁর  প্রয়াণে আরেকবার শিল্পজগতে শোক নেমে এল। তিনি তাঁর শিল্পকর্মের মাধ্যমেই মানুষের মধ্যে রয়ে যাবেন।


আশিস মিশ্র 
(কবি, সম্পাদক, চিত্রশিল্পী) 

কয়েক বছর আগে কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই সকাল ১১ টা নাগাদ তাঁর বাড়িতে হাজির হলাম। দু'বার গেছিলাম। প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিটে আনন্দবাজার পত্রিকা অফিসের কাছেই তাঁর বাড়ি। উপলক্ষ ছিলো শারদ আপনজন পত্রিকার জন্য একটি প্রচ্ছদ। সুপুরুষ মানুষটি কালো পাঞ্জাবি ও পাজামা পরে রয়েছেন। ছোট একটি বিছানায় বসেই অনেক কথা বললেন। চা এলো।  শিল্পজগৎ থেকে রাজনীতি, লেখালেখির জগতের অনেক মানুষের কথা, পত্র- পত্রিকার কথা বললেন। মনে হলো, তিনি যেন আগে থেকেই আমাকে চিনতেন! এতোটাই অমায়িক ছিলেন। সবচেয়ে বড়ো কথা আজীবন বামপন্থী রাজনীতিকেই বিশ্বাস করেছেন। বিধায়সভায় শ্রদ্ধেয় জ্যোতি বসুর পোট্রের্ট করেছেন। সেই ছবি দেখে এসে বলেছিলাম, 'কী অসাধারণ কাজ আপনার।' তিনি মৃদু হেসেছিলেন। ছবি আঁকায় তাঁর আঙ্গিকে আছে নিজস্বতা। দূর থেকে ছবি দেখেই বলা যায়, এই ছবি ওয়াসিম আর কাপুরের। হলদিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাংলা কবিতা উৎসবে তাঁকে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়।  শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য কলকাতা থেকে দূরে যেতে চাইতেন না। সে- কথা অকপটে তিনি বলেছিলেন।


প্রদীপকুমার বসু
(বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী) 

সাদা ক্যানভাসে মানুষের জীবনের জীবন যন্ত্রণার চিত্রায়ণ আর ফুটে উঠবে না। স্তব্ধ হলো রঙ-তুলির বহমান গতিপথ- আকস্মিক ভাবে চলে গেলেন ৭১ বছর বয়সে চিত্রশিল্পী ওয়াসিম কাপুর। শিশু বয়স হতে চলৎশক্তিহীন হয়ে কেবলমাত্র ক্র্যাচে ভর করে শিল্পভুবন জয় করেছিলেন। গতে বাঁধা জীবন কখনোই পছন্দ করতেন না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষ করতেন না। নাগরিক জীবন ও গোঁড়ামির বিরুদ্ধেও মুখর হয়েছেন বারে বারে। কখনো নিজের বক্তব্যের মাধ্যমে আবার কখনো রং-তুলির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নিতেন।দেখেছি, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সসত্ত্বেও ক্র্যাচকে সম্বল করে কলকাতার রাজপথে প্রতিবাদ মিছিলে ক্লান্তিহীন ভাবে হাঁটতে। কখনোবা মুক্ত আকাশের নীচে সাদা ক্যানভাসে দৃপ্ত হাতে রঙতুলির ছোঁয়ায় ফুটে উঠতো মানুষের জীবন যন্ত্রণা ও প্রতিবাদের ছবি। তাঁর অকালপ্রয়াণে স্তব্ধ হলো এক প্রতিবাদী কণ্ঠ কিন্তু রেখে গেলেন আগামী প্রজন্মের জন্য ফ্রেমে বাঁধানো অসংখ্য মণিমুক্তো।


আরও পড়ুন 
প্রয়াত নারায়ণ দেবনাথ। শ্রদ্ধা ও স্মরণে তাঁরই লেখা : স্মৃতি শুধুই স্মৃতি। 

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇



Post a Comment

0 Comments