অ্যাপের নাম বাবাজী
বাসুদেব গুপ্ত
৪র্থ পর্ব
-এআই বলতে এখন আর আরটিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বোঝায় না। বরং বলা যায় অলটাইম ইন্ট্রিউডার।
শিখা গম্ভীরভাবে বলতে শুরু করে। রূপম বাধ্য ছাত্রের মত শোনে। মুখে গর্বের ছাপ স্পষ্ট।
-তাকিয়ে না থেকে একটু নোটস নেবেন রুপমদা। কি বলেছি পরে পয়েন্ট যদি ভুলে যাই।
রূপম তাড়াতাড়ি প্যাড আর বলপেন নিয়ে বসে পড়ে। এত অগ্রগতি হয়েছে তাও অনেকেই এখনও কর গুনে হিসেব করে আর প্যাড খুলে নোট নেয়।
-তোমরা নিশ্চয় আমাজনে জিনিষ কেন বা বিগ বাস্কেটে অর্ডার দাও বা ফেসবুকে বিজ্ঞাপন গুলো দেখ মাঝেমাঝে। কখনও কি খেয়াল করেছ তুমি যদি একটা শার্ট কিনে থাকো, তারপরে গুগল খুললে বা ফেসবুক খুললে চারদিকে খালি শার্টের বিজ্ঞাপনে ভরে যায়?
-এই হচ্ছে আজকের এ আই। সারা পৃথিবীর লোকে কি কিনছে, ওষুধ জামা বই চা কফি, যে ওয়েব সাইটে তুমি সার্ফ করছো, যে ছবিটা খানিকক্ষণ তাকিয়ে দেখছো সব এই এআই মশাইরা নজরে রাখছেন, টুকে নিচ্ছেন এবং যথাস্থানে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। কোথায় এদের বাসা? গুগলে, ক্রোমে, ফোনে, কোথায় নয়।
-তুমি কি টাইপ করছ, আলেক্সাকে কি গান শোনাতে বলছ সব এদের নখদর্পণে। তার মানে এআই জানো তুমি কি খেতে ভালোবাসো, কি রং পছন্দ করো, কে তোমার গার্ল ফ্রেন্ড, তোমার কবে কাশি হয়েছিল সব সব।
একটু থামে শিখা। জল খায় আবার শুরু করে।
-বুঝতেই পারছো আমাদের সব কিছু এখন উন্মুক্ত। তোমার রাগ হলো এআই জেনে গেল। তুমি ডিপ্রেসড। এআই জেনে গেল। আলেক্সা ইচ্ছে হলে তোমার কথা শুনে বুঝতে পারছে তোমার রাগ হয়েছে না ফুর্তি হয়েছে।
-ডেনজারাস ব্যাপার। সবাই সমস্বরে বলে ওঠে। প্রত্যেকেই ভেবে নেয় কবে তারা নেটে গিয়ে কি লিখেছে, কি সার্চ করেছে। মুখটা শুকিয়ে যায় দু একজনের।
-হ্যাঁ আর এই ডেনজারই হবে আমাদের মূলধন। আমরা এমন এ আই বানাবো যা এই সব খবর জোগাড় করে এলগরিদম চালাবে আর গেস করে যাবে, কি ঘটতে চলেছে শীগ্গিরী। যেমন ধরো, কবাবু একটা কম্পানী কেনার কথা ভাবছেন। খ এর কাল সিঙ্গলস ফাইনাল। গএর ক্যানসার ধরা পড়েছে , ঘ আর তার পার্টনারের সম্পর্ক ঠিক যাচ্ছে না, ঙ কিছুদিন যাবত ডিপ্রেসড। সুইসাইডের কথা ভাবছে। এমনি আরো কত কি।
এবারে কেউ যদি এগুলো জানতে পারে তার কৌতূহল হতেই পারে, ক কি অ কম্পানী কিনবেন এক মাসের মধ্যে? খ কাল জিতবে না হারবে। গ কি আর এক মাস বাঁচবে? ঘ কি ডিভোর্স ফাইল করবে? ঙ কি সুইসাইড করেই ফেলবে? একবার ভাবো, এ নিয়ে বাজী ধরার জন্য কত লোকের উৎসাহ হবে?
এইভাবে বাজী ধরার বিষয় তুলে আনবে আমাদের এ আই। সারা পৃথিবী থেকে। কোন একটা ফিল্ডে আটকে থাকবোভনা আমরা। প্রতিদিন কোটি কোটি মানুয় বাজী ধরবে। আমরা শুধু কমিশন পাব? কি মনে হয়?
বেশ কিছুক্ষণ সবাই চুপ করে বসে রইল। শিখা কি সব টাইপ করতে লাগল ল্যাপটপে। আর রূপম গালে হাত দিয়ে হিসেব করতে লাগল।
শেষে লোকি কথা বলল।
-তাহলে দিদি আমরা যদি বাজী ধরি আপনি আর রূপমদা এই বছরে বিয়ে করবেন কিনা, সেটা এলাউড?
বলপেনটা রূপম ছুঁড়ে মারে ওর দিকে। শিখা হি হি করে হাসতে শুরু করে, তারপর বলে-
-এটা আমাদের এ আইএর বুদ্ধির বাইরে। ফালতু না বকে কেউ চিকেন মোমোর অর্ডার দে তো সুইগিতে। খিদে পেয়েছে তুমুল।
মোমো খেতে খেতে রতুর মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরতে থাকে। বলেই ফেলে,
-আচ্ছা এ আই কি পূর্ব জন্মের কথা জানতে পারে ?
-পূর্ব জন্মে কি গুগলবাবা ছিলো? না হলে জানবে কি করে?গু গলবাবাই তো সব খবর ধরছে আর ঝোলায় পুরছে।
রতু মাথা নাড়ে বিজ্ঞের মত। রূপম আর শিখা ব্যস্ত হয়ে পড়ে হিসেব করতে। ওদের এখন খোঁজ লাগাতে হবে এ আই থেকে এসব ডাটা বেসগুলো কিনতে কত পয়সা লাগবে। নেহাত হাতের বাইরে হলে শিখা আপাতত হ্যাক করে নেবে, চিন্তা নেই
সভা আজকের মত ভঙ্গ হলে যে যার মত ভাবতে ভাবতে যায় নেটে তারা কবে কি কেলো করেছে, কাকে ট্রোল করেছে, সব। এ আই সব জানে ভেবে কেমন কুঁকড়ে যায় সবাই।
একটা কাজ পেয়ে গেলে রূপম পাগলের মত হয়ে যায়। একবার ম্যারাথনে বোকার মত হেরে গিয়ে ওর প্রতিজ্ঞা ছিলো জীবনে এরকমটি আর করবো না। তা মেনে চলেছে। কিন্তু ভাগ্যদেবী ওর সঙ্গে মজা করেই যান। কতবার মনে হয়েছে ও দৌড়ে ফিনিশ পয়েন্টে পৌঁছে গেছে কিন্তু তারপর জানা গেছে রেসটাই বাতিল হয়ে গেছে।
দু তিন মাস ঘোরের মত কাটল। সংগে শিখা ছিল বলে টেকনিকাল ব্যাপারটা ও অনেকটা সামলে দিয়েছে। তারসংগে রোমান্সটাও জমেছে ভাল। একসংগে কিছু করার, সে যা কিছু হোক, যে তৃপ্তি, যে সুখ সেটা আগে কোনদিন বোঝা হয়নি এমনি করে ।
মোটামুটি একটা দাঁড়িয়ে যেতেই, ভাগ্যদেবী হঠাৎ প্রসন্ন হলেন। সিলিকন ভ্যালি থেকে একদিন ফোন এলো প্রসূন যোশীর। ভদ্রলোকের পেশা নতুন স্টারট আপ খুঁজে বার করে তাদের সংগে এনজেল বা ভেন্ডার ক্যাপিটালিসটদের যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া। ওনার সংগে পরিচয় হয়েছিল একটা infotech exhibitionএ। সেখানে রূপম একটা স্টল দিয়েছিল তার নতুন অ্যাপের। হোম কন্ট্রোলার। বাড়ীতেই চোর আসুক বা পিওন চিঠি দিতে এসে বন্ধ দরজা দেখে চলে যাক বা পাম্প চলতে চলতে ঘর ভেসে যাক, এরকম আরো কত কিছুর সমাধান ঐ একটি অ্যাপে।
মিঃ যোশি বছরে ছ মাস হাওয়াইতে থাকেন, মাউই নামে এক দ্বীপে তাঁর সমুদ্রতীরের ফারমহাউসে। বাকি ছ মাস চরকি পাক দেন ইন্ডিয়া ইউরোপ আর সিলিকন ভ্যালিতে। উনি দাঁড়িয়ে পুরোটা দেখেছিলেন। বেশ পরিচিত গুরুজনের মত বুঝিয়েছিলেন আর কি কি হলে এটা একটা প্রোডাক্ট হতে পারে। সেই থেকেই ই মেলে যোগোযোগ।প্র তি দিওয়ালি ও নিউ ইয়ারে গ্রীটিং। এবার কাজ শুরু করার আগে সবটাই লিখে ওঁর আশীর্বাদ চেয়ে ইমেল করেছিল রূপম। ঝটিতি উত্তর এল, ইন্টারেস্টিং। বিজনেস প্ল্যান পাঠাও। আমি দেখছি।
ফোন এল ঠিক সকাল সাড়ে নটায়। এইসময় মিঃ যোশি একটা মার্গারিটা সাজিয়ে বসেন আর ইন্ডিয়াতে ফোন করেন।
-কি রূপম তোমার প্রোডাক্ট কদ্দূর? ওয়েব সাইট হয়ে গেছে? দেখাতে পারবে?
গলার আওয়াজ শুনেই মনে হয়েছিল কিছু একটা উনি লুকাচ্ছেন । রূপম সহজভাবেই উত্তর দেয়
-হ্যাঁ প্রসুন, সব রেডি। স্মার্ট ফোনের এপটাও রেডি। খালি এআই টা নিয়ে একটু অসুবিধে। বিরাট ডাটাসোর্স চাই, সেটা প্রসেস করার জন্য বেশ কিছু টিপিইউ লাগবে আর ডেটা রাখার জন্য ১০০০ টেরাবাইটের মত জায়গা।
টিপিইউ হচ্ছে এ আইএর সিপিইউ। গত কয়েক মাসে প্রচুর পড়াশোনা আর শিখার কাছে কোচিং করে রূপম এখন মোটামুটি ধরতে পারে ব্যাপারটা।
-কত টাকা লাগবে জানো? সেটা কোথায় পাবে ভেবেছ?
-তা ১০ কোটি টাকা তো লাগবে। লোন তো পাওয়া যাবে না। আস্তে আস্তে আমাদের বাড়াতে হবে।
-১০ কড়োর। মানে ১.৫ মিলিয়ন ডলার। ঠিক আছে হয়ে যাবে। তোমরা ওগুলো জোগাড় করার ব্যবস্থা করো।
-মানে? হয়ে যাবে মানে আপনি দেবেন? এত টাকা?
ওপাশ থেকে প্রসুন যোশীর হাসি আর থামাতেই চায় না। একটু থেমে একটা বড় চুমুক দেন গ্লাসে। ক্রাশড আইসগুলো আইসবারগের মত এদিক ওদিক পাক খেয়ে আবার স্থির হয়।
- রূপম ভাই, নিজের টাকা দিয়ে কেউ কি বিজনেস করে? সবাই একজনের টাকা আর একজনকে দেয়। দেড় মিলিয়নে কিছু হবে না। ওটা তো শুধু টেকনিকাল খরচ। তোমার আরো বেশি লাগবে এড দিতে। অনেক খরচ হবে মারকেটিং করতে। আমি পাঁচ মিলিয়ন এনজেল ইনভেসটমেনট ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। বাকিটা পরে দেখা যাবে।
এরপর কি ভাবে রূপম শিখা সেলিব্রেট করেছিল তার বর্ণনা দিতে রাত কাবার হয়ে যাবে। একদিন শিখাকে ছুটি নিতে হল। তার পরদিন প্যারাডাইসের বিরিয়ানি দিয়ে ভূরিভোজ হলো টিমের। গাড়ী গড়গড় করে চলতে শুরু করল। এরপর তাকে থামানোর ক্ষমতাও কারো থাকবে না।
ক্রমশঃ…
3 Comments
Write about chatgpt4
ReplyDeleteFuck you
ReplyDeleteDont post these comments
Delete