শাবক
অমিতরূপ চক্রবর্তী
বাবি সরকার নামটা শুনে মনে হতে পারে এটা কোনো পুরুষমানুষের নাম কিন্তু আদতে তিনি তীব্রভাবে মেয়েমানুষ মানে মহিলা। পাঁচ ফুটের কাছাকাছি উচ্চতায়। উড়ন্ত পাখির ডানার মতো ভুরু। চোখে কালো ফাইবার ফ্রেমের ক্যাটস আই শেপের চশমা। শাড়ি পরলেও তলপেট একটু ভেসে থাকে। আমরা শুরু করব তখন থেকে, যখন বাবি সরকারের বয়েস ৩৫/৩৬ এবং সেপ্টেম্বর অক্টোবরের দিকে তিনি তাঁর স্বামীর সঙ্গে দার্জিলিঙে ঘুরতে যাচ্ছেন।
বাবি সরকার বাংলাদেশের মেয়ে। এক বিচিত্র সূত্রে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শিলিগুড়িতে বসবাসকারী এক পাত্রের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বাবি সরকার তখন কলেজে পড়ছেন। ভাল গান গাইতে পারতেন। এমনভাবে তাঁকে বিয়ের জন্য প্রস্তুত হতে হল যেন একদিন ঘুম ভেঙে উঠে দেখলেন সারা আকাশে আলতার শিশি ভেঙে আলতা গড়িয়ে গিয়েছে। রক্তের মতো আলতায় ভিজে জ্যাবজ্যাব করছে যতদূর দেখা যায়, ততদূর পর্যন্ত আকাশ। পার্থিবে তখন গোধুলি। কৌপিন পরা রাক্ষসচেরিরা হাতে চন্দনের বাটি আর শলাকা নিয়ে এসে ভ্যারভেরে গলায় বলছে ‘ওঠ বাবি, আজ তোর বিয়ে!’
বাবি সরকার শিলিগুড়ি থেকে টয়ট্রেনে তাঁর স্বামীর সঙ্গে দার্জিলিঙে যাচ্ছেন। ট্রেন যেদিকে যাচ্ছে, সেদিকে মুখ করে বসেছেন তিনি। তাঁর মুখোমুখি সিটে তাঁর স্বামী। আর তাঁদের সাত বছরের মেয়েটা এদিক-ওদিক করছে। কখনো জানালায় মুখ দিয়ে বাইরে দেখছে। কখনো মা, কখনো বাবার পাশে গিয়ে বসছে।
ঢিমে তালে ট্রেনটা চলছে। জানালার বাইরে পাহাড়ি অরণ্য, খাদ, কুয়াশা শুরু হয়েছে। কামরায় আর যারা, তাদের অনেকেই নেপালি সম্প্রদায়ের। তারা কেউ কেউ এমন মন্থর গতির কারণে ঘুমিয়ে পড়েছেন। একদিকে কাৎ হয়ে তাদের মাথাটা বুকের একপাশে ঝুলে পড়েছে। অন্যেরা কেউ বিশেষ কথাবার্তা বলছে না। জানালার কাচে কুয়াশার জল জমতে শুরু করেছে। বিরাট বিরাট সব সবুজ পাহাড়ের ঢাল ঠিক যেন গালের পাশ দিয়ে অন্যদিকে সরে যাচ্ছে। একটি যুবক চা ফেরি করছে। হাতে ফিল্টার লাগানো একটি স্টিলের ড্রাম। শীতে কেউ কেউ চা খাচ্ছে।
কী একটা ভাললাগায় আনমনা হয়ে জানালা দিয়ে বাইরে অপসৃয়মাণ পাহাড়ের ঢালের দিকে তাকিয়ে ছিলেন বাবি সরকার। তার গায়ে শাড়ির ওপরে কার্ডিগান। গলায় স্কার্ফ। মুখে উইন্টার কিমের তৈলাক্ত ভাব। ঠোঁটে লিপস্টিক। তাঁর স্বামী জানালা দিয়ে ট্রেনটার পেছনের দিকে তাকিয়ে আছে। কী ভাবছে বোঝা যায় না। হয়তো তেমন কিছু ভাবছেও না, এমনিই তাকিয়ে আছে। মাথার ওপরে লাগেজবাঙ্কে ওদের লাগেজ। লাল, মেটে হলুদ, খয়েরি। অন্য লাগেজবাঙ্কেও লাগেজ। শীত করছে। তবে ভাল লাগছে। বাবি সরকার আপনা থেকেই গেয়ে উঠলেন দু’কলি ‘আজি মলয় বাতাসে ভেসে যাব মোরা/কুসুমের মধু করিব পান।‘
-‘আপনার গলা কিন্তু খুব ভাল। ছাড়বেন না গানটা।‘
চারপাশে অনেকেই ঘুমোচ্ছে, ঝিমোচ্ছে। কেউ কেউ মুখের সামনে খবরের কাগজ মেলে ধরে বসে আছে। এদের মধ্যে কোন গলায় বাক্যটি উৎপন্ন হয়ে উড়ে এল, বোঝা মুশকিল। বাবি সরকার চকিত হয়ে চারপাশে তাকালেন একবার। মুখোমুখি সিটে তাঁর স্বামীর মাথা স্প্রিং দেওয়া মাটির বুড়ো দাদুর মতো তখন ঢুলছে। হয়তো একটু পরে তিনিও ঘুমিয়ে হয়তো পড়বেন।
প্যাসেজের অন্যদিকের সিটের কোনায় গায়ে ছিট দেওয়া একটা কোট আর ভেতরে হাইনেক পরে যে লোকটি বসে আছে, হাতে একটা ইংরেজি পত্রিকা, মাথায় শক্ত কাঁচা-পাকা চুল, চিবুকের তলা থাক থাক হয়ে গলায় মিশে গেছে, বাবি সরকারের দৃষ্টি লোকটার ওপরে এসে থেমে গেল। মনে হয় ওখান থেকেই কথাটা এসেছে। লোকটার পুরু ঘন ভুরুর নীচে উজ্জ্বল চকচকে দুটো চোখ। গায়ের রঙ ফরসা। গালের চামড়া ফুটো ফুটো। লোকটা ট্রেনের মন্থর গতির সঙ্গে সঙ্গে দুলতে দুলতে তাকিয়ে আছে বাবি সরকারের দিকে।
-‘থামলেন কেন? বেশ তো গাইছিলেন, গান।‘
খুব অপ্রস্তুত বোধ করলেন বাবি সরকার। এমন ট্রেনের কামরার তাঁর অজান্তে অপরিচিত কোনো ব্যক্তি তাঁর গান শুনছে, ভাবতেই তাঁর খুব লজ্জা হল। বুকের পাঁজরের নীচে বুক আর পেটের ভেদরেখার ঠিক ওপরে ভেতর থেকে একটা প্রকাণ্ড লাল রঙের ফুল পাপড়ি ছড়িয়ে ফুটে উঠল যেন। অপ্রস্তুত ভাবে তিনি বলতে চাইলেন ‘না, মানে ইয়ে…….।‘
কাঁচা-পাকা ওপার থেকে বলল ‘আমি বিকাশ, বিকাশ পারেখ। কোলকাতায় আমরা এ নিয়ে তিন জেনারেশান আছি। আমি একটা ইলেকট্রনিক্স কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার। নর্থবেঙ্গল আর আসামের মার্কেটটা আমি দেখি। শিলিগুড়িতে আমাদের তিন চারজন বড় বড় ডিস্ট্রিবিউটর আছেন। আপনি ইলেক্রোলাক্সের নাম শুনেছেন?
-‘হ্যাঁ, আমাদের আয়রন আর হোম থিয়েটারটা ঐ কোম্পানির।‘
-‘গুড। এই ইলেক্ট্রোলাক্সই আমার কোম্পানি। প্রায় সারা বছর আমি নর্থবেঙ্গল আর আসামে এমন বিসনেস ট্যুরে আসি। এখন যাচ্ছি দার্জিলিঙ। নেক্সট উইকে দার্জিলিঙে আমাদের দুটো ডিস্ট্রিবিউটারশিপ ওপেন হওয়ার কথা। তাই তার দেখভাল করতেই আমি যাচ্ছি। আমি কোলকাতায় পড়াশোনা করে বড় হয়েছি। তিন জেনারেশান থাকার ফলে আমরাও এখন আদ্যন্ত ভেতো বাঙালি। রবিঠাকুর, ইলিশমাছ আর পলিটিক্স ছাড়া আমাদেরও ঘুম হয় না। হা হা হা।‘ বলেই শরীর দুলিয়ে বড় করে হেসে উঠল কাঁচা-পাকা।
ট্রেনের মন্থর গতির সঙ্গে দুলছিলেন বাবি সরকারও। ভাল করে কার্ডিগানটা বুকে টেনে নিলেন। ইতিমধ্যেই তাঁর স্বামী ঘুমিয়ে পড়েছে- দেখতে পেলেন। স্বামীকে ওইভাবে ঘুমোতে দেখে একটু খারাপও লাগল বাবি সরকারের। মেয়েটা একটা ভিডিওগেম খেলছে বসে বসে। ওর এখন খিদে পাবার কথা নয়। একটু আগেই বিস্কুট আর চকোলেট ফ্লেবারের একটা হেলথ ড্রিংকস খাইয়ে দেওয়া হয়েছে ওকে। এই মন্থর গতির যাত্রার একঘেয়েমি কাটাতে লোকটার সঙ্গে কথা বাড়ানোই যায়। লোকটাকে শিক্ষিত আর রুচিশীলই মনে হচ্ছে।
-‘আপনারা কি ফ্যামিলি ট্যুরে?’
-‘হ্যাঁ।‘ রঙিন লাজুক ঠোঁটে একটু হেসে উত্তর দিলেন বাবি সরকার।
-‘দার্জিলিঙে কোথায় উঠছেন? আই মিন কোন হোটেলে?’
অপ্রস্তুতে পড়ে গেলেন বাবি সরকার। দার্জিলিঙে কোন হোটেলে তাঁরা উঠবেন, কী খাবেন বা কোথায় যাবেন- এইসবই ঠিক করেছে তাঁর স্বামী। তার স্বামীর বন্ধু সুজিত। বাবি সরকার এর কিছুই জানেন না। তিনি এইটুকু জানেন যে তাঁরা সপরিবারে দার্জিলিঙে ঘুরতে যাচ্ছেন ক’দিনের জন্য। তিনি একটু অপ্রস্তুত হেসে বললেন ‘সবটাই করেছেন উনি। আমি ঠিক জানি না।‘
-‘শিলিগুড়ি থেকে আসছেন তো, মনে হয় ম্যালের কাছাকছিই কোনো হোটেলে আপনারা উঠবেন। বাঙালিদের মনে ম্যাল নিয়ে একটা ফ্যান্টাসি থাকে। আমি বরাবর দেখেছি। অনেকবারই তো এলাম দার্জিলিঙে কাজে-অকাজে।
হাসি ছাড়া এই মুহূর্তে বাবি সরকারের হাতে আর নেই কিছু। তাই তিনি হাসলেন। তার কানের ওপরের দিকে কিছু টুকরো চুল উড়ছিল হাওয়ার টানে। তার হাসিটাও তেমনই যেন উড়ে গেল।
-‘টয়ট্রেনের জার্নি খুব বোরিং হয়।‘ বলল কাঁচা-পাকা। ‘ঘুম আসতে আসতে দুপুর হয়ে যাবে।‘
যে প্রশ্নটা মনেই আনেননি বাবি সরকার, কাঁচা-পাকা তারো উত্তর দিল। ‘তাহলে ভাবছেন তো আমি কেন টয়ট্রেনে এলাম? ভার্টিগো থেকে বাঁচতে। এমন খাড়াইপথে গাড়িতে আমার প্রচন্ড মাথা ঘোরে। নসিয়া হয়। সমস্যাটা এই ক’দিন আগেও ছিল না। এখন হচ্ছে।‘
বাবি সরকার কী বুঝলেন, না বুঝলেন বোঝা গেল না। তিনি শুধু আবার হাসলেন। এই হাসিটাও আগের হাসির মতোই উড়ে গেল।
কথার ফাঁকে ফাঁকেই বাবি সরকার দেখছিলেন জানালার দিকে। দেখছিলেন মন্থর গতিতে কেমন বিরাট বিরাট পাহাড়ের ঢালগুলি চলে যাচ্ছে পেছনের দিকে। কখনো তার মনে হচ্ছিলো এই যে বিরাট বিরাট বুনো সব পাহাড়ের ঢাল, তার গায়ে লেগে থাকা নিবিড় জংগল, একটা লম্বা গাছ থেকে কীসের না কীসের জানি বুনো লতা মালার মতো নেমে নীচের খাদে কোথায় হারিয়ে গেছে- এসবের কী যেন একটা মানে আছে। অর্থ আছে। সেটা কী. কেমন তা আন্দাজ হচ্ছে না তাঁর। খালি মনে হচ্ছে কী যেন একটা মানে আছে। হতে পারে তা হয়তো কোথাও জীবনের সঙ্গে মেলে। কিন্তু কোথায়, কীভাবে জীবনকে সেটা অঙ্গীভূত করে, তা ধরতে পারছেন না বাবি সরকার।
-‘চা খাবেন? রেড টি?’
মাথা নাড়িয়ে আবারো হাসলেন বাবি সরকার। তবে কাঁচা-পাকা একরকম জোর করেই যেন বলল ‘খান না। শীতে ভাল লাগবে। রেড টি। কোনো সমস্যা হবে না। তবে আপনারা মনে হচ্ছে দার্জিলিঙে খুব ফগি ওয়েদার পাবেন।‘
দু’হাতে কাগজের কাপটা নিয়ে চায়ে চুমুক দিতেই সত্যি একটা আরাম বোধ হল। কাঁচা-পাকা কেমন ঠোঁট ছুঁচোর মতো দু’আঙুলে কাপ ধরে ফুঁ দিয়ে দিয়ে চা খাচ্ছে আর কথা বলছে। কেমন হাস্যকর।
-‘আমাদের অনেক রিলেটিভ গুজরাটে, মহারাস্ট্রে আছে। ওরা কখনো কখনো এলে আমাদের বাংলা বলা নিয়ে ঠাট্টা করে। কেন জানেন? আমরা ভাতও খাই। চাও খাই। হা হা হা।‘
বাবি সরকার চায়ে চুমুক দিয়ে আবারো উড়ুক্কু হাসিটা হাসলেন। কাঁচা-পাকা বলল ‘আপনি গান শিখতেন?’
-‘হ্যাঁ, ওই স্কুল-কলেজে পড়ার সময় একটু আধটু।‘
-‘এখন তো গানের কত রিয়ালিটি শো হয়, আপনি চান্স নিচ্ছেন না কেন।‘
-‘অত বড় যোগ্যতা আমার নেই।‘
-‘দেখুন আমি গানের কিছু বুঝি না। শুনতে ভালবাসি এই যা। তবে আমার এক বন্ধু গান গায়। ও একবার আমাকে বলেছিল ব্যাপারটা দু’রকমের হয়। কেউ গান গায়, আবার কেউ গান করে। আমার মনে হচ্ছে আপনি প্রথমটা।‘
-‘এখন আর চর্চা কোথায়।‘ খুব লাজুক ভাবে বললেন বাবি সরকার। ‘সংসারে আর কতটুকু সময় থাকে?’
-‘গানটা আপনার গড গিফ্টেড। চাইলে অতটুকুর মধ্যেই ধরে রাখা যায়।‘
গলা আর কাঁধের কোথাও চুল আর পোশাকের আড়ালে শিরশির করে উঠল যেন বাবি সরকারের। বাবার কথা মনে পড়ল। বাবা চাইতেন মেয়ে যত্ন করে গানটা শিখুক। বাবা এখন কোথায়? পৃথিবীতে তো নেই। বাবা কি কাঁচা-পাকার এই কথাটা শুনল?
-‘আপনার হাজব্যান্ড খুব লাকি ম্যান যে আপনার মতো একজন মহিলা ওঁর স্ত্রী।‘
এবার পায়ের গোড়ালি থেকে হাঁটুর মাংস অবধি শিরশির করে উঠল বাবি সরকারের। ‘না না, কী যে বলেন’ বলে তিনি চেয়ে দেখলেন যাকে নিয়ে এই আলোচনা, সেই মানুষটি এই জগতেই নেই,’ মাথা হেলিয়ে অকাতরে ঘুমোচ্ছে। একটু যেন কী বাজল মনে বাবি সরকারের। মেয়েটা ‘মা’ বলে তাঁর কোলে শুয়ে পড়ল।
-‘আমিও আছি ক’দিন দার্জিলিঙে। মনে হয় আপনাদের কাছাকাছিই কোথাও থাকব আর দেখাও হবে। এই ট্রেনে তো আর হল না, দার্জিলিঙে ম্যালে বসে আপনার গান শুনব। এই অনুরোধ করে রাখলাম অ্যাডভান্স। হা হা হা।‘
দার্জিলিঙে নেমে দেখা গেল কাঁচা-পাকার কথাই ঠিক। সিমেন্টের ধুলোর মতো কুয়াশা দাঁড়িয়ে রয়েছে সবখানে। পথবাতিগুলো কুয়াশায় ভূতুড়ে হয়ে জ্বলছে। বেশ ঠাণ্ডা। একটা শিরশিরে হাওয়া বইছে কোনো দিক থেকে। একটি অল্পবয়েসি নেপালি ছেলে অপেক্ষা করছিল তাঁদেরই জন্য। ও-ই লাগেজপত্র নিয়ে বাবি সরকারদের উদ্দ্যেশ্যে বলল ‘আইয়ে।‘
হোটেলটির নাম হোটেল ক্রাউন। কাঁচা-পাকার কথা এবারেও ঠিক। হোটেলটা ম্যালের কাছেই। বাবি সরকাররা যখন নীচের রাস্তা থেকে কয়েক ধাপ সিঁড়ি বেয়ে ওপরের রাস্তায় চলে এলেন, দেখলেন চারপাশে গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়ানো সব উঁচু উঁচু হোটেল। সাইনে তাদের নামগুলো পড়া যাচ্ছে। হোটেল গ্রিনভিউ, হোটেল মাউন্টেন- এমন সব নাম। মাঝে মধ্যে আলো জ্বলা বিভিন্ন জিনিসের দোকান। রেস্টোরেন্ট। একটি দোকানের নাম ‘ডোলমা লাখাং’। একটি ভীষণ ফর্সা, যেন নিরক্ত নেপালি মেয়ে দোকানটা সামলাচ্ছে। দোকানটার একপাশে গ্রসারি আইটেম, অন্যপাশে কসমেটিক্স আর ওষুধ। রাস্তা দিয়ে অনেক গরম কাপড় পরা কমবয়েসি নেপালি ছেলেমেয়ে, যুবক-যুবতী, হাঁটুর ব্যথায় কাতর বাঙালি টুরিস্টরা হেঁটে যাচ্ছে। অনেক নেপালি ছেলে পিঠে কাঠের বোঝাও বইছে।
বাবি সরকারের চকিতে মনে পড়ল, ট্রেন থেকে নেমে কাঁচা-পাকাকে আর দেখতে পাননি। হয়তো তকে রিসিভ করতে আসা লোকজনের সঙ্গে হোটেলে চলে গেছে। লোকটার মুখটা একবার আবছা ভাবে চোখের সামনে ভেসে উঠল বাবি সরকারের। লোকটি বেশ ইয়ে ধরনের- তাঁর মনে হল।
তক্ষুণি পেছন থেকে একটা কণ্ঠস্বর বলে উঠল ‘ম্যাডাম, সাইড।‘ বাবি সরকার সরে দাঁড়াতেই দেখলেন একটি ক্ষয়-লাগা বাদামী রঙের ঘোড়াকে হাঁটিয়ে একটি মাঝবয়েসি নেপালি মানুষ কুয়াশার মধ্যে কোথাও ঢুকে পড়ল।
২.
পরদিন সকালে উঠেই এক বিশ্রী অবস্থা। বাবি সরকারের স্বামীর চোখ জবাফুলের মতো লাল হয়ে উঠেছে। নাক দিয়ে সমানে জল গড়াচ্ছে আর বিষম হাঁচি। বেচারা আসতে না আসতেই কোল্ড অ্যালার্জির শিকার। লেপ গলা অবধি টেনে বিছানায় ডুবে আছে। ভাল করে ব্রেকফাস্টও খেল না। বাবি সরকার কপালে হাত রেখে বুঝলেন একশোর কাছাকাছি টেম্পারেচার আছে। এমনিতেই মানুষটা বড় শীত কাতর। এখানে এসেই অ্যালার্জি বাধিয়ে শুয়ে পড়েছে। রুমবয় ছেলেটা বেশ চটপটে। সে বলল ‘ম্যাম, সাহাব কো গরম পানি আউর প্যারাসিটামল দিজিয়ে। আউর সেট্রিজিন। ইয়ে টাইম মে বহুত টুরিস্টপার্টিকা অ্যায়সা হোতা হ্যায়।‘
‘তুম জানতে হ্যায় মেডিসিনকা দোকান কিধার হ্যায়?’ বাবি সরকার হিন্দিতে একেবারেই সরগর নন। টুটাফুটা হিন্দিতেই বললেন তিনি।
-‘জি ম্যাম, ইয়ে হোটেলকা নীচ মে হি হ্যায়।‘
-‘তুম লেকে আও।‘ বলে ছেলেটাকে খুচরো টাকা দিলেন তিনি।
-‘আউর এক চিজ হ্যায় ম্যাম। উয়ো খানে সে বহুত ফায়দা হোগা।‘
-‘কী সেটা?’
ছেলেটি অপ্রস্তুত হয়ে হাসল। ‘আপ লোগ খাতে হো কে নেহি খাতে হো।‘
-‘জিনিসটা কী?’
-‘রাম, ম্যাডাম রাম। রক্সি, মতলব দারু। নীচে চাচি কা দুকান মে মিলতা হ্যায়। উয়ো গরম পানি কে সাথ লেনে সে সর্দি-জুখাম ঠিক হো যায়েগা।‘
চমকে উঠলেন বাবি সরকার। রুমবয় ছেলেটি তার স্বামীকে মদ খাওয়ানোর কথা বলছে। মদ যে তাঁর স্বামী খায় না, এমন নয়। কোনো কোনো দিন রাতে নেশায় চুর হয়ে বাড়ি ফেরে। তারপর যা হয়, তা মনে করতে চান না বাবি সরকার। তাঁর পিঠে খুঁজলে হয়তো এখনো কালশিটে খুঁজে পাওয়া যাবে। ঊরুতে নখের আঁচড় খুঁজে পাওয়া যাবে। মেয়েটি তখন বেডরুমে ঘুমিয়ে পড়ে। যা চলে, তা ড্রয়িংরুমে বা কিচেনে।
না না, এখানে এই হোটেলে ওকে এসব খাওয়ানো যাবে না। গোটা হোটেল টুরিস্টে ভর্তি। আর মেয়েটা আছে- আঁৎকে উঠলেন বাবি সরকার। ‘নেহি সাহেব কো উয়ো পসন্দ নেহি। তুমি দাওয়া লেকে আও।‘
-‘জি ম্যাম।‘ বলে ঘাড় হেলিয়ে ছেলেটা চলে গেল।
দুপুরে খাবার পর বিছানায় গা ডুবিয়ে টিভিতে সিনেমা চলছিল- তাই দেখছিলেন বাবি সরকার। তাঁর স্বামী তাকে বললেন ‘তুমি শুয়ে আছ কেন? মাম্মামকে নিয়ে একটু বেড়িয়ে এসো। আমার তো অ্যালার্জির ধাত আছেই।‘
বাবি সরকার হাসলেন ‘আমি কি চিনি সবকিছু?’
-‘সমস্যা নেই। হোটেল থেকে বেরিয়ে ডান দিকে রাস্তা ধরে সোজা হাঁটলেই ম্যাল। মাম্মামকে নিয়ে ম্যাল থেকে ঘুরে এসো।‘
-‘ফেরার সময়?’
-‘আমাকে ফোন করবে। আমি রুমবয়কে তোমার নাম্বার দিয়ে পাঠিয়ে দেব।‘
সত্যিই এখানে এসে এভাবে ঘরে বসে থাকতে ভাল লাগছিল না তাঁর। কিন্তু স্বামীকে ওই অবস্থায় ফেলে কোথাও যাওয়া যায় না। আর যাবেনই বা কোথায়। কিছুই তো চেনেন না তিনি। তবু স্বামীর কথায় একটু ভরসা পেলেন।
-‘মাম্মামের যদি ঠাণ্ডা লাগে? বাইরে তো কুয়াশা।‘
-‘ভাল করে গরম জামাকাপড় পরিয়ে নিয়ে যাও। কান ঢাকা টুপি পরিয়ে নাও। আমার জন্য বেড়াতে এসে তোমরা ঘরে থাকবে, তা হয় না।‘
বেলা তিনটেয় চারিদিকে কুয়াশা। অবশ্য তেমন ঝাপসা ভূতুড়ে কুয়াশা নয়, দেখা যাচ্ছে সবকিছু। কুয়াশার স্তর পেরিয়ে পাতলা মেঘের ভেতর সূর্যটাকে এমন লাগছে যেন অপারেশান টেবিলের নিভে যাওয়ার আগে আলো। সব দোকানে, হোটেলের সাইনে আলো জ্বলছে। একটা হন হন করে হাঁটতে থাকা লোক বাবি সরকারকে বাঁ কাঁধের দিকে ধাক্কা মেরে ‘ও সরি, সরি’ বলতে বলতে চলে গেল।
ম্যালে এই কুয়াশাতেও প্রচুর লোক সমাগম। টাট্টু ঘোড়ার পিঠে মাথায় টুপি পরা ছোট্ট ছেলেমেয়েরা চড়ছে। ম্যালে যেখানে সকলের বসার ব্যবস্থা, সেখানেও অনেক লোক। মুখ দেখেই বোঝা যায় ওঁরা বাঙালি। বেড়াতে এসেছে। বসবার জায়গাটার সিলিংয়ে আলো জ্বলছে।
‘এই যে এদিকে, এদিকে চলে আসুন।‘ চেনা কণ্ঠস্বরটা ভিড় বাঁচিয়ে যেদিক থেকে ছুটে এল, সেদিকে তাকিয়ে বাবি সরকার দেখলেন কাঁচা-পাকা একটা জায়গায় বসে সেই ট্রেনের মতো দু’আঙুলো কাপ ধরে ফুঁ দিয়ে চা বা কফি কিছু খাচ্ছে। কাঁচা-পাকার পরনে চকচকে গ্যাবার্ডিনের জ্যাকেট। আকাশ-নীল জিনস আর মাথায় একটা উলের টুপি। বাবি সরকারও কার্ডিগানের ওপর মেরুন শাল জড়িয়েছেন। স্কার্ফে কান ঢেকে তিনিও মাথায় পশমি একটা টুপি পরেছেন। মেয়ের গায়ে লাল প্যাডেড জ্যাকেট। মাথায় কান ঢাকা টুপি।
-‘দেখলেন তো বলেছিলাম না, দেখা হবে। ঠিক দেখা হয়ে গেল। আপনার হাজব্যান্ড কোথায়?’
স্বামীর অবস্থা জানাতে কাঁচা-পাকা বলল ‘স্যাড। অবশ্য অনেকেরই এমন ধাত থাকে। তা কোথায় যাচ্ছেন?’
বাবি সরকার সেই ট্রেনের মতো উড়ে যাওয়া হাসি হেসে বললেন ‘চিনি না তো কিছু। ওঁর কাছ থেকে শুনে হাঁটতে হাঁটতে এখানে এলাম।‘
‘চলুন তাহলে একটু ঘুরি। প্রিন্সেস তুমি কি ঘোড়ায় চাপবে?’
মাম্মাম যেন দ্বিধায়। ও কিছু না বলে বড় বড় সরল একজোড়া চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে রইল। বাবি সরকার বললেন ‘না থাক, ঘোড়ায় চড়ার অভ্যেস নেই। কিছু একটা হয়ে গেলে মুশকিল। তারচেয়ে হেঁটে ঘুরি। না মাম্মাম?’ বলে তিনি মেয়ের হৃদয় ডলে দিলেন একটু।
ম্যাল থেকে ডানদিকের রাস্তাটা ওরা নিল। এই রাস্তার ডানদিকে খাদ। পাহাড়ের গায়ে রেলিং দেওয়া। কখনো বসে বিশ্রাম নেবার জন্য বা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য ফিক্স করা কাঠের চেয়ার। যেখানে তিন চারজন পাশাপাশি বসতে পারে। পেছনে টিলার মাথায় কনভেন্ট। রেলিং পেরিয়ে ওপারে কিছু দেখা যাচ্ছে না। শুধু সাদা কুয়াশা ছাড়া। কাঁচা-পাকা বলল ‘এদিকটাতেই মনে হয় কাঞ্চনজঙ্ঘা ছবির একটি গানের শ্যুট হয়েছে। ছবি দেখে আমার এই দিকটার কথায় মনে হয়েছে। হয়তো এই চেয়ারগুলোরই কোনো একটা চেয়ারে। করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লিপে প্রণতি ঠাকুর গেয়েছিলেন। আপনি দেখেছেন ছবিটা?’
-‘না। তবে সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালি দেখেছি। আমি যখন কলেজে পড়ি। বিয়ের আগে।‘
-‘আপনি কোথাকার মেয়ে?’
-‘বাংলাদেশের।‘
-‘তাহলে তো আপনাদের বিয়ে ইন্টার ন্যাশনাল বিয়ে। কী করে হল?’
-‘সে অনেক কথা।‘
-‘একটু বসবেন নাকি?’
-‘কোথায়?’
-‘এই চেয়ারগুলোয়। চাইলে এখানেই গাইতে পারেন। মনে আছে আমি অনুরোধ দিয়ে রেখেছিলাম?‘
-‘না না, আজ নয়, এখন নয়। এভাবে কী হয় নাকি?’
-‘আলবাৎ হয়। দেখুন তো এই পরিবেশটা আর পাবেন কোথাও। চারপাশে কিছু নেই কুয়াশা ছাড়া। এই মুহূর্তে আমি আপনি আমাদের যে যার জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন। একেবারে আলাদা এবং অ্যালোন। এই মুহর্তেই তো যা মনে আসে তাই করবেন। ওই জীবনে যা অসম্ভব, এখন এই মুহূর্তে সেটা সম্ভব। কাঞ্চনজঙ্ঘা ছবিতেও এমন। রে মানে সত্যজিৎ রায় হয়তো এমনই কিছু একটা বোঝাতে ক্যারেকটারগুলোকে পাহাড়ে তুলে এনেছিলেন। ওই ছবিতেও সমতলের জীবনে যা সম্ভব ছিল না, এই পাহাড়ে উঠে, বিচ্ছিন্ন হয়ে তা সম্ভব হল। আর গান তো আপনার গড গিফ্টেড। যে কোনো জায়গায়, যে কোনো মুহূর্তে আপনি গাইতে পারেন। প্লিজ গান। এমন একটা অ্যাটমোস্ফিয়ার আর কখনো পাব কিনা কে জানে।‘
মেয়েটা গায়ের সঙ্গে লেপ্টে বসে আছে। ও-ও কোনো কথা বলছে না। রেলিং ওপারে তাকিয়ে মায়ের উষ্ণতা থেকে কুয়াশা দেখছে। একটু কেশে গলাটা পরিষ্কার করে নিলেন বাবি সরকার। কী ভাবতে ভাবতে হঠাৎ কাঁচা-পাকার দিয়ে তাকিয়ে হেসে বললেন ‘খুব ভাল হবে না কিন্তু।‘
কাঁচা-পাকার ডান হাতে মোবাইল। সে মোবাইলসুদ্ধু হাত নেড়ে এগিয়ে যাবার ইশারা করল।
কুয়াশার দিকে তাকিয়ে, একটু ভেবে ডান হাতে মেয়েকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে রেখে বাবি সরকার হালকা টানে গাইলেন-
‘তুমি মোর পাও নাই, পাও নাই পরিচয়
তুমি যারে জান সে যে কেহ নয়, কেহ নয়’
কতক্ষণ গেয়েছিলেন বাবি সরকার, নিজেই জানেন না। সম্বিৎ ফিরেই তিনি গান থামিয়ে গায়ে শাল টেনে সলজ্জভাবে বললেন ‘আর, আর পারব না। রেওয়াজ নেই, কিছু নেই।‘
কাঁচা-পাকা তখন অনন্ত কুয়াশার দিকে তাকিয়ে আছে। সেদিকে তাকিয়ে থেকেই অস্ফুট ভাবে বলল ‘ঠিকই, রেওয়াজ নেই। কিছু নেই। যার যেটা প্রয়োজন সেটা থাকে না। আবার যার যেটা প্রয়োজন নেই, সেটা থাকে। এটাই বোধহয় জীবনের সবচেয়ে বড় আইরনি। ঠিক না? আপনি কী বলেন?’
বাবি সরকার এ কথার কী বুঝলেন, না বুঝলেন বোঝা গেল না। তিনি আবার একপ্রস্থ হাসি উড়িয়ে দিলেন। হাসিটা উড়ে পেছনের পাহাড়ের টিলাটার দিকে চলে গেল।
৩
রাতে বাবি সরকার ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। একসময় ঘুম ভেঙে তিনি বুঝতে পারলেন লেপের নীচ দিয়ে এসে একটি হাত তাঁর স্তনের ওপরটা হাঁটকাছে। প্রবেশের পথ চাইছে। হয়তো জ্বরের ঘোরেই হবে। তিনি লেপের নীচে তাঁর হাত দুটো ব্যবহার করে রাতপোশাক আর ব্রা সরিয়ে স্তনদুটো অনাবৃত করে দিলেন। মেয়েটি লেপের মধ্যে ছোট্ট পুঁটুলির মতো ঘুমোচ্ছে। মানুষটা উঠে এসে, অনেকটা যেন বালির অতল থেকে উঠে এসে (আর সে জন্যেই বোধহয় বাবি সরকারের মনে হচ্ছিল যেন অসংখ্য বালি মানুষটার গা-পিঠ থেকে ঝরে ঝরে পড়ছে) বাছুরের মতো বাবি সরকারের একটা স্তনবৃন্ত মুখে পুরে চুষতে লাগল। অনেকক্ষন পরে মানুষটা বুঝতে পারল যে, তার কোনোরকম উত্তেজনা হচ্ছে না বরং কালো স্তনবৃন্তটা বিস্বাদ লাগছে।
জ্বর ও ঘুমের মধ্যে দু’চোখের নীচে তরল অন্ধকারের স্রোত বইছে। অনেক সুদূর, অতল অন্ধকার। এমন অন্ধকারে মানুষ তার গতজন্মও দেখতে পায় বুঝি। দেখতে পায় সাদায় কালোয় তার জীবনের অভিযোজন। সাফল্য, ব্যর্থতা, লুকিয়ে পড়া প্রেম বা প্রেতাকৃতির আত্মীয়স্বজনদের। যে মানুষটা অ্যাতোক্ষণ ধরে বাবি সরকারের একটি স্তনবৃন্ত চুষছিল, তার মধ্যেও জ্বর ও ঘুমের টানে তেমনই কিছু একটা ঘটে থাকবে হয়তো-বা। লেপের নীচে বিছানায় যে চাদর পাতা, তা তেলতেলে মসৃণ। ঘুমন্ত মানুষটা বাবি সরকারের ওপর থেকে ধ্বসে নেমে হয়তো সুদূর কোনো পরাজয়ের প্রতিহিংসাবশত লেপের নীচেই বাবি সরকারের পেটের কাছাকাছি লাথি কষাল একটা। জংগলের রাস্তায় শুকনো পাতা ভাঙার মতো মসমস-করা একটা শব্দ হল তাতে। লাথির আঘাতে বাবি সরকার বিছানা থেকে পিছলে গেলেন। খসে পড়লেন মেঝেতে। হোটেলের জানালায় পুরু কাচ। ঝুল-দেওয়া পর্দার ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছিল, আকাশে কী সব দুর্বোধ্য নক্ষত্রেরা নিজেরা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে জ্বলছে। তার সামান্য নীচেই অন্য একটি হোটেলের মাথা। সেই হোটেলের নিঝুম অন্ধকার মুকুটে একটি সাদা আলো। সেই আলোর দিকে তাকিয়ে কী কারণে যেন বুক-ভাঙা একটা কান্না তালগোল পাকিয়ে উঠে এল বাবি সরকারের গলায়। হঠাৎ তার চোখে ভেসে উঠল ট্রেনে পেপার হাতে নিয়ে বসে থাকা কাঁচা-পাকার ছবিটা। পুরু ঘন ভুরুর নীচে উজ্জ্বল চকচকে দুটো চোখ। গায়ের রঙ ফরসা। গালের চামড়া ফুটো ফুটো। কোথায় কোন হোটেলে এখন আছে ও? ঘুমিয়ে পড়েছে না কি গলা অবধি লেপ টেনে সিলিং-য়ের দিকে তাকিয়ে আছে?
বাবি সরকার উঠে দাঁড়ালেন। পেটে, কোমরের দিকটা টনটন করছে তখনো। উর্ধাঙ্গের পোশাক এলোথেলো হয়েছিল। দেয়ালের হ্যাঙার থেকে শালটা গায়ে জড়িয়ে বাবি সরকার এসে দাঁড়ালেন জানালায়। কী বলছিল যেন তখন ম্যালে কাঁচা-পাকা?
জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇


0 Comments