গুচ্ছ কবিতা
সোমা চক্রবর্তী
একুশে ফেব্রুয়ারী
কলমের নিব তাই বন্দুক হতে চাইছে।
খাতায় বারুদের গন্ধ;
আর-
কালিতে বুলেট-পোড়া ধোঁয়া!
সেদিন, তখনও, বাংলা ভাষার মৃত্যু হয়নি।
বাংলা ভাষায় লেখা হয়েছিল অগ্নি অক্ষরে কবিতা।
সেদিন, কিন্তু, মাতৃভাষায় আর্তনাদ করতে গিয়ে
গলা বুজে যায়নি আমাদের কারোরই!
সোনার বাংলায় সেদিন
সোনার সূর্য উঠেছিল।
আমাদের গলায় সেদিন বেজেছিল
ভাষা-মুক্তির গান!
আজ সন্ধ্যা নিমীলিত বার্ধক্যের খোলসে
মুখ ঢেকেছে আত্মগ্লানি!
আজ আমরা ভিক্ষার হাত বাড়িয়ে রেখেছি
পরের দরজায়।
তাই, কলমের নিব আজ বন্দুক হতে চাইছে!
তাই, খাতার প্রতিটি পাতায় বারুদের গন্ধ;
আর,
কালিতে আবার বুলেট-পোড়া ধোঁয়া!
হে ইতিহাস,
মনে করাও আর একবার অমর একুশে ফেব্রুয়ারী;
মনে পড়াও আরো একবার-
রক্তক্ষয়ী সেই ভাষার সংগ্রাম!
আমার দুখিনী বাংলা
এখনো তোমার ধূলোর গন্ধ,
টুকরো শ্যাওলা আর রাঙামাটি;
এখনো তোমার নিকোনো উঠোনে
ভাতের গন্ধ; নিশ্চুপে নামা
বাঁশের পাতায় সন্ধ্যার ছায়া-
এখনো আকাশে অস্তরাগের
আলোর বিহার; নদীর দুপারে
ডুবজল ঘিরে তরল আঁধার।
এখনো বাংলা হেমন্তে আর
শরতের রোদে- একরাশ কাশ,
ধূপছায়া রং, পল্লীর বধু-
এখনো বাংলা আধো ঘুমে উঠে
শুকতারা দেখা; শিশিরে ভেজানো
সবুজ প্রান্ত দু'চোখে অপার;
এখনো বাংলা উনান, কলসী আর
বেনো জল, এখনো তোমার
আঁচলে শান্তি, চোখ ছলোছল!
বিষাদের পর্ণমোচী
হেমন্তের মধ্যরাত
কুয়াশার ঘেরাটোপে
ঘুমায় নীরবে।
রিক্ত ফসলের ভূমি
পাশ ফিরে শুয়ে আছে।
উঠোনে ঢেঁকির পাশে
ধানের মড়াই,
পুকুরে যাবার পথ
নিথর ঘুমিয়ে আছে।
আলের ধারের কাছে
নিরলস ইঁদুরেরা
জীবন যুদ্ধ বোঝে
ফেলে যাওয়া ফসলের খোঁজে।
চরাচর জুড়ে থাকা অপার আকাশ
রাতের নক্ষত্র বুকে জেগে আছে।
জেগে আছে জোনাকিরা,
ফুল ফোটা ভোর ছুঁয়ে যাবে।
সকাল মেঘের ভেলা
দুঃখ রাতকে চিঠি লেখে,
"দীপাবলী মেখে সেরে ওঠো"।
বিষাদের পর্ণমোচী ঝরে গেলে
কাগজের নৌকা ভাসে
ভাসানের জলে!
জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
0 Comments