পাঁচটি কবিতা /সুমন মল্লিক

পাঁচটি কবিতা 
সুমন মল্লিক


পাথরের ফুল

দিনের শেষে ক্লান্তি থেকে একটি কবিতা বেরিয়ে এলে
বুঝি, কিছু না কিছু ঠিক হারিয়ে ফেলেছি৷

                        হারিয়ে ফেলা আমার নিয়তি

প্রতিটি প্রাপ্তির মাঝে, প্রতিটি আনন্দ মুহূর্তেও
কিছু না কিছু ঠিক হারিয়ে ফেলি৷

কিছু হারিয়ে ফেললেই পলক দু’খানি ভারি হয়ে আসে
আর তাদের নীচে কুমারী নদীর মতো
বয়ে চলে কিছু লৌহবর্ণ নিঃশ্বাস,
                        কিছু পূর্ণ চাঁদের মতো ভুল... 

এই যেমন একটু আগে, সন্ধ্যার কুয়াশা ঠেলে
হাজির হলো জলজ্যান্ত সেই অসম্ভব!
তারপর কিছু একটা ঠিক হারিয়ে ফেললাম 

                            অথচ এই হারিয়ে ফেলা
প্রশান্তি নিয়ে এল মনে, এই হারিয়ে ফেলায় 
              ফিরে এল কেউ... 
                      কেউ নয়, একটি পাথরের ফুল৷

নয়নের চাঁদ

মনে হয় কাছাকাছি
অথচ কত দূরে

বিকেলের কমলা রঙের ভ্রমণে
জলপ্রপাত দেখি দিগন্তে
তারপর কখন যেন সেই জলপ্রপাত
নেমে আসে দু’চোখ ফুঁড়ে–

জলপ্রপাতে চাঁদ ওঠে – নয়নের চাঁদ

জোনাকির মতো ওড়ে কথা

যদি উধাও না হয়, যদি চিরস্থায়ী হয় নয়নের চাঁদ
সেটাই হবে আনন্ত্য উপহার – হব আনন্দে উন্মাদ



রাত্রি বারোটার ঝড়

দৃশ্যপট উপচে উড়াল দিল যে-নারী, তাকে পাখি বলতে পারি
কিন্তু ডানার সংজ্ঞা তো সে-ই ছিনিয়ে নিয়েছে নিয়ম ভেঙে৷
তাই ঝড় বলে তাকে ডাকি... প্রতিটা ঘুমের মাঝে জেগে উঠে
বুকে হাত রাখি, আঁধারবিশ্ব পাই, কাব্য দিয়ে কামনা ঢাকি৷

এমন মধ্যবয়সী পুরুষের এটাই বিধান৷

চাঁদের আলোয় ভিজিয়ে কষ্ট পান করতে করতে হৃদমাঝারে
গ্রীষ্মের শীতলতা এবং শীতের উষ্ণতা কাটাকুটি খেলে আর
শূন্যে বেজে ওঠে ফাগুন-নিশীথের গান৷

এই যে রাত্রি বারোটার ঝড় – এর মাঝে কীভাবে তোমাকে
জাপটে ধরে গুমোট ঘর থেকে উধাও করতে পারি পাপ?
তাই সুখের অসুখে অথবা অসুখের সুখে অনন্ত ভিজে চলি...   
আমার শরীরে ঘনঘোর বিস্ময়, আত্মায় কী দারুণ সন্তাপ!



গীতবিতান 

ছ’টি ঋতু ভেসে ভেসে চলে যায়,
ছ’টি ঋতু ভেসে ভেসে ফিরে আসে৷
এই যাওয়া আর আসার মাঝে
কত কী যে পুড়ে যায়! কত কত নবজন্ম হয়!

‘হৃদিমন্দিরদ্বারে বাজে সুমঙ্গল শঙ্খ৷৷’

এখন
গীতবিতানই আমার প্রাণের আরাম
                       আমার শাশ্বত আশ্রয়৷





অপরাহ্নে

নদীটি ছোট৷ পাড় বরাবর হাঁটতে হাঁটতে কোথায় যাই?

সেকথা না জানলেও, একথা জানি যে
                    আসলে স্মরণের ভেতর সাঁতরাই৷

জলস্রোতে অপরাহ্নের আলো পড়ে৷ ভেসে ওঠে প্রলয়িনী!

একসাথে সাঁতরাই...
                 একসাথে হাতড়াই...
                                  একসাথে পুড়ে মরি৷

নদীটি ছোট৷ তার পাড় বরাবর অপরাহ্নে ব্যথার স্বর্গ গড়ি৷

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇



Post a Comment

0 Comments