জ্বলদর্চি

তড়প – প্রেম, শরীর আর ধোঁকার গল্প /রাকেশ সিংহ দেব

তড়প – প্রেম, শরীর আর ধোঁকার গল্প

রাকেশ সিংহ দেব

পরিচালক – মিলন লুথরিয়া
অভিনয় – আহান শেট্টি, তারা সুতারিয়া, সৌরভ শুক্লা, কুমুদ মিশ্র। 
মুক্তি – ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ 

রেটিং – 3/5

অতিমারী আবহে অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের অকালমৃত্যুর পরে বলিউডে নেপোটিজম নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হয়েছে বিস্তর। ভালো অভিনেতাদের বঞ্চিত করে তারকাপুত্রদের লঞ্চ করে সাউথ সিনেমার অপাচ্য রিমেক বানিয়ে দর্শকদের রীতিমতো গালমন্দ খেয়েছে বলিউডের তথাকথিত গডফাদাররা। কিন্তু একথা অস্বীকার করার জায়গা নেই বলিউডে তারকাপুত্রের কমতি নেই। তাই দর্শকদের ক্ষোভের আগুন একটু থিতিয়ে আসার পরিস্থিতিতে বলিউড সফর শুরু করলেন বলিউডের স্টার সুনীল শেট্টির ছেলে আহান শেট্টি। কোনও ঝুঁকি না নিয়ে নিজের ছেলের ডেবিউর দায়িত্ব পরিচালক বন্ধু মিলন লুথরিয়াকে দিয়েছেন সুনীল শেট্টি। প্রযোজনায় সাজিদ নাদিয়াদওয়ালা। কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যাননি মিলন ও সাজিদ। সেই সুপারহিট সাউথ সিনেমার হিন্দি রিমেকের চেনা ছকে হেঁটেছেন পরিচালক। তেলুগু ছবি ‘আর এক্স ১০০’-এর প্রায় ফ্রেম টু ফ্রেম রিমেক হিসেবে তৈরি করেছেন ‘তড়প’। কেমন হল মুভি? প্রথম মুভিতে নবাগত আহান শেট্টি কেমন অভিনয় করলেন? সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। তার আগে মূল তেলুগু ছবিটি নিয়ে লেখা প্রয়োজন। এক সাধারণ যুবক শিবার জীবনের বাস্তব ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত ‘আর এক্স ১০০’ (RX 100) ২০১৮ সালে মুক্তি পায়। সে ছবিতে নায়ক ও নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেন কার্তিকেয় ও পায়েল রাজপুত। বাস্তব জীবন থেকে উঠে আসা অন্য ধারার এক প্রেম কাহিনী হিসেবে দ্রুত দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে মুভিটি। সেই গল্পই আবার উঠে এসেছে বড় পর্দায়। ‘আর এক্স ১০০’ (RX 100) মুভিটির গল্প গ্রামীণ অন্ধ্রপ্রদেশে সেট করা হয়েছিল এবং পরিচালক মিলান লুথরিয়া তার মুভি তড়প উত্তরাখণ্ডের উপত্যকায় সেট করেছেন। ছবিটির একটি বড় অংশের শুটিং হয়েছে মুসৌরিতে। শুধু চরিত্রদের নামে কিছু তফাত রয়েছে। 


মুভিতে ইশানার চরিত্রে অভিনয় করেছেন আহান। স্থানীয় বিধায়কের মেয়ে রামিশার প্রেমে পড়ে ইশানা। তাদের সম্পর্ক নিবিড়ভাবে শারীরিক হয়ে ওঠে। ইশানা, তার প্রেমে পাগল হয়ে পড়ে এবং রামিশার প্রতি আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। তারপর যা হওয়ার তাই-ই হয়। রামিশার (তারা সুতারিয়া) অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়। এর ফলে ঈশানা আত্মবিধ্বংসী হয়ে ওঠে  ‘দেবদাস’ হয়ে ঘুরে বেড়াতে থাকে।এখানে চরিত্রের মধ্যে অনেকটা শাহিদ কাপুরের কবীর সিং এর ছায়া চোখে পড়ে। বিয়ের তিন বছর পর বাপের বাড়ি ফিরে আসে রামিশা। হারানো প্রেম ফিরে পাওয়ার আশায় উৎফুল্ল হয়ে ওঠে ইশানা। কিন্তু ভাগ্য তার জন্য অন্য পরিকল্পনা করে রেখেছে। আখেরে কী হয়, তা অনেকেরই জানা। কারণ তেলুগু ছবিটি এখনও পর্যন্ত ইউটিউবে স্বমহিমায় রয়েছে। ‘তড়প’ ছবির ক্ষেত্রেও গল্পের শেষের খুব একটা হেরফের হয়নি। আহান শেট্টি অ্যাকশন দৃশ্যে মন্দ নন। বিরহী মদ্যপ প্রেমিকের আবেগের দৃশ্যগুলিতেও উতরে গিয়েছেন। তবে রোমান্টিক দৃশ্যে নবাগত অভিনেতাকে কিছুটা দুর্বল লেগেছে। কিছু জায়গায় গানের লিপও মেলাতে পারেননি। তারা সুতারিয়ার অভিনয় ভাল লাগে। চরিত্রের নেগেটিভ শেডের জন্য নিজের সৌন্দর্যকে সুন্দরভাবে ব্যবহার করেছেন অভিনেত্রী। কুমুদ মিশ্র ও সুমিত গুলাটি ভালভাবেই নিজেদের ভূমিকা পালন করেছেন। তবে এ ছবির আসল নায়ক সৌরভ শুক্লা। ইশানার ‘ড্যাডি’র চরিত্রে তাকে দেখেই মন ভরে যায়।ছবির গল্প নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। পরিচালক মিলন লুথরিয়া এক্কেবারেই গতে বাঁধা পথে হেঁটেছেন। তবুও এ সিনেমা দেখতে মন্দ লাগেনি। কারণ গল্পের ভিত বাস্তব। আর বাস্তব কখনও একঘেয়ে হয় না।

বলিউড চলচ্চিত্রগুলি প্রায় সবসময়ই পুরুষদের দৃষ্টি নিয়ে উপস্থাপিত হয়ে থাকে। ‘আর এক্স ১০০’ এবং এটির রিমেক, ‘তড়প’, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এক নারীর দৃষ্টিতে তৈরি হয়েছে। এখানে নায়িকার লালসার ফাঁদে পড়ে নায়ক। যদিও মুভিতে নায়িকার যৌন লালসার অভিব্যক্তি এতটা খোলামেলাভাবে দেখানো হয়না। কিন্তু চিত্রনাট্যের বহময়তায় দর্শকদের বুঝতে অসুবিধা হয়না।  ‘আর এক্স ১০০’-এ নায়কের প্রতি নায়িকার আকর্ষণ পর্যায়ক্রমে দেখানো হয়েছিল। নায়িকার  নির্বোধতা আর সাহসিকতার সাথে ভারসাম্য বজায় রেখে। তড়পে সেই ভারসাম্য খুব একটা বজায় রাখা হয়নি। গল্পের কার্যধারায় তাই খুব তাড়াহুড়া দেখা যায়। ‘আর এক্স ১০০’ কে হিট করতে সঙ্গীত একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। এখানে প্রীতম সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে সেই কাজটি দক্ষতার সাথে করেছেন।  মুভি রিমেক হলেও তড়পের শ্রুতিমধুর অরিজিনাল স্কোরগুলি সঙ্গীত প্রেমীদের কাছে বছরের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি। 

রেটিং
5 - অসাধারণ
4 - বেশ ভালো
3 - ভালো
2 - দেখতে পারেন
1 - না দেখলেও চলবে

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇




Post a Comment

0 Comments