জ্বলদর্চি

মেদিনীপুরের রসায়ন বিজ্ঞানী ড. শৌভিক মাইতি এবং এক সত্যিকারের 'ফেলুদা' ― ০৪ (অন্তিম পর্ব)/পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা

বিজ্ঞানের অন্তরালে বিজ্ঞানী ।। পর্ব ― ৫২


মেদিনীপুরের রসায়ন বিজ্ঞানী ড. শৌভিক মাইতি এবং এক সত্যিকারের 'ফেলুদা' ― ০৪ (অন্তিম পর্ব)

পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা


'চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির...'

সালটা ২০০২। ডিসেম্বর মাস। হিমেল বাতাসে অল্প শীতের আভাস। ভারত সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা মন্ত্রক (CSIR)-এর সদরদপ্তর রয়েছে রাজধানী দিল্লিতে। সি. এস. আই. আর-এর অধীনস্থ একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব জেনোমিকস অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজি (IGIB)। সেবছর IGIB-তে বিজ্ঞানী হিসাবে কাজে যোগ দিলেন ড. শৌভিক মাইতি।

তিনি মূলত রসায়ন বিজ্ঞানী। পিএইচডি করেছেন পলিমার কেমিস্ট্রিতে। অথচ বর্তমানে তাঁর রিসার্চের ক্ষেত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন― ন্যানো বায়ো-টেকনোলজি। হার্ডকোর অরগ্যানিক কেমিস্ট্রির পলিমার থেকে জীব অণুবিদ্যা! কীভাবে সম্ভব হল এমন রূপান্তর? তাঁর নিজের কথায়―
'একদিন আমার এক ছাত্রী আমাকে মল্যুকিউলার বায়োলজি (Molecular Biology)-র একটি বই উপহার দেয়। ওই বইটি পড়তে পড়তে একটি নতুন দিগন্তের সন্ধানে উৎসাহ জাগে।'
ইংরেজিতে 'Polymath' নামে একটি শব্দ আছে। সে-কথার সার্থক উদাহরণ যেন তিনি। কেমিস্ট্রি ছেড়ে বায়োসায়েন্সে এখন তাঁর স্বতস্ফূর্ত অবাধ বিচরণ! স্বভাবতই বিষ্ময় জাগে মনে; অনেক প্রশ্নের উদ্রেক হয়। ন্যানো-বায়োটেকনোলজির একটি মস্ত বড় ব্যবহারে ডি. এন. এ. পলিমারগুলির মিথষ্ক্রিয়ার বায়োফিজিক্যাল ব্যাখ্যা প্রদান তাঁর অবদান। এ হেন ফিল্ডে তাৎক্ষণিক কো-পলিমার প্রক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে একগুচ্ছ নতুন ন্যানো-পারটিক্যাল খুঁজে পেয়েছেন তিনি। অন্যান্য ন্যানো-পারটিক্যালের মত নতুন কণাগুলো জল মাধ্যমে বেশ স্থিতিশীল। বিবিধ ভেষজ অণু সমূহের বাহকের কাজ করে কণাগুলো। ন্যানো মাত্রার বায়ো-সেনসর আর বায়ো-চিপস ডিজাইনের ক্ষেত্রে পরবর্তী প্রজন্মের মেটেরিয়াল হিসাবে নির্দিষ্ট ছাপ রাখার দাবিদার তাঁর আবিষ্কৃত পারটিক্যালগুলি। 

ডি. এন. এ. (DNA) হল একটি বায়ো-ম্যাক্রো অণু, যা জৈব দ্রাবকে সহজ দ্রাব্য নয়। জৈব দ্রাবকে দ্রবীভূত হওয়ার নির্দিষ্ট শর্ত আছে― DNA পারটিক্যালের মাত্রার পাল্লা আরও কমে ন্যানোমিটার স্কেলে আনা দরকার। সেজন্য তিনি একটি চমৎকার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। সে-প্রণালীতে সাধারণ জৈব দ্রাবকে DNA অণুর দ্রাব্যতা গণনা করা হয়। DNA অণু শুধু দ্রবীভূত হলেই হয় না; দ্রবনে তার গুরুত্বপূর্ণ বায়োলজিক্যাল গুণাগুণ অক্ষুন্ন থাকে ষোলোআনা। 
       
তাঁর আরও একটি অত্যাশ্চর্য পদক্ষেপ PEG based cationic hyperbranched polymer আবিষ্কার ও তার উন্নতিসাধন করা। এ হেন পলিমার এনজাইমেটিক অবক্ষয় থেকে আর. এন. এ. (RNA)-কে রক্ষা করে। কীভাবে রক্ষা পায় RNA? DNA-এর মতো RNA অণুও একটি বায়ো-ম্যাক্রো পারটিক্যাল। তা থেকে জলে দ্রবীভূত ন্যানো পারটিক্যালে রূপান্তর করে অসাধ্য সাধন করে ফেলেন তিনি। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে RNA-কে  সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। বহু দূর পর্যন্ত RNA অণু বয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। ওই সংরক্ষিত RNA জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ভিত্তি প্রস্তর।

নিউক্লিক অ্যাসিড নিয়ে তাঁর নিরন্তর গবেষণা অব্যাহত। কঠোর গবেষণায় ডুবে থেকে  আবিষ্কার করে ফেলেছেন একের পর এক মণিমুক্তো। গবেষণায় সাফল্যের পিছু পিছু এসেছে খ্যাতি, যশ, সম্মাননা আর পুরস্কার। সালটা ২০০৭। সেবছর একনিষ্ঠ মৌলিক গবেষণা কর্মের জন্য ভারত সরকারের 'তরুণ বিজ্ঞানী অ্যাওয়ার্ড' (Young Scientist Award) লাভ করেন তিনি। CSIR-এর তৎকালীন ডিরেক্টর ড. টি. রামস্বামী ওই সম্মান গ্রহণের আমন্ত্রণ পত্র পাঠান ২০শে আগস্ট, ২০০৭। আমন্ত্রণ লিপিতে ড. রামস্বামী উল্লেখ করেছেন―

Dear Dr. Maity,

I learnt with delight that a peer-valued advisory committee has chosen you for "C.S.I.R. Young Scientist Award" for the year 2007 at Chemical Science. I am writing this to convey my heartfelt congratulations and best wishes. This award designed to serve as recognition of the promise in you and your team. We are certain that such and encouraging recognition would motivate you to unless your creative energy and accomplish greater goals and objectives in research. I am certain that the award would urge your colleagues and you to seale newer heights.

          The award will be presented to you on 26 September 2007 (Wednesday), the CSIR Foundation Day. I have great pleasure in inviting your spouse and you on 26th September 2007.
                 
                           With my best wishes
                                Yours Sincerely
                               Sd. T. Ramasami

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা দপ্তরের তৎকালীন মাননীয় মন্ত্রী আর মাননীয় ড. টি. রামস্বামী'র স্বাক্ষরিত অভিজ্ঞান পত্রে আরও লেখা হল―
'The CSIR Young Scientist Award for the year 2007 in Chemical Sciences has been awarded to Dr. Souvik Maity of the Institute of Genemics and Integrative Biology, Delhi. Dr. Maity developed a novel methodology to establish DNA organic solvents.'
এই সম্মাননা প্রাপ্তির পরেই ডিসেম্বর মাসে তাঁর এক লম্বা সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয় 'বায়ো-স্পেকট্রাম' (Biospectrum) পত্রিকায়। উক্ত কথোপকথনে উঠে আসে তাঁর সাম্প্রতিক ও যাবতীয় গবেষণার খুঁটিনাটি সব তথ্য।
       
ইতিপূর্বে খড়গপুর আই. আই. টি-তে তিনি এসেছিলেন একটি সেমিনারে যোগ দিতে। সেদিনটা ছিল ২৩শে আগস্ট ২০০০ সাল। ওই দিন আই. আই. টি-র বায়োটেকনোলজি ডিপার্টমেন্টের সেমিনারে তিনি একটি বক্তৃতা রাখেন। নিজের গবেষণা ক্ষেত্রটিকে সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে সেটা ছিল তাঁর আন্তরিক প্রয়াস। পরদিন ২৪শে আগস্ট বায়োটেকনোলজি ডিপার্টমেন্টের বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যাপক ড. টি. পণ্ডা শংসাপত্রে লেখেন―

"Dear Dr. Maity,

Thank you very much for your kind seminar on 23rd August, 2000 at 16:30 hrs. On the topic 'Interaction of minor groove ligands to and AAATT/AATTT site placed inoligomers with different structures which was very much relevant to us and the audience appreciated the search idea in this regard. If it is possible, in near future, also you can stimulate is delivering such interesting topic as well as we welcome you to interact with our faculty and students."

আজ ড. শৌভিক মাইতি'র যোগ্য দোসর তাঁর গবেষক পত্নী ড. বীণা পিল্লাই। মাইক্রো-বায়োলজিস্ট ও জিন বিজ্ঞানী। তিনি মূলত কেরালার বাসিন্দা। ২০০৪ সাল থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা মন্ত্রকের একজন খ্যাতনাম্নী বৈজ্ঞানিক। ২০০৮ সালের ইয়ং সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড (Young Scientist Award) এবং ২০০৯ সালের ইনসা (INSA বা Indian National Science Academy)-র ইয়ং সায়েন্টিস্ট মেডেল (Young Scientist Medal) বিজয়িনী। ২০১৭-২০১৮ সালে ভারত সরকারের ন্যাশনাল বায়োসায়েন্স অ্যাওয়ার্ড ফর ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট পুরস্কার জয় লাভ করেন তিনি। গবেষণার লক্ষ্যে CSIR-এ কাজের সূত্রে তাঁর দিল্লির IGIB-তে আসা। সেখানেই তরুণ বৈজ্ঞানিক ড. শৌভিক মাইতি'র সঙ্গে তাঁর পরিচয় ও পরিণয়। ২০০৪ সালে সাত পাকে বাঁধা পড়েন তাঁরা। তাঁদের একমাত্র পুত্র সন্তান পপাই, ওরফে শ্রেয়স মাইতি।

(২)
আজ পর্যন্ত ড. শৌভিক মাইতি'র গবেষণা লব্ধ শতাধিক আর্টিকেল দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে। গবেষণা সমৃদ্ধ তাঁর এক একটি জার্নাল যেমন মৌলিক বিষয়ের আমদানিতে অভিনব, তেমনি তথ্য বহুল বলিষ্ঠ আবিষ্কার। জার্নালগুলি দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মহলে তাঁর কদ‍র অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে। আর সেসব গবেষণার হাত ধরে এসেছে একগুচ্ছ পুরস্কার। ২০০৭ সালে 'ইয়ং সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড' দিয়ে শুরু। ওই বছর আরও একটি পুরস্কার পান লক্ষ্ণৌ থেকে। লক্ষ্ণৌ-এর CDRI অ্যাওয়ার্ড তাঁর দ্বিতীয় প্রাপ্তি। প‍রের বছর, ২০০৮ সালে, জাপান থেকে পান JSPS (Japan Society for the Promotion of Science) ফেলোশিপ। ভারত সরকারের DST দপ্তর থেকে এল 'স্ব‍র্ণজয়ন্তী ফেলোশিপ'; ২০০৯ সালে। আবারও একটি ইয়ং সায়েন্টিস্ট পুরস্কার। ২০১০ সালে পান 'NASI–SCOPUS ইয়ং সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড', SCOPUS ২০১০। AVRA ফাউন্ডেশন গ্রুপের পক্ষ থেকে 'AVRA Foundation Award' পেয়েছেন ২০১১ সালে। তবে এযাবৎ কালের সর্ববৃহৎ সম্মাননা প্রাপ্তি ২০১৪ সালে।
            
ভারত সরকারের সর্বোচ্চ বিজ্ঞান-সম্মান 'শান্তিস্বরূপ ভাটনাগর পুরস্কার'। তিনি ২০১৪ সালের সেই শান্তিস্বরূপ ভাটনাগর পুরস্কার লাভ করেন রসায়ন বিভাগে। ২০১৫ সালে মিলল DBT বায়োসায়েন্স অ্যাওয়ার্ড। শুধু মাত্র পুরস্কার প্রাপ্তিতে সীমাবদ্ধ থাকেনি তাঁর সাফল্যের সিঁড়ি। ২০১৩ সালে ব্যাঙ্গালোর-এর Indian Academy of Science এবং দিল্লির National Academy of Science―এর সম্মানিত ফেলো নির্বাচিত হন তিনি। বর্তমানে তিনি কলকাতার বোস ইনস্টিটিউট-এর অ্যাডভাইজরি কমিটির একজন সম্মাননীয় সদস্য।

এভাবে সময়ের সঙ্গে এগিয়ে চলে তাঁর বিজয়রথের চাকা। তারপর এল সেই কঠিন সময়। ২০২০ সাল। পৃথিবী জুড়ে এক গাঢ় অন্ধকার সময় ঘনিয়ে এল। গোটা ভারতে আছড়ে পড়ল করোনা ভাইরাস ঢেউ আর সীমাহীন আতঙ্ক। করোনা আক্রান্ত কি-না তার ভয়! দুর্বল মনের প্রোপাগান্ডা ও অস্থিরতা। চরম দোদুল্যমানতা। আরও আতঙ্ক জুগিয়ে চলে মিডিয়া-সরকার-চিকিৎসা দপ্তর, হাসপাতালে শয্যার অপ্রতুলতা আর অগণিত মৃত্যুর অবিরাম মিছিল।

এসময় নিজ নিজ কাজ সাময়িক স্থগিত রেখে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়েন পুলিশ-প্রশাসন-ডাক্তার-নার্স-সরকার। পিছিয়ে ছিলেন না দেশের বৈজ্ঞানিকগণ। দেশ জুড়ে বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে দিন-রাত-এক-করে করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক-টিকা-কিটস আবিষ্কারে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন পণ্ডিতরা। নিজ নিজ গবেষণার কাজ বন্ধ রেখে।

সময়ের এই প্রয়োজনে হাত লাগালেন বৈজ্ঞানিক ড. শৌভিক মাইতিও। স্থগিত রাখলেন তাঁর বায়ো-ন্যানোটেকনোলজি গবেষণা। কাঁধে নিয়ে নিলেন করোনা ডিটেকশন কিট আবিষ্কারের গুরু দায়িত্ব। করোনা পজিটিভ কিংবা নেগেটিভ নির্ণয়ের কিট আবিষ্কারে এগিয়ে এলেন তাঁর বন্ধু-বৈজ্ঞানিক ড. দেবজ্যোতি চক্রবর্তী। তাঁদের দুজনের যৌথ গবেষণায় অল্প কিছু দিনে মিলল সাফল্য। স্বল্প খরচে আর ন্যূনতম সময়ে করোনা র‍্যাপিড টেস্টের ডিটেকশন কিট আবিষ্কার করে গোটা দেশে তোলপাড় ফেলে দিলেন দুজনে। তাঁদের আবিষ্কৃত কিট-এর নাম রাখলেন 'ফেলুদা'। পুরো নাম 'FnCas9 Editor Linked Uniform Detection Assay'। সংক্ষেপে, FELUDA। সময়টি বেশ অভিনব ও অপ্রত্যাশিত। কারণ ২০২০ সালটা ছিল অস্কার বিজয়ী চিত্র-পরিচালক শ্রদ্ধেয় সত্যজিৎ রায়-এর জন্ম শতবর্ষ। তাঁর-ই এক অমর সৃষ্টি গোয়েন্দা সিরিজ 'ফেলুদা'। বাংলা ও বাঙালির প্রিয় ডিটেকটিভ চরিত্র। এ হেন কল্প-চরিত্রের স্রষ্টার প্রতি সম্মান জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যেই কিটস-এর নামকরণ করেছিলেন বৈজ্ঞানিকদ্বয়। ফেলুদা কে, কী, কেন, কীভাবে কাজ করে― তা এই সিরিজের বিগত পর্বগুলোতে আলোচনা করা হয়েছে।  
         

ড. শৌভিক মাইতি'র বহুমাত্রিক গবেষণায় নবতম সংযোজন 'সিকল সেল অ্যানিমিয়া'। এটি একটি বংশগত রোগ। ভারতে এই রোগটির প্রকোপ খুব বেশি। রোগটি নির্মূল করার বিষয়ে তিনি এবং বন্ধুবর ড. দেবজ্যোতি চক্রবর্তী খুব শীঘ্রই গবেষণা শুরু করেছেন। ভারত সরকারের তরফ থেকে গবেষণার জন্য পেয়েছেন বিশাল অঙ্কের আর্থিক অনুদান।

(৩)
কবি ঋত্বিক ত্রিপাঠীর অমোঘ স্বীকারোক্তি―
                  'চেয়েছি বলেই দেশ;
           নইলে একটাই পৃথিবী হয়।'

দেশ-কাল-সীমানার নির্মাণ করেছে মানুষ। ধর্মের কাঁটাতারের সীমাও তার-ই নির্ধারিত ফসল। তা করতে গিয়ে মানুষে-মানুষে, ধর্মে-ধর্মে, বর্ণে-বর্ণে, গোষ্ঠী-গোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির মূলেও সে-ই মানুষ। এমনকি আকাশেও আজ অদৃশ্য কাঁটাতারের বেড়া, হুমকি। অথচ করোনা প্যানডামিক সিচুয়েশন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেল পুরো পৃথিবীটা আসলে গোটা একটাই দেশ। একটাই আরশিনগর। আমরা সকলে তার বাসিন্দা। একটা সীমান্ত! একটা জাতি। সে জাতির নাম মনুষ্য জাতি। সেই সীমান্তে ও তার কোণায় কোণায় আঘাত হেনেছে কোভিড-১৯। কোনও দেশের কাঁটাতারের বেড়াজাল তাকে আটকে রাখতে পারেনি। ভাইরাসের অঘোষিত সে-যুদ্ধে সমগ্ৰ বিশ্ববাসী একযোগে প্রতিরোধ-লড়াই করে চলেছে করোনা অতিমারীর বিরুদ্ধে। সে-যুদ্ধে কোথায় আজ বিভাজিত কাঁটাতারের সংকীর্ণ বেড়া? কোথায় বা সীমানা? একসঙ্গে সবাই আমরা প্রার্থনা করে চলেছি; হাতে হাত মিলিয়ে মানব-প্রাচীর, বন্ধন দৃঢ় করে চলেছি প্রতিনিয়ত।

যদি পুরো পৃথিবীটা গোটা একটা দেশ আরশিনগর হত, থাকত না কোনও ভেদাভেদ; তবে বিশ্বের সকল বিজ্ঞানী আমার পড়শি হত। তাঁদের অনুপ্রেরণাময় সাফল্যের উল্কাগতি আমাদের গর্বিত করত। যদিও মানুষের তৈরি শত বিভক্ত মেদিনীতে শুধু একটা জিনিসের ভাগ আজ পর্যন্ত হয়নি। বলা ভাল―বিভাজন করতে পারেনি মানুষ। সে হল বিজ্ঞান। মডার্ন সায়েন্স। এ হেন বিশ্বের বিজ্ঞান যেন এক অচিন আরশিনগর। তার কল্যাণে এ যাত্রায় রক্ষা পেল মানবজাতি। সাফল্যের এই কৃতিত্বে পণ্ডিত বৈজ্ঞানিকগণের ভূমিকা অপরিসীম। তাঁদের পরিশ্রমী সঠিক পদক্ষেপ, গবেষণা সমাজকে সঠিক দিশা দেখায়। ড. শৌভিক মাইতি তেমনই একজন স্বনামধন্য বৈজ্ঞানিক। তাঁর গবেষণার সাফল্যে আমরা আনন্দিত। আরশিনগর অখণ্ড মেদিনীপুরের বাসিন্দা হিসাবে তাঁর সাফল্যে আমরা গর্বিত। (সমাপ্ত)

তথ্য-সহায়তা :
●শ্রদ্ধেয় বৈজ্ঞানিকের পিতা ড. সুকুমার মাইতি মহাশয়
●সুকুমারচর্চা : সম্পাদনা শ্রী শ্যামল বেরা
●আনন্দবাজার, আজকাল, দি টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকাসহ অন্যান্য প্রিন্ট মিডিয়া

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇





Post a Comment

0 Comments