জ্বলদর্চি

বদলে গেল সরস্বতী আরাধনা! /গার্গী তালধি

বদলে গেল সরস্বতী আরাধনা! 

গার্গী তালধি

এইতো ৫-৬ বছর আগে আমরা স্কুলে পড়তে যেতাম। আর সরস্বতী পুজো মানে শুধু বিদ্যার দেবীর আরাধনা একেবারে নয় সাথে হৈ হুল্লোড় ,স্কুলের পুরস্কার বিতরণী,অনুষ্ঠান আর শেষে আমাদের নাটক। হ্যাঁ খুব জমজমাট একটা ব্যাপার।বলা যায় সারা বছরের অপেক্ষার দুটি দিন।

পুজোর দু সপ্তাহ আগে থেকে আমাদের প্রস্তুতি চলত।না মোটেই কি পরবো ,কোথায় ঘুরবো, কার সাথে ঘুরবো তা নয়।কারণ পুজোর দুদিন তো কোন দিক দিয়ে সময় কাটবে আমরা বুঝতেই পারতাম না।

সপ্তাহ আগে থেকে শুরু কাজের ভার দেওয়া।কে ঠাকুর আনবে, কে স্কুলের ঘর পরিষ্কার করবে, কে সাজাবে, কে এসব তদারকি করবে আর সাথে নাটকের মহড়া। হৈহৈ করতে করতে আমরা কাজে লেগে পড়তাম।সে কি আনন্দ।সাথে শিক্ষকরা অবশ্য বাদ যেতেন না।আগের দিন দেবীকে বরণ করে বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যেই হয়ে যেত।পরের দিন ভোর থেকে উঠে সবাই আবার কাজে লেগে পড়ত। হুঁ মেয়েরা শাড়ি পড়ত বৈকি।তবে কাজ শেষ করে সবাই একসাথে শাড়ী পরে অঞ্জলী দিতে আসতো।অঞ্জলী শেষে খিচুড়ি খেয়ে আবার ব্যস্ত অনুষ্ঠান নিয়ে।শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি তখন।ওদিকে সবার মা বাবা এসে পড়তেন ছেলে মেয়েদের অনুষ্ঠান দেখতে ।পুজোতে, অনুষ্ঠানে,কাজে,আনন্দে, বন্ধুদের নিয়ে কি করে যে কেটে যেত সেই দুটি দিন বোঝাই যেত না।
কাজের ফাঁকে অবশ্য ছেলেরা একটু আড়চোখে বান্ধবীকে শাড়ী পরে কেমন লাগছে দেখতে চেষ্টা করতো।আবার প্রিয় বান্ধবীর সাথে অঞ্জলী দিয়ে খিচুড়ি খেতে বসাই এক আলাদা আনন্দের ছিল ছেলেদের কাছে।হলুদ শাড়ি আর পাঞ্জাবিতে সেজে ঘুরতেই হবে এমন কোনো ব্যাপার ছিল না অথবা বান্ধবী নেই বলে ছেলেটার সাথে কেউ ঘুরছে না এরকমটাও তো দেখা যেত না।

সরস্বতী পুজো মানে পড়াশুনো ফেলে শিক্ষক আর ছাত্রছাত্রী মিলে হৈহৈ করে দেবীবন্দনা।তার মাঝে প্রিয় বন্ধু অথবা প্রিয় বান্ধবীর সাথে একটু সহজভাবে সময় কাটানো।কিন্তু কয়েকটা বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সবকিছুর কেমন পরিবর্তন।

এখনকার সরস্বতী পুজোটা ঠিক আলাদা। প্রিয় বন্ধু বা বান্ধবী নিয়ে আলাদা ভাবে সময় কাটানো আর হ্যাঁ বাসন্তী রঙের শাড়ি আর পাঞ্জাবি তো এখন অবশ্যই চাই।নাহলে যেনো কেমন পিছিয়ে পড়া মনে হয় নিজেকে।

হঠাৎ করে পুজোর ধ্যানধারণা পরিবর্তনের কারণটা কি ঠিক ঠাওর করতে পারছি না। করোনা কালে স্কুল বন্ধ হয়েই কি সবাই আত্মকেন্দ্রিক নাকি ঐটাই....বাঙালি স্রোতের দিকে ভাসতে ভালোবাসে।


জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇




Post a Comment

0 Comments