জ্বলদর্চি

ভাষার ভাসা ডোবা /বিজন সাহা

ভাষার ভাসা ডোবা 

বিজন সাহা 

বাসার অদূরে বনে সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা পাইন গাছগুলোর ভেতর দিয়ে উঁকি দেবে শীতের সূর্য। যেন বলবে “বরফ গলুক আর নাই গলুক – আজ বসন্ত।” আর আমাদের কাছে বসন্ত মানেই ফাগুন, বসন্ত মানেই একুশ, মানে রফিক, শফিক, জব্বারের রক্তে লাল রাজপথ। বসন্ত মানে বাংলা, বাঙালি, বাংলাভাষা। 

স্থান আর কালের দূরত্ব ভেদ করে পোড়া মাটি আর পোড়া মানুষের গন্ধে ভারী হয়ে ওঠে বাতাস। বাংলার মাঠ ঘাটের আগুনের সেই লেলিহান শিখা হৃদয় পুডিয়ে ছারখার করে দেয় এই সুদুর বিদেশেও। ভ্রুষ্ট রাজনীতির দ্বারা ধর্ষিতা বাংলা মায়ের বুকফাটা আর্তনাদে খান খান হয়ে যায় নীরবতা। অবরুদ্ধ মন ছুটে যায় পাগলের মত শুধুই দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে থমকে দাঁড়ানোর জন্য। কিন্তু কেন একুশের কথা মনে হলেই এমন হয় – একাত্তরের নয় কেন? একাত্তরের সংগ্রাম ছিল রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক স্বাধীনতার সংগ্রাম। তবে বর্তমান বিশ্বে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ব্যাপারটা খুবই আপেক্ষিক। পৃথিবীর সব দেশ আজ বড় বড় কিছু রাঘব বোয়ালদের উপর  এমন ভাবে নির্ভরশীল যে এই স্বাধীনতা অনেকটা কাগুজে ব্যাপার। আর একুশ হচ্ছে আমাদের বাংলা ভাষাকে, বাঙালির সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই। একটা জাতির বেঁচে থাকার জন্য, বিকাশের জন্য ভাষা আর সংস্কৃতির গুরুত্ব তার রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চেয়ে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। তাইতো আমরা বার বার ফিরে আসি একুশের ডাকে, শপথ নেই একুশের নামে। এটা অনেকটা মায়ের কোলে ফেরার মত, মায়ের বুকে মাথা রেখে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখার মত, নতুন জীবন গড়ে তোলার শপথ নেবার মত।   

একুশে ফেব্রুয়ারী। ছোট বেলায় আমরা একে বলতাম শোক দিবস। ঐ দিন আমরা প্রভাতফেরী করে রফিক, শফিক, বরকত, জব্বারসহ অন্যান্য ভাষা শহীদদের স্মরণ করতাম। তারপর এক সময় শোক দিবস শহীদ দিবস বলে আখ্যায়িত হল। আর বিগত কয়েক বছর আমরা একে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবেই চিনি। শেষের নাম থেকেই বোঝা যায় এ দিনটি বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মান পেয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে গর্বের বিষয়। 

কিন্তু কি এই একুশ বাঙালির জীবনে? যদিও সেই ১৯৪৮ সালে ধীরেন্দ্রানাথ দত্তের বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার  দাবি পূর্ব পাকিস্তানে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী মনোভাবের প্রথম বহিঃপ্রকাশ, আর জিন্নাহর “উর্দু, একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা”র বিরুদ্ধে ছাত্রদের “না, না” শ্লোগান ভাষার দাবীতে প্রথম প্রতিবাদ, বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের অঙ্কুরটা কিন্তু আলোর মুখ দেখেছিল বাহান্নর এই একুশে ফেব্রুয়ারীতেই। ভাইকে হারিয়ে ক্রন্দনরত বাঙালির শোক পরিণত হয় ক্রোধে। সেই ক্রোধের আগুনে একে একে পুড়ে যায় দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিতগুলো। ৫৪, ৬২, ৬৯ - বার বার গর্জে উঠে বাঙালি। আর ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের মত এক চরম মূল্য দিয়ে বাঙ্গালী পায় স্বাধীন দেশ – সোনার বাংলাদেশ। তবে এই সবকিছুর মধ্যেও একুশ এক কেন্দ্রীয় ভুমিকা পালন করেছে, করছে। আর তাই হয়ত কাকতালীয় হলেও একুশের ঠিক পাঁচ দিন পরে, মানে ছাব্বিশে জাতি নেমেছে স্বাধীনতা সংগ্রামে আর একুশের ঠিক পাঁচ দিন আগে, মানে ষোল তারিখে সে ছিনিয়ে এনেছে স্বাধীনতার বিজয় সূর্য। 

বিভিন্ন সময়ে এ দেশের সামন্ত রাজারা দিল্লীর শাসনের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ালেও  সেটা কখনই বাঙালি  জাতীয়তার লড়াই ছিল না। খুব সম্ভব ব্রিটিশ আমলের আগে এই দেশ কখনই যারা নিজেদের বাঙালি ভাবেন আর বাংলা ভাষায় কথা বলেন, তাদের দ্বারা শাসিত হয়নি। হয়তোবা রাজা রামমোহন রায়, মাইকেল মধুসুদন দত্ত, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামসহ অসংখ্য মনিষী যারা বাংলার সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে আমূল পরিবর্তন আনেন, বাংলা সাহিত্য, শিল্প আর সংস্কৃতিকে নতুন মাত্রা দেন, তারাই জন্ম দেন বাঙালি জাতীয়তাবাদের, যদিও সেটা ছিল ভারতের মধ্যে থেকেই বাংলার স্বাতন্ত্র্য অবস্থান। এমন কি পাকিস্তানের সৃষ্টিও হয় বাঙালি জাতীয়তাবাদকে অস্বীকার করেই, দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে, ধর্মকে সামনে এনে। এখানে মনে রাখতে হবে যে যখন ভারত বিভাগ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠে তখন বাংলার রাজনৈতিক দলগুলো ভারত ও পাকিস্তানের বাইরে স্বাধীন বাংলার সম্ভাবনা নিয়ে আলচনা শুরু করে।  তাই পাকিস্তানের জন্মের ঠিক পর পরই যখন রাষ্ট্রভাষার প্রশ্ন এল আর উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হল, সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ ভুলে বাঙালি একসাথে এর প্রতিবাদ করল। সেদিক থেকে দেখতে গেলে ভাষাটা জাতি হিসেবে আমাদের ঐক্যবদ্ধ করে আর ধর্ম আনে বিভাজন। আর তাই বাঙালি জাতীয়তাবাদ, এমনকি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ আর সাম্প্রদায়িক রাজনীতি – এ দুটো কখনই এক পথের পথিক হতে পারে না, আমাদের মত দেশে, যেখানে বিভিন্ন ধর্মের লোক বসবাস করে, এই দুই ধারা পরস্পর বিরোধী দুই শিবিরে অবস্থান করতে বাধ্য। 

বাহান্ন থেকে শুরু করে একের পর এক স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদ আরও বলিষ্ঠ হতে থাকে আর এই সুস্থ জাতীয়তাবাদ দ্বিজাতিতত্ত্বকে ত্যাগ করে ধর্মনিরপেক্ষতাকে বুকে টেনে নেয়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারত   সরকার ও  সে  দেশের গণমানুষের সার্বিক সমর্থন ধর্মনিরপেক্ষতার প্রয়োজনকে আরও প্রকট করে তোলে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এ দেশের মানুষের লড়াইটা ছিল সমান অধিকারের জন্য লড়াই, দেশের সম্পদে সমান ভাগ পাবার জন্য সংগ্রাম। সত্যি বলতে কি, ভাষার ক্ষেত্রেও আমরা এই সমান অধিকারটুকুই চেয়েছিলাম, উর্দুর সাথে সাথে বাংলা ভাষাকেও রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়া হোক সেটাই ছিল আমাদের দাবি। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত সাহায্য তো ছিলই। তাই সমাজতন্ত্রের কথা যে আসবে, এটাই ছিল স্বাভাবিক। আর গণতন্ত্র? আধুনিক বিশ্বে গণতন্ত্র ছাড়া কোন রাষ্ট্র হয় নাকি?   

দেশ স্বাধীন হল। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা আর জাতীয়তাবাদ – এই চার স্তম্ভের উপর দাড়িয়ে বিশ্বের দরবারে মাথা তুলে দাঁড়ালো সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ। বাঙ্গালী জাতি এই প্রথম বারের মত পেল একটা দেশ, যে দেশের ভাগ্যবিধায়ক শুধুই তারা। তাদের এই ঐতিহাসিক বিজয়ের নেতৃত্ব দিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু স্বাধীনতার মাত্র চার বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধু শুধু সপরিবারে নিহতই হলেন না, দেশের চলার পথটাকেই একেবারে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেয়া হল। 

ছাত্রজীবনে আমরা বলতাম অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা – এগুলো মানুষের মৌলিক অধিকার। একথা ঠিক যে শিক্ষার মধ্য দিয়েই ভাষার কথা চলে আসে, তবে আমার মনে হয় যদি উপরের অধিকারগুলো হয় পরমাণু, তবে ভাষা হচ্ছে কোয়ার্ক। কারণ এই ভাষাই মানুষকে মানুষ করেছে, অন্য জীব থেকে আলাদা করেছে। অন্যান্য জীবের হয়ত বস্ত্রের প্রয়োজন নেই, অন্তত লজ্জা নিবারণের জন্য তো  নয়ই, তবে খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা – এসব তাদের কাছে অজানা নয়। খাদ্য ও বাসস্থানের কথা ব্যাখ্যা করে বলার দরকার নেই, প্রতিটি জীবই খাদ্যের জন্য সংগ্রাম করে, প্রতিটি জীবই খোঁজে একটা আস্তানা – সেটা রাত কাটানোর জন্যই হোক অথবা বংশবৃদ্ধির জন্যই হোক। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই দেখবেন যেকোনো জীবই অসুস্থ হলে গাছগাছালির খোঁজে বনে জঙ্গলে যায়, ওরাও জানে কিছু ভেষজ ওষুধের কথা। ছোট বাচ্ছাকে ওদের মা জীবনের খুঁটিনাটি অনেক কিছুই শেখায়। যাদের বাড়িতে পোষা কুকুর বা বিড়াল আছে সেটা অনায়াসে দেখে নিতে পারেন। ওদের ভাষা আছে। বিভিন্ন সুরে ডেকে ওরা মনের বিভিন্ন ভাব প্রকাশ করে। এমনকি অন্য এলাকা থেকে আসা কোন পশু অল্প সময়ে অন্যদের সাথে ভাবের আদানপ্রদান করতে পারে। তাই ভাষাটাও প্রকৃতি দত্ত। তাহলে? 
মানুষের ভাষা বলতে আমরা শুধু কথ্য ভাষা বোঝাই না, সেখানে বর্ণলিপি, লিখন পদ্ধতি এসবও আসে। এই যে লিখে মনের কথা প্রকাশ করা এটা বলা যায় মানুষের একান্তই নিজস্ব। একটা সময় ছিল যখন মানুষ বর্ণলিপি আবিষ্কার করেনি। তখন তারা কবিতা বা ছন্দের মাধ্যমে তাদের কথা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রেখে যেত। এটা মূলত এ কারণে যে ছন্দ মুখস্ত করা অনেক বেশি সহজ। যদি অন্য প্রাণীদের ভাব আদানপ্রদান করার জন্য পরস্পরের দেখা হওয়াটা অথবা ডাক শোনা যায় সেই দূরত্বে থাকাটা আবশ্যক, বর্ণমালা আবিষ্কারের পর থেকে মানুষের আর সেই প্রয়োজন রইল না। সে চিঠির মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে তার কথা পৌঁছে দিতে পারে। এভাবে মানুষের ভাষা স্থানকে অতিক্রম করেছে। শুধু তাই নয়, এর ফলে মানুষ তার কথা, তার ভাবনা রেখে যেতে পারে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য, সে তার ইতিহাস জানাতে পারে অনাগত ভবিষ্যতের মানুষদের। তাই মানুষের ভাষা কালও অতিক্রম করতে পেরেছে। তাই ভাষা কী শিক্ষা, কী সাহিত্য, কী ইতিহাস, কী বিজ্ঞান – জীবনের সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে। এই ভাষা মানুষকে মানুষের বন্ধু করে আবার শত্রুও করে। ভাষার শক্তি তাই অপরিসীম, যেমন অপরিসীম এর গুরুত্ব।  


প্রতিটি মানুষই অনন্য, যেমন অনন্য জাতি। দুজন মানুষ যখন বন্ধুত্ব করতে চায় তারা তখন পরস্পরের পছন্দের দিকগুলো আর মিলগুলো খোঁজে আর শত্রুতা করতে চাইলে সামনে চলে আসে অমিল আর অপছন্দের দিকগুলো। এই মিল আর অমিল খুঁজতে গিয়ে একদিন ভারতবর্ষ ভেঙ্গে ভারত ও পাকিস্তান হয়েছিল। যদিও পাকিস্তানের পূর্ব ও পশ্চিম অংশের মানুষের মধ্যে না ছিল ভৌগলিক, না ছিল ভাষাগত, না ছিল সাংস্কৃতিক মিল – তবুও ধর্ম তাদের এক করেছিল। ধর্মের একতায় তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঘর বেঁধেছিল। দু’ জন মানুষ যখন প্রেম করে তখন শুধু কিছু কিছু মিল নিয়েই অনায়াসে পথ চলা যায়। কারণ তখন থাকে শুধুই ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন। কিন্তু ঘর বাঁধলে স্বপ্ন কঠোর বাস্তবের রূপ নেয়। সামনে চলে আসে ভালমন্দ সব। তখন শুধু দু’ একটা মিল দিয়ে সামনে চলা যায় না, ভাঙ্গে ঘর, ভাঙ্গে সংসার। ঠিক এমনটাই ঘটেছিল পাকিস্তানের ক্ষেত্রে। এর শুরু ছিল ভাষাকে কেন্দ্র করেই।   

বাংলার মাঠ ঘাট আজ জ্বলে পুড়ে ছারখার। মানুষ মরছে, শ্মশানে পরিণত হচ্ছে সোনার বাংলা। বিগত কয়েক  বছরের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে, এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটা আমাদের দেশের ক্রনিকাল ব্যাধি। কেন এমন হয়? সবার মনেই এক প্রশ্ন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, সরকারী দল, বিরোধী দল, তথাকথিত সুশীল সমাজ – কেউ আর রাজনীতি করছে না। রাজনীতি করার জন্য রাজার মত মন থাকা দরকার, ব্যবসায়ী আর কালোবাজারি মন নিয়ে রাজনীতি করলে সেটা আর রাজনীতি থাকে না, রাজনীতি ব্ল্যাকমেইল হয়ে যায়। আমরা শুধু মুখেই গণতন্ত্রের কথা বলি, মন থেকে আদৌ কি চেয়েছি আমরা গণতন্ত্র? ইতিহাস ঘাটলে  দেখব, আমরা বারবার গণতন্ত্রকে বাইপাস করে চলে গেছি।
 
ভারত বিভাগের অনেক কারণ ছিলো, তবে যেটাকে সামনে এনে দেশটা ভাগ করা হয়, তা হলো সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের সংখ্যাগুরু হিন্দুদের শাষন মেনে নেবার অনিচ্ছা অর্থাৎ গণতন্ত্রকে বা সংখ্যাগরিষ্ঠের মতকে না মানার প্রতিশ্রুতি নিয়ে জন্ম নেয় পাকিস্তান। আর বছর না ঘুরতেই পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা দিতে অস্বীকার (বস্তুতঃ উর্দুকে একমাত্র জাতীয় ভাষার মর্যাদা দেবার অঙ্গীকার) করে গণতন্ত্রের পায়ে আবার কুড়াল মারে পাকিস্তান সরকার। মুসলিম লীগকে পূর্ব বাংলার মাটিতে জনপ্রিয় করার মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলকে পাকিস্তানে পরিণত করার স্থপতি হবার পরও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আর শেখ মুজিবুর রহমানকে বাইরে রেখে গঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম লীগ সরকার। এ প্রসঙ্গে শেখ মুজিবের লেখা কযেক লাইন তুলে ধরা যাক। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন “মাওলানা আকরাম খাঁ সাহেবের বিবৃতির পর আমরা আর মুসলিম লীগের সদস্য থাকলাম না। অর্থাৎ আমাদের মুসলিম লীগ থেকে খেদিয়ে দেয়া হলো।” এ ঘটনায় উনিই আবার লিখেছেন “দুঃখের বিষয় এই কর্মীরাই পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিল। এখন যারা এদের উপর আক্রমণ করেছিল তাদের প্রায় সকলেই পাকিস্তান আর মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে ছিল।.... প্রায় সমস্ত জায়গায় মুসলিম লীগ কমিটিতে শহীদ সাহেবের সমর্থক বেশী ছিল বলে অনেক লীগ ও পাকিস্তান বিরোধী লোকদের এডহক কমিটিতে নিতে হয়েছিল।” জিন্নাহ ফান্ডের নামে সরকার জোর করে মানুষের কাছ থেকে টাকা ওঠাতে শুরু করে। “চারিদিকে জুলুম শুরু হয়েছে। চৌকিদার, দফাদার নেমে পড়েছে। কারো গরু, কারো বদনা, থালা, ঘটিবাটি কেড়ে আনা হচ্ছে। এক ত্রাসের রাজত্ব।”.. এক মাঝির সঙ্গে কথপোকথনের উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন “মাঝি বলে “পাকিস্তানের কথা তো আপনার কাছ থেকেই শুনেছিলাম, এই পাকিস্তান আনলেন।” আমি শুধু বললাম “এটা পাকিস্তানের দোষ না।”” শেখ মুজিবের এ লেখা থেকে দুটো জিনিস পরিষ্কার বেরিয়ে আসে – সব আমলেই শেষ পর্যন্ত সুবিধাবাদিরাই ক্ষমতা দখল করে আর এত কিছুর পরেও তিনি অনেকদিন পর্যন্ত পাকিস্তানের মোহ ত্যাগ করতে পারেননি। পাকিস্তানের বিরোধিতা নয়, পাকিস্তানের আদর্শ আর কাঠামো মধ্যে থেকেই উন্নত এক পাকিস্তান গড়ার স্বপ্ন নিয়ে গঠিত হয় আওয়ামী মুসলিম লীগ। কিন্তু প্রথম থেকেই এর উপর খড়গহস্ত  হয় মুসলিম লীগ সরকার।
 
আসলে পূর্ব পাকিস্তানের ইতিহাস পুরোটাই সংগ্রাম আর আন্দোলনের ইতিহাস। এই সংগ্রাম ছিল পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যেই পশ্চিমের সাথে সমান অধিকারের ভিত্তিতে উন্নত পূর্ব পাকিস্তান গড়ার সংগ্রাম। তবে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হবার পরও আওয়ামী লীগকে সরকার গঠন করতে না দিয়ে পাক সরকার আবারও গণতন্ত্রের পিঠে ছুরি মারলে বাংলার মানুষ বাধ্য হয় অস্ত্র হাতে নিজেদের অধিকার রক্ষা করতে।  যেহেতু বাংলার মানুষ শেখ মুজিব তথা আওয়ামী লীগকেই তাদের কান্ডারী হিসেবে ভোট দিয়েছিল, স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্বও স্বাভাবিক ভাবেই তাদের হাতে যায়, যদিও লড়াই করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল দলমত নির্বিশেষে বাংলার সাধারণ মানুষ (অবশ্যই রাজাকার, আল বদর আর পাক সেনাদের দেশীয় দোসরদের বাদ দিয়ে)। আর শেখ মুজিবও তখন শুধু আওয়ামী লীগের নেতাই ছিলেন না, ছিলেন সমগ্র জাতির নেতা। তাই আজ যখন জাতীয় নেতা আর স্বাধীনতাকে দলীয়করণ করার চেষ্টা করা হয়, তাতে না বাড়ে দলের  সম্মান, না বাড়ে  নেতার সম্মান। এতে করে জাতীয় নেতা ও স্বাধীনতা সংগ্রামকে তো বটেই, জাতিকেও হেয় করা হয়। 
                                         
                                                                            
যাহোক, সংখ্যাগরিষ্ঠের রায় বা গণতন্ত্রকে না মানার মধ্য দিয়ে যেমন পাকিস্তানের জন্ম হয় ১৯৪৭ সালে, ঠিক একই কারণে তার ভাঙ্গন ১৯৭১ সালে। আর এর মধ্য দিয়ে জন্ম নেয় নতুন দেশ – বাংলাদেশ। বাংলাদেশ জন্ম নেয় নতুন অঙ্গীকার নিয়ে, ধর্মের ভিত্তিতে গড়া দ্বিজাতিতত্ত্বকে বর্জন করে। ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র আর সমাজতন্ত্র – এই চারটি মুল নীতির উপর গড়ে ওঠে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান। তবে মজার ব্যাপার এই পাকিস্তান আন্দোলেন সফল হবার অল্প দিনের মধ্যেই যেমন শেখ মুজিবের মত জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী তরুণ নেতারা আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করে, ঠিক তেমনি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কালীন বেশ কিছু জনপ্রিয় তরুণ নেতারা আওয়ামী লীগের বিপক্ষে গড়ে তুলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল। আবার যে শেখ মুজিব আওয়ামী লীগকে (তত্কালীন বিরোধী দল) কাজ করতে না দেবার জন্য মুসলিম লীগ সরকারের সমালোচনা করেছেন, তিনিই বাকশাল গঠনের মধ্য দিয়ে মূলতঃ একদলীয় শাসন চালু করার চেষ্টা করেন বাংলাদেশে। এখানে আমি বাকশাল নিয়ে বিতর্কে যেতে চাই না। যে কারণে কথাটা বলা সেটা হচ্ছে সংবিধানের একটা মূল নীতি গণতন্ত্র হবার পরও বাকশাল তৈরির মাধ্যমে সেই গণতন্ত্রের চর্চাকে খর্ব করা হয়েছে বলে অনেকেরই মনে হয়েছে। অবশ্য বলতে পারেন, বাকশাল তো বহুদলের সমন্বয়েই গঠিত হয়েছিল। তাহলে? সেটা ঠিক,  তবে জোট জোটই – ওখানে মত ও পথের মিল থাকে, শুধু মাত্র কিছু ছোটখাটো ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করা যায়। জোটের সদস্যরা কখনই বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে পারে না, যা কিনা গণতন্ত্রের জন্য, বিশেষ করে সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য।
     
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে যে সমস্ত নেতাদের সম্পর্কে তিনি বিভিন্ন সময়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন (অসমাপ্ত আত্মজীবনী) স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কি এক অজ্ঞাত কারণে তিনি তাদের ত্যাগ করতে পারেননি, বরং তাদের কথায় অনেক বিশ্বস্থ অনুগামীদের দূরে সরিয়ে দিয়েছেন। আর তাই ঘরের আর বাইরের শত্রুরা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শুধু সপরিবারে তাঁকেই খুন করেনি, ইতিহাসের চাকাটাই পুরোপুরি ঘুরিয়ে দিয়েছে। যে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বার বার লড়াই করে বাংলার মানুষ স্বাধীনতা এনেছিল, পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সেই সামরিক জান্তাই ক্ষমতা দখল করে, জাতিকে আরও ১৬ বছর লড়াই করতে হয় সামরিক শাসনের কবল থেকে বেরিয়ে আসতে।  শুধু তাই নয়, যে সাম্প্রদায়িক আদর্শের বিরুদ্ধে লড়াই করে বাংলাদেশের জন্ম, সেই সাম্প্রদায়িক শক্তি বাংলার রাজনীতিতে পুনপ্রবেশ করে এর মধ্য দিয়েই। এর পরের ইতিহাস – আমাদের ৭১ থেকে দূরে সরে যাবার ইতিহাস, আর সেটা শুধু সময়ের দিক থেকেই নয়, চেতনার দিক থেকেও।
 
যদিও ১৯৯১ থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ৩১ বছর (মাঝ খানের দুবছরের তত্বাবধায়ক সরকার বাদে) সরকার পরিবর্তন হযেছে মূলতঃ ভোটের মাধ্যমে, কিন্তু বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক দেশ বলা খুবই প্রশ্নসাপেক্ষ। আর এর বড় কারণ আমাদের ঠিক আগের মতই সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটের রায় মেনে নেবার অক্ষমতা। আসলে বাংলাদেশের মত পরিস্থিতি খুব কম দেশেই দেখা যায় যেখানে প্রধান রাজনৈতিক দল দুটো এন্টাগোনাস্টিক। ভোটের রাজনীতিতে হারজিত অতি স্বাভাবিক। একদল হারবে, অন্যদল জিতবে, এটাই নিয়ম। আর পরাজিত দল সংসদে গিয়ে শুধু সরকারের সমালোচনাই করবে না, বাজেট ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যোগ দিয়ে দেশকে সামনের দিকে নিয়ে যাবে, এটাই সবার আশা। পরাজয়টা যে অসম্মানের নয়, এটা নতুন করে আত্মবিশ্লেষনের সুযোগ, সেটা আমরা মানতে রাজী নই। তাই বার বার বিরোধী দল সংসদে না বসে রাজপথে নামে, আর যে জনগণের সেবা করার কথা বলে আন্দোলন করে, বস্তুতঃ সেই জনতার নাভিশ্বাস বের করে ছাড়ে তারা। আমার ধারণা এটা আসলে আমাদের জাতীয় রোগ। আমরা যেহেতু শুধু জয়ের কথাই ভাবি, হারার চিন্তা করিনা, তাই কি পাব এই প্রশ্নটাই আমাদের  চেতনা জুড়ে থাকে, কি হারাব সেটা ভাবার সময় আমাদের কোথায়? নাকি আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এত দেউলিয়া যে তাদের হারানোর কিছুই নাই? তাইতো দেখি এমনকি প্রতিষ্ঠিত দলগুলোও ভবিষ্যতের চিন্তা না করে শুধু বর্তমানের পাওয়াটাকে সামনে এনে একের পর এক হরতাল আর অবরোধ দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। কৌশলটা অনেকটা এই রকম – আমি যেহেতু পাব না, তোকেও ভোগ করতে দেব না। আর এই মানসিকতার ফলে রাজনীতি ক্রমশঃ উগ্রপন্থীদের হাতে চলে যাচ্ছে যারা বুদ্ধিবলের তোয়াক্কা না করে বাহুবলে সব সমস্যা সমাধান করতে আগ্রহী। সেটা হচ্ছেও। এখন তো বলতে গেলে ভোটও হয় না – যা হয় সেটা ভোট নামের কলঙ্ক। তবে এটা শুধু বাংলাদেশের জন্যই প্রযোজ্য নয়, সারা পৃথিবী আজ এই পথে যাচ্ছে। ভোগবাদী আদর্শের সাথে সাথে পশ্চিমা বিশ্ব আজ রঙ বেরঙের গণতান্ত্রিক বিপ্লব রফতানি করছে দেশে দেশে, আর রফতানি করছে “জোর যার মুল্লুক তার” আদর্শ বাণী। 


দুঃখজনক হলেও সত্য, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল যে জোট এই শূন্যতা পূরণ করতে পারত তাও গড়ে উঠছে না। শাহবাগের ডাকে দেশের মানুষ যে ভাবে সাড়া দিয়েছিল, তাতে সেরকম একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। লাখ লাখ মানুষ আবার একাত্তরের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে রাস্তায় নেমেছিল, আর সেটা হয়েছিল শাহবাগ কোন রাজনৈতিক দলের প্ল্যাটফর্ম ছিল না বলে। কিন্তু যখনই এতে দলীয় রাজনীতি ঢুকল, যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবীর সাথে সাথে অন্যান্য (দলীয়) ইস্যুগুলোকে যখন সামনে আনা হল, শুরু হল অন্তর্দলীয় কোন্দল, মুখ থুবড়ে পড়ল আন্দোলন। এ ব্যর্থতার দায় সবারই, তবে আন্দোলন সংগ্রামে বিদগ্ধ বাম দলগুলোর কাছে আমাদের আশাটা সব সময়ই বেশী বলে তাদের প্রতি আমাদের ক্ষোভও একটু বেশি। আমাদের বামপন্থী নেতারা মনে হয় লেনিনের সেই বিখ্যাত উক্তি “আজ খুব তাড়াতাড়ি হবে আর আগামীকাল খুব দেরী হয়ে যাবে” ভুলে গেছিলেন। তাই নিজেদের শক্তিতে অতিরিক্ত বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। ফলে একটা সুন্দর আন্দোলন অকালেই মৃত্যুবরণ করে।
 
অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় দেশের সাথে সাথে আজকাল আন্দোলন সংগ্রামও ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে। তা না হলে বিভিন্ন  দলের নেতারা কলে কারখানায়, হাটে মাঠে মানুষের কাতারে গিয়ে রাজনীতি করার পরিবর্তে টক-শো নিয়ে এত ব্যস্ত থাকবেন কেন? আধুনিক মাধ্যম অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে, তবে তা যদি এ দলগুলোকে মানুষের কাছ থেকে দূরে রাখে, নেতাদের জনবিচ্ছিন্ন করে রাখে তাহলে আর রাজনীতি করে লাভ কি? আসলে দুটিই  করতে হবে, মাঝে মধ্যে টক-শোতে গিয়ে নিজেদের অবস্থান মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে, তবে এক্ষেত্রে এটা একটা মাত্র পথ হবে একমাত্র নয়। 
 
বাংলাদেশের বাম রাজনীতিতে সিপিবি নিঃসন্দেহে সব চেয়ে বড় দল, যাদের আছে আন্দোলন-সংগ্রামের ঐতিহ্য। তবে বর্তমানে সিপিবির ভুমিকা বেশ ঘোলাটে। যদি আওয়ামীলীগ, বিএনপি আর সিপিবিকে তিন কোণে রেখে একটা ত্রিভুজ আঁকা হয়, তবে সেটা হবে নিশ্চয়ই বিষম বহু ত্রিভুজ, আর এতে সিপিবি থেকে বিএনপির দুরত্ব সিপিবি থেকে আওয়ামীলীগ-এর দূরত্বের থেকে হবে অনেক বেশী। অন্তত দেশের শিক্ষিত জনগণের এক বিশাল অংশ তাই ভাবে। যেহেতু ত্রিভুজের পরিসীমা ফিক্সড, তাই সিপিবি যখনই আওয়ামীলীগের সাথে নিজের দূরত্ব  বাড়াতে যায়, বিএনপির সাথে তার দূরত্ব কমে আসে। আর এই কমে আসাটা দেশের রাজনীতিতে এক ভয়ঙ্কর কালো ছায়া ফেলে। আমার মনে হয় পার্টির বর্তমান নেতৃত্ব তাদের কৌশল ঠিক করার সময় এই সাধারণ সত্যটা কিছুদিন আগেও মাথায় রাখছিলেন না, তাই নিজেদের অজান্তেই, নিজেদের অনিচ্ছা সত্বেও বিএনপি জামাতের ধ্বংস লীলায় ইন্ধন যুগিয়ে যাচ্ছিলেন।
      
একটা জিনিস যা আমাকে খুব অবাক করে, তা হল স্বাধীনতার পক্ষের আর বিপক্ষের শক্তি বলে নিজেদের দাবী করা বা অন্যদেরকে গালি দেওয়া। আজ দুটো বড় দলেই স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির আনাগোনা, আবার উভয় দলেই আছে স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলার বা লড়াই করার লোকজনও। তবে অনুপাতটা একেক দলে একেক রকম। শেখ মুজিব নিজেই লিখে গেছেন, দেশ ভাগের পরে মুসলিম লীগ পাকিস্তান বিরোধী লোকজন দিয়ে ভরে গেছে। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগে যে স্বাধীনতা বিরোধীরা ঢুকবে এটাই স্বাভাবিক। আসলে একদল লোক আছে, যাদের জন্য পাকিস্তান, বাংলাদেশ – এসব শুধুই নাম, আসল ব্যাপারটা তাদের জন্য ক্ষমতাকে ব্যবহার করে নিজেদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভিত্তি দৃঢ় করা। তাছাড়া আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, যারাই ৭২ এর সংবিধান থেকে দূরে সরে গেছে, ধর্মীয় মৌলবাদী শক্তির কাছে নতজানু হয়ে ৭২ এর সংবিধান পুনর্বহাল করেনি, তারা নিজেদের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বলে দাবী করার অধিকার হারিয়ে ফেলেছে।
       
গণতন্ত্র মানে শুধু জনগনের শাসন না, গণতন্ত্র মানে বিভিন্ন মতের ও পথের অবাধ বিকাশের সুযোগ, যদিও তা হতে হবে একটা নির্দিষ্ট অবকাঠামোর মধ্যে। আর যেকোনো দেশের জন্য সেই অবকাঠামো হচ্ছে দেশের সংবিধান। দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশের কোনো সরকারই বিরোধী দলগুলোকে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে থেকে অবাধে কাজ করার সুযোগ দেয়নি, আবার সব প্রধান বিরোধী দলই যেটুকু সুযোগ ছিল তাকে কাজে লাগিয়ে গণতন্ত্রের ভিতকে পোক্ত না করে নেমেছে রাস্তায়, সর্বত ভাবে চেষ্টা করেছে গণতন্ত্রের ভিতটাকে আরও নড়বড়ে করে দেবার জন্য। যে হরতাল, অবরোধ একসময় ছিল শক্তিশালী রাজনৈতিক হাতিয়ার, অতিব্যবহারে ও অপব্যবহারে তা হযেছে আজ সাধারণ মানুষ মারার অস্ত্র। 

রাজনীতিতে বিশ্বাসঘাতকতা নতুন কিছু নয়। সেই জুলিয়াস সিজারের সময় থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বিশ্বাসঘাতকতা রাজনীতির সাথে পায়ে পায়ে চলছে। মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতার সুযোগে বাংলা তথা ভারতবর্ষে শুরু হয় ইংরেজ শাসন। ইংরেজদের কূটকৌশল আর মুসলিম লীগের ভারতীয় মুসলিমদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার ভেতর দিয়ে জন্ম নেয় পাকিস্তান। কেননা যে মুসলিম জনগোষ্ঠির জন্য পাকিস্তান তৈরী, তাদের এক বিরাট অংশ ভারতে থেকে যাওয়ায় অবিভক্ত ভারতে মুসলিম হিসেবে তারা যে অধিকার লাভ করতে পারত, বিভক্ত ভারতে তাদের সেই অধিকার আর রইল না। এ ব্যাপারে মওলানা আবুল কালাম আজাদ বার বার হুশিয়ার করে দিয়েছিলেন। তবে বর্তমানে পাকিস্তানের অবস্থা দেখলে মনে হয়, পাকিস্তান সৃষ্টির মধ্য দিয়ে আসলে পাকিস্তানের জনগনের প্রতিই সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছিল। আবার এই বিশ্বাসঘাতকতার সূত্র  ধরেই ১৯৭৫ এর পট পরিবর্তন – সপরিবারে শেখ মুজিবকে হত্যা। জনগণের দোহাই দিয়ে এক রাজনৈতিক জোট জনগণকে পুড়িয়ে মেরেছে – আর সরকার যেখানে শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদ বিরোধী বিল দিয়ে এ সমস্যার বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নিতে পারে, তা না করে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যাপারটা জিইয়ে রাখছে। বোমা হামলা মামলায় যদি জেএমবিসহ অন্য জঙ্গিবাদী দলগুলো নিষিদ্ধ করা যায়, তাহলে অনেক বেশী অপরাধে অপরাধী জামাত-শিবিরকেও অনেক আগেই কেন নিষিদ্ধ করা হল না? আসলে এই সহিংসতাকে মদদ দিয়ে বা তা দমন না করে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোই জনগনের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করছে।


এখন আর সময় নেই নতুন করে ভাবার। দেশ কিছুদিন আগেও আরেকটা যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে গেছে। এটা গৃহযুদ্ধ নয়, এটা বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা, বাংলা সংস্কৃতির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চক্রের যুদ্ধ। এ যুদ্ধের কলকারখানা নাড়ছে পাকিস্তান আর আরব বিশ্ব। হয়তো আমেরিকাও এর সাথে জড়িত। যদি তাই না হত, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের এত আপত্তি ছিল কেন? তারা তো বিনা বিচারে গাদ্দাফি, সাদ্দামসহ যারা পশ্চিমের স্বার্থের বিরোধী ছিল তাদের হত্যায় টু শব্দটি করেনি। তবে একাত্তরে এখানে ছিল পাক সেনারা, এখন হত্যা যজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে এদের দেশীয় দোসররা। 

তাই আজ সময় এসেছে দল মত নির্বিশেষে যারা বাংলাদেশকে, বাংলা ভাষাকে, বাংলার মানুষকে ভালোবাসেন সবার একত্রিত হওয়ার, একত্র হয়ে যারা দেশের মানুষের বিরুদ্ধে, দেশের প্রগতির বিরুদ্ধে বোমা যুদ্ধে নেমেছে, দেশকে বানিয়েছে বিচারহীনতার অভয়ারণ্য তাদের প্রতিহত করা, পরাজিত করা। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ঘৃনা দিয়ে জনগণের ভালোবাসা অর্জন করা যায় না, জনগণের আস্থা লাভ করা যায় জনগণকে ভালোবেসে, জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটিয়ে। তাই আমাদের এক হতে হবে, এক হয়ে দুর্নীতি আর অপরাজনীতির হাত থেকে মানুষকে মুক্ত করতে হবে।                                

লেখাতে বেশ কযেক জায়গায় ভারত বিভাগের কথা এসেছে তার মানে এই নয় আমাদের আবার পুরানো দিনে ফিরে যেতে হবে, আবার এক দেশ গড়তে হবে। সেই অবকাশ আর নেই, যদিও প্রায় একই সময়ে বিভক্ত দুই জার্মানি এক হয়েছে, দুই কোরিয়া এখনও এক হবার স্বপ্ন দেখে। ভারত, বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের এক হবার কোন সম্ভাবনা নেই, যদিও পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের সুযোগ প্রচুর। উপমাহেদেশে ধর্মীয় মৌলবাদের প্রধান আশ্রয়স্থল এই দেশভাগ আর সেটাকে পুঁজি করে এসব দেশের পারস্পরিক শত্রুতা। যদি এই শত্রুতা কমিয়ে আনা যায় তবে মৌলবাদের ভিত্তি অনেকটাই নড়বড়ে হবে। মাঝে মধ্যে ইতিহাসের দিকে তাকালে অনেক ভুল এড়ানো যায়। বাংলাদেশ তার বর্তমান ভুখন্ড পেয়েছে ১৯৪৭ এ, তার মানে এই নয় ১৯৪৭ এর আগে আমাদের কোন ইতিহাস ছিল না। এমন কি সম্রাট অশোকের সময়েও, যা ছিল খ্রিস্টের জন্মেরও আগে, বঙ্গ অনেক উন্নত ছিলো। তাম্রলিপ্ত তাম্র যুগের প্রধান কেন্দ্রগুলোর অন্যতম। বিভিন্ন সময়ে এখানে হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলিম শাসকরা শাসন করে গেছেন। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাই একটু একটু করে আমাদের ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। আমরা যদি আমাদের কয়েক হাজার বছর পুরনো ইতিহাসকে, ঐতিহ্যকে সম্মান করতে শিখি, আমাদের আজকের অনেক সমস্যার সমাধান এমনিতেই হয়ে যাবে। আমরা যে এগুচ্ছি না, তা কিন্তু নয়। আমার ছোট বেলায় পহেলা বৈশাখ, গায়ে হলুদ এসব মূলতঃ হিন্দু সম্প্রদায়ের মধেই সীমাবদ্ধ ছিল। আজ পহেলা বৈশাখ আমাদের জাতীয় উত্সব, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সারা দেশের মানুষ পালন করে পহেলা বৈশাখ। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান ছাড়া আজকাল কোন বিয়ের কথা কল্পনা করা যায় না। রবীন্দ্রনাথের চর্চা আজ শিক্ষিত বাঙালির ঘরে ঘরে। বাংলাদেশের কবি আর লেখকেরা বাংলা সাহিত্যকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছেন। আবার একই সঙ্গে বাঙ্গালী বঁধুর শাড়ির জায়গা দখল করেছে মাক্সি। আগে আমাদের মা বোনেরা ঘোমটা দিয়ে নিজেদের পর্দানশীন করতে পারতেন, আজ তাদের হিজাব পরতে হয়। এসব নিঃসন্দেহে আমাদের স্বকীয়তা থেকে দূরে নিয়ে যায়। নিজস্ব সংস্কৃতির গন্ডীর মধ্যে থেকে যে কাজগুলো করা যায়, সে কাজগুলো বাইরে থেকে আমদানী করা রীতিনীতি দিয়ে না করলেই ভাল। কই, আমরা তো ইউরোপিয়ান বা আরবদের মত করে খাই না, তাদের মত করে মনের ভাব প্রকাশ করি না, চলি না, ফিরি না। মানুষের চলন, বলন, খাদ্যাভ্যাস এসব গড়ে উঠেছে যুগ যুগ ধরে, তার ভৌগলিক অবস্থানের কারণে। তাই আমরা যদি ভাত-মাছ খেতে ভালবাসি, মাকে মা ডাকতে পছন্দ করি, ভোরের পাখির ডাক বা নদীর বয়ে চলার শব্দ যদি এখনও আমাদের শিহরিত করে, তবে আমাদের পোশাক-আশাক সেটা পারবে না কেন? তাই আসুন একুশের শপথ হোক, আমরা যেন শুধু কথায়ই না, কাজে, কর্মে, চলনে, বলনে, পোশাকে-আশাকে বাঙ্গালী হতে পারি।  



শাহবাগ আন্দোলনকে নস্যাত করার মধ্য দিয়ে বাংলার মানুষ যে কি পরিমাণ সুযোগ হাত ছাড়া করেছে তা বলে বোঝানো যাবে না। এটা যে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীরাই বিভিন্ন দলে ঢুকে করে নাই সেটাও হলফ করে বলা যাবে না। তার পরেই নেমে এল ব্লগারদের উপর আইনের খাড়া, যদিও পার পেয়ে গেল আইন শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে দোষী অনেকেই। দেশ স্বাধীন হবার আগে সবাই আওয়ামী লীগ করত না। তবে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে বিভিন্ন দল একত্রে মিলিত হয়ে একের পর এক আন্দোলন করতে, দেশটাকে স্বাধীন করতে পেরেছিল। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় এখন আর সেই মাপের নেতা নেই, যারা দলের উপরে দেশটাকে দেখবে, তাৎক্ষণিক স্বার্থের উপরে দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থকে স্থান দেবে। এটা শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা বিশ্বেরই সমস্যা। অনেক সময় ভাবি কেন রবীন্দ্রনাথ বা পুশকিনের মত আর কোনো কবি হল না? এটাও হয়তো অতীতকে বড় করে দেখার প্রয়াস। তাছাড়া পরাধীন দেশের রাজনীতি এক রকম, স্বাধীন দেশের আরেক রকম। বিরোধী দলের রাজনীতি একরকম, সরকারী দলের অন্যরকম। রাশিয়ায় একটা কথা আছে - ঋণ শোধ করা খুব কষ্টের, কারণ মানুষ ঋণ নেয় অন্যের টাকা, আর শোধ করতে হয় নিজের টাকা দিয়ে। বিরোধী দল সরকারের সমালোচনা করেই খালাস। ভোটের আগে রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেয় জনগণকে, আর এর বিনিময়ে ধার নেয় তাদের আস্থা – বিশ্বাস, যেটা তারা পায় ভোটের মাধ্যমে। ভোটের আগে সে তার দলের নেতা, ক্ষমতায় এলে দলমত নির্বিশেষে সে সবারই নেতা (প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী)। তাই ঋণ শোধ করার প্রশ্ন এলে তাকে সবার কাছেই ঋণ শোধ করতে হয়, শুধু নিজের দলের লোকদের কাছেই না। তারপর বাইরে থেকে যেটা সোজা মনে হয় আর সোজা মনে করে প্রতিশ্রুতি দেয়া যায়, ভেতরে এলে দেখা যায় কাজটা অনেক অনেক কঠিন, অনেক কিছু বিবেচনায় এনে তবে কাজটা করতে হয়। আর এ জন্যেই বোধ হয় সরকারী ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ে ওঠা এত কঠিন। কেননা এখানে অনেক রকম পরস্পর বিরোধী স্বার্থ থাকে। এটা ঠিক মত না বোঝার কারণও শাহবাগ আন্দোলনের অপমৃত্যুর পেছনে দায়ী। অভিজিত রায় সহ অন্যান্য ব্লগারদের হত্যা কান্ড আবার সবাইকে এক করতে পারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। যে যুবকেরা অভিজিতদের হত্যা করেছিল তারা বাংলাদেশেরই, খুব সম্ভবত তাদের জন্ম স্বাধীন বাংলাদেশেই। এই যে তারা খুনি হচ্ছে, সেটাও আমাদের রাজনীতিরই ফসল। ভোটের চিন্তা করে আমরা জাতিকে বার বার যুদ্ধের মুখোমুখি ঠেলে দিয়েছি। বিভিন্ন গোষ্ঠির মধ্যে ঘৃনা আজ এত বেশী যে তা সাপের বিষকেউ  হার মানায়। আর ঘৃনা যখন হয় কোনো জাতির চালিকা শক্তি, তখন সে জাতির ভবিষ্যত অন্ধকার। একুশের লড়াই ছিলো বাংলা ভাষাকে ভালোবেসে, বাংলাদেশকে ভালোবেসে, বাংলা সংস্কৃতিকে ভালোবেসে। আর আজ আমাদের মধ্যে ভালোবাসার চেয়ে ঘৃনাই বেশী। আর ঘৃনা যখন হয় একমাত্র পুঁজি তখন যুক্তি-তর্ক এসবের স্থান নেয় রামদা, কিরিচ আর কালাশনিকভ। আশা করেছিলাম অভিজিত সহ অন্যান্য ব্লগারদের রক্ত আমাদের আবার ভালোবাসতে শেখাবে, এক হতে শেখাবে, এই বর্বর রগকাটা আর বোমাবাজির রাজনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শেখাবে। দেয়ালে পিঠ থেকে গেছে, আর পেছানোর পথ নেই। একুশ আমাদের আলো দেখাবে। বাকি শুধু সামনে পথ চলা। 
 
বাহান্নর পর কেটে গেছে ৭০ বছর, স্বাধীনতার পর ৫০, কিন্তু মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার অর্জনের আন্দোলন আগের মতই যথার্থ। সত্যি বলতে কি মাতৃভাষার জন্য আন্দোলন নতুন কিছু নয়। যে ধারনাগুলো মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে তার অন্যতম হচ্ছে অভিন্ন ভাষা, অভিন্ন ধর্ম, অভিন্ন ভূখণ্ড বা অভিন্ন শত্রু। তাই যখনই কোন জনগোষ্ঠী অন্য এক জনগোষ্ঠীর উপর নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে চেয়েছে, সে প্রথমেই চেষ্টা করেছে অধীনদের মুখের ভাষা কেঁড়ে নিতে, তাদেরকে পদে পদে মাতৃভাষায় কথা বলার, কাজ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করতে। আর মানুষ বারবার তার প্রতিবাদ করেছে, রক্ত দিয়ে রক্ষা করেছে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার। ভাষার প্রশ্নে মানুষ প্রাণ দিয়েছে ভারতে, প্রাণ দিয়েছে ঢাকার রাজপথে। ভাষা আন্দোলন শ্রীলংকায় রূপ নিয়েছে দীর্ঘমেয়াদী গৃহযুদ্ধের। আজও প্রি-বালটিকের দেশগুলোতে রাশিয়ান ভাষাভাষীরা মাতৃভাষায় পড়াশুনা বা কাজ করার অধিকার থেকে বঞ্চিত। ইউক্রাইনে প্রায় ৫০% মানুষের মাতৃভাষা রুশ হবার পরেও সে ভাষা দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পায়নি। সাম্প্রতিক কালে বরং বিভিন্ন রকম নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আর এর ফলে জ্বলছে দনবাস। তাই একুশের মাতৃভাষা দিবস শুধু আমাদের একার নয়, এটা সারা বিশ্বের মানুষের মাতৃভাষা দিবস। এই দিবসটাকে আন্তর্জাতিক করার জন্য আমাদের বিভিন্ন প্রবাসী বাঙ্গালির ও সরকারের প্রয়াস বিশেষ প্রশংসার যোগ্য।       

দুঃখজনক হলেও সত্য যে দিন দিন আমরা বাহান্নর প্রতিশ্রুতি থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছি। গণতন্ত্র পরিণত হয়েছে ভোটের প্রহসনে, সমাজতন্ত্র মরে ভুত হয়ে গেছে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে সাথে, আর ধর্মীয় অনুভূতির প্রবল বন্যা ধর্মনিরপেক্ষতা আর বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে সুদূর বঙ্গোপসাগরে। 

আজ একদিকে সামাজিক আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাড়ছে বেশি করে  বাঙালি হবার প্রবনতা আবার একই সাথে বাড়ছে ধার্মিক হবার প্রতিযোগিতা। ভোগবিলাসী এই সমাজে খুব অল্পমুল্যেই বিক্রী হয়ে যাচ্ছে স্বাধীন দেশের স্তম্ভগুলো। আর এসব দেখে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে শয়তানের কাছে আত্মা বিক্রী করে যদি মানুষ থাকা না যায় তাহলে স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে আতাত করে কি স্বাধীনতার পক্ষে থাকা যায় বা ভোটের জন্য সাম্প্রদায়িকতার সাথে আপোষ করে কি একুশের উত্তরাধিকারী হওয়া যায়?                         

যে ভাষার জন্য বাহান্নতে রফিক, শফিক, বরকত, জব্বাররা প্রাণ দিয়েছিল, যে ভাষাকে কেন্দ্র করে বাঙালি  জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠেছিল, যে ভাষা একদিন দেশকে স্বাধীন করেছিল, সেই ভাষার মহারথীরা আজ স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে স্থান পাচ্ছেন না। তাদের জায়গা দখল করছে ধর্মীয় বিভাজন। জাতীয়তাবাদ হেরে যাচ্ছে সাম্প্রদায়িকতার কাছে। একদিন শেখ মুজিবুর রহমান যেমন ভারতীয় জাতীয়তাবাদের বিপক্ষে সম্প্রদায়িক পাকিস্তানের জন্য লড়েছেন, পঁচাত্তর বছর পরে এসে আজ  তার কন্যা বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিপক্ষে মদিনা সনদের পক্ষে লড়ছেন। শেখ মুজিব খুব শীঘ্রই তার ভুল বুঝতে পেরেছিলেন আর সময় পেয়েছিলেন এদেশের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে সাম্প্রদায়িক শক্তির হাত থেকে মুক্ত করতে, কিন্তু শেখ হাসিনা সেই সময় কি পাবেন?    

ভারত বিভাগের পরপরই পাকিস্তানে কতগুলো জাতীয়তাবাদী ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তি আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৪৮ সালে জন্ম নেয় কমিউনিস্ট পার্টি, ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ যা পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ নাম গ্রহণ করে। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয় ছাত্র ইউনিয়ন। পাকিস্তান আমলে এসব রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনগুলোই বিভিন্ন রাজনৈতিক ও গণ আন্দোলনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পঁচাত্তর পরবর্তী স্বৈরাচার বিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনেও এরাই ছিল চালিকা শক্তি। যখনই দেশে গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা বিপন্ন হয়েছে – এরাই সবার আগে মাঠে নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছে। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা আর বাঙালি জাতীয়তাবাদ – এই চারটি স্তম্ভের নির্মাতা আওয়ামী লীগের হাতেই এক এক করে এসব স্তম্ভ ভেঙ্গে পড়ছে। কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ইউনিয়নসহ অন্যান্য প্রগতিশীল রাজনৈতিক ধারা প্রায় শুকিয়ে যাচ্ছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সমস্ত বিশ্বেই বাম রাজনীতিতে ধ্বস নেমেছে যদিও বিশ্বের কোথাওই বাম রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যায়নি বরং আরও বেশি প্রকট হয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ হয়েছে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির অভয়ারণ্য। ভোটের হিসাব নিকাশে হারিয়ে গেছে আদর্শের রাজনীতি, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে একাত্তরের চেতনা। তবে এই ধর্মনিরপেক্ষতা শুধু বাংলাদেশ নয় উপমহাদেশ থেকেই বিদায় নিতে যাচ্ছে। ভারতে কংগ্রেসের অবস্থা ভিন্ন কিছু বলে কি? 

আমার ছোটবেলায় মহিলারা শাড়ি পরতেই পছন্দ করতেন। শুধু গ্রামের মৌলভী সাহেবের স্ত্রী কোথাও গেলে বোরকা পরতেন। এখন কী গ্রাম কী শহর সর্বত্র ম্যাক্সি আর হিজাবে সয়লাব। পুরুষের পোশাকেও পরিবর্তন এসেছে ব্যাপক। পরিবর্তন এসেছে ভাষায়। সিলেবাস থেকে অমুসলিম আর ধর্মনিরপেক্ষ কবি লেখকদের নির্বাসনের কথা আগেই বলেছি, এখন ভাষাতেও অনেক বেশি বেশি আরবি শব্দ ঢুকছে, ঠিক যেমন করে পশ্চিম বঙ্গে হিন্দির জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে বাংলা। বিদেশি পোশাক বৈচিত্র্য আনে, বিদেশি শব্দ ভাষাকে ঋদ্ধ করে যদি সেটা আগ্রাসী না হয়। এখন অনেক ক্ষেত্রেই আমরা এসব করছি যতটা না বাংলা ভাষা, বাঙালির সংস্কৃতিকে বৈচিত্র্যময় করার জন্য, তার চেয়ে বেশি নিজের সবকিছু ঘৃণা করে, তাকে সন্দেহের চোখে দেখে। আমরা স্কুল কলেজে পড়াশুনা করছি যতটা না পরে দেশে থাকার জন্য তার চেয়ে বেশি করে বিদেশে বা কোন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে নিজেকে ফিট করার জন্য। এভাবে বদলে যাচ্ছে আমাদের স্বপ্ন, বদলে যাচ্ছে অভ্যাস, বদলে যাচ্ছি আমরা। আর এর মাসুল দিতে হচ্ছে মাতৃভাষা আর জন্মভূমির সংস্কৃতিকে।             

উপরের কথাগুলো মূলত রাজনীতির সাথে জড়িত। কিন্তু শুধু কি রাজনীতিই এ জন্যে দায়ী? আজকাল বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এমনকি শিক্ষিত লোকজনদের বাংলা লেখার ধরণ দেখলে শিউরে উঠতে হয়। আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা গ্রামে, এমনকি যতদিন দেশে ছিলাম ততদিন কেটেছে গ্রামেই। স্কুলে আমাদের কখনই সঠিক ভাবে বানান আর উচ্চারণ শেখানো হয়নি। এমনকি ইংরেজিও শেখানো হয়েছে বাংলার চেয়ে অনেক বেশি যত্ন করে। হয়তো গ্রামের স্কুলে বলেই। জানি না ঢাকা বা অন্যান্য শহরে কি অবস্থা ছিল। আমার স্কুল জীবন শেষ হয়েছে ১৯৮০ সালে। কিন্তু এখন সামাজিক মাধ্যমে লোকজনের লেখা দেখলে অবস্থার তেমন উন্নতি হয়েছে বলে মনে হয় না। রাশিয়ায় এসে একবারে শূন্য থেকে রুশ ভাষা শিখতে শুরু করি। তখন প্রথম জেনেছি ফনেটিক্স বলে একটা ব্যাপার আছে। পরে ছেলেমেয়েদের স্কুলের পড়াশুনা থেকে বুঝেছি কীভাবে যত্ন করে এদের উচ্চারণ ও বানান শেখানো হয়। এর ফলে এদেশে ছেলেমেয়েরা খুব কমই বানান ভুল করে। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ ন ও ণ; র, ড় ও ঢ়; ষ, শ আর স এর সঠিক ব্যবহার জানে না আর এ নিয়ে কারো মাথা ব্যথাও নেই। এ প্রসঙ্গে স্কুলের এক গল্পের কথা মনে পড়ছে। “ইনস্পেক্টর এসেছেন স্কুলে। দশম শ্রেণিতে ছেলেমেয়েরা বাংলা কেমন জানে সেটা জানার ইচ্ছা হল তাঁর। তিনি এক ছেলেকে বললেন, “লেখ তো কাপড়”। ছেলেটা লিখল “কাপুড়”। কাপড়কে স্থানীয় ডায়ালেক্টে কাপুড় বলে। ইনস্পেক্টর বার বার বলেন বানান ঠিক করতে, কিন্তু ছেলেটা কিছুই বুঝতে পারে না। এসব দেখে এগিয়ে এলেন প্রধান শিক্ষক। “আপনার কাপুড়ে সমস্যা কি? ওটা কি গামছা বোঝাচ্ছে?” এমতাবস্থায় ইনস্পেক্টরের আর কিছুই করার রইল না প্রধান শিক্ষকের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করা ছাড়া।” একটা কথা আছে – স্বাধীনতা অর্জন করা যত কঠিন তারচেয়েও বেশি কঠিন স্বাধীনতা রক্ষা করা। একই ভাবে বলা যায় অর্থ হোক, জ্ঞান হোক – এসব অর্জন করার চেয়ে রক্ষা করা অনেক কঠিন। কেননা এ জন্যে দরকার অবিরাম চর্চা, দরকার অধ্যাবসায়। কোন কিছু অর্জন অনেকটা পরীক্ষায় পাশ করা বা ডিগ্রি পাওয়ার মত। আর সেটা রক্ষা করা মানে লব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগানো, চাকরি করা। আমরা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়ে বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করেছি, কিন্তু পরবর্তীতে সেই ভাষার চর্চা ও তার বিকাশে খুব বেশি আগ্রহ দেখাইনি। এক্ষেত্রে অবশ্য কবি, সাহিত্যিকগণ বড় ভূমিকা পালন করতে পারেন। কেননা একমাত্র তারাই ভাষার সবচেয়ে বড় বেনেফিসারি। অন্যরা ভুলভাল ভাষা বলেও ঠিকই জীবন চালাতে পারবে, কবি সাহিত্যিকরা সেটা পারবেন না।  যাতে দেশের মানুষ বাংলা বা মাতৃভাষা শুদ্ধভাবে পড়তে ও বলতে আগ্রহী হয় সে ব্যাপারে তাদের উদ্যোগী হতে হবে, তাদের আগ্রহী করে তুলতে হবে স্কুলের ছেলেমেয়েদের নিজেদের লেখার মাধ্যমে। এছাড়াও আজ ভাষাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে কম্পিউটার টেকনোলোজি। একদিকে তা যেমন মানুষে মানুষে যোগাযোগ সহজ করেছে, প্রচুর লোককে লিখতে উৎসাহী করছে, অন্যদিকে এর ফলে জন্ম নিয়েছে নতুন ভাষা। বিশেষ করে তরুণ সমাজ কোন কথা পুরোপুরি না বলে তার ভগ্নাংশ বলতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, অনেকে তো আজকাল কিছু না বলে বা না লিখে স্মাইলিকের মাধ্যমেই মনের ভাব প্রকাশ করে। এ নিয়ে বিভিন্ন দেশের ভাষাবিজ্ঞানীরা আজ চিন্তিত।               

সমস্যা হল প্রায়ই কোন দল বা গোষ্ঠী কোন সার্বজনীন স্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় এলেও পরে সেটা ভুলে যায়। ভাবখানা এই সেই স্লোগান বা উদ্দেশ্যের সাথে তাদের কোনই সম্পর্ক নেই। ক্ষমতায় আসার প্রয়োজনে তারা সেই স্লোগান দিয়ে মানুষের সমর্থন আদায় করেছিল, কিন্তু কাজ যখন একবার হয়েই গেছে তখন আর ওসব নিয়ে ভেবে কি হবে। এটা অনেকটা রূপান্তরের মত – ক্ষমতার দেয়ালের কোন পাশে অবস্থান করছে সেটার উপর নির্ভর করে একই মানুষ বিভিন্ন রূপ ধারণ করে। এক সময় বাল্টিকের দেশগুলোর অনেকেই তাদের উপর রুশদের বৈষম্যের কথা বলত। শুধু সোভিয়েত আমলেই নয় সেই জারের আমল থেকেই সেখানে অনেক রুশ বাস করে। সেই সব দেশকে তারা নিজের দেশ বলে মনে করে, সেখানেই জন্ম নিয়েছে তাদের বংশধরেরা। অথচ আজ তারা সেই দেশে অনাহূত, তাদের ভাষা স্কুল কলেজে আজ ব্যবহার করা বেআইনি। অর্থাৎ একসময় যারা বৈষম্যের কথা বলত আজ তারাই অন্যদের উপর বৈষম্য চাপিয়ে দিচ্ছে। একই ঘটনা ঘটল ইউক্রাইনে। রুশ ভাষার উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা নামল বলেই তো ক্রিমিয়া, দনবাস এসবের জন্ম। কিন্তু এর থেকে মুক্তির উপায় কি? মানুষ বরাবরই কোন না কোন ভাবে নিজের সাথে অন্যদের পার্থক্য খোঁজে আর তার উপর ভিত্তি করে শুরু করে ভেদাভেদ। জাতি, ধর্ম, বর্ণের মত ভাষাও এই বিভাজনের একটা উপাদান। সেটা আমরা শুধু আমাদের দেশে বা অনুন্নত বিশ্বেই নয় উন্নত সভ্য বলে কথিত দেশেও দেখি। কানাডায় ফ্রেঞ্চ আর ইংরেজি ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে সমস্যা সেদিনও ছিল। বেলজিয়ামে ফ্রেঞ্চ আর জার্মান ভাষাভাষীরা প্রায়ই দেশকে অচল করে দেয়। আগেই বলেছি ভাষাই মানুষকে মানুষ করেছে, ভাষা তাকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিয়েছে। এই ভাষাকে ব্যবহার করে আমরা যেমন মানব সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়েছি ঠিক তেমনি একদল লোক বা দেশ ভাষার মাধ্যমে অন্যদের পদানত করে রেখেছে। ভাষা শুধু কথা বলা নয়, এটা শিক্ষা, দীক্ষা, চাকরি – এক কথায় উন্নতির সোপান। আর তাইতো সবাই চায় তার ভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। যখনই কোন দল বা গোষ্ঠী অন্য কোন দল বা গোষ্ঠীর উপর আধিপত্য বিস্তার করতে চায় সে প্রথমেই আঘাত হানে তার ভাষার উপর। সেটা হতে পারে পাকিস্তান স্টাইলে অথবা হতে পারে প্রচ্ছন্ন ভাবে, কোন ভাষা না জানলে চাকরি পাবার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে। এর ফলেই তো আমাদের সব দেশে অনেকেই মাতৃভাষার চেয়েও ইংরেজি বা অন্য কোন ভাষা শিখতে বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে ভবিষ্যতে চাকরির কথা ভেবে। এভাবেই পৃথিবী থেকে একের পর এক ভাষার অস্তিত্ব লোপ পায়। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ৭০০০ ভাষার মধ্যে ৩৫০০ টি মৃত্যু পথ যাত্রী। এদের অনেকেরই নিজেদের বর্ণমালা নেই। অনেক সময় সরকার থেকেও অনেক ভাষা সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়, যেমন রাশিয়ায়। তবে নতুন প্রজন্ম নিজেদের এলাকা ছেড়ে প্রায়ই কসমোপলিটন শহরে চলে যায় ভাগ্যের খোঁজে। তাই তাদের আর নিজেদের ভাষা শেখা হয় না। এভাবেই মরে যায় অনেক ভাষা, সেই সাথে অনন্য সংস্কৃতি। যদি বাংলাদেশের কথাই বলি, যেখানে মানুষ মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিল, দেশ স্বাধীন করল, সেখানেই বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতি-উপজাতির ভাষার উন্নয়নের জন্য বলতে গেলে কিছুই করা হয় না। আর এর মধ্য দিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস করার সমস্ত প্রচেষ্টাই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়, যদিও বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষা যেভাবে বৈষম্যের শিকার হয়, হচ্ছে তাতে ক্যালেন্ডারে এমন একটা দিন অতীব গুরুত্বপূর্ণ।  

মহান একুশ অমর হোক।    


দুবনা, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ 
গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ 
শিক্ষক, রাশান পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇


Post a Comment

0 Comments