জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -৭৫

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -৭৫


সম্পাদকীয়,
৭৫ টি রবিবার নাগাড়ে ছোটোদের লেখা এবং ছোটোদের জন্য লেখা নিয়ে ছোটোবেলা প্রকাশ পাচ্ছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে তোমরা ছোটোরা আর তোমাদের ভালোবেসে বড়োরাও ছোটোবেলার পাশে আছে বলে। ছোটোবেলায় ছড়া ছবি গল্প ছাড়াও জানার জন্য কত কী প্রকাশ পেল তার হিসেব দিতে গেলে বিশাল লম্বা লিস্ট লিখতে হবে। ৭৫ তম সংখ্যাটিকে ধারাবাহিক জয়াবতীর গল্প, ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, স্মরণীয় দিয়ে সাজানোর পর যখন ছাত্রছাত্রীদের কাছে গেলাম, আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম। কেন!!!! আরে লকডাউনে, কোভিডের ভয়ে, স্কুল কলেজ বন্ধ থাকলে কি হবে তোমরা ছোটোরা যে মোবাইল হাতে কেবলই গান সিনেমা আর ভিডিও গেমে মেতে ওঠোনি তার জ্বলন্ত প্রমাণ এবারের সংখ্যাটি। অধৈর্য হয়োনা। বুঝিয়ে বলছি। এবারের সংখ্যাটি সমৃদ্ধ হয়েছে তরুণ লেখকদের কলমে।  এবারের সম্পাদকীয়তে আমি কিছুতেই বলব না ঠিক করেছি, কারা কি লিখেছে। জানতে হলে পড়তে হবে। আর পড়লেই জানা যাবে এবারের সংখ্যায় চিত্রশিল্পী আর লেখকদের নাম। তাই তাদের পরিচয় জানতে এসো পড়ে ফেলি, তরুণ তুর্কিদের লেখা। তোমরা যারা এরপরও বলবে মোবাইল এসে এই প্রজন্মকে নষ্ট করে দিচ্ছে তাদের বলি জীবনটা একটা ব্যালেন্সের খেলা, যে খেলাটা আমাদের প্রচ্ছদের ছবিতে দেখাচ্ছে পাঁচ বছরের একটি শিশু। আর সেই অসাধারণ ছবিটি পাঠিয়েছেন সুদীপ আঙ্কেল।  মোবাইল যে পরিমাণ ক্ষতি করেছে, সেই পরিমাণ লাভও যে করেছে তার প্রমাণ এই ৭৫টি ছোটোবেলা সংখ্যা। এসো এই খেলাটায় আমরাও প্রচ্ছদের বাচ্চাটির মতো ব্যালেন্স করে চলি।   - মৌসুমী ঘোষ।



ধারাবাহিক উপন্যাস
জয়াবতীর জয়যাত্রা
সপ্তম পর্ব
তৃষ্ণা বসাক
 
ঘোড়া! ঘোড়া!
১০
সেনমশাই এমনিতে খুব রাশভারি লোক, কথা কম বলেন বলে লোকে আরও ভয় পায়। যেসব মানুষ বেশি কথা বলে, তাদের নিয়ে লোকের কোন  চিন্তা নেই, তাদের আপন ভাবতে সুবিধে হয়, কিন্তু কম কথার মানুষ যে কী ভাবছে, কোন কথা কীভাবে নেবে কিছুই বোঝা যায় না, তাতে ভয় আর ভক্তি দুটোই খুব বেড়ে যায়।
রুগী দেখার সময় এসব দেখে খুব মজা পায় ওরা। মানে জয়াবতী আর পুণ্যি। ভোরবেলা উঠে  ছোলাগুড় খেয়ে ওদের লাঠিখেলা শিখতে হয়। অন্দরের উঠোনেই সেসব শেখে তারা। সেনমশাইয়ের পেটরোগা ছেলেটারও শেখার কথা। কিন্তু সে রোজ নানা ভুজুংভাজুং দিয়ে আসেই না মোটে। ওই ভোরে তাই পুণ্যি আর জয়াবতী দুজনেই শেখে শুধু। বাইরের কেউ নয়, পবন লেঠেলই তাদের শেখায় নানা কসরত। এর জন্যে তাদের  ঢিলেঢালা পাজামা আর পিরান তৈয়ারি করে দেওয়া হয়েছে। কোথায় নাকি পঞ্জাব প্রদেশে, মেয়েরা এইরকম পরে, তাদের গায়ে বেজায় জোর, ছেলেদের তারা এক চড়ে ঠান্ডা করে দ্যায়। শুনে জয়াবতী মজা পেয়েছে খুব। পুণ্যির আপত্তি ছিল প্রথমে, তার ধারণা এইসব মুসলমান মেয়েরা পরে। তখন সেনমশাই  ছবি এঁকে দেখিয়েছেন, মুসলমান মেয়েদের পাজামার সঙ্গে  পঞ্জাবি মেয়েদের পাজামার কোথায় তফাত। তারপর বলেছেন ‘ পোশাক মানুষ পরে দেশের জলবায়ু, নিজের রুচি, আর্থিক অবস্থা আর আরামের ওপর। এর সঙ্গে হিন্দু মুসলমান জোড়া ভুল। কত জাতের মেয়েরা তো বিয়ের পর মাথায় সিঁদুর পরে না, তার মানে কি তারা তাদের স্বামীকে কম ভালবাসে?’ 
জয়াবতী  অমনি বলে উঠেছে ‘যা বলেচেন সেনমশাই। এই শাড়ি পরে লাঠি খেলতে গিয়ে উল্টে পড়ি আর কি। গাচে চড়তেই কত অসুবিধে হত। ছোটবেলায় তো শাড়ি গাচতলায়  রেকেই গাচে উটেচি। তেমন তো আর করার যো নেই। পিতাঠাকুর বলেচেন অমন করো না মা, নিন্দে হবে। তবে যাই বলুন বাপু, শাড়ি পরে আমি প্রাণ খোয়াতে পারব না। নিন্দে হয় হোক’
হায় ভগবান, পুণ্যি কোথায় যাবে!। কি কাণ্ডজ্ঞানহীন মেয়েমানুষ!  শাড়ি খুলে গাচে চড়েচে- এ কথা আবার সেনমশাইয়ের সামনে বলছে বড় মুখ করে। সে এক চিমটি দিল জয়াবতীর হাতে।
জয়াবতী চেঁচিয়ে উঠল ‘উহহ। দেকেচেন সেনমশাই, কী খারাপ কতাটা কয়েচি যে চিমটি কাটচে? ওর মনে হয় পেটে কিরমি আচে সেনমশাই। লাঠিখেলা, যুদ্ধু করা – এসব কি শাড়ি পরে হয়, আপনিই বলুন?’
‘শাড়ি পরে যুদ্ধ করে কিন্তু এ দেশের মেয়েরা। তারা মারাঠা জাত।ঘরও সামলায় আবার ঘোড়ায় চড়ে যুদ্ধ করে। তারা ধুতির মতো মালকোঁচা মেরে শাড়ি পরে। তেমন করে শাড়ি পরতে খুড়িমা তোমাদের শিখিয়ে দেবেন। তোমরা যখন ঘোড়ায় চড়ে ভিনগাঁয়ে রুগী দেখতে যাবে, শাড়ি পরেই যেও, কিন্তু আমাদের মেয়েদের মতো নয়, মারাঠা মেয়েদের মতো। এখন যে পাজামা বানিয়ে দিয়েছি, তাই পরে লাঠিখেলা শেখো’
১১
 এ কথার পর পুণ্যি আর পাজামা পরতে আপত্তি করেনি। লাঠি খেলার পর অবশ্য হাত পা ধুয়ে ওরা এমনি শাড়ি সেমিজই পরে, ঠাকমা ওদের আগের রাতের বাসি লুচি আর মেঠাই খেতে দ্যায়। তাই খেয়ে ওদের পড়তে বসতে হয়। এ সময় সেনমশাইয়ের ছেলেটাও থাকে। পড়ালেখায় মাথা তার খুব। কিন্তু খেলাধুলো করতে চায় না মোটে। সেনমশাই ওদের খানিকটা পড়া দেখিয়ে দেন। তারপর স্নান করে জলপান খেয়ে তৈরি হন। এখন থেকে ভরদুপুর অব্দি তাঁর রুগী দেখার সময়। সেই ভোর থেকে রুগী আসতে শুরু করে। সকালের পড়ার থেকে বরং এই সময়টা বেশি  ভালো বাসে জয়াবতী। কত রকম মানুষ আসে, কত তাদের সমিস্যে, এসব দেখে তার মনটা কতদূরে চলে যায়।শ্যামবসুর চক, তল্পিপুকুর, ভাবনাহাটি, কি অদ্ভুত অদ্ভুত নাম। এসব জায়গায় সে যাবে তাহলে ঘোড়ায় চেপে? সত্যি!
ঘোড়ায় চড়া শিখতে হবে তাকে তার আগে। আর সেই জন্যে দরকার পোশাক ঠিক করা।
পুণ্যিটা ভারি ভীতু, ঘোড়ায় চড়ার নামে সে দশ হাত দূরে পালায়।
তাই তো সে বলেছে ‘তোর আর কোতাও রুগি দেকতে গিয়ে কাজ নেই রে পুণ্যি, তুই ঘরে বসে খল নুড়িতে ওষুধ ঘুঁটবি আর দুলে দুলে পুঁথি মুখস্থ করবি’
পুণ্যি রেগে বলে ‘কেন ঘোড়া ছাড়া আর কিচু নেই নাকি দুনিয়ায়? গরুর গাড়ি কি চোকে পড়ে না তোর?’
'ইসস লোকে যকন দেকবে বদ্যি গরুর গাড়ি চড়ে আসচে, কী বলবে জানিস? বলবে  ওই গোবদ্যি এয়েচে’
পুণ্যি একটু দমে গিয়ে বলে  ‘পালকি চড়ে যাব দিব্যি। মেয়েমানুষেরা তো পালকিই চড়ে’
‘ইস পালকি দেখে লোকে বলবে, কাদের কূলের বৌ গো তুমি কাদের কূলের বৌ। বদ্যি বলে মানবে তোকে?’
পুণ্যি অমনি বলে ‘কেন সেনমশাইও তো পালকি চড়ে যান ভিন গাঁয়ে’
‘সে তো তিনি বুড়ো মানুষ বলে’ বলে বটে, তবে সেনমশাইকে দেখে তো আদৌ বুড়ো মনে হয় না।
জয়াবতী তাকে বুঝিয়েই ছাড়ে ঘোড়া, একমাত্র ঘোড়াই হচ্ছে, বদ্যিদের চড়ার যুগ্যি বাহন, আর সব তুচ্ছু। আর এই কারণেই পুণ্যির আজকাল মনে হয় দিব্যি ছিল নিজের গ্রামে, মার পাশটিতে শুত রাতের বেলা, সারাদিন ঠাকুরপুজো আর পুথি নিয়ে থাকত, এই জয়াবতীর পাল্লায় পড়ে কি গুখুরিই না হল। এই মেয়েমানুষের তো কোন ভয়ডর নেই, জেদ তেমনি, ও একদিন তাকে ঘোড়ায় চড়িয়েই ছাড়বে, আর অমনি ঘোড়াটা তাকে পিঠ থেকে ফেলে দেবে, হাড়গোড় ভেঙে দ হয়ে সে বিছানায় পড়ে থাকবে। উহ মাগো!
(ক্রমশ)


বিশ্ব পাই দিবস
তনয় টিকাদার
দশম শ্রেণি, অশোকনগর বয়েজ সেকেণ্ডারি স্কুল, উত্তর চব্বিশ পরগনা


বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং যেদিন প্রয়াত হলেন, সেই দিনটা ছিল 14 ই মার্চ ,আইনস্টাইনের জন্মদিন ।কিন্তু প্রত্যেক বছর এই দিনটায় ইন্টারনেটে গুগলের পাতা টা খুললে আইনস্টাইন-হকিংয়ের ছবি ছাড়াও যা দেখা যায় তা হল- বৃত্তাকার একটা প্যান কেকের ছবি আর কতগুলো সংখ্যা। যারা স্কুলের একটু উঁচু ক্লাসে উঠেছে তারা তা সহজেই চিনতে পারে ।ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সংখ্যা গুলো সাজিয়ে নিলে হয় ৩.১৪। গণিতে এই ৩.১৪ হল একটি  বিশেষ মান, যা একটি গ্রিক অক্ষর দিয়ে বোঝানো হয় ,সেটা হলো পাই।অর্থাৎ পাই শুধু একটা অক্ষর নয় ,একটা বিশেষ সংখ্যাকে বোঝায়। আর এই 14 ই মার্চ দিনটি পাই এর বার্ষিক উদযাপনে পালিত পাই দিবস ।সুতরাং বিশ্বজুড়ে এই দিনটায় নানা রকমভাবে পাই এর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ঝালিয়ে নেওয়া হয়।


    সরলরেখার সরল হিসাব থেকে আমরা যেই বাঁকা পথে মানে বক্র পথে যাই, ত্রিভুজ চতুর্ভুজ থেকে যেই বৃত্তের পরিধি বা ক্ষেত্রফল বের করতে যাই, তখনই এই বিশেষ রাশির সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয়। যে কোন বৃত্তের ক্ষেত্রেই পরিধির সঙ্গে ব্যাসের মাপের যে অনুপাত, সেটাই হলো পাই। এ পর্যন্ত আমাদের প্রায় সকলেরই জানা কিন্তু পাই বিষয়ে এ ছাড়াও অনেক কিছু জানার আছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর গণিতবিদ উইলিয়াম জোন্স প্রথম বৃত্তের জ্যামিতিতে পাই ব্যবহার করেন ।পরবর্তীকালে লিওনার্দো আয়েশার এটিকে আরো জনপ্রিয় করেন। পাইকে কোন কোন ক্ষেত্রে বৃত্তীয় ধ্রুবক, আর্কিমিডিসের ধ্রুবক বলা হয়। তবে আমরা যেভাবে পাই এর মান ৩.১৪ লিখি ,পাই এর মান মোটেই অত সহজ নয় ,বরং এই মানের পশ্চাতে রয়েছে অনেক কাহিনী।

    আর্কিমিডিস ।মানে যার নাম বললেই আমাদের মনে আসে প্লবতার সূত্র নির্ণয় এর কথা ,আর সেই "ইউরেকা! ইউরেকা !",বলতে বলতে রাস্তা ধরে দৌড় ,সেই তিনিই কিন্তু পাই এর মান কত হতে পারে তা নিয়ে প্রথম যুক্তিগ্রাহ্য কাজ করেছিলেন। তার দেখানো পথে হেঁটেই পরবর্তীতে আর্য ভট্ট মাধব প্রমূখ গণিতবিদ পাই এর মান নির্ণয় করেন ।কিন্তু পাই এর নির্দিষ্ট মান এখনো পর্যন্ত নির্ণয় করা যায়নি। আর্কিমিডিস জানিয়েছিলেন পাই এর মান ২২৩/৭ থেকে ২২/৭ এর মাঝামাঝি একটি সংখ্যা হবে ।একালের সুইস গণিতবিদ জোহান হেইনরিখ ল্যাম্বার্ট প্রমাণ করেন পাই একটি অমূলদ সংখ্যা। এর মান নির্দিষ্ট রূপে নির্ণয় সম্ভব নয়। আমরা পাইকে ২২/৭ বা ৩.১৪ হিসেবে লিখলেও, আসলে সেই সংখ্যাটা শেষ পর্যন্ত লিখিনা ।জটিলতম গণনায় এবং শেষমেষ কম্পিউটারের সাহায্য নিয়ে ৩.১৪১৫৯২৬......এভাবে দশমিকের পর কয়েক কোটি তম স্থান অবধি গুনেও এর শেষ পাওয়া যায়নি ।এমনকি সংখ্যাগুলোর মধ্যে কোন বিন্যাস অর্থাৎ পৌনঃপুনিক এর ব্যবহার ও দেখা যায় না ।তাই সে দিক থেকে পাই গণিতজ্ঞদের কৌতুহল জাগিয়ে রেখেছে। অদ্ভুত সুন্দর অমীমাংসিত রহস্য ময় পাই নিয়ে আজও গবেষণা চলছে।


     পাই দিবসের সূচনা অবশ্য খুব একটা প্রাচীন নয়। বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে হাজার ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে সানফ্রান্সিসকো এক্সপ্লোরটরিয়ামের কর্মচারী ল্যারি শ'র দ্বারা পাই দিবসের প্রথম পরিচিতি হিসেবে অফিশিয়াল বা বৃহৎ মাপের উদযাপনের আয়োজন করা হয়েছিল সেই থেকেই। সেই থেকেই 14 ই মার্চ তারিখটিকে বিশ্ব পাই দিবস রূপে পালন করা হচ্ছে।


     এবার আসা যাক পাই সম্বন্ধিত কয়েকটি বিশ্ব রেকর্ডে।পাই এর জন্য নিজের জীবনের 15 বছর উৎসর্গ করেছিলেন ব্রিটিশ গণিতজ্ঞ উইলিয়াম শ্যাংকস। এইসময় তিনি কাগজে-কলমে দশমিকের পর ৭০৭ ঘর পর্যন্ত পাই এর মান প্রকাশ করেন। ১৮৭৩ সালে তার প্রকাশিত হবার পর কম্পিউটারে হিসাব করে দেখা যায় তার ওই মানটি ৫২৭ ঘর পর্যন্ত সঠিক ছিল ।তা সত্ত্বেও উইলিয়াম এর লেখা পাইয়ের মানটি ছিল একটি রেকর্ড। এছাড়া পাই এর মান মুখস্থ বলার সর্বোচ্চ  রেকর্ড টি ভারতের রাজভির মিনার দখলে রয়েছে। 2015 সালে তিনি পাইয়ের মান দশমিকের পর 70000 ঘর পর্যন্ত বলতে পেরেছিলেন এতে তার সময় লেগেছিল ১০ঘন্টা।


   সুতরাং এই তারিখটি দুজন গাণিতিক তারকা'র সঙ্গে জড়িয়ে গেলেও রহস্যময়' সংখ্যা পাই দিবস এর নিজস্ব আবেদন কমে যাবার সম্ভাবনা কখনোই নেই।




মায়াজাল
বানীয়া সাহা 

চাঁদের ছটার সন্ধ্যা জুড়ে শান্ত উঠোনটাতে
স্লেটটা যেন প্রাণ ফিরে পায় ছোট্ট দুটি হাতে।

যেই না খানিক আসতো বুজে মায়েরই চোখ দুটি
খোকার তখন দারুণ মজা, এবার বোধহয় ছুটি।

স্লেটের মাঝে হিজিবিজি, আর লাগেনা ভালো
ছড়ানো বই এদিক সেদিক সবই অগোছালো।

হঠাৎ কখন নরম সে হাত চুপটি করে এসে
কোলের মাঝে নিতো টেনে আলতো করে হেসে।

গল্পেরা সব মাদুর জুড়ে বসতো এসে যখন
দস্যি ছেলে মুগ্ধ হয়ে শুনতো সেসব তখন।

খোকার কাছে আদর সবই যত্নে আছে তোলা
মায়ের হাতের গন্ধ কি আর যায় কখনো ভোলা?

সেদিনগুলোর ওই মায়াজাল যায় কেবলই ছিড়ে
চোখ শুধু আজ মাকে খোঁজে সন্ধ্যা তারার ভিড়ে।


ভারতের বুকে নিবেদিতা

স্নেহা মণ্ডল 
(প্রথম বর্ষ, শ্রীচৈতন‍্য কলেজ, হাবড়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা)

ভারতবর্ষের জাতীয়তা বোধের উন্মেষ ও শিক্ষা-সংস্কৃতির উন্নতিকল্পে স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন একজন প্রবাদ প্রতিম ব্যক্তিত্ব।স্বামীজির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক বিদেশি এদেশে এসেছেন,স্বামীজির দেখানো পথ অনুসরণ করে ভারতবর্ষ তথা ভারতবাসীর কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন।ভগিনী নিবেদিতা তেমনি এক মহীয়সী আইরিশ যিনি ভারতের শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নতির পক্ষে আজীবন কাজ করে গেছেন এবং আমাদের নতুনস্বাদের ভিন্ন ভিন্ন গ্রন্থ উপহার দিয়ে গেছেন,তাই আজও এদেশের অশিক্ষা,দরিদ্র ও কুসংস্কারের অন্ধকার দূরীকরণে নিবেদিতার অবদান ভারতবাসী শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে!
        নিবেদিতার প্রকৃতনাম মিস মার্গারেট এলিজাবেথ নোবল।১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দের ২৬ অক্টোবর উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডানগ্যানন শহরে পিতা স্যামুয়েল রিচমন্ড এবং মাতা ইসাবেলার কোল আলো করে জন্ম নেয় একটা ফুটফুটে শিশুকন্যা,আমাদের নিবেদিতা!তবে ভাগ্যের পরিহাসে মাত্র দশ বছরে পিতাকে হারিয়ে দাদামশাইয়ের তত্ত্বাবধানে শিক্ষাজীবন শেষ করে মাত্র সতেরো বছর বয়সে লন্ডনে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেন এবং বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালিখি শুরু করেন।পাশাপাশি চার্চের হয়ে বিভিন্ন সেবামূলক কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন।কিছুদিনের মধ্যেই তিনি একজন আদর্শ সমাজকর্মী,শিক্ষিকা ও লেখিকা হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।
          সন ১৮৯৩,মার্চ মাস। এইসময় আমেরিকার শিকাগো শহরে "Parliament of Religious" নামক বিশাল ধর্ম মহাসম্মেলন শুরু হয়েছে।ভারতীয় হিসেবে একমাত্র স্বামীজি এই সভায় যোগ দেন।বক্তা হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময়।এরপর ইংল্যান্ড,ইউরোপের বিভিন্ন শহরে বক্তৃতার জন্য তাঁর ডাক আসে।এমনই একদিন ইংল্যান্ডের লন্ডন শহরে এক পারিবারিক আসরে স্বামীজির বেদান্ত দর্শনের ব্যাখ্যা শুনে বিস্মিত হন মার্গারেট।এরপর ক্রমশ স্বামীজির ব্যক্তিত্ব ও ধর্ম ব্যাখ্যায় অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি স্বামীজিকে গুরুর আসনে বসালেন।তখন মার্গারেট প্ৰথম স্বামীহারা এবং দ্বিতীয় বিবাহ হতে ডিভোর্সপ্রাপ্ত বছর ২৮ এর এক নারী।স্বামীজির সান্নিধ্য মার্গারেট এলিজাবেথকে মহীয়সী নারীতে রূপান্তরিত করে,তিনি হলেন ভগিনী নিবেদিতা!
     ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জানুয়ারি নিবেদিতা বিবেকানন্দের মতাদর্শ অবলম্বন করে পাড়ি দিলেন ভারতে।স্বামীজির কাছে দীক্ষা নিয়ে তিনি ভারতের শিক্ষা, দর্শন,সাহিত্য,সমাজ সম্পর্কে বিভিন্নভাবে জ্ঞান লাভ করেন।
      পরাধীন ভারতবর্ষের অশিক্ষা ও কুসংস্কার নিবেদিতার মনকে ভারাক্রান্ত করে তোলে।তিনি প্রথমেই ভারতের নারীশিক্ষার ওপর জোর দেন।উত্তর কলকাতার বাগবাজার অঞ্চলে নিজের বাসভবনে একটি মেয়েদের বিদ্যালয় খোলেন।শুরু হয় নারীশিক্ষার প্রথম পদক্ষেপ।তবে ২বছর অনুপস্থিতির পর নিবেদিতা দেখলেন যে তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি আর চলেনা।তাঁর নিজ ইচ্ছামত বিদ্যালয়টি পরিচালিত হচ্ছিল না।টাকার অত্যন্ত অভাব দেখা দিতে থাকে,তবুও সেদিন বাগবাজারের চারপাশের হিন্দুসমাজ এই বিদ্যালয়টিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কোনও চেষ্টাই করেনি এমনকি কলকাতার আদি বাসিন্দা রক্ষণশীল হিন্দুসমাজে তাঁর প্রাপ্য সমাদরটুকুও কেউ করেনি!হিন্দুরা তাঁকে আপন বলে গ্রহণই করেনি। পাশাপাশি স্কুল পরিচালনায় মঠের সন্ন্যাসীদের অবাঞ্চিত হস্তক্ষেপ নিবেদিতার স্কুল প্রত্যাহারের অন্যতম কারণ হয়ে ওঠে।যে কলঙ্ক সত্য,তাকে তো কখনো গোপন করা যায় না!
    ইতিমধ্যে স্বামীজির ব্রহ্মচর্য দীক্ষায় মার্গারেট 'নিবেদিতা' নামে জনসমাজে প্রতিষ্ঠিতা।১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে প্লেগ রোগে মহামারী দেখা দেয়।নিবেদিতা বিশাল যুববাহিনী গঠন করে প্লেগ আক্রান্তদের সেবা ও পল্লী-বাংলার বিভিন্ন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশগুলি পরিস্কার করার দায়িত্বে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
     ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে বিবেকানন্দের মৃত্যু হয়।বুকে পাথর চেপে ভারতে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগদানের জন্য নিবেদিতা এগিয়ে এলেন। আন্দোলন জোরদার করতে নিবেদিতা যুবকদের আইরিশ সিন-ফিনদের টেকনিক শিক্ষা দিতে শুরু করেন।তাঁর এই পদক্ষেপে অনেকের কটাক্ষ স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে–"তোমার বিশ্বাস আছে,শক্তি আছে।তুমি হিংসাত্মক বিপ্লবের কথা বলতে পারো,কিন্তু তোমার চারিদিকে যে যুবকদল আসিয়া জুটিয়াছে তাদের বিশ্বাসও নাই,শক্তিও নাই।"কোনো কথাতেই নিবেদিতার মনোবল ভাঙে না কারন তিনি বিশ্বাস করেন এই যুবকদের আত্মত্যাগ,দুর্জ্জয় সাহস আর চারিত্রিক বল তাঁর চেয়ে অনেক বেশী। নিবেদিতা তাদের ভৎসনা কানেও তুললেন না।নিবেদিতা বিপ্লবী কিন্তু ওরা তো বিপ্লবী নন।বিপদ ঘনিয়ে আসলে ওরা রাজনীতির ক্ষেত্র থেকে প্রস্থান করতে দুদণ্ডও ভাববেন না।তিনি শুনতে পেলেন গভর্নমেন্টের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তাঁর ওপর পড়েছে।পুলিশ তাঁর গতিবিধি লক্ষ্য করছে।বাগবাজারে তাঁর বাড়ির দরজা পর্যন্ত এসে পুলিশ গোপনে তাঁর খোঁজ নিচ্ছে।চারিদিক থেকে এই প্রতিকূল আবহাওয়া নিবেদিতাকে বেষ্টন করে বইলেও তারই মধ্যে দাঁড়িয়ে দিনের পর দিন তিনি বক্তৃতা করে গেছেন 'Aggressive Hinduism' বা 'আক্রমনশীল হিন্দুধর্ম' নিয়ে,যার কথা স্বয়ং তাঁর গুরু বিবেকানন্দ শুনিয়েছিলেন।এর অর্থ হিন্দুধর্ম,অপর ধর্মাবলম্বীদের হিন্দু ধর্মে দীক্ষা দিয়ে হিন্দুসমাজভুক্ত করতে পারবে।তবে যে জন্মে হিন্দু নয় তাকে এই ধর্ম্মে এনে সমাজভুক্ত করা যায় না।তাই তিনি চেয়েছিলেন ধর্ম্মেই হোক বা রাষ্ট্রেই হোক ভারতবাসীরা পড়ে পড়ে বিদেশীর কাছে মার খাওয়ার চেয়ে আত্মরক্ষার জন্যই না হয় আক্রমনশীল হোক।
    এইসময় ঋষি অরবিন্দ, বারীন ঘোষ,অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর,জগদীশচন্দ্র বসু,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ মনীষীদের সঙ্গে তাঁর নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।বিশেষত রবীন্দ্রনাথের সূত্রেই তিনি গ্রামবাংলাকে কাছ থেকে চিনেছিলেন।রবীন্দ্রনাথ তখন জমিদারী সামলাতে শিলাইদহে থাকতেন,নিবেদিতার আসা-যাওয়া চলত।পদ্মার চরের মধ্য থেকে সূর্যোদয় দেখতে যাওয়া ছিল তার প্রথম কাজ।ভোরবেলা চাষীরা লাঙল কাঁধে মাঠে যাওয়ার পথে হঠাৎই গেরুয়া বসন পরিহিতা গৌরাঙ্গী এক মেমসাহেবকে দেখে স্তব্ধ হয়ে বিস্মিত চোখে দাঁড়িয়ে থাকত।নিবেদিতা দৌড়ে চলে যেতেন চাষীদের কাছে।কোথায় গেল সূর্যোদয় দেখা? চাষীদের দলে ভিড়ে সমস্ত গ্রাম চষে বেড়াতেন তিনি এবং ঐ দরিদ্র নর-নারীদের সঙ্গে প্রাণ মিলিয়ে তাদের সুখ-দুঃখের সমভাগিনী হতেন।প্রায়শই তাকে চিড়ে কুটতে,ধান ভানতে, নাড়ুর মোয়া বানাতেও দেখা যেত।এমনকি তিনি তাদের সঙ্গে পা মিলিয়ে ঢেঁকিতে পা দিয়ে ধানও কুটতেন।পল্লী নারীর স্বহস্তকৃত সেঁকেলে কাঁথা, ছেলেদের দোলাই,কুলো, মাটির পুতুল,বেঁতের কাজ,বাঁশের কাজ,পাখা ইত্যাদি তাঁকে মুগ্ধ করেছিল।মুসলমান জোলার তাঁতের রকমারি কাপড় বোনাও তিনি সাগ্রহে দেখতেন।বুনোপাড়ার ছেলেদের ''অষ্টসখীর" নাচগান শুনতেও ছাড়েননি তিনি!এলিজাবেথ 'নিবেদিতা' হয়ে যেন জন্মসূত্রে ভারতীয় নারী হয়ে উঠছিলেন। 
         ভগিনী নিবেদিতা সমাজসেবার পাশাপাশি কলম ধরেছিলেন দক্ষতার সঙ্গে।তাঁর রচিত অসাধারণ সৃষ্টিগুলির মধ্যে "The Web of Indian Life" এ ভারতীয় সংস্কৃতির এক বিশেষ দিককে তুলে ধরেছেন–একবার  বোধগয়ায় মোহান্তদের সাথে বৌদ্ধদের বিরোধ বাধলে সেই সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে তিনি উপস্থিত হন 'রাজগৃহে'।রাজগৃহের অন্দরমহলে ভারত  ইতিহাসের অতিপ্রাচীন স্থানটি দেখে নিবেদিতা বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে যান,এর পাহাড়,ঝর্ণা,শস্যক্ষেত্র, এর আকাশ-বাতাস তাঁকে যেন সেই সুদূর অতীতে পৌঁছে দিয়েছিল।ভারতের ইতিহাসে অতিশয় জমজমাট ছিল যে স্থান যেখানে রামচন্দ্রের যুগে বশিষ্ঠ মুনি শ্রীরামচন্দ্রকে নিয়ে এসেছিলেন,যেখানে মহাভারতের যুগে মগধসম্রাট জরাসন্ধকে শ্রীকৃষ্ণ বধ করেছিলেন এমনকি যেখানে বছরের পর বছর মুঘলরা তাদের রাজত্ববিস্তার করে গেছেন তার নানা পটচিত্রের রূপ তিনি তাঁর বইয়ের প্রতিটি লাইনে তুলে ধরেছেন।পাশাপাশি যে প্রবেশদ্বার দিয়ে বুদ্ধ একটি খোঁড়া ছাগশিশুকে কাঁধে নিয়ে নগরে প্রবেশ করেছিল সেই দ্বার ও পরে অম্বপালির আম্রকানন আবিষ্কারের অভিজ্ঞতাসহ যাবতীয় তথ্যাদি এমনকি এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে ঘুরে ঘুরে তিনি কিভাবে রাজা বিম্বিসারের প্রাসাদ এবং তার প্রজাদের বাড়ি কোথায়, কি ধরনের ছিল সেসমস্ত ধারণাও তিনি এই বইতে প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও তাঁর বহু প্রশংসিত বই "Kali,the Mother", যেখানে তিনি এবং তাঁর গুরু বিবেকানন্দের চোখে মায়ের যে শ্যামলকান্তি স্বর্ণোজ্জ্বল মুখশ্রী ধরা পড়েছে তার পবিত্র অভিজ্ঞতা তিনি তার বইয়ের প্রত্যেকটি পাতায় ব্যক্ত করেছেন।হিন্দুশাস্ত্রের মায়ের প্রতি একজন খ্রিস্টান বিদেশিনীর এরূপ ভক্তিপ্রেম সত্যিই বিরল।অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর এই বইটি পড়ে বিখ্যাত *'ভারতমাতার'* ছবিটি আঁকেন। গুরুর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি স্বরূপ প্রকাশিত তাঁর "The Master as I saw Him", গ্রন্থে স্বামীজির হাত ধরে হিমালয় ভ্রমন এবং বরফাবৃত বদ্রীনারায়নের রূপ দর্শন করে তিনি লিখেছেন–"Badri itself,with glaciers and snows its velvet terraces and its silver moonlight was enough." এবং এই প্রাঙ্গনে সাধুদের ভক্তিস্রোতে তন্ময় হয়ে তিনি নিজের অজ্ঞাতে কিভাবে ললাটে ভস্ম লেপন করে "জয় কেদারনাথ স্বামী কী জয়!/জয় বদরী বিশাল কী জয়!" মন্ত্রের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিলেন তার স্মৃতিচারণ, এছাড়াও বেদান্তের ৩টি ধারা–দ্বৈতবাদ, বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ ও অদ্বৈতবাদের মূলস্রোতে উপনিত হয়ে আত্মস্বরূপকে বিশ্লেষণ করার যে শিক্ষা তিনি গুরুপ্রদত্ত অর্জন করেছিলেন তার ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছেন। ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর থেকে ১৯০২খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা জুলাই পর্যন্ত প্রায় সাত বছরের মধ্যে নিবেদিতা, বিবেকানন্দের সাথে উত্তর ভারত ও জলপথে একাদিক্রমে ছয় সপ্তাহ ভারত থেকে ইংল্যান্ডে জাহাজ ভ্রমনের সময় যে অভিজ্ঞতা ও যেসকল মূল্যবান কথপোকথন, চিঠি-পত্রের সাক্ষী রয়েছেন তার হৃদয়স্পর্শী মর্মকথাও এই গ্রন্থে ধরা পড়েছে।সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি নিবেদিতা 'ডন ম্যাগাজিন', 'নিউ ইন্ডিয়া', 'যুগান্তর', 'বন্দেমাতরম', ইত্যাদি পত্রিকার সাথেও বিশেষভাবে যুক্ত ছিলেন।

    সন ১৯০৫ বঙ্গভঙ্গ আসন্ন।গুপ্তসমিতির প্রচারকদের শিক্ষা দেয়ার মহড়া পুরোদমে চলছে।মানুষে মানুষে সংঘর্ষ আকাশচুম্বী! কে হিংস্র আর কে উপকারী তার পার্থক্যটুকু করারও কোনো উপায় নেই।সুতরাং ইতিহাসের পথে আগে গুপ্তসমিতির সন্ত্রাসবাদ পরে স্বদেশির ধূমায়িত ও প্রজ্জ্বলিত অবস্থা।যদিও নিবেদিতা এই দুই পথেরই পথিক।তিনি যুবকদের কেবল একটিমাত্র মন্ত্রেই উদ্বুদ্ধ করতেন যে," ইংরেজের শাসন একটা পরগাছার মত আমাদের সমাজের উপর শিকড় গেড়ে বসে সমাজের রস,রক্ত সমস্তই শোষণ করে নিচ্ছে।অতএব আমাদের সর্বপ্রথম কাজ শিকরশুদ্ধ এই বিদেশী শাসনকে উৎপাটন করে ফেলা।বিদেশী গভর্নমেন্ট আছে থাক,এটা আমাদের কাম্য নয়।" এইভাবেই চালচিত্রির উপরে দূর্গা প্রতিমার ন্যায় ভগিনী নিবেদিতার চরিত-চিত্র স্বদেশী আন্দোলনের পটভূমিকার ওপর অঙ্কিত হয়েছিল।

    সন ১৯০৬ বিপিন পাল ও অরবিন্দ তখন সন্ত্রাসবাদ নিয়ে 'বন্দেমাতরম'পত্রিকায় মত্ত।এইসময় পূর্ববঙ্গের বরিশাল বন্যায় ডুবতে বসেছে।নিবেদিতা এক হাঁটু জল ঠেলে তাঁদের উদ্ধারে ছুটে গেলেন।জল ও কাদার মধ্যে দিয়ে কোনক্রমে পথ করে দুর্ভিক্ষ-পীড়িত গরিব মুসলমান পল্লীর বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং আর্তনাদ করে বলছেন–" Hunger so keen,ah god! Help them!" সাহায্যের হাত বাড়াতে চাইলেও অর্থের অভাব এপথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।ভিক্ষা নয় তাদের কর্তব্য মনে করিয়ে সমাজের ধনবান ব্যক্তিদের এককাট্টা করার উদ্দেশ্যে তিনি 'যুগান্তর' পত্রিকার প্রথম পাতায় বড়ো বড়ো হরফে ছাপালেন কয়েকটি শব্দ–"The beggar is spiritually twin brother to the millionaire." অর্থাৎ ভিক্ষুক আর কোটিপতি দুটি জমজ ভাই।সমাজে কোটিপতি ভিক্ষুককে সম্ভব করে আবার ভিক্ষুকই কোটিপতিকে জন্ম দেয়। তাঁর এই পদক্ষেপে সেবারের মত বাংলা বেঁচে যায়!

       কলকাতায় তখন ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।বেশ কয়েকবার আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি অনুভব করতে লাগলেন যে তাঁর শক্তি চলে যাচ্ছে, মৃত্যু সন্নিকট, তিনি প্রলাপের মত মা কালীর সাথে কথা বলতে লাগলেন,–"Mother what is i will? Please Give me the strength to fight once more!"–যদি ইচ্ছা কর আমাকে বজ্রের শক্তি দাও মা! কয়েক সপ্তাহ এইরূপ অবসাদে ভোগার পর এই বিদূষী মহীয়সী নারী মাত্র ৪৩ বছর বয়সে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং এ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।



সেবাময়ী মা টেরিজা

অলিভা বিশ্বাস 
(দ্বিতীয় বর্ষ, শ্রীচৈতন‍্য কলেজ অব কমার্স, হাবড়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা)


দীনার্ত দারিদ্র্যপীড়িত অসহায় মানুষের সেবাই ঈশ্বরের সেবা এই আদর্শকে ভালোবেসে আত্মোৎসর্গ করে ছিলেন যিনি সেই স্মরণীয় হৃদয়বান শতাব্দীর জননী করুণাময়ী মাদার টেরিসার। যার আসল নাম টেরিজা বোজাঝিউ বা অ‍্যাগনিস গঞ্জা বোজাঝিউ। আলবেনীয় ভাষায় গঞ্জা শব্দের অর্থ হল গোলাপ কুঁড়ি। 1928 সালে তিনি আয়ারল্যান্ড হয়ে তৎকালীন ব্রিটিশ অধীনস্থ ভারতে আসেন  খ্রিস্টধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে। পরবর্তীতে 1931 সালের 24 শে মে তিনি সন্ন্যাসিনী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং ধর্মপ্রচারকদের সহযোগিতায় সন্ত Therese de Lisieux এর নামানুসারে "টেরিজা"নামে অভিহিত হন । 1937 সালের 14 ই মে কলকাতায় একটি লোরেটা কনভেন্ট স্কুলে পড়ানো দায়িত্ব নেন তিনি। কিন্তু কলকাতায় ঘটে যাওয়া পঞ্চাশের মন্বন্তর এবং 1946 সালের হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গাতে তার হৃদয় কেঁপে উঠলে তিনি সম্পূর্ণ ভাবে মানব সেবায় নিয়োজিত হয়ে পড়েন। সমস্ত অসহায় দারিদ্র যন্ত্রণা আধারিত মানুষের মুখের দিকে চেয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে ছিলেন করুণা দয়াময়ী জননী মাদার। তার জীবনের একমাত্র ব্রত ছিল অসহায় মানুষের সেবা করা। দীর্ঘদিন ধরে ইংরেজ শাসন বিদ্ধ  মানুষের দুঃখ কষ্টের সীমা কে মুছিয়ে দিতে শ্রীমা সারদা মা ভগিনী নিবেদিতা সেনগুপ্ত তারা নিজেদেরকে আর্তের সেবায় জীবন উৎসর্গ করেছিলেন সাধারণ মানুষ মনে করেন তাদের উত্তরসূরি হিসেবেই মাদার টেরিজা তাদের অসম্পূর্ণ কাজ কে পূর্ণতা দান করেছিলেন। করুনাময়ী টেরিজা বলতেন-"কেবল সেবায় নয় মানুষকে দাও
তোমার হৃদয়। হৃদয়হীন সেবা নয়,
তারা চায়  তোমার অন্তর স্পর্শ।"

    কলকাতার ফুটপাথে অসহায় শব্দহীন অসুস্থ মৃত্যুপথযাত্রী নতুবা মরণাপন্ন মানুষকে বুকে তুলে নেওয়া তাদের সেবাযত্নের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন দেবী অন্নপূর্ণার ভান্ডারে চাবি নিয়ে মাদার টেরিজা। তিনি ছিলেন ভারতবাসীদের কাছে তথা বাঙ্গালীদের কাছে স্বয়ং দেবী অন্নপূর্ণা, জগত জননী জগদ্ধাত্রী। অন্নসংস্থান থেকে নিজ হাতে কুষ্ঠ রোগীকে খাইয়ে দেওয়া, গা ধুয়ে স্নান করিয়ে দেওয়া ভালোবাসা দিয়ে মানুষের জীবনকে শান্তিময় করে তোলা ছিল তার প্রধান কাজ।

পরবর্তীতে লেখক ও একাধারে গবেষক ডেভিড স্কট কার মতানুসারে লিখেছেন-"মাদার টেরিজা স্বয়ং দারিদ্র্য বিমোচনের একটি মানুষকে জীবিত রাখার উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।"
            এছাড়াও অন্য আর এক গবেষক এলবার্ট তার প্রতিবেদনে বলেছেন -"টেরিজা মনে করতেন কষ্ট ভোগের মাধ্যমে যীশুর কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব ।"
        কোন কাজ করলে যেমন তার প্রশংসক  থাকে তেমনি একাধারে সমালোচকেরও উপস্থিতি লক্ষণীয়। তার ক্ষেএে তা ব‍্যতিক্রম নয় ; সেই পরিপ্রেক্ষিতে সর্বদাই মাদার টেরিজা বলতেন-"no matter who says what you should accept it with a smile and do your own work."
             1984 সালে মাদার টেরিজা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের ব্রঙ্কস বরোর দক্ষিণাঞ্চলে প্রথম চ্যারিটি খোলেন। পরবর্তীতে আরও অনেক শাখা খোলা হয়েছিল এবং তা আজও যথেষ্ট সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। তার এই চ্যারিটি গুলি খোলায় তিনি  বহু প্রশ্ন ও নিন্দানিত আলোচনার সম্মুখীন হয়েছে বারং বার ;যেমন-"গরিবদের উন্নয়নের কাজে চ্যারিটিতে যত অর্থ আসে তার কিছু অংশ অন্যান্য কাজে ব্যয় করা হয়।"12 জন সদস্যকে নিয়ে শুরু করে, এতকিছু সম্মুখীন হয়েও তিনি হার মানেন নি তিনি সে সদস্যসংখ্যা কে পৌঁছেছেন কয়েকশো হাজারের কাছাকাছি এবং 100 টি দেশের মধ্যে 517 টি দেশে তিনি তার ধর্মপ্রচারে অভিযান চালান এবং তিনি 450 টি মানব সেবা কেন্দ্র গঠন করেন। বহু পুরস্কারে পুরস্কৃত ছিলেন তিনি ; তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল - নোবেল শান্তি (১৯৭৯), ভারতরত্ন (১৯৮০), প্রেসিডেন্সিয়াল মডেল অফ ফ্রিডম (১৯৮৫) প্রভৃতি। তিনি আমাদের সকলকে ছেড়ে পরলোকগমন করেন 1999 সালের 5 ই সেপ্টেম্বর।
           এই পরিপ্রেক্ষিতে রবীন্দ্রনাথের একটি পংক্তি না বললে হয়তো আমার বলাটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। সেটি হল-"ওগো, তোমার চক্ষু দিয়ে মিলে সত্য দৃষ্টি
আমার শতরূপ প্রথম করেছে সৃষ্টি।
তোমায় প্রণাম, তোমায় প্রণাম
তোমায় প্রণাম শত বার।"


স্মরণীয়
(অন্নদাশঙ্কর রায়)
কলমে - পীযূষ প্রতিহার

বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার কোতরং ছিল অন্নদাশঙ্কর রায়ের আদি নিবাস। যদিও তাঁর ঠাকুরদা শ্রীনাথ রায় কোতরং থেকে উড়িষ্যার বালেশ্বর জেলার রামেশ্বরপুর চলে যান। অন্নদাশঙ্করের পিতা ছিলেন নিমাইচরণ রায় এবং মাতা হেমনলিনী। নিমাইচরণ পারিবারিক কারণে ব্রিটিশ সরকারের চাকরি ছেড়ে ঢেঙ্কানল রাজ দরবারে থিয়েটারের ম্যানেজার হিসেবে যোগ দেন। সেই ঢেঙ্কানলেই ১৫মার্চ ১৯০৪খ্রীষ্টাব্দে অন্নদাশঙ্করের জন্ম হয়। ঢেঙ্কানলেই প্রাথমিক পড়াশোনা। ১৯২১ সালে ঢেঙ্কানল হাইস্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর সংবাদপত্রের সম্পাদনা শিখতে 'বসুমতী' পত্রিকার সম্পাদক হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষের কাছে যান। সেখানে শর্টহ্যান্ড, টাইপরাইটিং এবং প্রুফরীডিং শেখেন। এই কাজ ভালো না লাগায় কটকের রাভেনশ কলেজ থেকে আই এ পরীক্ষা দেন এবং পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯২৫সালে ইংরেজি অনার্স নিয়ে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে প্রথম হয়ে বি এ পাশ করেন। ১৯২৭এ এম এ পড়তে পড়তেই প্রথম ভারতীয় হিসেবে আই সি এস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। সরকারি খরচে আই সি এস হতে বিলেত যান এবং দুবছর পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে ঘুরে বেড়িয়েছেন জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি ও সুইজারল্যান্ড এর মতো দেশে যার প্রতিফলন পাওয়া যায় তাঁর 'পথে প্রবাসে' গ্রন্থে। ১৯২৯ সালে মুর্শিদাবাদ জেলার এসিস্ট্যান্ট ম্যাজিস্ট্রেট চাকুরিতে যোগ দেন। পরবর্তী আঠেরো বছর অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন জেলায় কাজ করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হলে আই সি এস অবলুপ্ত করে আই এ এস করা হলে তিনি পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসন ও বিচার বিভাগের সেক্রেটারি নিযুক্ত হন। মতানৈক্য হলে ১৯৫১সালে স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অবসর নেন।

       ইংরেজি, ওড়িয়া, হিন্দি, সংস্কৃত এর মতো বেশ কয়েকটি ভাষায় দক্ষতা থাকলেও সাহিত্য রচনার জন্য বাংলাকেই প্রধান ভাষা হিসেবে বেছে নেন অন্নদাশঙ্কর রায়। ছোট থেকেই দেশ বিদেশের নানারকম পত্রিকার সঙ্গে পরিচয় থাকলেও প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত 'সবুজপত্র' ছিল তাঁর সাহিত্যিক হয়ে ওঠার প্রধান প্রেরণা। মাত্র ষোল বছর বয়সেই টলস্তয়ের গল্প অনুবাদ করে প্রকাশ করেন ১৯২০সালে 'প্রবাসী' পত্রিকায়। ১৯২৭-২৯ উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত 'বিচিত্রা' পত্রিকায় তাঁর লেখা ধারাবাহিক ভ্রমনকাহিনী 'পথে-প্রবাসে' পাঠকমহলে সাড়া ফেলে দেয়। এই একই সময়ে তাঁর 'ইউরোপের চিঠি' প্রকাশিত হয় 'মৌচাক' পত্রিকায়।
      সাহিত্যিক হিসেবে তিনি গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, আত্মজীবনী, ভ্রমনকাহিনী লেখার পাশাপাশি ছড়া লিখেছেন অসংখ্য। তাঁর লেখা বিখ্যাত উপন্যাস - 'সত্যাসত্য' নামে ছয়টি উপন্যাস (১৯৩২-৪২), 'পুতুল নিয়ে খেলা'(১৯৩৩), 'বিশল্যকরণী'(১৯৬৭), এবং চার খণ্ডে রচিত 'ক্রান্তদর্শী'(১৯৮৪-৮৬)।
       তাঁর উল্লেখযোগ্য গল্প গ্রন্থগুলো হল-'প্রকৃতির পরিহাস'(১৯৩৪), 'দুকান কাটা'(১৯৪৪), 'কথা'(১৯৭১), 'কাহিনী'(১৯৮০) প্রভৃতি।
       প্রবন্ধ সাহিত্যেও তাঁর অসামান্য লেখনীর ছাপ রেখেছেন- 'তারুণ্য'(১৯২৮), 'দেশকালপাত্র'(১৯৪৯), 'সাহিত্যে সংকট'(১৯৫৫), 'রবীন্দ্রনাথ'(১৯৬২), 'গান্ধী'(১৯৭০), 'শিক্ষার সংকট'(১৯৭৬), 'রবীন্দ্রনাথ, প্রমথ চৌধুরী ও সবুজপত্র'(১৯৯৯), 'আমার কাছের মানুষ'(২০০১), 'শতাব্দীর মুখে'(২০০১) এবং 'আমার ভালোবাসার দেশ'(২০০১) এর মতো অসাধারণ সব প্রবন্ধে।
       ছড়াকার হিসেবে আমাদের কাছে তিনি সমধিক জনপ্রিয়। প্রথম জীবনে রবীন্দ্রনাথ ও পরের দিকে বুদ্ধদেব বসুর অনুরোধে তিনি ছড়া লেখা শুরু করেন। বিষয় বৈচিত্রের নিরিখে সামাজিক, রাজনৈতিক থেকে শুরু করে প্রাণীজগতের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তুও স্থান পেয়েছে তাঁর রচিত ছড়ায়। বাংলা ছড়াকে স্বীয় প্রতিভা ও মননের গুনে শিশুপাঠ্য স্তর থেকে উন্নীত করেছিলেন অভিজাত শৈল্পিক স্তরে। তাঁর বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছড়া 'খোকা ও খুকু'(১৯৪৭) তে দেশবিভাগের যন্ত্রনা তাকে কতটা বিচলিত করেছিল তা প্রকাশ পেয়েছে-"তেলের শিশি ভাঙল বলে/ খুকুর পরে রাগ করো,/ তোমরা যে সব বুড়ো খোকা/ ভারত ভেঙে ভাগ করো! তার বেলা?" তাঁর লেখা শেষ ছড়াটি প্রকাশিত হয় শারদীয়া 'সন্দেশ' পত্রিকায় 'ঐরাবত' নামে ২০০২ সালে। তিনিই প্রথম বাংলায় লিমেরিক রচনা করেন। তাঁর বিখ্যাত ছড়ার বই গুলি হল- 'উড়কি ধানের মুড়কি'(১৯৪২), 'রাঙা ধানের খৈ'(১৯৫০), 'ডালিম গাছে মৌ'(১৯৫৮), 'ক্ষীর নদীর কূলে'(১৯৮০), 'বিন্নি ধানের খৈ'(১৯৮৯), 'সাত ভাই চম্পা'(১৯৯৪), 'যাদু এ তো বড় রঙ্গ'(১৯৯৪), 'দোল দোল দুলুনি'(১৯৯৮) প্রভৃতি।
      এছাড়াও ইংরেজি ভাষায় মৌলিক রচনা ছাড়াও কিছু গল্প ও কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন তিনি। এছাড়াও সাহিত্য, সংস্কৃতি, সমাজ, শিক্ষা, রাজনীতি নিয়ে অসংখ্য ভাষণের কিছুসংখ্যক গ্রন্থভুক্ত হয়েছে। ১৯২২-২৬ সালের মধ্যে ওড়িয়া ভাষায় কিছু কবিতা, প্রবন্ধ ও গল্প রচনা করেছিলেন তিনি। তাঁর এই সব রচনা 'উৎকল সাহিত্য', 'সহকার', 'সবিতা' প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। পরবর্তী কালে তাঁর রচিত ওড়িয়া ভাষার রচনাগুলো সংকলিত হয়েছিল 'সবুজ অক্ষর'(১৯৬৬) নামের সংকলনে। এখনো ওড়িয়া সাহিত্যে তাঁর অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। 
       তাঁর বহুধাবিস্তৃত সাহিত্য কর্মের জন্য তিনি বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তিনি সাহিত্য একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমীর সূচনা পর্ব ১৯৮৬সাল থেকেই ছিলেন এর আজীবন সভাপতি ও পথপ্রদর্শক। তাঁর সাহিত্য কর্মের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জগত্তারিনী পুরস্কার (১৯৭৯) পেয়েছেন তিনি। পেয়েছেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশিকোত্তম সম্মান। বর্ধমান, যাদবপুর ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক ডি লিট পেয়েছেন তিনি। এছাড়াও সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার (১৯৬২), আনন্দ পুরস্কার (দুবার ১৯৮৩ ও ৯৪), বিদ্যাসাগর পুরস্কার, শিরোমণি পুরস্কার (১৯৯৫), রবীন্দ্র পুরস্কার, নজরুল পুরস্কার ছাড়াও পেয়েছেন বাংলাদেশের জেবুন্নিশা পুরস্কার। 
       এই বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী মানুষটি ২০০২সালের ২৮শে অক্টোবর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।


চলো যাই
(পাখিদের কাছে)
কলমে - বাসবদত্তা কদম

পর্ব ৪
প্রায় সব মাছরাঙারাই আয়তনে খুব বড় বা খুব ছোট হয় না। দেহের তুলনায় এদের মাথা বেশ বড় আর পা বেশ বেশি ছোট। ঠোঁট দুখানা শরীরের তুলনায় বেশ বেশি বড়। ঠিক যেন দুখানা ছোরা, একসঙ্গে জুড়ে রেডি রাখা আছে মাছ শিকারের জন্য। শিকার ধরার জন্য সব মাছরাঙাই পুকুর বা ঝিলের পাড়ের কোনো গাছে বসে থাকে বহুসময়। এমনকি ছোট শান্ত নদীর ধারেও। তারপর মাছ দেখতে পেলে উড়ে এসে ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। মাছরাঙাদের চেহারা আর রঙের প্রকারভেদ অনুযায়ী এদের নাম আলাদা হয়।  
 সাধারনত মাছরাঙা পাখি বেশ রংচঙে হয়। ‘মুক্ত বিহঙ্গ’ বা ‘পাকড় মাছরাঙা’ ছাড়া আর সবাই বেশ রংচঙে। নীল, সবুজ, বাদামি, বেগুনি, হলুদ এরকম সব উজ্বল রঙের সমাহার হয় এদের ডানায়। কারুর আবার বুক সাদা পিঠ রংচঙে। দু একটি প্রজাতির লেজ বেশ ঝোলা ও বড় ও হয়। 
খুব কম পাখি আছে যারা সবসময় বাসা বেঁধে বসবাস করে। সাধারণত সব পাখিই ডিম পাড়বার আগে বাসা বাঁধে। মাছরাঙা বাসা বাঁধে গাছের খোঁদলে। পচা কাঠের গর্তে। অন্য পাখির ছেড়ে যাওয়া বাসায়। এমনকি উইঢিবির গর্তে, নদীর পাড়ে। এদের স্ত্রী ও পুরুষ পাখি ধারালো ঠোঁট আর ছোট্ট পা দুখানির সাহায্যে গর্ত তৈরি এবং পরিষ্কার করে বাসা বানায়। এই বাসার গভীরত্ব তিন ফুটের আশপাশ পর্যন্ত হয়। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবার আগে পর্যন্ত পুরুষ এবং স্ত্রী পাখি দুজনেই ডিমে তা দিয়ে থাকে।

আমাদের আশেপাশে যে মাছরাঙা দেখতে পাই তার মধ্যে সব থেকে বেশি হল ‘পাতি মাছরাঙা বা Common Kingfisher’ এছাড়া যাদের দেখা যায় তারা হল ‘সাদা বুক মাছরাঙা White breasted Kingfisher’ এছাড়া ‘পাকড় মাছরাঙা বা মুক্তবিহঙ্গ Pied Kingfisher’ ‘মেঘ হও মাছরাঙা Stork billed Kingfisher’ আমাদের বাংলার সমুদ্রের ধারে সুন্দরবন অঞ্চলে দেখা যায় ‘কলার্ড মাছরাঙা Collared Kingfisher’ এদের আমাদের দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সমুদ্রের ধারে দেখা যায়। বিশেষত দক্ষিণ ভারত ও আন্দামানে।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য পাখি সাদা বুক মাছরাঙা। এটা তোমরা হয়ত জানো, তবুও বললাম। 
সেই সাদা কালো মাছরাঙা দেখা থেকে কত কথাই হলো। এরপর চেন্নাইয়ের রাস্তায় বিভিন্ন কাজে এদিক ওদিক যেতে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত বেশ কিছু পাখি দেখেছি, কখনো রাস্তায় মাথার ওপরের তারে। কখনো কোনো ব্যাক ওয়াটার বা খাঁড়ির ধারে। আমি আগেই বলেছি, চেন্নাইতে অজস্র ব্যাক ওয়াটারের কথা। এভাবে বিচ্ছিন্নভাবে পাখিদের দেখতাম আর খোঁজ খবর করতাম, কোথায় গেলে অনেক পাখি দেখতে পাব একসঙ্গে। এভাবেই একদিন জানলাম ভেদানথাঙ্গলের কথা।    
ভেদানথাঙ্গল চেন্নাই শহর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি অঞ্চল। চেন্নাইয়ের পাশের জেলা চেঙ্গালপটুতে। এটা আগের পর্বেই বলেছি; তা নিশ্চয়ই মনে আছে তোমাদের, তবুও বললাম, কারণ এভাবেই পাখি দেখতে আর খোঁজ নিতে নিতে, নভেম্বর শেষের এক রবিবার ভোরবেলা আমরা বেরিয়ে পড়লাম ভেদান্থাঙ্গলে যাব বলে। 
রাত প্রায় তিনটেতে বেরনো হল, কারণ পাখিদের দেখার সব থেকে ভালো সময় ভোরবেলা। আর পাখিদের ভোর যে আমাদের আগে হয় এ আর কে না জানে? ওদের ডাকেই তো আমাদের ঘুম ভাঙে। 
চেন্নাইকে পিছনে ফেলে, চেন্নাই এয়ারপোর্টকে ডানহাতে রেখে আরো অনেকটা পেরোলে টামব্রাম বলে একটা জায়গা পার হলাম। এইখানে এসে চেন্নাই কর্পোরেশনের সীমা শেষ হলো। এখানকের গেটে বড় বর করে সেটা লেখা আছে। এর আরো খানিক পর মেইন রোড থেকে ডানদিকে একটা বেশ সরু রাস্তা ঢুকে গেছে। সেখানে গিয়ে একটা দুটো চায়ের দোকানে জিজ্ঞেস করে, দু একবার ভুল রাস্তায় গিয়ে, শেষে পৌঁছানো গেল ভেদানথাঙ্গল পখিরালয়ে। 

আমরা যখন পৌঁছলাম, ভোর তখনো ভালো করে ফোটেনি। আকাশের গায়ে তখনো অন্ধকার মাখা। উষা সেই অন্ধকারকে একটু একটু করে মুছে দিচ্ছে। কিচির মিচির, কুক কুক, কিকা কিকা, কেউ আবার বলে কিচাং কিচাং, কানে তালা ধরে যাবার যোগাড়। পাখিরা প্রায় সবাই ঘুম থেকে উঠে গেছে। ছানা পোনাদের খুব খিদে পেয়ে গেছে, কেউ মিহি গলায় বলে কিঁচকিঁচ তো কোনো রাগী পেলিকান ছানা বলে কিঁ-ইচকিঁ-ইচ। বকেদের কয়েকজন তখন জলের ধারে এক পা তুলে ধ্যানে বসে গেছে। বিশাল বিশাল গাছগুলো থেকে হাঁসগুলো পাখা ঝাপটাতে ঝাপটাতে এসে জলে নামলো। দুই বিশাল পেলিকান দম্পতি নামতেই হাঁসগুলো একটু সরে গেল। পেলিকান দম্পতির কিরকম রাজা রানী হাবভাব। হেসোনা গো। সত্যি বলছি। 
পিছন ফিরে দেখি মাইলের পর মাইল ধান ক্ষেত। তামিলনাড়ুতেও কেরালার মত খুব ধান চাষ হয় জানতো? সেই ধানক্ষেতে দেখি বেশ কিছু বগলা বসে আছে। এদের গায়ের রঙ ঘিয়ে। ধানক্ষেতের পোকা এদের খুব পছন্দের।
এরপর একটু একটু করে রোদ উঠতে শুরু করল, দেখি যে আশেপাশের গাছগুলোর ডালে বসে আছে বেশ কিছু বাঁদর আর হনুমান। শুনলাম বছরভর এরা এখানেই থাকে।     
৭৪ একরেরও বেশি জায়গা নিয়ে এই ভেদানথাঙ্গল এলাকা বিস্তৃত। রয়েছে দেখলাম প্রচুর বাবলা আর হিজল গাছ। এই সব গাছে পাখিদের আস্তানা। বিশাল এক লেক রয়েছে এই অঞ্চলে, তার নাম ভেদানথাঙ্গল লেক। এই পরিযায়ী পাখিদের খাদ্য আর এখানকার মানুষের চাষের জমির জল, এই লেকই সরবরাহ করে। শোনা যায় প্রায় চল্লিশ হাজার পরিযায়ী পাখি প্রতিবছর এই ভেদানথাঙ্গল অঞ্চলে আসে। গত প্রায় একশো বছর ধরে তারা এই অঞ্চলে আসছে ঘুরে ঘুরে প্রতি বছর। কিন্তু কেন? 
ভেদানথাঙ্গলের আশেপাশে আছে বেশ কিছু ছোট ছোট গ্রাম। এখানকার মানুষেরাও পাখিগুলোকে খুব ভালোবাসেন, তাদের কোনো ক্ষতি করেন না এবং কাউকে ক্ষতি করতেও দেন না। এই পখীরালয় কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে গ্রামের মানুষদের ছোট ছোট দোকান। চা, কফি, কোল্ড ড্রিংকস, জল এবং তেলেভাজা বা ছোটখাটো জলখাবারের দোকান। আশ্চর্য হয়ে দেখতে হয় এখানকার মানুষের বোধ, এক কাপ চা নিয়েও কেউ ভেদানথাঙ্গল স্যাংচুয়ারির ভেতর প্রবেশ করতে পারবেন না। বাইরের মাঠে দোকানগুলো আছে, সেখানেই খেয়ে, পেপার কাপ, ন্যাপকিন ওনাদের উচ্ছিষ্ট ফেলবার ব্যাগে ফেলে, তবে যাওয়া যায়। এভাবে পাখিদের রক্ষা করেন, তাদের পরিবেশকে যত্ন করে ধরে রাখেন; এসমস্ত কারণ গুলোই পাখিদের নিয়ে আসে টেনে বছরের পর বছর। আদর ভালবাসা পেলে কে না ফিরে ফিরে আসে বল? 
চলো এবার আমরা ফিরে যাই পাখিতে সেই যে একটা একটা করে পাখি ধরে আমরা আলোচনা করছিলাম।
একটু আগেই বকেদের কথা হচ্ছিল; চলতি বাংলায় যাদের আমরা বলি বগা বা বগলা ইংরেজিতে এদেরই বলি Egret, Heron। পিছনের ধানক্ষেতে বসে আছে ঘিয়ে বক। লেকের পাড়ে সাদা বক একপায়ে খাড়া।
 (ক্রমশঃ)


পাঠপ্রতিক্রিয়া
(জ্বলদর্চি ছোটোবেলা ৭৪ পড়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের শিক্ষিকা অনামিকা তিওয়ারী যা লিখলেন) 
   
"জ্বলদর্চি ছোটবেলা সংখ্যা- ৭৪ " সদ্য পড়ে ফেললাম। এই ওয়েব ম্যাগাজিনটি মূলত ছোটদের উপযোগী হলেও বড়দেরও পড়তে বেশ লাগবে। শুরুতেই ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন জানাই সম্পাদিকা মৌসুমী ঘোষ মহাশয়াকে। এতো ছোট্ট পরিসরে এতো সুন্দর করে  সাজিয়েছেন তিনি ম্যাগাজিন'টিকে যে তা পাঠককে আকর্ষণ করবেই। সম্পাদকীয় কলামে তাঁর সহজ, সরল বর্ণনা সত্যিই মনোমুগ্ধকর। শিশুমনের স্পর্শকাতর কোরকগুলিকে ছুঁয়ে যাবেই এই প্রারম্ভিক পর্বটি। ম্যাগাজিন'টিতে কয়েকটি রপকথার গল্প, উপন্যাস এবং ছড়া রয়েছে। যা অবশ্যই ম্যাগাজিনর একটি অন্যতম আকর্ষণ। তৃষ্ণা বসাক  তাঁর " জয়াবতীর জয়যাত্রা " ধারাবাহিক উপন্যাসের ষষ্ঠ পর্বটিতে যেমন সুনিপুণ কলমের আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলেছেন সাহসী কন্যা জয়াবতীর দুঃসাহসিক কর্মকান্ড, তেমনিই দক্ষতার সাথে কৃষ্ণা দাস রপকথার মোড়কে সাম্প্রতিক সময়ের করোনা মহামারীকে জুড়ে দিয়ে সুন্দর একটি শিশুপাঠ্য গল্প লিখেছেন। এক সাহসী রাজকন্যা নিজের জীবন বাজি রেখে কীভাবে পরের জীবনের জন্য একের পর এক প্রতিকূলতাকে জয় করে এগিয়ে চলেছে সেই কাহিনীই এই গল্পের উপজীব্য। ভালো লেগেছে তনুজা চক্রবর্তীর রুপকথার ছড়া। ছোট্ট হাতে বেশ মজাদার কল্পনার জাল বুনেছে  প্রবাহনীল দাস। তার কবিতা পড়ে সত্যিই টাইম মেশিনে চড়ে সেই কল্পলোকে উড়ান দিতে ইচ্ছে করে। পীযূষ প্রতিহারের লেখনীতে ফুটে উঠেছে ক্ষণজন্মা, প্রতিভাময়ী কবি তরু দত্তের জীবনের খুঁটিনাটি। সংক্ষিপ্ত পরিসরে তথ্যবহুল প্রতিবেদনটি অবশ্যই মন ছুঁয়ে যায়। স্নেহা দাস, সুদেষ্ণা গিরি এবং শ্রেয়সী ঘোষ এই ত্রয়ী তাদের পড়াশোনার ফাঁকে সুন্দর সুন্দর তিনটি ছবি উপহার দিয়েছে। সবশেষে বাসবদত্তা কদমের লেখা ধারাবাহিক ভ্রমণ কথা, " চলো যাই পাখিদের কাছে" পড়তে পড়তে ভারতের বিখ্যাত পক্ষীবিদ সেলিম আলির কথা মনে পড়ে যায়। ঝিলের ধারে মাছের অপেক্ষায় ঘাপটি মেরে বসে থাকা মাছরাঙার গল্প জানতে এই অংশটি অবশ্যই পড়তে হয়। 
বর্তমানে "সময় নেই " এর যুগে স্বল্প পরিসরের এই ম্যাগাজিন শিশুদের জন্য একটি নতুন দিক নির্দেশ করছে। এতে লেখা এবং পড়া দুইয়ের প্রতিই তাদের  আগ্রহ যে অনেকাংশে বাড়বে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। অনেক শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা জানাই জ্বলদর্চি'কে।

আরও পড়ুন
জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
 

Post a Comment

3 Comments

  1. মৌসুমী মাসি! আজকের জ্বলদর্চির ৭৫তম সংখ্যা পড়তে খুব ভালো লেগেছে আমার। জয়াবতীর জয়যাত্রা এবং অন্যান্য গল্প ও কবিতাও খুব ভালো লেগেছে। অনামিকা তিওয়ারীর পাঠ প্রতিক্রিয়াও খুব ভালো লেগেছে।

    ReplyDelete
  2. বাসবদত্তা র লেখাটা খাঁটি ছোটদের লেখা। এরজম লেখা বুড়োদেরও মনের কাছে থাকব্র। আরো পাখি আসুক। আমাদের মনের ঘরে

    ReplyDelete
  3. বাসবদত্তা র লেখাটা খাঁটি ছোটদের লেখা। এরজম লেখা বুড়োদেরও মনের কাছে থাকব্র। আরো পাখি আসুক। আমাদের মনের ঘরে

    ReplyDelete