জ্বলদর্চি

পদ্মপাতায় শিমুল-১৪ /সীমা ব্যানার্জ্জী-রায়


পদ্মপাতায় শিমুল-১৪

সীমা ব্যানার্জ্জী-রায়

-ঝাড়গ্রাম,মেদিনীপুর-

সেই গানটা মাঝে মাঝে গেয়ে নিজেই হেসে ফেলি...

"লাল পাহাড়ির দেশে যা
রাঙামাটির দেশে যা
ইত্থাক তুকে মানাইছে না রে
ইক্কেবারে মানাইছে না... "

আজ বলি, আমার সেই হারিয়ে যাওয়া মেয়েবেলার জীবন। এই ঝাড়্গ্রামেই আমি একটু একটু করে বড় হতে শুরু করলাম।

চার পাঁচটা বাড়ির মাঝখানে একলা শুয়ে থাকে শুধু একটা বিশাল মাঠ । সেই মাঠে একটা ফ্রক পরা মেয়ের ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া চুলে মুখটা ঘন ঘন ঢেকে যাচ্ছে। দুই হাত দিয়ে সেই চুলগুলো কানের দুপাশে সরিয়ে রাখার অদম্য চেষ্টা তার।

ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিছু আগাছা, দুব্বোঘাস, নাম না জানা ফুলের গাছ অবহেলায় পড়ে থাকে। এক পাশে বেশ কিছু সারি সারি শালগাছ। তাতে ভিড় করছে বুলবুলি, টিয়া, গলাফুলা, কালিবক, নীলকন্ঠ পাখির দল। না না, পরে দেখি পাখিও নেই। একা মাঠ আর একটা একপেয়ে গাছ। ব্যস! ওইটুকুই। চোখে বুঝি পড়ে মাটি, খড়, ইট, কাঠ, সুরকি অথবা একটা গোটা বাড়ির স্কেলেটন। কড়িবরগা। আর নেমে আসা গ্রীষ্মের বেমরশুম অথবা ক্রমিক শ্রাবণ।

পশ্চিমবঙ্গ-এর একটি শাল-সেগুন আর মহুয়ার জঙ্গল দিয়ে ঘেরা এই শান্ত মনকাড়া শহর। ঠিক ঝাড়খণ্ড বর্ডারের কাছে অবস্থিত। বহুবছর আগে না বললেও চলে, এই ঝাড়গ্রাম 'জঙ্গলমহল' নামে কিন্তু পরিচিত ছিল। সবুজের সমারোহ আর সত্যি লাল মাটির শহর এই ঝাড়গ্রাম। আমার কিশোরীবেলা। আমার মেয়েবেলার ঝাড়গ্রাম। আমার এক্কা-দোক্কা খেলার লাল মাটির কোর্ট, আমার বুড়ি ছোঁ, লুকোচুরি খেলার লাল মাটির সন্ধান। আবার পাঁচটা গুটি নিয়ে মাটিতে বাবু হয়ে বসে খেলার লাল মাটি।

বড়দাকে কোনদিন দেখি নি। আমার জন্মের আগেই আমার বড়দা তারা হয়ে আকাশে রয়ে গেছেন। আমার মেজদা প্রথম চাকরি পেয়ে ঝাড়গ্রাম এ পোস্টিং হলেন। তখন আমরা ছিলাম বিহারের জামালপুর শহরের মুঙ্গের রোডের বাড়িতে। মেজদা ঝাড়গ্রাম থেকে বাড়ি এলে, আমরা ছোট-রা সব মেজদার পা-এর তলায় দেখতাম। মেজদা শুয়ে থাকলে...পা এর তলা একেবারে লাল থাকত। আমরা অবাক হয়ে যেতাম। মেজদা এমনিই খুব ফর্সা। আমাকেও যে আসতে হবে সেই লাল মাটির দ্যাশে, তা কে জানত।

একদিন চলে এলাম জামালপুর থেকে কু উ উ ঝিক ঝিক করে মা বাবার হাত ধরে আমি আর ছোট ভাই। চেয়ে চেয়ে দেখেছিলাম হয়ত সেদিন সেই ছায়া ঘেরা লাল মাটির শহর আমার প্রিয় ঝাড়গ্রামকে। সেও হয়ত তখন আমার মতন কিশোরী ছিল।

লন্ঠনের ঝিমি ঝিমি আলোয় তখন এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা শালগাছগুলো একটা নিস্তব্ধতার মধ্যে থাকত। মাঝে মাঝে ঝিঁ ঝিঁ পোকার সুর শোনা যেত। সূর্যের ছায়ায় আর জ্যোৎস্নায় তারা কত রকমের সব জিগজ্যাগ তৈরি করত, তার হদিশ পেতাম না। শুধু তাই নয়, তাদের পড়ে থাকা পাতারাও কম যেত না। তারাও সুন্দর সুন্দর নকশা তৈরি করত।

সাঁওতাল-রা সব দল বেঁধে সূর্য ওঠবার আগেই কাজে বেরিয়ে পড়ত। গড়গড় করে এগিয়ে যেত গরুর গাড়ি । শোনা যেত তাদের গলার তালে তালে 'হিলিক-হিলিক' শব্দ। কি সুন্দর যে লাগত...তা লিখতে গেলে মনে হয় এ লেখা ঠিক হচ্ছে না। আর লিখে প্রকাশ করা মানে বাতুলতা। এ সব লেখা যায় না। এ সব মনের গভীরে থাকে। ডুব সাঁতার দিতে হয় এ সব স্মৃতিগুলো পড়ার জন্য। খালি গায়ে হাঁটুর ওপর পর্যন্ত রংচঙ্গে লুঙ্গি পরে সাঁওতাল ছেলেরাও কাজে যেত। মাথায় থাকত গামছার পাগড়ি। মিশকালো শরীরে যেন তেল চকচক করত।

ফাগুন আসত হৈ হৈ করে, তারপরেই আগুন বড় প্রিয় হয়ে উঠত পরের মরশুমে। কত বিষাক্ত আগুন হতে পারে, দেখেছিলাম ঐ'কদিনেই । অনেকগুলো বছর অনেকগুলো দিন...বেড়ে গিয়েছিল কিভাবে কোথায় জন্ম-মৃত্যুর ঋণ । তবে 'এভাবেও ফিরে আসা যায়, এভাবেও মন আনন্দে মাতামাতি করে … ধামসা মাদল, কাড়ানাকাড়ার তালে তালে। আদিবাসীরা 'রিনজা' নাচ করে হয়ত আজও। আশ্বিনমাসে একাদশীর চাঁদ দেখা দিতেই 'করম' উৎসব শুরু হয়। চাঁদের জ্যোৎস্না শালগাছের মাথা থেকে নেমে আসে লাল মাটির গায়ে...শূন্য থেকে একটা পূর্ণতার সৃষ্টি করে। যখন স্বপ্নে প্রিয় শাল মহুয়ার গাছের ছায়ায় ছোটাছুটি করি, সেইসব আঁকিবুঁকি কাটা জ্যোৎস্নাকে ছুঁয়ে যাই-।

ঠিক তখন তুই আসিস মাদল বাজিয়ে। তোর বুকেতেই আমি আরও বেড়ে ওঠার স্বপ্ন দেখতাম।

"আয় মন বেড়াতে যাবি।”

- কোথায় যাবি মন...? মাঝে মাঝে মন আমাকে বলে... “তুয়ার পায়ে তো লাট্টু বাঁধা।” লাট্টু সবে ঘুরতে শুরু করেছে।

চুপিচুপি কিশোরীর পা ফেলা একঘর নিঃসঙ্গতার পর্দা সরিয়ে উঁকি দেয় লুকোচুরির শৈশব। মনকেমনের শ্যাওলা থেকে উঠে আসে এক্কা-দোক্কার শেষ ঠিকানা। আমাদের শরীর যেন এক পাল তোলা নৌকা। যে নৌকো দেহের খাঁজে খাঁজে খুঁজে বেড়ায় দিস্তাভরা তারাদের । আর তারাদের খাঁজে খাঁজে স্মৃতির চুমকিরা মাঝে মাঝে 'টুকাআ বুউউউ' খেলে বেড়ায়...সেই যে শাল-সেগুন পিয়াল মহুয়া নামে সব সুন্দরীরা এলো চুল ছড়িয়ে রৌদ্রের কিরণে চুল শোকায়, জ্যোৎস্নার রং দিয়ে ছোট ছোট ছায়া-আবছায়া তৈরি করে, আবার ঘন অমাবস্যায় নাকীসুরী ভূত পেত্নী হয়ে ছোট-বড় নির্বিশেষে ভয় দেখায়... সেই যে গ্রাম ছাড়া সেই রাঙা মাটির পথ...না কোথাও গিয়ে খুঁজে পাই নি এই সৌন্দর্য । আনাচে কানাচে কোত্থাও না... বেশ কিছু যায়গায় ঘোরাঘুরি করেও পাই নি সেই সরলতা ভরা শাল -পিয়ালের শহর...

এই যে হাতেনাতে ধরা পড়ে আজ আমি খাঁচায় বদ্ধ পায়রা গুলিকে মুক্ত আকাশে উড়িয়ে দিলাম। এইদিনই সম্ভবত আমি আরও একবার নিজের মনের আয়নায় নিজেকে দেখে নিতে পারলাম । আমিও কোন কোন ক্ষেত্রে স্বাভাবিক নই, তাই নয় কি?

শহরের যান্ত্রিকতা প্রতি মুহূর্তে গ্রাস করে নিচ্ছে আমাদের সুস্থ মনকে। গ্রাস করে নিচ্ছে আমাদের মোহন মেদুর স্বপ্ন গুলিকে। আমরা পরিবেশ নিয়ে কাজ করছি, কিন্তু কতটুকু আর পারছি সামলাতে।

আমরা শুনি দেশের বৃষ্টিস্নাত সব গাছ কেটে ফেলার কথা, রাস্তা প্রশস্ত হবে, যানবাহন চলাচল আরও সুগম হবে, অন্তরের আত্মিকতাকে গ্রাস করে ফেলছে যান্ত্রিকতা। উঠে আসছে উড়ান-পু্ল, কেন? আমরা আজ অতি সম্ভ্রম, আমরা উন্নত। আমরা সভ্য হচ্ছি, আমরা আধুনিকতায় নিজেদের মুড়ে দিচ্ছি।

ফেলে আসা মেয়েবেলা এখনও আমার স্মৃতি কাঁচে স্পষ্ট এবং স্ফটিকের মত স্বচ্ছ- তাই যেন থাকে। এই ঝাড়গ্রাম-এই আমার প্রথম নামতা শেখা আর বর্ণপরিচয়-এর দ্বিতীয় ভাগ।

সেই যে টুসু দেবী যে আষ্ঠেপিষ্ঠে জড়িয়ে আছে শাল-মহুয়ার খাপখোপড়ে...সেই যে টুসু গান শোনা যায় আজও- 'টুসু তুই আমার বাড়ি থাক কেনে', টুসু দেবী যতদিন আছেন...আমিও থাকব তো, আর আছি তো সেখানে । হ্যাঁ, হৃদয় নাম-এ যে একটা ছোট্ট লাল পদার্থ আছে শরীরের বাঁ দিকে। সে তো ওখানে ইচ্ছে হলেই ঘুরে আসে।

২০১৯ এ যখন আবার ঝাড়্গ্রাম গেলাম, তোমাকে নিয়ে গেছিলাম তো সেই কাঁসাই নদীর পাড়, ডুলুং নদী। সেই যে কেছেন্দা বাঁধ, রাজবাড়ি, সাবিত্রী মন্দির...মনে মনে সেদিন বলেছিলাম এদের ছেড়ে যেও না তুমি শালসুন্দরী! যেও না যেও না সুন্দরী মহুয়ার গাছ। আমার বাঁধনহারা প্রেমের ঝাড়গ্রাম! এখানেই তো প্রেম কাকে বলে বুঝতে শিখেছিলাম।

সেদিন খুব বৃষ্টি নেমেছিল। আর বৃষ্টির সোঁদা সোঁদা গন্ধ! সেই গন্ধ আর পাই না। জানালা দিয়ে হাপুস হাপুস করে স্নান করা শালগাছগুলোকে হাঁ করে দেখতাম।

আমি তো তখন ছাই বিপ্লব কি বুঝতাম না। জানতাম না দাবিদাওয়া কিম্বা ইস্তেহারের ব্যাকরণ। লাল ঝণ্ডা হাতে মিছিল আর মিছিল। মাটির বাড়ির দেওয়ালগুলোতে সব লেখা আজও চোখের সামনে ভাসে। কমরেডের জোট নেই/জ্যোতি বসুর ভোট নেই। মিছিলের সব পতাকাগুলো বৃষ্টির জলে সেদিন ইজ্জত হারিয়েছিল। আজও হারায় তারা সেইভাবে...উড়ন্ত প্রেমিকার মতন পায়ে পায়ে রাস্তা না মেপেই কমরেডসদের পিছনে ফেলে এক দৌড়ে আমি ও আমার মতন কুচি কুচি কতজন খালি পায়ে তখন রায়বাড়ির জমিদারি খিড়কীতে। অথচ আজও আমার ঘুমের মধ্যে সাদা স্বপ্ন জুড়ে কত নাম না জানা মিছিল...কত নাম না জানা সাঁওতাল মেয়ের দল...কত দমবাজ দাবী...নোনা পদাবলী হাজারো মুখ..লক্ষ হাত...হাওয়ামুখী স্লোগান...স্যাঁতসেঁতে কাস্তে আঁকা পতাকা...সবার উপরে নকশাল রাজত্ব!
আর...আর ছিল একটা জমিদারি খিড়কী। রংচটা গোলাপি। আমগাছের সারি দিয়ে পাঁচিল। দুপুর হলে ঝড়ের দিনে ছোট ভাই আর পাড়ার বন্ধুদের সাথে আমিও আমতলায়...ফিরে এলে বাড়িতে বেদম বকুনি...চোখভর্তি জল আর কাঁপা ঠোঁটে অভিমান।

সাঁওতালদের স্ত্রী-রা দুয়ারে লাতা(ন্যাতা) দিচ্ছে, উঁচু বারান্দা সবে লেপা হয়েছে। সুদক্ষ গৃহিণীদের পাকা হাতে মাটি গোবর দিয়ে অর্ধচন্দ্রাকারে পদ্মদলের মতো একটির পর একটি সুবিন্যস্ত পোঁছ। সব মনে আছে। সুলেপিত কাঁচা ভিটা-বাড়ির প্রাতঃকালের শোভা, শুচিশুদ্ধতা অন্তরে কি নির্মল পবিত্র ভাবের উদয় করে, তা পাড়াগাঁয়ে যাঁরা বাস করেছেন, ভাল করে দেখেছেন, তাঁরাই শুধু জানেন। পাড়াগাঁ শুনতে জানি কেমন লাগে আজকালকার মানুষদের। কেন লাগবে না? যেখানেই একটু অসম ব্যবহার সেখানেই শুনতে হয় 'পাড়াগেঁয়ে ভূত'!

আমার এই ঝাড়গ্রাম-এ খালি গাছ আর গাছ দেখা যেত। থাকত সাঁওতাল, মুন্ডাস, ভূমিজ, লোধাস, আর সাবারস। এই শহরে কোন ইকোনোমিক সংস্থান না থাকার জন্য ঘনবসতি ছিল না। আমি স্কুলে পড়াকালীন নকশালদের মস্ত বড় আড্ডা ছিল এই ঝাড়গ্রামে। কতদিন রাতে মোটা বুটের শব্দ “গুম গুম” শোনা যেত। ওই গুম গুম আওয়াজের সাথে বুকেও ধুক ধুক আওয়াজ বেজে চলত। আওয়াজ মিলিয়ে গেলে তখন বুকের ধুকপুকানি শান্ত হত। এই ঝাড়গ্রাম এর ঐতিহাসিক কথা একটু না বললেই নয়।

আমি একটু ইতিহাস প্রিয়। তাই তোমাকে ঝাড়গ্রামের একটু ইতিহাস শোনাই। যার জন্য আমেরিকায় পড়ার সময় কম্পালসারি কোর সাবজেক্ট আমেরিকান হিস্ট্রি নিয়েছিলাম। কি বলো, শুনবে? আর আমেরিকানরা তো বলে-উপন্যাস মানেই ইতিহাস আর ফিলোজফি।

--হ্যাঁ!তুমি আগে বলেছিলে। আর শুনব না মানে? দেখতে পাচ্ছি চোখের সামনে...কত কিছু জানছি বলো তো? আমি তো এসবের কিছুই জানি না। দাদুর বাড়িতে থাকতাম। পাশেই স্কুল। তারপর বি ই কলেজ, ব্যাস! দেশ ছাড়লাম ২২ বছর বয়সে। দেশ মানেই জানলাম না ঠিক করে। বোঝো!

এইবার শুরু করি ঝাড়্গ্রামের ইতিহাস। আমার ইতিহাস খুব ভালো লাগে। তখন তো রাজা রাজড়াদের যুগ। শোনা কথায় ১৫৭৪ খৃষ্টাব্দে, রাজা মান সিং, মুঘল রাজা সম্রাট আকবরের জন্য রাজপুতানা থেকে বাংলাকে জয় করার জন্য এসেছিলেন । তখন তিনি দুজন রাজ অফিসার রেখেছিলেন। আর্মি সর্বেশ্বর সিং এবং তাঁর বড় ভাই লোকাল ট্রাইবাল সাম্রাজ্যকে হারিয়ে জঙ্গলখন্ড তৈরি করেন এবং রাজা হলেন মল্ল রাজা। রাজা সর্বেশ্বর সিং এবং মল্ল রাজা যুদ্ধ করেন এবং মল্লদের ট্রাইবাল রাজাকে পরাস্ত করেন। রাজা সর্বেশ্বর সিং পদবি নেন মল্ল দেব এবং রাজধানী করেন ঝাড়গ্রাম । যখন মান সিং রাজস্থান ফিরে যাওয়া মনস্থ করেন তখন তিনি তাঁর প্রধান দুই অফিসারদের সর্বেশ্বর মল্লদেব এবং তার বড় ভাই এর ওপর সমস্ত সাম্রাজ্য দেখাশোনার ভার দিয়ে গেলেন।

রাজা সর্বেশ্বর মল্লদেব ফিরে যেতে চাইলেন না, মোগল রাজা আকবরের সুবেদার হিসেবে তিনি জঙ্গলখন্ডের রাজা হলেন । বড় ভাই হলেন বিশ্নুপুরের রাজা। মল্লভুম নামে পরিচিত হলেন এনারা।

ঝাড়গ্রাম রাজবাড়িতে থাকতেন রয়াল ফ্যামিলিরা। ম্যাসিভ গোলাপি পাথরের তৈরি বাড়ি প্রতিকৃতি হিসেবে ইসলামিক ও গোথিক আর্কিটেকচার সাদা আর নীল দিয়ে কাজ করা সব ডোমসগুলো। সোত্তর বিঘা জমির চেয়েও বেশি জায়গা।

রাজপরিবারের রাধারানীর মন্দিরই ছিল প্রধান মন্দির। রাজা সর্বেশ্বর মল্লদেব ছিলেন বর্তমান রাজবাড়ির প্রবর্তক। এই সময় চার শত বছর ধরে আঠেরো জন রাজা ঝাড়গ্রাম-এ রাজত্ব করেছিলেন। সর্বশেষ রাজা ছিলেন রাজা বীরেন্দ্র বিজয় মল্লদেব। তিনি ২২শে ফেব্রুয়ারি, মারা যান। সালটা মনে নেই।

কেয়ার টেকার আমাদের জানালেন যে, তাঁর দুই ছেলে রাজা শিবেন্দ্র বিজয় মল্ল দেব ও কুমার জয়দীপ মল্লদেব। আর দুই মেয়ে রাধারানী ও রাজশ্রী। আমি যখন পড়তাম রাজশ্রীদি তখন এগারো ক্লাসে পড়ত। কি সুন্দর দেখতে ছিল। এখনও শিবেন্দ্র আর জয়দীপ মল্লদেব ফ্যামিলির ব্যবসা এবং সম্পত্তি দেখাশুনা করেন।

রাজপ্রাসাদের নয়-টা ঘর।  প্রাসাদের ভেতরের জায়গা এখন বাজেট হোটেল হয়েছে। তার মধ্যে চারটে ঘর এয়ার কন্ডিশন্ড। পুরানো ফ্যাশনের ঘরগুলোতে ছিল উঁচু উঁচু সিলিং। এখন অবশ্য সব আধুনিকতায় ছেয়ে রেখেছে। রাজবাড়িতে গিয়ে আমরা দেখলাম তো। থাকার খুব ইচ্ছে ছিল। কিন্তু বড়বৌদি দুঃখ পাবে বলে আর থাকা হল না। চলে যেতে হবে কাল-ই। মন বলে উঠলঃ-প্রবাসিনী, তুমি কোথায় যাবে? দূরে গেলে বড় ব্যথা পাবে ঝাড়গ্রামখানি।
(চলবে)

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
 

Post a Comment

0 Comments