জ্বলদর্চি

জঙ্গলমহলের জীবন ও প্রকৃতি-১৩ /সূর্যকান্ত মাহাতো

জঙ্গলমহলের জীবন ও প্রকৃতি

পর্ব - ১৩

সূর্যকান্ত মাহাতো

শাল মহুল ও কেঁদের বনে

ওরা পাতা তুলে। শাল পাতা। কেঁদ পাতা। বসন্ত এখন বিদায়ের মুখে।  গ্রীষ্ম তাই কড়া নাড়ছে দরজায়। দিন দিন গরমের তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে সেটা অনুভব করলেই বোঝা যাচ্ছে। এই সময়টা পাতা তোলার মরসুম। শীতে পাতা ঝরিয়ে উলঙ্গ শাল ও কেঁদ গাছগুলো সেজে উঠেছে নতুন পোশাকে। নবজাত কিশলয়গুলো সকালের নরম আলোয় বেশ ঝলমল করছে। জঙ্গলমহলের মানুষের কাছে পাতাগুলো হীরকদ্যুতির মতো। কারণ সেগুলো যে হীরের মতোই মূল্যবান। সেই প্রাচীনকাল থেকে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষগুলোকে অর্থের যোগান দিয়ে চলেছে পাতাগুলো। এই পাতা শিল্প কত কত পরিবারের একমাত্র রুজি-রোজগার।

পাতা তোলার কাজটা মোটেও সহজ কাজ নয়। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে শহরবাসী যখন এসি-র তলায় স্বস্তি বোধ করছেন, জঙ্গলমহলের এইসব আদিবাসী ও  নিম্ন শ্রেণীর মা-বোনেরা তখন গভীর জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে শাল পাতা সংগ্রহ করে চলেছে। পাতাগুলোকে বস্তায় ভরে, নয় তো বেশ গুছিয়ে গুছিয়ে বৃত্তাকার ভাবে পাকিয়ে বোঝা বাঁধে। সেই বোঝা মাথায় করে তারা বাড়ি ফেরে। কোনও কোনও দিন ফিরতে ফিরতে দুপুর গড়িয়ে যায়। সূর্যমামা তখন মধ্য গগনে  বিরাজমান। সমস্ত ক্ষমতা দিয়ে উনি তখন তাপশক্তি নির্গত করেন। পাতা তোলা মা-বোনেদের মাথায় ছাতা থাকে না। পাতা ভর্তি বস্তা, আর পাতার বোঝা-ই তখন ওদের মাথার ছাতা। সেই ছায়ার বোঝা মাথায় নিয়েই কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাড়ি ফিরে। শুধু মাথার ঘাম পায়ে পড়ে না। ওদের সমস্ত শরীর দিয়েই ঝরনার মত ফুটে ফুটে বেরোয় লবণাক্ত জল।
বিশ্রাম? সে তো এদের কাছে স্বপ্ন। রাত্রির ঘুম টুকু ছাড়া বিশ্রাম কাকে বলে এরা জানে না। জঙ্গল থেকে ফিরেই স্নান। চটপট দুটি হাতে মুখে করে খাওয়া। কারণ এবার যে বসতে হবে পাতাগুলোকে সেলাই করতে। একটার পর একটা পাতাকে খড়িকা দিয়ে গেঁথে গেঁথে  গোলাকার থালা বানায়। 'খড়িকা' হল নিমপাতার মাঝের সরু কাঠি। গাছের তলায় পড়ে থাকা নিমের সরু সরু কাঠি গুলো কুড়িয়ে এনে ভালোভাবে শুকনো করতে হয়। খটখট শব্দে যেন ভেঙ্গে যায়। সহজে ভেঙে গেলে পাতা টিপতে সুবিধাও হয়।

খড়িকা গাঁথা পাতার থালাগুলোকে  অনেকে 'খালিপাতা' বা 'পাতার খালি' বা 'খালা' বলেও ডাকে। কাঁচা পাতা দিয়ে থালা বানালেই হয় না। সেগুলোকে আবার রোদে মেলে শুকনো করতে হয়। শুকনো থালাগুলো কুড়িয়ে এনে গুনে গুনে বান্ডিল করে বাঁধতে হয়। এক-একটা বান্ডিলে ১০০ টা করে থালা থাকে। হাজারটা থালা নিয়ে দাম নির্ধারিত হয়। অর্থাৎ দশটা বান্ডিল বা ১০০০ থালার দাম এখন আড়াইশো থেকে তিনশো টাকা। বাজার চলতি দামেই সেগুলো বিক্রি হয়। এভাবে প্রচণ্ড গরমে জঙ্গলে যাওয়া, পাতা তোলা, বয়ে আনা, সেলাই করা, শুকনো করা, ফের বেঁধে বিক্রি করলে তবেই মেলে পয়সা।

কেন্দু বা কেঁদ পাতাকে বরং সেলাই করতে হয় না। আস্ত পাতাগুলোকেই কাঁচা অথবা শুকনো করে বান্ডিল বানাতে হয়। এক-একটা বান্ডিলে ২৫ টি পাতা থাকে। এভাবেই হাজারটি পাতায় দাম নির্ধারিত হয়। শালপাতার মতো কেঁদ পাতাও জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করতে হয়। বস্তায় ভরে, নয় তো বোঝা বেঁধে। বাড়ি ফিরে বান্ডিল বাঁধার কাজ করতে হয়। এটাও খুব শ্রম সাপেক্ষ।

কেঁদ পাতা দিয়ে বিড়ি তৈরি হয়। তাই এমন অনেক পরিবার আছে যারা নিজেরাই পাতা শুকনো করে কেটে বিড়ি বানায়। এতে রোজগারও একটু বেশি হয়।

জঙ্গলমহলে এমন কয়েক হাজার পরিবার জঙ্গলের শাল ও কেঁদ পাতার উপর নির্ভরশীল। কারণ সারা বছর ধরে পাতা তোলা সম্ভব নয়। এই সময়টাই ভালো পাতা তোলার আদর্শ সময়। কিন্তু দুঃখের বিষয় কেউ বা কারা জঙ্গলমহলের জঙ্গলগুলোতে আগুন ধরিয়ে বিকৃত আনন্দ লাভ করছে। শরীরের শুকনো ঝরা পাতার আগুনে বেচারা গাছগুলো নিজেরাই পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে। কচি পাতা গুলো আগুনের লেলিহান শিখায় ছারখার। পাতা তোলার কাজে যুক্ত পরিবারগুলি আতঙ্কিত। এ সময়টায় যেটুকু বাড়তি রোজগার হয়। আগুনের লেলিহান শিখা সেটাও কেড়ে নিচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গে বড় শিল্পের খুব প্রয়োজন-- বলে একদিকে আমরা মত প্রকাশ করছি। অন্যদিকে সেই আমরাই জঙ্গলে আগুন ধরিয়ে প্রাচীন বনজ শিল্পকে ধ্বংস করছি। শুধু গাছপালাই তো নয়, অনেক পশু পাখিও আগুনের করাল গ্রাসে জ্যান্ত পুড়ে মরছে।কীভাবে মিলবে সঠিক বিচার? কেউ জানে না। প্রতি বছর সচেতনতার বার্তা কিংবা প্রচার, প্রচারের মতো হয়, অন্যদিকে আগুন আগুনের মতোই জ্বলে উঠে। এটা কি আমাদের একরকম ভন্ডামি নয়?
কৃষিকাজ ও চাষবাস হল জঙ্গলমহলের মানুষের মূল জীবিকা। পাশাপাশি পশু পালনও করে। গরু, ছাগল, ভেড়া, মুরগি, মহিষ প্রতিপালন করে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করে। অনেকে মজুরি খেটেও বাড়তি উপার্জন করে। কিন্তু নিম্নবিত্ত আদিবাসী ও নিম্ন শ্রেণীর মানুষদের কাছে সেটুকু কিছুই নয়। জমির পরিমাণও তাদের বিরাট কিছু নয়। অনেকের আবার নামমাত্র আছে, অনেকের সেটুকুও নেই। ওরাও এখন বুঝে গেছে, কেবল চাষবাস আর মজুরি খেটে দিন যাপন সম্ভব নয়। এই উপার্জনে সময়ের সঙ্গে তাল মেলানোও অসম্ভব। তাই পাশাপাশি অন্য জীবিকার অনুসন্ধান। এভাবেই বনজ শিল্প, পাতা শিল্প প্রভৃতির উপর চিরকাল নির্ভরশীল আদিবাসী সম্প্রদায়ের মা-বোনেরা। সেখান থেকেই কিছু বাড়তি উপার্জন সম্ভব হচ্ছে।

শালপাতার থালা তৈরি করে বিক্রি করাই নয়, সেই সঙ্গে নিজেরাও শালপাতার থালা সর্বদা ব্যবহার করে। সর্বক্ষণ সেগুলো কোনও না কোনও কাজে লাগেই। যে কোনও বড় উৎসব, বিয়েবাড়ি, শ্রাদ্ধবাড়ির মতো অনুষ্ঠান বাড়িতেও শালপাতার থালা ব্যবহার করা হয়। বেশ ক'বছর আগে পর্যন্ত হাতে বোনা থালাই ব্যবহৃত হত। এখনও হয় কিছু কিছু ক্ষেত্রে। তবে শৌখিনতার যুগে সেটা নামমাত্র। সকলেই মেশিনে বানানো শৌখিন থালাই ব্যবহার করেন। ছোট খাটো অনুষ্ঠানে এই শালপাতার থালা দিয়েই খাবার পরিবেশন করা হয়। শুধু কী তাই? শালপাতার থালা মহৌষধি হিসেবেও পরিচিত। বিশিষ্ট আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য তার "চিরঞ্জীব বনৌষধি" (পঞ্চম খন্ড) গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, প্রমেহ রোগ, কৃমি, শিরো রোগ, রক্তপিত্ত, অম্লরোগ প্রভৃতি নিরাময়ে শালপাতা দারুণ উপকারী।

শালপাতায় পোড়া মাংসের স্বাদ তো অতুলনীয়। পোড়া মাংসে কাঁচা শালপাতার গন্ধ বা ফ্লেভারটা যেন স্বাদকে আরও দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়। শালপাতায় পোড়া পিঠেও অসাধারণ খেতে। কাঁচা শালপাতার থালায় গরম গরম মাংসের ঝোল আর ভাতের স্বাদ অমৃত সমান।

শাল পাতা দিয়ে বিড়িও তৈরি হয়। গ্রামের অনেকে একটা শালপাতাকে মাঝখানে চিরে তামাক দিয়ে পাকিয়ে পাকিয়ে বিড়ির মতো বানিয়ে ধূমপান করেন। একে বলে 'চঁটা'। এটা অনেকটাই লম্বা হয়। বিড়ির থেকেও কয়েক গুণ বড়। একেবারে শেষ করে না। নিভিয়ে নিভিয়ে খায়। তখন কানে গুঁজে রাখে।

এবার আসি শাল ফলের কথায়। মার্চ-এপ্রিল মাসে শাল ফুল ফুটতে শুরু করে। চতুর্দিক ম ম করে সেই ফোটা ফুলের সুবাসে। জঙ্গলের পাশ দিয়ে গেলে সেই সুবাসে আপনি একটু ক্ষণের জন্য হলেও আনমনা হয়ে পড়বেন। জুন-জুলাই মাস নাগাদ ফুল থেকে ফল হয়। অনেকেই শাল ফলকে "শালই" বলে থাকে। সেগুলো তখন স্খলিত হয়ে মাটিতে পড়তে শুরু করে। বীজ থেকে মহীরুহে পরিণত হবে বলে। জঙ্গলমহলের মানুষ সেই ফল ঝাঁট দিয়ে কুড়িয়ে আনে। রোদে শুকনো করে। কখনো রাস্তার উপর মেলে দেয়। এতে সহজেই ভিতরের বীজটি বেরিয়ে আসে। অনেকে মাড়াই করেও বীজ বের করে। আট থেকে দশ টাকা কিলো দরে সেই বীজ বাজারে বিক্রি করে। অনেক মহাজন' আবার বীজের বদলে নুন বিক্রিও করে থাকেন। শাল ফল বিক্রি করেই কত পরিবার এসময় বাড়তি উপার্জন করে।

পাতা, ফল, ছাল, কাণ্ড, শাখা-প্রশাখা সহ শালগাছের এমন কোন অংশ নেই যেটা অপ্রয়োজনীয়। প্রতিটিই বরং খুব দরকারী। তাই তো আদিবাসীরা শাল গাছকে দেবতা জ্ঞানে পূজা করেন। শালগাছের অসীম অবদানে তারা বহু বিপদ থেকে উদ্ধার হয়েছেন।

কেঁদ পাতার মতো, কেঁদ পাকা ফলও খুব সুস্বাদু আর মিষ্টি। অনেকটা সফেদা পাকার মতোই। কেঁদ পাকা ফলকে অনেকেই জঙ্গলের রসগোল্লা বলে থাকেন। হলুদ হলুদ পাকা ফলের শক্ত খোলের ভিতরেই থাকে সুস্বাদু মিষ্টি আঁশ যুক্ত অংশটা। কাঁচায় কিছুটা কষাটে। তবে পাকলে দারুণ মিষ্টি। এই ফলে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, প্রোটিন, ফাইবার ও ট্যানিন থাকে।

জঙ্গল থেকে এই ফল পেড়ে এনে বাড়িতে পাকিয়েও বাজারে বিক্রি করে অনেকে বাড়তি উপার্জন করে।

জঙ্গলে গিয়ে পাতা সংগ্রহের ঝুঁকিও অনেক। কোথায় কখন কীভাবে বিপদ লুকিয়ে আছে বলা যায় না। হয়তো ঝোপের আড়ালে শুকনো পাতায় লুকিয়ে থাকে বিষধর চন্দ্রবোড়া, নয়তো দলছুট বুনো হাতি। এদের আক্রমণেই ফি-বছর কত পাতা কুড়ানি মারা যায়। তারপরেও এটুকু ঝুঁকি তো তাদের নিতেই হয়।

শালপাতা ও কেঁদপাতা ছাড়াও জঙ্গলমহলে  তালপাতা ও খেজুর পাতা দিয়েও অর্থ উপার্জন হয়। এই দুই ধরনের পাতা তো হস্ত শিল্পের দারুণ এক নিদর্শন।

"তালগাছ  এক পায়ে দাঁড়িয়ে 
সব গাছ ছাড়িয়ে
 উকি মারে আকাশে"

তালগাছ বললেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "তালগাছ" কবিতার এই লাইনগুলো মনে পড়ে যায়। জঙ্গলমহলের রাস্তার দু'পাশে, জমির আলে, পুকুর পাড়ে এমন অজস্র তালগাছ সারিবদ্ধ ভাবে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আকাশে উঁকি মারছে সর্বদাই। কোনও কোনও গাছের পাতায় ঝুলে আছে বাবুইয়ের বাসা। বাচ্চা বাবুইরা হালকা বাতাসে সর্বদা দোল খাচ্ছে সেখানে। তবে ছোট তালগাছের পাতাগুলোই ব্যবহৃত হয়। কারণ বড়গুলোর পাতা থাকে নাগালের বাইরে।  তাল গাছের পাতা কেটে এনে তৈরি করা হয় হাতপাখা ও বাচ্চাদের কতরকম খেলার সামগ্রী। ফিরফিরি, হাতঘড়ি, খেলার বল সহ আরও কত কী। বর্তমানে তালপাতার পাখার বাজার একরকম নেই বললেই চলে। তবুও এখনও গাজনের মেলাতে বিক্রী হয় অল্পবিস্তর। লম্বা পাতাগুলো চিরে চিরে বোনা হয় ছোট ছোট আসন, চাটাই ইত্যাদি।

জঙ্গলমহলে এমন অনেক বাড়ি আজও আছে, আত্মীয় এলে খেজুর পাতায় বোনা চাটাই মেলে বসতে দেয়। এগুলোকে অনেকেই 'তালাই' বলে। মেয়েদের চুলের বিনুনির মতো শুকনো খেজুর পাতা দিয়ে বুনতে হয়। প্রথমে শাড়ির লম্বা পাড়ের আকারে চার থেকে ছয় ইঞ্চি চওড়া করে বুনে বুনে যেতে হয়। সেটাকে কুণ্ডলীর মতো করে পাকিয়ে পাকিয়ে রাখা হয়। বোনা শেষ হলে, ছয় থেকে সাত ফুট দৈর্ঘ্যে কেটে ফেলা হয়। এবার এক একটি পাড়কে পাশাপাশি সেলাই করে করে যুক্ত করা হয়। অবশেষে মাদুরের সমান চাটাইয়ের আকার দেওয়া হয়। তৈরি হয় চাটাই বা তালাই। মহিলাদের হাতের এমন বাহাদুরি বা কারুকার্য চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। চাটাই ছাড়াও খেজুর পাতা দিয়ে ঝাঁটা সহ ছোট ছোট আসনও বোনা হয়।

"মহুল কড়ির মহকে/মন হামার লহকে" কিংবা "শাল মহুলের ফাঁকে, কোকিল কুহু কুহু ডাকে" এইসব ঝুমুর গানগুলো শুনলেই একটা মাতাল করা গন্ধের অনুভূতি হবে। মহুল ফুলের গন্ধ। বসন্ত এলেই মহুয়া গাছের ডালে ডালে ফুটে উঠে মহুল ফুল।  গ্রামবাসীরা জঙ্গল থেকে মহুল ফুল কুড়িয়ে এনে শুকনো করে। পরে বাজারে চড়া দামে বিক্রিও করে। তাই এসময় জঙ্গলে ও জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলোতেও মহুলের গন্ধ ভেসে বেড়ায়। মহুল ফুল বিক্রী করেই কত পরিবার এসময় বাড়তি অর্থ উপার্জন করে।

মহুল ফুল থেকে তৈরি হয় সূরা বা মদ। তাই এই মদের নামও "মহুল্যা" বা 'মহুয়া' মদ। খেরওয়াল জনগোষ্ঠীর অনেকেই এই মদ তৈরি করতে পারে। এই জন্য মহুল Tribal Drinks of India নামেও পরিচিত।

মহুল ফুল থেকে ধীরে ধীরে ফল তৈরি হয়। এই ফল-কে বলে "কচড়া"। এই 'কচড়া' ফল থেকে তৈরি হয় তেল। কচড়া ভেঙে তেলের নির্যাস বের করার সময় বেরিয়ে আসে 'খইল'। যা জমির উপযুক্ত  সার হিসাবেও ব্যবহৃত হয়।

১৯৬০ এর দশকে ধ্বংস হয়ে পড়েছিল অরণ্য সম্পদ। দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে বন বিভাগ মেদিনীপুরের "আরাবাড়ি" জঙ্গলকে সংরক্ষণে জোর দেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার অজিত বন্দোপাধ্যায় উপলব্ধি করেছিলেন, গ্রামের লোকেদের সঙ্গে মিতালি না করলে, বা তাদের সহযোগিতা ছাড়া বনানীকে বাঁচানো অসম্ভব। তাই ১৯৮০ সালের পর গ্রামবাসীদের নিয়ে Joint Forest Management শুরু হয়েছিল। এর ফলও হাতেনাতে মিলেছিল। তাই এই ব্যবস্থাকে তৎকালীন সময়ে একটা 'বিপ্লব' বলেও মনে করা হয়েছিল। এর জন্য বনবিভাগ "ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী পুরস্কার" লাভ করেছিলেন। পরে পৃথিবী বিখ্যাত "গেটি" পুরস্কার লাভ। যা অরণ্যের ক্ষেত্রে নোবেল প্রাইজের সমান।

বনবিভাগের অতীত সাফল্যের কথা মনে করে এটুকু আশা করা যায় যে, তাঁরা অবশ্যই  এই প্রাকৃতিক অরণ্য সম্পদকে রক্ষা করবেন। সেইসঙ্গে মিতালির অংশ হিসেবে আমাদেরও ভূমিকা যেন অরণ্য নিধনে না হয়ে সৃজনে হয়। "একটি গাছ একটি প্রাণ" এই মূলমন্ত্র আমাদেরও শিরায় শিরায় রক্তে রক্তে প্রবাহিত হোক।

তথ্যসূত্র: ১) ভারত ও পশ্চিমবঙ্গের ভূগোল/ কার্তিকচন্দ্র মন্ডল
২) উইকিপিডিয়া ও আন্তর্জাল

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

4 Comments