জ্বলদর্চি

ফেসবুক লাইভে উঠে এল লিটল ম্যাগাজিনের আত্ম-জিজ্ঞাসা

ফেসবুক লাইভে উঠে এল লিটল ম্যাগাজিনের আত্ম-জিজ্ঞাসা


লিটল ম্যাগাজিনকে ভালোবেসে অভিমত দিয়েছিলেন প্রখ্যাত কবি লেখকদের পাশাপাশি তরুণ কবি সম্পাদকরাও। আর সেই সব অভিমত নিয়েই সম্প্রতি  হলো জ্বলদর্চি ফেসবুক লাইভ। উঠে এলো বহু বিশিষ্টজনের নানা অভিমত। গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল লিটল ম্যাগাজিন সংরক্ষণের দাবি।

কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, "লিটল ম্যাগাজিন চিরকাল সাহিত্যের অনেক শূন্যস্থান পূর্ণ করেছে।" লিটল ম্যাগাজিনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে নাট্যকার চন্দন সেন দিয়েছেন ভিডিও বার্তা। 

 মেল ও হোয়াটসঅ্যাপ মাধ্যমে আসা লিটল ম্যাগাজিনের নানা সমস্যার কথা নিয়ে হল চর্চা। জ্বলদর্চি ফেসবুক লাইভে এ দিনের মূল বক্তা ছিলেন সম্পাদক ঋত্বিক ত্রিপাঠী। 

লিটল ম্যাগাজিন সম্পর্কিত অভিমত জানানোর জন্য আবেদন করা হয়েছিল আগেই। তাতে সাড়া দিয়ে এসেছিল বহু প্রস্তাব ও প্রশ্ন। তবে সবচেয়ে গুরুত্ব পেল সংরক্ষণের বিষয়টি। ব্যক্তি উদ্যোগে রাজ্যে ও রাজ্যের বাইরে লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি আছে। কিন্তু তার চিরকালীন অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থাকেই। তাই চাই সরকারি উদ্যোগে সংরক্ষণাগার। নইলে মূল্যবান  পত্রপত্রিকা তো কালের স্রোতে হারিয়েই যাবে! আওয়াজ উঠলো, গণস্বাক্ষর করে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে লিটল ম্যাগাজিন সংরক্ষণাগারের জন্য সুপারিশের। 

বিশিষ্টজনদের অভিমত

বিকাশ গায়েন
1)ইদানিং পত্রিকা কিনে নেবার শর্তে লেখা ছাপার সগর্ব ঘোষণা লিটলম্যাগের উদ্দেশ্য কলঙ্কিত করছে না কি?
 2) মননশীল একনিষ্ঠ সম্পাদনার পরিবর্তে যেনতেন সংকলন প্রকাশ উপলক্ষে সাহিত্যবাসরের নামে হুজুগসর্বস্ব লেখককবিদের চড়ুইভাতি ও গণসংবর্ধনা সাহিত্যসাধনাকে লক্ষ্যচ্যুত করছে না কি?
3)প্রকৃত লিটলম্যাগ, এবং বিপণনকামী ছদ্ম লিটলম্যাগ চিহ্নিতকরণ কীভাবে সম্ভব?

গৌতম মাহাতো
১)আমরা চেয়েছিলাম বিকেন্দ্রিকরণ। বিকিয়ে কেন্দ্রিকরণ নয়।
২) অনেককাংশে সফল তবে সর্বাংশে নয়।
৩) আগামি পরিকল্পনা এবং গতিপথ পরিবর্তনের প্রয়োজন।
৪) লিটল ম্যাগাজিনের আদর্শ না বুঝে আন্দোলন যতটা বিপজ্জনক তারচেয়েও হতাশার।
 ৫) এই আন্দোলন কোনও ভাববাদী আন্দোলন নয়। তবে আন্দোলনের পথে ভাবাবেগকে আমরা সামনের সারিতেই রাখি
৬)  এটি একটি পরিকল্পিত দর্শনকেন্দ্রিক আন্দোলন। লিটল ম্যাগাজিনের একক ও নির্দিষ্ট দর্শন বর্তমান। তাকে জীবনচর্যা ও চর্চার মাধ্যমে প্র্যাকটিস করাটা সবচেয়ে জরুরী।
৭) একজন নতুন কর্মীর উচিত লিটল ম্যাগাজিন করার সাথে সাথে এই অভ্যেস ও যাপনটা একান্ত জরুরি নইলে পথ ভ্রষ্ট হতে হয়।
৮)আন্দোলন শেষ নয় বরং এটাই আসল লড়াই এর প্রকৃত ও আদর্শ সময়। এখন রক্ষার লড়াই যেমন, তেমনই সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ করে পথ তৈরি করতে হবে আগামির। অনেক কাজ বাকি।
৯) যেমন -- পোষ্টাল ডিপার্টমেন্টের ভূমিকা, গণমাধ্যমকে সঠিক ভাবে কাজে লাগানো, সোশাল সাইটের রিভ্যলিউশন, অনলাইন ওয়েবজিনের ভূমিকা, লিটল ম্যাগাজিন বাছাই ও সংরক্ষণ ইত্যাদি।


পৌলোমী ভট্টাচার্য 
তথাকথিত 'তারা'-দের পিছনে ছুটবে না, লিটল ম্যাগাজিন 'তারা' তৈরি করবে।


কেশব মেট্যা
লিটল ম্যাগাজিন কি তার প্রতিবাদী সত্তা হারাচ্ছে? 

মলয় সরকার 
লিটল ম্যাগাজিনকে বলা হয় 'সাহিত্যের আঁতুড়ঘর '। এর থেকে ভাল আর কিছু বলা যায় কিনা জানি না। করোনা কালে অনেক কিছু অপকারিতার মধ্যে একটা জিনিষ খুব ভাল হয়েছে, মানুষ ই- মাধ্যমে লেখালিখি খুব বাড়িয়েছেন, অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। এই সুযোগে ই-পত্রিকাও প্রচুর হয়েছে। মানুষ প্রচুর লিখছেন এই সমস্ত পত্রিকায়। আগে অনেকে লিখতেন কিন্তু ছাপানোর খরচ করার সাধ্য নেই বলে সেগুলো নিজের ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যেই চাপা দিয়ে মারতে হত। এখন বিভিন্ন স্তরের নানা ছোট বড় পত্রিকায়, যা খুশি লেখার এবং প্রকাশ করার সুযোগ থাকায় যে যা খুশী লিখে হাত পাকাতে পারছেন বা আত্মসন্তুষ্টিতে মানসিক তৃপ্তি পাচ্ছেন। এর ভাল দিকটা কী? সবাই নিশ্চয়ই সত্যিকারের লেখক হবেন না বা কবি হবেন না। হওয়ার যোগ্যতাও নেই। অনেকের সাহিত্যবোধই নেই। "সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি"। কিন্তু এর মধ্যে অনেক মানুষই লেখায় হাত পাকিয়েছেন। কিছু কিছু ভাল লেখক সত্যিই বেরিয়ে এসেছেন।
একটা কথা তো ঠিক বড় বড় খ্যাতিমান লেখকদের অনেকেরই প্রথম আত্মপ্রকাশ এই ছোট পত্রিকাগুলোর মাধ্যমে। এঁরাই মানুষের কাছে ভবিষ্যত লেখকের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। তাই এর সম্পাদকের দায়িত্ব কর্তব্যও অনেক বেশি। যদিও তাঁদের, ভবিষ্যতে কেউ মনে রাখে না। তাঁরাই প্রকৃতপক্ষে কষ্ট করে, ভাল মন্দ সমস্ত লেখা পড়ে খড়ের গাদা থেকে ছুঁচ খুঁজে বের করেন। আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে, বলতে গেলে বলতে হয়, অনেক ছোট পত্রিকার সম্পাদকই, হাতে ধরে বন্ধুভাবে অনেক কিছু আমাকে শিখিয়েছেন। আজকে সময়াভাব আমার। পরে অনেক কিছু আলোচনা করা যেতে পারে। তবে আমার মনে হয়, যেদিন এই সব ছোট পত্রিকা না থাকবে, সেদিন সাহিত্যের অপমৃত্যু হবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। তবে আমার ব্যক্তিগত মত, বাংলাতে যখন আমরা বলছি, আলোচনা করছি, তখন আমরা "লিটল ম্যাগাজিন" শব্দবন্ধ কেন ব্যবহার করছি, এটা নিয়ে প্রতিবাদ করে একে বাংলায়, "ছোট পত্রিকা" বা "অণুপত্রিকা" ধরনের কিছু বলা হলে সুখী হব।


অনিমেষ দত্ত
লিটল ম্যাগ চালাতে গিয়ে কিভাবে আর্থিক সমস্যা মোকাবিলা করা যায়!

অনির্বাণ দাশ
বর্তমান সময়ে  লেখা পড়বার(লিখবারও) সহজলভ্য মাধ্যম ফেসবুক, ব্লগজিন ইত্যাদি ; সেইসব লেখার বিস্তৃত সমালোচনার বেশ অভাব।--- লিটল ম্যাগাজিন এই দায়িত্ব নিতে পারে। লিটল ম্যাগাজিনে নাটক/নাটিকা, দিনলিপি, পত্রসাহিত্যের প্রকাশ অল্প।

দিলীপ মিস্ত্রী
 মানুষের অগ্রাধিকার তালিকাটি আমি যদি এমনভাবে সাজাই-
১/ খাদ‍্য, ২/বস্ত্র, ৩/ বাসস্থান, ৪/স্বাস্থ্য, ৫/ শিক্ষা।
তাহলে, শিক্ষা বিষয়টি নিয়ে বলতে হবে অনেক পরে। বর্তমান কঠিন পরিস্থিতিতে লিটল ম্যাগাজিন প্রথম চারটি বিষয় নিয়ে সেভাবে মুখর হচ্ছে না। অথচ এটা লিটল ম্যাগাজিনের দায় বলে আমি মনে করি। প্রতিদিন একটি করে লিটল ম্যাগাজিনের জন্ম হচ্ছে যা সাধারণ মানুষের মুখপত্র নয়। খেটে খাওয়া মানুষের কথা না থাকলে, লিটল ম্যাগাজিন তার ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলবে। এটা আমার ভাবনা।


ঈশিতা ভাদুড়ী 
লিটলম্যাগের সাথে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার সম্পর্ক থাকতেই হয় বলে মনে করেন কি? হলে কেন?


যশোধরা রায়চৌধুরী
সবাই জানেন, যে, ইংরেজি সমালোচনা সাহিত্যের ইতিহাস মতে লিটল ম্যাগাজিনের অভিযাত্রা শুরু হয় Ralph Waldo Emerson ও Margaret Fuller সম্পাদিত The Dial (Boston, 1840-1844)-এর মাধ্যমে। ইমার্সনের নতুন দর্শন Transendentalism-এ যারা সমর্থক তাঁরাই শুধু Dial ম্যাগাজিনে লিখতেন। লিটল ম্যাগাজিনের আরেক প্রভাবশালী পত্রিকা ছিল ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত Savoy। ভিক্টোরীয়ান পুজিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার উদারপন্থী ও সাম্যবাদী লেখকদের প্রধান বাহন ছিল এটি। সাহিত্য ক্ষেত্রে বিশ শতকের গোড়ার দিকে সবচেয়ে নামী লিটল ম্যাগাজিন ছিল Poetry: A Magazine of Verse (Chicago 1912)। এর সম্পাদক ছিলেন হেরিয়েট মনরো ও এজরা পাউন্ড।
  পাশ্চাত্যের আদলে বঙ্গদেশে প্রথম লিটল ম্যাগাজিন প্রবর্তন করে প্রমথ চৌধুরী। তাঁর সম্পাদিত সবুজপত্র (১৯১৪)-কে আধুনিক লিটল ম্যাগাজিনের আদিরূপ বলে গণ্য করা হয়। অবশ্য অনেকে মনে করেন যে, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত বঙ্গদর্শন (১৮৭২) বাংলা ভাষায় প্রথম লিটল ম্যাগাজিন।
  লিটল ম্যাগাজিন  যে নতুন চেতনা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে এবং লেখক ও পাঠকদের মধ্যে সে  সেই ভাবনাটাকে  সঞ্চারিত করে দেওয়ার জন্যে আন্দোলনে যায়, এ কথা আজ ক্লিশে। যারা সাহিত্য, দর্শন ও শিল্প-চেতনায় গতানুগতিক ধারার বিরোধী, তারা তাঁদের চিন্তাচেতনার প্রকাশ ঘটান নিজেদের সংঘটিত মুখপত্রের মাধ্যমে, কেননা সাধারণের নিকট তাঁরা অপ্রিয়। অথবা ছেঁদো বাণিজ্যিক কারণে বাজারের পত্রিকার পরিচালকেরা তাঁদের পরিহার করে চলেন। অতএব নবধারার নবযুগের শিল্পী সাহিত্যিকেরা তাঁদের মতবাদ প্রচারের জন্য লিটল ম্যাগাজিনের আশ্রয় নেন। লিটল ম্যাগাজিন থেকে বেরিয়ে আসেন তখনই যখন তাঁদের মতামত সমাজ মোটামুটি গ্রহণ করে থাকে। সমাজের নানান ওঠাপড়ায়, নানান আন্দোলনে এই পত্রিকাগুলির ভূমিকা থাকে। 
  আসলে , লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদকদের কাজ অনেকটাই থ্যাংকলেস জব। তাঁরা, অনেক উঠতি, নাম না জানা কবিকে চারাতলা বা বীজতলার মত তাঁদের ছোট কাগজে লিখতে উৎসাহ দিয়ে, জিইয়ে রাখেন, জল হাওয়া সার দিয়ে বড় করে তোলেন। তারপর সেই সব লেখক "বড় লেখক" হয়ে যান, প্রতিষ্ঠা পান এবং সরে যান। লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদকের মনে থেকে যায় সেই তরুণ, লাজুক, অতি মুখচোরা, জড়োসড়ো চেহারাটি। বহু বাণিজ্যিক কাগজে ছাপা হওয়া আজকের বুক ফোলানো লেখকটির সঙ্গে যার কোন মিল নেই।  যে কোন কাজকেই,  কীকরে থ্যাঙ্কলেস বোঝা যায়? যখন পরে, আপনি যে কাজটা করলেন, উপকারগ্রহণকারী সেটার বর্ণনা  করতে থাকেন সাড়ম্বরে, কোন ফাঁকতালে আপনার নামটি উহ্য থেকে যায়, সেখানে ভাববাচ্যে বলা হয়, এই এই করা হল, এই এই ঘটল...। ঠিক এভাবেই, আমরাও আমাদের উপকারীদের নাম, কোন না কোন ভাববাচ্যের আড়ালে ঠেলে দিচ্ছি না তো? আমরা যখন  বলি, অমুক কাগজগুলিতে আমার লেখা ছাপা হল, তখন এটা যেমন ঠিক যে লেখাগুলি আমি লিখেছিলাম, এটাও কি ঠিক নয়, কেউ না কেউ সেগুলি যত্ন করে সংগ্রহ করে সেগুলি ছেপেছিলেন? তাঁদের উহ্য করে দেওয়ার কোন অধিকার আমার আছে কি?বারে বারেই আমার নিজের মনের ভেতরে সেই কৃতজ্ঞতাবোধ জাগে এত এত লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদকদের প্রতি, যাঁরা না থাকলে আজ আমার এত "ছাপা লেখা" থাকত না। 
  জীবন এত বেশি দিয়েছে আমাকে। এ ত অহৈতুকী কৃপা।  এর যোগ্যতা ছিল না বোধ হয়। আই ফিল প্রিভিলেজড। সামান্য কিছু অক্ষরচর্চা নেহাতই প্রাণের দায়ে, নিজের অদ্ভুত শৈশব ও বেড়ে ওঠার পরিত্রাণ হিসেবে,  মন খারাপের ওষুধ হিসেবে,  এটুকুই ত করেছিলাম। তাতেই এত পেলাম!
  জীবনকে এর সামান্যও যেন ফেরত দিয়ে যেতে পারি।  আমার অগ্রজদের কাছে যা পেয়ে চলেছি, অনুজদের দিকে যেন তার সামান্যতমও নিয়ে হাত বাড়িয়ে দিতে পারি। আর যে কবিতা লিখে এত পেলাম,  সেই  বাংলা কাব্য কবিতার ধারাবাহিকতার জন্য,  আমার
ভাষাপরিধির জন্য গর্বিত থাকি যেন। সেই সব ভুলে যাওয়া অগ্রজদের যেন না ভুলি।


 দেবাশিস সাহা
ওয়েব ম্যাগাজিন কি লিটল ম্যাগাজিন এর বিকল্প হতে পারে?
 করোনাকালে লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশের ধারাবাহিকতা অনেক কমে গেছে। এটা কি আবার পূর্বের জায়গায় ফিরে যাবে?


অংশুমান চক্রবর্তী 
লিটল ম্যাগাজিন সাহিত্যের মূল ধারা। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে। নতুন লেখকদের প্রশ্রয় দেয়। বাংলার বাইরে অন্য কোনো ভাষায় এত লিটল ম্যাগাজিন সম্ভবত প্রকাশিত হয় না। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি এখন বেসরকারি উদ্যোগেও অনেক লিটল ম্যাগাজিন মেলা হচ্ছে। লিটল ম্যাগাজিন ছড়িয়ে পড়ছে পাঠকদের মধ্যে।


বিরূপাক্ষ পণ্ডা
লিটল ম‍্যাগাজিনকে ছোট "কাগজ" নামধারী শয়তানের কবলে পড়তে হয়েছে বা হচ্ছে।
 রেজিস্টার্ড কাগজ ছাড়া ISSN ভুক্ত কাগজ সরকারি বিজ্ঞাপন পায় না কেন? ছোট কাগজের লেখক কবি একটু বড় হলেই লিটল ম্যাগাজিন এড়িয়ে চলে।


রাজকুমার আচার্য
১। সময়ের দাবি মেনে লিটল ম্যাগাজিন অনলাইনেও পড়া যাক কিন্তু তা যেন বিনা পয়সায় না হয়। তাহলে-তো সেই পত্রিকা বিলির মতো হয়ে গেল।

২। লিটল ম্যাগাজিন বেশি গুরুত্ব দেবে তার নিজের এলাকাকে। অবশ্যই সর্বত্র সে বিরাজ করার চেষ্টা করবে কিন্তু পা থাকবে তার মাটিতেই।


 বাসুদেব গুপ্ত
১) লিটল কথাটা এবারে ফেলে দেওয়া হোক। কারণ এটাই এখন সাহিত্যের মূল ধারা। ২) একটা পোর্টাল হোক যেখানে সব ভালো পত্রিকার খোঁজ পাবো। ৩) নিয়মিত পাঠকের পছন্দ ও বিশিষ্টজনের পছন্দ লেখাকে চিহ্নিত ও পুরস্কৃত করা হোক। আপাতত এই মনে পড়ছে।


মহুয়া ব্যানার্জী
লিটল ম্যাগাজিন মানেই ভালো লেখার আঁতুড়ঘর। অথচ আজকাল এমন বহু লিটল ম্যাগ প্রকাশিত হচ্ছে যারা লেখা ছাপার ব্যাপারে বাছবিচার করে না। কেউ কেউ টাকার বিনিময়ে লেখা ছাপায়। আবার কেউ কেউ লেখকে সামান্য সৌজন্য সংখ্যাটুকুও দেন না।
আমার তো মনে হয় এই সব ভূঁইফোড় ম্যাগাজিন ও তার সম্পাদকেরা আদতে লিটল ম্যাগাজিন নামক এক আবেগ, এক লড়াইকে অসম্মান করছেন।


মনোজিৎ বেরা
1. লিটল ম্যাগাজিনকে ছাত্র সমাজের কাছে জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় করে তোলার উপায় গুলি কী কী?
2. বর্তমানে লিটল ম্যাগাজিন কি তার লক্ষ্যমাত্রাতে পৌঁছতে পেরেছে?


অনিন্দ্য পাল
লিটল ম্যাগাজিনের বর্তমান একটা ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে, "লেখকদেরকেও সৌজন্য সংখ্যা দেওয়ার অপারগতা"। বিজ্ঞাপনে লেখাই থাকছে, আমরা সৌজন্য সংখ্যা দিতে অপারগ। এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করা যায়।


শ্যামলশুভা ভঞ্জ পণ্ডিত
আমার মনে হয় লিটল ম্যাগাজিনকে যদি আরও মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যেত, তাহলে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি ও সুস্থ চেতনার বিকাশ  ঘটত।


আবুল মাজান
লিটল ম্যাগাজিন সাহিত্য সংস্কৃতির আঁতুড় ঘর। কবি সাহিত্যিকদের লালনভূমি। অনুশীলন ক্ষেত্র। 
ইদানিং দেখা যাচ্ছে, বাণিজ্যিক কাগজের বেশ কিছু প্রভাবে লিটল ম্যাগাজিন আক্রান্ত। পরীক্ষা নিরীক্ষার স্পেস এখন এখানে নেই বললেই চলে। বড্ড বেশি বিশেষ সংখ্যা কেন্দ্রিক। বেশিরভাগই পুরোনো, প্রকাশিত ও তথাকথিত প্রতিষ্ঠিত লেখকদের রচনার সংকলন। লিটল ম্যাগাজিন নামে যেগুলো বেরোয়, সেগুলোর বেশিরভাগই সঠিক অর্থে ও ব্যুৎপত্তিগত তাৎপর্যে লিটল ম্যাগাজিন নয়। 
লিটল ম্যাগাজিন হল  সাহিত্য  শিল্প  সংস্কৃতির চলমান আন্দোলন ও আন্দোলনের দলিল, দর্শন।


বিশ্বজিৎ অধিকারী 
যে আর্থিক অনিশ্চয়তা লিটল ম্যাগাজিনের প্রায় প্রধান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, এবং সেকারণে যে সংগ্রাম তা কিছুটা যেন সহজ হয়ে এল তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে। 
একটি সুচারু ব্লগ বা ব্লগ-আশ্রিত ম্যাগাজিন একটি সফল বাণিজ্যিক পত্রিকার দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে। তবে সম্পাদকের কাজ এখন আরও কঠিন। প্রকাশের সহজ সুযোগে যেন পত্রিকায় সম্পাদনাহীন যা-খুশি-তাই লেখার বিরক্তিকর জঞ্জাল জমে না ওঠে সেদিকে নজর রাখতে হবে তাঁকেই।

কবি মিশ্র
মফসসল শহর কিংবা শহরতলি থেকে লিটল ম্যাগাজিন ধারাবাহিক ভাবে চালাতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।


স্বপন পাল
লিটল ম্যাগাজিন কোন আকারে ছোট বা ক্ষুদ্র পত্রিকা নয়। বরং বহু ক্ষুদ্রতার বিরুদ্ধে নিশান উড়িয়ে লড়বার একটা বারুদ গন্ধহীন হাতিয়ার। আর বারুদ গন্ধহীন বা বলি কেন, বারুদের গন্ধ বেরোয় এর অতি অপরিচিত বা অল্প পরিচিত লেখক কবিদের চাবুক লেখায়।  আসলে বিগ ম্যাগাজিন সেগুলোই, যেগুলো বড় কোন হাউস বা প্রতিষ্ঠানের পরিচয় বহন করে। এরা লেখক কবিদের চাকরি দিয়ে পোষে। এদের দিয়ে লিখিয়ে নেয় ও মোটা বেতন দেয়, পারিতোষিক দেয়, বিদেশ ভ্রমণ করায়। সেখানেও আমরা বহু ভাল লেখক কবি কি পাইনি ? পেয়েছি বইকি। কিন্তু ওঁরা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যেতে পারেননি। জীবিকার প্রয়োজনে তাঁরা অনেকে স্ববিরোধী হয়েছেন কিন্তু জীবন ও জীবিকা যে তাঁদের জড়িয়ে গেছে অবধারিত ভাবে।
      তো এই সব বিগ ম্যাগাজিনের ঠিক উল্টো দিকে যারা হাতে কলম নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আর তাদের লেখা যে কাগজে ছেপে বেরোয় সেগুলোই হলো লিটল ম্যাগাজিন। আগুন ঝরে এখানে লেখকদের কলমে। লাভা বেরোয় থেকে থেকে। সমাজের স্বচ্ছ আয়না হলো লিটল ম্যাগাজিন। বিগদের দায় অনেক। তারা শাসককের সঙ্গে খুব বেশি আড়াআড়িতে যেতে পারে না, কারণ প্রকাশনার টিকিটাও বন্ধক দেওয়া আছে শাসনতন্ত্রের কোষাগারে। লিটলের সেখানে থোরাই কেয়ার। সে কাউকে পরোয়া করে না। টিউশানির পয়সায়, মজুর খাটার পয়সায় লিটল ম্যাগাজিনের বেঁচে থাকা। মৃত্যু যেকোন সময় হতে পারে তাই তার বেঁচে থাকা নিয়ে এতো গর্ব।
      লিটল ম্যাগাজিন বহু প্রোথিতযশা লেখকের লেখার আঁতুরঘর। আর আমার মতো অনেকেই মনে করেন, যে সব লেখক কবি লিটল ম্যাগাজিনের আখপেষাই কলের মধ্যে দিয়ে না পিষে, হাপরের বাতাসে আগুনে লাল না হয়ে কামারের হাতুড়ির ঘা না খেয়ে আর শেষমেষ ঘুরন্ত শান পাথরে ইস্পাত ধার না বানিয়ে লিখে চলেছেন বা লেখার প্রচার পাচ্ছেন তিনি লেখকই নন। লিটল ম্যাগাজিন একজন লিখতে চাওয়া মানুষকে প্রকৃত লেখক করে গড়ে তোলে।
    এটা আগেও সত্যি ছিল এখনও সত্যি।


শুভাশিস ঘোষ
লিটল ম্যাগাজিন শুরু হয়, স্বাভাবিক নিয়মেই অনেক পত্রিকাই ক'য়েক বছরের মধ্যে হারিয়েও যায়। কিন্তু তাদের যথাযথ সংরক্ষণের সুযোগ না থাকার ফলে পরবর্তীতে বহু আগ্রহী মানুষ খুঁজে পান না অনেক মূল্যবান সংখ্যা, লেখা। বিভিন্ন জেলায় কিছু ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ কাজ হলেও তার খুব একটা সংগঠিত আকারে নয়। এ বিষয়ে বড় প্রতিষ্ঠান বা সরকারি উদ্যোগের আশা না করাই ভালো। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা খুব প্রাসঙ্গিক হবে। এ ছাড়া লিটলম্যাগের সাধারণ পরিচিত সমস্যাগুলোতে আলোকপাত করলে ভালো হয়।


 সঞ্জীব কাষ্ঠ
আমার কাগজের RNI রেজিষ্ট্রেশন সার্টিফিকেটটি পাচ্ছি না কিছুতেই ৷ সমস্ত কিছু হয়ে গেছে ৷ তাও দিচ্ছে না সার্টিফিকেট ৷
 ছোট পত্র-পত্রিকাগুলি সংরক্ষণ, সরকারী বিজ্ঞাপন পাওয়ার পদ্ধতিগুলি শিথিল করা এবং  সম্পাদকদের সাথে মুখোমুখি বসে ভাব বিনিময় করার ব্যবস্থা করলে ভালো হয় ৷


 অমিতাভ সরকার 
এখন তো কবির খুব ভিড়। নিজস্বী। সবাই বলছে আমাকে দেখো।


অমিতরূপ চক্রবর্তী 
লিটল ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ। অনেক ম্যাগাজিন বাণিজ্যিক পত্রিকার মতো প্রচ্ছদ করে। আমার মতে তা লিটল ম্যাগাজিনের সঙ্গে যায় না।
 আর ই-ম্যাগকে যদি লিটল ম্যাগাজিন ধরি, তাহলে তার ফন্ট এবং লে-আউট। ফন্ট নিউজপ্রিন্টের মতো হলেই পাঠের আনন্দ হয়। জাঙ্ক ইলাস্ট্রেশন বা এফেক্ট পাঠের ক্ষতি করে।

গৌতম বাড়ই 
লিটল ম্যাগাজিন মানেই কী বিদ্রোহ, স্রোতের উল্টোপথে হাঁটা? না কী সাহিত্যের জন্য অবিরত চর্চা আর ছকভাঙ্গা? প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা থেকেই কী লিটল ম্যাগাজিনের জন্ম? লিটল ম্যাগাজিন থেকে বড়ত্বের দিকে যে জার্নি তাকে কী প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা থেকে সরে আসা বলব?

নাট্যকার চন্দন সেনের বক্তব্য 

এছাড়াও অভিমত দিয়েছেন 
প্রভাত মিশ্র, বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়, গোপাল দাস, তারাপদ পণ্ডা, সাগর মাহাত, স্বরূপকুমার মণ্ডল, দিলীপকুমার ঘোষ, অঞ্জন দাস, সন্দীপ কাঞ্জিলাল, সুব্রত দাস, মায়া দে, দেবাশীষ গোস্বামী, সঞ্জয়কুমার গোস্বামী, চৈতন্যময় নন্দ, পলাশ দাস, শুভঙ্কর দাস, তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়,  অলক জানা, মৌসুমী ঘোষ, ব্রততী সেন দাস, রুম্পা প্রতিহার, ঋতরূপ ত্রিপাঠী, সৌম্যদীপ চক্রবর্তী, তাপসকুমার ঘোষ, আশিস চৌধুরী, প্রিয়াঙ্কা সুই, অনিন্দিতা শাসমল, দীপক হোতা, সমীর পড়িয়া, গফফর আহমেদ, নিত্য দত্ত, আগমনী কর মিশ্র, সুব্রত মাইতি, বনশ্রী রায় দাস, বুবু সীমা চট্টোপাধ্যায়, রীতা বেরা,যাদবকুমার চৌধুরী, মৌ দাশগুপ্ত আদক, বাসবদত্তা অমিত কদম, অর্জুন প্রামাণিক, তন্দ্রা ভট্টাচার্য,  দেবাশিস তেওয়ারী, শিলা বিশ্বাস, স্মিতা সিনহা, শুভজিৎ বসু, সান্তা সাহা, বিশ্বজিৎ জানা, মানিকচন্দ্র মাহাত, সঞ্চারী বিশ্বাস, প্রীতম সেনগুপ্ত, নমিতা বোস, শ্রীমতী পণ্ডিত, অলোক চট্টোপাধ্যায়,  সুব্রত মাইতি,  অতনু মিত্র, দুঃখানন্দ মণ্ডল, অমিতাভ সরকার, পীষূস প্রতিহার, অপূর্ব রায়, দিব্যেন্দুপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇


Post a Comment

0 Comments