জ্বলদর্চি

অনীশ রায় এবং ডারউইন সাহেব /শ্রীজিৎ জানা

অনীশ রায় এবং ডারউইন সাহেব

শ্রীজিৎ জানা




অনীশ  ঘোড়া হয়ে ওঠে বিছানায়। সাদা ঘোড়া নাকি কালো ঘোড়া  ভেবে পায় না। তবে ক্ষুরের ধাবমান গতিতে থাকে বেলাগাম উদ্যামতা।সবদিন তার ঘোড়া হোয়ে ছুটতে মন সায় দ্যায় না। তখন অন্য এক পাশবিক ভাব তাকে গ্রাস করে।পৃথার ইচ্ছা-অনিচ্ছায় ভ্রুক্ষেপ করেনা সে। লক্ষ্য করে বিরক্তির আগুন পৃথার চোখমুখ থেকে ঠিকরে বেরুচ্ছে। তার ভিতরে হয়তো মিশে থাকছে ঘৃণার তীব্র লাভা স্রোত। শীৎকারের তরঙ্গে না  ভালোলাগার বেদনাময় আভাস। অনীঁশ তবু নির্বিকার। পৃথা সয়ে নেয় এসব।
ক্রমশ অবস্থা হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে পৃথা মুষড়ে পড়ে। অনীশের সবরকম পাগলামি দাঁত চেপে সহ্য করে। ইচ্ছে না থাকলেও পৃথা সানন্দে স্বামীর অদ্ভূত কথাবার্তায়,আচরণে সমর্থন দিয়ে যায়। ওর একমাত্র চাওয়া, যেকোনো মূল্যে অনীশ আগের মানুষটি হোয়ে উঠুক। অনেক সাইকাটিস্টের সঙ্গে গোপনে পরামর্শ করেছে সে। অনীশকে নিয়ে যাওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। জানতে পারলে আরেক কান্ড ঘটে যাবে । কতকিছু প্ল্যান কোরে আজকাল চলতে হয় তাকে! 
ডাক্তারবাবুরা চান পেশেন্ট চেম্বারে আসুন,তার সাথে কিছুক্ষণ ইন্টারাকশান হোক,তাতে  মেন্টাল স্টেটাস কিছুটা বোঝা যায়। অগত্যা পৃথার কথামতো কয়েকটা ট্রিপস্ বাতলে দিয়েছেন। ওষুধ প্রেসকাইব করেননি কারণ অনীশকে কোন অজুহাতেই খাওয়ানো যাবে না। সেইমতো পৃথার নিত্যদিনের স্ট্রাগল! আশ্চর্য এক মানুষের সাথে তার  দিনযাপন! 

তাবে একমাত্র আশা-ভরসার জায়গা  একটাই, ,সাইকাটিস্টদের কথায় অনীশ পুরোপুরি মেন্টাল পেশেন্ট নয়। ওভার সেনসিটিভ স্তরে থেকে চোখের সামনে সোশ্যাল ভ্যালুসগুলোকে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে দেখে ও নাকি হাইপার হোয়ে যায় নিজের ভিতরে। বাইরে তার মারাত্মক বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে না পারায় নিজেকে নিজেই দোষী সাব্যস্ত করে।   
---আফটার অল আপনার হাজবেন্ড একধরনের হিউমেনিটারিযান ক্রাইসিসে ভুগছেন।
 
অনীশের অতীতে চোখ ফেরালে দৃষ্টি হোঁচোট খাবে না হয়তো, তবে সরলরৈখিক পথও খুঁজে পাওয়া যাবে না। বরাবর ভিন্ন ধাঁচে নিজেকে রাখতে চেয়েছে অনীশ।কলেজ লাইফে পৃথার দুর্বলতার জায়গা অনীশের ওই ব্যাতিক্রমী দৃষ্টিভঙ্গি!  অসাধারণ বাচনভঙ্গি, মুক্তোর মতো হাতের লেখা,সাহিত্যে ভীষণ দখল, প্রোটেকটিভ, সর্বপোরী  বিশ্বাসী ।যেকোন মেয়েই অনীশকে হাইজ্যাক করতে পারে। অনেকেই যে ওকে চাইতো তা পৃথার নলেজের বাইরে ছিল না। কিন্তু কিভাবে যেন দুয়ে দুয়ে দুঁহু  হোয়ে গেল দেবা ন জানন্তি!
দুজনে ঘর বেঁধেছে  অনেক  পর,ইউনিভারসিটির শেষে আরো দু'বছর।
অনীশ ব্যাঙ্কে  জব জয়েন্ট করে। লোন সেকশনে ফিল্ড ম্যানেজার পোস্ট।
মারাত্মক ওয়ার্ক লোড! প্রাইভেট ব্যাঙ্ক মানেই নিঙড়ে সবটুকু রস বের করে নেবার জবরদস্তি। মান্থলি টার্গেট ফুলফিল্ করো নতু্বা বসের ঝাড় খাও।যাকে বলে ভদ্র ভাষায় মেন্টাল টর্চার। মিছরিরছুরি প্রবাদখানা বেশ মানায় এক্ষেত্রে। তবে কায়দাবাজি করে অনেকটা ম্যানেজ করা যায় কিন্তু অনীশের সাফ জবাব,
----আমার কোনো তেলকল ব্যাবসা নেই। বাবারও ছিল না।
বেটার কোনো জব্ অপারচুনেটি তখনো অনীশের নাগালের বাইরে। মোটা সেলারি নেই তার উপর কাজের চাপ। ভেতরে ভেতরে অস্থির হোতে থাকে সে। ইতোমধ্যে পৃথা কনসিভ করেছে। মাথার উপর আরেক চিন্তার বোঝা। নতুন অতিথির আগমনের আনন্দ উদযাপনের আড়ালে ভাবনার কথাকুচি অনীশের কানের পাশে ফিসফিস করে সর্বক্ষণ।

পৃথা বিছানায় কোল পেতে দ্যায়। বিকেলের কুসুম রোদের মতো ছড়িয়ে দ্যায় অফিস ফেরতা অনীশ তার  শরীরটাকে।  নরম আঙুলগুলো অনীশের মাথার চুলের ভিতরে আশ্রয় খুঁজে পায়। আনন্দের স্পর্শে যেন তারা জলরাশির উপর সাঁতরে বেড়ায়। আদরের আবেশ অনীশের চোখে আলতো ঘুম নামিয়ে আনে। পৃথার কথা এমুহূর্তে পরম উপাদেয় বোধহয় অনীশের,
----এমন কোন ডিসিশন নিও না প্লিজ যাতে ফিউচারে কোনো আপশোস করতে হয় সকলকে।
জানি তোমার মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে বাট আমরা তো এখন দুজন নই বলো!
অনীশ কোনো প্রত্যুত্তর ফিরিয়ে দ্যায় না। এখন তার আরো আদর খেতে ইচ্ছে করছে।

সেদিন হঠাৎ অফিস বেরোনোর মুখে অনীশের চিৎকার শুনতে পায়। কিচেন থেকে দৌড়ে যায় পৃথা।ড্রেসিং টেবিলের সামনে শার্টের বোতাম খোলা অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দ্যাখে অনীশকে। চোখেমুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। স্ট্যাচুর মতো স্থির তার দাঁড়ানোর ভঙ্গিমা। পৃথা জোরে একটা ঝাঁকুনি দ্যায়।
--কী হোলো তোমার? চিৎকার করে উঠলে কেনো অমন কোরে?
চমক ভাঙে অনীশের। পৃথার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
---দ্যাখো, লুক্, আমার সারা গায়ে ক্যামন বড়ো বড়ো লোম গজিয়েছে। হাতে পায়ে লম্বা ধারালো নখ,লোভে দাঁত-মুখ দিয়ে লালা ঝরছে,চোখ থেকে হিংস্র আগুন। নেকড়ের মতো আমি লোভী আর স্বার্থপর হোয়ে উঠেছি! তাই না পৃথা?
---কী সব বোলছো বলো তো? তুমি তো সেই অনীশই আছো। কিচ্ছু হয়নি তোমার। খাবে চলো। অফিস যাবে না? শরীর খারাপ করছে?
এক নাগাড়ে বলে যায় পৃথা। ভেতরে ভেতরে সে কাঁপছে। অনীশকে বুঝতে দ্যায় না। 
খাবার টেবিলে শান্তভাবে আহারপর্ব সারে দুজনে।কিছুক্ষণ আগে যা ঘটেছে তা নিয়ে কোনো কথাই বলে না অনীশ। পৃথাও তাই করে। অন্য নানান হাসিঠাট্টায় পৃথা আবহাওয়া বদলে দ্যায়।

সেই থেকে শুরু। প্রথম দিকে পৃথা  ব্যাপারটাকে অতটা সিরিয়াসলি ভাবে মাথায় নেয়নি। ভেবেছে ওর মতো সেনসিটিভ মানুষের ক্ষেত্রে আজকের সমাজের অনেককিছুকে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তার উপরে ওয়ার্ক প্রেসার। হয়তো অনীশ ভেতরে ভেতরে গিল্টি ফিল্ করছে। মেন্টাল ট্রেস কাটাতে একটা প্ল্যান করে পৃথা।
অনীশের পারমিশন নিয়েই ওদের ফ্যামিলি ফ্রেন্ড বিবেককে সস্ত্রীক ডিনারে নেমতন্ন করে।নিজের হাতেই সব রান্না করেছে। বেশিরভাগ আইটেম অনীশের পছন্দের। সফ্ট ড্রিংকে চুমুক দ্যায় বিবেক। টেবিলের দু'প্রান্তে ওরা চারজন।
--- বল্ ক্যামন কাটছে তোর ব্যাঙ্কার লাইফ?
---দিব্যি ছুটছে, লাইক এ প্যান্থার! আই স্পেন্ট মাই লাইফ এজ এ বিস্ট!
---সবটাকে কেনো মেলাচ্ছিস ওভাবে। লাইফে সারভাইব করতে গেলে সিচুয়েশন অনুযায়ী রোল প্লে করতে হয়!
---তোদের ডারউইন সাহেবের মতে সারভাইবেল অফ দ্য ফিটেস্ট! তাই না!
---এক্সজেক্টলি সেটাই। এন্ড মাই ডিয়ার সেটা কোনো দোষের না।
----তার মানে গ্রাম ছেড়ে,মা-বাবা-ভাই-বোনের দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলে তোর আমার এই যে শহুরে লাইফ লিভ করা,প্রতিমুহূর্তে নিজের বৃত্তে বুঁদ হোয়ে থাকা, এটাকে পাশবিক বলে মনে করিস না! পশুদের মতো সেলফিসনেশ নয়?
পরিস্থিতি অন্যদিকে এগোচ্ছে দেখে পৃথা মুখ খোলে,
--- কতদিন পরে এককাট্টা হলাম। অন্য কোনো কথা বলবে না কীসব ভারী ভারী আলোচনা দুই বন্ধু মিলেশুরু করলে  বলো তো!
---জানিস বিবেক আজকাল পৃথা আমার পশু হোয়ে ওঠাকে অ্যাপ্রিসিয়েট করে। ওই যে দেখছিস নতুন মডেলের ফ্রিজ,চিমনি সবই অনীশ রায় নামক এক লোভী হায়নার নজরানা। লোন পাশ করতেই বাড়িতে পৌঁছে গেল সব! ক্লায়েন্ট ফিটেস্ট নয় জেনেও করলাম!ডারউইন সাহেবের মতে আমি ফিটেস্ট! নইলে ঘর, অফিস চারদিক থেকে প্রেসার আমাকে শেষ করে দিত!
বিবেক প্রসঙ্গ থেকে বন্ধুকে টেনে নিয়ে আসে ডিনারে। পৃথার মুখ লজ্জায় আগুনবরণ দেখায়। স্ত্রীসহ বিবেক পরিস্থিতিটাকে কথার প্রলেপে মসৃণ করে তুলতে চায়।
বিবেবকও সোজাসুজি চোখ রাখতে পারেনা অনীঁশের চোখে। বোধহয় সেও টের পাচ্ছে তার পরাফিউমের সৌরভ ভেদ করে উগ্র হোয়ে উঠছে নিজের শরীরের বুনো গন্ধ!

তারপর রোজ কোন না কোন অবস্থার কথা ডিনারের টেবিলে রাখে অনীশ।
--জানে তো পৃথা আজ পুরো অফিস আওয়ারটা ম্যানেজারের পায়ে পায়ে ঘুরলাম। মাথা নীচু করে বেশ কয়েকবার লেজ নেড়েছি। গা-হাত-পা চেটেছি যত্ন করে। খানিকটা নোনতা ছিল স্বাদ বাট আজকাল সয়ে গ্যাছে। অ্যাওয়ার্ড মিলেছে হাতেনাতে। ট্রান্সফার হচ্ছে না আপাতত। হ্যাপী? কি বলো?
----কেন তুমি আমার দিকে আঙুল তুলছো বলোতো? তোমাকে এই  লাইফস্টাইল চুজ্ করতে আমি তো কোনদিন ইনসিস্ট করিনি! 
----আঙুল তোমার দিকে রাখিনি। নিজের দিকে রেখেছি। দেখছি সারভাইব করার ম্যাজিকটা ক্যামন রপ্ত করেছি আমি!
পৃথা তীব্রভাবে রুখে দাঁড়াতে চায়। কতদূর আর ধৈর্য রাখতে পারবে সে! গতিক বুঝে ছেলেকে অনেক আগেই বাপের বাড়িতে রেখে এসেছে। তা নিয়েও বিস্তর ঝামেলা।কিন্তু কোনভাবেই সোনাইকে তার বাবার এমন অবস্থার মধ্যে থাকতে দিতে চায় না পৃথা। কখন কীভাবে রিয়্যাক্ট করবে আর সোনাইয়ের উপর কী প্রভাব পড়বে ইত্যাদি ভেবে এমন ডিসিশন নিতে বাধ্য হয় সে।
অনেকরকম ভেবে নিজেকে সামলে রাখে পৃথা। সেদিন হঠাৎ অনীঁশ বলে ওঠে,
--এখন আমি হুলো বিড়াল হোয়ে অফিসে থাকি। মিশকালে হুলো। ওই জো  রাস্তার কালো হুলোটা মাঝেসাঝে বাড়িতে ডুকে এটাওটা খেয়ে যায়, তেমন। হাতাখুন্তি ছুঁড়লেও আবার ফিরে আসে পরক্ষণেই। অবিকল তার মতো চেয়ারে বসি। বসের অপমান আর গায়ে আঁচড় কাটে না। নোলা বেড়েছে বিস্তর। এই কদিন আমাকে বেশি বেশি মাছ আর দুধ দিও। খিদেও বেড়েছে প্রচন্ড!

সবদিন এমনটা করেনা অনীশ। কতবার তো অবাক করে দ্যায় পৃথাকে ওর কথাবার্তায়! আদরে! ভালবাসায়! অনীশ তখন আলাদা মানুষ! এক নাগাড়ে সবাইকে ফোন করে খোঁজ খবর নেয়। হয়তো কিচেনে ঢুকে নিজেই রান্না চাপিয়ে দিল।পৃথার আহ্লাদের অন্ত থাকে না সেদিন। বাড়িময় তৃপ্তির সুবাতাস যেন বয়ে যায় সারাক্ষণ।
তার দিন দুয়েক পরই হয়তো আবার বিছানায় শুয়ে শুয়ে অনীশ বলে উঠবে,
---ওই যে দ্যাখছো দেয়ালে মোটা একটা টিকটিকি চড়ে বেড়াচ্ছে, ওটা আমি! ওইভাবে চরে বেড়াই আজকাল। সব জায়গায় সুড়সুড় করে ঢুকে পড়ি,কাজ হাসিল করে নিই! এক্সসিলেন্ট না?
পৃথা কোনো উত্তর করে না।

এতসবের মধ্যে হঠাৎ সেদিন বাড়িতে কর্পোরেশনের নোটিস এলো। চিঠিতে চোখ রাখতেই পৃথার ভির্মি খাবার জোগাড়। কর্পোরেশনের রুল মেনেই রাস্তা ছেড়ে ওরা প্রাচীর দিয়েছে। সেইসময় কোনরকম আপত্তি আসেনি। কিন্তু এতদিন পর কী হোলো তা ভেবে উঠতে পারছে না। নোটিসে পরিস্কার লেখা রাস্তার সামনের দিকের প্রাচীরের অংশ ভেঙে ফেলতে হবে। একে ফ্যামিলি নিয়ে জেরবার তার উপরে এই হ্যাপা কার সাথে পরামর্শ করবে ভেবে উঠতে পারে না পৃথা। এসব কোনমতেই অনীশকে শুরুতে সে জানাতে চায় না। 
পাশের বাড়ির দাশবাবু ওদের সুহৃদ বলা যায়। তার কথামতো ভাস্কর নামের একজনে সাথে প্রথমে কথা বলে পৃথা। ফোনে পৃথাকে যা শোনায় তাতে মাথায় বাজ ভেঙে পড়ে।
গত সপ্তাহে অফিস ফেরার পথে চা-দোকানে অনীশের সাথে দেখা হয় প্রতীম বাবুর। প্রতীম ঘোষ,কাউন্সিলার। কথা প্রসঙ্গে অনীশ তাকে বলে
---কদ্দিন আয়নায় নিজের মুখটা দেখন নি বলুন তো?
 প্রশ্ন শুনে হকচকিয়ে যান প্রতীম বাবু। কারণ জানতে চাইলে অনীশের জবাব,
---- মুখচোখ দ্যাখে আপনাকে একটা ধূর্ত শেয়াল মনে হচ্ছে।  মনে হচ্ছে কেনো লোকের মুখে যা শুনি আসলে আপনি যে সেটাই সামনাসামনি সা দেখলে বোঝাই যেত না।
মাথার ভিতর বারুদ জ্বলে ওঠে প্রতীম ঘোষের!
সেই মুহুর্তে হাল্কা একটা উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরী হলেও প্রতীমবাবু নিজে থেকেই সামাল দ্যান। 
পৃথার বুঝতে অসু্বিধা হয়না নোটিসের রহস্য আসলে কোথায়। ফোনে যতরকম করে রিকোয়েস্ট করা যায় পৃথা করে,যাতে এবারকার মতো ঝামেলাটা মিটিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু ভাস্করের পরামর্শ হোলো প্রতীমবাবুর অফিসে গিয়ে সামনাসামনি কথা বলাটাই বেটার হবে।
রাগে ফুঁসতে থাকে পৃথা। আজ সে একটা হেস্তনেস্ত চায়। সহ্যের সীমা বহুদিন পেরিয়ে গ্যাছে তার। তবু একটা দিশা খুঁজে পেতে চাইছিলো সে। কিন্তু কোনমতেই সুরাহার কোন ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না। নিজের মতো করে,বন্ধুদের দিয়ে  বুঝিয়ে,এমনকি গ্রামের বাড়িতে কয়েকদিন থেকেও কোনো ফল হয়নি।আর ডাক্তারের কথা বললেই সেদিন বাড়িতে তুমুল অশান্তি জুড়ে দ্যায়। এনাফ্ ইজ এনাফ্! সে আজ এর শেষ দেখতে চায়।
রাতটুকু কোনমতে কাটিয়েছে পৃথা। সকালে চায়ের টেবিলে অনীশের দিকে  নোটিসটা এক প্রকার ছুঁড়ে দ্যায়। গলার স্বরে তখন তার তীব্র বিরক্তির আঁচ,
-- ঝামেলা নিজে বয়ে এনেছো বাড়িতে,তাই সমাধানটা নিজে থেকেই করে এসো। আমি আর পারছি না অনীশ,প্লিজ!
বলেই পৃথা ঝটিতে ছিটকে চলে যায় কিচেনের দিকে।
অনীশ অসহায়ের মতো নোটিসের লেখায় মন দ্যায়। মাঝে মাঝে পৃথার চলে যাওয়ার দিকে তাকায়। তার চোখেমুখে বোধহয় হাল্কা বিষণ্ণতার মেঘ ঘনিয়েছে। প্রাচীর ঘেরা চিলতে বাগান পৃথার বড্ড আদরের। অনীশেরও গাছগাছালি ভীষণ পছন্দের। প্রাচীর ভেঙে দিলে তাদের বাড়িটার শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে যাবে বোধহয়।
অনীশ তার ভাবনার ভিতরে এই সময় ভীষণ করে পৃথার উপস্থিতি টের পায়। আগেই তো কতকিছু ভেঙে গ্যাছে তাদের।
নোটিস হাতে বেরিয়ে পড়ে অনীশ। এক ঝোঁকে হাঁটা শুরু করে।  যেন উজান ভেঙে নৌকা এগিয়ে চলেছে তীরের দিকে। আশপাশ থেকে ছিটকে আসছে গাঁয়ের কথা,ইউনিভারসিটি ক্যাম্পাস,পৃথা,সোনাই আরো কতসব টুকরো আলোর কণা। 
কখন প্রতীমবাবুর অফিসের দরজায় হাজির হোয়েছে বুঝতেই পারেনি। কলিঙবেলে তর্জনী রেখে থমকে দাঁড়ায় অনীশ। মাথায় তার আগুন খেলছে নাকি মেরু প্রদেশের শৈত্যপ্রবাহ আন্দাজ করতে পারছে না। পাশে যেন কারো উপস্থিতি অনুভব করতে পারছে সে। ডারউইন সাহেবের মতো তার চেহারা যেন। পিটপিট করে সে হাসছে। অনীশ  ভেবে উঠতে পারে না একটা বাঘ নাকি একটা বেড়াল কাউন্সিলারের কাছে গিয়ে দাঁড়াবে!

কলিঙবেল তর্জনীর জোরালো চাপে চিৎকার করে উঠে!

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
 

Post a Comment

0 Comments