জ্বলদর্চি

গুচ্ছ প্রেমের কবিতা (দ্বিতীয়)/বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়

গুচ্ছ প্রেমের কবিতা (দ্বিতীয়)
বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়

                                   (১)
                        ভা  লো  বা সা

টুকরো প্রেমের হাজার কথায় সাজিয়ে ছিলাম আমার ডালা,
কেউ শোনেনি সে সব কথা , পূর্ণ তো নয় শূন্য জালা ।
ভালোবাসা দিলো না কেউ বললো, "তুমি প্রেমিক কিসে?
বহুর সাথে করছো পিরিত মরছো নিজের প্রেমের বিষে।

দু পা দিয়ে মাড়াও তাদের   যারা তোমার প্রণয় যাচে ,
মিথ্যে প্রেমের অন্তরালে প্রেম টা করো আজব ধাঁচে ।
বহুর প্রেমে মগ্ন থাকো প্রণয় যে কি তাও জানো না,
রূপসী কেউ কাছে এলে পিরিত তোমার বাঁধ মানো না।

তোমার প্রণয় কেমন জানো ঠিক যেন এক ইঁদুর মাঠে,
মাঠের ফসল কাটার শেষে পড়তি গুলোয় দাঁতে কাটে ।
অবহেলা তোমার ধরণ মিথ্যা প্রেমের প্রতিশ্রুতি -
সবাইকে দাও ;বোঝো না তো  তোমার প্রেমের দারুণ ত্রুটি ।

সুশ্রী তরুণ যুবক তুমি অনেক মেয়েই আসতে তো চায়,
তুমি তাদের কাছে টানো তোমার প্রেমের প্রগলভতায় ।
প্রণয় প্রেমের মর্ম জানো ? চেনো কি সেই ভালোবাসায়?
ভালোবাসা দুঃখ ভোলায় ,মন ভরে দেয় সুস্থ আশায় ।


                                  ( ২ )
             প্রে   ম    প   রি  বে  শ


মায়া পরিবেশ
বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়

যিনি গিরিরাজ/নগ অধিরাজ/তাঁকে হিমালয় মানি,
তাঁর যে ঘরণী/তন্বী তরুণী/তাঁকে কি আমরা জানি?
দারজিলিং হন হিমালয় প্রিয়া,
পতির গরবে গরবিনি হিয়া,
সন্দেহ নয়/সকলেই কয়/ তিনি হিমালয় রাণী ।।

কাঞ্চন প্রভ কিরীট এক তাঁর শিরোদেশে দেখা যায়,
শিরোভূষণ এ কাঞ্চনজঙ্ঘা সূর্যের দ্যুতি পায়,
এ শিরোমণিতে ভূষিত শহর,
ধরে অপূর্ব শোভা মনোহর,
ভ্রমণ বিলাসী যারা, তারা তাই দার্জিলিং-এই যায়,
ভ্রামণিক নই,তবুও এসেছি চাকরি আমার দায়।।

স্বপ্নঘেরা এ মায়াবী শহরে প্রথম এসেছি আমি,
ছায়া, মেঘে ভেজা শীতল বাতাস বয় হেথা দিবস যামী,
প্রথম চাকরি বড়ো কোম্পানী,
পদটাও উঁচু দামি, সম্মানী,
পরিদর্শনে এলেন মালিক- পত্নী এবং স্বামী,
সঙ্গে তাঁদের তরুণী কন্যা বয়স বাইশ গামী।।

দার্জিলিং-এর মায়া পরিবেশে সে মেয়ে আমায় ডাকে,
মাত্র দুদিনই আলাপ,এর আগে দেখিনি কখনও তাকে,
দুটি চোখ তার বড়ো মায়াময়,
লীলায়িত তনু লাবণ্যময় ,
সব সময়েই  চায় সে, যেন আমারই সঙ্গে থাকে,
চোখেতে আমারও আঁধার নামে যে দেখতে না পেলে তাকে।।

এই দুই  দিন কি যেন আবেশে বিবশ হয়েই থাকি,
সকালে বিকালে বেড়িয়ে বেড়াই তার হাতে হাত রাখি,
আবেশে,আবেগে চাই তার দিকে,
দেখি তার মোহময়ী রূপটিকে,
মায়া ঘেরা এক আকুল আবেগে ভাবি এ সত্যি নাকি?
অকুণ্ঠিতা এ রূপসী কখনও দেবে না তো মোরে ফাঁকি?

সেই দিন এসে দিলো সে আমাকে নিবিড় আলিঙ্গন,
দুটি ঠোঁটে মোর এঁকে দিলো তার প্রগাঢ় চুম্বন,
তার সুরভিত দেহের ছোঁয়ায়,
বেপথু এ দেহ আবেশ ছড়ায়,
 একি আবাহন?ভাবি আমি, না এ বিদায় সম্ভাষণ?
সপ্তাহ পরে ডাকে এলো তার বিয়ের নিমন্ত্রণ।।

কিরীট            :  শিরোভূষণ
নগ অধিরাজ  : পর্বতের অধিপতি, হিমালয়
দ্যুতি               :  আলোর ছটা
ভ্রামণিক         :  পর্যটক, ভ্রমণ কারী
যামী               :   রাত্রি
বেপথু             :   শিহরিত, কম্পিত
আবাহন          :  আমন্ত্রণ


                     ( ৩ )
                প্রে  মে  র   শ  ক্তি

বিশাল আয়তন পুষ্প বিতানে,
একটাই ফুল ফুটবে সেখানে ?
এরকমটা কি সম্ভবপর হয় ?

তেমনি তোমার প্রেমীর হৃদয়ে,
একা তুমি রবে রাজরাণী হয়ে,
এ ভাবনাটাও অমূলকই নিশ্চয়।।

যদি কেউ আসে তার অন্তরে,
মান করে যেন যেও না গো সরে,
দূরেতে সরাও  মান,অভিমান,ভয়।

 ফিরে পাবে ফের তোমার অধিকার,
তোমার সুদিন আসবে আবার,
প্রেমের শক্তি আনবে তোমার জয় ।


                               ( ৪ )
       ভা   লো   বা   সা     কা   রে   ক   য়



     
#ছন্দ কবিতা
#ভালোবাসা

(বাংলা পদ্যে সর্বাধিক প্রচারিত চোদ্দ মাত্রার পয়ার ছন্দে লিখিত)

ভালোবাসা কাকে বলে সকলে কি জানে?
শারীরিক প্রেম এটা  যা অনেকে মানে ?
আমিও বিচার করি ভালোবাসা কি,তা।
মনের ভাবনা নিয়ে লিখি দুটি পাতা।।

ভালোবাসা অনুরাগ,ত্যাগ ও প্রণয়।
ভালোবাসা সমব্যথা কোমলতা ময়।।
ভালোবাসা ক্লেশিতকে প্রশান্তি দেয়।
দুখির দুখের ভার কাঁধে তুলে নেয়।।

ভালোবাসা অকপট,মহান উদার-
ভালোবাসা ক্ষমাশীল,করুণা অপার।।
ভালোবাসা ছলাকলা,অভিনয় নয়,
ভালোবাসা আর্তের শীতল আশ্রয়।।

জাগতিক লাভ তার মনেতে না  রোচে ,
অসুখিকে সুখি করে জ্বালা তার মোছে।।
নিপীড়ক নয় সে যে নয় বিদ্বেষী।
যতটা সে পায়, দেয় তার চেয়ে বেশি।।


                                 ( ৫ )
                         প্রে    ম     প    ত্র


বন্ধু তোমাকে/পত্র দিলাম/উত্তর যেন দিও,
আমার মনের/যতো ভালোবাসা/এ পত্রে তুমি নিও,
বন্ধু তোমার/মনটা পাষাণ/দয়া মায়া নাই প্রাণে,
আমায় ছেড়ে তো /বেশ ভালো আছো/কি ভাবে আছো কে জানে ?

বন্ধু তুমি কি/ আসবে এবার/ আমাদের ভাঙা ঘরে?
কতোদিন হলো/ দেখিনি তোমাই- মনটা খারাপ করে,
সেই মার্চ মাসে/দেখেছি তোমায়/তার পর দেখিনি তো,
রিজার্ভ গাড়িতে/চলে গেলে তুমি/পরে সার্ট, প্যান্ট, জুতো ।।

বলেছিলে তুমি আসবে এখানে ঈদ পরবের দিনে,
আমার জন্যে আনবে তখন অনেক জিনিস কিনে,
এপ্রিলে ছিল ঈদুল ফিতর আসতে পারেনি ভয়ে,
শংকিত ছিল সারাটি বিশ্ব কোভিড বিপর্যয়ে ।।

সামনে এখন ঈদ-উজ-জোহা এসো গো কষ্ট করে,
প্রিয় মুখ খানি দেখলে হৃদয় আনন্দে যাবে ভরে,
কিছুই তোমাকে আনতে হবে না, শুধু তুমি এসো ফিরে,
কতো যে স্বপ্ন দেখি গো বন্ধু তোমাকেই শুধু ঘিরে।।

তোমার পরশ পেলেই বন্ধু সব অভাব যাবে ঘুচে,
মনের মধ্যে যত কিছু জ্বালা নিঃশেষে যাবে মুছে,
বাদল ধোয়া এ মেঘের মাঝারে তোমাকে দেখতে পাই,
বিজলি মেয়ের হাসির মতই তব মুখই চমকায় ।।

জানোই তো তুমি, তোমার কাছে যে যাবো এ উপায় নাই,
পরাধীন আমি কি ভাবেতে যাই,কাকে বা সঙ্গী পাই ?
কোভিদের বিষ এখনও যে আছে আরও বেশি পরিমাণে,
জানি তা বন্ধু তবু এই মন তোমাকেই বেশি টানে।।

আমারই জন্য এসো গো বন্ধু অনুরোধ বার বার,
তবু যদি তুমি না আসো ,আমায় দেখতে পাবে না আর,
আমি চলে যাবো আকাশের মাঝে মেঘকে সঙ্গী করে,
বৃষ্টি ধারার মতই তোমার শরীরে পড়বো ঝরে ।।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments