জ্বলদর্চি

গুচ্ছ প্রেমের কবিতা /বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়

গুচ্ছ প্রেমের কবিতা

বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়

এক রূপহীনার প্রণয় ভিক্ষা

রূপবান তুমি নানান কাজেতে পথে যাওয়া আসা করো,
সুন্দর তুমি তোমাকে  দেখার  ইচ্ছাটা তাই বড়ো ।
সাহস পাই না ডাকতে তোমায় আমি তো রূপসী নই ,
রূপহীনা আমি তুমি সুন্দর কি ভাবে তোমার হই ?

 তবু বসে থাকি, অপেক্ষা করি যদি হয় মনে  দয়া,
অবহেলা দূরে ঠেলে ফেলে যদি  আমাকে করো বিজয়া। 
যা হওয়ার নয় মিথ্যা যা ভাবি, তবুও তোমাকে ডাকি,
অনেক চাওয়া যে অধরা আমার অনেক বাসনা বাকি ।

এসো দিলদার এসো  একবার দেখো গো আমার দশা,
চোখের কাজল ধুয়েছে অশ্রু ,চারি দিকে পোকা, মশা,
ছবিটা দেখে কি বুঝবে বন্ধু তোমারই জন্যে কাঁদি ?
 ভালোবাসা দিয়ে ডাকো যদি প্রিয় আমি হতে পারি বাঁদী।


মুখ ঢাকা মেয়ে

বাইরে বেরোয় না সে সদা  থাকে বাড়িতে
যদি বা  বেরোয় পথে যায় ঢাকা গাড়ীতে,
বৃষ্টিতে জলে জলে চলে যদি হেঁটে সে।
বোরখাতে মুখ ঢাকে আসে না তা হদিসে ।

চোখ মুখ ঢাকা থাকে ঘেরাটোপ হিজাবে,
সুন্দর চোখ মুখ পাই না তো হিসাবে ,
ফিস ফাস কথা আর জোলো জল বাতাসে,
অদেখা থেকেও কেন দেখা দিতে চায় সে ।

ইরেজার দিয়ে যেন মুছেছে সে নিজেকে ,
কারণটা খুঁজি অমি  লুকায় সে কি দেখে ?
চেয়েছি তো তারে আমি আপনার করে যে,
তাই কি শরম হয় ?  লেখা খাতা মোছে সে ।




মান ভঞ্জন

তিন মাস ধরে,
আছো রাগ করে,
ডাকলে দাও না সাড়া ।

কেন এতো রোষ?
কি করেছি দোষ?
এ যে শাস্তিরও বাড়া ।

থাকো যেই খানে,
গেলে সেই  স্থানে,
অমনি উঠে পালাও।

ফোন যদি করি,
সেও এক 'স্টোরি',
ধরো না তো ফোনটাও।

চিঠি দিই ডাকে,
খত দিয়ে নাকে ।
ফেরত আসে সে চিঠি ।

একই বাড়ি থাকি,
বোঝা যায় তাকি ?
আমাতে দাওই  না দিঠি।   /  দিঠি  -  দৃষ্টি

ডাকি ভগবানে,
দেন যদি দানে,
মান ভাঙানোর পথ ।

কি ভাবে চললে,
কি কথা বললে,
পাবো মানিনীর মত ।

সর্বদা ভাবি,
কোথায় সে চাবি?
যা খোলে মানের তালা ।

তাও ব্যর্থতা,
শুধু ব্যাকুলতা,
মনেতে দারুণ জ্বালা ।

এমন তো নও ,
বোবা হয়ে রও,
রা' ই কাড়ো না কারে ।

যদি কেউ ডাকে,
সাড়া দাও তাকে,
কোপ যা- আমারই ঘাড়ে ।

ভাবি-শ্রী কৃষ্ণ,
হয়ে  সতৃষ্ণ ,
পা ধরেছিলেন রাধার।

সেটাই করবো?
পা চেপে ধরবো ?
কাটবে কি এতে আঁধার ?

কিন্তু রাধার,
প্রেম তো বাধার,
পরকীয়া প্রেম সেটা ।

আমাদের প্রেম,
বিশুদ্ধ হেম,
জায়া ও পতির এটা ।

পা ধরা ঠিক হবে ?
লোকেরা কি কবে ?
থাকবে কি সম্মান ?

কাটাতে এ দুখ ,
হয়ে থাকি মূক ,
রাখতে নিজের মান ।

ব্যাধিটি যেমন,
ওষুধও তেমন,
আমিও তো চুপচাপ ।

রাখি মুখ ভার,
দেখি একবার ,
কমে যদি তব চাপ ।

ছয় দিন পরে ,
কৃষ্ণেরই বরে ,
পেলাম ওষুধে ফল ।

দেখি কাছে আসো,
কিছু ভালো বাসো ,
সত্যি এটা না ছল  ?

ছয় দিন শেষে ,
গেলো নিঃশেষে,
ছিলো মান যত মনে ।

বাহু লতা দিয়ে,
ধরলে জড়িয়ে,
তোমার আপন জনে  ।

মুখে কথা নেই,
দুই নয়নেই , 
বয় অশ্রুর ধারা

বাঁধ ভেঙে দিয়ে,
বিরাগ সরিয়ে ,
মানিনী দিয়েছে সাড়া ।

নীরব দু জনে,
রই এক মনে ,
খুলেছি মানের ফাঁদে ।

বয় সুবাতাস ,
আকুল আকাশ,
মানিনী সুখেতে কাঁদে ।


হার না মানার লড়াই

আমি তো তোমার পাশেতেই থাকি তবু কেন চাও ছবি,
তবে কি আমাকে ফেলে দেবে, তুমি এ রকম মতলবি ?
আমি তো তোমায় ছাড়বো না প্রিয়  দূরে ঠেলে দাও যতো
বাহু লতা দিয়ে জড়িয়ে রাখবো,  আমার ইচ্ছা মতো ।

কোথায় পালাবে ? পথের মাঝেই পথ আটকাবো আমি,
স্রোতস্বিনী তটিনীর মতো প্রেম আমার দ্রুত গামী ,
আমার দু চোখ সদাই তোমায় ঘিরে রবে জেনো প্রিয়,
করি সাবধান ,  আমাকেই তাই সব প্রেমটুকু দিও ।

তবু যদি তুমি এটা মনে ভাবো আমাকেই ছেড়ে দেবে,
অন্য কাউকে ভালোবেসে তুমি তাকে সাথি করে নেবে,
ভাবছো কি তুমি ছাড়া পেয়ে যাবে ? এই ছবি দেবো সাথে,
এ ছবি তোমায় বন্দী রাখবে সকাল, দুপুর , রাতে ।




আমি সু-চয়নিকা

***  এই কবিতাটি একজন তরুণকে নিয়ে লেখা । সে
        নিজেকে একজন তরুণী বলে মনে করে ।
        তরুণী সেজেই সে চলা ফেরা করে । আর
         তাকে এই সাজে মানায়ও । তবে অনেকে
         তাকে eu-nuch বলে বিদ্রুপ করে,
         অবহেলা করে, অপমান করে । এতে তার
         মনের ওপরে ভীষণ চাপ পড়ে । তবে তার
         মনের জোর আছে আর শক্ত সোজা হয়েই সে
          এখনও দাঁড়িয়ে আছে । আমি পরম করুণাময়
          আল্লাহর কাছে দোয়া করি সু-চয়নিকার মনের
           বেদনা যেন তিনি দূর করেন ।

সু-চয়নিকা কে ? সকলে  কি তাকে চেনে ?
তরুণ তবুও তরুণী নিজেকে জেনে   --
তরুণী সেজেই চলা ফেরা করে,
সুদেহিনী এক নারী রূপ ধরে ,
সকলেই তাকে শ্রীময়ী নিয়েছে মেনে ,
প্রচেষ্টা করে যে কোনো মূল্যে এই রূপসীকে কেনে ।

সুনিতম্বিনী তন্বী তরুণী সাজে ,
পায়েতে নুপুর রিনি ঠিনি ঠিনি  বাজে,
দেহ হিল্লোলে কল কল্লোলে,
তটিনীর ঢেউ ছুটে এসে বলে,
আমি নর্তকী এসেছি নবীন সাজে ,
 চেয়ে দেখো দেখি লাগি যদি কোনো কাজে ?

এই রূপে সে যে অতিশয় মোহময়ী
  নিঃসন্দেহে এই রূপ লাবণী সবার চিত্ত জয়ী
অনেক পুরুষ কাছে চলে আসে,
মুগ্ধ চিত্তে তাকে ভালোবাসে ,
এই রূপসীর ভরা যৌবন বড়োই কান্তিময়ী,
চটকে, গ্ল্যামারে সকলকে টানে মোহিনী লাস্যময়ী ।

"আপনার দেখা অনেক নারীর চেয়েও, 
আমি ততটাই উচ্চ মানসিকতা সম্পন্না কেননা
আমি বিশ্বাস করি আমার নারীত্ব ভেতর থেকে আসে" ।
--  সু-চয়নিকা

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments