জ্বলদর্চি

যুগ্গেশ্বরের ঘাট /শ্রীজিৎ জানা

যুগ্গেশ্বরের ঘাট

শ্রীজিৎ জানা


দক্ষিণে দুঃশ্বাসপুর,উত্তরে সামাট।একটু উজিয়ে গেলেই খান রাজাদের রাজবাড়ি-চত্ত্বর। তাকে পাশে রেখে কালো পিচের সড়ক রওনা দিয়েছে জেলা শহরের দিকে।। এদিকে দুই গ্রামের মাঝ বরাবর খরিশ সাপের মতো এঁকেবেঁকে ছুটে চলে গ্যাছে কংসাবতী। তীরের লোকজন বলে কাঁসাই।রুখাশুখার দিনে নদীর বুক জুড়ে  শুধুই সাদা বলুরাশির স্তূপাকার  শূন্যতা। যেন কতকালের অভিমান জমতে জমতে কঠিন হোয়ে গ্যাছে। আর যেই না বর্ষা নামবে,অম্নি কংসাবতী রাক্ষসী হোয়ে যেন গিলে খেতে আসবে চৌদিক।তবু সে দুই তীরের মানুষজনের কাছে গাঁগাওলির দুষ্টু মেয়েটির মতো। যার দুরন্তপনা সহ্য করা যায় না আবার সে চোখের আড়াল হোলে মন আকুলিবিকুলি খায়।
সত্যেশ্বর খেয়াঘাটে যায়নি অনেকদিন। মনটা ছটপটিয়ে উঠলেও জোর করে সে নিজের পা দুটোকে ধমকেধামকে থামিয়ে রাখে। ঘাটপারে ছইয়ের ঘরটা আছে এখনো। খুব শিগগির ভেঙে নিতে হবে। পঞ্চায়েত অফিসের লোকজন জানিয়ে গেছে দু'দিন হোলো। জীবনের বারো আনা সময় তার কেটেছে ওই ঘাটের ছই ঘরে। ভোর থেকে রাত অব্দি ওই মাচাটার উপর খেয়ে শুয়ে বসে দিন গুজরান করেছে। বর্ষার দু'আড়াই মাস বাঁধে উঠে আসতে হোতো।কখনো নৌকার হাল ধরা,কখনো লগি ঠেলা দিনমান তার ব্যস্ততা লেগে থাকে।চোত-বোশেখের সময় জল থাকতো পায়ের চেটোয়। তখন খেয়া বন্ধ থাকে। লোকজন সব হেঁটেই নদীর বুক মাড়িয়ে পার হয়। মোটারগাড়ি,মারুতি টোটো,মেশিনটলি সবই বালির উপর দিয়ে গর্জন করে তেড়েফুঁড়ে উঠে যায় উঁচু বাঁধে। তখনো সত্যেশ্বর  ঘরে বসে থাকে না। খেয়াঘাটের দুই পাড় ঢালু করে যাতায়াতের উপযোগী করে দ্যায় বারবার।
সত্যেশ্বর তালই। পিতা সর্বেশ্বর তালই। পিতামহ যজ্ঞেশ্বর তালই। কত পুরুষ ধরে এই দুঃশ্বাসপুর ঘাটে তালইরা ঘাটোয়ালি করছে বলতে পারে না সত্যেশ্বর।  জিজ্ঞেস করলে বলে,
--অত কি দিনখন বলা যাবে!তবে দাদুকে বোলতে শুনেছি পুব্বাপুরুষের আমল থিকে খেয়া দেইঠি আমরা।
দাদুর কথা বলতেই সত্যেশ্বরের চোখমুখ আবেগের ভারে টুবটুব করে উঠে।
--দাদামশাই মোর দেবমানুষ ছিল। রামায়ণ পোড়তো।…. ঘাটপারে ওই যে বাবা যজ্ঞেশ্বর শিব,তার নামেই দাদামশাইের বাপ নাম রেখেছিল তার। শিবের থানে মাথা না ঠুকে জলপশ্য কোরতোনি সে।…..গায়ের রঙ ছিল বামুনপারা ফস্সা ধপধপা। ইয়া দীগ্ঘাকার!.... জাতে জেলা হলে কি হবে পাঁচগাঁয়ে তাকে কত্ত মান্যিগন্যি কোরতো।
কথার মাঝে মাঝেই থেমে যায় সত্যেশ্বর। স্মৃতিমেদুরতা তার স্বরকে আর্দ্র করে দ্যায়। তারপর  দাদামশাই আর তাদের খেয়াঘাটের গল্পে মশগুল হোয়ে যায় সে।
ঘাটপারের বুড়োশিবকে খুবই জাগ্রত মানে আশেপাশের পাঁচদশটা গাঁয়ের লোকজন। মল্লিকহাটির জমিদাররা বহুদিন আগে খেয়াঘাটের পাশেই চুনসুরকির ঘাট বাঁধিয়ে দিয়েছিল।আজও অক্ষত আছে সেই ঘাট। পাড়াগাঁর যেকোন শুভকাজ,তা ঘট ডোবানো হোক,কনে স্নান করানো হোক কিম্বা ঠাকুর ভাসান সবই হয় এই যজ্ঞেশ্বরের ঘাটে। তারচেয়েও  যে কথাটা বল্লে আজও সত্যেশ্বরের গায়ে কাঁটা দ্যায় তা হোলো তার দাদা মশাইয়ের যজ্ঞেশ্বর শিব দর্শন।
সেবার দিন গড়িয়ে রাত অব্দি আকাশ অঝোরে ঝরাচ্ছে। থামবার নাম নেই যেন। দু'একজন পারাপার হয়েছে মাত্র। খুব দায় না পড়লে কে বেরোবে এমন অকাল দুর্যোগে! তবু যখন যারা আসছে যজ্ঞেশ্বর পেখা মাথায় দিয়ে একাই লগি ঠেলে খেয়া দিচ্ছে তাদের। সন্ধে ক্রমে গড়িয়ে রাতের দিকে রওনা দিয়েছে। যজ্ঞেশ্বর নৌকাকে ঘাটে নোঙর করে,গাছের সাথে বেঁধে বাড়ি ফেরার তোড়জোড়ে ব্যস্ত। হঠাৎ পেছন থেকে কারো গলা শুনে থমকে যায়। ফিরে দেখে শিব মন্দিরের পুরোহিত নবারুণ চক্রবর্তী।  এমন সময় ঠাকুরমশাইকে দেখে যজ্ঞেশ্বর তো অবাক! কিছু বলার আগেই যজ্ঞেশ্বরকে ঠাকুরমশাইয়ের হুকুম,
--যা দিকি যগ্গেশ্বর ওপার থেকে একটু গাঁজা এনে দে।বাবার রাতে গাঁজা লাগে তুই তো জানিস। মন্দিরে কোন গাঁজা নেই।
যজ্ঞেশ্বর সেকথা বিলক্ষণ জানে। কিন্তু রাত তো অনেক। ওপারে দাশু মুদি জেগে আছে কিনা কে জানে! তার উপর  এরই মাঝে কাঁসাই  আড়েদিঘে ফুঁসছে। একা নৌকা বাওয়া কোনমতেই সম্ভব নয়। এদিকে  আবার বাবাকে গাঁজা না দিলেও বিপদ। কি করবে ভেবে কুল পায় না যজ্ঞেশ্বর। তখন ঠাকুরমশাই অভয় দিয়ে বলেন,
--তুই যা যগ্গেশ্বর আমি বলছি নদীতে কোন জল থাকবে না। সোজা তুই হেঁটে চলে যা...
কথা শুনে চমকে উঠে যজ্ঞেশ্বর। অমন ভরভরন্ত কাঁসাই যেন রাগে আছাড়বিছাড় খাচ্ছে। যাকে পাবে মেড়েমুড়ে  যেন গিলে খাবে।সে কিনা শুকিয়ে যাবে? হাঁ করে তাকিয়ে থাকে নবারুণ ঠাকুরের দিকে। এমন আঁধারঘন বৃষ্টিবাদলা রাতেও কি যেন আলো তার কপাল থেকে ঠিকরে বেরুচ্ছে।  ভয়ে থতমত খেয়ে হাঁটা দ্যায় যজ্ঞেশ্বর। 
সেই রাতে নাকি নদীর মাঝ বরাবর জল সরে যায়। গাঁজা নিয়ে ফিরে এসে আর বামুনঠাকুরকে দেখতে পায়না যজ্ঞেশ্বর। ঘোরের মধ্যেই  সে শিবের থানে গাঁজা রেখে আসে। তারপর  তিন চারদিন কোন কথা বলতে পারেনি । শুধু শিবের থানে বসে অঝোরে কাঁদতে থাকে। তার কমাস পরেই হঠাৎ দেহ রাখে যজ্ঞশ্বর। স্বপ্নাদেশে  সব কথা জানতে পেরে নবারুণ চক্কোতি সকলকে জানায়। সেই থেকে সত্যেশ্বরের তালই পরিবারকে লোকজন আলাদা চোখে দেখে।

কিন্তু দিন বদলেছ। কথায় বলে-যে না মানে দেবীদেবা, ভালমন্দ তারে বোঝায় কেবা?আজকের দিনে তালই পরিবারকে কেউ তেমন পাত্তা দ্যায় না বলে সত্যেশ্বরের আক্ষেপের অন্ত নেই। খেয়াঘাটের উপরই তাদের ভরসা। জমিজমা তেমন কোরে উঠতে পারেনি। মল্লিকহাটির জমিদাররা তাদের পূর্বপুরুষকে এনে এগাঁয়ে বসায় ঘাটোয়ালির কাজে। তখন একুঠা আর জোড়া ডোঙায় পারাপার কোরতো লোকজনদের। পরে হোলো নৌকা। লোক পারাপার বাড়তে থাকলো। আগে মাগনে বছরে কেউ চাল, কেউ ধান দিত। দূরের লোকজনদের থেকে দু'চারানা মিলতো। হালে অবস্থা ফিরলেও খরচের বহর বেড়েছে দ্বিগুন। ফিবছরে নৌকা পাট করতে হয়। এখন গাড়ি পারাপার হয় রীতিমতো। বাধ্য হোয়ে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নদীতে বাঁধতে হয়েছে বাঁশের সাঁকো। এমন মজবুত করে বাঁধতে হয় যাতে মারুতি, টলি, টোটো সব নির্বিঘ্নে যেতে পারে। আর তাতেই ট্যাঁক ভরবে কি হাল্কা হতে থাকে দিনদিন।
জোর জবরদস্তি করতে পারে না সত্যেশ্বর। বংশের গৌরবকে সে ছোটো করতে চায় না কিছুতেই। ছেলে বৌমারা বল্লেও পারানির দাম  বাড়াতে চায় না। শিবের থানের নামকরা ঘাটের ঘাটোয়াল তারা। ঘাটোয়ালি তাদের বংশগত পেশা। মানুষকে হয়রানি করে নিজেরা সুখে থাকতে শেখেনি কোনোদিন। টাকাকড়ির কথা উঠলেই বুড়োগলায় সত্যেশ্বর ঝাঁঝিয়ে উঠে,
---তরা থামবি,যগ্গেশ্বরের রক্ত মোদের গায়ে, পেটের দায়ে তালইরা কুনুদিন মান বেচবেনি।
যদিও সে জানে সংসারে তার খুব একটা স্বচ্ছলতা নেই। ঘাটের আয়েই পেট চলে। কোনকিছু করা বোলতে দুটো ভুটভুটি নৌকা করেছে এই ঘাটোয়ালি করে।বড় ছেলে ভরা নদীতে বালি তোলার কাজ করে ওই নৌকা দুটোতে । ছোট উচ্চমাধ্যমিক পাশ দিয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছে।ঘেটালের কাজে সময় দিতে চায় না। সত্যেশ্বর ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
--অ্যাতে নাকি বাবুুর প্যাসটিজ চলে যাবে। দু'পাতা পড়ে ছ্যানা মোর বাবু হোইছে। কথায় বলে,চিরদিন গেল খড়ের জ্বালে/আজ আবার বেরষাকালে।
সেই কবে থেকে বাপের সঙ্গে নৌকার হাল ধরতে শিখেছে সত্যেশ্বর। নৌকার পাটাতন সরানো,গোলই থেকে জল ফ্যালানো,কাছি বাঁধা কোনো কাজেই মুখ মুড়েনি সে। দাদুর কাছে ছোট বেলায় শিখেছে কাঁসাইয়ের স্রোতের ধরণধারন, জলঘূর্নির স্বভাবচরিত্তির। সেজন্যই তো কোনদিন যুগ্গেশ্বরের ঘাটে নৌকাডুবি হয়নি। এ নিয়ে সত্যেশ্বর কম গর্ব করে না!

কিন্তু এসবের দাম আর দিল কোথায়? ঘাটের দক্ষিণ পাড় থেকে পাটনা-ডেবরা অব্দি রাস্তা ঝাঁ-চকচকে হয়েছে। দু'পারেই গজিয়ে উঠেছে বাজার। পারাপারে ভীড় বেড়েছে বিস্তর। সেই সুবাদে দু'দিকে অঞ্চলগত ভাবে কাঠের ব্রিজ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তড়িঘড়ি কাজের তোড়জোড় শুরু হয়েছে যুগ্গেশ্বরের খেয়াঘাটে। বড় বড় লোহার বিম এসেছে। শাল কাঠের পাটাতন বওয়া হচ্ছে গাড়িতে। বৈশাখের মধ্যেই ব্রিজ উদ্বোধন হবে। ব্রিজের নাম রাখা হয়েছে কঁসাই সেতু। সত্যেশ্বর নিজেকে স্থির রাখতে পারে না। ঘরে রাগে গরগর করে একাই বকে যায়,
--এদ্দিনের যুগ্গেশ্বরের ঘাট নামটা মুছে দিল। কেউ মুখে একটা রা'কাড়ল না। যুগ্গেশ্বরের নামে পোলের নাম রাখলে কী এমন ক্ষতিটা  হোতো শুনি? আর লোকেদের বলি অরা যা বোলবে সবই কি মানতে হবে? ঐতিহ্য বলে কি কিছু থাকবে নি?
কিন্তু কেইবা আমল দ্যায় সত্যেশ্বরের কথায়।সভা করে মাইকে ঘোষনা করেছেন দুই অঞ্চলের হোমরাচোমরা পার্টির নেতারা। আর এতসব ঘটনার থেকে বাদ থেকেছে তালই পরিবার। সত্যেশ্বরকে মিটিংয়ে ডেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সামনের বর্ষা থেকে তাদের পারাপার বন্ধ থাকবে। সত্যেশ্বর কোন আপত্তি করেনি। সময়ের দাবীকে মেনে নিতে সে তো বাধ্য। কিন্তু অন্য এক গভীর প্রদাহ তার বুকের ভিতরে আঙরার মতো পোড়াচ্ছে। 
কাঠের ব্রিজে দু'পারের দুজন লোক নিয়োগ হবে।পারাপারের ভাড়া নেওয়ার জন্য। হিসেব মতো সত্যেশ্বরের পরিবার দক্ষিন পাড়ের মেইন দাবীদার। কিন্তু তাদের নাম মুখে উচ্চারণ পর্যন্ত কেউ করেনি।
সত্যেশ্বর একপ্রকার নত হোয়েই অঞ্চল অফিসে তার ছোট ছেলের জন্য দরবার করে। সে অনুনয় করে বলে,
---সারাজীবনের জন্য খেয়া বন্ধ হচ্ছে। লগি ঠেলেই মোদের পেট চলে। তবু যদি মানুষের উপগার হয়, হোক। শুধু ছোট ছ্যানাটার মুখের দিকে যদি একটু দেখেন।ঘাটটাকে তো আমরাই এদ্দিন বাঁচিয়ে রেখেছি পধানবাবু।
---সেটা মিথ্যা নয়। কিন্তু এই সামান্য কাজের জন্যে কত দরখাস্ত পোড়েছে জানো? তার উপরে পার্টির ছ্যানাদের চাপ। কেউ কেউ তো পার্টি ফান্ডে টাকা পর্যন্ত দিবে বলে বোলছে।
সত্যেশ্বর ঈঙ্গিত বুঝতে পারে। জোড় হাতে নমস্কার ঠুকে হনহনিয়ে বেরিয়ে আসে পঞ্চায়েত অফিস থেকে। ফিরতি পথে কত কথা চরকিপাক খেতে থাকে মাথার ভিতর। ঘাটটার জন্য কি নাই করেছে তার পরিবার। রাত বিরেতে কারো কোনো বিপদ হোলে ভরা নদীতেই খেয়া দিয়েছে। গাঁয়ে বন্যার সময় তাদের তিনটে নৌকাকেই উদ্ধারের কাজে দিয়ে দিয়েছে। টাকাপয়সার কোনো দাবী করেনি। সত্যেশ্বর এই শিক্ষাই পেযেছে মানুষের জীবন আগে। অথচ আজকে সেসবের কোন মূল্য দেখলো না কেউ। টাকাকেই বড় করে দেখলো সবাই।
 খেয়া বন্ধ হোলে তার পরিবারের উপর একটা ঝড়ঝাপটা নেমে আসবে। বড় রকমের ভাঙচুর না হলেও খানিকটা আঘাত তাদের সইতে হবেই। সত্যেশ্বর ভিতরে ভিতরে মুষড়ে পড়ে। খেয়াঘাটের কাছে এসে সত্যেশ্বর দেখে নৌকা আর ভুটভুটি দুটো মরা বালির চড়ায় নির্জীবের মতো কাত হোয়ে পড়ে আছে।মনে পড়ছে তার দাদুর কথা। দাদু বোলতো,
--জেলা আর লৌকা হোলো জলের পোকা। অরা জল ছাড়া কুনুদিন বাঁচেনি। জলেই অদের জীবন।
ঘরে ফিরে ছেলেদেরকে শুনিয়ে বলে ঊঠে সত্যেশ্বর,
---অ বড় খকা এসনে লৌকা পাট কোরবিনি? মিস্তিরিদের খবর দিবি কবে?
----উসব হবেনি। তুমি খোদ্দার দেখ ভুটভুটি দুটা রেখে লৌকাটা বিচে দুব।
মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়ে সত্যেশ্বরের। প্রাণ থাকতেও সে ওই নৌকা বেচতে দেবে না। স্পষ্ট কোরে ছেলেকে জানিয়েও দ্যায় সেকথা। এতদিন ধরে ওই নৌকাই তালাইদের সংসার যেমন টেনেছে তেমনই দশবিশ গাঁয়ের লোকজনদের খেয়া দিয়েছে নিত্যদিন।নৌকা সত্যেশ্বরের কাছে লক্ষ্মী। আবার সে দাদুর মুখে শুনেছে নৌকার সিঁথা-ই নাকি মা দূর্গার আরেক রূপ! আর সব নেমকহারাম হলেও সত্যেশ্বর হোতে পারবে না। 
সকাল না হোতেই ঘাটপারে হাজির হয় সত্যেশ্বর। নৌকার সিঁথায় মাথা ঠুকে হাঁটা দ্যায় পিচ সড়কের দিকে। মিস্ত্রি নিয়ে ফিরবে আজই। রুখার সময় নৌকায় আলকাতরা দিয়ে পাট না করলে নৌকার আয়ু কমে যায়। ডাঙায় পড়ে থাকলে ধীরে ধীরে ফোঁপরা হোয়ে যাবে। ঘেটালরা শুধু ঘাট বোঝে না,নৌকার কাঠের মনও বোঝে। খেয়া না দিলেও যুগ্গেশ্বরের ঘাটে তালইদের নৌকা লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে ঢেউকে শাসন কোরবে। সত্যেশ্বর এমনটাই দেখতে চায় মনে মনে। কারণ সে জানে জলের যানকে জলেই তো বেশি মনায়!

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments