জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -৭৮

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -৭৮

সম্পাদকীয়,
 জোড়া শালিক, মাণিকজোড়, হরিহর আত্মা - এই শব্দগুলি শুনলেই ছোটোবেলার বন্ধুদের কথা মনে পড়ে যায়। আমি জানি তোমাদের প্রত্যেকের খুব প্রিয় একজন বন্ধু আছে। যার সঙ্গে তোমরা খেলো, গল্প করো, আড্ডা মারো, বিকেলে সাইকেলে টই টই করে ঘোরো। তেমন দুই বন্ধুর সাইকেলে পাড়া বেড়ানোর ছবি  পাঠিয়েছে কল্যাণ আঙ্কেল। আর এদিকে বাসবদত্তা আন্টি মাণিকজোড় পাখির গল্প বলেছে। আরে না,না দুটো পাখি নয়, একটা পাখিরই নাম মাণিকজোড়। আমি তো শুনেই হেসে কুটোপাটি। তোমরাও জানতে না মানিকজোড় পাখিদের কথা? আরে জানবে কি করে? এই সব পাখি তো প্রায় দেখাই যায় না। হারিয়ে যাচ্ছে।দেখা গেলেও আমরা চিনতেই পারবনা। 
হারিয়ে যাবার কথায় মনে পড়ল, শুধু পাখি নয় মুখে মুখে চলে আসা গল্পকথাও আছে প্রচুর, যাদের খুঁজে খুঁজে সংগ্রহ করে রেখেছিলেন, দক্ষিণারঞ্জন  মিত্র মজুমদার।  না হলে সেগুলো হয়ত হারিয়েই যেত। তাঁর কথা আজ আমাদের বলেছেন পীযূষ আঙ্কেল।
পাখিদের তো ডানা থাকে আমরা সবাই জানি, কিন্তু তা বলে ট্রেনেরও ডানা থাকে নাকি? কি জানি বাবা। আমি তো শুনিনি। তুষ্টি আন্টি এই ডানাওলা ট্রেনের গল্প বলেছেন। 
গল্পের কি আর শেষ আছে? জয়াবতীর গল্পে গল্পের পর গল্প এগোচ্ছে। গল্পের মেঘ ক্রমশ ঘনিয়েছে। তাই এবার বৃষ্টির আশঙ্কা। আর বৃষ্টির দিনে ছাতার ছড়া বলেছেন স্বপ্ননীল আঙ্কেল। পাখি,  ট্রেন বা ছাতা যার কথাই বলি না কেন, তোমাদের যে মন পড়ে আছে মোবাইলে তা কি আর আমি ভুলে গেছি ভেবেছো? আর ভুলতে দিচ্ছে কে? রকি দাদা মনে করিয়ে দিয়েছে যে। না আর মোবাইল নয়, এবার মন দিয়ে পড়া পড়া খেলা।  সময় পেলে গল্প ছড়া লিখে এঁকে পাঠিয়ে দাও আমাকে। 
-- মৌসুমী ঘোষ।


ধারাবাহিক উপন্যাস
জয়াবতীর জয়যাত্রা
দশম পর্ব
তৃষ্ণা বসাক
 
১৪
 
ঘোড়া তো নয়, যেন একটা পাহাড়। দেখেই মনে হল বটে জয়াবতীর, কিন্তু সে পাহাড় আর দেখেছে কোথায়? আসলে ছোটবেলা থেকেই পিতাঠাকুর শিবের স্তোত্র শিখিয়েছিলেন মুখে মুখে। সেই যে রজতগিরি নিভং, মানেটাও বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, রূপালি  রঙের গিরিতে বসে মহাদেব ধ্যান করছেন। গিরি মানে যে পাহাড় তা সে তখনি জেনেছে। তার এক সই ছিল গিরিবালা, তার মানে কি পাহাড়ের মেয়ে? তাহলে ওকে নুড়ি বলে ডাকলেই হয়। পিতাঠাকুর এমন অদ্ভুত কথা শুনে হেসে বলেছিলেন ‘পাগলি মেয়ে! গিরিবালা মানে গিরিরাজ হিমালয়ের মেয়ে উমা বা দুর্গা, শিবের ঘরণী’ শুনে তো মাথা ঝিমঝিম করছিল জয়াবতীর। এই বললেন গিরি মানে পাহাড়, এই বলছেন গিরি একজনের নাম, হিমালয় না কে যেন। তো সেই হিমালয় কি মানুষ না পাহাড়? জয়াবতী তো মানুষের ছেলেপিলে হয় শুনেছে, এমনকি কুকুর, ছাগল, বেড়াল, গরু এদের ছানাপোনাও দেখেছে, কিন্তু পাহাড়ের ছেলেপিলে? মা দুগগাকে দেখলে কে বলবে পাথর থেকে জন্মেছে? দিব্যি পুতুল পুতুল দেখতে। জয়াবতী বলেছিল ‘ মা দুগগার নাম আমি পাথরকুচি রাকলাম পিতাঠাকুর, পাপ দেন না যেন’ সেই থেকে শিবঠাকুর আর পাহাড়ের ওপর খুব টান জয়ার। ঘোড়াকে দেখে প্রথমে সেই পাহাড়ের কথাই মনে হল। শুধু সারা গাটা শাদা হলেই মানাত যেন। সে পুণ্যিকে ফিসফিস করে বলল ‘পাহাড়ের মতো উঁচু ঘোড়াটা, তাই না রে পুণ্যি? দেকে আমারই বুক ঢিপঢিপ করচে, তুই তো কোন ছার’ পুণ্যি ওর দিকে কটমট করে তাকাল। তার এখন তত ভয় করছিল না। এখানে আসার পর এই প্রথম বাড়ির বাইরে এল তারা। কী বড় সবুজ মাঠ, মাঠের চারদিকে বড় বড় গাছ, বিকেলের রোদ পড়ে এসেছে, বেশ ঠান্ডা একটা হাওয়া দিচ্ছে – খুব ভালো লাগছিল তার। সে জয়াবতীকে কানে কানে বলল ‘তোতে আমাতে মাঝেমাঝে বিকেলে এসে এই মাঠে দৌড়ব, কেমন?’
‘বাব্বা, এ যে দেকচি ভূতের মুকে রাম নাম! তবে কতাটা মন্দ বলিস নি। কী সুন্দর মাঠ, দেকে আমারই দৌড়তে ইচ্ছে করচে। চল’
বলে পুণ্যির হাত টেনে সত্যি সত্যি দৌড়তে শুরু করল জয়া। সেই দেকে সেনমশাই এত অবাক হলেন যে প্রথমটায় তাঁর মুখে কথাই সরল না। তারপর তিনি সহিসকে বললেন ‘দেখছ কী? মেয়েদুটিকে ধরে আনো’
সহিস বলল ‘আজ্ঞে কত্তা, আমি গেলে ঘোড়া কে সামলাবে? নতুন তেজি ঘোড়া, এখনো আদবকায়দা শেকেনি’
‘আমি যাই বাবা?’ বলে অনুমতির অপেক্ষা না করেই ছুটতে শুরু করল শ্রীমান প্যাকাটি মানে প্রাণনাথ সেন, যাকে বাড়িতে সবাই পানু বলে ডাকে।
দীননাথ সেন চোখ গোল গোল করে দেখলেন তাঁর পেটরোগা ছেলেটা, যাকে কেবল পুথি মুখেই বসে থাকতে দেখেছেন, সে পাঁই পাঁই করে দৌড়চ্ছে সারা মাঠে। পুণ্যিকে ধরেও ফেলেছে, কিন্তু জয়া তাদের ছাড়িয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। তিনি কবিরাজ মানুষ, তিনি জানেন, এইরকম বাইরের আলো, হাওয়া আর ব্যায়াম –এতেই তাঁর ছেলের শরীর দুদিনে সেরে উঠবে, ওষুধপাতি লাগবে না। কিন্তু শুধু এই কারণে না, অন্য একটি কারণে তাঁর মন প্রফুল্ল হয়ে উঠছিল। তিনটি ছেলেমেয়ে একসঙ্গে দৌড়চ্ছে এরকম দৃশ্য তিনি কবে দেখেছেন! এত পবিত্র এই দৃশ্য যে তাঁর মতো শক্ত লোকের চোখেও জল এল। সেই দেখে সহিস আশ্চর্য হয়ে বলল ‘এত চিন্তা করেন না কত্তামশাই। দাদাবাবু এসে পড়েচে ওই।’

জয়াবতী এল সবার আগে, পেছনে পানু, সবার শেষে পুণ্যি। সেনমশাইয়ের গম্ভীর মুখ দেখে তারই বুক গুড়গুড় করছিল। বাকিদের মুখ শুকিয়ে গেছে, এই বুঝি বকুনি খেতে হয়।
জয়াবতী হাত পা নেড়ে বলতে শুরু করে ‘ এই এত বড় মাট দেকে কার না দৌড়বার সাদ হয়, আপনিই বলুন সেনমশাই? বলি মাটটা আর কোন কাজে লাগচে? আর ছুটতে ছুটতে কী কী দেকে এলাম শুনুন, ওই একদম ওধারে একটা আমগাচে মস্ত মৌমাছির চাক, আর আর বল না কে, এই প্যাকাটি?’
‘হ্যাঁ বাবা, দেকলুম রামতারণ কবরেজের চর হারান ঘোড়াটার ওপর নজর রাকচে’      
দীননাথ সেন ধমকে উঠে বললেন ‘কেবল আষাঢ়ে গল্প’
জয়াবতী অমনি বলে ‘না সেনমশাই প্যাকাটি মানে পানু ঠিকই বলেচে, ঐ যে পচ্চিমদিকে যেখানে দেকুন কলকে ফুলের গাছ পরপর, ওরই আড়ালে নুকিয়ে ছিল কবরেজের চর। আমি কোত্তেকে জানব বলুন। প্যাকাটি মানে পানু দেকাল। ঐ তো বলল, রামতারণ কবরেজ দূর গামে যায় গরুর গাড়ি চড়ে, পাশ দিয়ে পিতাঠাকুর ঘোড়া হাঁকিয়ে আগে আগে চলে যায় বলে ভারি হিংসে, তাই তো আগের ঘোড়াটাকে বিষ খাইয়ে মেরে দিয়েছে।’
দীননাথ সেন এবার ভারি রেগে গেলেন। পানুর কান মুলে দিয়ে বললেন ‘খালি জেঠামো। জানো কারুর নামে প্রমাণ ছাড়া কোন দোষ দিতে নেই। আর এ তো মারাত্মক খুনের অভিযোগ।’
পানু অপমানে, দুঃখে ভ্যাঁ করে কেঁদে দিল। কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছেড়ে চলে যাওয়ায় তাদেরও আর সেখানে থাকার ইচ্ছে হল না। জয়াবতী আড় চোখে দেখল পুণ্যির চোখেও জল টলটল করছে। তারও গলার কাছটা কী যেন পুঁটুলি পাকাচ্ছে। সে আর থাকতে না পেরে বলে উঠল ‘কাজটা আপনি কি ঠিক করলেন সেনমশাই? পানু ভুল বলছে কিনা তার  প্রমাণ আপনি বুজি খতিয়ে দেকেচেন? দিলেন তো বেচারিকে কাঁদিয়ে। পুণ্যিটাও দেকুন ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ শুরু করল। আমার বাপু কান্নাকাটি একদম ভাল্লাগে না। আমিও চল্লুম’
দীননাথ সেন মশাই প্রমাদ গুনলেন। বাড়ি ফিরে তাঁকে মায়ের বকুনি খেতে হবে, আর পানুর মা তো মুখ গোমড়া করে থাকবেন।
 ( ক্রমশ)

ডানাওলা ট্রেন 

তুষ্টি ভট্টাচার্য

একটা ছোট মেয়ে বারান্দায় বসে আছে পা ঝুলিয়ে। পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে মনোযোগ সহকারে নীচের মাটি খুঁড়ছে ও। ওকে দেখে মনে হচ্ছে, এই বিকেলে, যখন সূর্য পিছনের পাহাড়ের ফাঁকে লুকোতে যাচ্ছে, বাতাসে একটা হিম হিম ভাব নেমে আসছে শুকনো উত্তপ্ত দুপুরের পরে, ঠিক এই সময়ে এই মাটি খোঁড়া ছাড়া যেন পৃথিবীতে আর কোনও কাজ থাকতে পারে না। ঝাঁকড়া চুল মুখ ঢেকে দিয়েছে ওর। আর সেই জন্যই, এবং মাটি খোঁড়ায় অতিরিক্ত মন দেওয়ার জন্য, ও খেয়ালই করেনি কখন যেন একদল সাঁওতালি মেয়ে এসে ওর সামনে দাঁড়িয়েছে।

    ওদের কোয়ার্টারের পিছনে যে পাহাড় আছে, সেখানে ওরা পাথর ভাঙে সারাদিন। বিকেল হলে লাইন পেরিয়ে ওদের গ্রামে যাওয়ার পথে মেয়েটার কোয়ার্টারের সামনে এসে ওরা রোজ এমনভাবেই দাঁড়ায় একগাল হাসি আর একটাই প্রার্থনা নিয়ে। ওদের চাহিদা ফুল। সামনের ফাঁকা জমিতে অজস্র গোলাপ ফোটে প্রায় সারাবছর। এই দেশের মাটিতে খুব ভালো সাইজের গোলাপ জন্মায়। ওদের দেখে মেয়েটার মা এসে ফুল দেয়, ওরা মেয়েটার সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করে, কিন্তু প্রত্যেকদিনই ব্যর্থ হয়। আসলে মেয়েটার তখনও ঘুমের ঘোর কাটেনি, তার মাটি খোঁড়া শেষ হয়নি যে!

      এখানকার ছোট্ট স্টেশনে মেয়েটা বাবার কাছে গিয়ে ঘুরঘুর করে। মালগাড়ি থেকে ওদের কোয়ার্টারের সামনে কয়লা গড়িয়ে ফেলে দিয়ে যায় খালাসি। কাঁচা কয়লার ধোঁয়ার গন্ধে মেয়েটার মন কেমন করে ওঠে। রাতে ওয়াগন ব্রেকিং করার ধুমধাম শব্দে নিস্তব্ধ রেলপাড়া, রেললাইনের সাথে মেয়েটাও ভয়ে কেঁপে ওঠে। পাশের কোয়ার্টারের একলা থাকা জেঠু তার কোয়ার্টারে ওকে ডেকে নিয়ে গেলে ওর মা চিলের মতো ওকে সেখান থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। কেমন একটা অন্য রকম গা ছমছমে অনুভূতির মধ্যে যখন তুমুল বৃষ্টি নামে, কোয়ার্টারের উঠোনে মেয়েটা আর তার সব সময়ের সাথী আর একটা মেয়ে ভিজতে ভিজতে মাটি খুঁড়ে গাছ লাগাতে বসে। তখন মা ওদের একটুও বকে না। তারপর ধুম জ্বর এলে, বাবা কোলে নিয়ে বসে থাকে সারা রাত। সেই জ্বর সহজে ছাড়ে না... ডবল নিউমোনিয়ার চোটে মেয়েটা যখন প্রায় মরে যাচ্ছে, সেই সময় স্বপ্নে একটা শিউলি ফুলের গাছ এসে প্রচুর শিউলি ঝরিয়ে দিয়ে যায় ওদের বাগানে। আর সেই গন্ধে ভোরবেলায় তার ঘুম ভেঙে যায়।
    
       রেললাইনের মতো সামনে এগোতে এগোতে মেয়েটা একটা প্রকাণ্ড বড় স্টেশনে এসে থামে এক সময়। কত কত লাইন এঁকেবেঁকে চলেছে, কত বড় বড় প্ল্যাটফর্ম, আর কত ভীড়! এত মানুষ থাকে পৃথিবীতে! আর তাদের কাউকেই ও চেনে না, আর তাদের সবাই প্রায় ঊর্ধ্বমুখে ছুটে চলেছে কেন – মেয়েটা কিছুতেই বুঝতে পারে না। এখানে আর কোয়ার্টার জোটেনি, একটা কাস্ট আয়রনের গ্রিল দেওয়া দোতলা বারান্দা দেওয়া ঘর ছিল তাদের। নীচে নামা বারণ ছিল, সামনের বড় রাস্তা দিয়ে অজস্র গাড়ি, রিকশা, সাইকেল, টাঙা ছুটে চলেছে। বারান্দার ঠিক নীচেই কতগুলো টাঙাওলা দাঁড়িয়ে থাকত। মেয়েটা মন দিয়ে ঘোড়াদের দেখত। সেই হাড়জিরজিরে খচ্চরদের দেখে ও রূপকথার ডানাওলা ঘোড়াদের কেমন দেখতে হয় কল্পনা করার চেষ্টা করত। আর ঠিক এই রকম সময়ে একদিন ওর লাগানো প্রথম গাছটার সাথে ওর দেখা হয়ে গেল। সে এখন বেশ ডাগরটি হয়েছে। ওরই মতো সবুজ কচি হাত, কচি ডালপালা। দুজনের দুজনকে চিনতে ভুল হল না। অনেক খেলল সেদিন ওরা। তারপর সেই গাছ চলে গেলে ও আবার ঘোড়া দেখতে থাকল।

     ঘোড়াদের যে ডানা হয় না, মেয়েটা জানল অনেক পরে। সেই যে তার বাবা-মা হিন্দি দেশ থেকে বাংলায় ফিরে এল – ও নাকি ভালো করে বাংলা বলতে পারছে না, কথায় হিন্দি টান এসে যাচ্ছে, বাংলা না শিখলে কী চলে! অতএব সেই থেকে নাস্তাউস্তার বদলে জলখাবার বলা শুরু হল। আর টাঙাদের, টাঙার ঘোড়াদেরও সে ভুলতে থাকল। এখানেও ট্রেন, রেললাইন আর স্টেশন ঘিরে ওদের কোয়ার্টার। এখানে অবসর সময়ে লাইনের ওপর ব্যালেন্সের খেলায় সহজেই পাখি হয়ে যেত ও। দুষ্টুমি পেলে মাটির ভাঁড় কুড়িয়ে এনে লাইনে সাজিয়ে রাখত আর তার ওপর দিয়ে ট্রেন চলে যেত বোমা ফাটাতে ফাটাতে। স্টেশনে বাবার কাছে গিয়ে টরেটক্কা দেখে, তার টকটক শব্দে বার্তা পাঠানো শুনে তার মনে হয়েছিল, সে কেন অমন ভাষায় কথা বলতে পারে না! যদি এমন হত – ও মুখ খুললেই টরেটক্কা টকটক... ছন্দের বোল ফুটত! এই স্টেশনেরই বুকস্টল থেকে প্রথম হাতে পাওয়া চাঁদমামা, আনন্দমেলা, শুকতারা। স্টলের বইকাকু শিখিয়ে দিয়েছিল, কী করে জামার ভেতরে পেটের মধ্যে লুকিয়ে নিয়ে যেতে হয় ওদের। মায়ের বকুনির হাত থেকে বাঁচতে এরকম কায়দার পাশাপাশি পড়ার বইয়ের ভেতরে গল্পের বই রেখে পড়ে ফেলা... এ তো সবাই করেছে এককালে ওর মতো। এখানেই পেয়ারা গাছের ডাল ধরে ঝোলাঝুলি, এখানেই প্যান্ডেল খাটানোর বাঁশের মাথায় উঠে দোল খাওয়া, কাবাডি কাবাডি বলতে বলতে এক দমে ছুঁয়ে দিয়ে আসা সাতজনকে। এখানেই স্কুল যাওয়া, ফেরার পথে গাছ থেকে আম পেড়ে খাওয়া, প্রথম কিছু একটা লিখে ফেলা শুধু শুধুই, এখানেই প্রথম ছেলে দেখা, প্রথম প্রেম......

     এখানে এসে ও যেমন জেনেছিল ঘোড়াদের ডানা হয় না, জেনেছিল সেই প্রথম লাগানো গাছটিকে দেখে চিনতে না-পারার ভান করতে হয় অলিখিত নিয়মের মতো, তেমনই জেনেছিল ট্রেনের ডানা হয়। ট্রেনের ডানা ছিল সেই প্রথম থেকেই, ও দেখতে পায়নি। আজ বেশ বুঝতে পারে, ও যখন বেড়াতে যেত ট্রেনে চেপে বাবা-মায়ের সাথে, তখন সেই ট্রেনের ডানা গজাত। ট্রেনের ভেতরে বসে থেকে সেটা ও বুঝতে পারেনি। স্টিম ইঞ্জিন থেকে কয়লার গুঁড়ো যখন ওর চোখে এসে পড়ত জানলা দিয়ে, বাবা একটা ভিজে রুমাল ধরিয়ে দিত হাতে। তাই দিয়ে ও চোখ ঢেকে রাখত বলে দেখতে পায়নি ট্রেনের ডানা। আবার যখন মালগাড়িটা কয়লা নামাতে আসত ওদের সেই কোয়ার্টারে, তখন ডানা গুটিয়ে রাখত এমনভাবে যাতে ও দেখতে না পায়। এসব লুকোচুরি খেলা, ওর আর ট্রেনের মধ্যে এখনও চলে। আজ ও ট্রেনের পাশে থাকে না, স্টেশনের পাশে থাকে না, কিন্তু শুনশান দুপুরে বা নিশুতি রাতে যখন দূর থেকে ইলেকট্রিক ট্রেনের বাঁশি শোনা যায়, ও বোঝে, সেই খেলাটা এখনও চলছে। শুধু এই খেলায় এখন ওর হেরে যাওয়াই নিয়ম। আসলে হেরে যেতে হয়। সেই যে ছোটবেলায় ও ট্রেনের ডানা দেখতে পায়নি, সেই থেকে ভীষণ অভিমানে বুঝি ওকে আর ডানা দেখাতে চায় না ওর ট্রেন। ট্রেন আর মেয়েটার মাঝে এখন একটা দূরত্ব থাকে। সেই দূরত্ব অবশ্য মনের নয়, পরিমাপের। এখন মেয়েটা ট্রেন লেখে। ট্রেনের ডানা আঁকে। সেই প্রথম গাছটিকে লিখে রাখে, লিখতে লিখতে ও ভাবে একদিন কোনও লাস্ট ট্রেন ধরতে গিয়ে ও ফেল করবে। আর ওরই চোখের সামনে দিয়ে ট্রেনের লেজটা অদৃশ্য হয়ে যাবে ধীরে ধীরে। ফাঁকা নিশ্চুপ স্টেশনে ও একা দাঁড়িয়ে থাকবে, কয়েকটা কুণ্ডলী পাকানো কুকুর আর ভিখিরির ঘুমের পাশে।     



রহস্যময় ছাতা 

স্বপ্ননীল রুদ্র

সকাল দুপুর রাত্রিবেলায়
বিমর্ষ ওই নন্দবাবু
চোরবাজারে ছাতা কিনে
বর্ষাকালে বড্ড কাবু

সস্তা ছাতা রংবাহারি
চায়না নাকি মেড ইন জাপান—
বোতামে টিপ দিতেই খোলে
ছাতায় আঁকা ফুলের বাগান


রোদ্দুরে বা মেঘলা সকাল
কিম্বা শীতের কনকনে দিন
বোতামে হাত ছুঁইয়ে দিতেই
ঝলমলিয়ে ফুটল রঙিন

 
কিন্তু জটিল রহস্য এক
খোলেনা সে বৃষ্টি এলে,
কয়েকশো বার বোতাম টিপে
নন্দ পালায় ছাতাই ফেলে!


আধুনিকতা
রকি হালদার
দশম শ্রেণী, আচনা হাইস্কুল, দক্ষিণ ২৪ পরগণা


আধুনিকতায় আসিয়া পড়িয়াছে,
 মোদেরে এ প্রজন্ম।
ফোন কম্পিউটার থেকে তাদের দূরে নিয়ে যাওয়া ,
এ বড় কঠিন কর্ম।।
আধুনিকতা গ্রাস করেছে তাদের এমন,
জানিনা তাদের দূঃখের ভবিষ্যৎতা কেমন।।
আধুনিকতা উঠে গেছে,
এতটাই চরম।
ফোন না দিলেই ,
তাদের মাথা বড়ই গরম।।
আধুনিকতাকে লাগাও যদি,
তোমার সূন্দর শিক্ষার কাজে।
তাহলে বজায় থাকবে মোদের সংস্কৃতি,
হবে না কেউ বাজে।।
হতে পারবেনা  পূরন,
মোদের এ আশা।
ইন্টারনেট করেছে যে, যুবসমাজের মনে বাঁসা।।
কোথায় মোদের সংস্কৃতি? কোথায় মোদের খেলার মাঠে তারা ।
ইন্টারনেটে ব্যস্ত এখন, দেশদুনিয়ার পাড়া।।
জীবনের রীতি যে পালটে গেছে ,
আসছে যে 
চরম আধুনিকতার ভ্রমর।
 ইন্টারনেটের ডুবে যাচ্ছে ভেঙে ,
এই যুবসমাজের নোঙড়।।


স্মরণীয়
(দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার)
কলমে - পীযূষ প্রতিহার

বাংলা রূপকথার কিংবদন্তি শিল্পী তথা শিশু সাহিত্যের অনন্য কথাকার দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার ১৮৭৭সালের ১৫ই এপ্রিল বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকা জেলার উলাইলের কর্ণপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন রমদারঞ্জন মিত্র মজুমদার ও মাতা কুসুমময়ী দেবী। বাল্যকালে মায়ের কাছে ও পরবর্তী সময়ে পিসিমা রাজলক্ষ্মী চৌধুরানীর কাছে থাকার সময় তাঁদের মুখে রূপকথার গল্প শুনে শুনে এক অপূর্ব সুন্দর জগতের সন্ধান পান দক্ষিণারঞ্জন।
      মাত্র দশ বছর বয়সে ১৮৮৭ সালে তাঁকে ঢাকার কিশোরীমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। ১৮৯৩ সালে তিনি ঢাকা জগন্নাথ কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। পড়াশোনায় অমনোযোগী হওয়ায় ও ফল খারাপ হলে তাঁকে তাঁর পিসিমা রাজলক্ষ্মী দেবীর কাছে টাঙ্গাইলে সন্তোষ জাহ্নবী হাইস্কুলে ভর্তি করা হয়। এরপর বাবার সঙ্গে মুর্শিদাবাদে পাঁচবছর বসবাস করেন। ১৮৯৮ সালে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর হাইস্কুল থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর কৃষ্ণনাথ কলেজে এফ. এ.। এই সময়েই তাঁর সাহিত্যের আঙিনায় প্রবেশ ঘটে। মুর্শিদাবাদে থাকাকালীনই 'প্রদীপ', 'সাহিত্য পরিষদ' প্রভৃতি পত্রিকায় প্রবন্ধ লেখা শুরু করেন। এই সময়েই 'সুধা' নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনাও করেন কিছুকাল। 
      এরপর পিতা রমদারঞ্জন মারা গেলে তিনি টাঙ্গাইলে পিসিমার কাছে চলে যান এবং কৃষিকাজে মন দেন। তাঁর আগ্রহ দেখে পিসিমা জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ব দিলে ময়মনসিংহে চলে যান। সেই সময় তিনি রূপকথার প্রায় হারিয়ে যাওয়া অমূল্য সব গল্পের সন্ধান পান। সেখানে থাকাকালীন বাংলাদেশের লোকজীবনের নানা বিষয়ে জানতে পারেন। প্রায় দশবছর ধরে বাংলার লুপ্তপ্রায় সাহিত্য নিয়ে গবেষণা ও সংগ্রহের কাজ করেন। পরে এই বিপুল লোকসাহিত্যের সম্ভারকে আর এক দিকপাল গবেষক দীনেশচন্দ্র সেনের আগ্রহে চারভাগে বিন্যাস করেন, যথা - গীতিকথা, ব্রতকথা, রূপকথা ও রসকথা। ১৯০৭ সালে দীনেশচন্দ্রের সহায়তায় কলকাতার 'ভট্টাচার্য এণ্ড সন্স' থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমিকা সহ 'ঠাকুরমার ঝুলি' প্রকাশিত হলে আলোড়ন সৃষ্টি হয় দেশে-বিদেশে। পরে পরে প্রকাশিত হয় 'ঠাকুরদাদার ঝুলি'(১৯০৯), 'ঠানদিদির থলে'(১৯০৯) এবং 'দাদাঠাকুরের থলে'(১৯১৩) ইত্যাদি। ১৯০৮সালে প্রকাশিত হয় স্বদেশী গানের সংকলন 'মা বা আহুতি'। ১৯১০ সালে ভারতের মহিয়সী নারীদের মহিমা বিষয়ে 'আর্যনারী'(২টি খণ্ড) এবং প্রাচীন ভারতের ধর্মচিন্তা বিষয়ক শিশুপাঠ্য 'সচিত্র সরল চণ্ডী'(১৯১৭) প্রকাশিত হয়। ১৯১২ সালে বাংলাদেশের ঢাকা থেকে 'তোষণী' পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় 'চারু ও হারু'। এছাড়াও তাঁর দেওয়া শিশু সাহিত্যের অমূল্য উপহার হল - খোকাবাবুর খেলা, আমাল বই, ফার্স্ট বয়, লাস্ট বয়, সবুজ লেখা, পৃথিবীর রূপকথা (অনুবাদ), চিরদিনের রূপকথা প্রভৃতি। ছোটোদের উপযোগী অসংখ্য কবিতা, ছড়া, গল্প ও জীবনী রচনা করেছেন তিনি। খুব ভালো ছবিও আঁকতেন তিনি। নিজের সমস্ত বইয়ের ছবি ও প্রচ্ছদ তিনি নিজেই আঁকতেন। দারুশিল্পের(কাঠের উপর শিল্প) খুব ভালো শিল্পী ছিলেন তিনি।
      ১৯৩০-৩৩ সাল পর্যন্ত বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের সহ-সভাপতি ছিলেন দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার। এছাড়াও ছিলেন এখানকার 'বৈজ্ঞানিক পরিভাষা সমিতি'র কার্যকরী সভাপতি ও পরিভাষা রচয়িতার দায়িত্বে। উক্ত পরিষদের মুখপত্র 'পথ' এর সম্পাদক ছিলেন তিনি। ঢাকা বান্ধবসমাজ তাঁকে 'কাব্যানন্দ' উপাধি দিয়েছিল। কলিকাতা সাহিত্য সম্মেলনে 'বানীরঞ্জন' উপাধি ও শিশুসাহিত্য পরিষদের 'ভুবনেশ্বরী পদক' লাভ করেছিলেন তিনি।
     এই রূপকথার শিল্পী ও অসাধারণ প্রতিভাবান গল্পকার ১৯৫৬সালের ৩০মার্চ কলকাতার নিজ বাসভবন 'সাহিত্যাশ্রম' এ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।


ধারাবাহিক ভ্রমণ
চলো যাই
(পাখিদের কাছে)
কলমে - বাসবদত্তা কদম

পর্ব ৭
 সেই যে হচ্ছিল কোদালে বক, খুন্তে বক, এদের কথা, এদের শিকার ধরার কৌশল খুব মজার। জলের মধ্যে চামচে ঠোঁট দুখানা ফাঁক করে, ডুবিয়ে দেয়। নিজেরা চুপচাপ ভাসতে থাকে। অপেক্ষা করে। চামচের মধ্যে যেই মাছ বা কোনো খাদ্য এলো, খপাৎ। ঠোঁট বন্ধ হয়ে গেল। 
এই কোদালে বা খুন্তে বক, অথবা কাস্তে বকেদের কথা অথবা এই বকেদের কাছাকাছির সেইরকম আরো যে সব পাখি আছে- যেমন ধর সারস। এদের দূর থেকে দেখলে চেনা বেশ মুশকিল, কিন্তু এরা সবাই আলাদা আলাদা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত।
যেমন ধরো এই বক আর সারস, এদের দূর থেকে দেখলে আমি কিছুতেই চিনতে পারিনা আলাদা করে। সেই লম্বা পা। একই রকম চেহারা। স্বভাব আর খাদ্যও প্রায় একইরকম। কিন্তু গোত্র এক নয়। 
বক আর সারসদের চিনে নেবার একটা ছোট্ট কিন্তু সহজ উপায় শিখে রাখো চুপিচুপি- বক যখন ওড়ে ঐ যে লম্বা গলা (যেটা দিয়ে শিকার ধরে গো) সেই গলা ভাঁজ করে ওড়ে। আর সারস ওড়বার সময় তার গলাখানা লম্বা করে রাখে। কি অদ্ভুত না! দেখতে অনেকটা এক কিন্তু স্বভাবে এক নয়। আসলে আলাদা আলাদা বাড়ির সদস্য কিনা!
সারসের খাদ্যাভ্যাস অনেকটাই বকেদের কাছাকাছি। ছোট ব্যাঙ, সাপ থেকে পোকামাকড়, জলের থেকে ছোট মাছ। এমনকি ফল, সবজি, শস্যও। সোজা কথায় যখন যেমন জোটে সারস তাই খায়।
সারস সেই কর্ডাটার পক্ষী শ্রেনীর গ্রুইডি পরিবারের গ্রুইফর্মেশ(Gruiformes) এর সদস্য।
সারসও যে কত রকম আছে। 
পাতি বকের মতন পাতি সারস। তারপর ঝুঁটির নাম অনুযায়ী অনেক রকমের সারস আছে যেমন লাল ঝুঁটি সারস, কালো ঝুঁটি সারস, মেটে ঝুঁটি সারস, কালো গলা সারস, অস্ট্রেলিয়ান সারস, সাইবেরিয়ান সারস, দেশি সারস। এরকম ১৪ বা ১৫ রকম সারসের খোঁজ পাওয়া যায়। 
সাইবেরিয়ান সারস আকৃতিতে বেশ বড়। বিভিন্ন দেশে এদের দেখা পাওয়া যায়। বিশেষত এশিয়া মহাদেশেই মূলতঃ এদের দেখা পাওয়া যায়। কিন্তু এই প্রজাতিটি আশঙ্কাজনক ভাবে লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। 
অস্ট্রেলিয়ান সারস এদের অস্ট্রেলিয়া নিউগিনি এইসব অঞ্চলেই দেখা যায়। এরাও আকৃতিতে বেশ বড়। 
দেশি সারস আমাদের দেশে সব থেকে বেশি এদের দেখা যায়। এরা জোড়া বেঁধে থাকে সারাজীবন। আর অনেকসময় জোড়ার একটি মরে গেলে, আরেকটি একলাই থেকে যায়।
তবে সারসের এই বৈচিত্র পৃথিবী জুড়েই পক্ষীবিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন। এরা নির্দিষ্ট জোড়ায় বসবাস করতে ভালবাসে। এদের প্রত্যেক জোড়ার একটি এলাকা থাকে সেখানে বাইরের পাখির প্রবেশ খুব বেশি পছন্দ করে না।  
সারস বাসা বানায় জলের আশেপাশে। ডিমে তা দেয় পুরুষ ও স্ত্রী পাখি। আর সব থেকে আশ্চর্য এদের বাচ্চারা মা বাবার সঙ্গে থাকে প্রায় একবছর। যতদিন না মা পাখি আবার ডিম পাড়ে।
এরা ছাড়াও ঐ ভেদানথাঙ্গলে ছিল অজস্র পানকৌড়ি। এই পাখিটি সাধারনতঃ যে সমস্ত জলাশয়ে মাছ বেশি, তার আশেপাশে দেখা যায়। এই অঞ্চলে দেখলাম অজস্র পানকৌড়ি।
মনে আছে তো সেই লাইনটা ‘চুপ চুপ ঐ ডুব দেয় পানকৌড়ি…’ পানকৌড়ি(Cormorant) এরা অসম্ভব সাঁতার পটু হয় আর ডুব সাঁতার দিয়ে জলের অনেক নীচ পর্যন্ত গিয়ে মাছ শিকার করে আনে।
পানকৌড়ি বেশ কয়েক রকমের হয় তবে এদের শরীরে কালো রঙের প্রাধান্য বেশি থাকে। এরা সমুদ্র বা নদীর ধারে কিংবা পাহাড়ের খাঁজে বাসা বানায় ডালপালা দিয়ে। এদের ডিম ফুটে ছানা বের হতে চার-পাঁচ সপ্তাহ সময় লাগে। 
এইখানে রাঙা মানিক জোড় (Painted stork) পাখি ছিল প্রচুর। এদের কমলা রঙের লম্বা ঠোঁট, ডানায় সাদা কালো আর হালকা লাল বা গোলাপীর ছিটে ছিটে দাগে এদের অপূর্ব সুন্দর দেখতে লাগে। এদের বাংলায় রঙ্গিলা বক বা সোনা জঙ্ঘা বকও বলা হয়। সারা পৃথিবীর এক বিশাল অঞ্চল জুড়ে এই পাখি দেখা যায়। 
আমরা দেখলাম গাছের ওপর এদের বাসা। কারুর বাসায় ডিম। কারুর বাসায় ছোট্ট ছানা। ছানাগুলো কিন্তু সাদাটে। খুব রংচঙে নয়। বড় পাখিরা ছানাদের খাওয়াচ্ছে। কেউ তাদের পরিষ্কার করে দিচ্ছে। কেউ নিজের গা পরিষ্কার করে আরো সুন্দর হয়ে উঠছে।
এই মানিক জোড় বা Painted stork সেই কর্ডাটার পক্ষী শ্রেনীর সাইকনিফর্মস(Ciconiiformes) বর্গের সাইকোনিডি(Ciconiidae) পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। 
এই অঞ্চলে যদিও এই পাখি দেখলাম প্রচুর। তবে এই পাখির সংখ্যা আজকাল বেশ কমে গেছে।
এদের খাদ্য অগভীর জলাভূমির মাছ, পোকা ইত্যাদি। জলের পাশের কাদায় ঠোঁট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে খাবারের খোঁজ করে ঠোঁট ফাঁক করে। খাদ্য পেলেই ঠোঁট বন্ধ হয়ে যায় খপাৎ করে। 
এরা জলাভূমির কাছে, গাছের উপর মাচার মত বাসা বানায়। পাখির বাসা হিসেবে এর আয়তন বেশ বড় বলা যায়। এরা ডিম পাড়ে ১০-১৫ দিনের বিরতিতে। তাই কোনো ডিম আগে ফোটে, কোনোটা পরে। আর ডিমে তা দেয় পুরুষ ও স্ত্রী পাখি উভয়েই। (ক্রমশঃ)


পাঠপ্রতিক্রিয়া
(জ্বলদর্চি ছোটোবেলা ৭৭ পড়ে কবি ও গল্পকার স্বাগতা ভট্টাচার্য যা লিখলেন) 

লেখিকা মৌসুমী সম্পাদিকা হিসেবে জ্বলদর্চিকে একটা দারুণ জায়গা করে দিয়েছে ।শিশুদের নিয়মিত সাহিত্যের চর্চা এবং ধারাবহিকভাবে বিভিন্ন রকম লেখায় সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে এই ওয়েব ম্যাগাজিন । জ্বলদর্চি ছোটবেলার সাতাত্তর তম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে ।সম্পাদিকা আমার কাছে পাঠ পতিক্রিয়া চাওয়ায় নিজেকে সম্মানিত অনুভব করছি ।বাচ্চাদের জন্য মৌসুমীর এই সাহিত্যের সেতু বন্ধনে কাঠবেড়ালি হতে পারাও আনন্দের ।
সম্পাদকীয় লেখা পড়ে আমিও জানলাম মহুয়া ফুলের এতো গুণ! ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত-জয়যাত্রা পড়ার জন্য অপেক্ষা আমিও করি ।সু লেখিকার কলমের ধার এমনই হয় ।পুর্ণ্যি আর জয়বতী  আমাকেও আকর্ষণ করে।একাদশ শ্রেণীর অহনা মিত্রের আঁকা মীরাবাঈ আমাকে মুগ্ধ করেছে ।আরেকটা ছবি সপ্তম শ্রেণীর স্নেহা দাস এঁকেছে বেশ সুন্দর ।
দীপক কুমার মাইতির লেখা ধাঁধা গল্পটা বেশ লাগলো ।যত বড় হই না কেন রূপকথার গল্প শুনতে বা পড়তে এখনও ভালো লাগে।
সবিতা বিশ্বাসের-হলুদ ফুলের ঢেউ এবং রেনেসাঁ গংগ্যোপাধ্যায়ের হাসি-কবিতাটি বেশ সুন্দর ।পীযূষ প্র্তিহারকে ধন্যবাদ যামিনী রায় সম্পর্কে এতো কিছু বিশদভাবে জানাবার জন্য ।একজন  চিত্রশিল্পী ছাড়া যামিনী রায় সম্পর্কে এতকিছু জানা ছিল না ।ঋদ্ধ হলাম ।বাসবদত্তা কদমের ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনী পড়তে খুব ভালো লাগে ।এতো পাখিদের সম্পর্কে তথ্য অবাক করে ।দিন দিন আরো শ্রী বৃদ্ধি হোক এই পত্রিকার ।মৌসুমী যেভাবে হাল ধরেছে তাতে শিশুরা নিজেদের প্রতিভা মেলে ধরার একটা প্ল্যাটফর্ম পেয়েছে ।আগামীদিনের নাগরিকরা নিজেদের মনকে বিকাশ ঘটাবার এই মাধ্যমকে যথাযথভাবে ব্যবহার করছে দেখে ভালো লাগছে ।আগত নতুন বছরের শুভেচ্ছা এবং ভালবাসা জানালাম ।

 আরও পড়ুন 
জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments