জ্বলদর্চি

তিনি সর্বাগ্রে অধ্যাত্মসাধক, পরে অন্য কিছু /সুগত ত্রিপাঠী


তিনি সর্বাগ্রে অধ্যাত্মসাধক, পরে অন্য কিছু

সুগত ত্রিপাঠী


বন্ধুস্থানীয় এক অধ্যাপককে দিন কয় আগে জিজ্ঞেস করেছিলাম, 'দিলীপকুমার রায়ের কোনও কালেকশন তোমার কাছে আছে ?' উত্তর এসেছিল, 'মালটা কে ?'
          দিলীপকুমার-বিস্মৃতি বাঙালির এই পর্যায়ের। বাংলার অধ্যাপক মশাইয়েরই যদি উক্ত ব্যাপার হয়, আপামর জনসাধারণের কী অবস্থা— বলাই বাহুল্য।

          আসলে এসব ঘটনার কোনও ব্যাখ্যা পাওয়া কঠিন। অনেক সময়ই দেখা যায়, খুব প্রতিভাবান মানুষও পেছনে পড়ে থাকেন, লোকে ভুলে যায় তাঁকে। আবার অনেক স্বল্পবিত্ত ('বিত্ত' অর্থে 'ক্ষমতা' এখানে) লোকও দিব্যি জাঁকিয়ে বসেন।

          দিলীপের প্রতিভার তো অভাব ছিল না। অভাব বলি কেন, প্রাচুর্যই ছিল। সুগায়ক, সুলেখক, অধ্যাত্মসাধক মানুষটি বহু অর্থেই ছিলেন অনন্য। তাঁর 'স্মৃতিচারণ' গ্রন্থটি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ-সংকলন হিসেবে গণ্য হওয়ার যোগ্য। অন্যান্য রচনাও ভাবের ঐশ্বর্যে সমুজ্জ্বল। লিখেওছিলেন প্রচুর। 'সাঙ্গীতিকী', 'অঘটন আজো ঘটে', 'যোগী শ্রী কৃষ্ণপ্রেম' তাঁর রচিত কয়েকটি বিখ্যাত গ্রন্থ। 'অ্যামং দ্য গ্রেট' গ্রন্থে তিনি যাঁদের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে এসেছিলেন— বার্ট্রান্ড রাসেল, রবীন্দ্রনাথ, ঋষি অরবিন্দ, মহাত্মা গান্ধী, রোমা রোলাঁ— তাঁদের সম্পর্কে বলেছেন।  

       গায়ক হিসেবে যে তিনি কতখানি অতুলনীয়, তা আজ আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাঁর গায়নভঙ্গি যুগপৎ অননুকরণীয় ও অনবদ্য। 'যদি দিয়েছ দিয়েছ, দিয়েছ বঁধুয়া', 'সখী মোর প্রাণধন', 'আঁধার নিশা', 'মন্ত্রময়ী', 'এই পৃথিবীর পথের পরে' , 'ধনধান্যে পুষ্পে ভরা', 'মোহে চাকর রাখো জি' , 'বঙ্গ আমার জননী আমার' প্রভৃতি গানগুলি যথার্থই তাঁর 'গোল্ডেন ভয়েস'-এর যোগ্য অনুসারী। উত্তরকাশীতে অবস্থান করছেন যখন পরমসাধক শ্রীশ্রীসীতারামদাস ওঙ্কারনাথ ঠাকুর, 'গঙ্গাস্তোত্রম' শুনিয়ে তাঁকে মুগ্ধ করেছিলেন দিলীপ। সাধু আনন্দে আলিঙ্গনাবদ্ধ করেছিলেন শিল্পীকে। অতি শুদ্ধাচারী ওঙ্কারনাথজি উঁচু ধারণা পোষণ করতেন দিলীপের উচ্চ আধ্যাত্মিক অবস্থা সম্পর্কে। আর আমরা তো সবাই জানি, আধ্যাত্মিকতা একজন মানুষকে যতখানি বিশুদ্ধ বা পিউরিফাই করতে পারে, অন্য কোনও উপায়ে সেটা সম্ভব হয় না। 'আই সিং হোয়াট আই ফিল'— দিলীপকুমারের এই বিখ্যাত উক্তি থেকেই বোঝা যায়, কেন তাঁর গান এতখানি খাঁটি।

     দিলীপকুমারের 'সেই বৃন্দাবনের লীলা অভিরাম' গানটিকে অনেকে গায়কের সর্বশ্রেষ্ঠ গান বলে মনে করেন। কেউ আবার গানটিকে গত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত বলেছেন। দুটি  মন্তব্যের কোনওটিই অতিশয়োক্তি নয়। প্রথম কথা, গানটির অপূর্ব সুর। সুর এত উচ্চস্তরের ও সুমধুর যে গান শোনার পরে বহুক্ষণ রেশ থেকে যায়। দ্বিতীয়, গানের অসাধারণ বাণী। গানটির শেষদিকে সাধক-গায়ক যখন বলছেন, ' ওরা হাসে আর বলে হায় রে মধুর স্বপন/বলে কৃষ্ণকাহিনী কল্পনা কবি-কথন/ওরা হাসে ওরা হাসে—জানেনা তাই হাসে,/ওরা মানেনা তাই হাসে—আমি মানি তাই জানি/আমি অন্তরে তোমার বাঁশরি শুনেছি তাই বঁধু আমি জানি।/তখন এসব কথা তো শোনেনা আমার শ্রবণ/ব্রজ রমণীর কথা আর সে রমণী-রমণ—' তখন ভক্তহৃদয়ের যে আর্তি প্রকাশ পায়, তা তুলনাহীন। অর্থাৎ কবি (এ গান দিলীপকুমারেরই রচনা) এখানে বলছেন, কৃষ্ণলীলা অনেক মানুষের কাছেই উপহাসের বস্তু। তাদের এসবে বিশ্বাস নেই। তাদের কাছে এসব কবির কল্পনা ছাড়া কিছু নয়। কিন্তু ভক্তের কাছে এ লীলা ধ্রুবসত্য। কেননা অন্তরে তিনি অনুভব করেছেন সে লীলার অপরূপ রূপমাধুর্য। খুব উচ্চকোটির সাধক ছাড়া এ জাতীয় কাব্য রচনা অসম্ভব। আর অবশ্যই বলতে হয় গায়ক হিসেবে দিলীপকুমারের অনন্যতার কথা। তিনি কার কার কাছে নাড়া বেঁধেছেন, দিনে কত ঘন্টা রেওয়াজ করতেন— এসব প্রশ্ন পেছনে চলে যায় এ গান শুনলে। কন্ঠমাধুর্য অনেকেরই আছে, কিন্তু সেই মাধুর্যের সঙ্গে যখন যথার্থ ঈশ্বরভক্তি মিশ্রিত হয়, তা স্বর্গীয় রূপ ধারণ করে। এ গানে ঠিক তা-ই হয়েছে। তাই এ গান অবিস্মরণীয়, অনির্বচনীয়, অতুলনীয়। একই রকম আর একটি মাস্টারপিস 'জ্বলবার মন্ত্র দিলে মোরে।'

    দিলীপকুমারের গায়কি সম্পর্কে আরও বলা যায়— তা ছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী। এ বিষয়ে তিনি এক এবং অদ্বিতীয়। তাঁর গান সঠিকভাবে গাওয়া প্রায় দুঃসাধ্য। স্বর্ণকন্ঠ ছিল দিলীপের, কিন্তু তাঁর গানের গঠন অতীব জটিল-কঠিন। তাঁর গান শুনে মাঝে মাঝে মনে হয়, এভাবে গাওয়া-ও সম্ভব ! গলাকে নিয়ে যা খুশি তাই করছেন। নদীর কলতান, সমুদ্রের হিল্লোল— সবই তাঁর কন্ঠে সুলভ। কোনও কোনও সময় উচ্চারণ অতিমাত্রায় মৃদু, কখনও অস্ফূট, আধো-আধো। পরক্ষণেই সতেজ। কিন্তু যা-ই করুন না কেন, অপরূপ মাধুর্য বিতরণ করছে। গলার কারুকাজ অনবদ্য। বোঝাই যায়, উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে অসামান্য দখল। দেশি-বিদেশি সঙ্গীত গুলে খেয়েছিলেন তো। আর অনায়াসে গাইতেন। সোজা কথায়, সঙ্গীতকে তিনি আত্মস্থ করেছিলেন। সম্ভবত, সঙ্গীত প্রথমে ছিল তাঁর কাছে সাধনা, পরে গান। তাঁর গানের মূল সুর আধ্যাত্মিকতা। একটা আত্মনিবেদনের ভাব তাঁর প্রায় সমস্ত সঙ্গীতে ফুটে উঠেছে। যে-ভাবে হোক, ঈশ্বরের কাছে পৌঁছোতে তিনি বদ্ধপরিকর। তাঁর রচিত সঙ্গীতের কথা-সুরও তাই সেই অনুসারী। প্রসঙ্গত, পাশ্চাত্য সঙ্গীত সম্পর্কে তিনি বলেছেন, 'ওদের গানে সব আছে, শুধু প্রাণের পরশ নেই। হৃদয়ের যোগ ওদের সঙ্গীতে বড় অল্প।'

      শরীরটি ছিল দিব্যকান্তিময়। বসার ভঙ্গি ঋজু। সদা প্রফুল্ল মুখমণ্ডল। দেখলেই বোঝা যায়, উচ্চস্তরের মানুষ। রঙ্গ-রসিকতাও করতে পারতেন খুব।

    রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর অজস্র পত্রবিনিময় হয়েছে। তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। অধিকাংশই সঙ্গীত সংক্রান্ত। কখনও রবীন্দ্রনাথ বিরক্ত হয়েছেন। কখনও সুন্দরভাবে বুঝিয়েছেন। দিলীপ বলেছিলেন, 'আপনার গান যদি আপনার নির্দেশিত পথের বাইরে গিয়ে কেউ সুন্দরতরভাবে প্রকাশ করে, তাকে আপনি গ্রহণ করবেন না ?' উত্তর দিয়েছিলেন কবি, 'সেটা তখনই গৃহীত হবে, যদি আমার গানে অসম্পূর্ণতা থাকে। কিন্তু আমি তো সৃষ্টিতে সে ত্রুটি রাখিনি।' তাই রবীন্দ্রনাথকে বলতে শোনা গেছে, 'দিলীপ আমাকে দিয়ে অনেক কিছু বলিয়ে নিয়েছে। তার জন্য আমি তাকে সাধুবাদ দিই।'

       দিলীপকুমারের প্রসঙ্গ আলোচনায় সঙ্গতভাবেই চলে আসবে তাঁর অতি প্রিয় শিষ্যা উমা বসুর কথা। স্বল্পায়ু, অসামান্য প্রতিভাময়ী এই গায়িকার অন্তত একটি গান, যাঁরা এ শিল্পীর নাম পর্যন্তও হয়তো শোনেননি, তাঁদের শুনতে অনুরোধ করি— 'মধু মুরলী বাজে'। এ গানের কথা-সুর দিলীপকুমারেরই।

   গায়ক হিসেবেই দিলীপকুমারকে বেশিরভাগ মানুষ চেনেন। তাঁর পরিচয় দিতে গেলে প্রথমেই বলা হয়, তিনি একজন গায়ক। কিন্তু দিলীপকুমারের জীবনের মূল লক্ষ্য ছিল না গায়ক হওয়া। স্বমুখে তিনি বলেছেন, 'আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়েছে যে গ্রন্থটি, তার নাম শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত। এই গ্রন্থটি পড়ার পরে আমি উপলব্ধি করি ঠাকুরের কথাগুলি। এবং বুঝতে পারি— জীবনের মূল লক্ষ্য সঙ্গীত নয়, সাহিত্য নয় ; ঈশ্বরলাভ-ই মানুষের জীবনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।'

   পরবর্তীকালে তাই তিনি বেছে নিয়েছিলেন যোগীজীবন। গ্রহণ করেছিলেন ঋষি অরবিন্দের ভাবধারা। কতখানি তৈরি ছিল দিলীপের মন, এ ঘটনা থেকেই সেটা বোঝা যায়। 'শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত' যখন তাঁর হাতে আসে তখন তাঁর বয়স তেরো। সেই বয়সেই তিনি ওই বইয়ের মর্ম উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। একে কী বলা যায় ? পূর্বজন্মের সুকৃতি, সংস্কার ? তাই হয়তো হবে। নচেৎ অসংখ্য মানুষ রাত-দিন 'শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত' পড়ছেন। যোগীজীবন গ্রহণ করেছেন ক'জন ? ঈশ্বরের জন্য চরম ত্যাগ স্বীকার করতে ক'জনকে দেখা গিয়েছে ? নিজেকে দিলীপ পরিচয় দিতেন 'জিজ্ঞাসু' অর্থাৎ 'ট্রুথ সিকার' বা সত্যসন্ধানী বলে। তাঁকে কেউ 'যোগী' কিংবা 'সেন্ট' বললে সেটা তিনি ঠিক মেনে নিতেন না। বলেছেন, 'যে কাজই করি না কেন, সর্বদাই মনটা ঈশ্বরের দিকে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কম্পাসের মতো রেখেছি মনটাকে ভগবানের দিকে।' উচ্চশিক্ষিত, পণ্ডিত মানুষ। কেমব্রিজে পড়াশোনা করেছেন। বিখ্যাত পিতার পুত্র (সবাই জানে— দ্বিজেন্দ্রলাল রায় তাঁর পিতা)। সাহিত্যিক, সঙ্গীতজ্ঞ। কিন্তু সর্বোপরি দিলীপকুমার অধ্যাত্মসাধক। তাঁর সম্পর্কে কিছু বলতে বা লিখতে গিয়ে অনেকে এই ভুলটা করে বসেন। অর্থাৎ, তাঁর সঙ্গীতসত্তা কিংবা সাহিত্যসত্তা নিয়ে আলোচনায় অনেকের উৎসাহ দেখা যায়, কিন্তু তাঁর অধ্যাত্মসত্তা নিয়ে আলোচনায় সে-রকম আগ্রহ দেখা যায় না। এটা একটু আশ্চর্যের। মানুষটা নিজেকে যেভাবে পরিচয় দিতেন, রন্ধ্রে তিনি যা— সেটা সরিয়ে রেখে তাঁর গৌণ বৈশিষ্ট্য-পরিচয় নিয়েই লোকে বেশি মাতামাতি করে।

      সাধু তো সাধু— যথার্থ সাধু। সর্বত্যাগী। প্রভূত পৈতৃক সম্পত্তির মালিক। সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছিলেন ঋষি অরবিন্দের পণ্ডিচেরীর আশ্রমের উন্নতিকল্পে। গান গেয়ে অর্থ উপার্জন করে আশ্রমকে দিয়েছেন। আশ্রম মানে কী ? অধ্যাত্ম-উন্নতির স্থান। তাই তাঁর এই আন্তরিক প্রচেষ্টা। নিজে উন্নত হব, অপরের উন্নতিতে সহায়তা করব। ঈশ্বরপ্রেম ও মানবপ্রেমের অপরূপ মেলবন্ধন। শুধু সততার জন্যই দিলীপকুমার চিরপ্রণম্য হয়ে থাকতে পারেন।

      দিলীপকুমারের অত্যন্ত প্রিয় বন্ধু তথা শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। তাঁর সম্পর্কে দিলীপ বলেছেন, 'সুভাসের মতো এরকম দেশভক্ত আমি আর কাউকে দেখিনি। এই লোকটি অসাধারণ।' আর পছন্দ করতেন বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সান্নিধ্য। রতনে রতন চেনে বটে ! রবীন্দ্রনাথের প্রতিও অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল ছিলেন দিলীপ। অকুণ্ঠচিত্তে তাঁকে 'মহাকবি' বলেছেন, কিছু মতভেদ থাকা সত্ত্বেও। স্বীকার করেছেন পরবর্তীকালে, সঙ্গীত বিষয়ে কবির মতামত তাঁর নিজের মতের তুলনায় অধিকতর যুক্তিযুক্ত ছিল। তাঁর জীবনে আর যে মানুষটি প্রভাব বিস্তার করেছিলেন, তিনি রোমা রোলাঁ। আর রোলাঁও এই ভারতীয়ের সঙ্গীত ও জীবনদর্শনে গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন।

       ঊনবিংশ শতাব্দী এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ বাংলায় এক নতুন যুগের সূচনা করেছিল। কাব্য, শিল্প, সাহিত্য, দর্শন, অধ্যাত্ম-চেতনা, সমাজ-সংস্কার— সর্বক্ষেত্রে যুগপুরুষদের আবির্ভাবে এই সময়কাল সমুজ্জ্বল। এই যুগেরই এক উজ্জ্বল প্রতিনিধি দিলীপকুমার রায়।    তাঁর মতো বহুমুখী প্রতিভা বাংলা কম পেয়েছে।

      দিলীপকুমার সম্পর্কে অন্নদাশঙ্কর রায় কিছু কথা বলেছেন। তার মধ্যে একটি এইরকম— 'দিলীপকে আমি যতদূর জানি, বিবাহবন্ধন তাঁর জন্য নয়। তিনি চিরপলাতক। আর একনিষ্ঠতাও তাঁর হৃদয়ে ছিল কিনা সন্দেহ।' ('দিলীপকুমার জন্মশতবর্ষ') একটু ভেবে দেখলে বোঝা যায়, মন্তব্যটি যেমন উদ্ভট তেমনই অস্বাভাবিক। যিনি বিবাহবন্ধনে নিজেকে বাঁধেন না, তিনি 'চিরপলাতক' হয়ে গেলেন কোন যুক্তিতে, বোঝা গেল না। তাহলে বিবেকানন্দ 'চিরপলাতক', 'চিরপলাতক' ভারতবর্ষের অসংখ্য নমস্য সাধু-মহাপুরুষরা। মানুষকে বিচার করতে হয় তার কাজের নিরিখে। কে বিয়ে করল, না-করল— ওটা কোনও কথা নয়। আর, 'একনিষ্ঠতাও তাঁর হৃদয়ে ছিল কিনা সন্দেহ'— এই মন্তব্যের সমর্থনে তিনি কোনও গ্রহণযোগ্য যুক্তি দিতে পারেননি। অযৌক্তিক মন্তব্য করে সাময়িক বাজার গরম করা যায়, স্থায়িত্ব পাওয়া যায় না।

     দিলীপকুমার সম্পর্কে কিছু লিখতে বসলে মনে হয়, তিনি তো প্রাচীন যুগের মানুষ ছিলেন না। তথাকথিত সত্যযুগের মানুষ তো ছিলেন না তিনি। এই সমস্ত মানুষের আদর্শ থেকে পরবর্তী প্রজন্মের অধিকাংশ এতখানি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল কী করে ? তাঁকে ভুলে থাকা বাঙালি তথা ভারতবাসীর আন্তরিক লজ্জার— নতমস্তকে একথা স্বীকার করতে হয়। 

          তবে এ বিশ্বাস ব্যক্তিগতভাবে অন্তত রাখি, দিলীপকুমার রায় একদিন-না-একদিন পুনরাবিষ্কৃত হবেনই। আবিষ্কৃত হবেন তিনি নিজের যোগ্যতায়। সূর্য যেমন স্বপ্রকাশ, এঁদের মতো মানুষও তাই। দেশবাসী সেদিন বুঝবে, কাকে এতদিন তারা বিস্মৃত হয়ে ছিল।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇



Post a Comment

1 Comments

  1. ঠিক! একদিন তিনি পুনরাবিস্কৃত ও প্রতিষ্ঠিত হবেনই।

    ReplyDelete