জ্বলদর্চি

উত্তরীয় খুলে রেখেছি চেয়ারের উপর /পলাশ দাস


উত্তরীয় খুলে রেখেছি চেয়ারের উপর 

পলাশ দাস

১. 
এক এক করে ভেঙে পড়ছে এক এক করে হারিয়ে যাচ্ছে, চা তোলা চামচটা কিছুদিন আগে ভেঙে গেল, তারপর জলের বালতিতে ধরা পড়ল ফুটো, রোদে চোখ রেখে একটা সরষের দানা গলে যাওয়া ছিদ্র দেখেই তাকে বাতিলের দলে লিখিয়ে ফেলতে হল নাম, টেবিল ভাঙছে, ভেঙেছে চেয়ারের পায়া, বহুদিন আগেই ঘুণ ধরেছিল, রোজ রাতে সব আলো নিভে গেলে ভোর পর্যন্ত শোনা যেতে দংশন, কোনোরকমে ভেঙচি কেটে চলছিল টিভিটা এবার তার পালা। 

ভাঙছে একটা একটা করে ভেঙে পড়ছে। বহুদিন ধরে পাশে থেকে থেকে এরাই আত্মীয় পরিজন। তাই অক্ষমতা আরও এগিয়ে আসছে বুকের খুব কাছে।  


২.
দু একটা লাল ফুল সাদা ফুল ফুটে থাকতে দেখতাম ছাঁচির কোল ঘেঁষে সেই প্রথম ফুল চিনতে শেখা সেই প্রথম গন্ধের সাথে পরিচিত হওয়া। তারপর একে একে হলুদ বেগুনি কত কত ফুল। বাহারি তাদের নাম। চেনা হল জানা হল গন্ধ ভিন্ন বুঝে নেওয়া শেষ হলে এক হেমন্তের বিকেলে ঝোলা হাতে কোনো এক দিকশূন্যপুরের পাখি জানলায় এসে বসল তার শরীরে ফুলের মতো রঙ এক দিন... দু দিন...  তিন দিন... তারপর তারই মুখ থেকে জানা গেল এতদিন যেসব নামে জেনেছি চিনেছি সেসব ভুল তাদের নাম ভিন্ন কোনটা নেবো আর কোনটা ফেলে দেবো পাশে বাছতে বাছতে দেখলাম বিশাল একটা কুয়োর নীচে দাঁড়িয়ে আছি আর মাথার ওপর উঠে যাচ্ছে জল 


৩. 
মধ্য বয়স অতিক্রম করে যে মানুষ বনে গিয়েছিল পিঠে বস্তা নিয়ে পাতা আর কাঠ কুড়িয়ে আনবে বলে বছর ফিরে গেছে মেঘ জল রোদ নিভে গেছে নিজের নিজের মতো রাতের তারার পিঠে বসে দেখেছে প্যাঁচা  চাঁদের উঠোন জুড়ে একটা উচ্ছল ইতিকথা লেখা হতে হতে সেই মধ্য বয়স অতিক্রম করা মানুষটির ঘর নিভে যাচ্ছে নিজের পরমায়ু নিয়ে সেইরকম এক ভোরে ঘর ডুবে গেল স্বপ্নের কোমলে আর উত্তরের হাওয়া ঘরের চাল ঘেঁষে যেতে যেতে জানিয়ে গেল মধ্য বয়স থেকে ফিরে গিয়ে সে এখন গাছ হয়ে গেছে 


৪. 
হীরের খনির ভিতর দু পা ডুবিয়ে দিয়ে মেখে এনেছে হীরে সেই কাঁচ কাঁটা হীরে এবার অত্যন্ত নির্ভুল ভাবে কেটে ফেলবে কাঁচ আর বায়বীয় আসবাব এমনই এক দৃশ্য গড়ে উঠতে উঠতে নিভে গেল আলো সামনের সমস্ত দর্শক কঠোর হাপিত্যেশ নিয়ে বসে বরফ দেওয়া জলে ভিজিয়ে নিচ্ছে মাথা গায়ের ঘামাচি গেলে দিচ্ছে উকুন খোঁজা আঙুলের নখ বহু অপেক্ষার পর যখন পর্দা উঠে গেল 
দেখল দর্শক 
কি নিপুণ দৃশ্যের মায়াজাল 
হীরের আলোয় লেখা হচ্ছে সংসার ত্যাগ   


৫.
কয়েক বিগর্হের শূন্যতা ঘিরে প্রজাপতি যাপন 
আর পাশের জলা ঘিরে হাহাকার 
কলমির বসবাস 
বেগুনি ফুলের মনোহরা 
গন্ধহীন এক জলা  
আলোর দিকে হা করে আছে 
জলের উপর সাপের মতো বেয়ে চলেছে তার শরীর 

শরীর কি শুধুই অবয়ব  
একটা ঢাল 

চাঁদের আলোর নীচে মরে যেতে যেতে 
অবয়ব 
ঢাল 
ভেদ করে পাতাল খোঁজে 
জ্যোৎস্নায় নিরাসক্ত কলমির ফুল  

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇


                                                        

Post a Comment

0 Comments