আগডুম রাজ্যে ১৩
অলোক চট্টোপাধ্যায়
তারপরের দিনগুলো যে কি মজায় কাটল তা আর বলার নয়। সারাদিন চটপটির সঙ্গে ঘুরে বেড়াই, শিক্ষালয়ের থেকে ছুটি নিয়ে চকমকিও মাঝেমাঝেই আমাদের সঙ্গে থাকে। এমনকি ঘটপটিও কয়েকদিন আমাদের সঙ্গ দিল। সন্ধ্যেবেলায় অবিশ্যি বাঞ্ছারামের বাড়িতে হাজিরা দিয়ে ওকে ঘড়ি দেখা আর সময়ের হিসেব কষা একটু একটু করে শেখাতে হত। আমি নিজেই অবাক হয়ে ভাবতাম কি সুন্দর উল্টো দিকে চলা ঘড়ির থেকে সময় হিসেব করে ফেলছি। দু দিন বাঞ্ছারামের সঙ্গে রাজসভায় যেতে হয়েছিল, তার জন্যে অমাত্যদের মতই ঝলমলে পোশাক দিয়েছিল আমাকে। সেখানে আমাদের ইস্কুলের মত ব্ল্যাকবোর্ডে চকখড়ি দিয়ে গোল এঁকে সে রাজামশাই আর অন্যদেরও সময়ের হিসেব শেখাত। তবে আমাকে বাঞ্ছারাম সেখানে কিছু বলতে বারণও করে দিয়েছিল, যাতে লোকে আমাকে আরো বড় পণ্ডিত না ভেবে বসে। শুধু কোথাও কিছু ভুলভাল বললে তাকে চুপিচুপি আলাদা করে বুঝিয়ে বলতে হত। শুনেছিলাম সবটা শেখানো হয়ে গেলে বাঞ্ছারামকে ঘড়িটা দিয়ে দিতে হবে রাজামশাইকে। তিনি সেটা অষ্টপ্রহর হাতে পরে থাকবেন, নিজে নিজে সময় মাপবেন আর প্রতি ঘন্টায় একজন পেয়াদাকে পেল্লাই একটা থালায় ঢং ঢং করে হাতুড়ি ঠুকতে হুকুম দেবেন।
এমনিতে কোনো চিন্তাভাবনা ছিল না। আমি ছিলাম, ঐ যাকে বলে, রাজ অতিথি। ফোড়নদাস পর্যন্ত হেসে হেসে কথা বলত। পাগলা গারদের থেকে ছুটি নিয়ে কবি চন্দ্রবান্ধব একদিন গোটা দশেক কবিতাও শুনিয়ে দিয়ে গেল। তবে রাস্তাঘাটে জগঝম্পকে দেখলে আমার বুকের ভেতর বেশ ঢিপ ঢিপ করত, মুখের ভাব দেখে মনে হত ও সুযোগ পেলেই একবার অন্তত আমার চিকিচ্ছে করে ছাড়বে। ও হ্যাঁ, বলতে ভুলে গেছি, সেই যে জগঝম্প মেজো কোতোয়ালকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল তারপর অনেক জল ঘোলা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত মহামন্ত্রী নিজে হস্তক্ষেপ করে তাকে পাগলা গারদের থেকে ছাড়িয়ে আনেন। অবশ্য ইতিমধ্যেই জগঝম্প তার মাথার আদ্দেক চুল কামিয়ে চিকিচ্ছে শুরু করে দিয়েছিল। সেই রাগে বটকেষ্টও নাকি পাগলা গারদের বুড়োকে ছাড়ার আগে তার ডানদিকের গোঁফ উড়িয়ে দিয়েছিল।
বাঞ্ছারামের থেকে দু-তিনদিনের ছুটি নিয়ে কয়েকবার আমরা ওদের দেশের পাহাড়ে জঙ্গলেও ঘুরতে গিয়েছিলাম। কি সুন্দর জঙ্গল ওদের দেশে। গাছপালাগুলো সব আমাদের মত হলেও একটু একটু আলাদা। সেখানে সবুজ রঙের ঝন্টি-হরিণ আর মস্ত বড় বড় আকাশী নীল রঙের ভুটে-খরগোশেরা মনের আনন্দে খেলে বেড়ায়। মানুষ দেখে একটুও ভয় পায়না। পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা ঝর্ণারা মিলেমিশে ছোট্টো ছোট্টো নদী হয়ে বয়ে যায় অনেক দূরের কোনো সাগরের দিকে। তাদের জল কাঁচের মতন স্বচ্ছ। নিচের নুড়ি পাথরগুলো অবধি পরিষ্কার দেখা যায়।
সেই প্রায় সাড়ে তিন হপ্তার মধ্যে কত যে মজার মজার কাণ্ড হল সে বলতে গেলে সারা রাতেও ফুরোবে না। এমনিতেই দ্যাখো পৌনে সাতটা বেজে গেছে। আমি বরং কিভাবে ফিরে এলাম, মানে যেটুকু মনে আছে, সেটাই বলে দিই।
(এইখানে ঝিমলি-পাপাইএর দাদু একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন – পৌনে সাতটা নয় এখন ঠিক সোয়া পাঁচটা বাজে। নিতাই কাকা মস্ত জিভ কেটে বলল – এঃ, বড্ড ভুল হয়ে যাচ্ছে। আসলে ক’দিন উল্টো ঘড়ি দেখে অভ্যেস হয়ে গেছে কিনা। দাদু বললেন – অভ্যেসটা এবার আস্তে সুস্থে বদলাবার চেষ্টা কর। নিতাইকাকা আবার গল্পে ফিরল।)
যা হোক, সে সব ঘুরে বেড়ানোর বৃত্তান্ত ছেড়ে কিভাবে এখানে আবার ফিরে এলাম সেই কথায় আসি।
ওদের শূন্য চাঁদের রাত্তিরের দিন সকাল থেকেই বাঞ্ছারামের বাড়িতে জড়ো হয়েছিলাম আমরা সবাই। চটপটি, চকমকি এমনকি ঘটপটিও। মুশকিল মামাও এলেন বিকেলের দিকে। সবার মধ্যে বেশ একটা দুঃখু দুঃখু ভাব। চকমকি একটু কেঁদেও নিল। বাঞ্ছারাম পণ্ডিতও একবার ইতস্তত করে বললেন – তুমি চাইলে কিন্তু এখানে থেকেও যেতে পারো। আমি প্রথমে একটু চিন্তায় ছিলাম যে আমার প্রধান পণ্ডিতের চাকরিটা হয়ত তুমি খেয়েও নিতে পারো, তবে এই ক’দিন দেখে বুঝে গেছি তোমার ঘটে জ্ঞান বুদ্ধি বিশেষ কিছু নেই। কাজেই তুমি থাকলে আমার কোনো অসুবিধে নেই। আমি অবশ্য রাজি হলাম না।
বিকেল নাগাদ আমাকে বলা হল আমার পুরোনো পোশাক পরে ওখানকার যা কিছু সঙ্গে আছে সব রেখে দিতে। থাকার ভেতর কিছু ও দেশের টঙ্কই ছিল শুধু। সেগুলো চটপটিকে দিয়ে দিলাম। পকেটে রইল শুধু এখানকার যে কটা টাকা ছিল সেগুলো আর ঐ কিছু কাগজ, কোকাকোলার ছিপি, ডাঁটি ভাঙা গগলসের ফ্রেম, পেন্সিল ইত্যাদি। ওখানকার কোনো জিনিস যেমন আনা যাবেনা তেমনি এখানকার কোনো জিনিসও ওখানে রেখে আসা চলবে না। তাহলে নাকি ফাটলের মধ্যে ঠিকমত ঢোকা যায় না।
সন্ধ্যের অন্ধকার নামতে আমরা সবাই গেলাম বাঞ্ছারামের পূজোর ঘরে। একটা বেশ বড় গোল আকারের ঘর। সবাইকে ঊনি বললেন দেওয়ালের কাছে বসতে। আমাকে বসালেন মধ্যিখানে একটা গোল গণ্ডি কেটে তার ঠিক মাঝখানে। তারপর ধুনোর মত কিছু একটা জ্বেলে ঘরময় মিষ্টি গন্ধওয়ালা ধোঁয়া ভরিয়ে দিলেন। একটা গেলাসে করে উৎকট স্বাদের একটা শরবৎ মত কিছু খেতে দিলেন আমাকে। সেটা খেয়ে আমার মাথার ভেতর কেমন যেন ঝিমঝিম করতে লাগল।
এরপর বাঞ্ছারাম হাতে একটা বেঁটে লাঠি নিয়ে, সেটা নাকি ওর জাদুদণ্ড, গুনগুন করে কিসব অং বং দুর্বোধ্য মন্ত্র আওড়তে আওড়াতে গণ্ডিটার বাইিরে প্রায় নাচের ভঙ্গীতে ঘুরতে লাগলেন। এক সময়ে আমাকে বললেন – মাথার ওপর তাকিয়ে দেখো কী দেখতে পাচ্ছো?
আমি অবাক হয়ে দেখলাম মাথার ওপর ঘরের ছাদটা কোন মন্ত্রবলে উধাও হয়ে গেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে অসংখ্য তারায় ভরা আকাশ।
সেকথা বলতেই তিনি বললেন - ভালো করে দেখো, আর কিছু দেখছো?
আমি দেখলাম আকাশের তারাদের মধ্যে একটা জায়গা যেন ফাঁকা, সেখানে কোনো তারা নেই। ফাঁকটা ক্রমশ বড় হতে লাগল। যেন একটা অন্ধকার চোঙা মতন কিছু আকাশ থেকে নেমে আসছে আমার দিকে। সেকথা বলতে বাঞ্ছারাম ভারি সন্তুষ্ট হলেন। - যাক, সব কিছু ঠিক মতই হচ্ছে তাহলে।
আমি একবার শেষবারের মত ঘটপটি, চটপটি আর চকমকিদের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম। সবার মুখ বড় ম্লান। আমি জোর করেই একটু হাসলাম। তারপর একবার হাত নেড়ে টা টা করেই চোখ ফিরিয়ে নিলাম। আমারও গলার কাছটা কেমন যেন জ্বালা জ্বালা করছিল।
বাঞ্ছারাম খনখনে গলায় কি যেন একটা শোলো্কের মত বলতে লাগল ঘুমপাড়ানি সুরে। অনেকটা এইরকম -
কালচক্র বক্রপৃষ্ঠে অনর্থ অব্যয়
সূক্ষ্ণকণা তালকানা ঘোর অনিশ্চয়
অতিকায় বস্তুপিণ্ড বিষম বাস্তব
প্রচণ্ড ঘূর্ণনে টানে নিকটস্থ সব।
গূঢ় গতি মূঢ়মতি হঠকর্ম ধ্যান
উৎপাতে চিৎপাত হয়ে ভোলে কাণ্ডজ্ঞান।
জটিল তরঙ্গ ভঙ্গ কভু ক্ষুদ্র কণা
কখনো বাস্তব অতি কখনো কল্পনা।
অতস্পর মাত্রাভেদ আঙ্কিক গননে
ভঙ্গুর অনিত্য সত্য চক্র আবর্তনে।
নিরর্থক নিয়মের ছিন্নভিন্ন মানে
মুড়ি আর আলুর চপ চায়ের দোকানে।
( এইখানে ঝিমলি-পাপাইএর দাদু একটু ধমক দিয়েই নিতাইকে বললেন - এসব কি হিজিবিজি বকছো। তোমার শ্লোকটা ঠিক মত মনে আছে তো? তাই শুনে নিতাই লজ্জিত মুখে বলল – না না, একটু ভুলে যাচ্ছিলাম বলে জায়গাটা মুড়ি- আলুর চপ দিয়ে খাপিয়ে দিলাম আর কি।
পাপাইও গম্ভীর মুখে বলল – আমিও তাই ভাবছিলাম, এত শক্ত শক্ত কবিতা নিতাই কাকা মনে রাখবে কি করে। নিতাই অবশ্য প্রতিবাদ করে বলল – না দাদা, আমার মেমারি খুব ভাল। তোমার দাদুকে জিগ্যেস করে দ্যাখো না, নাটকের কত বড় বড় পার্ট আমি শুনে শুনেই মুখস্থ বলতাম। বলুন ডাক্তার কাকা, সেবারে চন্দ্রগুপ্ত নাটকে দেড় পাতার ডায়ালগ – সত্য সেলুকাস কি বিচিত্র এই দেশ, সেটা গড়গড়িয়ে বলেছিলাম কিনা? লোকের কি হাততালি। তবু ডিরেক্টার গোবিন্দদা স্টেজ থেকে নামতেই কি বকুনি দিল।
ঝিমলি-পাপাইএর দাদু বললেন – দেবে না বকুনি? ওটা সেকেন্দারের ডায়ালগ ছিল আর তুমি অ্যান্টিগোনাসের পার্ট করছিলে। যাক গে, শোলোক ছেড়ে তারপর কি হল সেইটা গুছিয়ে বল।
নিতাইকাকা লজ্জিত মুখে একটু মাথা চুলকে আবার গল্পে ফিরে গেল।)
সেই অন্ধকার চোঙা মতন ব্যাপারটা যতই কাছে আসতে লাগল ততই একটা টান লাগতে লাগল ওপরের দিকে। যেন সেই অন্ধকারটা আমাকে গিলে ফেলবে। খুব ভয় করতে লাগল। কানের কাছে বাঞ্ছারামের ঘ্যানোর ঘ্যানোর শোলোকটা শুনতে শুনতে চোখদুটোও যেন ঘুমে জড়িয়ে এল। এরই মধ্যে বাঞ্ছারাম গণ্ডির বাইরে থেকেই হাত বাড়িয়ে সেই বেঁটে লাঠি মতটা দিয়ে আমার কপালে ঠকাস করে মারলেন এক বাড়ি। ব্যাস, তারপর আমার আর কিচ্ছু মনে নেই।
যখন চোখ খুললাম তখন দেখি আমি একটা জংলা জায়গায় শুয়ে আছি আর চারপাশে অনেক লোক। ক্রিকেট ব্যাট বল হাতে কজন বাচ্চাও রয়েছে। আমাকে চোখ খুলতে দেখে সবাই হৈ হৈ করে উঠল – জ্ঞান ফিরেছে, জ্ঞান ফিরেছে।
আমার মাথা টাথা খুব ঝিমঝিম করছিল। তার মধ্যে লোকেদের কথা শুনে বুঝলাম ঐ জঙ্গলের গায়েই একটা মাঠ আছে। বাচ্চারা সেখানে ক্রিকেট খেলে। জঙ্গলে বল খুঁজতে এসে আমাকে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতে দেখে তারাই গিয়ে বড়দের ডেকে নিয়ে এসেছে। উঠে বসে দেখলাম পাশে একটা ভাঙা পাঁচিলও আছে। মনে হল এটাই সেই জায়গা যেখানে আমি পাঁচিল টপকে লাফিয়ে পড়েছিলাম। ঐ লোকগুলোই হয়ত সেদিন আমাকে মারতে তাড়া করেছিল। আজ অবশ্য কেউ আমাকে সেদিনের সেই লোক বলে চিনতে পারল না। বরং তারাই আমাকে ধরে ধরে সেই চায়ের দোকানে নিয়ে গিয়ে গরম দুধ আর জিলিপি খাইয়ে চাঙ্গা করে তুলল। আমি কে, কোত্থেকে আর কি করে ওখানে গেলাম সেসব কথাও জিগ্যেস করছিল সবাই। আমার যদিও সব কথা একটু একটু করে মনে পড়ছিল ওদের কিছু না বলে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম। ওরা আমাকে পাগল সাব্যস্ত করে হাল ছেড়ে দিল। ওদেরই ক’জন আমার নাম ঠিকানা জিগ্যেস করে কলকাতার বাসে উঠিয়ে দিয়ে ভাড়ার টাকাটাও নিজেরাই চাঁদা তুলে কন্ডাক্টারকে মিটিয়ে দিল। এইসব লোকজনের মতিগতি বোঝা বড় ভার। কখনো নিরীহ লোককে ঠেঙিয়ে হাতের সুখ করে, আবার কখনো অচেনা অজানা লোককে সেবা করে খাইয়ে দাইয়ে সুস্থ করে তোলে। একই লোক এই ভালো তো এই মন্দ। একই মনের ভেতর যেমন হিংসে আর রাগ ভরা আছে, তেমনি ভালবাসাও রয়েছে। কখন কোনটা চাগাড় দিয়ে ওঠে বোঝা ভারি মুশকিল।
*** *** *** *** ***
-তারপর কি হল? ঝিমলির জিজ্ঞাসা।
-তারপর আর কি? বাসে চড়ে চলে এলাম ধর্মতলায়। সেখান থেকে আর একটা বাসে উঠে বাড়ি। নিতাই কাকা বলল। - আর তারপর বাড়ি এসে দাদার ধমক আর বৌদির হাতের গরম গরম রুটি তরকারি খেয়ে টেনে ঘুম। না, এবার যাই। অনেক দেরি হয়ে গেছে। সাড়ে ছ’টা, নাকি সাড়ে পাঁচটাই বাজল বোধহয়। তোমাদেরও তো বিকেলে খেলতে যাওয়া হল না।
(১৪)
নিতাইকাকা চলে যাবার পর বেশ কিছুক্ষণ সবাই চুপচাপ। সবার আগে কথা বলল পাপাই। - আচ্ছা দাদু, এমন কোনো জায়গা কি সত্যিই থাকতে পারে? যতো সব আবোলতাবোল গল্প। আজকের খেলার সময়টাই নষ্ট হল।
-কে তোমাকে খেলতে না গিয়ে হাঁ করে গল্প শুনতে বলেছিল দাদুভাই? দাদু বললেন। - আর শোনার সময়ে তো নিতাইএর প্রায় ঘাড়ে চড়েই শুনছিলে। ঝিমলিদিদিকে কাছে যাবার জায়গাই দিচ্ছিলে না। এখন সেগুলো আবোলতাবোল হয়ে গেল?
-সে তুমি যাই বল, আমার তো মনে হয় নিতাইকাকা পাঁচিল থেকে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। আর সেই ঘোরের মধ্যে ঐ সব অদ্ভুত কাণ্ডকারখানা স্বপ্নে দেখেছে। পাপাই বলল।
-ঊঁহু, তা কি করে হবে? দাদু বললেন। - প্রথমত কেউ ওরকম একমাস ধরে অজ্ঞান হয়ে থাকতে পারে না। আর তাছাড়া জায়গাটাও এমন যেখানে ছোটো ছেলেরা খেলতে আসে, সেখানে কেউ পড়ে থাকলে কেউ না কেউ আগেই ঠিক দেখে ফেলত।
ঝিমলি এবার তর্কে নামল – আচ্ছা, এসব সত্যি যদি নাই হবে, দাদু তুমিই বল, কেউ কি এক নিঃশ্বাসে এতকিছু বানিয়ে বানিয়ে বলতে পারে? উল্টো দিক থেকে ঘড়ি দেখতে পারে? অত কঠিন কঠিন শব্দওয়ালা শোলোক নিজে নিজে বানাতে পারে?
-ঠিকই তো। দাদু সায় দিলেন।– আর, আজকাল ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমী, রাক্ষস খোক্কোস এসব দেখা যায়না বলে কি রূপকথা ফুরিয়ে যাবে নাকি। নটে গাছ কি অত সহজে মুড়োয়? এইসব আগডুম বাগডুমের লোকেদের নিয়েই তৈরি হবে নতুন নতুন রূপকথা। আমার আর তোমার জন্যে। আর পাপাই দাদাভাই, নিতান্ত অবিশ্বাস না করলে তুমিও তার ভাগ পেতে পারো।
ঝিমলি এবার জোরের সঙ্গে বলল – মোটকথা, নিতাইকাকা যা বলেছে সব সত্যি। আগডুম রাজ্য সত্যি, চটপটি- ঘটপটি- চকমকি – মুশকিল মামা- বাঞ্ছারাম সবাই সত্যি। সত্যি সত্যি সত্যিইইই।
(শেষ)
0 Comments