জ্বলদর্চি

প্রথম মহিলা বাঙালি-বৈজ্ঞানিক ড: অসীমা চট্টোপাধ্যায় ― ০৫/পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা

বিজ্ঞানের অন্তরালে বিজ্ঞানী ।। পর্ব ― ৬০

প্রথম মহিলা বাঙালি-বৈজ্ঞানিক ড: অসীমা চট্টোপাধ্যায় ― ০৫

পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা


(১)
গবেষণা ছেড়ে শিক্ষকতা! মানতে পারেননি আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। ছাত্রীর এ হেন আচরণে যারপরনাই বিস্মিত তিনি। সবেমাত্র গবেষণার চৌহদ্দির মধ্যে ছাত্রীর অবাধ প্রবেশ ঘটেছে। অনেক টালবাহানার পরে জুটেছে বৃত্তি। তাহলে হঠাৎ এই ছন্দপতন কেন? ভেতরে ভেতরে ছাত্রীও বেশ আহত। তাঁর মনের ভেতরেও একটা তীব্র দ্বন্দ্ব! স্নায়বিক লড়াই! অসম যুদ্ধ! ডিসিশন নেবার অস্থিরতা। অবশ্য তাঁর মনের ইচ্ছা খানিকটা পরিস্কার। গবেষণা চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর তিনি। হৃদয়ের গোপনে সযত্নে লালিত এ তাঁর দৃঢ় প্রত্যয়। আদৌ তাঁর সে-সংকল্প, বাসনার সফল বাস্তবায়ন ঘটবে কি? পায়ের তলায় মাটিটা ক্রমশ কাঁপছে।

  সালটা ১৯৪০। সে-বছর কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে শিক্ষিকা হিসাবে নির্বাচিত তিনি। তাঁর লেকচারার অ্যাপয়মেন্টে সিলমোহর পড়ে গেল। অথচ দোদুল্যমান মন! পেণ্ডুলামের মতো দুলছে তাঁর গবেষণার ভাগ্য। নাহ! আর কোনও উপায় নেই। অধ্যাপনার কাজে শেষমেশ তাঁকে যোগদান করতেই হল।

  সমস্যা অন্যত্র― অধ্যাপনার কাজে মনোনিবেশ করলে তাঁর শখের গবেষণার কী হবে? বিস্তর চিন্তার কথা। এক্ষেত্রে ত্রাতা আবার সেই বৃদ্ধ দ্রোণাচার্য। ছাত্রীর অপূর্ণ ইচ্ছা পূরণে দিশা দেখালেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। করলেন সমস্যার সমাধান। তিনি ঠিক করে দিলেন― লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে শিক্ষকতার পাশাপাশি বিজ্ঞান কলেজে গবেষণার অসমাপ্ত কাজ চালিয়ে যাবেন অসীমা দেবী। শুরু হল জীবনের কঠিন এক অধ্যায়। মাটি কামড়ে পড়ে থাকা জীবন সংগ্রাম। অধ্যাপনা আর গবেষণার দু'নৌকায় পা দিয়ে বৈতরণী পার হওয়ার অদম্য মনের জোর তাঁর। ধন্য তাঁর অধ্যবসায়। ধন্য মেয়ের জেদ। অধ্যাপনার সমান্তরালে গবেষণার কঠিন কাজ কৃতিত্বের সঙ্গে সামলে সফল তিনি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য― বিজ্ঞান কলেজের সঙ্গে গাঁটছড়া আমৃত্যু ত্যাগ করেননি অসীমা দেবী। ২০০৬ সাল পর্যন্ত রিসার্চে নিরলস পরিশ্রমের আপাত সম্ভবশূন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন তিনি। নিঃসন্দেহে, বিজ্ঞানের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতার এ এক দুর্লভ নজির। তৈরি করেছে স্বপ্ন দেখা এক রূপকথার গল্প।
      

ওদিকে, চোখ ছানাবড়া অসীমা দেবীর। লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের আলাদা অস্তিত্ব নেই! তিনি সর্বপ্রথম চালু করলেন রসায়ন বিভাগ। ১৯৪০ সালেই। রসায়ন বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা বিভাগীয় প্রধান পদে নিয়োজিত করলেন নিজেকে। কলেজে ছাত্রী সংখ্যা তখন সাকুল্যে মাত্র ছয়জন। নিয়মিত ক্লাস করে সকলে। অধ্যাপিকা অসীমা মুখোপাধ্যায় সকলের খুব প্রিয়। ছাত্রী মহলে দারুণ জনপ্রিয়।

  তাঁর পড়ানোর সময় ক্লাসরুম একদম পিন-ড্রপ-সাইলেন্স। শিক্ষিকার পাঠদানে, তাঁর ভাষার প্রক্ষেপনে মন্ত্রমুগ্ধ গোটা ক্লাস। সেজন্য প্রতিদিন পুরো ক্লাস হাউসফুল। একশো শতাংশ উপস্থিতি। কেউ মিস করতে চাইত না ম্যাডামের ক্লাস। এদিকে তাঁর পড়ানো সম্পূর্ণ সময়-নিরপেক্ষ। ক্লাসের ঘণ্টা হয়তো নিয়মিত ব্যবধানে বাজে, কিন্তু তাঁর পাঠদানের সময়কাল সময়ের কাঁটাতারে কখনও আটকে পড়েনি। ক্লাসের ঘণ্টার উপর তাঁর লেকচার কোনোদিন সীমাবদ্ধ থাকে না। নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে ছুটি হত। এত সময় ধরে ক্লাস করেও স্টুডেন্টরা ধৈর্য্যহীন। স্পিকটি নট! বরং তারা রীতিমত উত্তেজিত! নতুনকে জানার অদম্য কৌতূহল তাদের চোখেমুখে। রসায়নের আপাত দুর্বোধ্য বিষয়গুলি এত সহজে, এত প্রাঞ্জল ভাষায় উপস্থাপন করতেন প্রিয় অধ্যাপিকা; যে-কেউ তাঁর ক্লাসের প্রতি আকৃষ্ট হতে বাধ্য। সরল সুন্দর ভাষায় ক্লাসের পড়াশুনা বুঝিয়ে দিতে কার্পণ্য ছিল না তাঁর লেকচারে। দিনের শেষে সেজন্যে শিক্ষার্থীদের না-বোঝার কারণ, অজুহাত নিমেষে গায়েব।

  সারা কলেজের রোল মডেল অসীমা দেবী। ছাত্রছাত্রীদের ভীষণ প্রিয়। কী অধ্যাপনা, কী গবেষণা ― সবেতেই তাঁর অবাধ স্বচ্ছন্দ বিচরণ। দশভূজা মা-দূর্গার সাক্ষাৎ প্রতিরূপ যেন তিনি। দু'হাতে সবকিছু সামলানো তাঁর কাছে জলভাত। তাঁর দুহাত দশ হাতের সমান। সবকিছু সমানতালে চলে তাঁর। ছোটবেলা থেকে বড় হয়ে ওঠার তাঁর কাহিনী বেশ রোমহর্ষক। নারী শিক্ষার হাতিয়ার দমিয়ে রাখা সেই দুষ্ট মহীশাসুরকে বধ করে তাঁর সাফল্যের অশ্বমেধ ঘোড়া এগিয়ে চলেছে অমৃতের সন্ধানে। তিনি সর্বদা ক্লান্তিহীন, বিরামহীন স্নেহময়ী এক নারী।

(২)
কঠিন সাধনার ফল সবসময় মিঠে হয়। কঠোর পরিশ্রমের ফল মেলে হাতেনাতে। ব্যতিক্রম হয়নি অসীমা দেবীর বেলায়। ১৯৪২ সালে আসে স্বীকৃতি। প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি পেলেন তিনি। মৌয়াট স্বর্ণ পদক লাভ করলেন এই সময়।

 তারপর এল সেই সন্ধিক্ষণ। ইতিহাস রচনা করলেন তিনি। ইতিহাসের পাতায় উঠে গেল তাঁর বিজয় কাহিনী। সময়টা ১৯৪৪ সাল। সে-বছর অধ্যাপক প্রফুল্ল কুমার বসু'র তত্ত্বাবধানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি এস সি ডিগ্রি লাভ করলেন তিনি। তাঁর নাম উঠে গেল সবুজ ইতিহাসের লালচে পাতায়। সোনার অক্ষরে ছাপা হয়ে থাকল তাঁর কীর্তি। শুধু বাংলা কিংবা ভারতবর্ষ নয়, এশিয়ার প্রথম মহিলা হিসাবে কোনও ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি এস সি ডিগ্রি পেলেন তিনি। বাঙালি হিসাবে, ভারতীয় হিসাবে, এশিয়ার বাসিন্দা হিসাবে সত্যিই খুব গর্বের দিন। খুব সহজ ছিল না তাঁর এই জার্নি। এতটা পথ পাড়ি দিতে কঠিন বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাঁকে। আকাশ সমান বাধার প্রাচীর ভেঙে, সমস্ত সামাজিক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে তাঁর এ সফল উত্তোরণ লক্ষ-নিযুত-কোটি তরুণীর চোখে আশার আলো জোগায় নিঃসন্দেহে, প্রেরণা-শক্তি প্রদান করে। অচিরেই তিনি হয়ে ওঠেন রোল মডেল। 

  অসীমা দেবী গবেষণার বিষয় নির্বাচনে বেশ মুন্সিয়ানার পরিচয় রেখেছিলেন। তাঁর গবেষণার বিষয়বস্তু যেমন মৌলিক, তেমনি অভিনবত্বে ভরপুর। 'জৈব রসায়ন― প্রকৃতিতে প্রাপ্ত ভেষজ উপাদান থেকে ইনডোল অ্যালকালয়েডস এবং কৌমারিন নিষ্কাশন' (Organic Chemistry― Natural Occurring Indole Alkaloids and Coumarin) বিষয়ে তাঁর থিসিস জমা পড়ল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ দপ্তরে। রিসার্চ থিসিস পরীক্ষার জন্য এলেন বিশ্ববিখ্যাত তিনজন বৈজ্ঞানিক। তিনজনেই রয়্যাল সোসাইটির ফেলো। আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন সেই তিন বৈজ্ঞানিকের প্রথম জন ড. এ আর টড। দ্বিতীয় জন ড. আর ডি হাওয়ার্থ। এবং শেষ জন অধ্যাপক জি আর ক্লেমো। তিনজন পরীক্ষকই অসীমা দেবীর রিসার্চ পেপারে বেজায় খুশি। বিশ্ববিশ্রুত তিন বৈজ্ঞানিকের বিচারে তাঁর গবেষণা পত্র উচ্চ প্রশংসা পেল। তিনি বনে গেলেন ডি এস সি ডিগ্রি পাওয়া প্রথম নারী।

  পি এইচ ডি কমপ্লিটের অব্যাহতি পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'সাম্মানিক অধ্যাপক'-এর পদ অলংকৃত করেন তিনি। সেটা ১৯৪৪ সালের ঘটনা। এরপর থেকেই অধ্যাপনা আর গবেষণা তাঁর জীবনের ধ্যান ও জ্ঞান হয়ে ওঠে। মসৃণ ভাবে চলছিল সবকিছু। পরের বছর, ১৯৪৫ সালে অসীমা দেবী হঠাৎ সাতপাকে বাঁধা পড়লেন। বিয়ে করলেন আরেক প্রথিতযশা রসায়ন বৈজ্ঞানিক-অধ্যাপক ড. বরদানন্দ চট্টোপাধ্যায়কে। তিনিও রসায়নে ডি এস সি। মৃত্তিকা বিজ্ঞান আর ভূমি ক্ষয় নিয়ে বিস্তর গবেষণায় হাত পাকিয়েছেন। রেলওয়ে বোর্ড অব করোশন-এর স্থায়ী সদস্য। পরের দিকে বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের রসায়ন আর ভূবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. বরদানন্দ চট্টোপাধ্যায়। বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (অধুনা বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি)-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট বা উপাধ্যক্ষ (শিক্ষা) হয়েছিলেন তিনি।
      

  বিবাহের পর ঠিকানা বদলে গেল অসীমা দেবীর। মৌলালির বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি। নতুন বাড়ি। নতুন পরিবেশ। নতুন মানুষজন। স্বামী-শ্বশুর-শ্বাশুড়ি নিয়ে ভরা সংসার। অত্যন্ত স্নেহ পরায়ণ শ্বশুরবাড়ির লোকজন। নতুন বৌ'কে গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ ও উৎসাহ দিতে কার্পণ্য করল না তারা। ফলে অনেক সহজ হয়ে গেল অসীমা দেবীর কাজ। কাজের জায়গায় কাজ আর ঘরে ফিরে আদর্শ গৃহিণী। এ হেন পারিবারিক জীবন-দর্শন অভ্যস্ত হয়ে গেল তাঁর। দিনের শেষে অধ্যাপনা আর গবেষণার কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হত। বাড়ি ফিরে প্রকৃত গৃহিণীর যাবতীয় কাজকর্ম নিজ হাতে সামলাতেন তিনি।

 তাঁর এ হেন সুখের সংসারে খুশি বয়ে আনল জুলি। সেটা ১৯৪৬ সালের ঘটনা। অসীমা দেবীর কোল আলো করে জন্মগ্রহণ করল এক ফুটফুটে কণ্যা সন্তান। জুলি চট্টোপাধ্যায়। বাড়িতে যেন আনন্দের জোয়ার নামল। যারপরনাই খুশি স্বামী বরদানন্দ চট্টোপাধ্যায়।

(৩)
খুব দুরন্ত হয়েছে ছোট্ট মেয়েটি। ঘরময় তার দস্যিপনা। বয়েস সবেমাত্র এগারো মাস। ১৯৪৭ সালের জুন মাস। তীব্র গরমে বাঙালির হাঁসফাঁস অবস্থা। এমন সময় পোস্ট ডক্টরাল কাজের নেশা চেপে বসল অসীমা দেবীর মাথায়। যেখানে সেখানে নয়, খোদ আমেরিকায়। ইতিমধ্যে স্বামী বরদানন্দ চট্টোপাধ্যায়ও গবেষণার সূত্রে আমেরিকায়। তিনি আমেরিকার ম্যাডিসনে পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রির জন্য হাজির হয়েছেন। অসীমা দেবীরও একান্ত ইচ্ছা পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রি হাসিল করা। যেমনটা ভাবা, তেমনি কাজ। স্টাডি লিভ নিয়ে বসলেন লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ থেকে। লক্ষ্য উচ্চতর গবেষণা। তাঁর টার্গেট স্থির― পোস্ট ডক্টরেট ডিগ্রি। এগারো মাসের শিশুকণ্যা জুলি আর তার গভর্নেস হিসাবে এক ভদ্রমহিলাকে সঙ্গে নিয়ে পাড়ি দিলেন আমেরিকা। কী অদম্য সাহস! কী অসম্ভব মনের জোর! একলা মহিলার পক্ষে দূর বিদেশ বিভুঁই-এ পাড়ি জমানো তাঁর মানসিক কাঠিন্যের পরিচায়ক। শিক্ষনীয়ও বটে! সঙ্গের ভদ্রমহিলা সারাক্ষণ জুলির দেখভাল করে। অসীমা দেবী সারাদিন ডুবে থাকেন গবেষণার দুনিয়ায়। 

  আমেরিকা পৌঁছে প্রথম গেলেন উইসকনসিন ইউনিভার্সিটি (Wisconsin University)। সেখানে অধ্যাপক এল এম পার্কস (L. M. Parks)-এর অধীনে শুরু করলেন গবেষণা। ১৯৪৭-৪৮ সালে প্রকৃতিতে স্বাধীনভাবে পাওয়া গ্লাইকোসাইড নিয়ে তাঁর গবেষণা। পরের বছর, ১৯৪৮-৪৯ সালে গন্তব্য প্যাসাডোনার ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি অথবা সংক্ষেপে ক্যালটেক (Caltech) বিশ্ববিদ্যালয়। অধ্যাপক এল জিখমেইস্টার (Laszlo Zechmeister)-এর গবেষণাগারে এক বছর ধরে চলল ক্যারোটোনয়েড আর প্রো-ভিটামিন যৌগ নিয়ে রিসার্চ। এ হেন কাজের সূত্র ধরে এল স্বীকৃতি। ১৯৪৮-৪৯ সালে মিলল 'ওয়াটুমাল' ফেলোশিপ।
          

  ক্যালটেক-এ থাকাকালীন অসীমা দেবীর আদুরে মেয়ে জুলির সঙ্গে খুব ভাব হয়ে গেল অধ্যাপক লাজলো জিখমেইস্টার (১৮৮৯―১৯৭২)-এর। প্রতিদিন দুপুরবেলা বাড়িতে এসে জুলির সঙ্গে খেলা করতেন বৃদ্ধ প্রফেসর। শুধু তাই না, লস অ্যাঞ্জেলস-এর রামকৃষ্ণ মিশন শাখার আশ্রমের অধ্যক্ষ ছিলেন স্বামী প্রভাবনন্দজী। তিনিও মাঝেমধ্যে অসীমা দেবীর বাসায় আসতেন কিংবা লোকজন পাঠিয়ে দিতেন। এমন অনিন্দ্য সুন্দর পরিবেশে শিশু জুলির ছোটবেলা কাটে সুদূর বিদেশে। এর ফলে গবেষণায় মনোযোগ দেওয়া অনেক সহজসাধ্য হয়েছিল অসীমা দেবীর কাছে।

  ক্যালটেক-এর আরেক জন বিখ্যাত রসায়ন বিজ্ঞানী ছিলেন প্রফেসর লিনাস পাউলিং (১৯০১―১৯৯৪)। একবার রসায়নে ও আরেকবার শান্তি― দুবারের নোবেল জয়ী বিজ্ঞানী তিনি। স্বনামধন্য এ হেন বৈজ্ঞানিকের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন অসীমা দেবী। ক্যালটেক-এ থাকার সময়ে পাউলিং-এর সমস্ত বক্তৃতা মন দিয়ে শুনেছেন তিনি। অধ্যাপক পাউলিং অবগত ছিলেন যে মিসেস অসীমা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর কণ্যা ছোট্ট জুলিও বিদেশে আগত। পাউলিং পরিবারের সঙ্গে অসীমা দেবীর একটি মধুর সম্পর্ক তৈরি হয়।
       


  আমেরিকা থেকে একসময় তিনি পাড়ি জমালেন ইউরোপ মহাদেশে। ছবির মতো দেশ সুইজারল্যান্ড। কী অপূর্ব তার প্রাকৃতিক শোভা! অনির্বচনীয় সেসব দৃশ্যমালার পশ্চাতে দেশটির উচ্চতর শিক্ষার পরিকাঠামো বেশ ঈর্ষণীয়। সুইজারল্যান্ডের জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা প্রফেসর নোবেল জয়ী জৈব রসায়ন বিজ্ঞানী অধ্যাপক পল কারের (Paul Karrer : ১৮৮৯―১৯৭১)। ১৯৪৯-৫০ সালে এ হেন বিশ্ববিখ্যাত রসায়নবিদের অধীনে শুরু হল গবেষণা। জৈব সক্রিয় উপক্ষারগুলির সক্রিয়তা নিয়ে তাঁর হাজারো প্রশ্ন! তাদের দিয়ে শুরু হল তাঁর কঠোর অধ্যবসায়। গবেষণার হেডলাইন― 'বায়োলজিক্যালি অ্যাক্টিভ ইনডোল অ্যালকালয়েডস'। অর্থাৎ, জৈব অবস্থায় সক্রিয় ইনডোল অ্যালকালয়েডগুলি নিয়ে চলল তাঁর নিরন্তর গবেষণা। এই বিষয়টি পরবর্তীতে তাঁর গবেষণায় প্রাধান্য পেয়েছে। (ক্রমশ...)

 তথ্যসূত্র :
●'বারোজন বাঙালি রসায়নবিজ্ঞানী'―ড. রবীন্দ্রনাথ পাত্র
●'অর্ধশত বিজ্ঞানী-কথা'― ড. সন্তোষকুমার ঘোড়ই
●বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, দৈনিক সংবাদপত্র
●উইকিপিডিয়া, সায়েন্টিফিক উইমেন পেজ

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments