জ্বলদর্চি

তুর্কী নাচন পর্ব- ১৪/মলয় সরকার

তুর্কী নাচন 

পর্ব- ১৪ (পূর্ব প্রকাশিতের পর)

মলয় সরকার


ডোলমাবেস প্রাসাদের গাইড  বলল, সুলতানী আমলে এখানে অন্ধকার রাতে নাকি, সামনের বাগানের মাঠে প্রচুর কচ্ছপ ছেড়ে দেওয়া হত, যাদের পিঠে একটা করে বাতি জ্বালিয়ে দেওয়া হত। সেগুলি যখন বিভিন্ন দিকে ধীরে ধীরে হাঁটত, যে অপূর্ব শোভার সৃষ্টি হত, রাজপরিবারের মানুষেরা তা উপভোগ করতেন।কি অদ্ভুত রাজকীয় খেয়াল!  সত্যি, চিরকালই সব দেশে সাধারণ মানুষের উপর শোষণ  করে শাসকরা নিজেদের খেয়াল খুশি মিটিয়েছেন। এটা বোধ হয় চিরকালীন সত্য, আজও তাইই হয়ে চলেছে।

এখানে মুসলমানী প্রথায় মেয়েদের একেবারে অন্তঃপুরবাসিনী করার জন্য হারেম ছিল ।সেখানে কেবলমাত্র রাণী বা অন্যান্য রাজপরিবারের মেয়েরা বা তাদের নির্দিষ্ট করা দাসীরাই যেতে পারত। এ ছাড়া সেখানে কেবল মাত্র সুলতান ও রাজপরিবারের শিশুদের যাতায়াতের জন্য যাওয়ার বন্দোবস্ত ছিল। বাইরের কেউ সেখানে যেতে পারত না।তাই তাদের বাথরুমও ছিল ঘরের সংলগ্ন।অর্থাৎ অন্যান্য দেশের হারেমের মত এখানকার মেয়েরাও জন্মমুহুর্ত থেকেই  ছিল বাইরের আলোকবঞ্চিত ও বন্দী, একমাত্র পুরুষদের চাহিদা বা ইচ্ছা অনুযায়ী তাদের মনোরঞ্জন করা ছাড়া তাদের কোন অধিকারই ছিল না । 

প্রতিটি ঘর, হলঘর এত কারুকার্যমণ্ডিত ও সোনালী ঊজ্বল রঙের চাকচিক্যমণ্ডিত যে, কিছুক্ষণ দেখার পরই দিশা হারিয়ে ফেলছিলাম, কি দেখব আর কি দেখব না।হবেই তো , সত্যি সোনা দিয়েই তো তৈরী।বিশাল বিশাল হল ঘর, বিদেশী বা রাজপুরুষদের  আড্ডা মারার জন্য ঘর, বিশাল শয়নকক্ষ, কত দরকারী অদরকারী ঘর -একেবারে ভুলভুলাইয়া। দুটি তলই সমান ঐশ্বর্যমণ্ডিত।আর দেওয়াল জুড়ে নানা দামী দামি অয়েল পেন্টিং , বেশির ভাগই ইউরোপীয়। সেটাই হওয়া স্বাভাবিক, কারণ সুলতান তো ইউরোপীয় পদ্ধতিতে আকৃষ্ট হয়েই এই প্রাসাদ গড়েছিলেন।

তবে এত ঐশ্বর্য দেখতে দেখতে একসময় দম বন্ধ লাগে আমার । বেশিক্ষণ থাকলে সব গুলিয়ে যায়। তাই সব দেখা শেষ করে যখন বাইরে এলাম বাগানের মধ্যে , এত সবুজ আর বসফরাসের নীল জল দেখে চোখ যেন একটু শান্তি পেল।আমি বুঝলাম, আমার  পক্ষে এই বিলাসবহুল দামী দামী রাজঐশ্বর্য সহনীয় নয়।আমার জন্য উন্মুক্ত প্রকৃতির সবুজ মাটির নরম কোলই ভাল।ভাবলাম, ভাগ্যিস, আমি এই সমস্ত রাজপরিবারে জন্মাই নি। তাহলে আমার এই বিপরীতমুখী দৃষ্টিভঙ্গীর জন্য হয় বিতাড়িত করা হত, নয় কোতল করা হত। 

আয়া সোফিয়া পর্ব

এখান থেকে আমরা সোজা সুজি চলে এলাম অন্য গাইডের সাথে ইস্তাম্বুলের আসল দর্শনীয় আয়াসোফিয়ায়  (Hagia Sophia) , যেটি দাঁড়িয়ে আছে আমাদের হোটেলের উল্টোদিকে বা ( Sultanahmet Square)
সুলতানামেট স্কোয়ারে।এই জায়গাটিকে হিপোড্রোমও (Hippodrome) বলে। এখানেই কাছাকাছি দাঁড়িয়ে রয়েছে আয়াসোফিয়া, ব্লু মস্ক, ইসলামিক আর্ট মিউজিয়াম। আছে আরও অনেক কিছু, সেটাতে পরে আসব। এই জায়গাটা আসলে আমাদের কলকাতার এস্প্ল্যানেডের মত । এখানে পার্ক, আড্ডা মারার জায়গা ইত্যাদি নানা কিছু আছে এবং সবই কাছাকাছি। একেবারে সাড়ে বত্রিশ ভাজার মত।

এখানে এসে দেখি, ও বাবা এ একেবারে বিশাল ব্যাপার। তবে আপাতঃ দৃষ্টিতে যা লাগে তা আগে বলি। আয়া সোফিয়ার মাঝে মাথার উপর একটি বড় ডোম, তবে তা অন্যান্য জায়গার মসজিদের মত বা তাজমহলের মত নয়।  এটি ঠিক উলটানো গামলার মত। তার সামনে আরও দুটি ডোম আছে যেগুলি প্রধানটির চাইতে অপেক্ষাকৃত নীচু। এর চারদিকে ডোমের চেয়ে উঁচু চারটি মিনার আছে ।তবে সে মিনার গুলির মাথাও আমি অন্য কোন জায়গার সাথে মেলাতে পারলাম না। সেগুলির মাথা ছুঁচালো পেন্সিলের মত।এখানে সব মসজিদই এই রকম দেখতে।

এটি সেই যুগের কনস্টানটিনোপলের বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের কেন্দ্রমণি ছিল। সমস্ত উৎসব অনুষ্ঠান এখানে হত। এটি ৫৩৭ খ্রীষ্টাব্দে কন্সটান্টিনোপলের রোমান অর্থোডক্স চার্চ হিসাবে তৈরী হয়। পরে এটি কিছুদিনের জন্য ক্যাথোলিক চার্চ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। পরে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের পতনের পর অটোমান তুর্কীদের হাতে পড়ে এটি ১৪৫৩ সালের পর থেকে মসজিদে রূপান্তরিত হয়। আবার তাদের হাত থেকে যখন কামাল আতাতুর্ক এটি গ্রহণ করেন ১৯৩৫ সালে, তিনি সব ধর্মীয় গোলোযোগ মেটানোর জন্য এটিকে মিউজিয়ামে রূপান্তরিত করে দিয়েছিলেন। শুনছি নাকি, বর্তমান তুরস্ক সরকার এটিকে আবার সম্প্রতি ২০২০ সালে ১০ই জুলাই মিউজিয়াম থেকে মসজিদে রূপান্তরিত করেছেন।এখন চারিদিকে যে ভাবে মৌলবাদীদের ধর্মীয় প্রভাব বাড়ছে, সেক্ষেত্রে এটা হতেই পারে। ভারতবর্ষেও হিন্দুত্বএর ধ্বজাধারীরা সব মুসলিম নাম বা স্থান পরিবর্তনের চেষ্টায় আছেন।আবার অতীতেও মুর্শিদাবাদ, এলাহাবাদ (আল্লাহাবাদ) ইত্যাদি হয়েছে।এই রকম সব দেশেই যুগে যুগে হয়েছে বা এখনও হচ্ছে। যার যখন রাজত্ব থাকে সে তার মত পরিবর্তন করে বা সেটি ধ্বংস করে।

শুনেছি এখানে মোট যত স্তম্ভ আছে তার মধ্যে বেশিরভাগ , প্রায় ১০৪ টি নাকি আনা হয়েছিল পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের এক আশ্চর্য যে এফেসাসের আর্টেমিসের মন্দির, সেটির ভেঙ্গে যাওয়া স্তম্ভ থেকে।এছাড়াও মিশর থেকেও এসেছিল বেশ কিছু। মিশর থেকে আনা  ওবেলিস্ক তো আমরা দেখেইছি, পরে তার কথা বলব।( তবে এই সমস্ত পাথরের স্তম্ভ নয়া ভেঙ্গে, অত দূর থেকে , চড়াই উৎরাই পেরিয়ে কোন বাহনে, কিভাবে এতদূর এনে যত্ন করে বসানো হয়েছিল, আমি তো ভেবে উঠতে পারলাম নয়া। আপনাদের চিন্তার উপরে ছেড়ে দিলাম।গাইডও কিছু বলতে পারল না।   এই বিল্ডিং টি ২৬৯ ফুট লম্বা আর ২৪০ ফুট চওড়া। এটি নাকি তখনকার দিনে সবচেয়ে বড় মসজিদ ছিল।আজও তুরস্কে যত বেশি মানুষ আসেন, তার মধ্যে সব চেয়ে বেশি আসেন, বোধ হয় ,এই মসজিদ দেখতে। এটিকে ইউনেস্কো হেরিটেজ বলে ঘোষণা করেছিল। অবশ্য এটিকে আবার মসজিদে রূপান্তরিত করায়, তাদের ক্ষোভ রয়েছে।এটি তৈরী করেছিলেন  গ্রীক স্থপতি ইশিডোর (Isidore) ও এন্থেমিয়াস (Anthemius)।


সত্যিই এতবড় মসজিদ বা কোন হলঘর আমি আগে  দেখি নি। বাইরে থেকে ঢোকার মুখ থেকেই গাইড আমাদের দেখাতে থাকল, নানা যুগের নানা কাজের স্মৃতিচিহ্ন। এটা যে চার্চ ছিল, তার চিহ্নও অনেক রয়ে গেছে, যদিও কিছু কিছু মুছে ফেলা হয়েছে। সেটাই গাইড বিশেষ করে আমাদের বোঝাতে চাইল।আমি  দেখলাম কয়েকটি  জায়গায়  বড় বড় যীশুর বা মাতা মেরীর এবং তাঁর পারিষদদের ছবি এখনও রয়ে গেছে অনেক পরিবর্তনের  মধ্যেও। ভিতরে ঢুকে এর বিশালত্ব ও উচ্চতা আমাদের হাঁ মুখকে আরও প্রসারিত করে দিল। বিস্ময়ের ঘোর কাটতেই সময় গেল।ঢোকার মুখ থেকে শুরু করে প্রতি পদে পদে নানা দর্শনীয় কাজ। প্রচুর দর্শনার্থী ভিতরে রয়েছেন। ভিতরে রয়েছে বিশাল বিশাল ঝাড় লণ্ঠন , এত বড় ঝাড় লণ্ঠন সত্যিই আমি দেখিনি। ভিতরে সিলিং এবং চতুর্দিকে প্রচুর কারুকাজ ও চিত্রের সমাহার। এত নিখুঁত ব্যাখ্যা বা বর্ণনা দেওয়া এই জায়গায় সম্ভব বা উচিতও নয়।এত বর্ণনা দিলে পাঠকের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটবে। যাই হোক, ডানদিক দিয়ে উপরে যাওয়ার একটি সিঁড়ি আছে, যাতে উঠে, ভিতরের চারধার দিয়ে একটা ব্যালকনি রয়েছে,  তাতে ওঠা যায়। সেখান থেকে উপরে বা নীচেও সমস্তটাই দেখা যায়, যেমন অনেক অডিটোরিয়ামে থাকে।দেশ বিদেশের থেকে আনা নানা  ধরণের কাঁচের কি অদ্ভূত কারুকাজ, মন ভরে যায়।সঙ্গে গাইড, ইউসুফ একটি স্বল্পভাষী কমবয়সী ভদ্র ছেলে।আমরাও গেলাম উপরের ব্যালকনিতে। সে  আমাদের ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সব দেখাচ্ছিল আর বোঝাচ্ছিল কোন ছবির আর কোন জিনিষের কি গুরুত্ব।সব মনে থাকার কথা নয়, সম্ভবও নয়।এর উপরের কাঁচের জানালা দিয়ে দেখছিলাম উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে একটু দূরে ব্লু মস্ক।

এত কাছাকাছি দুটো এত বড় মসজিদের কি প্রয়োজনীয়তা ছিল কে জানে! আসলে আমার মত একই আপত্তি তুলেছিলেন, তখনকার জনসাধারণ বা মৌলবীরাও। কিন্তু সুলতানের খেয়াল চাপলে তাঁরা কোন দিনই কোন নিয়ম মানেন না । তিনি যা বলেন বা করেন তাই নিয়ম, কারোর কোন আপত্তিই চলে না সেখানে ।কাজেই সমস্ত মানুষের সব আপত্তি কঠিন ভাবে অগ্রাহ্য করে দেশের সম্পদনাশ করে, দেশবাসীর ঘাড়ে ঋণের বোঝা চাপিয়ে এই মসজিদ তৈরী হয়েছিল। আজও কি আমাদের দেশে ছোট বা বড় সব রাজাদের হাতেই তাই হচ্ছে না?  সেখানে জনগণের, ঋণের বোঝা ঘাড়ে নেওয়া ছাড়া, কোন অধিকারই নেই। 

এখান থেকে এলাম বাইরে।এখান থেকে ও নিয়ে চলল , খেতে। আগেই বলেছি সুলতানামেট জায়গাটি একেবারে আমাদের এস্প্ল্যানেড। এখানে একটি দোকানে দেখলাম কাবাব হচ্ছে। একটা বড়  সোজাসুজি দাঁড়ানো লোহার শিকে অনেক মাংস গাঁথা আছে, সেটা আগুনের উপর ঘুরছে আর, কেউ চাইলে তাকে কেটে কেটে দিচ্ছে। একে বলে, ডোনার কাবাব (Doner kebab) । আগে এধরণের জিনিস দেখিনি।ঝকঝকে সুন্দর ট্রাম চলেছে সামনে দিয়েই। ট্রামে আবার নিজেই টিকিট কেটে উঠতে হয়। রাস্তার পাশেই ট্রাম স্টপে আছে স্বয়ংক্রিয় টিকিট মেসিন। তাতেই টিকিট কাটা যায়। এছাড়া আর একটি  আকর্ষণীয় জিনিস বিক্রী হচ্ছে যথেষ্ট। তা হল বেদানার রস। একেবারে আমাদের এখানের চিনাবাদাম ওয়ালার মত প্রচুর লোক বিক্রী করছে। আমরাও খেলাম।বেশ সুস্বাদু।তবে সস্তা মোটেই লাগল না আমাদের কাছে।এখানে ভিখারী থেকে ভবঘুরে, দর্শক, অফিসযাত্রী, ছাত্রছাত্রী নানাধরণের ফেরিওয়ালা সব ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর তাছাড়া আছে বিভিন্ন ধরণের দোকান। আমাদের ইউসুফ জানিয়েছিল, এখানে নাকি আমাদের দেশের একটা দোকান আছে, ইচ্ছা করলে যেতে পারি। গিয়েছিলাম আমরা।সামনেই, রাস্তার উপরেই। সেটি ছিল রাজস্থানের জুয়েলারী আর নানা হস্ত শিল্পের সামগ্রীর দোকান। ভারত থেকে এসেছি শুনে ওঁরা যথেষ্ট খাতির আর আপ্যায়ন করলেন, কিন্তু ওঁদের জিনিস কেনার মত সাধ্য বা ইচ্ছা ছিল না তাই বললাম, এখন ঘুরে বেড়াব তো, নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। দেশে গিয়ে যোগাযোগ করব।  

 এখানে ইউসুফ  আমাদের একটি রাস্তার পাশের চালু দোকানে নিয়ে গেল ছেলেটি।ওর পরিচিতই মনে হল। রাস্তার পাশে, তবে বেশ পরিচ্ছন্ন , ব্যবস্থাপত্র বেশ ভালই এবং খাবারও সুস্বাদু।অনেক লোকই খাচ্ছে। আমি দেখি, ও নিজে খেল না। আমি ভদ্রতার খাতিরে বললাম, তুমিও খেয়ে নাও আমাদের সঙ্গে। ও সবিনয়ে জানাল, এগুলো আমিষ দোকান। ও কট্টর নিরামিষাশী। এখানে ও খাবে না। আমি চমকে উঠলাম। তুরস্কের মুসলমান ছেলে, সে কিনা কট্টর নিরামিষাশী! ও জানাল, ওদের বাড়ীর কেউই খায় না। আমার ধারণার একটু পরিবর্তন হল বৈকি! মুসলমান অর্থেই যে আমরা মাংসাশী বা 'গরু খায়' এমন ধারণার বশবর্তী হয়ে পড়ি, তা সম্পূর্ণ ভুল।

এখানে ছেড়ে দিয়ে ও বলল, আজ এই পর্যন্ত। কাল দেখাব অন্য জিনিষ। আজ চাইলে আপনারা নিজেরা পাশেই একটা সুন্দর বাগান আছে দেখতে পারেন, যেখান থেকে বসফরাসের দৃশ্য দেখতে পারেন, বা কাছেই রয়েছে মিউজিয়াম , তাও দেখতে পারেন। কাল খুব সকালে তৈরী থাকবেন।

ও চলে যাওয়ার পর আমরা গেলাম সেই পাশের বেশ বড় পরিচ্ছন্ন বাগানে,(Gulhane Park) যেখানে বড় বড় গাছে উড়ে বেড়াচ্ছে টিয়ার দল আরও অনেক নাম না জানা পাখী।দু চারজন লোক ছাড়া কেউ নেই বিশেষ। বাগানের পিছন সীমানার দিকে এগিয়ে দেখি, দূরে দেখা যাচ্ছে বসফরাস। তাতে ভেসে যাচ্ছে বড় বড় ক্রুজ, জাহাজ। কত দেশের কত রকমের ছোট বড় জাহাজ যে চলেছে তার শেষ নেই। বেশ সুন্দর লাগছিল ছায়ায় ঘেরা নির্জন বাগানে কিছুটা সময় কাটাতে। 

এখান থেকে বেরিয়ে কাছেই রয়েছে মিউজিয়াম। ইস্তানবুল আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়াম (Istanbul Arkeoloji muzesi) . বেশ বড় মিউজিয়াম।টিকিট কেটে গেলাম এখানে। হাতে যখন একটু সময় রয়েছে, যতটা হয় দেখেই আসি। এই মিউজিয়ামটি ১৩ই জুন ১৮৯১ সালে তৈরী হয়েছিল।এখানে প্রায় ১০ লক্ষেরও বেশি দ্রষ্টব্য  জিনিস আছে। এখানে রয়েছে প্রচুর টার্কিশ, রোমান ও গ্রীক জিনিসপত্র।প্রাচীন ঐতিহাসিক আশ্চর্য,  মসুলাসের মন্দিরের ভগ্নাবশেষের জিনিসপত্র, আগামী কাল যে হিপোড্রোম দেখব, তার দ্রষ্টব্য - সার্পেন্টাইন স্তম্ভের সাপের মাথা, অনেক সুদৃশ্য মমির কফিন বাক্স, আলেক্সান্দারের মূর্তি, এথেনার মন্দিরের ভগ্নাংশ, কিউনিফর্ম লিপিতে লেখা প্রচুর জিনিসপত্র, ইত্যাদি। তবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্তই এটি খোলা থাকে এবং এত জিনিস দেখার জন্য বাকী সময়টুকু যথেষ্ট নয়। তাই একটু পা চালাতে হচ্ছিল, যতটা পারি দেখে নিতে। দেখলাম একটি খোলা মমিও। একটি পাথরে খচিত সুদৃশ্য কফিন বাক্সও (Sarcophagus) দেখলাম, যেটি নাকি আলেক্সাণ্ডারের। পাথরের কফিন বাক্স অবশ্য অনেক দেখেছি। এগুলো বেশ কারুকার্যমণ্ডিত।

পরদিন ভোরে উঠে জানালা দিয়ে তাকালাম।আসলে প্রথম ভোরেই উঠে, দেখেছিলাম জানালার পর্দা সরিয়ে, দিনের প্রথম মিষ্টি আলো এসে পড়ছে আয়া সোফিয়া ও অন্যান্য মসজিদের চূড়ায়।বেশ সুন্দর লাগছিল। তাই সেই লোভেই আজও উঠেছিলাম।বেশ লাগছিল খুব হাল্কা ভোরের ঠাণ্ডা হাওয়ায় মসজিদের আজানের সুর। আজানের সুরেরও যে একটা যাদু আছে, সেটা মুয়াজ্জিন এর গলার কারুকাজের জন্য না এই মিষ্টি এবং উপযুক্ত পরিবেশের জন্য তা বুঝলাম না । বেশ লাগছিল কিন্তু !আজানের সুরও যে বেশ ভাল, এখানে না এলে বুঝতাম না। 

মুখ হাত ধুয়ে 'ফ্রেস ' হয়ে নীচে এসে দেখি, হোটেলের সামনের চত্বরে, লোকে পায়রার ঝাঁককে গম জাতীয় কিছু খাবার খাওয়াচ্ছে।তার সঙ্গে রয়েছে একদিকে একরাশ বিড়াল। তাদেরও খেতে দিচ্ছে দুজন লোক। আমার গিন্নীর আবার বিড়ালের প্রতি আকর্ষণ খুব।সে কথা আগেই বলেছি। কাজেই তিনি তো বিড়ালদের দেখেই খুব খুশী হয়ে গুটি গুটি তাদের কাছে এগোলেন।দেখি, ওদের মাখন মাখা পাঁউরুটি দেওয়া হচ্ছে। সবার সাথে কথা বলে এক অদ্ভুত জিনিস জানলাম। প্রথমতঃ এই বিড়ালগুলো মাখন পাঁউরুটি ছাড়া অন্য কিছু  খেতে চায় না। আমরাও পরে ওদের জন্য হোটেল থেকে মাখন পাঁউরুটি নিয়ে গিয়েছিলাম।বিড়ালেরা তখন আরাম করে তা খেয়েছিল। আর দ্বিতীয় কথাটি হল, ওরা বিশ্বাস করে , হজরত মহম্মদ খুব বিড়াল ভাল বাসতেন। তাই ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা বিড়ালকে খাওয়ানোকে  পূণ্যের কাজ বলে মনে করে।জানা হল নূতন আর এক তথ্য। 
এর পর এগোব পরের পর্বে–

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments