জ্বলদর্চি

গুচ্ছ প্রেমের কবিতা-৫/বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়

গুচ্ছ প্রেমের কবিতা-৫

বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়


কত টুকু জানি

কত কথা বলে এসে , করে চলে শুধু  কানাকানি,
পাশে এসে বসেও তো , তবু তাকে কত টুকু জানি !
নাম তো জানি না তার শুধাইই নি জানতে চাই নি ,
বেশি কথা বলবার পরিচয় জানবার সময়ও পাইনি।।

এ মন সাগর যেন বিশাল বিপুল আয়তনে ,
হারানো বরং সোজা তবু খুঁজি বিনা প্রয়োজনে,
দরকার দেখি নি তো যা বলার বলেছে সে নিজে,
যদি ও বুঝি নি মানে একটানা বলে গেছে কি যে।।

অচেনা বাসর ঘরে চুল গুলি উঠেছিলো কেঁপে,
হালকা সুবাস এসে নাকে যেন লাগছিলো ফেঁপে,
মিষ্টি হাসির রেখা লেগে ছিলো বুঝি তার ঠোঁটে ,
নীরবতা মাঝে বুঝি না বলার কথা গুলি ফোটে।।

তার এ হৃদয়  বুঝি সুবাসিত গোলাপের বন ,
রূপকথা কতো বলে নীরবেই থেকে সারা ক্ষণ।
সুবাতাস দেবে কি সে  নিঃস্বাস চাই যে আমার,
শোনাবে সে সব কথা ভালোবাসা এবং আশার?


গয়না

লকারে রেখেছো সকল গয়না রাখতে পারোনি ঘরে
ঘরেতে রাখলে ভয়ে ভয়ে থাকো , পাছে চোরে চুরি করে,
লকারেই থাকে সকল গয়না,
সে সব তোমার পরাই হয়না,
লাভ টা কি বলো সেই গয়নার যেটা থাকে অগোচরে,
তবু ফি বছর গয়না না পেলে মুখ রাখো ভার করে।।

রোজগার করি খরচ হয়ে যায় জটিল হিসাব ভারী,
তারই মধ্যে ধী বুদ্ধি বলে করি এ চমৎকারী ।
রিকশা চড়ি না পায়ে হেঁটে চাই,
টিফিন না খেয়ে পয়সা বাঁচাই ,
বড়ো ভালোবেসে  তোমার জন্য কিনি এই উপচারই।।


সময়

সময়কে বাঁধা যায় কাল জয়ী মহিমায় বেঁধে ?
জানি না কি উত্তর খুঁজি নি কখনো এর মানে,
আসতে যখন তুমি জরি পাড়ে চুল গুলি বেঁধে,
সুবাসিত কেশপাশ কথা বলে যেতো কানে কানে।

চিত্রকর  এসে যদি দেখতো তোমাকে এই রূপে,
হাতে তুলে নিতো সে যে ক্যানভাস, রং আর তুলি,
ভরে যেতো চারি দিক সুরভিত পুষ্পসার ধূপে ,
কি ভাবে তোমার এই সুবাসিত স্থিতি টাকে ভুলি !

ক্যানভাসে ছবিখানি অক্ষয় হয়ে যেতো নাকি ?
ছবিটি নিতাম আমি তোমাকে সরিয়ে রেখে দূরে,
তোমার শ্রীময়ী রূপ কিছুই তো রাখেনি সে বাকি,
পাশে রেখে ছবিটিকে দেখতাম শুধু ঘুরে ঘুরে ।।

ছবি ও তোমার মাঝে প্রভেদ তো নিশ্চয় আছে ,
কালাতীত নও তুমি  জরাহীন সুদেহিনী নও ,
অক্ষয়  রূপটাকে  চির দিন রেখে দেবে কাছে ?
সকলে সাবাস দেবে পারো যদি এরকমই হও ।


পরির কথা

সুন্দরী তাই সকলেই বলে পরি,
রূপের বাহারে সকলে ঘায়েল হয়,
চিনি না তো তাকে তবু বলি,"সুন্দরী,
আসবে কি কাছে  করে নিই পরিচয়" ।।

পরি যারা তারা সেয়ানাই নাকি হয়,
মৃদু হেসে বলে ," যেখানে যাচ্ছো যাও,
অচেনার সাথে করি না তো পরিচয়
পরিচয় করে লাভটা কি  পেতে চাও ?"

আমি বলি তারে," আমি মাছ ধরা জেলে,
জাল ফেলে মাছ ধরাই আমার পেশা ,
তোমার মতো  জেলেনি সঙ্গে পেলে,
কেটে যেতো যতো পরিদের দেখা নেশা "।।

সে ফের বললো," নেশা যদি কেটে যায়,
তখন আমাকে ত্যাগ দেবে নিশ্চয় ,
বিতাড়িত হয়ে কোথায় আবার যাই,
তাই ভালো বুঝি না হওয়া এ পরিচয়"।

এ পরি দেখছি সহজ ও  সরল নয় ,
লাভ লোকসান হিসাব ভালোই বোঝে,
তবু তাকে আমি ফের করি অনুনয় ,
বলি,"ভালোবাসা ভালোবাসাকেই খোঁজে"

বললো সে পরি ,'আমি স্বর্গের পরি ,
কেউ কেউ তাই হুরি নাম ধরে ডাকে,
বাঁধতে চেও না কোমরেতে দিয়ে দড়ি,
যে দেয় মুক্তি আমি ভালোবাসি তাকে ।।


সময়

তুমি বলেছিলে আসবেই ঠিক সাতটা দশের ট্রেনে,
আমি এসে গেছি সাতটারও কিছু আগে ,
গোলমাল হয় জানি তো সেটাই বাস ও অটোর চেনে
কেন যে এলেনা সে প্রশ্নটাই  বার বার মনে জাগে ।।

চিন্তার স্রোত বয়ে চলে মনে সময় পার হয়ে গেলে,
তবে কি আমার ভাবনাতে  ভুল আছে ?
পারবো না কিছু কারণ জানতে তোমাকে কাছে না পেলে,
মনে মনে চাই তুমি এসে পড়ো কাছে।।

আমাকে এখন ভালো কি লাগে না ? এসেছে অন্য কেউ?
'মিছে সন্দেহ' এটা কি বলতে পারো ?
এই অনাগমন এ ভীরু মনেতে তোলে প্রশ্নের ঢেউ ,
এ অবিশ্বাস আমার মন হতে কাড়ো ।।

ভালোবাসা এক মহান চেতনা ভালোবাসা নয় সোজা,
দুটি মন মিলে এক মন হতে হয় ,
প্রেমী ও প্রেমিকা যদি সদা ভেবে ভালোবাসা এক বোঝা,
ভালোবাসা  সেথা কখনও প্রণয় নয়।।


অনুতাপ

রেগে দুর্বল ‌‌‌‍দেহ নিয়ে তুমি হাসছিলে-
                                     বহুক্ষণ।
বলেছিলাম আমি,'রুগ্ন শরীর কেন হাসো
                                 অকারন'?
রেগে বলেছিলে,'আমারই বাড়িতে হাসাটাও
                                       কি বারণ'?
বলেছিলাম আমি,'এ'ত হাসি নয়
                                      পাগলের লক্ষণ'।

হাসি থেমেছিল , নেমেছিল চোখে 
বাঁধভাঙা  আঁখি জল।
বলেছিলাম আমি, " এ অশ্রু  নয় ,
এটা তোমার এক ছল।
বহুদিন হতে এটা জানি আমি
 কান্না  তোমার বল।
এই ভাবে কেঁদে আমার মনকে করো
 তুমি দুর্বল"।

শোকে, অভিমানে ক্রন্দনরত মুখ
                        হয়েছিলো ভার।
নতমুখে ছিলে আমার দিকেও চাইছিলে
                         না তুমি আর
হৃদয়ে আমার চেপেছিল যেন পাষাণের
                       একভার।
কটু কথা বলে বুকটা আমারও করছিলো
                       তোলপাড়।

অনুতাপ আর অনুশোচনায় বলেছিলাম
                        আমি,"শোনো
কখনও ত আমি দিই নি তোমাকে অকারণে
                         ব‍্যথা কোনো
তোমার অভিমানে ব‍্যথিত আমিও, আকুল
                          আমার মনও,
ভুলে যাও যেটা বলেছি তোমাকে আমার
                           মিনতি শোনো "।।

কিছুতেই হাসি আসেনি তোমার বেদনা
                            বিধুর মুখে,
কত যে দুঃখ কত অভিমান জমেছিল
                             ঐ বুকে।
ভাবছিলাম আমি কিভাবে তোমার মন ভরে
                               দেব সুখে,
আশঙ্কা তার উদ্বেগ রাশি ভিড় 
করছিলো বুকে।।

এর পর আরও পাঁচদিন আমি পেয়েছি
                            তোমাকে সাথে
কত রোগ জ্বালা সহ্য করেছ সকাল, দুপুর
                            রাতে।
বুঝিনি'ত আমি, চলে যাবে তুমি বিধাতার
ক্রুর ঘাতে।
ক্ষমা চাইবারও সময় পাইনি হাতে।।

অশ্রু সজল চোখে আজ বলি,"একবার
                            এসো কাছে,
তোমার কাছে যে এখনও আমার ক্ষমা
                         চাওয়া বাকি আছে"।।


প্রেম

প্রেম এলে মনে বুকটা হালকা হয়,
সরে গেলে প্রেম পাথরট চাপে বুকে,
প্রেমের কারণে সব হয় রূপময় ,
মনটা তখন ভরে ওঠে কতো সুখে।।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments