জ্বলদর্চি

বুভুক্ষা/মিলন পুরকাইত

বুভুক্ষা

মিলন পুরকাইত 

- "আনিসুর, ওদিকে কী হয়েছে রে? শিবুর গলার আওয়াজ পাচ্ছি।"

- "মালিক, শিবুর কোনো দোষ নেই।"

- "মেলা বকবক না করে যেটুকু জিজ্ঞাসা করলাম, সেটার উত্তর দে ।" 

- "মালিক, ওই যে বাচ্চা ছেলেটা দেখছেন? খেয়েছে মাংস-ভাত, আর এখন বলছে অত টাকা তো নেই, যা আছে তাই নিয়ে ওকে যেতে দিতে। তাইজন্যই তো শিবুদা চেপে ধরেছে।" 

- "অ্যাই শিবুউউউ।" রতন সরকারের ডাকে হোটেলের সবার ঘাড় ঘুরে গেল একই দিকে।

- "হ্যাঁ, রতনদা, এই তো আসছি। এই সন্তু আট নম্বরের খদ্দেরটা যেন চলে না যায় খেয়াল রাখ।" বলে শিবু তড়িঘড়ি মালিকের কাছে এসে হাজির হল।

- "কী হয়েছে যে ব্যবসা-পাত্তির শুরু হতে না হতেই শালিকের কিঁচির মিঁচির শুরু হয়ে গেছে!"

- "রতনদা, দেখো না ওই ছেলেটা দিব্যি খেয়ে-দেয়ে এখন বলছে যে অত টাকা নেই। কার না মাথা গরম হয়!"

- "দেওয়ার আগে তুই জিজ্ঞাসা করিসনি যে কী খাবে?"

-"না, মানে, আগেই করিনি।" শিবু আমতা আমতা করতে থাকে।

- "জানিস না যে জিজ্ঞাসা করা দরকার?" রতন সরকারের পারদ উপরে ওঠে।

- "আসলে মাংসের প্লেট বিক্রি হলে তো তুমি প্লেটপ্রতি উপরি দাও, তাই কেউ নিজের থেকে কিছু না বললে চেষ্টা করি মাংস একবারে নিয়ে যাওয়ার, সামনে নিয়ে গেলে বেশীরভাগ খদ্দেরই নিয়েও নেয়। তবে এই ছেলেটাকে বাটি করে মাংস দেওয়ার সময় তো জিজ্ঞাসা করেছি। মাথাও নেড়েছে, তাই তো দিলাম।"

- "বুঝলাম। তোর বেশী পাকামির জন্যই ব্যবসার সময় এসব ঝামেলা পোহাতে হয়।"

- "না, না, রতনদা, বিশ্বাস করো, জিজ্ঞাসা করেছি ..."

- "তুই থাম। এই আনিসুর, ওকে ডেকে নিয়ে আয় তো আমার কাছে।" রতন সরকার শিবুকে মাঝপথেই থামিয়ে আনিসুরকে পাঠালেন বাইরের দিকের টেবিলে বসা ওই খদ্দেরকে ডেকে আনতে। একটা কিছু বিহিত তো করতে হবে। ভর দুপুরবেলা ব্যবসার সময়ে এসব উটকো ঝামেলা নিয়ে পড়ে থাকলে আদতে ব্যবসারই ক্ষতি।

- "মালিক, এই যে কথা বলুন।"

রতন সরকার ভালো করে চেয়ে দেখলেন ছেলেটাকে। বয়স সতেরো কি আঠারো হবে, সদ্য গোঁফের রেখা উঠেছে। মাথায় একরাশ অবিন্যস্ত চুল, তার নীচে বিষন্ন দুটো চোখে সুস্পষ্ট ক্লান্তির ছাপ। পরনে ধূলিমলিন একটা জামা, প্যান্টটায় বেশ কিছু জায়গায় তাপ্পি মারা। তবে এসব দেখে দেখে রতন সরকারের মাথার চুল সাদা হয়ে গেছে। এসব মাথায় ঢোকালে ক'দিনেই ব্যবসা গুটিয়ে যাবে, এত লোক ভিড় করতে শুরু করবে বিনে পয়সায় খাওয়ার জন্য। একশো চল্লিশ কোটির দেশে গরম সাদা ভাতের যে বড্ড অভাব।

- "তোমার কাছে যখন টাকা নেই, তাহলে মাংস-ভাত নিলে কেন?" রতন সরকার কিছুটা খেঁকিয়েই জিজ্ঞাসা করলেন ছেলেটাকে।

- "লোভে পড়ে।" ছেলেটার সংক্ষিপ্ত উত্তর শুনে সবাই একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে লাগল।

- "হ্যাঁ, লোভে পড়ে। অনেকদিন ভাতই খাইনি, আর মাংস-ভাত তো শেষ কবে খেয়েছি ভুলেই গেছি। তাই বাটি করে নিয়ে আসায় আর লোভ সামলাতে পারিনি।"

- "ভাত খাওয়া হয়নি, তাও আবার অনেকদিন! মানে?"

- "আমার ঘর তো এখানে না, ওই সেই পাথরপ্রতিমার কাছে এক গাঁয়ে। বাপ নাকি অনেক ছোটবেলায় ছেড়ে চলে গেছে। মা আর আমি থাকতাম। মাসখানেক হল মা গত হওয়ার পর কাজের খোঁজে কলকাতা এসেছি। ওই বড়রাস্তার ধারে ঝুপড়িতেই ছিলাম বেশ কিছুদিন। ফাইফরমাস খাটতাম এর ওর দোকানে, খাওয়ার জুটে যেত। দিন দশেক হল জানেনই তো ঝুপড়ি ভেঙে দিয়েছে, কী সব বিশাল বড় বাড়ি হবে, তাতে নাকি বড় বড় সব দোকান-পাট হবে। এখন কাজও নাই, পেটেও কিছু নেই সেরকম।" একটানা কথাগুলো বলে ছেলেটা থামল।

অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী রতন সরকারের পুরোটা বুঝতে ও সেইমত পরবর্তী কী করণীয় ভেবে নিতে বেশী সময় লাগল না। বেশ কিছুদিন ধরেই একটা কম বয়েসি চটপটে লোকের সন্ধানে ছিল। দেখে তো মনে হচ্ছে একে দিয়েই হবে, আর কথায় বলে পকেট আর পেট খালি থাকলে তার চেয়ে বেশী কাজের আর বিশ্বস্ত লোক কেউ হয় না। 

- "কী নাম তোর?" রতন সরকার বাচ্চা ছেলেটাকে এবার 'তুই' করেই সম্বোধন করলেন।

- "সমীর।"

- "কাজ করবি আমার এই হোটেলে?"

- "সত্যি বলছেন! আমাকে কাজে রাখবেন! আমি তো বেঁচে যাব আপনি এইটুকু দয়া করলে।" হাতজোড় করে বিস্ময়াবিষ্ট সমীর বলে ওঠে।

- "আচ্ছা, আচ্ছা, ঠিক আছে, আর হাতজোড় করতে হবেনা। তোর কাজ হল আপাতত টেবিল পরিষ্কার করা আর হরেনকে বাসন ধুতে সাহায্য করা। মাইনে সপ্তাহে, সপ্তাহে। শিবু তোকে সব কাজ বুঝিয়ে দেবে। আর থাকার ব্যবস্থা ওই ওদের সাথেই, এই হোটেলের পাশেই দুটো ঘর আছে, ওখানেই।"

- "আপনি সাক্ষাৎ ভগবান। এই ঋণ কোনোদিন ভুলব না।" সমীর যেন হাতে স্বর্গ পেল।

- "আর শোন, কাজে ভুল হলে কিন্তু টাকা কেটে নেব বলেই দিলাম। আপাতত যা। এই আনিসুর ওকে থাকার জায়গাটা দেখিয়ে দিয়ে আয়। কাল থেকে কাজে লেগে পড়বে তোদের সাথে।"

- "আচ্ছা, মালিক।" বলে আনিসুর সমীরকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।

আনিসুর নতুন ছেলেটাকে বাসায় রেখে ফেরত আসে মিনিট দশেকের ভিতরেই। "সৌদামিনী" হোটেল আবার চলতে থাকে নিত্যকার স্বাভাবিক ছন্দে। নেই নেই করেও প্রায় বছর পঁচিশেক হয়ে গেল রতন সরকারের এই হোটেলের বয়স। প্রতিনিয়ত দুপুরের এই সময়টাতে আর রাত্রি আটটার পর থেকে খদ্দেরের ভিড়ে গমগম করে। শিবু, আনিসুর, হরেন, শ্যামল, সন্তু সমেত রতন সরকারের নিজেরও দম ফেলার ফুরসত মেলেনা। কাল থেকে দলে আরো এক নতুন সদস্য যোগ হল।

পরদিন সকালে বাকিদের সাথে সমীরও কাজে আসে। এসে দেখে রতন সরকার ভিতরে ওনার বসার জায়গায় পূজো সারছে। আগেরদিন রাতেই সবার সাথে আলাপ পরিচয় হয়ে গেছে। সবাই নিজের নিজের মত করে এই হোটেল, তার অলিখিত নিয়ম-কানুন, এলাকায় তার পরিচিতি, আরো নানা ইতিবৃতান্ত আর সাথে মালিক রতন সরকারের স্বভাব-বৈশিষ্ঠ্য যতটা সম্ভব পুঙ্খাণুপুঙ্খভাবে তুলে ধরেছে সমীরের সামনে ওইটুকু রাতেই। এই নতুন জীবনটার কথা ভেবে মা-বাপ মরা, আশ্রয়হীন ছেলেটা মনের গহীনে এক গোপন রোমাঞ্চ অনুভব করতে থাকে।

বেলা গড়িয়ে ঘড়ির কাঁটা বারোটার ঘর পেরোতেই আস্তে আস্তে ভিড় বাড়তে থাকে। রোজকার চেনা চিত্র। চারপাশে খদ্দেরের হাঁকডাক, শিবুদের ব্যস্ততামাখা কণ্ঠস্বর আর তার সাথে বাসনের আওয়াজ মিলেমিশে এক অদ্ভুত শব্দজাল তৈরী হয়েছে।

- "সমীর, পাঁচ আর তিন নম্বরের থালাটা তুলে নিয়ে হরেনদাকে দিয়ে আয় জলদি।" শ্যামলদার ডাক শুনেই চিন্তার জাল কেটে সমীর দ্রুত এগিয়ে যায় ওদিকে। 

এইভাবেই সবার অলক্ষ্যে ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে চলে আপন গতিবেগে। তিনটের পর ফাঁকা হয়ে গেলে রতনবাবু খেতে গেলেন আর ওরাও সব নিজেদের মত নিয়ে খেতে বসল।

- "কীরে, কেমন লাগছে?" সন্তু খেতে খেতেই জিজ্ঞাসা করল সমীরকে।

- "ভালো, খুউব ভালো। আমি তো প্রথম কাজ করছি হোটেলে, তাই একটু আধটু দেরী হচ্ছে, কিন্তু কদিনের মধ্যেই শিখে নিতে পারব পুরোটা। কী বলো?" মুখে হালকা হাসি ঝুলিয়ে সমীর কিছুটা ইতস্ততভাবেই প্রশ্নটা ছুড়ে দেয় বাকিদের উদ্দেশ্যে।

- "আরে, সব শিখে যাবি আস্তে আস্তে। আমরা আছি তো।" ওপাশ থেকে শ্যামল বলে ওঠে।

এইসব অবিন্যস্ত কথা-বার্তার হরেক টুকরোর মাঝেই খাওয়া-দাওয়া শেষ করে কিছুক্ষণের বিশ্রাম। তারপর আবার এবেলার প্রস্তুতি। এই অবসর সময়টাতে কেউ ব্যস্ত ভাত-ঘুমে, কেউ আবার গান শুনতে, কেউ বা তাস খেলতে। সমীরও একটু ঘুমোনোর চেষ্টা করে। কতযুগ যে প্রাণভরে একটু ঘুমোয়নি!

এরপর সন্ধ্যে হয়ে ক্রমে রাত নামে আর 'সৌদামিনী' হোটেলের দিনলিপির শেষাংক এগিয়ে চলে নিত্যকার চেনা ছকে তার চিরাচরিত কুশীলবদের নিয়ে। কালের নিয়মে এভাবেই একটা একটা করে দিন এগিয়ে চলে। অবশেষে সপ্তাহান্তে রতনবাবু এক এক করে সকলের মাইনে দিয়ে দেন। সমীরও বাদ যায়না। রঙিন কাগজের টুকরোগুলো হাতে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ এক জায়গায় চুপটি করে বসে থাকে। মনে পড়ে যায় মা মারা যাওয়ার পরে দাহ করার মত টাকাটুকুও ছিলনা ওর হাতে, সেটুকুও উতরেছিল লোকের দয়ায়। আর তার বিনিময়ে কত কিছুই না শুনতে হয়েছিল। মনে মনে শুধু এটুকুই ভাবে, রঙিন কাগজগুলো কী ভীষণ শক্তিশালী! 

- "কী হল, আবার আমার কাছে এলি যে! কী হয়েছে?" সমীরকে ওনার কাছে ফেরত আসতে দেখে রতনবাবু কিছুটা বিরক্তির সুরেই জিজ্ঞাসা করে উঠলেন।

- "একটা কথা বলার ছিল, বাবু।"

- "আবার কী!"

- "বলছি যে, আমার তো তিনকুলে কেউ নেই, অত টাকা পয়সা সারাক্ষণ লাগেনা। তাই আমার সপ্তাহের টাকার থেকে অর্দ্ধেক কেটে রেখে দিন। আমার যখন লাগবে আমি চেয়েই নেব।"

- "সে ঠিক আছে কিন্তু হঠাৎ এরকম ভাবনার কারণটা কী?"

- "কিছু না, বাবু। আপনার কাছে থাকা মানে তো আমার কাছেই থাকা।" বলে সমীর অর্দ্ধেক টাকা ওনার কাছে দিয়ে আবার নিজের কাজে চলে যায়।

কিছুদিনের মধ্যেই রতনবাবু বুঝতে পারে ছেলেটাকে কাজে রেখে ভুল করেননি, ছেলেটা কাজেরও আছে আর বাকিদের সাথে মিলে মিশে চলতেও জানে। তাছাড়া রতনবাবুকে ব্যবসার কাজে মাসে এক-দুবার কলকাতা যেতেই হয়, তখন শিবুকে ক্যাশটা সামলাতে হত রোজকার কাজের সাথে সাথে আর এখন সমীর থাকায় শিবুর ওপর চাপটাও কম পড়ে। কমপয়সায় একটা ভালো কাজের ছেলে পেয়ে যাওয়ায় ওনার ব্যবসায়ী মন যারপরনাই খুশি। ওদিকে সমীরও হাতে চাঁদ পাওয়ার মতই খুশি। একটা মাথা গোঁজার ঠাই, সাথে খাওয়া-দাওয়া ফ্রী, উপরন্তু মাস গেলে বেশ কিছু টাকা মাইনেও হাতে আসে। সমীর মনে মনে ভাবে এর চেয়ে বেশী আর কীই বা চাই!

******
******

একদিন কলকাতা থেকে ফেরার সময় খানিক দূর থেকেই দেখতে পায় দোকানে বেশ ভীড়। পৌঁছে দেখে একগাদা কোথাকার সব উদ্বাস্তু ধরনের ছেলে মেয়ে টেবিলে বসে খাচ্ছে আর হই-হট্টগোল করছে। পরনের পোষাক শত ছিন্ন, ধূলোমাখা; মাথার চুলগুলো তেল না পড়ে পড়ে লালচে, খানিক জট পড়া; আর কয়েকজনের তো পা অবধি মাটিতে ঠেকেনা এতই ছোট। চেটে পুটে মাংস-ভাত খাচ্ছে, আর আঙ্গুল বেয়ে ঝোল গড়াচ্ছে। এইধরনের ছেলে-মেয়ে রোজ দোকানের সামনে ভীড় করে থাকে সেই শুরুর দিনগুলো থেকেই। রতনবাবু এগুলোকে সারাজীবনই পাত্তা না দিয়ে ভাগিয়ে দেয়। আজ ওনার অনুপস্থিতিতে কর্মচারীদের এই দুঃসাহস দেখে ওনার মাথায় রক্ত উঠে যায় মূহুর্তের মধ্যে।

- "আনিসুর, কী হচ্ছে এগুলো?" ওনার চিৎকারে মূহুর্তের মধ্যে পুরো হোটেল চুপ হয়ে যায়।

আনিসুর মুখ কাঁচুমাঁচু করে এগিয়ে এসে বলে, "আমি বারন করেছিলাম। বলেছিলাম মালিক রাগ করবে। শুনলো না, বলল, আপনাকে বুঝিয়ে বলবে নাকি।"

- "কে বলেছে এই কথা? কার এত বড় সাহস! কে দেবে এদের টাকা!" রতনবাবুর আওয়াজ তখনো একইরকম উচ্চগ্রামে।

- "আমি বলেছি বাবু।" সবার মাঝে সমীরের গলার আওয়াজ শুনে রতনবাবু আরো চিৎকার করার আগেই সমীর বলে ওঠে, "আসলে, এদের মধ্যে ভীষণভাবে নিজেকে খুঁজে পাই। এরাও খেতে পায়না নিয়মিত, যেদিন পায় তাও আধপেটা। রোজ খাওয়ানোর সামর্থ্য তো আমার নেই, ভাবলাম যে ক'টাদিন পারব। কাউকে খাওয়ালে তো কমে যাবেনা কিছু। আমার তো তিন কুলে আর কেউ নেই যে টাকা জমিয়ে রাখব। তাই আপনার কাছেই টাকা রেখে দিয়েছি যাতে এদের খাওয়ার জন্য খরচা ওটা থেকে হয়ে যায়। আপনি আমার মত অসহায়কে থাকা-খাওয়ার আশ্রয় দিয়েছেন, আপনার ব্যবসার ক্ষতি করতে পারি কখনো!"

হোটেলে হঠাৎ করে যেন এক অদ্ভুত স্তব্ধতা। কচি-কাঁচাগুলোও কি জানি কী বুঝে আর হৈ-হট্টগোল করছেনা। শিবু, সন্তু, শ্যামল সবাইই মাথা নিঁচু করে দাঁড়িয়ে ভাবছে মালিকের মুখে মুখে কথার ফল তো পেতেই হবে সমীরকে, কাজটা যে আর থাকবে না বোঝাই যাচ্ছে। রতন সরকার একদৃষ্টিতে ছেলেটাকে দেখছে। প্রথমবার ভালো করে দেখছে। ওই শান্ত চোখদুটোর মধ্যে যে এত মায়া, মমতা, দৃঢ়তা লুকিয়ে আছে, এতদিন খেয়ালই হয়নি। 

- "তুমি ভিতরে এসো। এই শিবু আর সন্তুও আয়।"

ওরা ভিতরে যেতেই রতন সরকার ধীর-স্থির ভাবে বললেন, "কাল থেকে এই বারোজনের রোজকার খাওয়ার ব্যবস্থা এখানেই করে দিও। যেটুকু যা সম্ভব তাই না হয় ব্যবস্থা করব।"

ওরা কী বলবে ভেবে পায় না। 

- "বাবু, আপনার মত মানুষ বড্ড বিরল আজকের দুনিয়ায়। আমার মত এক অভাগাকে আশ্রয় দিয়েছেন, আজ আবার এতগুলো বাচ্চার দায়িত্ব নিলেন। সাক্ষাৎ ভগবান।"

- "ওসব ভগবান কিছু না, আমরা সবাই মানুষ। আর শোন, একটা কথা বলি, আমি এসে অনেক কিছু বলেছি তোকে। কিছু মনে করিস না। যা, দেখ গিয়ে বাচ্চাগুলো ঠিকমত খেলো কিনা।" এই বলে রতন সরকার ওদের কাজে পাঠিয়ে খানিক চুপটি করে বসে রইলেন নিজের চেয়ারে। 

মনে একটা ভীষণ প্রশান্তি অনুভব করলেন। কোথাও জানি আজ ব্যবসায়ী রতন সরকারের সামনে সৌদামিনীদেবীর ছেলে "রতু" জিতে গেল, মানুষ হিসেবে। কিছু কিছু জিতের কোনো সাক্ষী হয়না, কিন্তু সে জিতের সুখানুভূতি মিশে থাকে সমগ্র শরীর-মন জুড়ে, আবহমান কাল যাবৎ।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments