জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা - ৮৫

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা - ৮৫



সম্পাদকীয়,
ঘুরতে কে না ভালোবাসে বলো? আমি ঘুরতে ভীষণ ভালোবাসি, তোমরাও ঘুরতে ভালোবাসো আর প্রচ্ছদের ছোট্ট বন্ধুটাও ঘুরতে খুব খুব ভালোবাসে। ও গ্রাম ঘুরতে বেড়িয়ে পড়েছে। সেই ছবি ঋপণ আঙ্কেল তুলে আমাদের জন্য পাঠিয়েছেন। ওদিকে মলয় জেঠু আমেরিকার আলাস্কায় ঘোরার গল্প বলেছেন। জয়াবতীর জয়যাত্রায় সেন মশাই যাবেন গঙ্গায়। কেন জানতে হলে পড়ে নাও তৃষ্ণা আন্টির উপন্যাসের এবারের অংশটি। এবারের পর্বে যার কথা পীযূষ আঙ্কেল বলেছেন, তিনি রামকিঙ্কর বেইজ। এনার শিল্পকর্ম দেখতে হলে বেড়িয়ে এসো শান্তিনিকেতন। সমুদ্রে বেড়াতে যেতে কার না ভাল লাগে? মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় আন্টি একটি মেয়ের সমুদ্র জয়ের গল্প বলেছে। দিব্যেন্দু বেড়াতে গেছে দেশের বাড়ি মেদিন্যিপুর। দিব্যেন্দু কে? জানতে হলে পড়তে হবে জয়ন্তী আন্টির গল্প। কেমন লাগল জানাবে কিন্তু। কি লিখব ভাবছো? কি লিখব ভাবছে তোমাদের বন্ধু অনামিতা। বেড়াতে গেলে মন ভালো হয়ে যায়। তাইনা? আর বেড়ানোর গল্পে মন কেমন হল জানিও কিন্তু।  - মৌসুমী ঘোষ।


ধারাবাহিক উপন্যাস
জয়াবতীর  জয়যাত্রা
সপ্তদশ পর্ব
তৃষ্ণা বসাক


তর্পণের উজ্জুগ
২১
কদিন ধরে ওরা শুনছিল, সেনমশাই তর্পণ করতে যাবেন গঙ্গায়, বাড়িতে তার  তোড়জোড় চলছে। তর্পণ মানে বোঝেনি জয়াবতী। সে পুণ্যিকে চুপিচুপি জিজ্ঞেস করল ‘তর্পণ মানে কী রে পুণ্যি?’
অন্য কথায় পুণ্যি যেমন গালে হাত দিয়ে অবাক গলায় বলে ‘তাও জানিস নে গঙ্গাজল? এতটা বয়স হল তোর!’ তেমনটা না করে খানিক মনমরা স্বরে বলল ‘যে সব গুরুজন সগগে গেছেন, তাঁদের উদ্দেশে জল দিতে হয় এই বচ্ছরকার মহালয়ার দিন। আকাশে বসে ওঁরা তো এই জলটুকুর প্রতীক্ষেই করছেন’
এমন কথা আগে কোনদিন শোনে নি জয়াবতী। তার পিতাঠাকুর কি করেন না তর্পণ? নাকি সে-ই খেয়াল করেনি এতদিন?  ভারি অদ্ভুত কথা তো। যে মানুষগুলো এই পিথিমি ছেড়ে চলে গেছে, তারা বসে আছে এই জলটুকুর জন্যে? আহা রে। কিন্তু, কিন্তু এর মধ্যে যেন একটু গোলমাল আছে। মানুষ মরেই যাক বা বেঁচেই থাকুক, তাদের এমন অসহায় ভাবতে মোটেই পারবে না সে। সে যেন একটা দারুণ কথা খুঁজে পেয়েছে এমনভাবে লাফিয়ে উঠে বলল ‘আহাহা রে পুণ্যি, খুব বললি যাহোক।

আকাশে বসে আছে এই পিথিমির জলের জন্যে! পাশ দিয়ে মেঘ ভেসে যাচ্ছে না যেন। হাত ঢুকিয়ে ফুটো করে ফেললেই তো দেদার জল পাবে। একেবারে অঝোর ধারায় জল। সে জল ফেলে তোর এই পিথিমির জলের জন্যে হাপিত্যেশ করে বসে থাকতে বয়ে গেছে ওদের। তাছাড়া সগগে কত বড় নদী আছে তুই জানিস? অলকানন্দা না কী যেন নাম। আর গঙ্গা নদীও তো সগগ থেকেই নেমেছে বলেই জানি। সগগে কি জলের অভাব! আর কী মিস্টি সেই জল রে পুণ্যি, কী বলব তোকে! আচ্ছা তুই বল সগগের অমৃত ফেলে তুই কি কাঁটা চচ্চড়ি খেতে চাইবি?’
বলেই জিভ কাটল জয়াবতী। একাদশীর উপোস করানো বন্ধ করা গেলেও পুণ্যিকে মাছ খাওয়া ধরানো যায়নি এখনো। ভারি ঘাড়বেঁকা মেয়ে যাহোক। তবে সেনমশাই অনেকবার বললেও ঠাকমা বা খুড়িমা বেশি সাধাসাধি করেনি পুণ্যিকে। জয়াবতী একটু নিরাশই হয়েছে তাতে। তার ধারণা হয়েছে পুণ্যি মাছ খাক তা এরা চায় না বুঝি। যাক গে, বেশিক্ষণ কোন সমস্যা নিয়ে মন গুঁজে থাকতে পারে না জয়াবতী, সে সবসময় সমাধানের রাস্তা খোঁজে।

সে ঝলমলে মুখে  বলতে গেল ‘আরে ডাঁটা চচ্চড়ি বলতে কাঁটা চচ্চড়ি বলেছি, তুই আবার এই নিয়ে ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ শুরু করিস না’ কিন্তু নিজেকে সামলে নিল  পুণ্যির চোখে জল টলটল করছে দেখে। পুণ্যির চোখে জল কোন আশ্চর্য ঘটনা নয়, কিন্তু এখন এর কারণ মাথা খুঁড়েও বার করতে পারল না সে। এখানে এসে ইস্তক দিব্যি আছে তারা। পেরজাপতি জুটে একেবারে নরক গুলজার। সারাদিন হাসি, গল্প লেগেই আছে। সময় যে কোথা দিয়ে কেটে যায় বুঝতেই পারে না।

তবে এখনো তাদের গাঁ থেকে পত্তর আসেনি, পুজোয় কি তারা বাড়ি যাবে না? এই নিয়ে কি মন খারাপ পুণ্যির? সে বলতে গেল ‘চিন্তে করিস নে, আজ কালের মধ্যেই পিতাঠাকুর লোক পাটাবেন’
কিন্তু তার আগেই পুণ্যি বলল ‘আচ্ছা গঙ্গাজল, স্বামীও তো গুরুজন, বল?’
অমনি জয়াবতীর কাছে পুণ্যির মনের ভেতরটা একদম স্পষ্ট হয়ে উঠল। এই  তর্পণ, স্বামী - সব কিছু একটাই সুতো দিয়ে বাঁধা। সেই সুতোটা হচ্ছে  পুণ্যির মনের সাধ। পুণ্যির যে বর মারা গেছে, তার জন্যে, সেন মশাইয়ের দেখাদেখি তারও তর্পণ করতে সাধ জেগেছে।
জয়াবতীর মোটেই পছন্দ হল না ব্যাপারটা। ছোট্ট এতটুকু ছেলে, তিনদিনের জ্বর হয়ে মরেছে বলে কি মাথা কিনে নিয়েছে নাকি? অমনি তাকে গুরুজন বলে জল দিতে ছুটতে হবে?
সে ঠোঁট উল্টে বলল ‘কে জানে! তোর তো সবাই গুরুজন দেখি। সেদিন দেখলাম তুই মঙ্গলা গাইটার পায়ে পেন্নাম ঠুকছিস। তা গরু যার গুরুজন, স্বামীও হতেই পারে। যা বুজলাম,  আসল কথা হল, সেনমশাইকে বলে তোর গঙ্গাঘাটে তর্পণের ব্যবস্থা করতে হবে, এই তো?’
এই কথায় পুণ্যির মুখে যে হাসি ফুটল, তার কাছে শরতের সোনা রোদ তুচ্ছু।
(ক্রমশ)


সাগর জয়ী সায়নী 
মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস 

একটি মেয়ের নাম সায়নী, কালনাতে তার বাড়ি,
ছোট্ট থেকেই স্বপ্ন দেখে সাগর দেবে পাড়ি।
বাবা মা তার স্বপ্ন সাথী, উৎসাহ দেন তাতে,
সরিয়ে রেখে সুখের জীবন হাত রাখলেন হাতে।
কঠিন লড়াই জলের সাথে, স্রোতের সাথে বাস,
জলেতে তার সূর্য ওঠা, সন্ধ্যা বারো মাস।
পড়াশুনায় ছেদ পড়ে নি এত সবের ফাঁকে,
কম্পিটিশন পুকুর নদী নাড়িয়ে দু হাত ডাকে।
সাগর তাকে পাঠায় চিঠি ঢেউএর খামে পুরে,
সব সাঁতারুর স্বপ্ন চ্যানেল - ইংল্যান্ড বেশ দূরে।
জয় করে নেয় অবলীলায়, ভয় করে না মোটে,
ফিরতে দেশে, খ্যাতির মুকুট মেয়ের মাথায় ওঠে।
খুব সাধারণ ছিল যেমন তেমনি চলা হাঁটা,
মাথার ভেতর চিন্তা নতুন পথে সাঁতার কাটা।
রটনেস্ট আর ক্যাটারিনা পার করেও ফেলে,
সার্ক জেলিফিস রাতের আঁধার সব দু হাতে ঠেলে।
ভারত মাকে তুষ্ট করে এশিয়া মহাদেশের
প্রথম নারী হবার আশায় গেল হাওয়াই দেশে।
'মলোকাই' সে নিল জিতে এই তো সদ্য ভোরে,
জয় সায়নী, ভারত আবার পৌঁছে বিশ্ব দোরে।
মাতলো খুশির আবীর মেখে, ছোটরা তার কথা
শুনে ভাবো তোমরাও ঠিক তুলবে নিজের মাথা
নিজের নিজের ক্ষেত্র চিনে, ছড়িয়ে দেবে আলো।
জয় সায়নী,এমনি আরও আশার প্রদীপ জ্বালো।


সত্যি বলছি
জয়ন্তী মণ্ডল

ক্লাস নাইনের অ্যানুয়্যাল পরীক্ষায় বাংলায় পঁচিশ পেয়ে মার্কসিটখানা যখন মায়ের হাতে দিলাম মায়ের গম্ভীর মুখখানা দেখে আমার যে কী ভয়ানক অবস্থা। সে আর বলার নয়। ভাবলুম, মা যদি এমন হন, বাবা অফিস থেকে ফিরে না জানি কি রূপ ধরবেন।  আজ পিঠ বাঁচাবার আর কোনো উপায় নেই । 
          এসব কথা ভেবে দুপুর বেলা খেয়ে বাবার পড়ার লাইব্রেরি ঘরে শুতে গেলুম। কোনো রকমে যখন ঘুম আসছে না তখন বাংলা ব্যাকরণ বই খানায় নিয়ে বসলুম। যাতে ক্লাস টেন এ আর গলতি না থাকে। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও ব্যাকরণটায় মন দিতে পারলাম না। ঝুপ করে গিয়ে দুটো বইয়ের র‍্যাক বাদ দিয়ে শেষের বইয়ের র‍্যাকের নীচের তাকটার কতগুলো বই সরিয়ে শুয়ে পড়লুম।
শুয়ে শুয়ে ভাবছি আজ যদি মেদিনীপুরের গ্রামের বাড়ি চলে যেতে পারতাম, তবে হয়তো এবারের মতো রক্ষা পেতাম। ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি।
    মেদিনীপুরের একেবারে প্রান্ত লাগোয়া আমাদের রামচক গ্রাম। গ্রামের শেষপ্রান্তে বাবার ঠাকুরদার আমলের প্রকান্ড দোতলা পাকা বাড়ি। বাড়ির সামনে খামার। খামার লাগোয়া  ধু ধু মাঠ। বাঁ দিকে কিছুটা গেলেই ছোট্ট মত টিলা। দূর থেকে দেখলে মনে হবে টিলার পাশেই আমাদের বাড়িখানা। বাড়ির পিছনে খিড়কি পুকুর। পুকুর ঘাটের সিঁড়ি উঠে এসেছে বাড়ির পিছনের দরজা পর্যন্ত।
          আমি যখন বাড়ির সামনের খামারটায় এসে দাঁড়ালাম তখন প্রায় সন্ধে।
          এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে দেখতে না  পেয়ে আমার গা ছম ছম করতে লাগল। ভাবলুম গাঁয়ের লোকেরা তবে কি আমাকে ভুল পথ দেখাল। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে খিঁড়কির পুকুরে হাত পা ধুয়ে দুটো সিঁড়ি উঠেছি, দেখি ঘাটের মুখে দাঁড়িয়ে আছেন একজন বয়স্ক মতো লোক। পরনে খাটো ধুতি, গায়ে একখানা জামা।
          আমাকে দেখে একগাল হেসে বললেন-–পথে কোনো কষ্ট হয়নি তো দাদু?
          আমি প্রথমটায় একটু চমকে গেলেও সেটা  বুঝতে না দিয়ে বললাম, তুমিই বুঝি আমাদের সেই শশাঙ্ক দাদু? যার কথা বাবা খুব ....
          আমার কথা শেষ হবার আগেই দাদু হেসে বললেন, হ্যাঁ আমিই তোমার শশাঙ্ক দাদু।
         
অবাক হব না সবাক হব ভাবছি এমন সময় দাদু বললেন, চলো দাদু।
       শশাঙ্ক   দাদুর পিছন পিছন উঠোন পেরিয়ে এসে বারান্দায় দাঁড়াতেই দেখি একজন কালো পেড়ে সাদা শাড়ি পরিহিতা বয়স্ক মহিলা দাওয়া থেকে নেমে এসে আমায় চুমু খেয়ে বললেন, খুব কষ্ট হল না কী দাদুভাই?
          আমি বললাম, একদম না।
         শশাঙ্ক দাদু বললেন,  উনি তোমার ঠাকুমা।
         আমি পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম। উনি আমায় চুমু খেয়ে বললেন, চলো দাদুভাই অনেকক্ষণ বেরিয়েছ, আগে কিছু খেয়ে নেবে চলো। 
          বাড়ি থেকে খালি হাতেই বেরিয়েছিলাম। তাই সোজা দাওয়ায় পাতা আসনে বসে পড়লাম। ঠাকুমার পাশে বসে ওনার হাতের গরম গরম লুচি আর আলুভাজা খাচ্ছি। ঠাকুমা পথের কথা, বাবা মার কথা, বাড়ির লোকজনের কত কথা জিজ্ঞেস করছেন। 
          এতটা পথ। খুব খিদেও পেয়ে গিয়েছিল। খেতে খেতে  ভাবছি, ঠাকুমা কেন আমাদের কলকাতার বাড়ি যান না?
        খাওয়া শেষ হতেই দেখি উঠোনে শশাঙ্ক দাদু দাঁড়িয়ে। শশাঙ্ক দাদুকে দেখে ঠাকুমার বললেন শশাঙ্ক , দাদুভাইকে একবার নদীর দিকে বেড়িয়ে নিয়ে এসো। 
          গরম গরম লুচি আর আলুভাজা খেয়ে শশাঙ্ক দাদুর সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম নদীর দিকে। গ্রামের বাড়ির এই নদীটার কথা বাবার মুখে অনেক শুনেছি।
          নদীর ধারে আমি আর শশাঙ্ক দাদু। দুজনে পাশাপাশি বসে। মনটা আমার এক অপরূপ আনন্দে ভরে গেল। 
           দাদু বসে বসে কত গল্প যে বললেন। বাবার ছেলেবেলার কথা, জ্যেঠুদের কথা, পিসিমণিদের কথা। 
            যত শুনছি ততই অবাক হচ্ছি! কখন যে গাড় অন্ধকার নেমে এসেছে খেয়াল করিনি। হঠাৎ পিছন থেকে আমার নাম ধরে ডাকে হুঁশ ফিরল।
          দিব্যেন্দু সন্ধে হয়ে গেল যে। এবার বাড়ি যেতে হবে।
     হকচকিয়ে পিছন ফিরে দেখি একজন বেশ লম্বা বয়স্ক মানুষ দাঁড়িয়ে। পরনে সাদা ধুতি। গায়ে সাদা ফতুয়া। হাতে হাতলাঠি। অন্ধকারে মুখখানা স্পষ্ট দেখা গেল না। 
     ওনাকে দেখে শশাঙ্ক দাদু শশব্যস্ত হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে বললেন, উনি তোমার বড়দাদু, প্রণাম কর।
      আমি তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতেই বড়দাদু আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, এতদিনে মনে পড়ল দাদুভাই। তা’ তুমি একা যে?
     অগত্যা আমাকে সব কথা খুলে বলতে হল।
     দাদু সব শুনে হাসতে হাসতে বললেন, তবে তো এর একটা জব্বর জবাব দিতে হবে দাদুভাই।
      কথা বলতে বলতেই  তিনজনেই কখন বাড়ির সদর দরজার কাছে এসে পড়েছি। দেখি সদর দরজার পাশেই বড় একখানা হ্যারিকেন জ্বলছে।
        হ্যারিকেনের আলো পড়েছে বড় দাদুর মুখে। দাদুর মুখখানা পাণ্ডুর। মুখে গড়গড়ার নল।
         বড়দাদু শশাঙ্ক দাদুকে বললেন, শশাঙ্ক একবার মোহনপুর যাও। সুকুমার মাস্টারকে গিয়ে বলো আমি ডেকেছি।
     আজ্ঞে যাচ্ছি, বলেই শশাঙ্ক দাদু উধাও হয়ে গেল।
     আমি তো থ! ম্যাজিকের মত উড়ে গেল নাকি?
     দাদু গিয়ে হেলান চেয়ারে বসলেন। আমি পাশে একখানা চেয়ারে। দাদুর হাতে তখনো তামাকের গড়গড়ার নল। দাদু গল্প বলছেন, আমি অবাক হয়ে শুনছি। কত রাত হল জানি না। শশাঙ্ক দাদু ডাকলেন, কাকাবাবু খাবার তৈরি।
      খাওয়া দাওয়া সেরে দোতলার ঘরে শুতে গিয়ে দেখি ঘড়ির কাঁটা বারোটা ছুঁই ছুঁই। আমার পাশের ঘরে শশাঙ্ক দাদু। যাবার সময় বার বার করে বলে গেলেন কোনো দরকার পড়লেই যেন আমি শশাঙ্ক দাদুকে ডাকি। দাদুর কথায় সায় দিয়ে আমি শুতে গেলাম।
       ঘরে ঢুকে দেখি ঝকঝকে সাদা বিছানা। বিছানার পাশে টেবিল। টেবিলের উপর পিতলের ঘটিতে  জল রাখা। পায়ের দিকে মাটিতে দম কমানো একটা হ্যারিকেন। মাথার উপরে দেওয়াল ঘড়ি টিক টিক শব্দে এগিয়ে চলেছে।
      সকালে ঘুম ভাঙল শশাঙ্ক দাদুর ডাকে। ঘুম থেকে উঠেই দেখি এক গ্লাস মিছরির শরবত নিয়ে  দাঁড়িয়ে শশাঙ্ক দাদু।
      টেবিলে রাখা ঘটির জলে মুখ ধুয়ে গ্লাসের শরবতটা এক চুমুকে শেষ হতেই শশাঙ্ক দাদু বললেন, বৈঠকখানা ঘরে সুকুমার মাষ্টার বসে আছেন। তুমি তোমার বই খাতা নিয়ে পড়তে বোসোগে যাও।
       আমার মাথায় তো বাজ পড়ল। এখানে এসেও আবার পড়া।
       আমি তাড়াতাড়ি বললাম, বই খাতা এখন আমি পাব কোথায়?
        শশাঙ্ক দাদু বললেন, ওসব তোমায় ভাবতে হবেনা। সুকুমার মাস্টার যখন এসে পড়েছে তখন বই এসে যাবে। আর খাতা তো তোমার বড়দাদু কালকেই আনিয়ে রেখেছেন। দেখো তোমার টেবিলে খাতা রাখা।
      আমি তো হতবাক! এর মধ্যে বড়দাদু কখন খাতা আনালেন। মুখে কিছু না বলে খাতাগুলো নিয়ে বৈঠকখানা ঘরে চলে গেলাম।
       ক’দিনে সুকুমার মাস্টার বাংলার ব্যাকরণটা এত সহজ করে বুঝিয়ে দিলেন যে ব্যাকরণে ভয় জিনিসটাই উবে গেল। পাঁচটা দিন এমন অসাধারণভাবে কেটে গেল, ঠিক যেন স্বপ্ন।
       সেদিন সন্ধেবেলা বড়দাদু আমায় ডেকে বললেন, চোখ বুজো তো দাদুভাই।
        আমি চোখ বুজতেই, বড়দাদু একখানা বই আমার হাতে দিয়ে বললেন, 'সুকুমার মাস্টারের কাছে ব্যাকরণে পুরো নম্বর পাওয়ার জন্য দাদুভাইকে উপহার'।
         বাংলার ব্যাকরণের জন্য পুরস্কার! জীবনে প্ৰথম। বইটা হাতে নিয়ে দাদুকে প্রণাম করলাম।
       বেশ কাটছে। একদিন সক্কালবেলা বড় দাদু শশাঙ্ক দাদুকে ডেকে বললেন, শশাঙ্ক– দাদুভাইকে একবার কুসুমপুরের হাটে ঘুরিয়ে আনো। গাঁয়ের হাট একবার ঘুরে দেখে আসুক। দাদুভায়ের ভালোও লাগবে। অভিজ্ঞতাও হবে।
       শশাঙ্কদাদুর সঙ্গে হাটে এসেছি। দাদু পাঁপড় ভাজা কিনে দিয়েছেন, খাচ্ছি আর বাঁদর খেলা দেখছি। 
       এমন সময় কোত্থেকে মেজমামা এসে হাজির। আমাকে দেখেই আমার কানটা ধরে হিড়হিড় করে টেনে ভিড় ঠেলে নিয়ে চললেন। কানটা ছিঁড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় আমি নিজের কান কোনোরকমে চেপে ধরে আ আ...... করে চিৎকার করতেই ঘুমটা ভেঙে গেল। 
        দেখি মা আমায় ঠেলে তুলছেন।  মাকে দেখে আমি ধড়ফড় করে উঠতে গিয়ে, বই এর র‍্যাকে আমার মাথাটা গেল ঠুকে। কোনোরকমে মাথা বাঁচিয়ে মেঝেতে ধীরে ধীরে নেমে বসলাম।
           মা আমায় চুমো খেয়ে বললেন, হ্যাঁরে এতক্ষণ স্বপ্নে কি সব বলছিলি? শশাঙ্ক দাদু, বড় দাদু, মামা! আমরা সারা বাড়ি তোকে হন্যে হয়ে খুঁজছি, আর তুই বই এর র‍্যাকে শুয়ে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বেমালুম স্বপ্ন দেখছিস। চল, তোর বাবা তোর জন্যে কী এনেছে দেখবি।
          হাতে তখনও রয়ে গেছে ব্যাকরণ বইখানা। আমি তাড়াতাড়ি বইটা বন্ধ করতেই বইয়ের প্রথম পাতাটা ফ্যানের বাতাসে উল্টে যেতেই লাল কালিতে  লেখাটায় চোখ গেল আটকে। দেখি পাতার ঠিক মাঝখানে লাল কালিতে লেখা –
       'দিবাকর মাস্টারের কাছে ব্যাকরণে পুরো নম্বর পাওয়ার জন্য দাদুভাইকে উপহার'।
লেখাটা পড়েই আমার বুকটা যেন তোলপাড় করে উঠল। আমি চারদিক তাকিয়ে দেখলাম। মনে মনে ভাবলুম তবে কি দাদু....! বইটা নিয়ে নিঃশব্দে মাথায় ঠেকিয়ে প্রণাম করলাম। মাকে কিচ্ছুটি টের পেতে দিলাম না। 
       তারপর বইটা বন্ধ করে  ওপরের তাকে বইখানা লুকিয়ে তুলে রেখে মায়ের পেছন পেছন চললাম।
          পরের বছর যখন মাধ্যমিকের রেজাল্ট বের হল, তখন দেখি আমি বাংলায় একশোতে ছিয়ানব্বই নম্বর পেয়ে বাংলার প্রথম হয়েছি।
 

ছড়ার খোঁজে
অনামিতা মুখার্জী
সপ্তম শ্রেণী
ত্রিবেণী টিসুস বিদ্যাপীঠ
হুগলি

ভাবছি একটা ছড়া লিখি
মাথায় কিছুই আসছেনা
কলম হাতে বসে আছি—
 ভাবনা সায় দিচ্ছে না।
শব্দগুলো ওলট পালট,
সেজেগুজে বসছেনা।
মনের ভিতর উথালপাতাল,
ছন্দ মিল হচ্ছেনা।
এদিক-ওদিক বই ঘেঁটে,
প্রকৃতি দেখি পায়ে হেঁটে,
হাওয়ায় দোলে ফুলের সারি
তাই দেখে চোখ সরছে না;
পাতার ফাঁকে হলুদ পাখি,
মিষ্টি সুরে ডাকাডাকি
মন ভরে যায় এসব দেখে;
ছড়ায় কাগজ ভরছে না।
কলম  থামাই—
পাইনা ভেবে আর ,লিখি কী যে?
হঠাৎ দেখি কোথা থেকে
 একটা ছড়া উঠলো জেগে,
খুশি হয়ে কি যে করি?
পাইনি ভেবে আর,
এই ছড়াটাই তৈরি হল।
ভারি চমৎকার !


ধারাবাহিক ভ্রমণ
সান্টা ক্লসের আপন দেশে
পর্ব ১

মলয় সরকার


 আমেরিকাতে ছেলের কাছে এলেই তার মন চুলবুলিয়ে ওঠে বাবা-মাকে একটু বিদেশে ঘোরানোর জন্য। আর বাবা - মাও বুভুক্ষুর মত হাঁ করেই আছে। কোথাও ঘুরতে যাওয়ার কথা হল তো এক কথায় রাজী বা এক পায়েই খাড়া, যাই বলা হোক তা-ই। শেষ বয়সে যা পাওয়া যায় তা-ই লাভ। নিজের ক্ষমতায় দেশের কিছুটা হলেও বিদেশ বলতে মাত্র  ভূটান পর্যন্তই দৌড়। তা ছেলেও ঘুরতে ভালবাসে,  বাবা- মাও তাই।

সেবার ওর কাছে যেতেই প্রস্তাব এল আলাস্কা যাবে? ব্যস, এক কথায় রাজী।' আলাস্কা 'মানে তো সেই এস্কিমোদের দেশ , সেই যাদের কথা ভূগোলে পড়েছি, কাঁচা মাংস খায় আর বরফের ঘর 'ইগলু' তে থাকে;  বরফের সময় কুকুরে টানা স্লেজ গাড়ীতে যাতায়াত করে।তাছাড়া ছ' মাস দিন ছ'মাস রাতের  আশ্চর্য দেশ। এখানে নাকি রাতের  অন্ধকার আকাশে আশ্চর্য রঙ্গীন আলোর ছটা  ‘অরোরা বোরিয়ালিস’ও  দেখা যায়।  ছবির মত  রহস্যময় ঘটনা দিয়ে মোড়া দেশটার একটা স্বপ্নময় দৃশ্য চোখের সামনে নেচে বেড়াতে লাগল।

এই আলাস্কাই  হল সান্টা ক্লসের দেশ। সান্টা ক্লস বললেই মনটা কেমন চনমনিয়ে ওঠে না? সেই বল্গা হরিণের স্লেজগাড়ী চাপা দাড়ীওলা, লাল জামাকাপড় পড়া , মাথায় লাল টুপিপরা বুড়োর হাত নড়া হাসিমুখ। আর পিঠে রয়েছে তোমাদের মত ছোটদের জন্য অজস্র মন ভাল করা উপহার।চারধারে বরফের ছড়াছড়ির মাঝে এপাশে ওপাশে বরফ ঢাকা পাইন গাছ। বড়দিনের রাতে শুয়ে শুয়ে জেগে থাকার চেষ্টা, কখন বুড়ো আসে, ধরতে হবে। কিন্তু কখন যে নেমে আসে গভীর ঘুম, বোঝার আগেই সান্টাক্লস এসে রেখে যায় বালিশের পাশে রঙীন মজাদার উপহার, সেটা আর জানা হয় না কোনদিন।যাই হোক, সান্টা ক্লস মানেই যে ছোটদের মজার বন্ধু তা তো আর কাউকেই বলে দিতে হয় না। কেবল তোমরাই নয়, সারা পৃথিবীর সমস্ত ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের বন্ধু এই বুড়ো সান্টাক্লস। তারা অপেক্ষা করে থাকে কখন এই বুড়োটা আসবে তার উপহারের ঝুলি নিয়ে। 

আমাদের ছোট বেলায় যখন আমরা এই আলাস্কার কথা পড়ি তখন আমাদের কাছে কিন্তু সান্টা বুড়ো আসত না। তার কারণ কি জান, আমরা ওকে চিনতামই না।আমাদের জীবনে ছোটবেলায় এই সান্টা ক্লস কিন্তু ছিল না । এই সান্টা ক্লস আমাদের কাছে এসেছে অনেক পরে। 

আমরা বইতে  পড়েছিলাম যে আলাস্কা দেশের বা গ্রীণল্যাণ্ডের অধিবাসীদের কথা, তারা খেত কাঁচা মাংস, থাকত বরফের তৈরী গোল ঘরে, যার নাম ইগলু। তাদের বলা হত এস্কিমো। তাদের ছবি দেওয়া হত, মাথায় পালক গোঁজা আদিবাসীদের মত, চামড়ার পোষাক পরা নাক মুখ চ্যাপ্টা এক ধরণের মানুষের কথা।তাদের কথা কিছুটা আন্দাজ, কিছুটা দেখা এইসব মিলিয়ে মিশিয়ে জানা। বিশদেও খুব বেশি জানা হয় নি। তখন তো বেশি মানুষ গিয়ে পৌছায় নি উত্তর মেরুর ঐ দুর্গম অঞ্চলে।কাজেই এদের যে ছবি তুলে ধরা হয়েছিল, তাতে এদের অনেকটা আমাদের রাক্ষস খোক্কসদের মত ভাবা হয়েছিল।আমার মনেও সেই ছবিই ছিল। কাজেই তাকে বাস্তবে আজকে দেখার আনন্দে মনটা নেচে উঠল।
(ক্রমশ)


স্মরণীয়
(রামকিঙ্কর বেইজ)
কলমে - পীযূষ প্রতিহার


প্রখ্যাত ভাস্কর ও চিত্রশিল্পী রামকিঙ্কর বেইজ ১৯০৬ সালের ২৫শে মে বাঁকুড়ার যুগীপাড়ায় এক দরিদ্র নাপিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা চণ্ডীচরণ ও মা ছিলেন সম্পূর্ণা। তাঁদের পারিবারিক পদবী পরামানিক থাকলেও রামকিঙ্করই প্রথম বেইজ পদবী ব্যবহার শুরু করেছিলেন। ছোটোবেলায় পারিবারিক চুল ও দাড়ি কাটার কাজের প্রতি কোনো আগ্রহ ছিল না রামকিঙ্করের। বরং কাদামাটি দিয়ে কুমোরদের মতো মূর্তি তৈরি, পুতুল গড়া, ছবি আঁকায় আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। বাড়ির কাছেই অনন্ত সূত্রধর নামে একজন মূর্তি গড়তেন, তার সঙ্গেই একটু একটু করে হাত লাগিয়ে শেখেন মূর্তি তৈরির খুঁটিনাটি। এই শিক্ষকের কথা সারাজীবন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন তিনি। কৈশোর ও যৌবনে গ্রামে থিয়েটার করতে আসা নানা দলের দৃশ্যপট এঁকে রোজগার করতেন তিনি। স্বদেশী মেলায় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ছবি আঁকতেন। গ্রামের সুরেশ পণ্ডিতের পাঠশালায় প্রথম পড়াশোনা শুরু করেন, পরে পড়াশোনা করেছেন বঙ্গ বিদ্যালয় ও ন্যাশনাল স্কুলে দশম শ্রেণী পর্যন্ত। তারপর চোখে পড়ে যান বাঁকুড়ার বিখ্যাত সাংবাদিক ও 'প্রবাসী' পত্রিকার সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের। তার মাধ্যমেই নন্দলাল বসুর ইচ্ছেয় ভর্তি হলেন শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলার ছাত্র হিসেবে। সেখানে সহপাঠী হিসেবে পেয়েছেন রমেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের মতো ব্যক্তিত্বকে। 

   তাঁর সৃষ্টির মূলে ছিল স্থানীয় উপাদান ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। তিনি মানব ব্যক্তিত্ব, দৈহিক ভাষা ও সাধারণ মানব জীবনের ঘটনায় প্রভাবিত ছিলেন ভীষণ ভাবে। তিনি একাধারে প্রচলিত ঘরাণার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী ও অন্যদিকে নিত্যনতুন রং এর ব্যবহারে পারদর্শী। আধুনিক পশ্চিমা শিল্প ও প্রাচীন ভারতীয় শিল্পের মেলবন্ধনে তিনি তাঁর সৃষ্টিকে উত্তীর্ণ করেছিলেন আধুনিকতায়। ছোটোবেলায় দারিদ্রের মধ্যে কেটেছিল বলে তাঁর ছবিতে প্রাকৃতিক রংয়ের ব্যবহার দেখা যায় বেশি। সীমপাতা থেকে সবুজ, হলুদ থেকে হলদে এবং পুঁইশাকের বীজ থেকে বেগুনী রঙ তৈরি করে ব্যবহার করেছেন ছবিতে। তেল রং এর ব্যবহার করা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে যুক্তি দিয়ে বুঝিয়েছেন শিক্ষক নন্দলালকে। শিক্ষক নন্দলাল বসুও মেনে নিয়েছেন ছাত্রের যুক্তি। 

    তাঁর 'কচ ও দেবযানী' মূর্তিটি একটি প্লাস্টারে তৈরি ৩০ সেন্টিমিটারের বিখ্যাত ভাস্কর্য। চারুকলায় ডিপ্লোমা অর্জন করে তিনি কলাভবনের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন ১৯৩৪ সালে। ১৯৩৫-৩৬ সালের মধ্যে বেশকিছু কাজ সম্পূর্ণ করেছিলেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল - 'রিলিফ সাঁওতাল ও মেঝেন', 'সাঁওতাল দম্পতি', 'কৃষ্ণগোপিনী', 'সুজাতা' প্রভৃতি। ভাস্কর্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের পদও অলঙ্কৃত করেছিলেন। ১৯৩৭ সাল থেকে ছাত্রদের মডেলিং শেখানোর পাশাপাশি নিজেও তেলরং প্রয়োগ নিয়ে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু করেন। এই সময়কালে বেশ কয়েকটি সাড়া জাগানো ভাস্কর্য তৈরি করেছিলেন তিনি। তারমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হল- কংক্রিটের 'সাঁওতাল পরিবার', প্লাস্টারে করা রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতি -'পোয়েটস হেড', সিমেন্টের তৈরি 'হেড অফ এ উওম্যান' এবং 'বাতিদান' উল্লেখযোগ্য। চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকে রঙ্গমঞ্চের মঞ্চসজ্জার দিকেও ঝুঁকেছিলেন তিনি। এই সময়ে তাঁর মঞ্চসজ্জা ও নির্দেশনায় সুকুমার রায়ের 'হ-য-ব-র-ল', রবীন্দ্রনাথের 'রক্তকরবী' এবং 'মুক্তধারা' যথেষ্ট দর্শক প্রশংসা পেয়েছিল।
     তাঁর কয়েকটি ভাস্কর্য শান্তিনিকেতনের কলাভবন, চারুকলা একাডেমী ও অন্যান্য বহু স্থানে সংরক্ষিত আছে। দিল্লিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার দপ্তরে 'যক্ষ ও যক্ষিনী' র চব্বিশ ফুট উঁচু মূর্তি তার তৈরি একটি বিখ্যাত ভাস্কর্য। এছাড়া হাঙ্গেরির বালাতন হ্রদের তীরে একটি স্বাস্থ্য নিবাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যে আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা আছে সেটি তাঁর বিশ্বজনীন স্বীকৃতির স্মারক।
     ১৯৭০ সালে এই বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ও ভাস্করকে ভারত সরকার পদ্মভূষণ সম্মান প্রদান করে। ১৯৭৬ সালে তিনি ললিতকলা একাডেমীর ফেলোশিপ লাভ করেন। ১৯৭৯ সালে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডি লিট দেয়। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সম্মান দেশিকোত্তম পেয়েছিলেন তিনি।
      ১৯৮০ সালের ২ আগষ্ট এই প্রথিতযশা শিল্পী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

আরও পড়ুন 
জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments