মেদিনীপুরের মানুষ রতন, পর্ব - ৩
ড. সুব্রত মুখোপাধ্যায়, লোকসংস্কৃতি গবেষক, ঝাড়গ্রাম
ভাস্করব্রত পতি
তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। ঝাড়গ্রামের রাজা নরসিংহ মল্লদেবের অনুরোধে ম্যালেরিয়া চিকিৎসার জন্য সাঁকরাইলের কুঁকড়াখুপিতে নদীয়া থেকে আসেন ডাঃ সনৎ মুখোপাধ্যায়। মিলিটারি ক্লিনিকের চিকিৎসার দায়ভার নেন এই ডাক্তারবাবু। সেখানেই থেকে যান। নদীয়া ফিরে যাননি তিনি। এখানেই স্ত্রী স্মৃতিকণাকে নিয়ে রয়ে যান চিকিৎসক আবাসনে। জন্ম হয় 'মেদিনীপুরের মানুষ রতন' হয়ে ওঠা ড. সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। ১৯৪৯ এর ৬ ই জানুয়ারি তাঁর জন্ম। জঙ্গলমহলের খেটে খাওয়া মানুষজনের দৈনন্দিন জীবনের ধর্ম, সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন, খেলাধূলা, সামাজিক রীতিনীতির চর্চাই হয়ে উঠেছে তাঁর লেখনির মূল উপজীব্য বিষয়। তাই তিনি অচিরেই পরিচিত হয়েছেন ‘জঙ্গলমহলের সিধু জ্যাঠা’ নামে। গত ২০২১ এর ৫ ই আগস্ট মৃত্যু হয় এই সদাহাস্যময় গবেষক মানুষটির।
লঙ্কার জন্য বিখ্যাত কুঁকড়াখুপির স্থানীয় কুঁকড়াখুপি গড় উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুরু ছোটবেলার পাঠ। এরপর পার্শ্ববর্তী রগড়ার রাজা নরসিংহ মল্ল অ্যাকাডেমি থেকে স্কুলের গণ্ডি পেরোনো। চলে এলেন ঝাড়গ্রাম শহরে। ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজ থেকে ইতিহাসে সাম্মানিক ডিগ্রি অর্জন। শাল, কুরচি, মহুলের জঙ্গলে 'ইতিহাসের ভূত' দেখা দিল তাঁর মাথায়। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন স্নাতকোত্তরের জন্য। কিন্তু বাবার অসুস্থতায় তা পড়া হল না। অনেক পরে ১৯৮০ তে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাইভেটে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করলেন। ইতিমধ্যে সেবায়তন কলেজ থেকে বি.এড. ডিগ্রি লাভ করে ফেলেছেন।
একসময় শীতলার পালাগায়ক ছিলেন। দিনের বেলা পেটের তাগিদে শিক্ষাদানের কাজ, আর রাতের বেলা মনের তাগিদে শীতলার পালাগানের কাজ -- এভাবেই তাঁর মিটত মনের খিদে। লুকিয়ে লুকিয়ে পালাগান দেখতে গিয়েই পালাগানের প্রতি ভালোবাসা জন্মে যায়। সেখান থেকে শীতলার গবেষক হয়েছেন। এই শীতলার গানের জন্য প্রতিরাতে ৫০০ টাকা করে পাওয়া গায়ক হয়ে উঠলেন অন্যতম 'গবেষক'। একেবারে গ্রামের মানুষের নিজস্ব এই লোকদেবীই হয়ে উঠল গবেষণার মূল আকর। গড়ে তুললেন নিজস্ব পালাগানের দল, তখন বয়স মাত্র ২২ বছর। এই পালাগানের সূত্রেই বিদেশযাত্রার ডাক পেলেও সৌভাগ্য হয়নি বিদেশ যাওয়ার।
কিন্তু ড. সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে শীতলার বিকিরণ ঘটল উচ্চমার্গের গবেষক মহলে। তিনি লিখেছেন, 'মুখ্য গায়ক হিসেবে সেই ১৯৭১ সাল থেকে বোহেমিয়ান জীবন শুরু হল। পশ্চিম সীমান্ত বাংলা, সন্নিহিত বিহার ও উড়িষ্যার অসংখ্য গ্রামীণ আসরে শীতলামঙ্গল গান পরিবেশন কালে দেখলাম লোক সংস্কৃতির অমূল্য রত্নরাজি অবিন্যস্ত অবস্থায় অবলুপ্তির পথে। প্রস্তর জঙ্গলাকীর্ণ পশ্চিম সীমান্ত বাংলায় শীতলা লৌকিক ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতিকে উপেক্ষা করে অন্ধকারাচ্ছন্ন শতাব্দীগুলো থেকে লোকায়ত নিয়মে শবর, লোধা, সাঁওতাল, মুণ্ডা, বাগদী, বাউরী, কেওট, ডোম প্রভৃতি আদিম উপজাতীয় ‘দেহুরী’রা করে চলেছেন এঁর পূজার্চ্চনা। বিশ্ব আজ বসন্ত ব্যাধি মুক্ত—কিন্তু বসন্তের দেবী কিভাবে এখনও স্বমহিমায় বিরাজিত, জানার আগ্রহ আমাকে গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করে। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, পৌরাণিক গ্রন্থ সমূহ ও পূর্বসুরী গবেষকদের গবেষণাপত্র পাঠ করেও আমার জিজ্ঞাসু মন অতৃপ্ত থাকে।'
ড. সুব্রত মুখোপাধ্যায় নামটার অন্তঃস্থলে লুকিয়ে আছে জঙ্গলের সবুজ চিরহরিৎ মানুষজনের প্রতি এক অমোঘ ভালোবাসায় মোড়া মানুষের পরিচয়। জঙ্গলমহল মানেই কেবল প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, এই আরণ্যক প্রস্তরময় ল্যাটেরাইট ভূমিখণ্ডে বিভিন্ন জনজাতীয় গোষ্ঠীর সৌহার্দ্যপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। আদিবাসী মূলবাসীদের প্রকৃতি পূজা, পালাপার্বণ, লোকাচার, ভাষা, লোকসংস্কৃতি, লোকবিশ্বাস, লোকবিজ্ঞানের মিলিত সংস্পর্শে পুরো এলাকাকে এক অনবদ্য সম্পদের স্বর্ণভাণ্ডারে পরিণত করেছে। সেই মাটিতেই জন্ম তাঁর। সেখানেই বেড়ে ওঠা। লোকচর্চার এহেন পীঠস্থানে তাই স্বভাবতই অপরিমেয় পদচারণা লক্ষ্য করা গিয়েছে। জঙ্গলমহলের ইতিহাস সহ বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর সাথে যে শ্যামল সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল দিনের পর দিন, তার নির্যাসটুকুই আমরা পান করেছি ড. সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কলমের ডোগায়। অমায়িক স্বভাবের এই মানুষটির পরিচয় তাঁর আচার আচরণে। ছোট বড় সকলেই তাঁর মুখে ‘আপনি’ শুনতেই অভ্যস্ত। ক্ষেত্র সমীক্ষার গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, প্রশাসনিক অধিকর্তা, সাংবাদিক থেকে শুরু করে যে কোনও মানুষের তাৎক্ষণিক জিজ্ঞাসার এক নির্ভরযোগ্য উত্তরদাতা ছিলেন তিনি। প্রথমে ঝাড়গ্রামের পদিমা জনকল্যাণ বাণীপীঠের অস্থায়ী শিক্ষকরূপে যোগদান, পরে স্থায়ীকরণ হয়। ১৯৯৯ সালে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগপত্র পান। ২০০৯ তে চাকরিজীবন থেকে অবসর গ্রহণ করলেও তাঁর বিনা বেতনের ‘চাকরি' তথা লোক অন্বেষণ থেমে থাকেনি আমৃত্যু। এর মধ্যে স্থানীয় একলব্য হাইস্কুলে অবসরের পরেও চালিয়ে যান পাঠদানের কাজ।
দেবী শীতলাকে আলোকের ঝরণাধারায় ব্যাপৃত করেছিলেন নিজের অমূল্য গবেষণার মাধ্যমে। টানা ১২ বছর ধরে শীতলামঙ্গল গান গাওয়ার পর ভাগলপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগীয় প্রধান বিমল মুখোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় শুরু করেন শীতলা নিয়ে গবেষণা। ১৯৮৩ সালে ঝাড়গ্রাম শহরে আইনজীবী নির্মল সাধুর বাড়িতে শীতলামঙ্গল গাইতে গিয়ে এই পট পরিবর্তন ঘটেছিল। শীতলাদেবীর বন্দনা করে আশীর্বাদ ভিক্ষা করে তিনি গাইতেন -- ‘কি বন্দিব শিশু আমি / কৈলাস ত্যাজিয়া তুমি / অবনীতে এলে মা শীতলা / কে জানে তোমার তত্ত্ব তুমি রজঃ তুমি সত্য / ব্যাধিপতি ভকত-বৎসলা।' এই বন্দনাগানের প্রত্যুত্তরে আবার তিনিই সুর ধরতেন -- ‘আমি অতি মূঢ়মতি কিছুই না জানি / ভরসা করেছি তোমার চরণ দু'খানি।'
চামর দুলিয়ে যে গান গাইতে গাইতে হয়ে উঠেছিলেন ‘পালাগায়ক’, সেই দেবীর চরণাশ্রিত ভক্তটিই দেবীর কথা স্কন্দপুরাণ এবং পিচ্ছিলতন্ত্র থেকে তুলে ধরলেন সম্পূর্ণ নিজস্ব গবেষণায়, নিজস্ব ঘরানায়। রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনজাতীয় ক্ষেত্রীয় ভাষা বিভাগের প্রধান বিশ্বেশ্বরপ্রসাদ কেশরীর অধীনে ১৯৯৩ সালে পি.এইচ.ডি. অর্জন করেন। বিষয় ছিল 'Evolution and spread of Sitala cult in south western part of Bengal, an Euquiry into folk culture'. ঠিক পরের বছর ১৯৯৪ তে ফার্মা কে এল এম থেকে এই গবেষণাটিই গ্রন্থাকারে 'The cult of Goddess Sitala in Bengal-an euquiry into culture' নামে প্রকাশিত হয়। ব্যাস, তারপর আর থেমে থাকেনি তাঁর নানা ধরণের গবেষণার কাজ।
প্রতিটি লেখাতেই স্পষ্ট লোকজীবন এবং লোকজগতের প্রতি অমোঘ আকর্ষণের কথা। একদম সামনে থেকে দেখা জঙ্গলমহলের গরিব গুর্বো মানুষের দৈনন্দিন সংস্কৃতি, আচার আচরণ উঠে এসেছে তাঁর নিরন্তর লেখনিতে। আস্তে আস্তে হয়ে উঠেছেন জঙ্গলমহলের লোক সংস্কৃতির এনসাইক্লোপিডিয়া। তবে সবকিছুর মূলেই তাঁর ‘পালাগায়ক’ হয়ে ওঠা। সেখান থেকেই লোকসংস্কৃতি ও আঞ্চলিক ইতিহাসের প্রতি তাঁর অমোঘ ভালোবাসার প্রাধান্য পাওয়া। আজ তাই তিনি জেলা তথা রাজ্যের গবেষকমহলে এক অসামান্য আইকন। পুরোধা পুরুষ। অবিসংবাদিত গবেষক।
তাঁর লেখনীতেই প্রস্ফুটিত হয়েছে শীতলার ইংরেজী বইয়ের পাশাপাশি আরো অনেক বই। সেগুলি হল ১। Change: A dying Folk Art of Subarnarekha Basin, FTCC. Govt. of West Bengal (2001) ২। জঙ্গলমহলে লোধা ও বিপন্ন বিনোদন, ঝাড়গ্রাম; ৩। সীমান্ত বাংলার বিলুপ্ত লোকক্রীড়া, আদিবাসী ও লোকসংস্কৃতি কেন্দ্র, পঃ বঃ সরকার (২০১০); ৪। জঙ্গলমহলের জনসংস্কৃতি, আদিবাসী ও লোকসংস্কৃতি কেন্দ্র, পঃ বঃ সরকার (২০১৪); ৫। পালাপার্বণের আঙিনায় বাংলার শবর, সব্যসাচী প্রকাশনী, মেদিনীপুর (২০১২); জঙ্গলমহলের কুঠার মানুষ, ছোঁয়া (২০১৮); ৭। ঝাড়গ্রাম জেলা প্রত্ন পরিক্রমা ( যৌথ লেখক সুশীলকুমার বর্মনের সাথে), মনফকিরা (২০২০) এবং ৮। ঝাড়গ্রামের লোকসম্পদ ও সংস্কৃতি, মনফকিরা (২০২১)।
তাঁর হাত ধরেই বিলুপ্তপ্রায় চাং গানের শিল্পীদের কথা জানতে পেরেছি আমরা। শিল্পীদের সামাজিক অবস্থা, তাঁদের দৈন্য, দুর্দশা থেকে পুনরুজ্জীবনের উদ্যোগ নেওয়া তাঁরই হাতের ছোঁয়ায়। তিনিই কলকাতার মধুসূদন মঞ্চে চাঙ নাচের কর্মশালার ব্যবস্থা করেছিলেন চাং শিল্পীদের নিয়ে গিয়ে। ২০০৫ সালে লোধাশুলি কমিউনিটি হলে চাং শিল্পীদের সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে আবারও কর্মশালা করলেন। লোকশিল্পীদের লোকঘরানাটিকে টিকিয়ে রাখার প্রয়াস যেভাবে তিনি দেখাতে লাগলেন তার জেরে ২০১৫ সালে জঙ্গলমহল উৎসবের 'থিম নাচ' হিসেবে চাং নাচকেই বেছে নেওয়া হয়। ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারের লোকপ্রসার প্রকল্পে বেশকিছু চাং গানের দলকে যুক্ত করিয়েছেন। সরকারি ভাতার ব্যবস্থা করা গিয়েছে এঁদের। আসলে তিনি কেবল লোকসংস্কৃতির লেখক নয়। কাগজের পাতায় গালভরা কথা লেখা যায়। কিন্তু সেই সব গরিব দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের পেটের ভাত জোগাড় করতে শুধু ঐ আঁকিবুকি যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন সদিচ্ছা, মানসিকতা, মানবতাবোধ এবং আন্তরিক আগ্রহ। ড. সুব্রত মুখোপাধ্যায় তা বুঝেছিলেন। তাই তিনি দীন দরিদ্র থেকে হতদরিদ্র চাং শিল্পীদের শিল্পকর্মটিকে পুনরুজ্জীবনে প্রাণপাত পরিশ্রম করে সফল হতে পেরেছিলেন।
শুধু চাং গান নয়, জঙ্গলমহলের বিলুপ্তপ্রায় ‘পরভা’ নাচ তথা চিল্কিগড় ছৌয়ের কাঠের মুখোশ উদ্ধার করতেও তিনি সচেষ্ট হয়েছিলেন। ঝাড়গ্রাম শহরে যে লোকসংস্কৃতি সংগ্রহশালা রয়েছে সেখানেই সেগুলি রক্ষিত আছে। নতুন করে পরভা নাচের অনুশীলন শুরু করলেন শিল্পী ভূবন খামরুইকে নিয়ে। ২০১৮ এর ৩১ সে ডিসেম্বর রবীন্দ্রসদনে রাজ্য লোকসংস্কৃতি উৎসবে অনুষ্ঠিত হয় ঝাড়গ্রামের ঐতিহ্যপূর্ণ পরভা নাচ। দাঁতন শহরেও পত্রিকা সম্পাদক সূর্য নন্দীর আমন্ত্রনে "দণ্ডভূক্তি পুরাতত্ত্ব ও লোকসংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্রের" ব্যবস্থাপনায় এই পরভা নাচের প্রদর্শনী হয়।
শুধু ঝাড়গ্রাম লোকসংস্কৃতি সংগ্রহশালা নয়, তিনি সরাসরি যুক্ত থেকেছেন পাঁশকুড়া বনমালী কলেজ লোকসংস্কৃতি সংগ্রহশালা, ঝাড়গ্রাম প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্রের ট্রাইবাল ইন্টারপ্রিটেশন সেন্টার গঠনেও। তাঁর হাত ধরেই সংরক্ষিত হয়েছে 'ললিতা শবর' পালা এবং 'চড়িয়া চড়িয়ানি' পালা। জঙ্গলমহলের লোধা শিল্পীদের দিয়ে এই লোকনাটকগুলি অভিনয় করানোর উদ্যোগ নিয়েছেন তিনিই।
২০০৩ এ ‘সৃজন' পত্রিকা দিয়েছে বিশেষ সম্মান। ২০০৬ তে তিনি পেয়েছিলেন মেদিনীপুর জেলা শিক্ষক সম্মান। ২০০৯ তে নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতি থেকে পেয়েছেন স্মারক সম্মান। এ বছরেই ঝাড়গ্রামের ‘সারথী' পত্রিকা থেকে মিলেছিল ‘সারথী সন্মান। ২০১১ তে ঝাড়গ্রামে ঝুমুর মেলার পক্ষ থেকে পেয়েছেন সম্মান। ২০১২ তে কোলাঘাটের ‘সৃজনী সাহিত্য পত্রিকা' এবং চলতি বছরেই ‘ঝাড়গ্রাম আর্ট অ্যান্ড কালচারাল অ্যাশোসিয়েশন ফর সোশ্যাল অ্যাকশন’ এর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল সম্মাননা। ২০১৬ তে ‘প্রয়াস শিল্পচর্চা নিকেতন' এবং দুর্গাপুরের ‘আলাপ ও লোকসংস্কৃতি উৎসব কমিটি'র পক্ষ থেকে স্মারক সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। ২০১৭ তে সানি পয়েন্ট বিদ্যালয় এবং হাড়দা রামকৃষ্ণ হাইস্কুল দিয়েছে সম্মান। ২০১৮ তে দাঁতনের ‘দণ্ডভুক্তি পুরাতত্ত্ব ও লোকসংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র থেকে দেওয়া হয়েছিল 'বঙ্কিমচন্দ্র মাইতি স্মৃতি লোককৃতি সম্মান'। এবছরেই ঝাড়গ্রামে জঙ্গলমহল উৎসব এবং মেদিনীপুর মহাবিদ্যালয়ের বাংলা সাহিত্য বিভাগ থেকে বিশেষ সম্মান পেয়েছেন। ২০২০ তে 'স্বরলিপি সঙ্গীত অ্যাকাডেমী’ থেকে পেয়েছেন (কুলটিকরি) স্মারক সম্মান। ঝাড়গ্রাম জেলা ডুলুং কবিতা উৎসব কমিটি ২০২১ দিয়েছে ‘ডুলুং সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মাননা'। ঐ বছরেই সাঁকরাইলের বহুড়াদাঁড়ি নেতাজী ক্লাব থেকে পেয়েছেন ‘অন্বেষা' সাহিত্য সম্মান। এছাড়া ঝাড়গ্রাম বইমেলা কমিটিও জানিয়েছে সম্মান। এর বাইরেও বিভিন্ন সংস্থা থেকে পেয়েছেন অসংখ্য সম্মান, এবং পুরস্কার।
সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথায়, 'লোধারা ইংরেজ শাসনকালে আর্থ সামাজিক অবস্থার প্রত্যন্ত সীমায় পৌঁছে অপরাধপ্রবণ জাতির বদনাম অর্জন করলেও তাঁদের পেছনে রয়েছে অতীতের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যা শবর জনজাতির সঙ্গে অনেকখানি এক। আজ সেই সাংস্কৃতিক ধারাটি লুপ্তপ্রায় হলেও কিছু কিছু অবশিষ্ট রয়ে গেছে।' সেই বালুকণা থেকে খুঁটে খুঁটে তুলে আনার সংকল্পে নিমজ্জিত ছিলেন 'জঙ্গলমহলের সিধু জ্যাঠা'। যে শবর লোধা জনজাতি গোষ্ঠীগুলির নতুন প্রজন্ম দারিদ্র্যের অন্ধকার থেকে সমাজের মূলস্রোতে অংশ নেওয়ার জন্য এগিয়ে আসছে— তাঁদের সেই এগিয়ে আসার ইতিহাসকে লিপিবদ্ধ করার জন্য নিবেদিত প্রাণ ছিলেন এই মানুষটি।
0 Comments