জ্বলদর্চি

ভয় /অর্ণব মিত্র


ভয় 
অর্ণব মিত্র


আবার সেই স্বপ্নটা দেখে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। 
এখন কত রাত হবে!। 
অন্ধকারে কিছু বোঝা যাচ্ছে না।
বাংলোর ভিতর বাদামি রঙের সোফাসেট জানলার সামনে বসানো।      তার সামনে কাঁচের টেবিল। টেবিলের ওপর মোবাইলটা রাখা। সোফাসেট এর ওপর পরদা দেওয়া বড় চার পাল্লার জানলা। হাল্কা হাওয়াতে পরদার ফাঁক দিয়ে চোখে পড়ল গাছের মাথাগুলো সরে সরে যাচ্ছে।  
অনিন্দ্য বিছনা থেকে উঠে এলো। একবার মৌমিতার দিকে তাকিয়ে দেখল ।পাসফিরে ঘুমাচ্ছে। মৌমিতাকে পাসফেরা আবস্থায় বেশ সুন্দর লাগে। গালের ওপর চুলগুলো এসে পড়েছে। কিন্তু এখন মৌমিতার দিকে এগিয়ে যেতে ইচ্ছা করছেনা। 
মাথার ভিতর ঘুরছে সেই স্বপ্নটা। কেন আবার সেই স্বপ্নটা দেখল সে!। আগেও দু-একবার দেখেছে। মৌমিতা-কে বলেনি কখনো।
স্বপ্নের শুরুটা মনে করতে পারে না। শুধু দেখে এক ঢালু জায়গা দিয়ে ছুটে আসছে সে। ছুটতে ছুটতে পিছনফিরে দেখছে ভয়ে বারবার। তার পিছনে 



  হাতিটা আসছে। কিছুটা ছোটার পর মা হাতি টা তাকে ধরেফেলে। শিশু হাতিটাও তার পিছনে ছুটে আসছিল। শুঁড়ে জড়িয়ে ফেলে মা হাতিটা তাকে।
তারপর অনিন্দ্যর শরীর–টাকে শুঁড় দিএ জড়িয়ে আছাড় দিতে যায়। একটু পরে শিশু হাতিটাও এসে পড়ে। শিশু হাতি ও মা হাতির চিৎকারে  অনিন্দ্যর ঘুম ভেঙ্গে যায় প্রতিবারে।

টেবিলের ওপর থেকে মোবাইলটা তুলে দেখল। প্রায় আড়াইটা বাজে।
মৌমিতাকে কি ডেকে সব বলে দেবে!। 
এগিএ গিয়ে দরজাটা আলতো খুলে দিলো। বাইরে থেকে ঠাণ্ডা হাওয়া ঘরের ভিতর এলো। জঙ্গলের ধারে উঁচুতে এই বাংলো। সামনে হালকা অন্ধকারে ঢাকা জঙ্গল ও তার নীচে আরও দূরে নদী দেখা যাচ্ছে। এই মধ্যরাতে ভেসে আসছে পাহাড়ি নদী্র বয়ে যাওয়ার শব্দ। শিলিগুড়ির কাছে এই পাহাড়ি বাংলোয় ঘুরতে এসেছে তারা। 
কিন্তু মৌমিতা তো সব জানে। সেদিন এসে সবকিছু মৌমিতা কে বলেছিল সে। 
সেদিন ও ছিল এমন অমাবস্যার রাত। রানী শিরোমণি এক্সপ্রেস নিয়ে খড়্গপুর থেকে জামশেদপুর যাচ্ছিল সে। সে এক্সপ্রেস ট্রেনের ড্রাইভার। 



  সারারাত ট্রেন চালিয়ে পরের দিন জামশেদপুর পৌঁছানর কথা। রাতে স্টিল এক্সপ্রেস নিএ খড়্গপুর এলে তার ডিউটি শেষ হত তৃতীয় দিন।
কিন্তু সে ফিরে এসেছিল পরের দিন ভোরবেলা।


মৌমিতা অবাক হয়েছিল।না-ঘুমান চোখ ও মুখে ভয় নিয়ে ঘটনাটা শিশুর মতো বলেগেছিল সে। 
ট্রেন ঝাড়গ্রাম পেরনোর পর জংগল শুরু হয়েছিল। 
চার দিকে ঘন অন্ধকার। অমাবস্যার রাত। আকাশ অল্প মেঘলাও ছিল। ট্রেনের গতি একশোর ওপর ছিল। ট্রেনের মাথার বড় আলোয় মাত্র তিরিশ মিটার মতো দেখা যাচ্ছিল। ট্রেন লাইনের দুই দিকে ঘন জঙ্গল ও গ্রাম গুলো সরে সরে যাচ্ছে। 
অনিন্দ্য একটা গান গুণগুনাতে লাগল। 
এখানে ট্রেন-টা একটু বাঁক নেবে। এখানে জঙ্গল একটু বেশি ঘন। ট্রেন লাইনের খুব কাছ থেকে শুরু হয়েছে জঙ্গল। ট্রেনের আলোটা যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে মনে হল যেন কিছু একটা হেলে-দুলে চলে গেলো। 


 হয়ত হাতির দল। 
অনিন্দ্যর বিয়ে হয়েছে সবে তিন মাস হল।তার চোখের সামনে মৌমিতাকে আদরের দৃশ্য আসছে বারবার। চোখের সামনে ঘুরছে সেই অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলো। কিন্তু হঠাৎ বড়-ছোট কালো মূর্তির মতো এটা কি দেখল!। এতো কাছে !।
মৌমিতাকে আদরের সেই দৃশ্য-সুখে ডুবে চলন্ত ট্রেন জোরে ধাক্কা মেরেছিল ট্রেনলাইন পেরতে-থাকা একটি মা ও শিশু হাতিকে। 
সেই বাঁক ঘুরতেই ট্রেনের আঘাতে ছিটকে পড়েছে দুটি হাতি।
ড্রাইভার–এর জানলা দিয়ে মুখ বারিয়ে দেখেছিল অন্ধকারে কাঁপতে থাকা দুটো দেহ ও শুনেছিল তাদের চিৎকার।

বাংলোর বারান্দায় এলো সে। 
গাছপালার ফাঁক দিয়ে নদী দেখা যাচ্ছে।
কিন্তু ওটা কি! 
দুটো বড়-ছোট কালো মূর্তির মতো গাছের পাসে। 
তাদের অবয়ব অল্প দুলছে।
অমাবস্যার অন্ধকার রাতে ঠিক যেন হাতির মতো মনে হচ্ছে।


  অনিন্দ্য ঘরে ঢুকে তাড়াতাড়ি দরজাটা লাগাল।
পা-অবধি সারা শরীরজুড়ে একটা ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেলো।

চিত্র- লেখক

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments